লেখেছেন:

কয়েক বছর আগে  আমরা একটা ই-বই করার জন্য লেখা আহবান করেছিলাম। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক খোঁজার  ঐকান্তিক প্রয়াস ছিলো সেই আহ্বানে।  সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই লেখা পাঠিয়েছিলেন। সে লেখাগুলো থেকে বাছাই করা লেখা নিয়ে করা হয়েছিলো ই-বইটি – বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়? শিরোনামে ।    ই-বইটি মুক্তমনায়  প্রকাশের পরই পাঠকদের মধ্যে বিশাল সাড়া পড়ে যায়। খুব কমসময়ের মধ্যেই বইটি ইন্টারনেটে হয়ে উঠে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পাঠকদের আগ্রহের পরিসীমা সেখানেই থেমে থাকেননি। অনেকেই কেবল ই-বই নয়, ছাপানো বই হিসেবে  একে দেখতে চেয়েছিলেন। আমরাও উদ্যোগ নিলাম। অঙ্কুর প্রকাশনী (চারদিক)  সে সময় আগ্রহ প্রকাশ করে বইটি ছাপানোর জন্য।

তারপর পদ্মা মেঘনায় জল গড়িয়ে গেছে অনেক। বছরের পর বছর কেটে গেছে, প্রতিবারের বইমেলাতেই আমরা ভেবেছি এবারেই বোধ হয় কাঙ্ক্ষিত বইটি বেরুচ্ছে।  কিন্তু বেরোয়নি। অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকে।  আজ আমরা অত্যন্ত  আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে যাচাই-বাছাই, ফন্ট কনভার্শন,  টাইপ সেটিং, প্রুফ-রিডিং প্রভৃতি স্তর পার  হয়ে  বইটি  অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে।  হ্যাঁ, বইটির প্রথম খণ্ড বাজারে বেরিয়েছে। এই খণ্ডের নাম রাখা হয়েছে ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’

এই বইয়ের সম্পাদনায় ছিলাম আমরা – অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমেদ। সাথে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং মুক্তমনা লেখক শহিদুল ইসলাম।  আর পুরো বইয়ের সার্বিক তত্ত্ববধানে ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়।  বার্ধক্য আর  অসুস্থ শরীরকে তোয়াক্কা না করে পুরো কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি বরাবরের মতোই নিপুণ ছন্দে। বইটির চমৎকার প্রচ্ছদটি এঁকে দিয়েছেন বিপ্লব মণ্ডল।

যাদের প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়েছে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  যাদেরটি হয়নি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে  এই মুহূর্তে আর কিছু করণীয় নেই। পুরো পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে পাঠানো হলেও তারা  পুরোটুকু একসাথে নয় – একে দুই/তিন খণ্ডে ছাপানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।   অবশ্য এ না করে উপায়ও ছিলো না।  প্রথম খণ্ড বাজারে আসার পর দেখছি এর কলেবরই হয়ে দাঁড়িয়েছে জলহস্তীর মত বিশালকায় – ৫২৩ পৃষ্ঠা। কাজেই দুই তিন খণ্ড একত্রে ছাপা হলে কী যে হত বুঝতেই পারছেন!  কাজেই যাদের লেখা এখানে আসেনি, তারা আগামীর জন্য অপেক্ষা করুন, জলহস্তী দর্শনে বঞ্চিত হবেন না কথা দিতে পারি। এই ভরসাটুকু রেখে আমাদের তিন সম্পাদককে  এবারের জন্য ক্ষমা-ঘেন্না করে ছেড়ে দেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

তবে শুধু তাদের কাছেই নয়, সম্পাদক হিশেবে  আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে অনেক নতুন লেখকদের প্রতিও। এই বইটির প্রেক্ষাপট যখন সূচিত হয়েছিলো, তখনো মুক্তমনা ব্লগ সাইট হয়ে উঠেনি। লেখকেরা সেসময় পিডিএফ আকারে মুক্তমনায় লেখা পাঠাতেন। সেই পুরনো লেখকদের অনেকেই এখন ব্লগে নিয়মিত নন। আমরা পুরনো কিছু লেখকদের যেমন হারিয়েছি, সেই সাথে আবার অনেক নতুন এবং শক্তিশালী ব্লগারদের  আমরা পেয়েছি, যাদের ক্ষুরধার লেখনীতে মুক্তমনা আলোকিত হয়ে উঠছে প্রতিদিনই। আজকে যদি  বইটির উদ্যোগ নেয়া হত, তাহলে   আজকের নিয়মিত ব্লগারদের অনেকেই এই সংকলনে থাকতেন। সঙ্কলনটিতে তারা নিজেদের নাম না দেখলেও প্রত্যাশা করি পরবর্তী খণ্ডগুলোতে তারা চলে আসবেন অবলীলায়।

সবশেষে  বইটির প্রকাশক মেসবাহউদ্দিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি দেরীতে হলেও বইটির প্রথম খণ্ডকে বাজারে নিয়ে আসার জন্য, এবং সেই সাথে আমাদের অগণিত পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা।

নতুন বছরে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উদ্বেলিত হয়ে উঠুক দেহ -মন!

বিশ্বাস ও বিজ্ঞান

সম্পাদক মণ্ডলী
অভিজিৎ রায়
শহিদুল ইসলাম
ফরিদ আহমেদ।

সভাপতি
অজয় রায়।

প্রচ্ছদ – বিপ্লব মণ্ডল।

প্রকাশক – চারদিক।