মনে করুন একাকিত্ববোধ ও মনে জমা হওয়া অনেক না বলা কথার ভার আপনার মনে পুঞ্জীভুত হতে হতে ক্রমেই সহনীয়তার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আপনার একাকিত্ববোধ শ্রীঘ্রই ডেসপারেশনে রূপ নিলে পরে আপনি পথে নামলেন সমমনা কিছু মানুষের খোঁজে যাদের সাথে আপনি ভাগাভাগি করতে পারেন আপনার মনের অনুভুতি এবং লাভ করতে পারেন সহমর্মীতা ও সহানুভুতি। এবং পেয়েও গেলেন একটি এরকম সমমনা মানুষের দল যাদের কাজ দিনের তিনবেলা সংলগ্ন চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, অর্থনৈতিক বা যেকোন সমস্যায় নিজেদের সম্মিলিত শক্তিতে একে-অপরের পাশে দাড়ানো এবং তিনবেলার অন্তত দুবেলা শরীর ও মনের খোরাক হিসেবে কাচ্চি বিরাণী। এবং একটি পূর্বাভিপ্রেতো কাকতাল হিসেবে আমরা ধরেও নেই যে, কাচ্চি বিরাণী আপনি খুবই খুবই পছন্দ করেন। এতোকিছুর পরও আরও যতো-শত বৈষয়িক লাভ আপনি আপনার সেই নবআবিষ্কৃত সমাজটি থেকে পেতে যাচ্ছেন তার তুলনায় এই সঙ্গ, সহায়তা ও বিরাণী মহাসুমুদ্রে একফোঁটা জলের মতোই নগন্য। এছাড়া সেই সমাজও দু-তিন দিন আপনাকে তাদের আড্ডাস্থলের আশপাশে কৌতুহলী হয়ে ঘুরোঘুরি করতে দেখে আপনাকে তাদের সদস্য করে নিতে যারপরনাই উৎসাহ প্রদর্শন করতে থাকলো। সম্ভবত চোখ বন্ধ করেই আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি যে, আপনি ঐ সমাজের সদস্য হতে যাচ্ছেন এবং আপনি করলেনও তাই। তিনবেলা আড্ডা, বিরাণী এবং এরকম আরও শত সুবিধায় নিমজ্জতি হয়ে সুখেই পার করে দিলেন কয়েকটি দিন। তারপর হঠাৎ একদিন লোমহর্ষকভাবে আপনি আবিষ্কার করলেন যে সমিতিটির নাম “গাওদিয়া নারী ও শিশু হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ সমিতি”। মনের স্তম্ভিত আতঙ্ক কিছুটা কেটে গেলে পরে আপনি খানিকটা স্বস্তিবোধই করলেন যে- অন্তত আমিতো কোন হত্যা, ধর্ষণ বা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত নই- এটা ভেবে। তথাপিও, আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে যাচ্ছে?

এখানে দেখুন, আপনার পরবর্তী পদক্ষেপও কিন্তু আমরা ভবিষ্যদ্বানী করতে পারি। হয় একজন সুস্থ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে আপনি সেই সমাজ থেকে ইন্সট্যান্টলি, নিঃশর্তভাবে, কোন প্রকার যুক্তি ও আলোচনা ছাড়াই অব্যহতি নিবেন, যেটার সম্ভাবনা ৯৯%। অথবা কাপুরুষতা, মেরুদন্ডহীনতা ও পর্যাপ্ত পৌরষের অভাবের মতো ইত্যাদি কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আপনার নিতীবোধ আপনার বিরাণীর লোভের কাছে হার মানবে, অন্ততঃ ১% ক্ষেত্রে এটা ঘটতে পারে। যদি তাই ঘটে তবে আপনি যুক্তি ফেঁদে বসবেন বিরাণীর স্ব্যাস্থগত উপকারীতা সম্পর্কে, বিরাণীর মত মহৌষধের গুনে কেনো কিছু হত্যা-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো মামুলী অপরাধ জায়েজ হয়ে যায় এ সম্পর্কে আপনার মুখ থেকে যুক্তির তুবড়ী ছুটবে, হয়তোবা আপনি ঘোষনা দিয়ে বসবেন অল্প কিছু সদস্য যারা কিনা হত্যা-ধর্ষণের মতো খারাপ কাজের সাথে জড়িত তারা “গাওদিয়া নারী ও শিশু হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ সমিতি”র সদস্য হবার যোগ্য নয়, আপনি তাদের সদস্যপদ বাতিল ঘোষনা করবেন, এছাড়াও আপনি যুক্তি নিয়ে হাজির হতে পারেন কেনো হত্যা ও ধর্ষণ নারী ও শিশুদের জন্য খুবই উপকারী একটি ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই যদি করে থাকেন তবে অভিনন্দন জানুন, কেননা এইমাত্র আপনি নিজেকে প্রমান করলেন বিরাণী সমাজের একজন মডারেট সদস্য হিসেবে। মডারেট যে কিনা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়, যে কিনা নিছকই একটু বিরাণী খেতে পছন্দ করে, বিরাণী খেতে না পেলে মডারেটটি হয়তো দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে, তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তার পাকস্থলী নিজেকেই নিজে হজম করে ফেলবে হয়তো; পৃথিবীর আর সব মানুষ মরে গেলে যাকঃ বিরাণী মডারেটটির চাই-ই চাই। সর্বোপরি, এক ফোঁটা পানিও না ছুঁয়ে মহাসাগরের সকল নীলতিমি ধরে ফেলাটা নির্বাচনী ফিটনেসই বৈকি!

কিন্তু না নির্বাচন নয়। আমি কথা বলতে চাইছি এমন একটা বিষয় নিয়ে যার সাথে মিউটেশন, নির্বাচন, বিবর্তন, বিজ্ঞান ইত্যাদির কোনই সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক ছিলোনা কোনকালে, সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমি কথা বলবো ইসলাম নিয়ে এবং মডারেট ইসলাম নামক এক জারজ সন্তান নিয়ে যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম জন্ম দিয়েছে। কিন্তু, তার আগে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। এমনকি আমার কিছু নাস্তিক বন্ধুদের কাছ থেকেও আমি এই অভিযোগ শুনেছি যে, আমি নাকি কিছুটা অ্যারোগেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- আমি কিন্তু মোটেও অ্যারোগেন্ট নই মোটরবাইক চালানোর ব্যাপারে, কিংবা গ্র্যাম্পিয়ানে বেড়াতে যাবার ব্যাপারে, একফোঁটা অ্যারোগেন্টও আমি নই কোন নারীর হাত চেপে ধরার বেলায় কিংবা পিয়ানো বাজানোর সময়, অ্যারোগেন্ট নই আমি ক্যান্সার সম্পর্কে কিংবা মারামারি, ঝগড়া-ঝাটি করার বেলায়, এমনকি ধর্ম কিংবা ধর্মহীনতার ব্যাপারেও আমি ততোটা অ্যারোগেন্ট নই- শুধুমাত্র একটা ব্যাপারেই আমি মাত্রাছাড়াভাবে অ্যারোগেন্ট- সেটি হচ্ছে ইসলাম। কিন্তু কেন? কারণ, আমি ইসলাম সাফার করেছি এবং প্রতিনিয়ত করছি। শুধু আমি একা নই- যদি কিনা সুমেরু বা কুমেরু ছাড়া পৃথিবীর অন্যকোন মহাদেশে বসবাস করে থাকেন- তবে আপনিও ইসলাম সাফার করছেন এই মূহুর্তে। এই মূহুর্তে যদি বিকট একটি শব্দে আপনার কানের পর্দা ফেটে যাবার উপক্রম হয় তবে শব্দের উৎসটি সম্পর্কে আপনার প্রথম হাইপথেসিস কি হতে যাচ্ছে? ইসলাম। একটি জনসমাগমে ফিসফিস শব্দেও আপনি যদি শুনে থাকেন “বোমা, বোমা” আপনি পলায়নপর হতে যাচ্ছেন (এটাই বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত)। কার ভয়ে? ইসলামের ভয়ে। এবং এই একই ভয় হতে যাচ্ছে আপনার সাথী পথ চলতে, প্রতি মুহুর্তে। এমন কি করেছি আমি যে আমাকে ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হবে? যার ভয়ে আমি গুটিয়ে আছি কি ক্ষতি আমি তার করেছি যে সে আমাকে নির্বিচারে হত্যা করতে চায়? যদি আপনার দাবী হয়ে থাকে ইসলাম ইস্যুতে আমাকে আরও নম্রভাবে কথা বলতে হবে, তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি প্রথমে চাই।

দেখুন, আমরা ব্রাইটরা কিন্তু সাধারণত ধর্মকে বেশ খানিকটা ছাড় দেই। অথচ, ধর্ম ছাড়া অন্যান্য আরও হোকাস-পোকাস বিষয় যেমন হোমিওপ্যাথি, আকুপাংচার, আয়ুর্ভেদা, কায়রোপ্র্যাকটিক, ভিগান-ডায়েট, যোগব্যায়াম ইত্যাদি বিষয়কে কিন্তু আমরা মোটেও ছাড় দেইনা। অথচ ধর্ম ছাড়া উপরোক্ত আর একটিরও জন্ম হয়নি নিছক জীবন থেকে সমস্ত সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়ে জীবনকে চুষে ছোবড়া বানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে; ধর্মের বডি-কাউন্ট সবচেয়ে বেশী, সবচেয়ে বেশী মানুষ ধর্ম মেরেছে; ধর্ম ছাড়া উপরোক্ত আর একটির বিরুদ্ধেও হানাহানির অভিযোগ নেই; ধর্ম ছাড়া আর উপরোক্ত একটিও মানুষ মেরে রাষ্ট্র দখলে নামেনি। তাহলে আমাকে বলুন ধর্মকে কায়রোপ্রাকটিকের চেয়ে বেশী ছাড় কেনো আমি দিচ্ছি? আমার মনে হয় দিচ্ছি এ কারণে যে, ভাবতে পারার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত নয় এবং অদৃশ্য বিরাণীর প্রতি নির্মোহ একজন ধার্মিকের কাছে ধর্মের অবস্থান সর্বদাই ভঙ্গুর এটা আমি জানি। মোটামুটি একটু জ্ঞানের আলো পেলেই তারা ধর্মকে সোজাসাপ্টাভাবে না বলে দেয়। বস্তুত এই কারণেই নাস্তিকতা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্মীয় অবস্থান। বিনয় এসকল দেয়াল ধরা ধার্মিকদের নিয়ে আসে সেইদিকেই- আমি দেয়ালের যেই দিকে আছি, আমার দল ভারি হয় তাতে। আর অ্যাগ্রেশন যার বাংলা আমি করবো আগ্রাসন তাদের ঠেলে দেয় দেয়ালের অপর দিকের রসাতলে। যুক্তি দিয়ে নয় বিনয় দিয়ে বক্তব্যের পক্ষে সমর্থন আদায় করাটা অনেকের কাছে একপ্রকার হ্যাকিং মনে হতে পারে, তাই আমি এটা করবো না। আর খেয়াল করে থাকবেন হয়তো বর্তমান সময়ে ফান্ডিরা গ্রহন করেছে এই একই কৌশল, বিনয়। বিনয় দিয়ে তারা লোক দলে ভেড়ায়। আসলেই, বর্তমান সময়ে কি চোখে পড়ে এমন কোন ফান্ডি যে কিনা বিনয়ী নয়? না বোধহয় বরং দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত ফান্ডিটিকে দেখলেও আপনার মনে হতে পারে- আরে! এই ছেলে বোমা কি ফুটাবে, জীবনে সে সালফার শুঁকেও দেখেনি! এটা কিন্তু গুরুতর- ফান্ডিদের কৌশল গ্রহন করে আসলেই কি আমরা ফান্ডিদের পর্যায়ে অধঃপতিত হতে চাই? আর হ্যা, নাস্তিকতাকে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্মীয় অবস্থান দাবী করেছি বলেই ফান্ডিদের আরেকটি আমোদদায়ক মনোস্তত্ব মনে পড়ে গেলো। নাস্তিকতার বিরুদ্ধে তর্কে তারা সবসময়ই নাস্তিকতাকেও একটি ধর্ম হিসেবে গন্য করে। কিন্তু, কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশী সংখ্যা বৃদ্ধি করছে এই তর্কে কিন্তু তারা নাস্তিকতাকে ধর্ম হিসেবে গন্য করেনা বরং বলে যে- নাস্তিকতাতো কোন ধর্ম নয়, তাই ইসলামই হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। মজার না?

ইসলাম ভয় পায় দুটো জিনিষ, অট্টহাস্য আর আত্নবিশ্বাস। অট্টহাস্যের জন্যেই হযরতের কার্টুন আঁকা হলে তারা জালাও-পোড়াও করে, সাউথ পার্ক নির্মাতাদের মৃত্যু-হুমকী দেয়। আর আত্নবিশ্বাসের জন্য প্রাণঘাতী আক্রমনের শিকার হয় ডঃ আজাদ (হায়! কতোটা যে ঋণী এই একটি বাঙ্গালীর কাছে আমি) আর ডঃ ডকিন্স ইমেইলে পেতে থাকে মৃত্যু-হুমকী ঘন্টায়-ঘন্টায়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে যখন কিনা কোন বক্তব্য আগ্রাসী কিংবা অ্যারোগেন্ট প্রতীয়মান হয়- ব্রাইট হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দুটো চেক সম্পন্ন করা, প্রথমত অট্টহাস্য এবং আত্নবিশ্বাস এই দুটি জিনিষকে কি ইসলাম আগ্রাসন ও অ্যারোগেন্স বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে কিনা। আত্নবিশ্বাস কোন নাবোধক জিনিষ নয় তাই এটাকে এক কথায়ই বাতিল করা চলে। আর অট্টহাস্যকে বাতিল করা চলে কেনো বুঝতে হলে আরেকটু গভীরে যেতে হবে। কল্পনা করুন নাস্তিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ষোল বছর বয়সী একটি শিশু, যে জীবনে ইসলাম সম্পর্কে গুনগান বা নিন্দা কিছুই শুনেনি। ইসলাম কেনো শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং আল্লা কেনো আসল ঈশ্বর এই বিষয়ে আপনি যদি দশ মিনিটের একটি সারাংশ প্রস্তুত করে নিয়ে তাকে শোনাতে যান- দুই মিনিট শুনেই অম্লান বদনে শিশু আপনার মুখের উপর বলে দিবে আপনার আল্লা সম্পর্কে তার কি মতামত এবং আল্লাটি নিয়ে আপনি কোথা দিয়ে সঞ্চালন করে দিতে পারেন এ বিষয়ে তার প্রস্তাব। সে এটা করবে কেননা এটাই স্বাভাবিক। আজ যদি আমাকে এসে কেউ বলে যে- মিল্কিওয়ের চারপাশে প্রদক্ষীণরত আছে একটি হোতকা-লোমশ পান্ডা যে কিনা প্রতিবার একটি অর্ধঘুর্ণন সম্পন্ন করে ত্বারস্বরে চিৎকার করছে “পা-ই” বলে আর বায়ুহীন মহাশূণ্য ভেদ করে সেই চিৎকার একশো হাজার আলোকবর্ষ দূ্রের পৃথিবীতে এসে আঘাত করছে এক মিলিসেকেন্ডেরো কম সময়ে- তবে আমিও তাকে একইরকম নির্লিপ্তভাবে বলে দিবো সেই পান্ডাটি নিয়ে তার কি করা উচিত। আমি সম্ভবত পূ্র্বোক্ত শিশুটির চেয়ে পান্ডাটির আরও একটু বেশী শৈল্পিক কোন ব্যাবহার প্রস্তাব করবো। পান্ডা সম্পর্কে আমার মনোভাব যদি এই হয়, তবে একই সমান গাঁজাখুরি গল্প ইসলামকে লক্ষ্য করে একটা অট্টহাসি অন্তত আমি দিতে পারবো না শুধুমাত্র এই কারণে যে, ছোটবেলা থেকেই আমি ইসলামের গুনগান শুনে আসছি? কতোটা মানবিক হয় এটা আপনিই নির্ধারণ করুন।

আসলে ইসলাম ঠিক কি চায়? ইসলামের দাবীটি কি? ইসলামের দাবী হচ্ছে “ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত সেক্স অফেন্ডার হযরত আল্লার প্রেরীত পুরুষ এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। সে শিশুনির্যাতনের সাথে জড়িত ছিলো এবং সে এটা করে কোন অপরাধ করেনি।” অ-নে-ক অনেক বড় একগুচ্ছ দাবী, ঠিক? কিন্তু, এখানেই তাদের দাবী-দাওয়া শেষ নয়। তারা আরও বলছে “আমাদের পূর্বোক্ত দাবী মেনে নিতে যদি তোমার কোন সমস্যা থাকে, তবে তোমাকে নিজের মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। আমাদের দাবীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না এবং আমাদের দাবী কেনো সঠিক এই বিষয়ে কোন প্রমান চাইতে আসলেও সেটা আমাদের দাবী অস্বীকার করার সামিল বলেই গন্য হবে যার জন্য তোমাকে আমরা হত্যা করতে পারি।” এবং কে বলে ইসলামদের কৌতুকবোধ নেই! এমতাবস্থায় হাতে হাত ধরে সকল ভেদাভেদ ভুলে আস্তিক-নাস্তিক সকলেই আমরা যদি এই করুণ ভাঁড়দলটিকে উদ্দেশ্য করে একচোট হেসে নিতে পারি তবে আমি নিশ্চিত ঐক্যের এক অমর নিদর্শন হিসেবে এটা পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান করে নিতে যাচ্ছে। এবং তাদের পেয়ারের নবী হযরত হয়তো জান্নাতুল ফিরদাউসের ভূমধ্যসাগরের কোন এক পারে বসে হাতে একটি হাইবল গ্লাস ভর্তি তাজা গরম-গরম উটের মূত্র (যেটা কিনা তার নিজের ভাষ্যমতে বড়ই স্ব্যাস্থকর পানীয়) নিয়ে পুরোই হলিডে মুডে আমাদের হাস্যের সঙ্গে যোগ দিবে। আর হ্যা গ্লাসের কোনায় থাকবে এক বা একাধিক ব্ল্যাকচেরীর গার্নিশ। সর্বোপরি, হযরত তো চেরী খুবই ভালোবাসে। He just loves popping them, তাই না?

একটি ধর্ম বললে ইসলামকে কম বলা হয়। ইসলাম একটি স্টেইট অফ মাইন্ড। এবং যেই স্টেইটটি বলাই বাহুল্য কিনা গ্রাউন্ড স্টেইট নয় বরং খুবই খুবই এক্সাইটেড একটি স্টেইট। তাই ইসলামের অধ্যয়ন হতে হবে থিওলজির আলোকে নয় বরং প্যাথলজির আলোকে। আগ্রাসন একটি প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা (defence mechanism)। প্রাণীর কিন্তু শিকার ধরার জন্য আগ্রাসী হবার প্রয়োজন হয়না, প্রাণীর আগ্রাসী হবার প্রয়োজন হয় নিজের টেরিটোরি রক্ষা করার লক্ষ্যে, প্রজননসঙ্গীকে (mate) রক্ষা করার লক্ষ্যে, মারামারি (fight) তে আঘাত (injury) সর্বনিন্ম রাখার লক্ষ্যে। এবং হ্যা, আপনি যদি দাবী করে থাকেন যে, পৃথিবীর অন্যতম কুখ্যাত একটি সেক্স অফেন্ডারকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে, তবে এটা আমার দূর্ভাগ্য যে আমার আগ্রাসীরূপই আপনি দেখতে যাচ্ছেন, যতোটুকু আগ্রাসী আমার পক্ষে হওয়া সম্ভব। কখোনই আমার নারী-সন্তান বা বন্ধু কিংবা বোনকে আমি আপনার কাছে ঘেঁষার উপদেশ দিবো না এবং কোন পুরুষ বা নারী শিশুর সাথে আপনি কেমন আচরণ করছেন খুবই মনোযোগের সাথে তা লক্ষ্য রাখবো। এটা আমি করবো এই কারণে যে, আপনি যেই মতাদর্শ সমুন্নত করেন- অবশ্যই যেই মতাদর্শ কোন সুসভ্য মতাদর্শ নয়- তা আপনাকে আমার ও আমার কাছের মানুষজনের উপর একটি শারীরিক হুমকী হিসেবেই প্রতিয়মান করে। একইভাবে আপনার যদি মনে হয় কারো হাত-পা কিংবা মাথা কেটে ফেলাটা সুবিচার কিংবা সকল ক্ষেত্রে একজন নারী একজন পুরুষের অর্ধেক, তবে হ্যা আপনাকে আমি গঞ্জনা করবো যতোটা কটু ভাষায় যতোটা আগ্রাসীভাবে সম্ভব। আর কোন ব্রাইটের এটা নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে আপনাকে আমার উদাহারণ দেখাতে হবে- প্রকৃতির ইতিহাসে উচ্চতর প্রাণী যেমন স্তন্যপায়ীতে আগ্রাসন কবে নাবোধক নির্বাচনের শিকার হয়েছেো (এটা কৌতুক কিন্তু)।

আর ফান্ডি যারা কিনা ইসলাম করে, সহাস্যে তাদেরকেও আমি বলতে চাই যে- ইসলাম আপনার জন্যও একটি হুমকী। কেননা এই মূহুর্তে যদি আপনার আশপাশে জিহাদ হয় তবে যতই ইমানদার ব্যক্তি হননা কেনো আপনি কোন ছাড় পেতে যাচ্ছেন না। দুঃখজনক হলেও সত্যি বোমার স্প্লিন্টার মুমিন কাফেরে কোন পার্থক্য বুঝে না। বাংলাভাইদের জিহাদের সময় দেশের গল্প শুনেছি, একটা টুপিদাড়ি বাস কিংবা ট্রেনে উঠলে নাকি অন্যান্য মানুষ সেই বাস কিংবা ট্রেন থেকে নেমে যেতো বোমার ভয়ে। তারা কি ইসলামকে না বলছিলো? নাহঃ অবশ্যই নয় তারা বেশীরভাগই বরং মডারেট মুসলিমই ছিলো যাদের প্রাণের ভয় বড্ড বেশী। মরে গেলে বিরাণী খাবে ক্যামনে, ঠিক? অথচ, একজন ব্রাইট কিন্তু আমি মনে করি অন্যদের মত পলায়নপর না হয়ে সেই বাস বা ট্রেনে থেকে যেতো। কেননা ব্রাইট কিছু গনিত জানে। সে এটা জানে যে, একটি নির্বিচার বোমারুর টুপি-দাড়ি হবার সম্ভাবনা শতভাগের কাছাকাছি হলেও একটি নির্বিচার টুপি-দাড়ির বোমারু হবার সম্ভাবনা শূণ্যের কাছাকাছি। ব্রাইট এটা করতো সেই লাঞ্ছিত টুপি-দাড়িটিকে কম্ফোর্ট করার জন্য, অথবা বাস থেকে নেমে গিয়ে আরেকটি বাসের জন্য অপেক্ষা করে সে সময় নষ্ট করতে চায়না বলে।

কেনো ইসলামকে না বলবো? উত্থাপন করার মতো একটি সুযোগ্য প্রশ্নই এটা বটে। এবং যথেষ্টই আমোদদায়কভাবে এই প্রশ্নের সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত উত্তরগুলিও আসে স্বয়ং ইসলাম থেকেই-

স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ, তোমাদের শস্যক্ষেত্র তোমরা যেভাবে খুশী চাষ করো। (২:২৮২)

বিয়ে করো একটি, দুটি, তিনটি কিংবা চারটি। যদি নিরপেক্ষতা রক্ষা না করতে পারো তবে অনুগত থাকো একই স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের প্রতি। (৪:৩)

পুরুষ স্ত্রীগনের উপর কর্তৃত্বশীল হবে,……স্ত্রীগন অবাধ্য হলে উপদেশ দাও, সহবাস বন্ধ করো এবং সামান্য প্রহার করো। (৪:৩৪)

এবার আসুন নির্ধারণ করি বর্তমান সময়ে আমরা মূল্যবোধের যেই প্রমিত ব্যাবস্থা সমুন্নত করি তার থেকে ইসলামের এই মূ্ল্যবোধের বিচ্যুতি কতোখানি। উপরোক্ত সবগুলো বাক্য কোরানের এবং সম্ভবত সঠিক যদি না ইতিমধ্যেই ইসলামিক স্কলারেরা এর কিছু শব্দের সহী আরবী টু বাংলা প্রতিশব্দ উৎপাদন করে ফেলে। যেখানে আরবী বিশেষত কোরানিক আরবী কিনা একটি খুবই ফ্লেক্সিবল ভাষাঃ ঠিক একটি ১৪ বছর বয়সী অ্যাক্রোব্যাটের মতো। সেটা হলেও আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। কেননা কোরান আসলে কি মিন করতে চায়, কোনো ব্যাপারে আল্লার কি মতামত ইত্যাদি বিষয়ে কোন বিশ্লেষণ শুনতে ও করতে আমি একফোঁটাও আগ্রহী নই, আমি ব্যস্ত। প্রথমত, সম্মতিবিহীন যে কোন চাষবাসকে বলা হয় ধর্ষণ, চাষক্ষেত্রটি স্ত্রী কিংবা দাসী যেই হোক না কেনো। দ্বিতীয়ত, সমাজের একজন সহোদর সদস্যের উপর চাষবাসের ক্ষেত্রের মতো এমন একটা বিকৃতরূচির রূপক আরোপ করা মানসিক সুস্থতার লক্ষণ নয়, এটা ইসলামের লক্ষণ। আমাদের বিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র এই একটি বাক্যের উপর ভিত্তি করে এটা হাইপোথেসাইজ করার জন্য যে- ইসলামের রিংলিডার হযরত ছিলো একটি সেক্স অফেন্ডার। একটি সভ্য সমাজে শুধুমাত্র লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে কাউকে চাষাবাসের ক্ষেত্র -যেখানে যেভাবে খুশী কৃষিকাজ করা যায়- নাম ধরে ডাকাটা হবে একটি হেইট ক্রাইম যার জন্য জরিমানা ও জেল পর্যন্ত হতে পারে। হ্যা, আমাদের কাছে যেটা ধর্ম সেটা সভ্যবিশ্বে একটি ফৌজদারী অপরাধ। এবং ফৌজদারী অপরাধ বিচ্ছেদ না ঘটিয়ে একাধিক বিবাহ করা ও বউ পেটানো। এজন্যই ইসলামকে না বলবো। কেননা ইসলাম এমন একটি মূল্যবোধ ব্যাবস্থা যা -সুসভ্যতার কাছে আমাদেরকে প্রতীয়মান করে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিন্মস্তরের জীব হিসেবে।

ইসলামকে না বলার আরও একটি বড়ো কারণ হচ্ছে- ইসলাম মানুষের মনে ভূয়া জ্ঞানের ভাব সৃষ্টি করে। অথচ জ্ঞানের সাথে ইসলাম কিংবা যে কোন ধর্মের অবস্থানই পরস্পরের বিপরীত মেরুতে। কোরান মুখস্থ করে তারা নিজেদের জ্ঞানী দাবী করে। অথচ একজন স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রের মস্তিষ্ককে যতোটুকু তথ্য ধারন করতে হয় তা দিয়ে কোরান ত্রিশবার লেখা যাবে। বস্তুতঃ কি আছে কোরানে একই কথার অপ্রয়োজনীয় বারংবার পুনরাবৃত্তি আর কয়েকটি শিশুতোষ রূপকথার গল্প ছাড়া? আকাশ মালিকের করা রেফারেলে দেখলাম একটা ফান্ডি ডঃ ক্রেইগ…নাহঃ, ডঃ গড……তাও না, মিঃ গড কর্তৃক কৃত্রিম জীবকোষের আবিষ্কারকে অস্বীকার করেছে। ফান্ডি বলছে যে তারা বিজ্ঞানের ভাষ্য যা কিনা পিয়ার-রিভিউকৃত গবেষণা-সংকলনে প্রকাশিত হয়- তা ব্রাইটদের মতো এককথায় গ্রহন করে ফেলে না। তারা বিজ্ঞান গ্রহন করে তখনই যখন কিনা তা কোরানের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে না। চলুন ফান্ডিদের উদ্দেশ্যে একটা হাততালি দিয়ে ফেলি! এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে ফান্ডি কিন্তু মিঃ গডের গবেষণা-প্রবন্ধটি পড়ে দেখেনি কিংবা দেখলেও এর একটি বাক্যও বোঝেনি; তথাপিও তার দেড়হাজার বছর পুরোনো অ্যাব্রা-কা-ড্যাব্রা বইটি যার গ্রহনযোগ্যতার স্বপক্ষে গত পনেরো হাজার বছরেও একটা কোন মামুলী প্রমান সংগ্রহে করতে সে ব্যার্থ- সেই বইটির ভাষ্য সে গ্রহন করছে, কেনো? কারণ এটা তাকে দিচ্ছে জ্ঞানের একটি বোগাস অনুভুতি। কতোটুকু নির্দৃষ্ট করে বলতে পারব না, তবে এটা নিশ্চিত আমাদের অশিক্ষা ও পশ্চাদপদতার পেছনে ইসলামের ভালো ভূমিকা রয়েছে।

ঈশ্বর জানেন (no pun intended!) কতোটা ব্যগ্র আমি এই বিদ্যের জাহাজটিকে এটা ব্যাখ্যা করার জন্য যে কেনো মিঃ গডের আবিষ্কার কৃত্রিম জীবনের আবিষ্কারই। কিন্তু না সেটা আমি করতে যাচ্ছি না; কেননা বিজ্ঞান বিষয়ে ইসলামের সাথে আলোচনা হতে পারে তখনই যখন কিনা ইসলামটি জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়ে বলবে যে- তার প্রস্তরযুগীয় অর্ধশিক্ষিত, অর্ধসভ্য ঐন্দ্রজালিক পূর্বপুরুষ যারা কিনা ছিলো শিক্ষা, সচেতনতা, সংবেদনশীলতা ও সহমর্মীতার পাল্লায় আমাদের বর্তমান সময়ের মানুষদের চেয়ে কয়েক অর্ডার অফ ম্যাগ্নিচিউড নীচুস্তরের- সেইসকল মানুষ কর্তৃক রচিত কোরান নামক রূপকথার যাদুর বইটির কোনই বৈজ্ঞানিক গ্রহনযোগ্যতা নেই। তবেই এবং কেবলমাত্র তবেই আমি ইসলামের মতো মশা মারতে বিজ্ঞানের মতো কামান দেগে অনুপাতজ্ঞানহীন অবিবেচক সেনাপতির গঞ্জনা ঘাড়ে নিতে রাজি আছি। তবে এইটুকু বলতে পারি নিশ্চয়ই যে, ফান্ডি যেই কারণে মিঃ গডের আবিষ্কারকে অস্বীকার করছে এই একই কারণে সে অস্বীকার করতে পারে “উড়োজাহাজ মানুষের আবিষ্কার” এই দাবীটিও; কেননা অ্যালুমুনিয়ামতো আর মানুষের আবিষ্কার নয়। বিদ্যের জাহাজটি মাটিতে কেনো- উত্থাপন করার মতো সুযোগ্য একটি প্রশ্নই এটা বটে এবং করলেও আশা করি না যে মৃত গোপাল ভাঁড় এসে স্বত্বাধীকার-লঙ্ঘন দাবী করে বসবে। করুণার বশবর্তী হয়ে কিংবা দেশ ও দশের নিঃস্বার্থ উপকার করার লক্ষ্যে- কেউ যদি দয়া করে এই বিদ্যের জাহাজটিকে জলে ভাসিয়ে দেয় (অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়িয়ে)- তবে হর্ষধ্বনি দিয়ে তাকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি মুক্তমনার পক্ষ থেকে। এবং বলতে পারি- নাও, এবার ডলফিন মাছের মতো বিবর্তিত হও; মানে বিবর্তন যেভাবে কাজ করে বলে তুমি মনে করো; খুলীর পেছনে ফুটো করে একটা ব্লোহোল বানাও আর একই ফুটো দিয়ে জলে দ্রবীভুত করে দাও মাথার ঘিলু, যদি এখনও তার কিছু অবশিষ্ট থেকে থাকে।

কিন্তু এগুলোর একটাও ইসলামকে না বলার সবচেয়ে বড় কারণ নয়। ইসলামকে না বলার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এটা যে, ইসলামের নিজের টিকে থাকার জন্য মডারেট মুসলিম নামক বিরাণীখোর বিক্রয় প্রতিনিধিদের দরকার পড়ে। মডারেট মুসলমানেরা জানে লাদেনের ইসলাম কেউ কিনবে না, বাংলা ভাইয়ের ইসলামও নয়। তাই ইসলামকে বিক্রয়যোগ্য করার এক মহৎ প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে। এই তথাকথিত মডারেট মুসলিমদের সাথে ফান্ডি মুসলিমদের পার্থক্য কি জিজ্ঞেস করলে বড়ই মজাদার একটি উত্তর পাওয়া যায়- “ওয়েল আমরাতো বোমা ফুটানো, মৃত্যু-হুমকী, মানুষকে হয়রাণী ইত্যাদি করি না, এইটাই পার্থক্য!” এবং এটাও তাদের বলতে শোনা যায় যে “বোমা ফুটানো ভালো না, সত্যিকারের মুসলমানরা এইসবের মধ্যে নেই।” কিন্তু, চুপিচুপি ঘোষণা দেওয়া ছাড়া সহোদর মুসলমানদের এহেন অপকর্মের কি প্রতিবাদ তারা করেছে এই প্রশ্ন করলে কোন উত্তর পাওয়া যায় না। মডারেট মুসলমানেরা কিন্তু প্রতিবাদী এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। হযরতের কার্টুন আঁকা হলে তারা পথে নেমে আসে, সুইট্জারল্যান্ড মিনারেট বানানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তারা পথে নেমে আসে; ফ্রান্স বোরকা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব তুললে তারা শুধু পথে নেমে এসেই সন্তুষ্ট থাকে না বরং ইসলাম বৈজ্ঞানিক ধর্ম বিধায় মহিলাদের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ডি এর অপকারিতা, বোরকাই কেনো এই সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং স্কার্ভি কেনো মহিলাদের জন্য বড়ই উপকারী একটি রোগ সে সম্পর্কে আমাদের দুই-এক ছত্র জ্ঞানদানও করে। কিন্তু, মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই মানা সত্বেও বিপথগামী সহোদর মুসলমানেরা বাজী-পটকা ফুটিয়ে কয়েকটি বা কয়েকহাজার মানুষ মেরে ফেললে এর কোন প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তা তারা বোধ করে না। বরং স্বপ্ন দেখে চলে কেনো এক সময়ে এই সহোদর ভাইয়েরা বোমা ফুঁটিয়ে আফগানিস্তান বা ইরানের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে পারলে তারা সব মতভেদ ভুলে একই পতাকার নীচে আবার চলে আসবে এবং ফাই ফাই করে দেশে দেশে ইসলামের ঝান্ডা উড়িয়ে চলবে একের পর এক, প্রতিদান স্বরূপ অপর পক্ষ থেকে কোনরকম ঝাঁটার বাড়ির ভয় ছাড়াই।

সহোদর মুসলমানদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ তো তারা করেই না, বরং উল্টো সম্পুর্ণ পশ্চিমের বিরুদ্ধে তারা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই, ইউরোপের রাস্তায় আপনি যতোগুলো বোরকা আর টুপি-দাড়ি দেখবেন তার শতাংশও দেখবেন না ঢাকার রাস্তায়। এবং তাদের এই টুপি-দাড়ি কিংবা বোরকার রহস্য যতোটা না ধর্মীয়, তার চেয়ে অনেক বেশী রাজনৈতিক। একটি নারীকে বোরকা পড়িয়ে দিয়ে তারা এটাই বলতে চায় যে- “আমি তোমার সুসভ্যতার মুখে মূত্রত্যাগ করি; আমি স্ত্রী-কন্যাকে বোরকা পড়াবো এবং তাদেরকে অর্ধেক মানুষ হিসেবে গন্য করবো; আমি দেখতে চাই এর বিরুদ্ধে তোমরা কাফিরের দল কি করতে পারো।” আমি জানি কি প্রশ্ন আপনার মনে এসেছে। টুপি-দাড়িটি তবে কাফিরের দেশে পড়ে আছে কেনো, তাই তো? উত্তর হচ্ছে, কাফিরের দেশে বিরাণী পাওয়া যায়। রাস্তায় একটি বোরকা কিংবা টুপি-দাড়ি দেখলে তাই আমার প্রত্যেকটি পথচারীকে থামিয়ে চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করে- আমি কিন্তু কোন ইসলাম নই। তুমি বুঝতে পারছো? আমি কোন ইসলাম নই, কখোনই ছিলাম না। আমি অস্থিমজ্জায় কাফের। জীবনে টানা সাতদিন আমি ইসলাম থাকতে পারিনি। এই সাতদিনে অন্তত একবার এরকম কিছু ঘটেছে যার প্রেক্ষীতে কিনা আমি পাকস্থলী কুঁকড়ে উঠে আসা বমি চেপে রেখে বলে উঠেছি- আমি ইসলামের কেউ নই। আমার শৈশব থেকেই এটা ঘটে চলছে। কেনো আমি ইসলাম হবো- নির্যাতন করে মারা বিধায় হালাল মাংস ভুলেও আমি মুখে তুলিনা, সুপারশপের চামড়াওয়ালা মুরগী কিনে চামড়া ছিলে রান্না করি; শুধুমাত্র নিজের কাফিরত্ব অটুট রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত এক কি দুইবার শূকরের মাংস নিজেও খাই- বন্ধুদেরকেও খাওয়াই; আর মদ? সেটা পছন্দ করি হযরত উটের মূত্র এবং যৌনসঙ্গম যেমন পছন্দ করতো, ঠিক তেমনি; জেনা-হ্যা; ব্যভিচার- এখনও নয় তবে সুযোগ পাওয়ামাত্রই করবো; জুয়া- নিয়মিত নয়, তবে খুব তাড়াতাড়ি নিয়মিত হয়ে যাবো; সমকামিতা- এখনও নয়, তবে সুযোগ পাওয়ামাত্রই করবো। এবং আপনারা কেউ যদি জেনে থাকেন এমন কোন কাজ যেটা কিনা কোন অপরাধ না হওয়া সত্বেও ইসলাম কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছে দয়া করে আমাকে জানাবে; টু ডু তালিকায় যোগ করে দিবো। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সমাজের সহোদর সদস্যদের প্রতি সহমর্মীতা ইত্যাদি দিয়ে আমি আমার হৃদয়কে সিলগালা করে দিয়েছি যাতে ইমানের আলো এক ফোঁটাও প্রবেশ না করতে পারে। ইহুদী-খ্রিষ্টান এবং পশ্চীমা বিদ্বেষ হচ্ছে ইসলামের একত্রীকরণকারি শক্তি। যদিও যেই কাফিরদের প্রতি তাদের এতো ঘৃণা সেই কাফিররা না থাকলে যেই কম্পিউটারে বসে ফান্ডিটি ঘৃণা ছড়াচ্ছে সেই কম্পিউটারের অস্তিত্ব থাকতো না; যেই কাপড় সে পড়ে রয়েছে সেই কাপড়ের বদলে থাকতো ছাল-বাকল; যেই শেষ খাবার সে খেয়েছে সেই খাবার যোগাড় করতে তাকে বল্লম হাতে জঙ্গলে ছুটতে হতো। ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা চলে তখনই যখন কিনা লজ্জাহীনতা এবং অকৃতজ্ঞতা শান্তির দুটি প্রতিশব্দ।

মডারেট ইসলামের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ-ঘোষণা আমার মনে একটি অনুভুতিরই জন্ম দেয়, ক্রোধ। কিন্তু ফান্ডিদের মুখের দিকে তাকালে, তাদের চোখের দিকে তাকালে সেই ক্রোধটিই আবার করুণায় রূপান্তরিত হয়। আমার মায়া লাগে। কেননা তাদের চোখে আমি দেখি একাকীত্ব, হতাশা, সঙ্গী এবং সঙ্গহীনতা, আকুতি, রিজেকশন এবং সমাজে মিশতে না পারার ব্যার্থতা। তাদের অসহায়ত্ব তাদেরকে আরও জোড়ে ইসলাম আঁকড়ে ধরা শিখিয়েছে। কিন্তু এতোটুকু তারা বুঝতে কিন্তু মোটেও অপারগ নয় যে চরমপন্থী ইসলাম তাদেরকেই ব্যাবহার করছে মানব-বর্ম হিসেবে। তাদের মাঝে লুকিয়ে থাকার যায়গা পাচ্ছে বলেই চরম-ইসলামের উতপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে। শুধুমাত্র নিজের কিছুটা মানসিক প্রশান্তির জন্যই ইসলামের মতো একটি পাশবিক ধর্মকে তারা না বলতে পারছে না। একটি কুখ্যাত সেক্স অফেন্ডারকে দাবী করছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে, হাত কাটা মাথা কাটাকে বলছে সুবিচার আর বউ পেটানোর বিধানকে মনে করছে বড়ই মানবিক। এটা কি রিজেকশনের ফসল নাকি রিজেকশনের কারণ সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে এই ব্যাপারে কিন্তু তারা নিজেরাও নিশ্চিত যে- অন্যান্য সকল ধর্মের মতোই ইসলাম একটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিন্মস্তরের অবস্থান। আপনি মোটামুটি শক্ত করে যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন- আপনি কি মুসলমান; তবে তাদের উত্তর হয়- হ্যা আমি মুসলমান, তবে……!!! মুসলমান হওয়া স্বত্বেও তারা কেনো অন্যান্য মুসলমানদের মতো না এবং কেনো অন্যান্য মুসলমানদের থেকে ভালো এটা প্রমান করার জন্য বাদরের মতো ততপর হয়ে উঠে তারা। নিঃসঙ্গ বাদরটি তারপর বড় হয়ে একসময় বাবাকে ঘটক ধরে একটি অ্যারেঞ্জড বিয়ে করে ফেলে এবং সন্তান জন্ম দেয়। এটা কিন্তু গুরুতর বিষয়। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে আনফিট জীব প্রজননের সুযোগ পাবে না। যেই জীব নিজের খাবার যোগাড় করতে না পারে সে প্রজনন করতে যাচ্ছে না; প্রজননসঙ্গী যোগাড় করতে পারার মতো যোগ্যতা যার নেই সে প্রজনন করতে যাচ্ছে না। কিন্তু, বাবার নির্বাচনী ফিটনেসের উপর ভাগ বসিয়ে যেই আনফিটটি একটি বউ যোগাড় করে ফেলে প্রজনন শুরু করে দিলো সে কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মে তার নিজের মতোই আরেকটি আনফিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে গেলো। ফলে, একটি চক্র শুরু হলো দারিদ্র-চক্রের মতো যা কিনা প্রকৃতিকে উপহার দিয়ে চললো হোঁচা-বোঁচা পশ্চাদপদ জনপুঞ্জ। তবে, এইযে আমাদের জনপুঞ্জের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে এর দায় কিন্তু ইসলামের একার নয়, ইসলামের চেয়ে কয়েক অর্ডার অফ ম্যাগ্নিচিউড বেশি দায় হিন্দুধর্মের- আজ থেকে চার-পাঁচ প্রজন্ম পূর্বেও আমাদের পূর্বপুরুষেরা কিনা যেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তবে, সবচেয়ে বেশী দায় আমাদের সমাজ ব্যাবস্থার যেটা কিনা এখনও প্রস্তরযুগীয় মূল্যবোধ দ্বারা চালিত হচ্ছে। এটা কিন্তু এই সমাজ যা কিনা বর্তমান সময়ে ইসলাম ও হিন্দু উভয় ধর্মের উতপাতই অনেকাংশে কমে আসার পরও এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ বাধাগ্রস্থ করছে। এক ফোঁটাও গর্ববোধ করিনা যখন মনে পড়ে যে- আমিও এই চক্রের একটি অংশ।

ইসলামের প্যাথলজি যারা বোঝেন এটা হয়তো তারা অনুধাবন করে থাকবেন যে, মডারেট ইসলাম সবকিছুকেই মাপে তার নীচে কে কে আছে তাদের সাথে তুলনা করে। তাই ইসলামকে আপনি বলতে শুনবেন- হিন্দু ধর্ম এতো মানুষ মেরেছে আর ইসলাম মেরেছে এতো। ইসলাম কম মেরেছে তাই ইসলাম ভালো। কিংবা হিন্দু বিয়ে দেয় ৬ বছরে, ইসলামতো তাও নয় বছরে দেয় তাই ইসলাম ভালো ইত্যাদি। আমি সন্দেহ করি তারা নিজেরাও এটা অনুধাবন করতে পারে যে তারা বোগাস যুক্তি দিচ্ছে। কিন্তু হায়! হার স্বীকার করে নিতে পারার মতো বড়ো হৃদয় ইসলাম কবে প্রদর্শন করেছে? প্রতিটি মডারেট মুসলিমকেই আপনি পাবেন যুক্তি দেখাতে পরম ওস্তাদ রূপে। এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে কিনা তাদের যুক্তি নেই। হযরত শিশুনির্যাতনকারী এটা শিকার করে নিয়েই তারা যুক্তি দিতে নামে শিশুনির্যাতন করে হযরত কেনো কোন খারাপ কাজ করেনি। ফান্ডিরা খুবই খুবই পিছলা জীব, ধরতে পারবেন না তাদের আপনি কোনভাবে; ফসকে তারা যাবেই। কেননা যুক্তি দিতে তারা বড়ই পটু। যদি চায় তবে কোরান হাদিস থেকে রেফারেন্স টেনে তারা এটাও প্রমান করে দিতে পারবে যে- আল্লা আসলে একটি মস্ত-বিরাট মিকিমাউস; এবং খুব সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক স্কলারেরা খুব একটা দেরী করবে না এই পাল্টাযুক্তি নিয়ে আসতে যে- না মিকিমাউস নয়, আল্লা আসলে একটা বিশাল ঠোঁটওয়ালা উডি-উড-পেকার। আর সবচেয়ে মজাটা হয় বোমা ইস্যুতে তাদের প্রশ্ন করলে। তার প্রথমেই ক্রমবর্ধমান বোমা সমস্যা নিয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং প্রমান করার চেষ্টা করে যে সে নিজেও আপনার মতোই বোমা সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু, কিভাবে এটা সমাধান হতে পারে জিজ্ঞেস করলে বলে আসলে বোমা সমস্যার মূ্লটাতো অনেক গভীরে, আমেরিকা-বৃটেনই তো মূলত আমাদের বোমাবাজ বানিয়েছে, আর ইস্রায়েল, তার কথা আর নাই বা বললাম; সর্বোপরি সেই পুরোন ভাঙ্গা রেকর্ড। মজার ব্যাপার হচ্ছে- আল্লার সংজ্ঞা, চরিত্র ও আচরণবিধি ইত্যাদি নিয়ে যেমন মুসলমানদের মধ্যে কোন মতৈক্য নেই- তেমনি মতৈক্য নেই কে চরমপন্থী মুসলমান আর কে মডারেট মুসলমান এটা নির্ধারণ করা নিয়েও। যেই যুক্তিতে মডারেটটি বলছে যে “আমি মডারেট কেননা আমি বোমা ফুটাই না, ও চরমপন্থী কেননা সে ফুটায়: একই যুক্তিতে একটি চরমপন্থীও কিন্তু বলতে পারে “আমি তো মডারেট আমি তো বোমা ফুটিয়ে মারি, চরমপন্থী হচ্ছে ও কেননা ও মারে শিরোচ্ছেদ করে।” মডারেট আর চরমপন্থার ব্যাপারটা আপেক্ষিক, প্রমিত কিছু নয়। লাদেনও মডারেট, তবে ছাগলসম্রাট হযরতের তুলনায়।

ফান্ডিদের দুটি ব্রহ্মাস্ত্র রয়েছে। এক, তুমি দোজখে যেতে যাচ্ছো। আর দুই, ইসলাম সম্পর্কে তুমি কিছুই জানোনা, তোমার আরও পড়াশুনা দরকার। এই ব্রহ্মাস্ত্র দুটি তারা ব্যাবহার করে যখন তাদের আর কোন যুক্তি থাকেনা তখন, একেবারে সবার শেষে। তাদের এই প্রতিক্রিয়া আমার মুখে সৃষ্টি করে স্মিতহাস্য, দোজখের ভয় ফান্ডি দেখাচ্ছে মানে সে মেনে নিচ্ছে সে হেরে গেছে (ফান্ডি হারলো কি জিতলো সেটা নিয়ে আমার কোনই মাথাব্যাথা নেই যদিও- তবে হেরে যাওয়া ফান্ডির উতপাত থেকে রক্ষা পেয়ে আমি বোধহয় খানিকটা খুশীই হয়ে উঠি); দোজখের ভয় দেখিয়ে ফেললে পরে আমি আর ফান্ডির সাথে তর্ক করিনা কেননা ৯০ মিনিট পার হয়ে গেলে ফুটবল খেলে কি লাভ, ঠিক? তবে, হেরে যাবার পরও যদি ফান্ডি উতপাত বন্ধ না করে তখন আমি তাকে বলি- দেখো, তোমার আল্লা আছে কি নেই কিংবা কি সে বলতে চায় সেটা আমি তার মুখ থেকেই শুনতে চাই, তোমার মুখ থেকে নয়। তোমার আল্লার যদি কোন বক্তব্য থেকেই থাকে সেটা তাহলে তাকে আমার কাছে নেমে এসে বলে যেতে হবে, তোমার দালালী করার প্রয়োজনটা কি হে। আর কোন ফান্ডি যদি এই লেখা পড়ে থাকেন তবে দুঃশ্চিন্তিত হবেন না। আপনার আল্লা যদি আসলেই থেকে থাকে তবে গাধাটাকে আমরা খুব তারাতারিই বের করে ফেলতে যাচ্ছি। গত ১৪ বিলিয়ন বছরে তার বুদ্ধির কোন বিকাশ হয়নি, এবং কাজকর্ম যা সে করেছে সেটা প্রমান করে তার আইকিউ ৪০ এরও নিচে। অপরপক্ষে আমরা মানুষ এগিয়ে গিয়েছি সহস্র আলোকবর্ষ, গবেষণাগারে প্রাণ বানাচ্ছি, ক্যান্সার প্রতিরোধ করছি আর কিই বা না করছি। পালিয়ে সে কতদিন থাকবে? ধরতে পারলে আমি জানিনা কি দন্ড তাকে আমরা দিতে যাচ্ছি; আল্লা যেহেতু, যেহেতু অমর, তাই চামড়া ছুলে লবন মেখে দেয়া কিংবা শূ্লে চড়িয়ে দেয়াটাতে আমি দোষের কিছু দেখিনা। তবে তাকে যেই দন্ডই আমরা দেই না কেনো আপনাকে আমি এটা অন্তত নিশ্চিত করতে পারি যে সেটা তার জন্য আরামদায়ক কিছু হতে যাচ্ছে না। আর ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা? সেটার প্রশ্নেই আসেনা, আমি ব্যস্ত। আমি জানি ইসলাম নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক হিসেবে বিবেচনা করে। ব্যাস, ইসলামকে লক্ষ্য করে একচোট হেসে নেয়ার জন্যে এই একটিই যথেষ্ট, কেনো নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক হিসেবে বিবেচনা করাটা মোটেও নারীবিদ্বেষ নয় এই বিষয়ে আপনার কোন যুক্তিও আমি শুনতে চাই না।

বার্ট্রান্ড রাসেলকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো “মরণের পর আপনি যদি আসলেই দেখেন ঈশ্বর-টিশ্বর ইত্যাদি ঝামেলা রয়েছে, আপনি কি করবেন? ঈশ্বরের মুখোমুখী যদি আপনাকে হতেই হয় তবে তাকে আপনি কি বলতে যাচ্ছেন?” রাসেলের উত্তর ছিলো “তাকে আমি জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য এত কষ্ট কেনো সে করলো।” আমিও অনেকবার ভেবেছি আমি নিজে যদি মরণের পর গিয়ে দেখি আল্লা বসে আছে একটা তাকে আমি কি বলতে যাচ্ছি। জাফর ইকবালের স্বত্বাধিকার মেরে দিয়ে আমি এর একটি উত্তরও বের করেছিলাম- আমি সম্ভবত আল্লাকে বলবো ২২ কে ৭ দিয়ে ভাগ করতে যার ফলাফল আমি চাই দশমিকের পর যতোবেশী ঘর পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। অথবা তাকে আমি মেনসার একটা আইকিউ টেস্ট নিতে বলতে পারি, আমি দেখতে চাই টেস্টে সে কতো স্কোর করে। কিন্তু, কয়েকমাস আগে একটি ক্যান্সার হস্পাইসের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড ভ্রমনের সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য হবার পর থেকে আমি আমার আগের মত থেকে সরে এসেছি। হস্পাইসের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকার সময়ই যেনো বুঝেছি এটা জীবন আর মৃত্যুকে সংযুক্ত করছে। ফেনলের গন্ধ চারদিকে ছড়াচ্ছে পরিচ্ছন্নতা আর পবিত্রতার হাওয়া; কিন্তু কোন প্রশান্তি নেই সেই বায়ুমন্ডলে; হতাশা রয়েছে; আর রয়েছে পিনপতন নীরবতা। শত শত ব্যান্ডানায় ঢাকা প্যালিয়েটিভ কিমোথেরাপির প্রভাবে চুলহীন মাথা আর ব্যাথানাশক মর্ফিনের নেশায় ঢুলুঢুলু চোখে বাচ্চাদের আমি নিজ কানে বলতে শুনেছি “আমি প্রান্তিক, আমার পাঁচ মাস রয়েছে।” দুই বছরের মায়েলোমনোসাইটিক রক্তশূণ্যতা থেকে শুরু করে ষোড়শী অস্টিওসার্কোমা রোগী কি না আছে; হাড়ের গভীরে মেটাস্টেস নিয়ে তারা মর্ফিনের প্রভাবে ১৮ ঘন্টা ঘুমাচ্ছে আর বাকী সময় যন্ত্রনায় কান্নাকাটি করছে, ফুসফুসে মেটাস্টেস নিয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছে; আর তাদের বাবা-মা মুখে কিছু বলছে না, বলছে চোখে আর মুখভঙ্গীতে। আমি কোন বাবা কিংবা মা নই তবে অবশ্যই কোন না কোন বাবা-মার সন্তান- তাই, কিছুটা হলেও বুঝতে পারি এই অনুভুতি কতোটা সহনীয় যে, “আমার সন্তান যার পেছনে আমার এতো সময়, এতো শ্রম, এতো অর্থ বিনিয়োগ; জীবন দিয়ে হলেও যাকে ভালোবাসা ও রক্ষা করার জন্য আমাকে প্রস্তুত করেছে পৃথিবীর সাড়ে চার বিলিয়ন বছরের ইতিহাস- আমার চোখের সামনে সে মরে যাচ্ছে আর নিজের এতো ক্ষমতা এতো সামর্থ নিয়ে আমার কিচ্ছুই করার নেই শুধু দুচোখ মেলে চেয়ে দেখা ছাড়া; তারপরও, মৃত্যু তো একটাই এবং একবারই কিন্তু কি কষ্টটাই না পাচ্ছে আমার সন্তান, চোখ ফিরিয়ে নিয়ে না দেখে থাকতে পারার সামর্থও আমার নেই!” আমার সহ্যশক্তি ভালোই, বারো বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মরে গেলে নিজের ভাঙ্গা কলারবোন ও তার ব্যাথা নিয়েও (দুর্ঘটনার সার্ভাইবার ছিলাম আমিও) আমি সচেতন ছিলাম যেনো নিজের শোকের নগ্ন প্রকাশ কাছের মানুষজনের শোকের মাত্রাকে বাড়িয়ে না তুলে- পিছলে গিয়েছি কয়েকবার যদিও। তারপরও চেষ্টা করেছি নিজের যতো কান্নাকাটি বাথরুমে বা বারান্দায় গিয়ে করতে। আমার সহ্যশক্তি ভালোই; তবে একটা ক্যান্সারাক্রান্ত প্রান্তিক শিশুর বাবা-মার অনুভুতি অনুধাবন করেও নির্লিপ্ত থাকতে পারার মতো এতোটা ভালো নয়। এই পর্যায়ে আমি ভেঙ্গে পড়ি, নিজেকে লুকানোর কোন জায়গা ও সময় না দিয়েই আমার কন্ঠনালী শক্ত হয়ে আসছিলো, নাসারন্ধ্র ভিজে গেছে ততক্ষণে। এই ঘটনার পর আমি সরাসরি বাসায় চলে আসি, বাসায় এসেও আমি প্রাণপনে যুদ্ধ করছি নিজের কুঁচকিয়ে আসতে চাওয়া ঠোঁটের বিরুদ্ধে। সেদিনই আমি সিদ্ধান্তে পৌছাই আসলেই যদি মরার পর আল্লা-টাল্লা ধরণের উতপাত দেখি তবে তাকে আমি কিছুই বলবো না, শুধু তার মুখ উদ্দেশ্য করে একদলা থুতু ছুড়ে মারবো। সর্বপোরি action speaks louder than words, ঠিক?

মানুষের কষ্ট আমার মনে ক্ষমাশীলতার অনুভুতি জন্ম দেয়। আমার নীতিবোধ কোন মহামানবের নীতিবোধ নয়। “ইটের বিপরীতে পাটকেল” এই প্রবাদবাক্যের ব্যতিক্রম ঘটানোর মতো উদার কখোনই ছিলাম না বরং “একটি ইটের বিপরীতে একাধিক পাটকেল” এই নীতিতে চলেছি। মাঝেমাঝেই নিজের স্বল্পক্ষমতা দিয়ে অনানুপাতিকভাবে লঘুপাপে মানুষকে গুরুদন্ড দিয়েছি, কাছের মানুষজনের স্নেহের দাবী প্রত্যাখ্যান করেছি হেসে খেলেই। সেই আমিই সেদিন ক্যান্সার হস্পাইসের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড অবিষ্কার করে নিজ মনে বলেছি “পৃথিবীর সকল মানুষকে আমি যদি একঘন্টা সময় দিয়ে বলতে পারতাম- আমার প্রতি যেভাবে খুশি যতোটা খুশী অমানবিক আচরণ করো- এবং একঘন্টা পরে তাদের সকলকে ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম, তবে বোধহয় আমার প্রশান্তি হতো।” যারা আল্লা চালায় তাদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন, কি ছাতাটা করছে আপনার আল্লা যখন কিনা আপনার সন্তান মারা যাচ্ছে অবর্ণনীয় যন্ত্রনায়? আপনি ও আপনার মতো অসংখ্য বাবা কিংবা মায়ের এই দুর্ভোগের প্রতি যেই আল্লা এতোটাই নির্লিপ্ত- সেই ঠুঁটো জগন্নাথ আল্লার অস্তিত্ব আসলে আছে কি নেই সেটি আমার প্রশ্ন নয়, আমার প্রশ্ন আপনার মাথা তার প্রতি নত কেনো?

শেষ পর্যায়ে চলে এলাম। একটা কথাই বলতে চাই- ইসলামকে কিন্তু না বলতে হবে আমাদেরই, ক্রিশ্চিয়ানিটিকে যেমন না বলতে হয়েছিলো ইউরোপের। এটা আমাদের ঐতিহাসিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক দূর্ভাগ্য যে আমরা ইসলামের ডেমোগ্রাফির ভেতর পড়ি। ইসলামের আগমনের পূর্বে পড়তাম হিন্দু ডেমোগ্রাফির ভেতর। তখন ঈশ্বরের (no pun!) আশির্বাদ স্বরূপ ইসলামের আগমন ঘটে। নাহলে বোধহয় এতোদিনে আমি হতাম কোন মুচীর সন্তান। হিন্দুধর্মের উতপাত সহ্যসীমা অতিক্রম করলে আমরা তাকে না বলেছি। এখন ইসলামের উতপাতে আমাদের জীবন অতিষ্ট। আমরা কি আরও একবার একটা না বলে দেখবো? যদি সেটা নাও বলি তবে এটুকু অন্তত যেনো বলি যে- যুক্তি দেওয়া ইসলামের কাজ নয়, এটা যুক্তিবিদদের কাজ; আইন বাতলে দেওয়া ইসলামের কাজ নয়, এটা সংসদ আর বিচারালয়ের কাজ; বিজ্ঞান বাতলে দেওয়াও ইসলামের কাজ নয়, এটা বিজ্ঞানীদের কাজ; ইসলামের কাজ হচ্ছে স্বর্গ-নরক চালানো, জিন চালানো, ফেরেস্তা চালানো, মেরাজ চালানো ইত্যাদি। মূলকথা বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন বিষয় নিয়ে ইসলাম যা খুশী বলতে ও করতে পারে, কিন্তু বাস্তব নিয়ে মানুষকেই ভাবতে হবে। এতোটা দীর্ঘ সময় যারা সাথে থাকতে পেরেছেন অভিনন্দনস্বরূপ তাদের জন্য একটি গান, অবশ্যই মন্টি পাইটনের। দুঃসময়ে এই গানটা আমাকে অনেক শক্তি যোগায়। এইতো।

Just remember that you’re standing on a planet thats evolving
Revolving at nine hundred miles an hour…..

[এই লেখাটির কোন স্বত্বাধীকার দাবি করছি না। যে কেউ একে নিজের সৃষ্টকর্ম হিসেবে দাবি করতে পারেন। বানান/ ব্যাকরণ-বিভ্রাট, ভুল বানান/ব্যাকরণ এবং সৃষ্টিশীল/ পূর্বনির্ধারিত বাংলা প্রতিশব্দ প্রস্তাব করুন মন্তব্যে।]
httpv://www.youtube.com/watch?v=buqtdpuZxvk