ইয়েমেনের রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা: ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্র এবং এই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এক সমৃদ্ধশালী দেশ। বাণিজ্য এবং কৌশলগত ভৌগলিক কারণে এই অঞ্চলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল পার্সিয়ান, অটোমান, ব্রিটিশ। বর্তমানের ইয়েমেন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস দেখতে হলে ফিরে যেতে হবে ৭০০ শতকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। তখন ইসলামের প্রসার চলছে দিকে দিকে। খলিফা ইসলাম প্রচারের জন্য একের পর এক রাজ্য জয় করে চলেছেন। রাজ্য জয় হলে ধর্মের সাথে পাওয়া যায় প্রভাব, প্রতিপত্তি, রাজনীতি ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ। ক্ষমতা দখল করে ইমামের উত্তরসূরি শিয়া মুসলিমরা ইয়েমেন শাসন করে আসছিল তখন। এরপরে ১১ শতকে ইয়েমেন সরাসরি খলিফার শাসনে চলে আসে। খলিফার শাসন আমলেই ইয়েমেন অটোমান সাম্রাজ্যের আক্রমণের শিকার হয়, দখল করে নেয় দেশটির দক্ষিণাঞ্চল। রুটির মত ভাগ হয়ে যাওয়া দেশটির উত্তরাঞ্চলের দখল নেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ১৯১৮ সালে অটোমান শাসকদের কবল থেকে মুক্ত হলেও ইয়েমেন ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের কলোনি হিসেবে পরাধীনতার ঘানি ও গ্লানি বহন করেছে। তখনও ইয়েমেন দেশটি উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন দুইভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর ইয়েমেন শিয়া আর দক্ষিণ ইয়েমেনে কমিউনিজমের চর্চা চলছিল। ১৯৯০ সালের ২২ মে ইয়েমেনের একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। এইদিন দুই ইয়েমেন মনে করে এখনই সময় সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একত্রিতভাবে একটি অভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করা এবং পুনর্জন্ম নেয়া এই দেশের প্রাতিষ্ঠানিক নাম দেয়া হয় রিপাবলিক অফ ইয়েমেন।

ইয়েমেনে কিভাবে বেজে উঠল যুদ্ধের নাকাড়া: ২০১১ সালে আরব বসন্তে জেগে উঠল যত জীর্ণ প্রাণ। ইয়েমেনের রাজধানী সা’নায় দুর্নীতি বিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে জড়ো হতে লাগল হাজার হাজার গণমানুষের জোয়ার। সেই জোয়ারের ঢেউতে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ভেসে যান ইয়েমেনের তখনকার প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ। সালেহ’র সহকারী আবেদ রাবো হাদি এগিয়ে আসেন শূন্য স্থান পূরণের আশায়। গণজোয়ার কিছুদিনের মধ্যে গণরোষে পরিণত হয়। দেশজুড়ে দেখা দেয় অসন্তোষ। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত আন্দোলনের ফলে দেখা দেয় জাতীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই এই রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গনরোষের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরব উপদ্বীপের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে ঢুকে পড়ে আল কায়েদার মত ভয়ানক ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠন। ২০১১ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে উগ্র মৌলবাদী সংগঠনটি ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল দখল করে কায়েম করেছে সন্ত্রাসের রাজত্ব।

এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় জন্ম নেয় আরো একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। যার নাম হুতি আন্দোলন। হুতি বিদ্রোহীরা নিজেদেরকে আনসার আল্লাহ (আল্লাহর সমর্থনকারী) বলে ঘোষণা দেয়। ইয়েমেনের সরকারের বিপক্ষে দশকব্যাপী চলমান আন্দোলন করে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের শিয়া অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এদিকে হাদির সরকারের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন তলায় এসে ঠেকেছে। আর বিদ্রোহীরা ইয়েমেনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করছে।

২০১৪ সালে যখন হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সা’নায় প্রবেশ করে তখন প্রাণের ভয়ে প্রেসিডেন্ট আবেদ রাবো হাদি দক্ষিণাঞ্চলের শহর এডেনে পালিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট আবেদ রাবো গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন হুতি বিদ্রোহীরা অবৈধভাবে বন্দুকের মুখে ক্ষমতা দখল করেছে। অন্যদিকে হুতি বিদ্রোহীরা প্রচার করতে লাগল সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্ত হাদির বিরুদ্ধে এটা সর্বাত্মক প্রতিরোধ এবং গণজাগরণ।

সৌদি আরব এবং ইরান কিভাবে যুদ্ধে যুক্ত হলো: ইয়েমেনের সাথে সৌদি আরবের ১১০০ মাইলের সীমান্ত আছে। সুতরাং ইয়েমেনে অব্যাহতভাবে শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের উত্থান সৌদি আরবের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল। সুন্নি প্রধান সৌদি আরব ইয়েমেনে শিয়া সম্প্রদায়ের উত্থানকে শিয়া অধ্যুষিত চির প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক শত্রু ইরানের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করে। ইরানকে উচিৎ শিক্ষা দিতে সৌদি আরব কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, মরক্কো, জর্ডান, সুদান, সেনেগালকে সাথে কৌশলগত মৈত্রী গড়ে তোলে। মৈত্রীর সমর্থনে থাকল আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী অবস্থানে ক্রমাগত বিমান হামলা চালানো শুরু করে। এখন সৌদি আরব ইয়েমেনে যে বোমা ফেলছে তার গায়ে লেখা মেইড ইন আমেরিকা, আরবের সামরিক বাহিনী যে বিমানে বোমা বহন করে হুতিদের মাথায় আর বাসস্থানে ফেলে দিয়েছে সে বিমানগুলো কেনা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে, যে পাইলটরা হুতিদের মৃত্যু উপহার দিয়ে আসে তারা আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে।

বিতর্কের শুরু থেকেই ইরান হুতি বিদ্রোহীদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক বা যোগাযোগ অস্বীকার করে আসছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাগণ দাবী করেছে ইরান, ইয়েমেনের প্রতিবেশী ওমানের মাধ্যমের অস্ত্র চোরাচালানি করেছে এবং তাদের কাছে প্রমাণ আছে। ইয়েমেনের হুতি শিয়া এবং ইরানের শিয়া একই মতাদর্শের হলেও তাদের মাঝে ধর্মীয় আচরণগত পার্থক্য আছে। ইরানের শিয়া মতাবলম্বীরা বারোজন ইমামের পরম্পরা মেনে চলেন। পক্ষান্তরে ইয়েমেনের শিয়ারা ইমাম হুসাইনের পৌত্র জায়েদ ইবনে আলীর প্রচারিত অপেক্ষাকৃত উদার নীতি আদর্শের ধর্ম চর্চা। জায়েদের অনুসারী শিয়ারা ধর্মের বিষয়ে পরিবর্তনে বিশ্বাসী এবং তারা মানুষের অতিমানবিকতায় বিশ্বাস করে না। জায়েদ পন্থী শিয়াদের বিস্তার ঘটেছে পাহাড়ি আদিবাসী গোত্র মাঝে। জায়েদ পন্থী শিয়া ইয়েমেনে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কৌশলগত সীমাবদ্ধতার কারণে ইরান বাস্তবে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের অল্প বিস্তর রাজনৈতিকভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে হয়ত সামরিক দিক দিয়েও তাদের সাহায্য করে থাকে।

কিন্তু বিগত ৩৫ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের মাধ্যমে সুন্নিদের হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছে শিয়া। তারা বিভিন্ন কারণে সৌদি আরবের সাথে তিক্ত বিরক্ত। এমনকি গতবছর ইরান সরকার সেদেশের নাগরিকদের হজ্বের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তদুপরি সৌদি মনে করে ইরান ইয়েমেনের শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র, অর্থ, জ্বালানী দিয়ে সাহায্য করে। সব কিছু-মিলে সৌদি আরব ক্ষমতা হারানোর অজানা আশংকায় ভুগছে এবং ইরানকে মনে করে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে সৌদি আরব এবং ইরানের মাঝে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। যেমন তেহরান সরাসরি রাজনৈতিক এবং সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। লেবানন-ভিত্তিক শক্তিশালী ধর্মীয় সংগঠন হিজবুল্লাহকে নৈতিকভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রিয়াদ সিরিয়ার বিদ্রোহী পক্ষকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, মধ্য প্রাচ্যে সৌদি আরব আর ইরানের মাঝে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের “ড্রেস রিহারসেল” চলছে ইয়েমেনে। তাই ইয়েমেনে আক্রমণ করে সম্ভাব্য শত্রু ইরানকে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেয়া যাকে বলে আরকি।

কিভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি হবে? সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরির মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত যুদ্ধ বিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন আবেদ রাবো হাদি। ফলে নিশ্চিতভাবেই আরব পেনিনসুলার এই অঞ্চলে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ, বিমানের সাইরেন থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই। হুতি বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে আলোচনায় বসে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে রাজি আছে। কিন্তু আবেদ রাবো হাদি মনে করছেন ভবিষ্যৎ ইয়েমেন সরকার তাকে হয়ত অন্তর্ভুক্ত করবে না। এদিকে সৌদির নেতৃত্বে বিমান হামলা চলছেই, বেঘোরে মারা পড়ছে নিরীহ প্রাণ। সৌদি বাহিনী শিয়া অধ্যুষিত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর বাইরেও বেসামরিক অঞ্চলে ব্যাপক হামলা পরিচালনা করছে। বাদ যায় নি এমনকি জানাজার নামাজে দাঁড়ানো মানুষ। এক বিমান হামলায় জানাজার নামাজে দাঁড়ানো মানুষের হামলা চালালে সেখানে মারা যায় ১৪০ জন শোকাহত শবযাত্রী। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে প্রথমে সৌদি আরব জানাজার নামাজে হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও পরে চাপের মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলে জন কেরি বলেন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে আর সমর্থন দেবে কি না সেটা ভেবে দেখবে। যদি রিয়াদ হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা বন্ধ করে তবেই কেবল হাদির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসা যেতে পারে। জন কেরির যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবনা সময়ের হিসেবে খুব স্পর্শ কাতর। কারণ এই জানুয়ারি মাসেই নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করলেই জন কেরির মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাবে। যদি শান্তি প্রচেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে যায় তাহলে হয়ত আবেদ রাবো হাদি, সৌদি আরব আর ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসনের সাথে পুরান জুয়া খেলা আবার শুরু করবে। এখন শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা।

দীর্ঘ দিনের গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনের অর্থনীতির মেরুদণ্ড মোটামুটি ধুলোয় মিশে গেছে। হুতি বিদ্রোহীদের সাথে কোন যোগসূত্র না থাকার পরেও অনেক বেসামরিক বাড়ি, ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্রিজ, বিদ্যুতকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনও দেখা গেছে বিয়ে বাড়ির বর যাত্রার লাইনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে মারা গেছে হতভাগা মানুষ। আরব উপদ্বীপের সবথেকে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন। গত বছরের আগস্ট থেকে যুদ্ধ তাদেরকে বাড়ি ছাড়া করছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ সামান্য দুই মুঠ খাবারের জন্য হাহাকার করছে, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতালে এমনকি রাস্তাঘাটে পড়ে আছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশু। নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, ফলে ছড়িয়ে পড়ছে মহামারী কলেরা। বিগত মাসগুলোতে রাষ্ট্র ১.২ মিলিয়ন সরকারী কর্মীর বেতন দিতে পারে নি। হায়রে ধর্মগ্রন্থ রাজনীতি! তোমার কারণে কিছুদিন আগের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ইয়েমেনের আজ কি অবস্থা!!

আসলে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল হুতি বিদ্রোহী দমন ও বিস্তার রোধ করার উদ্দেশ্যে। সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ ও উচ্চাভিলাষী চৌকশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুহম্মদ বিন সালমান শিয়া ধর্মাবলম্বী হুতিদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যেই এই হামলার সূচনা। কিন্তু বিশ্লেষকগণ ভাবছেন ইয়েমেন হয়ে উঠতে সৌদি যুবরাজের ভিয়েতনাম। ইয়েমেনের ইতিহাসে বলে যে ইয়েমেনের যুদ্ধক্ষেত্র সাম্রাজ্যবাদের গোরস্থান। ১৯৬০ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদুল নাসের ইয়েমেনের শিয়া ইমামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ করার পরেই নিজেকে দেখতে পান হাতির মত সমস্যার কাদায় আটকে গেছেন। সৌদি আরবেরও হয়ত একই দশা হবে। কারণ ইতিমধ্যেই ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা হানাদার আরব বাহিনীর আঘাতের পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে।

ইয়েমেনের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা: সৌদি আরবের সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা করুন হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন। দীর্ঘদিন সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে দেশজুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব হাহাকার চরমে। আক্ষরিকভাবে দেশটি দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে। তো কেন সৌদি আরব ইয়েমেনে সামরিক হামলা চালায়? হুতি বিদ্রোহের নামে দেশটাকে কেন তুলোধোনা করে দিচ্ছে? সৌদি আরবের বিমান হামলা দেখে মনে হয় যেন মশা মারতে কামান দাগা হচ্ছে, কিন্তু কেন?

কারণ হতে পারে ইয়েমেনের ভৌগলিক অবস্থান সৌদি আরবের পিছন দরজায় কড়া নাড়ে এবং বিদ্রোহী গ্রুপ সৌদির দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে অতর্কিত হামলা হামলা চালাতে পারে। সৌদি বিমান হামলার জবাবে হুতি বিদ্রোহীদের ছোঁড়া রকেট লাঞ্চারে সৌদি সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সৌদি-ইয়েমেন সংঘর্ষের কারণটা আসলে শুধু ভূ-রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখানে কারণের পিছনের কারণ দেখা যাচ্ছে। মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন। শিয়া-সুন্নির ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব। ইয়েমেনের যুদ্ধ বুঝতে হলে বুঝতে হবে ক্ষমতার কেন্দ্র। মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া অধ্যুষিত দেশগুলোর শাসকগণ সুন্নি রাজপরিবার বা নেতা আর খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা কোনদিন শিয়াদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয়। শিয়াদের ক্ষমতার পালা বদল ঠেকিয়ে রাখতে দরকার সামরিক আগ্রাসন। দরকার আমেরিকার বন্ধুত্ব, তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র, আকাশ থেকে বোমা ফেলার জন্য বিমান আর নৌপথে অবরোধের জন্য যুদ্ধ জাহাজ।

নতুন বছরে ইয়েমেনের বিদ্রোহী সংগঠন হুতি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে তারা বিগত ২০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি চায়। তারা সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবেদ রাবো হাদির এবং নির্বাসিত নেতাদের সাথে মিলে ঐক্যমত্যের সরকার গঠন করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরির মধ্যস্থতায় যদি রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষ থেমে যায় তাহলে সেটা হবে দেশটির জন্য বিশাল আশা এবং এ অঞ্চলের সংকট সমাধানের বাস্তব সম্ভাবনা। ইয়েমেনের সরকার এবং হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যকার জনযুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে দশ হাজার মানুষ, ইতিমধ্যে বাস্তুহারা হয়েছে তিরিশ লাখ নিরীহ মানুষ আর অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেছে ১৪ বিলিয়ন ডলার। ইয়েমেন এই মুহূর্তে চলছে পৃথিবীর সর্বাধিক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। এই সংকটের আগুনে ঘি ঢালছেন ইয়েমেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মালেক আল মেখলেফি। তিনি অস্ত্র বিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলছেন সৌদি আরব সমর্থিত প্রেসিডেন্ট হাদি আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেছেন। তিনি চলমান সংঘর্ষে রক্তপাত আরও বাড়বে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশ্ব গণমাধ্যম যখন সিরিয়া আর ইরাকের আইসিসের নৃশংসতা নিয়ে ব্যস্ত তখন ইয়েমেন সৌদি আরবের হামলা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ থেকে যাচ্ছে অনেকটাই আলোচনার বাইরে।

প্রবন্ধটি Yemen crisis: Who is fighting whom? সহ বিদেশী বিভিন্ন আর্টিকেল অবলম্বনে লেখা