ইসলামকে বুঝতে হলে মোহাম্মদকে বোঝা দরকার সর্ব প্রথমে। একই সাথে বোঝা দরকার তৎকালীন আরবদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা। ইসলামিক সব রকম কিতাবে মোহাম্মদকে বর্ণনা করা হয় একজন মহামানব হিসাবে যার চরিত্রে কোন রকম দোষ ত্রুটি নেই, নেই কোন কলুষতা। তিনি সচ্চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ন, দয়ালু, সৎ মোট কথা সব রকম সদ্ গুণাবলীর সমাহার মোহাম্মদের চরিত্রে সমাবেশ করেছে আল্লা।প্রতিটি মুসলিম শিশুই বড় হয়ে ওঠে মোহাম্মদ সম্পর্কে এরকম ধ্যান ধারণা মাথায় ও স্মরণে রেখে।একই সাথে মোহাম্মদ সম্পর্কিত কোন নিরপেক্ষ সূত্র পাওয়াও যায় না যা থেকে জানা যেতে পারে যে তিনি কেমন লোক ছিলেন। যারা মোহাম্মদের জীবনী রচনা করেছেন যেমন- ইবনে ইসহাক, আল তাবারী, হিসাম এরা প্রত্যেকেই ছিলেন নিবেদিত প্রাণ মুসলমান, যারা নানা রকম উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা মোহাম্মদের জীবনী রচণা করেছেন। বলা বাহুল্য, তারা কখনই মোহাম্মদ সম্পর্কে এমন কোন তথ্য তাদের রচণাতে লিপিবদ্ধ করবেন না যাতে মোহাম্মদের চরিত্র সম্পর্কে সামান্যতম দ্বন্দ্ব বা সন্দেহ সৃষ্টি হয় আর এখানে এ বিষয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। কোন শিষ্য কখনো তার গুরুর চরিত্রে কোন দোষ খুজে পায় না। সুতরাং আমাদেরকে মূলত: তাদের রচনার ওপর নির্ভর করেই মোহাম্মদকে চিনতে হবে। অন্য কোন উপায় আমাদের সামনে খোলা নেই। কিন্তু তার পরেও সে সব সূত্র থেকে কিছু না কিছু তথ্য পাওয়া যাবে যা থেকে মোহাম্মদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।কিন্তু কেন সে ধরনের তথ্য মোহাম্মদের নিবেদিত প্রান শিষ্যরা লিখে রেখে গেছেন?সেগুলো কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে লেখা যাতে একসময় মোহাম্মদের চরিত্রকে কলুষিত করা যায় ও ইসলাম ধ্বংস হয়ে যায়? ইদানিং বিভিন্ন হাদিস ও মোহাম্মদের জীবনী পড়ে অনেক ইসলামী পন্ডিতরা এরকম একটা ধারণা দেয়া চেষ্টা করে থাকে কিন্তু বিষয়টি মোটেই তা নয়।আসলে সেটা একারনে ঘটেছে যে – কোন কাজ বা ঐতিহ্য সেই ১৪০০ বছর আগের সমাজে খারাপ বা নীতিগর্হিত বলে বিবেচিত হতো না, বরং তা বিবেচিত হতো সমাজ সিদ্ধ রূপে, আর সে কারনেই এসব নিবেদিত প্রান ব্যাক্তিবর্গ সম্পূর্ন দ্বিধাহীন চিত্তে তা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। একটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে- যেমন- মোহাম্মদ ৫১ বছর বয়েসে ৬ বছরের আয়শাকে বিয়ে করেছিলেন আর আয়শার ৯ বছর বয়েসে মোহাম্মদ তার সাথে স্বামী স্ত্রীর মত সংসার করা শুরু করেছিলেন। সেই তখনকার আরব সমাজে শিশুকন্যা বিয়ে করা কোন গর্হিত কাজ ছিল না, বরং তা ছিল নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও বহুবিবাহও ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। যে কারনে মোহাম্মদ এধরনের কাজ করে যাওয়ার পরেও তার জীবনী রচনাকারীগণ বা তৎকালীন আরব সমাজের সাধারণ মানুষজন মোহাম্মদের এ বিষয়টিকে কোন রকম খারাপ দৃষ্টি দিয়ে দেখে নি। যে কারনে আমরা দেখি মোহাম্মদের শিশু বিবাহ বা বহু বিবাহ নিয়ে মক্কার আরবরা কোনরকম শোরগোল তোলেনি।আর তাই এসব তথ্য তার জীবনীতে লিখতে তাদের কোনরকম সমস্যা হয় নি। শুধু তাই নয় এসম্পর্কিত ঘটনা বা কাজ খোদ কোরান বা হাদিসের মধ্যেও লিপিবদ্ধ করতেও তাদের কোনরকম সমস্যা হয় নি। তার মধ্যে আরও যে সমস্যা সেটা হলো- মোহাম্মদের নবুয়ত্ব পাওয়ার আগের জীবনের পূর্ণাঙ্গ কোন তথ্য নেই, আছে কিছু ভাসা ভাসা তথ্য। তারপরেও হাদিসএর মাধ্যমে যেটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় মদিনাবাসীরা কিছুটা শোরগোল তুলেছিল মোহাম্মদের পালিত পূত্র জায়েদের স্ত্রী জয়নাবকে বিয়ে করার ব্যপারে কারন সেটা সেই আরব সমাজেও বিরাট গর্হিত বা অনৈতিক কাজ ছিল। তবে অত্যন্ত বুদ্ধিমান মোহাম্মদ একাজটি মক্কাতে করেন নি, বা করার সুযোগ পান নি।এটা তিনি করেছিলেন মদিনাতে যেখানে এ বিষয়ে সামান্য টু শব্দ করার মত কেউ ছিল না। কিন্তু তারপরেও দেখা যায় এ ধরণের একটা অনৈতিক কাজের জন্য সেই মদিণার লোকজনও কিছুটা সমালোচনামূখর হয়েছিল, যা মোহাম্মদকে অতি সত্ত্বর আল্লাহর কাছ থেকে আয়াত নাজিলের মাধ্যমে সমালোচকদের মূখ স্তব্ধ করতে হয়।

মোহাম্মদের সময়কালে মক্কায় ও তার আশপাশে বাস করত আরব পৌত্তলিকরা, ইহুদি ও খৃষ্টানরা, তবে পৌত্তলিকরা সংখ্যায় বেশী ছিল। আরব পৌত্তলিকরা বেশ কতকগুলি গোত্রে বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে কুরাইশ গোত্র ছিল সবচাইতে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাবান। আগের অধ্যায়ে যেমন বলা হয়েছে- মোহাম্মদেরও আগে মক্কার কাবা ঘর ছিল মূলত: পৌত্তলিককের একটা পবিত্র উপসণালয়। আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেখানে পৌত্তলিকরা আসত সে উপাসণালয়ে তাদের দেব দেবীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।এদের আগমনের কারনে মক্কা একটা ছোটখাট ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়। আর এই ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রন ছিল কুরাইশদের হাতে। আরব দেশ বিশেষ করে মক্কা ছিল একটা প্রচন্ড রুক্ষ শুস্ক মরুভূমি, যেখানে দিনে প্রচন্ড গরম আর রাতে তীব্র শীত পড়ত। মানুষগুলোও ছিল মরুভূমির মত রুক্ষ শুস্ক, কঠিন প্রকৃতির আর তারা নানরকম গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল।শুধুমাত্র কুরাইশরা কাবা ঘর কেন্দ্রিক ব্যবসার কারনে একটু ধণাড্য ছিল আর বাকী সবার পেশা ছিল মুলত: পশুপালন।এখানে কোন বিশেষ সভ্যতা গড়ে ওঠেনি, তাই সঞ্চিত হয়নি কোন সম্পদের ভান্ডার। সেই ৬ষ্ট ৭ম শতাব্দীতে রোম কেন্দ্রিক রোমান সাম্রাজ্য ও সভ্যতার যখন অন্তিম লগ্ন প্রায়, তখন কনসটান্টিনোপল কেন্দ্রিক বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি ক্রমশ বাড়িয়ে চলছিল যার মূল ধর্মীয় ভিত্তি ছিল খৃষ্টান ধর্ম। আসলে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যকে পৌত্তলিক রোমান সাম্রাজ্রের খৃষ্টীয় সংস্করন বললেও তেমন ভূল বলা হবে না। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য তখন ক্রমশ: ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রসারিত হচ্ছিল, কিন্তু কখনই মক্কা মদিনা বা এর আশপাশের কোন যায়গা এ সাম্রাজ্যকে আকৃষ্ট করেনি। কারন কিছু ছাগল আর ভেড়ার জন্য কখনই কোন সৈন্যদল এত কষ্ট করে কঠিন মরুভূমি পাড়ি দেয়ার তাগিদ দেখায় নি। যে কারনে আরব উপসাগরীয় দেশগুলো অনেকটাই নিরুপদ্রব জীবন কাটিয়েছে। অন্য সভ্যতার সাথে সংশ্রব না ঘটায় এখানে পৌত্তলিক ধর্ম শক্ত আসন গেড়ে বসে। কাল পাথরকে পূজা করা, কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করা, শয়তানকে পাথর মারা, পৌত্তলিকদের প্রধান দেবতা আল্লাহকে মোহাম্মদ আল্লাহ হিসাবে মানা ছাড়াও আরও একটি কাজ করেছেন যা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে তার ইসলাম পৌত্তলিকতা দোষে দুষ্ট অথবা পৌত্তলিকদের ধ্যাণ ধারনা ইসলামে ঢুকানো হয়েছে। তার উদাহরণ হলো- কোরানে বার বার জড় বস্তুর নামে কসম কাটা হয়েছে।আর এসব জড়বস্তু সমূহ বলা বাহুল্যই আরব কোরাইশদের নানা দেব দেবীর প্রতিনিধিও।যেমন নীচের আয়াত-

কসম ঐ ঝঞ্ঝা বায়ূর।অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের। অতঃপর মৃদু চলমান জলযানের।অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের। সূরা- আস যারিয়াত-৫১: ০১-০৪, মক্কায় অবতীর্ণ।

আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়, শপথ নিশাবসান ও প্রভাত আগমন কালের, নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রসূলের আনীত বাণী, সূরা-আত-তাকভীর-৮১:১৫-১৯ মক্কায় অবতীর্ণ।

শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে, শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, সূরা-আস-সামস্-৯১:০১-০৬, মক্কায় অবতীর্ণ।

চন্দ্রের শপথ, শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়, শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়, সূরা-আল মুদ্দাসসির-৭৪:৩২-৩৩, মক্কায় অবতীর্ণ।

এখানে আল্লাহ বায়ূ, মেঘ, জলযান, নক্ষত্র, সূর্য, চাঁদ এ সমস্ত জড়বস্তু ও ফেরেস্তাদের নামে কসম কাটছে।কি আজব কারবার! আল্লাহ তার কথা যে সত্য তা প্রমান করার জন্য ওসব জড় বস্তুর কসম দিচ্ছে, তার সৃষ্ট ফেরেস্তাদের কসম দিচ্ছে। আর সে কসম দিচ্ছে তার কথা মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য।তাহলে আল্লাহকেও কসম কাটতে হয় ঠগ বা প্রতারক বা মিথ্যাবাদী মানুষের মত যারা কথায় কথায় আল্লা খোদার কসম কাটে, যেন তাদের কথা মানুষ বিশ্বাস করে, যদিও খুব কম মানুষই এ ধরণের কসমকাটা মানুষদেরকে বিশ্বাস করে।আমরা যদি ইসলামকে এর পূর্ববর্তী ধর্ম তথা ইহুদি, খৃষ্টান এর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ধর্ম বলে ধরে নেই , তাহলে দেখব ইহুদী বা খৃষ্টানদের ঈশ্বর কখনই কোন কসম কাটে নি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কখনো কসম কাটার দরকার পড়ে না।কারন তার উর্ধ্বতন কেউ নেই যার নামে কসম কাটা যায়।অধ:স্তনরাই তার উর্ধ্বতনের নামে কসম কাটে। যেমন সন্তানরা তার মা বাবার নামে কসম কাটে, মা বাবা কসম কাটে আল্লাহর নামে। আল্লাহর কোন উর্ধ্বতন নেই, তাই তার কসম কাটারও কেউ নেই।সুতরাং উপরোক্ত আয়াত সমূহের কসমকাটার ঘটনাগুলো যৌক্তিকভাবেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর হতে পারে না। আরবের পৌত্তলিকরা তাদের দেব দেবীদের নামে কসম কাটত। কারণ তাদের কাছে তাদের দেবদেবী গুলো ছিল উর্ধ্বতন বা উচ্চ মর্যাদার ও স্বর্গীয়। যেমন- হিন্দুরা কসম কাটে তাদের দেব দেবীর নামে, বলে- মা কালীর দিব্বি, মা দূর্গার দিব্বি, ভগবানের কিরে এরকম। দিব্বি বা কিরে মানে হলো কসম। সুতরাং এ ধরনের কসম কাটার ঘটনা দৃষ্টে এটাই প্রতীয়মান হয় যে মোহাম্মদই মূলত: আল্লাহর বানীর নামে আরব পৌত্তলিক দেব দেবীর নামে কসম কাটছেন। চন্দ্র, সূর্য, বায়ূ এসবই ছিল পৌত্তলিকদের দেব দেবীর নাম বা এদের এক একজন দেবতা বা দেবী ছিল।এটা অনেকটাই হিন্দুদের দেব দেবীর অনুরূপ। হিন্দুদের কাছেও সূর্য, চন্দ্র, বায়ূ এসবের একজন করে দেবতা বা দেবী আছে। যেমন- সূর্য দেবতা হলো বিষ্ণু, চন্দ্র দেবতা হলো সোম, বায়ূর দেবতা হলো পবন ইত্যাদি। এটা পৌত্তলিক কুরাইশদেরকে তার দলে টানার একটা প্রচেষ্টা ছিল মোহাম্মদের। তার ধারণা ছিল এভাবে পৌত্তলিকদের দেব দেবীর নামে কসম কাটলে হয়তবা কুরাইশরা তার কথা বা নবূয়ত্বের দাবী মেনে নেবে। কিন্তু এতেও কুরাইশদেরেকে দলে টানা যায়নি। এখানেই কিন্তু বেশ আশ্চর্য হতে হয় যে এর পরেও কুরাইশরা কেন মোহাম্মদের দলে ভেড়েনি। আর উপোরক্ত আয়াতসমূহ যে কুরাইশদেরকেই লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে তার প্রমান হলো সূরাগুলো মক্কাতে অবতীর্ণ।কোরান ভালমতো পড়লে দেখা যাবে, মদিনায় অবতীর্ণ কোন আয়াতে এভাবে এসব জড় বস্তুতে কসম করে আল্লাহ তথা মোহাম্মদ কোন আয়াতের কথা বলেননি। কেন বলেন নি? কারন অতি স্পষ্ট।নানা কায়দায় ও কৌশলে মদিনার লোকদের আনুগত্য মোহাম্মদ মদিনাতে যাওয়ার আগেই অর্জন করেছিলেন। তিনি যখন মক্কা ছেড়ে মদিনাতে ঘাটি গাড়েন প্রায় সাথে সাথেই মদিনার অধিকাংশ লোক মোহাম্মদের আনুগত্য প্রকাশ করে।ফলে সেখানকার মানুষদের মন যুগিয়ে কোন আয়াত নাজিলের কোন দরকার ছিল না, যে কারনে কোন জড় বস্তু বা দেব দেবীর নামে কসম কাটারও দরকার পড়েনি।তিনি আল্লাহর ওহীর নামে যাই বলতেন সবাই তা বিশ্বাস করত, এ ব্যপারে কারো কোন প্রশ্ন থাকত না। প্রশ্ন করার দরকারও মনে করত না। কারণ তারা ইতোমধ্যেই মোহাম্মদের কথায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে মদিনার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বানিজ্য পথের নিরীহ বানিজ্য কাফেলার ওপর আতর্কিতে আক্রমনের মাধ্যমে পাওয়া গণিমতের মালের ভাগ পেতে শুরু করেছে যার ফলে তাদের দারিদ্র কিছুটা হলেও ঘুচেছে, তাহলে খামোখা মোহাম্মদের সাথে তর্ক বিতর্ক করা কেন? এ ছাড়া মোহাম্মদ বলেছেন- কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে সে গাজী তো হবেই পরন্তু যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্রব্য সামগ্রী গণিমতের ভাগ হিসাবে পাওয়া যাবে, পাওয়া যাবে তাদের তরুণী স্ত্রী ও মা-বোনদেরকে যাদের সাথে অবাধে যৌন ফুর্তি করা যাবে, আর যদি মারা যায় তাহলেও ক্ষতি নেই- সোজা বেহেস্ত যেখানে অপেক্ষায় আছে ৭২ টা আয়তলোচণা চিরযৌবনা হুর যাদের সাথে বেহেস্তে প্রবেশ করা মাত্রই অবাধে যৌনানন্দ করা যাবে যার কোন শেষ নেই। তৎকালীন আধা সভ্য আরবদের কাছে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি থাকতে পারে। সুতরাং মোহাম্মদের কথায় চললে বা মোহাম্মদকে বিশ্বাস করলে ইহজগত ও পরজগত উভয় জগতেই লাভ। সুতরাং তার বিরুদ্ধে যাওয়ার কি দরকার ?

কুরাইশরা কেন মোহাম্মদের দলে ভেড়েনি তার বিশ্লেষণ করা কঠিন নয়। তৎকালীন মক্কার কোরাইশদের সমাজব্যবস্থা, ঐতিহ্য, আচার আচরন, স্বভাব চরিত্র এসব বিশ্লেষণ করলেই সহজে তা বোঝা যায়।কোরাইশ বংশের মানুষ হলেও মোহাম্মদ ছিলেন এতিম ও হতদরিদ্র একজন মানুষ যিনি পরবর্তী জীবনে ধণী বিধবা বিবি খাদিজাকে বিয়ে করে স্বচ্ছল হন। স্বচ্ছল অর্থাৎ মোহাম্মদ তার স্ত্রীর সম্পদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। স্ত্রীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা মানুষকে সেই সময়কার আরব সমাজে মোটেও সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হতো না।বর্তমান সমাজেও এ ধরণের মানুষকে কেউ সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে না।সে সময়ে আরব সমাজে পৌরুষত্ব ও বীরত্বকে মর্যাদার প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হতো। যারা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌরুষত্ব ও বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারত তাদের নামে তখনকার সময়ের কবিরা কবিতা রচনা করত যা মানুষের মুখে মুখে ফিরত। চাচা আবু তালিবের পোষ্য হিসাবে কিশোর ও যুবক মোহাম্মদ দুম্বা, উট ও মেষ চরাতেন। কুরাইশদের কখনো কোন যুদ্ধে অথবা কোন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় মোহাম্মদ তার রণকৌশল বা শৌর্য বীর্যের পরিচয় দিতে পারেন নি। এমনকি তিনি যখন রাজশক্তির অধিকারী হন, বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন ও নেতৃত্ব দেন, তখনও দেখা যায় মোহাম্মদ তেমন কোন শৌর্য বীর্যের পরিচয় দিতে পারেন নি। এমন কোন নজির হাদিস বা তাঁর জীবনীতে নেই যে তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে কোন শত্রুকে কখনো পরাজিত করে হত্যা করতে পেরেছেন। সেই তখনকার সময়ে সৈন্যবাহিনীর নেতাও সামনে থেকে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করত ও শত্রু সৈন্যকে পরাজিত করে তাদেরকে হত্যা করত। মোহাম্মদ অনেকগুলো যুদ্ধেই সরাসরি অংশগ্রহন করেছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু দেখা যায় তিনি কখনই সামনের কাতারে দাড়িয়ে যুদ্ধ করেন নি, বরং শক্ত লৌহবর্ম পরে পিছনের কাতারে থাকতেন। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন হাদিসে মোহাম্মদের শৌর্য বীর্যের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও একটু ভাল করে সেগুলো পড়লে বোঝা যাবে যে তা আদৌ শৌর্য বীর্যের পরিচায়ক কোন ঘটনা ছিল না। তারপরেও হাদিস লেখকেরা তার শৌর্যের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন কারন তারা তাদের ওস্তাদের এ ধরণের গুণ যে নেই তা মেনে নিতে পারেন নি। যাহোক, এ ধরণের একজন হত দরিদ্র, শৌর্য-বীর্যবিহীন, স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল মানুষকে অহংকারী, দাম্ভিক ও শৌর্যবীর্যের পুজারী কুরাইশরা তাদের ধর্মিয় বা রাজনৈতিক নেতা- কোনভাবেই মেনে নিতে রাজী ছিল না। একারনেই মোহাম্মদ এতবার কুরাইশদের দেব দেবীর নামে কসম কাটার পরেও তারা মোহাম্মদকে তাদের ধর্মগুরু বা রাজনৈতিক নেতা -কোনভাবেই মেনে নেয় নি।

এ গেল আল্লাহর জড় বস্তকে কসম কাটার কথা। অথচ মোহাম্মদ অন্যকে জড় বস্তু তো বটেই, এমনকি তাদের পিতার নামেও কসম কাটতে নিষেধ করছেন। যেমন নিচের হাদিস-

ইবনে উমর বর্নিত, ওমর ইবনে খাত্তাব যখন একদল উট আরোহীদের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন তার সাথে আল্লার রসুলের সাথে দেখা হলো। ওমর তার পিতার নামে কসম কাটলেন কোন একটা ব্যপারে। তখন নবী তাকে বললেন- ওহে, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামে কসম কাটতে নিষেধ করেছেন, তাই যে কেউ কখনো কোন কসম কাটতে চায় সে যেন আল্লাহর নামে কসম কাটে অথবা চুপ থাকে। সহী বুখারী, বই-৭৮, হাদিস-৬৪১

তার মানে কেউ কসম কাটলেও সে যেন আল্লাহর নামে কসম কাটে। যেমন মোহাম্মদ বার বার আল্লাহর নামে কসম কাটতেন, তার কিছু নমুনা-

আনাস বিন মালিক বর্ণিত, একজন আনসার মহিলা তার কতকগুলো বাচ্চাসহ নবীর নিকট আসল এবং নবী তাকে বললেন, আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি হলে আমার সবচাইতে পছন্দের মানুষদের একজন, এবং তিনি এ কথাগুলো তিনবার উচ্চারণ করলেন। সহী বুখারী, বই-৭৮, হাদিস-৬৪০

আনাস বিন মালিক বর্ণিত, আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে সিজদা কর ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন কর, কারন, আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, যখন তোমরা তা কর আমি আমার পিছনের সবকিছু দেখতে পাই। সহী বুখারী, বই-৭৮, হাদিস-৬৩৯
আবু বকর ইবনে আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন- আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, তোমরা দেব দেবীর নামে ও তোমাদের বাপ-দাদাদের নামে শপথ করিও না। সহী মুসলিম, বই-১৫, হাদিস-৪০৪৩

সবগুলো হাদিস কিতাব থেকে দেখা যাবে মোহাম্মদ বহুবার, বার বার এভাবে আল্লাহর নামে কসম কাটছেন।তার এভাবে কসম কাটার অভ্যাসটা দেখা যাচ্ছে আল্লাহর চরিত্রেও আছে। যেখানে মোহাম্মদ তাঁর উম্মতদেরকে তাদের বাপের নামে কসম কাটতে নিষেধ, দেব দেবী বা বাপ-দাদাদের নামে কসম কাটতে নিষেধ করে তার পরিবর্তে আল্লাহর নামে কসম কাটতে উপদেশ দিচ্ছেন এবং নিজে বার বার আল্লাহর নামে কসম কাটছেন সেখানে আল্লাহ নিজে স্বয়ং কসম কাটছেন কতিপয় জড়বস্তুর নামে। যেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা, বায়ূ, ফেরেস্তা আল্লাহর প্রভু, কি তাজ্জব কারবার! এটা আসলে আল্লাহর দোষ না। প্রাক ইসলামিক যুগে আরব প্যগানরা তাদের দেব দেবীদের নামে কসম কাটত। তাদের দেব দেবীগুলোও ছিল চন্দ্র, সূর্য, তারকা ইত্যাদির নামে। মোহাম্মদ সেই পৌত্তলিকদের ঐতিহ্য মোতাবেকই বার বার কসম কাটতেন যার প্রভাব তার কল্পিত আল্লাহর ওপর পড়েছে। কোরানের আল্লাহ যেহেতু মোহাম্মদের মতই বার বার কসম কাটছে, তাও আবার জড় বস্তুর নামে, সেক্ষেত্রে কোরানে বর্ণিত মোহাম্মদের আল্লাহ প্রকৃতই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা কি না সে ব্যপারে ঘোরতর সন্দেহ থেকেই যায়।কারণ আল্লাহর এ ধরনের জড় বস্তুর নামে করা কসমের সোজা অর্থ দাড়ায় যে আল্লাহর কাছে চাঁদ, সূর্য, বায়ূ, ফেরেস্তা এরা সবাই তার চেয়ে বেশী স্বর্গীয় ও ক্ষমতাশালী।

শুধু এখানেই শেষ নয়। মোহাম্মদ কোন প্রতিজ্ঞা করলেও তা যে কোন সময় ভংগ করতে পারতেন, মোহাম্মদের আল্লাহ এতটাই মোহাম্মদকে পক্ষপাতীত্ব করেছেন যে, মোহাম্মদ কোন ব্যাপারে কারো কাছে প্রতিজ্ঞা করলেও তা রক্ষা বা পালন করার দায় তার ছিল না। আর তিনি তার উম্মতদেরকেও প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। যেমন-

আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত- তিনি রাসুলুল্লাহর কাছ থেকে বলতে শুনেছেন, যে কোন শপথ গ্রহণ করে অথচ পরে অন্য বস্তুকে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে।সহী মুসলিম, বই-১৫, হাদিস-৪০৫৩

উবায়দুল্লাহ ইবনে মুয়ায বর্ণনা করেছেন- আদী ইবনে হাতেম বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি কসম করার পর তার বিপরীত বস্তুকে উত্তম মনে করে তখন যেন সে সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে ও কসম বর্জন করে।সহী মুসলিম, বই-১৫,হাদিস-৪০৫৭

সমাজে কোন ব্যক্তি যদি বার বার প্রতিজ্ঞা করে তা ভঙ্গ করে তাকে লোকজন আর বিশ্বাস করে না বা তাকে লোকজন ঠক বা প্রতারক বলেই গণ্য করে। আমাদের মহানবী সেটা নিজে যেমন করেছেন তেমনি তিনি তাঁর সাহাবীদেরকেও করতে নির্দেশ করেছেন। এখানে বলা হচ্ছে- যে ব্যাক্তি কসম করার পর তার বিপরীত বস্তুকে উত্তম মনে করে তখন সে যেন সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে।তার মানে কেউ কোন কিছুর কসম কাটার পরে তার মনের পরিবর্তন ঘটলে সে সাথে সাথেই সেটা পরিবর্তন করতে পারবে। কসম কাটার বিষয়টি আসলে কি? কসম কাটা হলো কোন বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা। যেমন- এক ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা করল সে কিছু মানুষকে দান খয়রাত করবে। পরে চিন্তা করে দেখল এভাবে দান খয়রাত করলে তার সম্পদ কমে যাবে এবং এটাকেই সে উত্তম মনে করল। তখন মোহাম্মদের বিধাণ অনুযায়ী সে এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে বাধ্য নয়, আর এটা না করাটা তার জন্য কোন অনৈতিক ব্যপারও নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা নানা বিষয়ে জনগণের কাছে প্রতিজ্ঞা করে থাকে।পরে দেখা যায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর সে সব প্রতিজ্ঞা তারা ভুলে যায়। মহানবীর বিধাণ মোতাবেক এটা কেন অনৈতিক কাজ নয়। কারন প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতেই হবে তেমন কোন বাধ্যবাধকতা আল্লাহর বিধাণে নেই। আর যেটা আল্লাহর বিধাণে নেই বলে মানুষ জানে তা রক্ষা পালন করার কোন আবশ্যকতাও থাকতে পারে না। বিষয়টা ধর্মভীরু নেতারা বোধ হয় ভালমতোই জানে সে কারনে দেখা যায় প্রতিজ্ঞা পূরন না করার পরেও তাদের মধ্যে কোন অন্যায়বোধ কাজ করে না। আমাদের মহানবীর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের একটা বড় উদাহরণ হলো মক্কা বিজয়ের পর মক্কা বাসীদের দেয়া নিরাপত্তার আশ্বাস। কথিত আছে মক্কা বিজয়ের পর তিনি একটি জমায়েতে এই বলে সবাইকে নির্দেশ দেন যে – কাউকে বিনা কারনে খুন করা যাবে না, কারও সম্পদ লুঠ করা যাবে না , কারও বাড়ীঘর বাগান ধ্বংস করা যাবে না। মোহাম্মদের এ ধরণের ঘোষণাকে ইসলামী পন্ডিতরা খুব উচ্চকন্ঠে এই বলে প্রশংসা করে থাকে যে হাতে পাওয়ার পরেও তিনি কারও ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি বরং তিনি সবাইকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।কারও প্রতি জুলুম অত্যাচার করেন নি। অথচ এটা যে মোহাম্মদের একটা স্রেফ রাজনৈতিক কূট চাল ছিল তা তারা উল্লেখ করতে ভুলে যান। মাত্র ছয়মাসও যায়নি – এর পরেই মোহাম্মদ তার আসল চেহারায় আবির্ভূত হন। আল্লাহর ওহীর নামে মোহাম্মদ কি বলছেন তা দেখা যাক-
সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সূরা- আত তাওবাহ, ০৯:০১

অর্থাৎ মোহাম্মদ এখন শক্তিশালী, অমুসলিমদের সাথে পূর্বে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি তার আর দরকার নেই অতএব তা এখন এক তরফা ভাবে বাতিল। যে কোন ধরণের চুক্তির অর্থ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া, আর এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে (অবশ্যই নিজের অনুকুলে) এ ধরণের প্রতিজ্ঞা পালনের কোন দায়ও তাই নেই মোহাম্মদের।এটা যে অনৈতিক কোন কাজ নয় তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এটাকে আল্লাহর ওহীর নামে বিধিবদ্ধ করা হচ্ছে। কোরানের আল্লাহ তাই কোন নৈতিকতার ধার ধারে না। এ আল্লাহ কোন রকম নৈতিকতার ধার তো ধারেই না, পরন্তু প্রচন্ড ক্রুদ্ধ, নিষ্ঠূর ও রক্তলোলুপ এক আল্লাহ যার হুংকার শোনা যাচ্ছে এর পরের আয়াতগুলোতেই-

তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। সূরা- আত তাওবাহ, ০৯:০৪

উপরোক্ত আয়াত পড়লে মনে হবে আল্লাহ খুব ন্যায় পরায়ণ, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে তিনি অনিচ্ছুক। চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু আসলে বিষয়টি মোটেই তা নয় তা কিন্তু পূর্বোক্ত ০৯:০১ আয়াতেই পরিষ্কার। সেখানে পরিষ্কার বলা হচ্ছে- সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। আল্লাহ চুক্তি বাতিল করে দিলেন কিন্তু পরের আয়াতেই বললেন- তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। কিন্তু আসলে এটা যে একটা ভাওতাবাজি তা বোঝা যাচ্ছে নীচের আয়াতে-

অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা- আত তাওবাহ, ০৯:০৫

অর্থাৎ আর কোন চুক্তির ধার ধারতে আল্লাহ তথা মোহাম্মদ অনিচ্ছুক। উপরোক্ত আয়াতগুলো পড়লে বোঝা যাচ্ছে মোহাম্মদ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়া করেছেন যে কারনে আয়াতগুলোর বক্তব্য দারুনরকম গোলমেলে ও স্ববিরোধী। প্রথমে আল্লাহ বলছে- সম্পর্কচ্ছেদ করা হল, এর পরেই বলছে- চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। আবার এর পর পরই বলছে- অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। সম্পর্কচ্ছেদ করার পর চুক্তির মেয়াদ পূরণ করতে বলা অর্থহীন। আবার তার পরেই যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই মুশরিকদের হত্যা করতে আদেশ করার অর্থই হলো পূর্বোক্ত সম্পর্কচ্ছেদ করাকে সমর্থন করা। সুতরাং পুরো বিষয়টিই স্ববিরোধী , গোলমেলে। এর কারনও আছে- তখন দৃশ্যপট এতদ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল যে তখন মোহাম্মদ আসলে কোন্ টা করবেন এ ব্যপারে দোটানার মধ্যে ছিলেন। মাত্র আড়াই বছর আগে মোহাম্মদ মক্কাবাসীদের সাথে শান্তি চুক্তি করেছেন যাকে হুদায়বিয়ার সন্ধি বলা হয়, এর পরেই তিনি এতটাই শক্তিশালী হয়ে গেছেন যে মক্কা বিজয়ের মত ক্ষমতা তার হাতে।ওদিকে তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তখন বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে, আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠার তা যে স্বপ্ন তা অপূরণ রয়ে গেছে। তাই তার দরকার অতি সত্ত্বর মক্কা দখল করা।আর তাই সামান্য একটা অজুহাতকে কেন্দ্র করে তিনি দশ বছর মেয়াদের করা চুক্তির মাত্র আড়াই বছর পর তার বাহিনী সহ মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেন। আর এ অভিযানের প্রেক্ষাপটেই এসব আল্লাহর বানী ও তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার কাহিনী।
শুধু তাই নয়, যে মোহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পর শান্তির কথা বলেছিলেন তার কন্ঠ থেকে ঝরে পড়ে হুংকার-

আমি আরব ভূমি থেকে ইহুদি ও খৃষ্টানদেরকে উচ্ছেদ করব, মুসলিম ছাড়া এখানে আর কেউ থাকবে না। সহী মুসলিম, হাদিস-৪৩৬৬

এ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ থেকে যে বিষয়টি প্রনিধাণযোগ্য তা হলো- ইসলামে সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতি নীতির কোন মূল্য নেই, একই সাথে মুসলমানদের সাথে কোন রকম চুক্তি করা বিপজ্জনক ও তারা বিশ্বাসঘাতক, কারন তারা যে কোন সময়েই সে চুক্তি ভঙ্গ করার অজুহাত খুজে নিয়ে তা ভঙ্গ করতে পারে ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে এবং এর জন্য তারা কোন অনুতাপ তো করবেই না বরং এ ভেবে উল্লসিত হবে যে এটা তো আল্লাহ ও তার রসুলই তাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে আমেরিকা নাকি অত্যাচার, নির্যাতন, দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। এতে মুমিন বান্দারা কেন যে এত শোরগোল করে তা বোঝা মুশকিল। তাদের তো বরং উল্লসিত হওয়া উচিত এ ভেবে যে এসব নাসারা ইহুদীরা আল্লাহ ও তার রসুলের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এসব করছে। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে-বিশ্বাসঘাতকতা করতে , আমেরিকানরা সেটারই চর্চা করছে, এতে তো প্রকারান্তরে ইসলামের শিক্ষাকেই সম্প্রসারিত করা হচ্ছে, এতে কি মুসলমানদের উল্লাস প্রকাশ করা উচিত নয়? মুসলমানদের মনের মধ্যে যে গোপণ দুরভিসন্ধি আছে, কোরান হাদিস পড়ে অমুসলিমরা সেসব জেনে যদি এখন সবাই একজোট হয়ে, গোটা দুনিয়া থেকে মোহাম্মদের দেখানো পথে মুসলমানদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে তাহলে তাদেরকে কি দোষ দেয়া যায়?

মক্কার কুরাইশদের পালন করা আরও একটি প্রথা মোহাম্মদ প্রাক ইসলামী যুগে পালন করতেন। তা হলো- আশুরার দিন অর্থাৎ মহররম মাসের দশ তারিখে তিনি রোজা রাখতেন। যেমন –

আয়শা বর্নিত-আশুরার দিন (মহররম মাসের দশ তারিখে) ইসলাম পূর্ব অন্ধকার যুগের কুরাইশরা রোজা রাখত। মোহাম্মদ নিজেও এদিন রোজা রাখতেন। যখন তিনি মদিনায় হিযরত করলেন, তিনি তখনও এ দিনে রোজা রাখতেন ও সকল মুসলমানকে তা রাখতে নির্দেশ দিলেন। যখন রমজান মাসের রোজা চালু হলো তখন তিনি এ দিনের রোজাকে ঐচ্ছিক করে দিলেন-তারা ইচ্ছে করলে রোজা থাকতে পারত, না হলে দরকার নাই। সহী বুখারী, বই-৫৮, হাদিস-১৭২

এখানে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে-কুরাইশরা কাকে সন্তুষ্ট করতে রোজা রাখত? নিশ্চয়ই তাদের নিজেদের আল্লাহ যাকে তারা প্রধান দেবতা মনে করত, ইসলামের আল্লাহ কে। মোহাম্মদ ইসলাম পূর্ব যুগে ঠিক একই রকম ভাবে এ রোজা রাখতেন ও বলা বাহুল্য তিনি সেটা করতেন কুরাইশদের আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য।কারন এ রোজা উপলক্ষ্যে তিনি কুরইশদের দেব দেবীর মূর্তি ভর্তি কাবা ঘরে গিয়েই তার মুনাজাত করতেন। তিনি তার নিজস্ব ইসলামের আল্লাহকে আবিষ্কার করেন যখন ৪০ বছর বয়েসে নবুয়ত্ব পান তখন। আর এ আল্লাহকে আবিষ্কার করার পরও তিনি কুরাইশদের প্রথা দশ বছরেরও বেশী কাল ধরে বাধ্যতামূলক রাখেন, কারন নবুয়ত্ব পাওয়ার দশ বছর পরেই তিনি মদিণাতে হিজরত করেন। নবুয়ত্ব পাওয়ার পরও দশ বছরের অধিক কাল ধরে তিনি মূর্তি বা পুতুল ভর্তি কাবা ঘরে গিয়েই উপাসণা করতেন। এতে করে কি তিনি কুরাইশদের আল্লাহকেই উপাসণা করতেন না ?