করোনা নামে এক বৈশ্বিক মহামারী সারা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। প্রতি দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে শত সহস্র মানুষের জীবন ছিনিয়ে নিচ্ছে এ মহামারি-বিগত ১৪ মাস ধরে। এ ক্ষুদৃাতিক্ষুদ্র অনুজীব বিশ্বের উন্নত ও পারমানিবিক শক্তিধর দেশেগুলোকেও নাকানিয়চুবানী খাওয়াচ্ছে ।প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার পর দেশে দেশে এখন দ্বিতীয় ঢেউ চলছে-যা প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে ভয়াবহ। আমাদের বাংলাদেশও তার মর্মান্তিক শিকার হয়েছে।

এ কথা আজ জোর দিয়ে বলা যায় যে, সংক্রমণের দিক থেকে এ করোনা ভাইরাস অবশ্যই ধর্ম-জাতি-বর্ণ-রাজনৈতিক মতাদর্শ নিরপেক্ষ। কোন ধর্ম কিংবা জাতের কিংবা ধনী-গরীব নির্বিশেষে করোনা সমানে যাকেই সামনে পাচ্ছে, তাকেেই আক্রমণ করছে। অথচ স্বার্থান্বেষী কিংবা মুর্খ কিছু মানুষ আজ করোনাকে নিয়ে করছে রাজনীতি কিংবা স্ব স্ব ধর্মকে মহীয়ান করার হাস্যকর অপপ্রয়াস।

এ মহামারীর শুরুতেই প্রথম বিতর্ক ওঠল-কি এ করোনাভাইরাস ? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম সহ অনেকে প্রথম প্রথম বলা শুরু করল, করোনা কোন জৈব অনুজীব(ভাইরাস) নয়-চীনের ল্যাবরেটরীতে সৃষ্ট মানুষের প্রাণসংহারী এক ধরণের রাসায়নিক অস্ত্র। জীবন সংহারী মহামারী নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী নোংরা রাজনীতি!
অন্যদিকে আমাদের দেশের বহু আলেম-ওলামারা ফতোয়া দিতে লাগল-করোনাভাইরাস হল আল্লাহের গজব। অনেক মুফতি, মোহাদ্দেস ও আল্লামারা গলা পাঠিয়ে প্রচার করতে লাগল-করোনা আল্লাহের সৈনিক।এ ভাইরাস কেবল বিধর্মীদের আক্রমণ করবে-মুসলমানদের কিছু করবে না। ততদিনে বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম দেশ সৌদি আরব সহ অন্যান্য মুসলিম দেশেও তখন করোনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী করোনা থেকে মুক্তির জন্য গো-মুত্র ও গোবর তেরাপী প্রযোগের কথা বলতে লাগলেন।মজার ব্যাপার হল, ভারতের শাসক দল বিজেপি বিভিন্ন জনপদে রিতীমত ব্যানার টানিয়ে প্রকাশ্যে গোমুত্র পান ও গোমুত্র দিয়ে স্নান করার প্রদর্শনী করতে লাগল।

বিশ্বের তাবৎ মানুষ এ সন্দেহের দোলাচালে থাকলেও-অভিনন্দন জানাতে হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে-শুরু থেকেই যারা তার বিরোধীতা করে বেজ্ঞানিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বৈজ্ঞানিক অবস্থানের প্রতিবাদে মুর্খ ট্রাম যুক্ত রাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে রিতীমত বের করে নিয়ে আসল।। পরিণামে লক্ষ লক্ষ আমেরিকাবাসীকে অকাতরে তাদের জীবন দিয়ে এ গণ্ডমুর্খতার মূল্য দিতে হল।

সংক্রমণে করোনা যখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ তাবত শক্তিশালী দেশে হররোজ শত সহস্র মানুষের জীবন যেতে লাগল-তখন ঐ সমস্ত রাষ্ট্রগুলো প্রমাদ গুণতে লাগল।

আর অন্যদিকে এহেন এক মহাকালবেলায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা শুরু করলেন তাদের গবেষণা-কালবিলম্ব না করে। তারা বুঝল এ মারাত্মক মহামারী ঠেকাতে ভ্যাকসিন তৈরী করতে হবে। রাত-দিন অহর্নিস পরিশ্রম করে ইতিহাসের নজিরবিহীন স্বল্পতম সময়ে তারা বিভিন্ন দেশে ঠিকই করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরী করতে সক্ষম হল।
গো-মুত্র, তাবিজ মাদুলী বা সমবেত দোয়া মাহফিল-প্রার্থনা নয়-চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ভ্যাকসিনই করোনার বিরুদ্ধে মানুষের সর্বশেষ ও একমাত্র ভরসা।
কিন্তু দু:খেরে ব্যাপার হল-এখনো কিছু মানুষের অন্ধত্ব ঘুচেনি। তারা এখনো জানতে চায় না বস্তুত: কি এ করোনা ভাইরাস? তার নির্মম উদাহরণ হল এ করোনাকালে ভার তের কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ-পরিণতি দিল্লি আজ মৃত নগরী।

(“করোনা ভাইরাস অনেকগুলি ভাইরাসের একটি বড় পরিবার যা জীব জন্তু বা মানুষের অসুখের কারণ হতে পারে। বেশ কয়েকটি করোনা ভাইরাস মিলে মানুষের মধ্যে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে মিডিল ইষ্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (এমইআরএস) এবং সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম (এসএআরএস) এর মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা যায়। কোভিড -১৯ কি ? কোভিড -১৯ হল নতুন খুঁজে পাওয়া করোনাভাইরাস থেকে ছড়ানো একটি সংক্রামক রোগ। এই নতুন ভাইরাস এবং রোগটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে মহামারি হওয়ার আগে বিশ্বের কাছে অজানা ছিল।” সূত্র-ইন্টারনেট।)

তাই, চলমান করোনা মহামারি থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে বিশ্ব নেতৃত্বকে ধর্মীয় গোঁড়ামী ও নোংরা রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে-অবস্থান নিতে হবে তার বিরুদ্ধে। এর কোন বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত: শিশু ও বাল্যকালের কিছু মর্মান্তিক স্মৃতি স্মরণ করছি-যা এখনো আমাদের ভীষণ পীড়িত করে। সম্ভবত ষাটের দশকে-কিভাবে কলেরা, গুটিবসন্ত ইত্যাদি মহামারিতে শয়ে শয়ে মানুষ অসহায় ভাবে প্রাণ দিয়েছিল-তা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। সেদিনও কথিত ‘উলাবিবিকে’ ঠেকানোর জন্য হুজুরের নেতৃত্বে পাড়া-মহল্লা বন্ধ, বাড়িবন্ধ, দোয়া-তাবিজ-মাদুলী-খাসী বলি ইত্যাদি কোন কাজ করেনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভেকসিন আবিস্কারে আজ সে সমস্ত মহামারি ইতিহাস হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর স্পেনিস ফ্লু নামক মহামারিতে ৫ কোটি মানুষ জীবন দেওয়ার ইতিহাস আমরা জেনেছি। তাও রুখেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান।

তাই বিশ্ব-জনগণের জীবন বাঁচাতে অবিলম্বে সিংশ্লিষ্ঠ সরকারের উচিত-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ সমস্ত মোল্লা-মৌলভী-তান্ত্রিকদের মত মুর্খদের অপপ্রচার আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করা।