Workers at Interstoff Apparels are allegedly given ‘impossible’ targets to produce up to 2,000 garments a day. Photograph: Noor Alam/Guardian

শীর্ষস্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য বানানো টি-শার্ট সেলাই করার সময় ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলের পোশাক শ্রমিক সালমা বলেন কাজ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং তার সাথে দুর্ব্যবহারের করুণ কথা।

সালমা তার ইহ জনমে কোনদিন স্পাইস গার্লসের নামও শোনেনি। তার জীবন কেটে গেছে সেলাই মেশিনের উপর প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা একটানা ঝুঁকে থেকে কাজ করে করে। তার জীবন কোটি টাকার পপ ব্যান্ডের সীমাহীন বিলাসের গণ্ডীর বাইরে একটা আস্তা-কুড়ে। কিন্তু সালমা এসবের কিছু জানুক বা না জানুক স্পাইস গার্লসের সাথে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে যে পোশাক কারখানায় চাকরি করে সেটা আঁকাবাঁকা সড়ক পথে ঢাকা থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্ব। এখানেই স্পাইস গার্লসের নকশা করা সেবার উদ্দেশ্যে টি-শার্ট বানানো হয়।

সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে স্পাইস গার্লসের পক্ষ থেকে ১৯.৪০ পাউন্ডে টি-শার্ট বানানো হয়েছিল এবং সেগুলো বিক্রি করে ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান “কমিক রিলিফ” এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করে। স্পাইস গার্লসের প্রচারণার মন্ত্র ছিল “নারীদের জন্য সর্বোচ্চ সমতা”। প্রচারণায় আলোকপাত করা হয় মেয়েরা “কর্মক্ষেত্রে কম অর্থ আয় করে”। কিন্তু বাস্তবতা হল সালমা এসব প্রচারণার বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানে না।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে স্পাইস গার্লসের টি-শার্টের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কারখানার শ্রমিকদের ঘণ্টা প্রতি ৩৫ টাকা মজুরি দেয়। অনধিক ১২ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থের একটা ছোট্ট রুমে ততোধিক ছোট্ট একটা চেয়ারে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে বসে থেকে তার স্বামী এবং সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে জীবন সংগ্রামের কথা, বাস্তবতার কষাঘাত, ইন্টারস্টফ পোশাক কারখানার অমানবিক পরিশ্রমের কাহিনী শোনাচ্ছিলেন। নিরাপত্তার স্বার্থে এই প্রতিবেদনে সালমার পরিচয় গোপন করা হয়েছে। সে এবং তার সহকর্মীদের উপর কীরকম অবিচার চলে এবং শ্রমিক শোষণ চালানো হয় সালমা খুব শান্তভাবে ধীরে কিন্তু বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

সরু এক চিলতে বারান্দায় চারটা পরিবার একটা ছোট্ট গ্যাসের চুলায় ভাগাভাগি করে সালমা রান্নাবান্নার কাজ সারেন। এতগুলো পরিবারের জন্য মেঝেতে গর্ত করে রিং স্লাব বসিয়ে কোনমতে একটা মাত্র শৌচাগার আর মাথার উপর ঝর্না ছাড়াই একটা পানির পাইপলাইন দিয়ে গোসলের ব্যবস্থা। এমন দীনহীন জীর্ণ দশার বাসস্থান হলেও এই বাড়ির ভাড়া প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা (৪৬.৩০ পাউন্ড) এবং এই ভাড়া শোধ করতেই তার বেতনের ৯০৮০ টাকার বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে যার মধ্যে যুক্ত আছে তার হাজিরার অতিরিক্ত পাওনা যেটা আবার সে অসুস্থকালীন ছুটিতে থাকলে পায় না।

এমনকি তার স্বামীর আয় যুক্ত হলেও এই শ্রমিক দম্পতি তাদের ছেলের স্কুলের বেতন, খাবার, বিদ্যুতের খরচ এবং চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খায়। সালমা জানায় ইন্টারস্টফের এমন অনেক শ্রমিক আছে যারা তার থেকেও কম মজুরি পায়। বেতন নির্ধারিত হয় শ্রমিকের পদবী, কর্মদক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সরকার একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করেছে ৮০০০ টাকা ফলে আগামী মাস থেকে শ্রমিকের মজুরি কিছুটা বাড়তে পারে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত মজুরি বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই মজুরি বৃদ্ধিতে তাদের লাভ অতি সামান্য কারণ অভিজ্ঞ শ্রমিক প্রস্তাবিত মজুরির থেকে বেশি বেতন পেয়ে থাকে। সালমার প্রত্যাশা কয়েকশ টাকা বেশি বেতন বাড়ুক কিন্তু সে নিশ্চিত না নতুন বেতন কাঠামোতে ঠিক কত টাকা সে পেতে যাচ্ছে।

সালমা বলেন, “তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদেরকে অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় যেমন একদিনে ২০০০ টি-শার্ট সেলাই করতে হবে”।

Jessie J wearing the I Wanna be a Spice Girl T-shirt, which was sold to raise money for Comic Relief. Photograph: Jessie J/Instagram

পঁচিশের কাছাকাছি বয়সী সালমা কথা বলছিলেন একজন দোভাষীর মাধ্যমে। তিনি বলেন, “ধরি নিই, কোন পোশাক শ্রমিককে একটা নির্দিষ্ট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী উৎপাদনে ব্যর্থ হল। নিশ্চিত থাকতে পারেন সেই শ্রমিকের জন্য অপেক্ষা করছে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। গার্মেন্টসের প্রোডাকশন ম্যানেজারের অফিস কক্ষে তার ডাক পড়তে পারে এবং সেখানেও তার ভাগ্যে আছে অপমানের বোঝা। প্রতিটি গার্মেন্টসের প্রোডাকশন ম্যানেজারের অফিস হল শ্রমিকদের গালিগালাজ করার খাস কামরা যেমন, ‘এটা তোর বাপের কারখানা না’, ‘দরজা খোলা আছে, যদি উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন না করতে পারেন তো চাকরি ছেড়ে দিন’। কখনো কখনো তারা ভয়ানক বাজে ভাষায় ‘খানকির বাচ্চা (বেশ্যার সন্তান)’ বলে অপমান করে আবার কখনো এত খারাপ ভাষায় গালি দেয় যে তা মুখেও আনা সম্ভব না। মাঝেমধ্যে অনেক নারী শ্রমিক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অপমান এবং কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। মাসের মাঝখানে কেউ চাকর ছেড়ে চলে গেলে তার বেতন দেয়া হয় না। এইতো গত মাসেই আমার কয়েকজন সহকর্মী অপমান সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে চলে যায় এবং তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

সালমা বলেন, যেসব নারীরা গর্ভবতী তাদেরকেও বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। অনেক শ্রমিকই অতিরিক্ত সময় কাজ করতে চায় না। কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কখনো শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করলে তারা কেঁদে ফেলে। একজন নারী শ্রমিককে আমি চিনতাম যিনি পেটে বাচ্চা নিয়ে রুটিন মাফিক নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পরেও রাতে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হন। সেই নারীকে সকাল আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য হয় এবং সবসময় কান্না করছিল।

সেইদিন সেই নারী অনেকবার বমি করছিল আর বলছিল যে তার শরীরটা ভালো নেই। তবুও তাকে দিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তারপরের দিনই সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তার ঐ দৃশ্য দেখে আমরা সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম কিন্তু কিইবা করতে পারতাম তার জন্য? আমরা গার্মেন্টস কারখানার সুপারভাইজারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, এমনকি বললাম ঐ নারীর পরিবর্তে আমাদের মধ্য থেকে কেউ তার কাজ করে দিচ্ছি, তবু তাকে বাড়ি যেতে দিন। কিন্তু নির্দয় সুপারভাইজার কিছুতেই রাজি হল না। সে শুধু বলল, “তার কাজের সময় তাকেই শেষ করতে দিন।”

সালমা হিসেবে করে দেখেছে মাসের প্রতিটা দিন তাকে সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যার পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয় এমনকি অনেক সময় মধ্যরাত পর্যন্ত। এরকম পরিবেশে কাজের চাপের কারণে সেলাই মেশিনে যারা কাজ করেন তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সালমা বলেন, “হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা বিশেষ করে উত্তপ্ত গ্রীষ্মকালে।” তদুপরি বিশাল কাজের বোঝা তো পিঠের উপর আছেই। কখনো কখনো শ্রমিকেরা কাটা কলা গাছের মত চেয়ার থেকে ধপাস করে পড়ে যায় এবং এটা প্রায় প্রতিমাসেই ঘটে।

সালমা বলেন, “এটা মনে প্রচণ্ড কাজের চাপের কারণেই ঘটে থাকে কারণ তারা অধিক রাত্রে জেগে কাজ করেন ফলে ঘুমের ঘাটতি থেকে যায়, অধিকন্তু তাদেরকে অনেক সকালে গার্মেন্টস কারখানায় উপস্থিত থাকতে হয়। একই শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে তাদের ঘাড়ে পিঠে ব্যথা হয়।”

Staff at the factory said they worked up to 16 hours a day in order to meet production targets. Photograph: Noor Alam/Guardian

কারখানার প্রতিটি তলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলেও এত মানুষের ভিড়ের কারণে সব সময় গরমে বেহাল অবস্থা। সালমা বলেন, “সম্প্রতি তার পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। পিঠের ব্যথার ভীষণ যন্ত্রণা ভোগান্তির শেষ নাই। ডাক্তার আমাকে কয়েকটি শারীরিক ব্যায়াম শিখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ব্যায়াম করতে গেলে কাজের ফাঁকে আমার অন্তত ১০ মিনিট লাগে। ব্যায়ামের বিরতি শেষে কাজের টেবিলে ফিরলে দেখা যায় তার জন্য অপেক্ষা করছে কাজের পাহাড়।”

সালমার করুণ কাহিনী শুনে স্পাইস গার্লস ব্যান্ডের মুখপাত্র বলেন, “সত্যিই আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। আমরা গার্মেন্টস কারখানার কাজের পরিবেশ নিজেরাই তদন্ত করে দেখব।” ‘কমিক রিলিফ’ দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও গভীর শোক এবং উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করা হয়।

অনলাইনে স্পাইস গার্লসের টি-শার্টের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রিপ্রেজেন্ট জানায়, “উদ্ভূত পরিস্থিতির পুরো দায় তারা নেবে।” কিন্তু অপরদিকে ইন্টারস্টফ বলে, “পুরো ঘটনা তারা নিজেদের উদ্যোগে তদন্ত করে দেখবে, কিন্তু মনে হয় না ঘটনার সবকিছু সত্যি।”

সালমা একাই শুধু পরিস্থিতির শিকার নয়, আরও মানুষ আছে দুর্ভোগের মিছিলে। আরও একজন সেলাই শিল্পী স্বামীহীনা দুই সন্তানের একাকী জননী এই কারখানায় ২০১৩ সাল থেকে কাজ করছেন। তিনি বলেন কীভাবে পরিবার এবং প্রতিবেশী থেকে টাকা ধার করে কোনমতে দিনাতিপাত করেছেন। হাজিরার জন্য বরাদ্দ ৬০০ টাকাসহ তিনি মাসে ৮৪৫০ টাকা বেতনে এখানে কাজ করেন। দুপুরের খাবারের সময়সহ সপ্তাহে এখানে তাকে ৫৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ১৯.৪০ পাউন্ডের একটা স্পাইস গার্লস টি-শার্ট কিনতে একজন কারখানা শ্রমিকের এক সপ্তাহের বেশি সময় কাজ করতে হবে।

স্বামী পরিত্যক্তা নারী শ্রমিকটি যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া এবং তার ১৭ বছরের মেয়ে এবং ছোট বোনের স্কুলের ফি টেনেটুনে পরিশোধ করা গেলেও অন্যান্য খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাংসারিক খরচ সমাধা করতে গিয়ে তাকে তার ভাইয়ের কাছ থেকে ২০০০০ টাকা ধার করতে হয়েছে। তার পূর্বের স্বামীর এখন নতুন বিয়ে হয়েছে, ফলে সেও কোন আর্থিক সাহায্য করতে পারে না।

এই সেলাই দিদিমণি তার বয়সের মধ্য তিরিশে এসে বলছেন, অতিরিক্ত সময় কাজ ছাড়া তার সামনে আর কোন বিকল্প নাই। বড় পরিতাপের বিষয় হল, সে এবং সহকর্মীকে মধ্য রাত পর্যন্ত কারখানায় থাকতে হয়। সম্প্রতি কাজের চাপ কিছুটা কমেছে কিন্তু বিভিন্ন কাজে তাকে কারখানায় কাটাতে হয় ১৬ ঘণ্টা। গত ছয় বছরে আমি মনে করতে পারি না কতদিন এত ঘণ্টা কাজ করেছি কিন্তু সংখ্যাটা অবশ্যই অনেক হবে। যদিও টাকার জন্য তাকে মরিয়া হয়ে কাজ করতে হয় তবুও কাজ শেষ হয়ে গেলেই মনে হয় তারও স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছে আছে।

The Spice Girls T-shirts were sold for £19.40, which would take more than a week for a typical machinist to earn. Photograph: Noor Alam/Guardian

একবার তার মেয়ের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগে মেয়েকে একটু সময় দেয়া, শেষ মুহূর্তে প্রশ্নোত্তরগুলো একটু ঝালিয়ে নিতে মেয়েকে সাহায্য করার জন্য সব কাজ শেষে অফিস ছুটির পরে দ্রুত বাসায় যাওয়ার জন্য অফিসের বড়কর্তার কাছে কাঁদতে কাঁদতে আকুতি জানায়। কিন্তু বড়কর্তার মন গলে না, সে জানায় তাকে কারখানায় থাকতে হবে।

যখন আমার ছোট মেয়ের প্রাথমিক পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যায় তখন আমার প্রতিদিনের নিয়মিত কাজের পরেও রাতে অতিরিক্ত কাজ দেয়। একদিন তিনঘণ্টা কেঁদেছিলাম একটু আগে ছুটি নেয়ার জন্য কিন্তু সেই ছুটির আমার কপালে জোটেনি। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমি আমার মেয়ের পরীক্ষার সময়ে তার পাশে থাকতে পারিনি, তাকে সময়মত রান্না করে দিতে পারিনি, পরীক্ষার আগে তার ঠিকঠাক খাওয়া পর্যন্ত হয়নি।”

এগারো ঘণ্টার কাজ শেষে তিনি বলেন, “আমাদের কোন চাওয়া নেই, কারখানা শুধু তাদের সমস্যার কথাই চিন্তা করে, শ্রমিকের কথা চিন্তা করার সময় কই। এটা সত্যিই হৃদয় বিদারক।” কাজের চাপ খুব তীব্র তারপরে আছে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নির্ধারিত সময়। সে তার জন্য বরাদ্দ ১০ দিনের ছুটির আবেদন করতেও ভয় পায়। গত বছর সে মাত্র তিনদিন ছুটি ভোগ করেছিল আর তার আগের বছর সাতদিন।

Bangladeshi garment workers block a road during a protest for higher wages in Dhaka earlier this month. Photograph: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

কারখানার পুরুষ ম্যানেজার শ্রমিকদের নিয়মিত চাকরি চলে যাওয়ার হুমকি দেয়, চিৎকার দিয়ে ধমকে কথা বলে। শ্রমিকদের সাথে এরকম আচরণ খুব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, কেউ ফিরেও তাকিয়ে দেখে না। কারখানায় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কাজের সময় কোন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে গেলে সে চিকিৎসা ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত কিন্তু বিভিন্ন কারণের অজুহাতে সে টাকা শ্রমিকের হাত পর্যন্ত আর এসে পৌঁছায় না। সে একদিন দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যায় এবং সেখানে তার বমি হয় এবং প্রতিবেশীরা তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। সেদিন আর সে কারখানায় পৌঁছাতে পারে না, তার মানে হল সে তার কাজে অনুপস্থিত। ফলে সে সেদিনের বেতনটাও পায় না।

এই সাক্ষাৎকারের সময় যখন তাকে বলা হল পরিবারের জন্য কতই না পরিশ্রম করছেন, তিনি শুধু ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি দিলেন। সাক্ষাৎকারের পরবর্তী সময়টাতে তিনি শান্তভাবে তার জীবনের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আমার সন্তানের লেখাপড়া শেখানোর ক্ষেত্রে কোন আপোষ করি না, সুতরাং তাদের জন্য একটু ভালো খাবার, কাপড়ের ব্যবস্থা করতে আমাকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে অমানসিক পরিশ্রম করতে হয়। এখন শীতকাল, আমার বাচ্চাদের জন্য গরম কাপড় লাগবে কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে তাদেরকে বলছি, মাত্র কয়েকটা দিন একটু অপেক্ষা করো। অথচ এখনো তাদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে পারলাম না।

সে ব্রিটিশ ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলে তারা যেন সে এবং তার মত ভাগ্য বিড়ম্বিত পোশাক শ্রমিকরা প্রতিদিন কী ধরণের অমানবিক জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে সেটা একবার বিবেচনা করে দেখে। সে আরও বলে, “আমরা যে বেতনটা পাই সেটা হল বিশাল সিন্ধুর সামনে ছোট্ট বালুকণা। বেতনের তুলনায় আমরা প্রতিদিন পরিশ্রম করি সেটা চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। কারখানার পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। আমি শুধু এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, আমাদের কাজের আমরা খুবই যৎসামান্য বেতন পাই এবং আমাদেরকে অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে হয়।”

মূল প্রবন্ধ:‘Inhuman conditions’: life in factory making Spice Girls T-shirts