মুক্তমনা কী?

মুক্তমনা মূলতঃ মুক্তচিন্তক, যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত আন্তর্জালিক আলোচনা চক্র । মুক্তমনা বর্তমান সমাজে বিদ্যমান অদৃষ্টবাদ, ভাববাদ আর বিশ্বাসনির্ভর লাগাতার প্রকাশনা আর প্রচারণার বিপরীতে একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী ধারা প্রবর্তনে বদ্ধপরিকর। মুক্তমনার আত্মপ্রকাশ তাই শতাব্দী প্রাচীন ভাববাদী দর্শনের বিপরীতে, আজন্ম লালিত ধর্মীয় ও সামাজিক নিবর্তনমূলক সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। ২০০১ সালের ২৬শে মে তারিখে আলোচনাচক্রের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই মুক্তমনা মানব মনের বৌদ্ধিক বিকাশকল্পে যুক্তি-বুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার গুরুত্ববৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তমনা ওয়েবসাইটটি অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ফ্রিথিঙ্কার, মানবতাবাদী, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সংশয়বাদী এবং যুক্তিবাদীর পদচারণায় ধন্য, এবং বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল প্রগতিশীল এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী সাইট হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

মুক্তমনা কারা?

‘মুক্তমনা’ শব্দটি ইংরেজি ‘ফ্রি থিঙ্কার’ শব্দটির আভিধানিক বাংলা পরিভাষা।

1. free-think-er n. A person who forms opinions about religion on the basis of reason, independently of tradition, authority, or established belief. Freethinkers include atheists, agnostics and rationalists.

2. freethinker n. One who has rejected authority and dogma, especially in his religious thinking, in favour of rational inquiry and speculation. -The American Heritage Dictionary

মুক্তমনাদের আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে – অন্ধবিশ্বাসে নয়। কোন আপ্তবাক্য বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত হয়ে এসেছে বলেই সেটাকে অবলীলায় বিশ্বাস করতে হবে এমন যুক্তি মুক্তমনারা মানেন না। তাঁরা মুক্তমনে প্রতিটি ধারনাকে যাচাই-বাছাই করতে চান। তারা বিজ্ঞানমনস্ক সংশয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মিথ এবং অতিকথাকে বিশ্লেষণ করার পরে সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী (agnostic), সংশয়বাদী (skeptic), মানবতাবাদীদের (humanist) সাধারণভাবে ‘মুক্তমনা সদস্য’ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে – ধার্মিকেরা কি তাহলে মুক্তমনা হতে পারেন না? কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা তা না করে নিজের ধর্মটিকেই আরাধ্য মনে করেন, কোন কিছু চিন্তা না করেই নিজের ধর্মগ্রন্থকে ‘ঈশ্বর-প্রেরিত’ বলে ভেবে নেন। স্রেফ ঘটনাচক্রে পৈত্রিক-সূত্রে পাওয়া যে ধর্মটিকে ‘নিজের’ বলে মনে করেন সেটাকেই ঈশ্বরের মনোনীত একমাত্র ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। আমাদের মতে কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র শোনা কথার ভিত্তিতে বাইবেল, কোরান বা বেদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে, বা নবী-রসুল-পয়গম্বর-মেসীয়তে বিশ্বাস করে নিজেকে কখনোই ‘ফ্রি থিঙ্কার’ বা মুক্তমনা বলে দাবি করতে পারেন না। মুক্তমনাদের আস্থা তাই বিশ্বাসে নয়, বরং যুক্তিতে।

মুক্তমনার লক্ষ্য

মুক্তমনার মাধ্যমে আমরা – একদল উদ্যমী স্বাপ্নিক- দীর্ঘদিনের একটি অসমাপ্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে পরিচালনা করছি, যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছে ‘চেতনামুক্তির’ লড়াই – যার মাধ্যমে জনচেতনাকে পার্থিব সমাজমুখী করে তোলা, প্রতিটি শোষণ ও বঞ্চনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সম্ভব। মুক্তমনার পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত তৈরীতে ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক মন-মানসিকতা গঠনের উপর। মুক্তমনা মনে করে বিজ্ঞানমনস্ক মন-মানসিকতা এমনি এমনি গড়ে ওঠে না, গড়ে ওঠে যুক্তির পথ ধরে, নিরন্তর এবং ব্যাপক বিচার-বিতর্কের মাধ্যমে। আজ ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বাস এবং যুক্তির সরাসরি সংঘাতের ভিত্তিতে যে সামাজিক আন্দোলন বিভিন্ন ফোরামগুলোতে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে, মুক্তমনারা মনে করে তা প্রাচীনকালের ব্রাক্ষ্মণ-চার্বাকদের লড়াইয়ের মত বিশ্বাস ও যুক্তির দ্বন্দ্বেরই একটি বর্ধিত, অগ্রসর ও প্রায়োগিক রূপ। এ এক অভিনব সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যেন বাঙালীর এক নবজাগরণ।

গত কয়েক বছরে স্বচ্ছ চিন্তাচেতনা সম্পন্ন মুক্তমনা যুক্তিবাদীদের বিশাল উত্থান ঘটেছে বিভিন্ন ফোরাম এবং আলোচনাচক্রে, যা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমে সম্ভব ছিল না মোটেই। জনগণের মধ্যে বিভিন্ন মত থাকা খুবই স্বাভাবিক এবং বিভিন্ন মতামতের দ্বন্দ্ব প্রয়োজনীয়, উপকারী এবং অনিবার্য। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণবিহীন স্বচ্ছ এবং সুস্থ বিতর্কের অবকাশ সৃষ্টি হলে জনগণের মধ্যে মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবোধের উপর আকর্ষণ বাড়বে এবং মিথ্যা বিশ্বাস পরিত্যাগ করে তারা ক্রমান্বয়ে যুক্তিনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। যুক্তিনিষ্ঠ মন-মানসিকতাই অবশেষে জনগণকে পরিচালিত করবে আধ্যাত্মবাদ পরিত্যাগ করে মানবমুখী সমাজ বিনির্মাণে, সামিল করবে বঞ্চনা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংগ্রামে। মুক্তমনার সদস্যরা তাদের ‘শখের তর্ক-বিতর্ক’কে ভিন্নমাত্রায় উন্নীত করে জনচেতনাকে একটি সঠিক পথ দেখাতে সর্বদা উন্মুখ।

মুক্তমনার নৈতিক ভিত্তি

‘নৈতিকতা’ ব্যাপারটিকে মুক্ত-মনারা কোন গায়েবী-বস্তু বলে মনে করে না। নৈতিকতা বিষয়টি মূলত জৈববিবর্তনীয় পথেই উদ্ভূত। সমাজে চারিদিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, বহু নাস্তিক, ধর্মে-অবিশ্বাসী মানুষজন আছেন যারা অন্য সবার মতই রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে চলেন, এবং ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে কেউ স্নেহময়ী মা অথবা দায়িত্ববান বাবা। অন্য মানুষের দুঃখ দেখে তারাও কাতর হন, দুস্থ মানুষের সেবায় তারাও অন্য সবার মতই এগিয়ে আসেন। কাজেই ধর্ম কোনভাবেই নৈতিকতার একমাত্র দাবিদার হতে পারে না। আসলে সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোন বিশেষ ধর্মের আনুগত্যের উপর মানুষের নৈতিক চরিত্র-গঠন নির্ভর করে না, নির্ভর করে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আর সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপর। অধিকাংশ আস্তিকই ‘ধর্ম’ এবং ‘নৈতিকতা’কে এক করে ফেলেন। ভাবেন ধর্মে আনুগত্য না থাকলে বা ঈশ্বরের ভয় না থাকলে সমাজ বুঝি উচ্ছন্নে যাবে। কিন্তু ঈশ্বরের ভয় দেখিয়েই যদি মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখা যেত, তা হলে তো রাষ্ট্রে পুলিশ, আইনকানুন, কোর্ট-কাচারি কোন কিছুরই আর প্রয়োজন হত না।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ১৯৮৮ সালে ভারতের জেলখানায় দাগী আসামীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপের ফলাফল ছিল অবাক করার মত। আসামীদের শতকরা ১০০ জনই ঈশ্বর এবং কোন না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী। আজ বাংলাদেশে জরিপ চালালেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে। ঈশ্বরে বিশ্বাস, পরকালে বিশ্বাস, বেহেস্তের লোভ বা দোজখের ভয় কোনটাই কিন্তু অপরাধীদের অপরাধ থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারেনি। আল্লাহর গুনাহর ভয়েই যদি মানুষ পাপ থেকে, দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারত, তবে তো বাংলাদেশ এতদিনে আক্ষরিক অর্থেই সোনার বাংলায় পরিণত হত। কিন্তু বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা আজ কী দেখছি? বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ জন লোকই আল্লা-খোদা আর পরকালে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতিতে এই দেশটিই আজ পৃথিবীর শীর্ষে। ধর্মে বিশ্বাস কিন্তু দেশবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারেনি। তাই আবারও ঠিক একই কথার উল্লেখ করতে হচ্ছে, ধর্ম কোনভাবেই নৈতিকতার ‘একমাত্র’ দাবিদার হতে পারে না।

নাস্তিক বা মুক্তমনারা কি ধার্মিকদের থেকে কম নৈতিক? এটা নির্ভর করছে ‘নৈতিকতা’ বলতে আসলে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে। যদি বিধাতার প্রতি বা ধর্মীয় আইন কানুনের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে ‘নৈতিকতা’ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করা হয়, তবে তো মুক্তমনারা অবশ্যই ‘অনৈতিক’। তবে সাধারণভাবে কেউ যখন নৈতিকতার কথা বলেন তিনি মূলত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায়-অন্যায়ের কথাই মূলত বলতে চান। আর সে হিসেবে মুক্তমনারা মোটেও অনৈতিক নন। অন্তত গবেষণায় তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অধিকাংশ মুক্তমনাই মূলত মানবতাবাদী। অধিকাংশ মুক্তমনা ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করেছেন ধর্মের মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা উপলব্ধি করেই। তাই চুরি-ডাকাতি-খুন-ধর্ষণের মত সামাজিক অপরাধকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন তারা।

মুক্তমনারা কি ধর্ম বিরোধী?

মুক্ত-মনারা ধর্ম-বিরোধী নয়, বলা যায় অনেক মুক্তমনাই ধর্মের কঠোর সমালোচক। কারণ তাঁরা মনে করেন ধর্ম জিনিসটা পুরোটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুক্তমনারা সর্বদা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আস্থাশীল, আজন্ম লালিত কুসংস্কারে নয়। কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ আসলে নিজের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। তবে মুক্তমনাদের ধর্ম-বিরোধী হওয়ার একটা বড় কারণ হল, ধর্মগুলোর মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন আয়াত এবং শ্লোকে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে ঢালাওভাবে, কখনো দেয়া হয়েছে হত্যার নির্দেশ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্ম আসলে জ্বিহাদ, দাসত্ব, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হোমোফোবিয়া, অ-সহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন এবং সমঅধিকার হরণের মূল চাবিকাঠি হিসেবে প্রতিটি যুগেই ব্যবহৃত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আরও জানার জন্য :

ধর্ম মেনেও কিছু মানুষ ভালই আছেন?

ধর্ম মেনেও তো কিছু মানুষ ভালই আছেন- মানবিকতা তো বিসর্জন দেন নি, তাই না?
যারা ভাল তারা এমনিতেই ভাল, ধর্ম মানার কারণে নয়। তারা ভাল কারণ তারা কাণ্ডজ্ঞান বা কমন-সেন্সের চর্চা করেন, ধর্মীয় আইনের নয়। কোরানে নির্দেশিত থাকলেও অনেক মুসলমানই আছেন যারা কাফির দেখলেই জিহাদি জোশে তাদের উপর নাঙ্গা তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন না, কিংবা তাদের বন্ধুত্ব প্রত্যাখ্যান করেন না। কিংবা অনেক হিন্দুই মুসলমানের ছোঁয়া লাগলে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করার জন্য দৌড় লাগান না, কিংবা তার আত্মীয়াকে সহমরণে যেতে প্রলুব্ধ করেন না। মানুষের সাথে ভাল ব্যবহারের দিকগুলো আসলে আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে সবাই সামাজিক শিক্ষা হিসেবে সমাজ, পরিবেশ আর অভিভাবকদের থেকে গ্রহণ করেন, ধর্মগ্রন্থ থেকে নয়। আগেই বলা হয়েছে, মানুষের সুগুণ বা সু-বৈশিষ্ট্যের জন্য ধর্ম কখনই একমাত্র দাবিদার হতে পারে না। সামাজিক এবং নৈতিক উন্নতির জন্য যে সমস্ত মনীষীরা এ পৃথিবীতে অবদান রেখেছেন তাঁদের একটা বিরাট অংশই ধর্মীয় নিগড় থেকে মুক্ত ছিলেন, যেমন – আলবার্ট আইনস্টাইন, বার্ট্রান্ড রাসেল, চার্লস ডারউইন, এলিজাবেথ স্ট্যান্টন, থমাস এডিসন, মারি কুরী, এইচ. এল. মেনকেন, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, আব্রাহাম কোভুর, আরজ আলী মাতুব্বর, আহমদ শরীফ, বিদ্যাসাগর, মেঘনাদ সাহা, ইলা মিত্র এবং আরো অনেকে, যাদের দ্বারা মানবতা আকণ্ঠ সমৃদ্ধ হয়েছে।

সবকিছুরই একটা সৃষ্টিকর্তা আছে?

সবকিছুরই তো একটা সৃষ্টিকর্তা আছে, তাই না? আমাদের এই জটিল বিশ্ব কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্ট হওয়া সম্ভব?
সবকিছুরই যদি একটা সৃষ্টিকর্তা থাকে – আর কোন কিছুই যদি স্রষ্টা বা ঈশ্বর ছাড়া সৃষ্টি হতে না পারে, তবে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বরকে বানালই বা কে? কোথা থেকেই বা তিনি এলেন? বিশ্বাসীরা সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই পেতে সোচ্চারে ঘোষণা করেন যে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ। তার তার উদ্ভবের কোন কারণও নেই। তিনি অনাদি-অসীম। এখন এটি শুনলে অবিশ্বাসীরা/যুক্তিবাদীরা স্বভাবতই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাইবেন, ‘ঈশ্বর যে স্বয়ম্ভূ তা আপনি জানলেন কি করে? কে আপনাকে জানালো? কেউ জানিয়ে থাকলে তার জানাটিই যে সঠিক তারই বা প্রমাণ কি? আর যে যুক্তিতে ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ বলে ভাবছেন, সেই একই যুক্তিতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরও সৃষ্টি স্রষ্টা ছাড়া এটি ভাবতে অসুবিধা কোথায়?’ আসলে মুক্ত-মনারা মনে করেন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে কোন পরম পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় নয়, বরং নিতান্তই প্রাকৃতিক নিয়মে। সব কিছুর পেছনে সৃষ্টিকর্তা থাকতে হবে, কিংবা সব ঘটনার পেছনেই কারণ থাকতে হবে, এটি স্বতঃসিদ্ধ বলে ভাবে নেওয়ার আসলেই কোন যৌক্তিক কারণ নেই। আকাশে যখন ‘সন্ধ্যার মেঘমালা’ খেলা করে, কিংবা একপশলা বৃষ্টির পর পশ্চিম আকাশে উদয় হয় রংধনুর, আমরা সত্যই মুগ্ধ হই, বিস্মিত হই। কিন্তু আমরা এও জানি এগুলো তৈরি হয়েছে স্রষ্টা ছাড়াই পদার্থবিজ্ঞানের কিছু সূত্রাবলী অনুসরণ করে। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা সকলেই জানেন, রেডিও অ্যাকটিভ ডিকের মাধ্যমে আলফা বিটা, গামা কণিকার উদ্ভব হয় প্রকৃতিতে কোন কারণ ছাড়াই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এছাড়াও ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’ এর ঘটনাও একটি কারণবিহীন ঘটনা বলে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত। বহু পদার্থবিজ্ঞানীই বহু গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হওয়া কোন অসম্ভব বা অলৌকিক ব্যাপার নয়, এবং এভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হলে তা পদার্থবিজ্ঞানের কোন সূত্রকেই আসলে অস্বীকার করা হয় না। সেসব গবেষণাপত্র পদার্থবিজ্ঞানেরই নামী দামী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং লিওনার্ড ম্লোডিনো তাদের সাম্প্রতিক গ্র্যাণ্ড ডিজাইন (২০১০) বইয়ে বলেছেন,

‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র‌্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই ।’

এছাড়া প্রখ্যাত পদার্থবিদ লরেন্স ক্রাউসও তার ‘A Universe from Nothing’ (২০১২) বইয়ে সাধারণ পাঠকদের জন্য ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে শূন্য থেকে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হতে পারে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসরণ করে শূন্য অবস্থা থেকে যে বিশ্বজগৎ তৈরি হতে পারে- এ ধারণাটি প্রথম ব্যক্ত করেছিলেন নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড ট্রায়ন। তার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিলো নেচার জার্নালে ১৯৭৩ সালে। ১৯৮১ সালে (অ্যালেন গুথ এবং আঁদ্রে লিন্ডে প্রমুখের গবেষণায়) মহাজাগতিক স্ফীতি বা ইনফ্লেশন তত্ত্বের আবির্ভাবের পর থেকেই বহু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী প্রাথমিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাজাগতিক স্ফীতিকে সমন্বিত করে তাদের মডেল বা প্রতিরূপ নির্মাণ করেছেন। বহু বৈজ্ঞানিক জার্নালে সেগুলো প্রকাশিতও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ধারণাটি যদি স্রেফ বানোয়াটই হত, তবে বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে এই ধারণার উপর আলোকপাত করা পেপারগুলো সাম্প্রতিক সময়ে কখনই প্রকাশিত হত না। গুথ এবং লিন্ডে প্রস্তাবিত স্ফীতি তত্ত্বের বাইরেও সাম্প্রতিক তত্ত্ব হিসেবে আছে পল স্টেইনহার্ট এবং নেইল টুর্কের অনন্ত ‘সাইক্লিক মডেল’ যা কোন ধরনের উৎপত্তি ছাড়াই মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে। মুক্ত-মনারা মনে করেন, মহাবিশ্বের অস্তিত্ব এবং জটিলতা ব্যাখ্যার জন্য দরকার নিরপেক্ষভাবে ‘বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান’ এবং গবেষণার, ঈশ্বরে বিশ্বাস নয়।

এ প্রসঙ্গে আরও জানার জন্য :

মুক্তমনার রাজনৈতিক দর্শন

মুক্তমনা সামগ্রিককভাবে একটি অরাজনৈতিক মাধ্যম। মুক্তমনা কোন রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের সাথে যুক্ত নয়, যদিও মুক্তমনার সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সচেতন। লেখকদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞা সমাজ-সংস্কারের ক্ষেত্রে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে মুক্তমনা বিশ্বাস করে। মুক্তমনা ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসের ঘোষণার প্রতি আস্থাশীল এবং তার নিরিখে যে কোন গঠণমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায় এবং মানবিক অধিকারের জন্য দায়বদ্ধ।

সাধারণভাবে মুক্তমনারা মানবতাবাদী। যেখানেই মানবতাকে পদদলিত করার আলামত পাওয়া যায়- সেখানেই মুক্তমনারা প্রতিবাদী। ৯/১১ এর বিয়োগান্তক ঘটনার পর সঙ্গত কারণেই আমরা ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। কেউ কেউ তখন ভেবে নিয়েছিলেন মুক্তমনারা বোধ হয় মুসলিম-বিদ্বেষী। সেই মুক্তমনারাই আবার যখন অনৈতিক ইরাক যুদ্ধ সমর্থন না করে মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো, কিংবা কাশ্মীর বা গুজরাট ইস্যুতে নিপীড়িত মুসলিমদের সমর্থন করেছিলো, তাদের জন্য পিটিশন করেছিলো, কিংবা বিগত মার্কিন নির্বাচনে যুদ্ধবাজ রিপাবলিকানদের বিপরীতে ওবামাকে সমর্থন জানিয়েছিল– তখন আবার কেউ কেউ ভুলভাবে মনে করেছিলেন মুক্তমনারা বোধ হয় মুসলিমদের তোষণকারী। আসলে মুক্তমনারা কোন কিছুর বিদ্বেষী বা তোষণকারী নয় – মুক্তমনারা আসলে মানবতার পক্ষে। অনেক মুক্তমনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, আবার একই সাথে কমিউনিজমেরও ঘোর বিরোধী। তবে কিছু মুক্তমনা আছেন যারা বামপন্থি রাজনীতির সাথে যুক্ত, এবং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের চর্চা করেন এবং এটিকে ‘বৈজ্ঞানিক’ বলে মনে করেন। মুক্তমনা ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য মূলতঃ ফিলোসফিক্যাল, পলিটিক্যাল নয়।

মুক্তমনার সামাজিক আন্দোলন

মুক্তমনা সদস্যরা শুধু তর্ক বিতর্ক এবং আলোচনাতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং সব সময় থেকেছে সামাজিক অনাচারের প্রতিবাদে দায়বদ্ধ। নীচে কয়েকটি সামাজিক আন্দোলনের তালিকা দেয়া হলো যেগুলোতে মুক্তমনা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।

  • ‘ধর্মকে অবমাননা’র দায়ে পাকিস্তানের কারাদণ্ড প্রাপ্ত ফ্রি-থিঙ্কার ড. ইউনুস শেইখ যখন মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তখন মুক্তমনা ইউনুস শেইখকে বাঁচাতে বিশ্বময় আন্দোলন গড়ে তোলে। সে সময় আমাদের সক্রিয় সহযোগী ছিল ‘IHEU, Rationalist International, Amnesty International, ‘Dhaka Rationalist and Secularist Union’ এবং ঢাকার মুক্তমনাদের ‘Save Dr. Yunus Shaikh Committee’, যারা রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, সেমিনার, পথসভা ও পাকিস্তানী দূতাবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট মোশাররফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন কবির চৌধুরী, বিচারপতি আবদুস সোবহানসহ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও প্রগতির পক্ষের মানুষ।
  • মুক্তমনা সদস্যরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো শাহরিয়ার কবিরের সপক্ষে তাঁর মুক্তির লক্ষ্যে, যখন তৎকালীন সরকার বিমান বন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলো দেশদ্রোহিতার অভিযোগে।
  • মুক্তমনারা সবসময়ই উচ্চকন্ঠ থেকেছে সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন প্রকাশ সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিরূদ্ধে। আমরা মৌলবাদীদের হাতে মুসলমান বা হিন্দু যেই নির্যাতিত হয়েছে তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছি। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি আমাদের সীমিত শক্তি নিয়ে। গুজরাটে মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর গণহত্যায় আমরা ধিক্কার জানিয়েছি। নরেন্দ্র মোদীর অপসারণের দাবীতে আমরা ভারতীয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক লিপি ও প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছি, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে একসাথে কাজ করেছি সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে।
  • আমরা জনমত গড়ে তুলেছি ইরাকে মার্কিন নগ্ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, প্যালেস্টাইনের অধিকার রক্ষায়, কিংবা কাশ্মিরী স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের পাশে ।
  • ২০০১ সালে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যা, লুণ্ঠণ, ঘরবাড়ি অগ্নি সংযোগ বৃদ্ধিপেলে মুক্তমনা দেশের সেক্যুলার শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে এর বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা অধ্যাপক অজয় রায় অন্যান্য মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন ‘নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে। তারা গঠন করেছিলেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ‘গণ তদন্ত কমিশন’, যার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর ২০০২ সালে এবং তাৎক্ষণিকভাবে অমাদের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। প্রবাসী মুক্তমনার সদস্যরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে প্রতিবাদপত্র প্রেরণ করেন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চালিত নির্যাতন বন্ধের দাবীতে।
  • ব্রহ্মপুত্রের চরে রৌমারী গ্রামে বন্যাবিধ্বস্ত এবটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল আমরা পুননির্মাণ করেছি , এবং আমরা এর পরিচালনার দায়ভার গ্রহণ করেছি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি স্থম্ভ গড়ে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করেছি এবং সে উপলক্ষে কয়েক হাজার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার সম্মেলন করেছি এবং স্মৃতি স্তম্ভের শিলান্যাস করেছি।
  • আমরা সম্মিলিত উদ্যোগে ইন্টারনেটে গড়ে তুলেছি মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ

এগুলোর বাইরে, মুক্তমনার পক্ষ থেকে বহু মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে অতীতে। যেমন, ২০০৪ সালে ভয়ানক বন্যার সময় মুক্তমনার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্রের চরে বন্যাবিধ্বস্ত একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল আমরা পুনর্নির্মাণ করেছিসিডর সাইক্লোনেও আমরা উদ্যোগী হয়ে যথাসম্ভব সাহায্য করেছি, অসুস্থ প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক নির্মল সেনের চিকিৎসার জন্য যথাসম্ভব সাহায্য করেছি, আমরা আদিবাসী নেতা চোলেশ রিছিলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পিটিশন করেছি, তার পরিবারকে আর্থিকভাবে যথাসম্ভব সাহায্য করেছি। সাহায্য করেছি নিহত সাংবাদিক মানিক সাহার পরিবারকে, কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য সাহায্য করেছি কার্টুনিস্ট আরিফের মাকে ইত্যাদি।

মুক্তমনাদের প্রকাশনা এবং অর্জন

মানবতাবাদী কাজের পাশাপাশি মুক্তমনার সদস্যরা নিয়মিতভাবে প্রতিবছর প্রকাশ করে চলেছেন প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানমনস্ক বইপত্র (এ প্রসঙ্গে পড়ুন মুক্তমনা ই-সঙ্কলন এবং বইমেলায় মুক্তমনা লেখকদের কিছু বই)। দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়া হাজারো অপন্যাস আর লঘু বইপত্রের ভিড়ে মুক্তমনা সদস্যরাই তৈরি করেছে যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানমনস্ক বইয়ের চাহিদা।

  • মুক্তমনা আজ শুধু একটি ব্লগ সাইট নয়, এটি একটি সফল আন্দোলনের নাম। মুক্তমনা শব্দটির ব্যপ্তি আজ এতোই গভীরে যে বিভিন্ন ফোরাম এবং ব্লগ সাইটে সমমনা প্রগতিশীল লেখকদের আজ ‘মুক্তমনা লেখক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
  • আমরা উদযাপন করছি যুক্তিবাদী দিবস, আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং ডারউইন দিবস। মূলতঃ মুক্তমনার কল্যাণেই অখ্যাত এবং অপরিচিত ডারউইন দিবস জনগণের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে পেয়েছে এত ব্যাপ্তি।
  • মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অশেষ অবদান সৃষ্টি এবং মুক্তচিন্তার আন্দোলনে আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উজ্জল ভূমিকা রাখার জন্য মুক্তমনা ওয়েবসাইটকে ২০০৭ সালে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক দেয়া হয়। বাংলাদেশের আর কোন ওয়েবসাইট এই সম্মানে ভূষিত হয়েছে – এমন কোন নজির নেই ( এ প্রসঙ্গে পড়ুন – জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক : আমাদের কাজের স্বীকৃতি)।

কীভাবে মুক্তমনা হওয়া যায়?

মুক্তমনা হওয়ার জন্য দরকার ‘মুক্ত-মন’, আর কিছুই নয়। যে কোন অন্ধ-বিশ্বাস এবং কুপমুন্ডুকতার বিরোধী হতে হবে। প্রগতিশীল চিন্তাচেতনাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্মোন্মাদদের দ্বারা যারা সামাজিকভাবে নিগৃহীত, নির্যাতিত, তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। আপনার চিন্তাধারা, মতামত ব্যক্ত করে আমাদের কাছে লিখতে পারেন। লেখা পাঠানোর নিয়ম এখানে বলা আছে। আপনার লেখা মনোনীত হলে আমাদের ব্লগে প্রকাশিত হবে এবং পরবর্তীতে বিবেচিত হলে মুক্তান্বেষা পত্রিকার সম্পাদকের কাছে পাঠানো হবে।

এখানে কী ধরনের লেখা প্রকাশিত হয়?

মুক্তমনায় প্রায় সব ধরণের লেখাই প্রকাশিত হয়– সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা হোক বা হোক না কোন সাহিত্যভিত্তিক রচনা। তবে তারপরেও মুক্তমনা বাংলা ব্লগের একটি উদ্দেশ্য আছে, আর সেটি হচ্ছে যে কোনো ধরনের প্রগতিশীল, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার সাথে সম্পর্কযুক্ত রচনাকে প্রাধান্য দেয়া। কাজেই এই ব্লগের সদস্য হতে হলে এবং এখানে লেখা প্রকাশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই মুক্তমনার উদ্দেশ্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানার জন্য ব্লগের নীতিমালা দেখে নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

মুক্তমনায় লেখা পাঠানোর নিয়ম

মুক্তমনা সম্পর্কে আরো জানার জন্য পড়ুন: