‘মুক্তমনা’ কি? (What Is Mukto-Mona?)

মুক্ত-মনা’ মূলতঃ বাঙ্গালী ও দক্ষিণ এশীয় মুক্তচিন্তক, যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত অলাভজনক আলোচনা চক্র (এ প্রসঙ্গে পড়ুন – আমাদের কথা)। আর মুক্ত-মনা শব্দটি ইংরেজি ‘ফ্রি থিঙ্কার’ শব্দটির আভিধানিক বাংলা।

1. free-think-er n. A person who forms opinions about religion on the basis of reason, independently of tradition, authority, or established belief. Freethinkers include atheists, agnostics and rationalists.
2. freethinker n. One who has rejected authority and dogma, especially in his religious thinking, in favor of rational inquiry and speculation. -The American Heritage Dictionary

সহজ কথায় – মুক্তমনাদের আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে – অন্ধ বিশ্বাসে নয়। কোন আপ্তবাক্য বংশ-পরম্পরায় শুনে এসেছি বলেই সেটাকে অবলীলায় বিশ্বাস করতে হবে বলে মুক্তমনারা মনে করে না। তারা মুক্তমনে প্রতিটি ধারনাকে যাচাই-বাছাই করতে চান। তারা বিজ্ঞানমনস্ক সংশয়ী দৃষ্টি থেকে প্রতিটি মিথ এবং অতিকথাকে বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছান। নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী(agnostic), সংশয়বাদী(skeptic), মানবতাবাদীদের (humanist) সাধারণভাবে ‘মুক্তমনা সদস্য’ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে – ধার্মিকেরা কি তাহলে মুক্তমনা হতে পারেন না? কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে বিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তার নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা তা না করে নিজের ধর্মটিকেই আরাধ্য মনে করেন, কোন কিছু চিন্তা না করেই নিজের ধর্মগ্রন্থকে ‘ঈশ্বর-প্রেরিত’ বলে ভেবে নেন। স্রেফ ঘটনাচক্রে পৈত্রিক-সূত্রে পাওয়া যে ধর্মটিকে ‘নিজের’ বলে মনে করেন, এবং মনে করছেন সেটাই ঈশ্বরের মনোনীত একমাত্র ধর্ম। আমাদের মতে কোন ব্যক্তি স্রেফ শোনা কথার ভিত্তিতে বাইবেল, কোরান বা বেদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে, বা নবী-রসুল-পয়গম্বর-মেসীয়তে বিশ্বাস করে নিজেকে কখনোই ‘ফ্রি থিঙ্কার’ বা মুক্ত-মনা বলে দাবী করতে পারেন না। মুক্ত মনাদের আস্থা তাই বিশ্বাসে নয়, বরং যুক্তিতে।

আরো জানার জন্য পড়ুন:

মুক্ত-মনাদের কি নৈতিকতার কোন ভিত্তি আছে? (Do mukto-monas have a basis for morality?)

‘নৈতিকতা’ ব্যাপারটিকে মুক্ত-মনারা কোন গায়েবী-বস্তু বলে মনে করে না। নৈতিকতা বিষয়টি মূলত জৈববিবর্তনীয় পথেই উদ্ভূত (এ প্রসঙ্গে মুক্তমনা থেকে পড়ুন – বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -১, বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -২)। সমাজে চারিদিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, বহু নাস্তিক, ধর্মে-অবিশ্বাসী মানুষজন আছেন যারা অন্য সবার মতই রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে চলেন, এবং ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে কেউ স্নেহময়ী মাতা অথবা কেউ দায়িত্ববান পিতা। অন্য মানুষের দুঃখ দেখে তারাও কাতর হন, দুস্থ মানুষের সেবায় তারাও অন্য সবার মতই এগিয়ে আসেন। কাজেই ধর্ম কোনভাবেই নৈতিকতার ‘মনোপলি ব্যবসা’ দাবী করতে পারে না। আসলে সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোন বিশেষ ধর্মের আনুগত্যের উপর কিন্তু মানুষের নৈতিক চরিত্র-গঠন নির্ভর করে না, নির্ভর করে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আর সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপর। অধিকাংশ আস্তিকেরাই ‘ধর্ম’ এবং ‘নৈতিকতা’কে এক করে ফেলেন। ভাবেন ধর্মে আনুগত্য না থাকলে বা ঈশ্বরের ভয় না থাকেল সমাজ বুঝি উচ্ছন্নে যাবে। কিন্তু ঈশ্বরের ভয় দেখিয়েই যদি মানুষ-জনকে পাপ থেকে বিরত রাখা যেত, তা হলে আর রাষ্ট্রে পুলিশ-দারোগা, আইনকানুন, কোর্ট-কাচারি কোন কিছুর ই তো আর প্রয়োজন হত না। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ১৯৮৮ সালে ভারতের জেলখানায় দাগী আসামীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপের যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল অবাক করার মত। আসামীদের শতকরা ১০০ জনই ঈশ্বর এবং কোন না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী । আজ বাংলাদেশে জরিপ চালালেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে। ঈশ্বরে বিশ্বাস, পরকালে বিশ্বাস, বেহেস্তের লোভ বা দোজখের ভয় কোনটাই কিন্তু অপরাধীদের অপরাধ থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারেনি। আল্লাহর গুনার ভয়েই যদি মানুষ পাপ থেকে, দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারত, তবে তো বাংলাদেশ এতদিনে আক্ষরিক অর্থেই বেহেস্তে পরিণত হত। কিন্তু বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা আজ কী দেখছি? বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ জন লোকই আল্লা-খোদা আর পরকালে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতিতে এই দেশটিই আজ পৃথিবীর শীর্ষে। ধর্মে বিশ্বাস কিন্তু দেশবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারেনি। তাই আবারও ঠিক একই কথার উল্লেখ করতে হচ্ছে, ধর্ম কোনভাবেই নৈতিকতার ‘মনোপলি ব্যবসা’ দাবী করতে পারে না। নাস্তিক বা মুক্তমনারা কি ধার্মিকদের থেকে কম নৈতিক? এটা নির্ভর করছে ‘নৈতিকতা’ বলতে আসলে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে। যদি বিধাতার প্রতি বা ধর্মীয় আইন কানুনের প্রতি অন্ধ আনুগত্য কে ‘নৈতিকতা’ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করা হয়, তবে তো মুক্ত-মনারা অবশ্যই ‘অনৈতিক’। তবে সাধারণভাবে কেউ যখন নৈতিকতার কথা বলেন তিনি মূলত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায়-অন্যায়ের কথাই মূলত বলতে চান। আর সে হিসেবে মুক্ত-মনারা মোটেও অনৈতিক নন। অন্তত গবেষণায় কিন্তু তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অধিকাংশ মুক্ত-মনারাই মূলত মানবতাবাদী। অধিকাংশ মুক্ত-মনারা ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করেছেন, ধর্মের মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা উপলব্ধি করেই। তাই চুরি-ডাকাতি-খুন-ধর্ষণের মত সামাজিক অপরাধকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন তারা।

আরো জানার জন্য পড়ুন:

মুক্ত-মনাদের কাছে জীবনের কোন উদ্দেশ্য আছে কি? (Do mukto-monas have meaning in life?)

মুক্ত মনারা জীবনের উদ্দেশ্য ধর্মগ্রন্থের পাতায় বা অলীক ঈশ্বরের উপাসনায় খোঁজেন না, খোঁজেন সমাজে। কে কি ভাবে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিবে তা তার ব্যক্তি সত্ত্বার উপর নির্ভর করছে। যে কোন কিছুই তাদের কাছে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে আসতে পারে, তবে তা সীমাবদ্ধ থাকতে হবে মানবিক নৈতিকতার মধ্যেই। দেখা গেছে বহু মুক্তমনাই জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পান জ্ঞান আহরণে, সমাজ উন্নয়নে, মানবিকতার প্রসারে, কুসংস্কার দূরীকরণে, সাহিত্য বা কাব্য চর্চায়, সঙ্গীতে, আনন্দে, ভালবাসায় কিংবা খেলাধুলায়। এগুলোর বাইরে, মুক্তমনার পক্ষ থেকে বহু মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে অতীতে। যেমন ২০০৪ সালে ভয়ানক বন্যার সময় মুক্তমনার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্রের চরে বন্যাবিধ্বস্ত একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল আমরা পুনর্নির্মাণ করেছিসিডর সাইক্লোনেও আমরা উদ্যোগী হয়ে যথাসম্ভব সাহায্য করেছি। অবশ্য এটাও সত্য অনেক মুক্তমনাই পাশাপাশি ধর্মীয় এবং সামাজিক অসঙ্গতি এবং অত্যাচার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। তারা এটা করেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই। আমরা অতীতে পিটিশন করেছি, বক্তব্য রেখেছি কিংবা জনসংযোগ করেছি ভারতে অবৈধ নদী-সংযোগের প্রতিবাদে, গুজরাটে মুসলিম জনগণের উপরে নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে, কানসাটে নিষ্ঠুরভাবে কৃষক-বিদ্রোহ দমনের প্রতিবাদে, জাফর ইকবাল এবং হাসান আজিজুল হককে সাম্প্রদায়িক মহল থেকে মৃত্যু-হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে, সি.আর.পি -এর প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালরি টেলরের অপসারণের প্রতিবাদে, কিংবা সালমান রুশদি অথবা তসলিমা নাসরিনের উপর ফতোয়ার প্রতিবাদে কিংবা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার নিপীড়নের প্রতিবাদে। অতি সম্প্রতি আমরা অসুস্থ প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক নির্মল সেনের চিকিৎসার জন্য যথাসম্ভব সাহায্য করেছি। ব্লেসফেমির বিরুদ্ধে মানবতাকে বাঁচাতে পাকিস্তানের কারাদণ্ড প্রাপ্ত ফ্রিথিঙ্কার ড. ইউনুস শেইখকে বাঁচাতে আমরা একসময় বিশ্বময় আন্দোলন গড়ে তুলি এবং অবশেষে তাকে মুক্ত করি। বহু মুক্তমনা ধর্মের মোহ থেকে মানুষকে মুক্ত করেতে চান ধর্মকে বিষবৃক্ষ মনে করেন বলেই।

আরও জানার জন্য দেখুন:

সবকিছুরই তো একটা সৃষ্টিকর্তা আছে, তাই না? আমাদের এই জটিল বিশ্ব কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্ট হওয়া সম্ভব? (Doesn’t the complexity of Universe require a creator?)

সবকিছুরই যদি একটা সৃষ্টিকর্তা থাকে – আর কোন কিছুই যদি স্রষ্টা বা ঈশ্বর ছাড়া সৃষ্টি হতে না পারে, তবে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বরকে বানালই বা কে? কোথা থেকেই বা তিনি এলেন? বিশ্বাসীরা সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই পেতে সোচ্চারে ঘোষণা করেন যে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ। তার তার উদ্ভবের কোন কারণও নেই। তিনি অনাদি- অসীম। এখন এটি শুনলে অবিশ্বাসীরা/যুক্তিবাদীরা স্বভাবতই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাইবেন, ‘ঈশ্বর যে স্বয়ম্ভূ তা আপনি জানলেন কি করে? কে আপনাকে জানালো? কেউ জানিয়ে থাকলে তার জানাটিই যে সঠিক তারই বা প্রমাণ কি? আর যে যুক্তিতে ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ বলে ভাবছেন, সেই একই যুক্তিতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরও সৃষ্টি স্রষ্টা ছাড়া এটি ভাবতে অসুবিধা কোথায়?’ আসলে মুক্ত-মনারা মনে করেন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে কোন পরম পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় নয়, বরং নিতান্তই প্রাকৃতিক নিয়মে। সব কিছুর পেছনে সৃষ্টিকর্তা থাকতে হবে, কিংবা সব ঘটনার পেছনেই কারণ থাকতে হবে, এটি স্বতঃসিদ্ধ বলে ভাবে নেওয়ার আসলেই কোন যৌক্তিক কারণ নেই। আকাশে যখন ‘সন্ধ্যার মেঘমালা’ খেলা করে, কিংবা একপশলা বৃষ্টির পর পশ্চিম আকাশে উদয় হয় রংধনুর, আমরা সত্যই মুগ্ধ হই, বিস্মিত হই। কিন্তু আমরা এও জানি এগুলো তৈরি হয়েছে স্রষ্টা ছাড়াই পদার্থবিজ্ঞানের কিছু সূত্রাবলী অনুসরণ করে। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা সকলেই জানেন, রেডিও অ্যাকটিভ ডিকের মাধ্যমে আলফা বিটা, গামা কণিকার উদ্ভব হয় প্রকৃতিতে কোন কারণ ছাড়াই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এছাড়াও ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’ এর ঘটনাও একটি কারণবিহীন ঘটনা বলে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হওয়া কোন অসম্ভব বা অলৌকিক ব্যাপার নয়, এবং এভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হলে তা পদার্থবিজ্ঞানের কোন সূত্রকেই আসলে অস্বীকার করা হয় না। সেজন্যই বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং লিওনার্ড ম্লোডিনো তাদের সাম্প্রতিক গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বইয়ে বলেছেন,

‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র‌্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই ।’

কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসরণ করে শূন্য অবস্থা থেকে যে বিশ্বজগৎ তৈরি হতে পারে- এ ধারণাটি প্রথম ব্যক্ত করেছিলেন নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির এডওয়ার্ড ট্রায়ন, ১৯৭৩ সালে। ১৯৮১ সালে (অ্যালেন গুথ এবং আঁদ্রে লিন্ডে প্রমুখের গবেষণায়) মহাজাগতিক স্ফীতি বা ইনফ্লেশন তত্ত্বের আবির্ভাবের পর থেকেই বহু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী প্রাথমিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাজাগতিক স্ফীতিকে সমন্বিত করে তাদের মডেল বা প্রতিরূপ নির্মাণ করেছেন। বহু বৈজ্ঞানিক জার্নালে সেগুলো প্রকাশিতও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ধারণাটি যদি স্রেফ বানোয়াটই হত, তবে বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে এই ধারণার উপর আলোকপাত করা পেপারগুলো সাম্প্রতিক সময়ে কখনই প্রকাশিত হত না। গুথ এবং লিন্ডে প্রস্তাবিত স্ফীতি তত্ত্বের বাইরেও সাম্প্রতিক তত্ত্ব হিসেবে আছে পল স্টেইনহার্ট এবং নেইল টুর্কের অনন্ত ‘সাইক্লিক মডেল’ যা কোন ধরনের উৎপত্তি ছাড়াই মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে। মুক্ত-মনারা মনে করেন, মহাবিশ্বের অস্তিত্ব এবং জটিলতা ব্যাখ্যার জন্য দরকার নিরপেক্ষ ভাবে ‘বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান’ এবং গবেষণার, ঈশ্বরে বিশ্বাস নয়।

আরও জানার জন্য পড়ুন:

মুক্ত-মনারা কেন এত ধর্ম বিরোধী? (Why are freethinkers so opposed to religion?)

মুক্ত-মনারা ধর্ম-বিরোধী নয়, বলা যায় অনেক মুক্তমনাই ধর্মের কঠোর সমালোচক। কারণ তারা মনে করে ধর্ম জিনিসটা পুরোটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুক্ত-মনারা সর্বদা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আস্থাশীল, আজন্ম লালিত কুসংস্কারে নয়। কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ আসলে নিজের সাথে প্রতারণা বই কিছু নয়। তবে মুক্ত-মনাদের ধর্ম-বিরোধী হওয়ার একটা বড় কারণ হল, ধর্ম গুলোর মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা । প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন আয়াত এবং শ্লোকে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে ঢালাওভাবে, কখনো দেয়া হয়েছে হত্যার নির্দেশ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্ম আসলে জিহাদ, দাসত্ব, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হোমোফোবিয়া, অ-সহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন এবং সমঅধিকার হরণের মূল চাবিকাঠি হিসেবে প্রতিটি যুগেই ব্যবহৃত হয়েছে।

আরও জানার জন্য পড়ুন :

ধর্ম মেনেও কিছু লোক ভালই আছে- মানবিকতা তো বিসর্জন দেয় নি ? (There are many good people despite their belief, right?)

অবশ্যই। তবে যারা ভাল এমনিতেই ভাল। ধর্ম মানার কারণে নয়। তারা ভাল কারণ তারা কাণ্ডজ্ঞান বা কমন-সেন্সের (common sense) চর্চা করেন, ধর্মীয় আইনের নয়। কোরানে নির্দেশিত থাকলেও অনেক মুসলমানই আছেন যারা কাফির দেখলেই জিহাদি জোশে তাদের উপর নাঙ্গা তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন না, কিংবা তাদের বন্ধুত্ব প্রত্যাখ্যান করেন না। কিংবা অনেক হিন্দুই মুসলমানের ছোঁয়া লাগলে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করার জন্য দৌড় লাগান না, কিংবা তার আত্মীয়াকে সহমরণে যেতে প্রলুব্ধ করেন না। মানুষের সাথে ভাল ব্যবহারের দিকগুলো আসলে আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে সবাই সামাজিক শিক্ষা হিসেবে সমাজ, পরিবেশ আর অভিভাবকদের থেকে গ্রহণ করে, ধর্মগ্রন্থ থেকে নয়। আগেই বলা হয়েছে, মানুষের সুগুণ বা সু-বৈশিষ্ট্যের জন্য ধর্ম কখনই ‘মনোপোলি ব্যবসা’ দাবী করতে পারে না। সামাজিক এবং নৈতিক উন্নতির জন্য যে সমস্ত মনীষীরা এ পৃথিবীতে অবদান রেখেছেন তাঁদের একটা বিরাট অংশই ধর্মীয় নিগড় থেকে মুক্ত ছিলেন, যেমন – আলবার্ট আইনস্টাইন, বার্ট্রান্ড রাসেল, চার্লস ডারউইন, এলিজাবেথ স্ট্যান্টন, থমাস এডিসন, মারি কুরী, এইচ. এল. মেনকেন, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, আব্রাহাম কোভুর, আরজ আলী মাতুব্বর, আহমদ শরীফ, বিদ্যাসাগর, মেঘনাদ সাহা, ইলা মিত্র এবং আরো অনেকে, যাদের দ্বারা মানবতা আকণ্ঠ সমৃদ্ধ হয়েছে।

আরও জানার জন্য পড়ুন:

হিটলার এবং স্ট্যালিন তো নাস্তিক ছিলেন। তাদের মত ধর্মহীন নেতারাও গণহত্যা করেছেন (Hitler and Stalin were Atheists. They were mass-murderers)

অনেক ধার্মিকই নাস্তিকদের উদাহরণ হিটলার স্ট্যালিন, মাও কিংবা পলপটের মত দাম্ভিক ডিক্টেটরের কথা নিয়ে এসে প্রসঙ্গ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে সচেষ্ট হন। তারা হিটলার স্ট্যালিন প্রমুখের উদাহরণ নিয়ে এসে বুঝিয়ে দিতে চান যে, ধর্মের মত নাস্তিকতার কুফলও কম নয়। কিন্তু ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুল।
হিটলার এবং স্ট্যালিনের প্রসঙ্গে আসা যাক। হিটলার কখনোই নাস্তিক ছিলেন না। হিটলার নিজেই তার বই ‘Mein Kampf’-এ বলেছেন তার ইহুদি নিধনের কিংবা এ ধরনের যাবতীয় কাজকর্মের পেছনে অনুপ্রেরণা ছিল স্বয়ং ঈশ্বর (Adolf Hitler, Mein Kampf , p 60)-

“Hence today I believe that I am acting in accordance with the will of the Almighty Creator: by defending myself against the Jew, I am fighting for the work of the Lord.”

নিজেকে ‘ভাল খ্রিষ্টান’ হিসেবে পরিচিত করে হিটলার তার বিভিন্ন বক্তৃতায় দিয়েছেন। হিটলারের একটি বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করা যাক প্রাসঙ্গিক কিছু লাইন (The Speeches of Adolf Hitler, pp. 19-20)–

“My feelings as a Christian points me to my Lord and Savior as a fighter. It points me to the man who once in loneliness, surrounded by a few followers, recognized these Jews for what they were and summoned men to fight against them and who, God’s truth! was greatest not as a sufferer but as a fighter. In boundless love as a Christian and as a man I read through the passage which tells us how the Lord at last rose in His might and seized the scourge to drive out of the Temple the brood of vipers and adders. How terrific was His fight for the world against the Jewish poison. To-day, after two thousand years, with deepest emotion I recognize more profoundly than ever before the fact that it was for this that He had to shed His blood upon the Cross. As a Christian I have no duty to allow myself to be cheated, but I have the duty to be a fighter for truth and justice… And if there is anything which could demonstrate that we are acting rightly it is the distress that daily grows. For as a Christian I have also a duty to my own people.

প্রোটেস্টেন্ট খ্রিষ্টান নেতা মার্টিন লুথারের ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক গ্রন্থ ‘On the Jews and their Lies’ যে হিটলারকে দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করেছিল, তাও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।

আর স্ট্যালিন নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বিরোধী লোকজনের উপর খুন, জখম, জেল- জুলুম করেননি, সেগুলো করেছিলেন কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে। কমিউনিজম আর নাস্তিকতা এক নয়। আমরা ছেলেবেলায় স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়, কিংবা ধর্ম বইয়ে লেখা থাকে, সকল নবী রসুল নহে, তবে সকল রসুলই নবী; ঠিক তেমনি আমরা জানি সব নাস্তিক কমিউনিস্ট নয়। কাজেই স্ট্যালিন, পলপটের মত নেতাদের কমিউনিজমের কারণে হত্যার দায়ভাগ নাস্তিকদের বহন করার কোন কারণ নেই। আর স্টালিনের ব্যাপারে মজার ব্যাপার হল, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে দাপ্তরিক ভাবে ধর্মকে অস্বীকার করা হলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্ট্যালিন রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। ইতিহাসবিদ এডভার্ড রেডজিন্সকি (Edvard Radzinsky) তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, স্ট্যালিনের সরকারের সাথে চার্চের সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো । এই সম্পর্ক এমনি এমনি তৈরি করা হয়নি, হয়েছিলো এক শ্রেণীর মানুষকে চার্চের সহায়তায় দমিয়ে রাখার জন্য, যারা রাষ্ট্রীয় চিন্তা ভাবনার প্রতি চরম আনুগত্য প্রকাশ করেনি। শতবছর ধরে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সাথে যারিষ্ট সিক্রেট পুলিশের গোপন সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো, সুতরাং এটা অবাক হবার মতো কোন ব্যাপার না যে, স্ট্যালিন এবং বর্তমান রাশিয়ার প্রধান সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুতিন অর্থোডক্স চার্চকে হাতে রেখেছেন। এদের কাজের জন্য নাস্তিকতাকে দায়ী করা সমীচীন নয়। বার্ট্রান্ড রাসেল, রিচার্ড ডকিন্স কিংবা স্টিফেন ওইনবার্গ – এদের মত ব্যক্তিত্বরাও নিজেদের ‘নাস্তিক’ হিসেবে পরিচিত করেন এবং নাস্তিকতা প্রচার করেন কোন রকম রাখঢাক না রেখেই – কিন্তু কই তারা তো খুন রাহাজানি বা গণহত্যা করেননি কিংবা করছেন না। নাস্তিকতা কোন বিশ্বাসের ব্যাপার নয় । নাস্তিকদের কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, যেটা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন, তাই ধর্মগ্রন্থের প্রেরণায় লাদেন, স্ট্যালিন, হিটলার, আল কায়দা কিংবা বজরংদলদের মতো নাস্তিকেরাও মানুষ হত্যায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন তা ঢালাওভাবে মনে করা ভুল। নাস্তিকদের ম্যানুয়ালে লেখা নাই ‘যেখানেই পাও ইহুদী নাসারাদের হত্যা কর’, কিন্তু বহু ধর্মের ম্যানুয়ালেই আছে। নাস্তিকেরা যে অপরাধ করে না তা নয়, কিন্তু সেগুলো নাস্তিকতার কারণে করেন না, হয়তো করেন কোন ব্যক্তিগত কারণে কিংবা কোন রাজনৈতিক কারণে, নাস্তিকতার জন্য নয়।

হিটলার-স্ট্যালিনের ব্যাপারটা আরো সরলভাবে বোঝানো যায়। স্ট্যালিন এবং হিটলার দুজনেরই গোঁফ ছিলো। এখন কেউ যদি যুক্তি দেন গোঁফ থাকার জন্যই তারা গণহত্যা করেছেন, কিংবা গোঁফ-ওয়ালা ব্যক্তিরাই গণহত্যা করে – এটা শুনতে যেমন বেখাপ্পা এবং হাস্যকর শোনাবে, ঠিক তেমনি হাস্যকর শোনায় কেউ যখন বলেন, নাস্তিকতার জন্যই কেউ স্ট্যালিন বা হিটলারের মত গণহত্যা করেছেন।

আরও জানার জন্য পড়ুন:

মুক্ত-মনারা কি ওরিয়েন্টালিস্ট নাকি কমিউনিস্ট ? (Are freethinkers orientalists or communists?)

কোনটিই নয়। সাধারণভাবে মুক্তমনারা মানবতাবাদী। যেখানেই মানবতাকে পদদলিত করার আলামত পাওয়া যায়- সেখানেই মুক্তমনারা প্রতিবাদী। ৯/১১ এর বিয়োগান্তক ঘটনার পর সঙ্গত কারণেই আমরা ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। কেউ কেউ তখন ভেবে নিয়েছিলেন মুক্তমনারা বোধ হয় মুসলিম-বিদ্বেষী। সেই মুক্তমনারাই আবার যখন অনৈতিক ইরাক যুদ্ধ সমর্থন না করে মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো, কিংবা কাশ্মীর বা গুজরাট ইস্যুতে নিপীড়িত মুসলিমদের সমর্থন করেছিলো, কিংবা বিগত মার্কিন নির্বাচনে ম্যাকেইনের বিপরীতে ওবামাকে সমর্থন জানিয়েছিল – তখন আবার কেউ কেউ ভুলভাবে মনে করেছিলেন মুক্তমনারা বোধ হয় মুসলিমদের তোষণ-কারী। আসলে মুক্তমনারা কোন কিছু বিদ্বেষী বা তোষণ-কারী নয় – মুক্তমনারা আসলে মানবতার পক্ষে। অনেক মুক্তমনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, আবার একইসাথে কমিউনিজমেরও ঘোর বিরোধী। তবে কিছু মুক্ত-মনা আছেন যারা বামপন্থি রাজনীতির সাথে যুক্ত, এবং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের চর্চা করেন এবং এটিকে ‘বৈজ্ঞানিক’ বলে মনে করেন। মুক্ত-মনা ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য মূলতঃ ফিলোসফিকাল, পলিটিকাল নয়। মুক্ত-মনা কোন রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের সাথে যুক্ত নয়, যদিও মুক্ত-মনার সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্টই সচেতন।

মুক্তমনায় ইসলাম-বিরোধী লেখা কেন বেশি প্রকাশিত হয় ? (Why does Mukto-Mona publish article on Islam more?)

এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেক সমালোচকই বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এ ধরণের সমালোচনা করে থাকেন। যারা এ ধরণের সমালোচনা করেন তারা যদি আমেরিকার কিংবা সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টান বংশোদ্ভূত ফ্রিথিঙ্কারদের সাইটগুলো দেখেন (যেমন infidels.org, secularhumanism.org, nobeliefs.com ইত্যাদি) তাহলে দেখবেনে সেখানকার বেশিরভাগ লেখাই বাইবেলকে আর যিশুকে খন্ডন করে লেখা। ইসলাম বা অন্য ধর্মের উপর লেখা খুব কমই চোখে পড়বে। এর কারণ হল, ওখানে যারা লেখেন, তারা প্রায় সবাই খ্রীস্টান ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা মুক্তমনা। তারা অন্য ধর্ম সম্বন্ধে যতটা না পরিচিত, তার চেয়ে ঢের বেশি পরিচিত নিজের ছোটবেলাকার বিশ্বাস খ্রিস্ট ধর্মের সাথে। স্বাভাবিকভাবে নিজ ধর্মের গোঁড়ামিগুলোকে নিয়ে লিখতেই তারা সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একইভাবে মুক্তমনায় যেহেতু অধিকাংশ ফ্রিথিঙ্কারই বাংলাদেশের মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেছেন, তারা ইসলামকে খন্ডন করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। থমাস জেফারসন আর বাট্রান্ড রাসেলেরা বাইবেলকে খন্ডন করে লেখা লিখেছন, তেমনি আমাদের আরজ আলী লিখেছেন ইসলামকে নিয়ে। স্যাম হ্যারিস যে কারণে A letter to a Christian Nation এর মত বই লেখেন, ইবনে ওয়ারাকও সেই প্ররণাতেই Why I am not a Muslim লিখেন। আপনি কখনো মুক্তচিন্তার স্বপক্ষে লিখতে গেলে আপনার ছোটবেলাকার কিংবা আপনার চারপাশের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই লিখবেন। এটাই কি স্বাভাবিক নয়? কিন্তু তারপরও বলা যায়, এখানে কেউ হিন্দু ধর্মকে খন্ডন করে বা খ্রীস্ট ধর্মের গোঁড়ামিকে খন্ডন করে লেখা লিখলে কখনো বাধা দেয়া হয় না। এসাইটে বহু লেখা আছে হিন্দু ধর্মের সতীদাহ, বৈদিক বিজ্ঞানকে খন্ডন করে, অনেক সদস্যই এগুলো নিয়ে লিখেছেন। ‘ভগবদ্গীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ এবং অন্যান্য’, ‘সনাতন ধর্মে’র দৃষ্টিতে নারী, ‘সবই ব্যাদে আছে’, Why I am not a Hindu, Bible Contradictions, Cow’s Excreta as Medicine: Insult to Humanity, Dancing With Dead Bodies in West Bengal, Why Should an Indian Rationalist Criticize Hinduism The Most, ইসকনের জৈববিবর্তন পাঠ, অস্পৃশ্য ব্রাহ্মণ্যবাদ,স্ববিরোধী বিবেকানন্দ, মনু’র বৈদিক চোখ : নারীরা মানুষ নয় আদৌ এ ধরনের লেখা যে কেউ সার্চ করলেই মুক্তমনায় খুঁজে পাবেন। আমরা কোন বিশেষ ধর্মের প্রতিপক্ষপাতিত্ব করি না। কিন্তু আবার তা বলে লেখকদের নির্দেশও দিতে পারি না তারা কি নিয়ে লিখবেন সেটা বলতে। সবাই মুক্তমনে লিখুক, সেটাই প্রত্যাশা করা হয়। তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য। অন্যান্য ‘এন্টি ইসলামিক সাইটের’ সাথে আমরা মুক্তমনার পার্থক্য করি। সেজন্যই মুসলিমরা যখন কোথাও নির্যাতিত বা নিপীড়িত হয়, তখন লক্ষ্য করবেন – আমরা তার প্রতিবাদ করতে দ্বিধান্বিত হই না। যখন গাজায় উপর ইসরায়েল বর্বর আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন মুক্তমনা থেকেই লেখা হয়েছিলো- ‘ইসরায়েলের বর্বরতার সমাপ্তি হওয়া প্রয়োজন’। সম্প্রতি ফ্রিডম ফ্লোটিলার উপর ইসরায়েলী হামলার পর আমাদের ব্লগ সদস্যরা প্রতিবাদ করেছেন। এর আগেও আমরা ইরাকে নগ্ন মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, লিখেছিলাম ‘মার্কিন সভ্যতার বিভৎস ছবি’। মুক্তমনা বারেবারেই দাঁড়িয়েছে প্যালেস্টাইনের অধিকার রক্ষায়, কিংবা কাশ্মিরী স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের পাশে কিংবা যেখানেই মুসলিমরা অত্যাচারিত হয়েছেন সেখানে। তাদের অধিকারের জন্য পিটিশনও করা হয়েছিলো। তখন অনেকেই আবার গাল মন্দ করেছিলো – মুক্তমনা নাকি ইসলামিস্ট সাইট হয়ে গেছে। আসলে মুক্তমনা কিছুই হয়নি, বরাবরই থেকেছে মানবতার পক্ষে। সেই আলোটুকুই মুক্তমনায় আমরা জাগিয়ে রাখতে চাই। সত্যিকার মুক্তমনার চোখে ‘ইসলাম’ আর ‘মুসলিম’ শব্দ দুটি এক নয়। ইসলাম হচ্ছে আর ক’টি সাধারণ বিশ্বাসের মত একটি বিশ্বাসমাত্র যা কখনই সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। কিন্তু ‘মুসলিম’ তো কোন বিশ্বাস নয়, মুসলিমরা হল রক্ত-মাংসের মানুষ – যাদের রয়েছে আশা, আকাঙ্খা, ভালবাসা আর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবার অধিকার। তাই ইসলামের কট্টর সমালোচক হয়েও বহু মুক্তমনাই গুজরাত-কাশ্মীর-প্যালেস্টাইন ইস্যুতে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে এসে দাড়াতে কোন অনীহা বোধ করেন না। এই ‘মানবতাবাদী’ প্রেরণাটুকু আমরা এই সাইটে জাগিয়ে তুলতে চাই। আমরা চাই – জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিষেষে আমাদের মানবতা জাগ্রত হোক।

মুক্তমনা ব্লগে কি ধরণের লেখা প্রকাশিত হয় ? (What type of articles are being published in Mukto-Mona blog?)

মুক্তমনায় প্রায় সব ধরণের লেখাই প্রকাশিত হয় – সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা হোক আর হোক না সাহিত্যভিত্তিক রচনা।তবে তারপরেও মুক্তমনা বাংলা ব্লগের একটি উদ্দেশ্য আছে, আর সেটি হচ্ছে যে কোনো ধরনের প্রগতিশীল, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার সাথে সম্পর্কযুক্ত রচনাকে প্রাধান্য দেয়া। কাজেই এই ব্লগের সদস্য হতে হলে এবং এখানে লেখা প্রকাশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই মুক্তমনার উদ্দেশ্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানার জন্য ব্লগের নীতিমালা দেখে নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

 

কি ভাবে মুক্তমনা হওয়া যায় ? কিভাবে মুক্ত-মনাদের সাহায্য করা যায় ? (How can I support freethought?)

মুক্তমনা হওয়ার জন্য দরকার ‘মুক্ত-মন’, আর কিছুই নয়। যে কোন অন্ধ-বিশ্বাস এবং কুপমুন্ডুকতার বিরোধী হতে হবে। প্রগতিশীল চিন্তাচেতনাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্মোন্মাদদের দ্বারা যারা সামাজিকভাবে নিগৃহীত, নির্যাতিত, তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। আপনার চিন্তাধারা, মতামত ব্যক্ত করে আমাদের কাছে লিখতে পারেন। লেখা পাঠানোর নিয়ম এখানে বলা আছে। আপনার লেখা মনোনীত হলে আমাদের ব্লগে প্রকাশিত হবে এবং পরবর্তীতে বিবেচিত হলে মুক্তান্বেষা পত্রিকার সম্পাদকের কাছে পাঠানো হবে।