মুক্তমনার অনেকেই আমার লেখার সাথে অনেক আগে থেকে পরিচিত। এদের অনেকেই হয় তো গত একবছরের ওপর থেকে আমার অনুপস্থিতিটা লক্ষ্য করেছেন আর সেই সাথে ভেবেছেন – ভদ্রলোকের হয়েছেটা কী? বেঁচে আছেন তো? হ্যঁ, বেঁচে অবশ্যই ছিলাম, তবে সেটাকে বলবো জীবম-মৃত।

গত কয়েক বছর ধরে আমি আমার চোখের নিম্নগামী দৃষ্টি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেম। ২০০৭ সনে একটা চোখে অস্ত্রপ্রচার করে কোন মতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলাম। বা’ চোখ দিয়ে সামনের জিনিষ গুলো দেখতাম আর ডান চোখ দিয়ে দূরের জিনিষ দেখতাম। ড্রাইভিং এর কাজ চলতো তবে সমস্যা হয়েছিল মনিটারের আর খবরের কাগজ এর লেখা পড়তে। ২০১০ এর অক্টোবরের ৫ তারিখ আবার সার্জারী করা হলো। নয়া একটি লেন্স বের হয়েছে সেটার নাম হছে “রেস্টোর”। আর সেই লেন্সটি সত্যি আমার হারানো দৃষ্টি ‘রেস্টোর’ করেছে। আমার মনে হচ্ছে যৌবনে চোখের যে জ্যোতি ছিল তা আবার হঠাৎ করে ফেরৎ এসেছে। এখন এই সার্জারীর পর দূরের দৃশ্যপট অত্যন্ত স্পষ্ট দেখি আবার টেলিফোন ডাইরেক্টরির ছোট হরফে লিখা নাম-ধাম নামার সবই অনায়াসে পড়তে পারি চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ছাড়া। আমি সারা জীবনই চশমা ব্যবহার করেছি। এখন আর সেটি লাগেনা। বস্তুতঃ বিজ্ঞানই আমাকে অন্ধত্ত্ব থেকে রেহাই দিয়েছে। আমার চোখের ডাক্তার বলেছেন যে মরার আগ পর্যন্ত চোখের দৃষ্টি আমার ঠিক থাকবে।

দেশে ছোট বেলায় দেখেছি যে বয়স্করা চোখে কম দেখতেন। আমার নান-নানী ও সেই বয়সী লোকরা বলতে গেলে চোখে একদমই দেখতে পেতেন না। পঞ্চাশ-ষাট বছরের লোকরা ছানি বা ক্যাটারেক্ট এর জন্য দৃষ্টিহীনা ছিলেন। ১৯৮০ সনের পর উন্নত মানের দেশে (বৈজ্ঞানিক অর্থে) বিকল লেন্স যার ওপর প্রোটিন এর পরত পড়ে ‘অপেক’ বা অস্বচ্ছ হয়েছে তা সরিয়ে একটি সিন্টেথিক লেন্স সেই জায়গায় দেয়া হয়। দেশেও শুনেছি এই সার্জারীর এখন প্রচলন হয়েছে তবে ঠিক লেন্স না বসানোতে অনেকের নয়া সমস্যা হচ্ছে।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা চালু থাকার জন্য আমার মত দৃষ্টিহীনারা আবার নতুন করে পৃথিবীটা দেখতে পাচ্ছি। কপালটা ভালই বলতে হবে! আমার বয়স আরো বিশ বছর বেশী হলে মারা পড়তাম। এই চোখের দৃষ্টিহীনতার জন্য গত এক বছর দরে আমি হতাশায় ভুগেছি। লিখালিখির পাটটি শিকায় উঠেছিল। কোথাও একটি লিখা পাঠাইনি।

দেশে থাকলে হয়তো অনেক আত্মীয়রা পীর বাবাদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন আবার কেউ কেউ হয়তো আবে-জমজমের পানি মক্কা হতে আনিয়ে দিয়ে চোখে ফোটা ফোটা করে দিতে বলতেন। আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন রেশনালিস্ট। তাই সবার পরামর্শ উপেক্ষা করে মর্ডান সেয়েন্সের কাছেই যেতাম অন্ধত্ত্ব দূর করতে।

চোখ যে কেবল আমাদের আছে তা নয়! গরু ছাগল থেকে নিয়ে মাছ কাছিম এদের ও জটিল চোখ আছে আর মূলতঃ সবারই রেটিনাতে আলো পড়ে ইমেজ তৈরী হয়। সব জন্তুর রেটিনাতে ‘লাইট সেন্সিটিভ’ প্রোটিন আছে যে গুলো ইমেজ তৈরী করতে সাহায্য করে। আর ‘আইরিস’ এর পেছনে একটি ‘পাউচ’ বা খোপ আছে যেখানে লেন্স অবস্থান করে। মানুষ, সিম্পাঞ্জী, বানর, গরু, ছাগল, মাছ সবারই লেন্স আছে। এসব লক্ষ্য করলে বেশ বুঝা যায় যে চার্লস ডারউইন এর বৈজ্ঞানিক বিবর্তনবাদ কতটুকু সত্য!

আমি লিখতে বসেছিলাম আমার চোখের ফিরে পাওয়া দৃষ্টির কথা, আর এক কথা দু কথা বলতে গিয়ে ঘুরে ফিরে আবার সেই ডারউইনবাদ।

আনেকদিন পর লিখতে বসে বেশ লাগছে। ১৯৯৬ সনে আমি প্রথম বারের মত আন্তর্জালে লিখা আরম্ভ করি। আজ আবার সেই “ফিলিং” টা আনুভব করছি। আশা করি লিখালিখির পর্বটা চালু রাখবো। তবে না লিখে লিখে মগজে মরচে ধরে গেছে – সেগুলোকে সরাতে হবে প্রথম। টেকনিক জানা থাকলে জানাবেন!