শিরোনামটি একজন লেখকের বই থেকে নেয়া। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। বাংলাদেশের সব ক’টা জানালা খুলে দেয়া হয়েছে মায়ের শ্রেষ্ট সন্তানদের জন্যে যারা এই দেশটাকে ভালবেসে জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলার শ্রেষ্ট সন্তানদের একজনের নাম শেখ মুজিব। আজকের এই দিনে লক্ষ-কোটি মানুষের কণ্ঠে, বাংলার আকাশে বাতাসে যার নামটি ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই নাম শেখ মুজিব। এই দিনে মুজিবের দেহ বন্দী ছিল পাকিস্তানের কারাগারে কিন্তু ব্যক্তি মুজিব উপস্থিত ছিলেন বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে প্রাণে, মানসে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে লক্ষ-কোটি মুক্তিসেনার সম্মিলিত সত্ত্বা একটি মোহনায় মিলিত হয়ে যে একটি সত্ত্বা হয়েছিল তিনি শেখ মুজিব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা মুজিব ছাড়া সম্ভব নয়, বায়ান্নতেও মুজিব একাত্তরেও মুজিব। এ ইতিহাসের পাতায় পাতায় মুজিব। হরেক প্রকার প্রাণীর উপস্থিতিতে বিচরণে বনের সৌন্দর্য, কিন্তু বনের রাজা একজনই হয়। মাটির গর্তবাসী মুশিকছানারা যখন সিংহের নিন্দা করে তখন হাসি পায়, ক্ষোভ হয়।

এই লেখাটি সম্পূর্ণই সেই লেখকের বই থেকে কপি পেষ্ট করা। পারতাম তার উক্তিগুলো খন্ডভাবে আলোচনা করে একটি লেখা সাজাতে, কিন্তু তা হয়তো মুজিব নিন্দুকদের চোখে হতো পক্ষপাতদুষ্ট বা এক পেশে। বিজয় উৎসবের এই দিনে এক সিংহের মুখ থেকে আরেক সিংহের বর্ণনা ও তার সম্মন্ধে জানার গুরুত্ব বিবেচনা করে লেখাটি মুক্তমনার পাঠকদের জন্যে উপস্থাপন করা হলো।
====================================================

এখানে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী খুবই কম; বুদ্ধিজীবী নামে যারা আছে, তারা মোটামুটি অশিক্ষিত, তবে সেটা কোনো অপরাধ নয়, প্রকৃত শিক্ষা দরিদ্র দেশে অর্জন করতে না পারাই স্বাভাবিক, তবে এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য চরিত্রহীনতা, এরা মুর্খ শক্তিমানদের মুঠো থেকে ক্ষুদকুড়োঁ ভিক্ষে পেতে চায়, তাই এরা পেছনের সারির কর্মী হয়ে ওঠে বিভিন্ন দলের; এবং দলের মুখের দিকে তাকিয়ে যে-কোনো শ্লোগান দেয়; বাঁধাবুলি আবৃত্তি করে।

তাদের সাধ শক্তিমানদের কাছ থেকে কিছু পাওয়া। স্বাধীনতার এক বা দু-দশক পরে মার্কিন ক্ষমতাধিকারীরা যদি বলতো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনে ওয়াশিংটন ও তাঁর সঙ্গীদের কোনো ভূমিকা নেই, তাহলে যা হতো, তাই হয়েছে আজকের বাঙলাদেশে। মার্কিনরা বাঙালি মুসলমানদের মতো বিকৃত ছিলো না, নষ্ট ছিলো না, এখনো নেই; তারা তাদের মহানদের গৌরব দিয়ে এসেছে, তাঁদের রচিত সংবিধান প্রাণপণে রক্ষা করে এসেছিল; কিন্তু আমরা তুচ্ছ বিকৃত বাঙালি মুসলমান স্বাধীনতার প্রধান পুরুষদের খুন করেছি, অবজ্ঞা করেছি, তাঁদের নাম পর্যন্ত মুছে ফেলে গৌরব বোধ করেছি। এটাই স্বাভাবিক আমাদের জন্যে- আমাদের রক্তেই দোষ রয়েছে। মার্কিন প্রধান বিচারালয়ের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে স্বাধীনতার স্রষ্টাদের প্রণীত সংবিধান সমস্ত বিপন্নতার মুখেও রক্ষা করা, কিন্তু আমাদের প্রধান বিচারালয় সেটিকে বিভিন্ন দুর্বৃত্তের পায়ের নিচে দলিত হতে দেখে কখনোই দুঃখ পায় না। যে-জাতি সত্যকে মেনে নেয় না, সত্যকে লালন করে না, তার মতো ঘৃণ্য ও ভবিষ্যৎহীন আর কেউ হতে পারে না।

আমি কখনো শ্লোগান দিই নি, কারো স্তব করি নি, কারো দিকে মাথা নত করি নি, করবোও না কখনো; কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে কখনো দ্বিধা করি নি। আমার বন্ধুরা অনেক মহাপুরুষের জয়গান গেয়ে কবিতা লিখেছেন, আজো লিখছেন, বক্তৃতায় অনেকের স্তবে মুখর হয়েছেন, আমি লিখি নি, মুখর হই নি; কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধা করি নি, এবং যে-কোনো আরাধ্য ব্যক্তি ও বিশ্বাসের সমালোচনা করতে দ্বিধা করি নি। কেননা কারো কাছে আমি কিছু চাই নি। আমি কারো দলে নেই।

১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টি আমার মনে পড়ে, যদিও স্মৃতি এরই মাঝে রহস্যময় হয়ে উঠেছে। তখন আমি ছিলাম ২৪, এর মাঝে এতো বছর কেটে গেছে, এতো কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার স্মৃতি কি সবুজ পাতার মতো থাকতে পারে? ১৯৭০- এর নভেম্বর ডিসেম্বরে কি আমি স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? কেউ চেয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানে? মুজিব চেয়েছিলেন? অন্য কেউ চেয়েছিলো? তখন স্বাধীনতার কথা ভাবতে ভয় লাগত না? তখন আমরা শুনতাম স্বায়ত্বশাসনের কথা। তখন কে ছিলো সবচেয়ে পরিচিত, বিখ্যাত, কেন্দ্র? বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ? তাঁরা তো কালাতিক্রমী, তাঁদের কেউ উৎখাত করতে পারে না। ওটি শৈল্পিক কাব্যিক ব্যাপার ছিলো না, ছিলো রাজনীতিক; ওই রাজনীতিক আকাশে একটিই নক্ষত্র ছিলো, তাঁর নাম সূর্য ছিলো না, ছিলো শেখ মুজিব। এককালের এক উত্তেজিত ছাত্রনেতা পরে হয়ে উঠেছিলেন মহানেতা। আমি কখনো তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলি নি। দেবতাদের পুজো করার জন্যে ভক্তরা ১৯৯ টা নাম তৈরি করে। আমার কোনো দেবতা নেই। ওটা রাজনৈতিক শ্লোগান, ভক্তরা যেমন দেবতাদের বিভিন্ন নামে ভূষিত করে, এটাও তেমন একটি অভিধা; ভক্তরা বিভিন্ন অভিধায় তাদের দেবতাকে পুজো করে দেবতার কিছু মহিমা নিজের ভেতরে সঞ্চারিত করে ধন্য ও শক্তিমান হওয়ার জন্যে। আমার কবিতায় দু-একবার তাঁর নাম এসেছে, তাও মুজিব, সঙ্গে কোনো অভিধা নেই।

তবে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন রাজনীতির প্রধান পুরুষ, এবং ঐতিহাসিক বিচারেও তাঁর সঙ্গে তুলনীয় আর কোনো বাঙালি রাজনীতিবিদ নেই। সোহরোয়ার্দি? ফজলুল হক? ভাসানি? তাঁর পাশে অগ্রজরা মাঝারি, অনুজরা তুচ্ছ ও হাস্যকর। তিনি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি করেন নি, তিনি যুগান্তর ঘটানোর রাজনীতি করেছেন। তিনি শুধু রাজনীতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন নি, তিনি যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন রাজনীতিক ধারার, যেমন কবিতায় যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ বা ত্রিশের কবিরা।

তাঁকে ঘিরেই আলোড়িত ও বিস্ফোরিত হয়ে চলেছিলো বাঙলাদেশের, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের, রাজনীতি; অর্থাৎ তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন আমাদের রাজনীতিক মণ্ডলটিকে; এবং তাঁর পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর সমকালীন ও প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। আমি রাজনীতিবিদদের ভক্ত নই, কখনো তাঁদের স্তব করি নি; তবে তাঁদের ভূমিকা ও মূল্য কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি। শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উঁচুতে ছিলো তাঁর মাথাটি- সহজেই চোখে পড়তো তাঁর উচ্চতা, এবং আমাদের বামন রাজনীতিবিদদের মধ্যেও তিনি ছিলেন মহাকায়।

অনেক সময় আমার মনে হয় বাঙালিদের মধ্যে তাঁরাই মহৎ, যাঁরা পেরিয়ে যান বাঙালিত্বের ক্ষুদ্র সীমা, যেমন পেরিয়ে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ ও আরো অনেকে। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে এই সীমা পেরোতে পেরেছেন খুবই কম। মহান বাঙালিরা বাঙালি থেকেও সীমা পেরিয়ে গিয়েছিলেন বাঙালিত্বের, রাজনীতির ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানের মধ্যে এই সীমা পেরোতে পেরেছিলেন একমাত্র মুজিব। তাঁর স্তবকারীরা যে তাঁকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে স্তব করে, সেটা স্তবমাত্র, এ-স্তব তাঁকে নষ্ট করেছিলো, তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ অনেক বাঙালি আছেন আরো অনেকে; কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে তিনি অদ্বিতীয়।

রাজা ও রাজনীতিবিদদের অতিশায়িত করে দেখার একটা মত্ততা রয়েছে মানুষের মধ্যে, এমন কি কবি ও শিল্পীদের মধ্যে, কেননা সাধারণেরা ক্ষমতাকে অত্যন্ত মূল্য দেয়, তারা দেখে সবার ওপরে ক্ষমতাই সত্য, আর কবি-শিল্পীদের একটি প্রথাগত কাজই হচ্ছে রামায়ণ-ইলিয়ড লেখা, গির্জার দেয়ালে মেডোনার ছবি আঁকা, স্তব করা, সাধারণের বিশ্বাসকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা। কিন্তু আমি যেহেতু ক্ষমতাকে খুবই কম মূল্য দেই, আসলে কোনো মূল্যই দেই না, আমি জানি ইতিহাস অনেক সময় তুচ্ছ ইঁদুরকে সিংহরূপে প্রসব করে, আমার চোখের সামনেই তো কতো তুচ্ছকে দেখলাম মহৎ হয়ে যেতে; তাই সভ্যতার অন্যান্য এলাকার শ্রেষ্ঠদের থেকে তাঁদের আমি অনেক গৌণ, তুচ্ছ মনে করি। কিন্তু মানুষকে সাধারণত বাস করতে হয় তুচ্ছদের অধীনে।

ইতিহাসের অনেক বীরই ইতিহাসের পরিহাস- কৌতুক, যেমন বলেছেন কার্ল মার্ক্স পরিস্থিতির বুদবুদ, তারা ভালো জেলে বা কর্মকার বা চর্মকারও হতে পারতো না। রবীন্দ্রনাথের পাশে গান্ধী বা মুজিব খুবই গৌণ, অন্যদের কথা ছেড়েই দিলাম- তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতির এলাকায়; এবং আমাদের রাজনীতিক জীবনে মুজিব অতুলনীয়। কচ্ছপ বেঁচে থাকে কয়েকশো বছর, সিংহ বাঁচে কয়েক বছর; কিন্তু কচ্ছপ হচ্ছে কচ্ছপ আর সিংহ হচ্ছে সিংহ।

জনগণ সাধারণত, প্রাত্যহিক জীবনে, খড়কুটো বা নিস্তরঙ্গ জলরাশি বা ঘুমিয়ে থাকা অগ্নিগিরির মতো; জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাদের মনে হয় তুচ্ছ ও বিবর্ণ ও অসহায়, তারা তাদের জীবন নিয়ে থাকে বিপর্যস্ত বা ছোটোখাটো সুখে সুখী। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে তারা অত্যন্ত মলিন, আপাতদৃষ্টিতে ভাঙাচোরা, তাদের মধ্যে কোনো প্রচণ্ড শক্তি লুকিয়ে আছে, তা টেরই পাওয়া যায় না। কখনো কখনো কোনো নেতা আসেন, যিনি ওই খড়কুটোকে করে তোলেন দাবানল, জলরাশিকে তীব্র প্লাবন, এবং ঘুমন্ত অগ্নিগিরিকে জাগিয়ে তোলেন, চারিদিকে লাভাস্রোত বইতে থাকে। এ-কাজটি করেছিলেন মুজিব।

জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার-মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, তা ছিলো অশুভ দাবানল, প্লাবন, অগ্নিগিরি, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। জনতাজাগানো নেতারা জনগণকে সৃষ্টি করতে পারে, আবার নষ্ট করতে পারে। তারা জনগণকে উন্মাদ মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। ১৯৭১-এর মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ অগ্নিগিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।

জনগণকে যখন জাগানো হয়, তখন তাদের সামনে একটি বা কয়েকটি মহান লক্ষ্য তুলে ধরতে হয়, তখন আমাদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলো স্বাধীনতা; স্বায়ত্তশাসনকে তখন আর আমাদের কাছে মূল্যবান মনে হয় নি। এ-ধরণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কতকগুলো রূপক প্রতীকও দরকার হয়, যেগুলো জনগণের ঘুমন্ত চেতনালোককে আলোড়িত করে, সবাইকে একই আবেগে উদ্বেলিত করে, ওই রূপক প্রতীকগুলোকে তখন মনে হয় পবিত্র, ঐন্দ্রজালিক, ওগুলো তখন যৌথ চেতনা ও প্রেরণার মতো কাজ করে। আধুনিক জীবনে তৈরি হয় প্রাচীন পুরাণ।

একনায়কেরা সাধারণত জাগিয়ে তোলে তাদের প্রাচীন কিংবদন্তি, মানুষের মনকে ঘোলাটে করে তোলে, মানুষকে এলোমেলো করে তোলে, তাদের ভেতর জাগিয়ে তোলে আদিম উন্মত্ততা; যেমন করেছিলো হিটলার আর্যপুরাণ, নীলরক্তের পুরাণ জাগিয়ে, যেমন করতে চেষ্টা করেছিলো পাকিস্তানি একনায়কেরা ইসলামি পুরাণ জাগিয়ে তুলে। শেক্সপিয়র বলেছিলেন, জনতার অনেক মাথা, কিন্তু ভেতরে কোনো ঘিলু নেই; এটাকে ব্যবহার করে একনায়কেরা, তাদের মাতিয়ে তোলে।

তিনটি রুপকপ্রতীক পেয়েছিলাম আমরা একাত্তরের মার্চে। একটি জাতীয় সঙ্গীত-‘আমার সোনার বাঙলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, যেটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্যসৌন্দর্যমণ্ডিত জাতীয় সঙ্গীত, যাতে কোনো উগ্রতা নেই, আছে শুধু প্রকৃতিপ্রেম; দ্বিতীয়টি এক অপূর্ব জাতীয় পতাকা, যাতে ছিলো সবুজের মাঝে সূর্যের মধ্যে বাঙলাদেশের মানচিত্র, তৃতীয়টি হৃদয় কাঁপানো স্বদেশ জাগানো শ্লোগানঃ ‘জয় বাঙলা’। এ-তিনটি রূপকপ্রতীক দিয়ে মার্চ ও তার পরের মাসগুলো আলোড়িত ও মুখরিত ছিলো; এগুলো ছিলো পুরোপুরি পাকিস্তানি চেতনার বিপরীত, এবং আবেগ ও শৈল্পিকভাবে অনেক উৎকৃষ্ট।

‘পাকসারজমিন সাদবাদ’-এর পাশে ‘আমার সোনার বাঙলা’, আমি তোমায় ভালোবাসি’, চানতারার পাশে সূর্যের ভেতরে বাঙলাদেশের মানচিত্র ছিলো চেতনাগত ভাবে ভিন্ন ও শৈল্পিক; আর ‘জয় বাঙলা’ শ্লোগানটি ছিলো বাঙালির হৃদয়ের উল্লাসের মতো।

‘নারায়ে তাকবির’, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-এর মতো মধ্যযুগীয়তার পাশে ‘জয় বাঙলা’ ছিলো সঙ্গীতের মতো। এর আগে বাঙালি কখনো এতো তীব্র, সংহত, ও তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোগান দেয় নি, যাতে একটি পদেই প্রকাশ পেয়েছে রাজনীতি, সংস্কৃতি, দেশ, ভাষার সৌন্দর্য ও জাতীয় আবেগ। এসবই ছিলো, তবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের সন্ধ্যায়ও আমি, আরো অনেকের মতো, বুঝি নি আমরা স্বাধীনতার দিকে যাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি। শেখ মুজিবও কি বুঝেছিলেন?

বাসনা জেগে উঠেছিলো স্বাধীনতার জন্যে, কিন্তু কীভাবে তার বাস্তবায়িত হবে, তা জানি না; হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে (এখন নাম শেরাটন) দিনের পর দিন যে-গোপন আলোচনা চলছিলো, তা বাইরে এসে পৌঁছাত না, আমরা পথে পথে ‘জয় বাঙলা’ শ্লোগান দিয়ে, ‘আমার সোনার বাঙলা’ গেয়ে লাঠি নিয়ে মিছিল করে, স্বপ্ন দেখে চলছিলাম, আর চক্রান্তকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতারিত হয়ে চলছিলেন মুজিব।

স্বাধীনতা লাভের পথ অবশ্য একটি নয়, অনেক; নানা পথে নানা রূপে স্বাধীনতা এসেছে নানা জাতির জীবনে, এবং আমরা সম্ভবত স্বাধীনতা অর্জনের ব্যাপারে সবচেয়ে ভাগ্যবান- সবচেয়ে কম সময়ে এ-অসাধারণ জিনিশটি আমরা পেয়েছি, যদিও আমরাও প্রচুর রক্ত দিয়েছি। পরিস্থিতি প্রসন্ন না হলে- তখন যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকতো, ইন্দিরা গান্ধী না থাকতেন- আমাদের আরো অনেক রক্ত দিতে হতো, হয়তো আরো মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হতো।

পাকিস্তানি ধূর্ত রাজনীতিক ও বর্বর চেঙ্গিশ সেনাপতিরা এমন গোষ্ঠী ছিলো না, যাদের সঙ্গে আলোচনা করে, যুক্তিতর্ক করে, আমরা স্বাধীনতা পেতে পারতাম; তারা বেছে নিয়েছিলো তাদের প্রিয় সরল একমাত্র চেনা পথ, রাইফেলের পথ, এতে তারা ঐতিহাসিকভাবেই দক্ষ- অন্তত তাই তারা মনে করতো; তারা মনে করেছিলো কামান চীনা রাইফেল বোমা বেয়নেট বোমারু বিমান দিয়ে সহজেই আমাদের পর্যদুস্ত করতে পারবে, পাকিস্তান টিকে থাকবে রোজহাশর পর্যন্ত। তাদের বিশ্বাস ছিলো রাইফেল বেয়নেটে, তারা বুঝতে পারে নি অনেক সময় রাইফেল বেয়নেট কোনো কাজে আসে না; তাদের আস্থা ছিলো তাদের প্রভু চীন ও আমেরিকা তাদের ত্রাতা হিশেবে দেখা দেবে। তারা নিশ্চিত ছিলো একরাতের প্রচণ্ড আক্রমণে সব নীরব হয়ে যাবে পূর্ব রণাঙ্গনে, শুধু লাশ পড়ে থাকবে পথে পথে, ওই লাশের ওপর দিয়ে চলবে তাদের ট্যাংক, তার ওপর উড়বে চানতারা, পতপত করবে পাকিস্তান।

মুজিবকে পাকিস্তান বন্দী করেছিলো, খুনও করতে পারতো, তাদের জন্যে এটাই স্বাভাবিক ছিলো; তবে তাদের মতো মগজহীনেরাও হয়তো বুঝতে পেরেছিলো যে বন্দী মুজিবের থেকে নিহত বা শহিদ ( শহিদ শব্দটি আমার পছন্দ নয়, এর বাঙলা কি হতে পারে নিহত-অমর?) মুজিব হবেন অনেক বেশি জীবন্ত ও শক্তিশালী। তারা বুঝেছিলো বন্দী মুজিবকে হয়তো দমন বা প্রতারণা করা যাবে, কিন্তু শহিদ মুজিবকে দমন বা প্রতারণা করা যাবে না; তখন তিনি হয়ে উঠবেন অপরাজিত, অজেয়, অদম্য।

মুজিবকে কখনো আমি কাছে থেকে দেখি নি, বাসনাও কখনো হয় নি, আমি বীরপুজারী নই,- বেশ দূর থেকে কয়েকবার তাঁকে দেখেছি, তাঁর স্তবও কখনো করি নি; রাজনীতিক মহাপুরুষদের প্রতি আমি বিশেষ আকর্ষণ/শ্রদ্ধা বোধ করি না। মুজিব যে বন্দী হয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়টি ভরে কারারুদ্ধ ছিলেন পাকিস্তানে, একে তাঁর শত্রুরা দীর্ঘকাল ধরে নিন্দা করে আসছে; তারা খুব অশ্লীলভাবে ব্যাপারটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যাখ্যা করে সুখ পায়। মুশিকছানারা নিন্দা করে সিংহের।

আমাদের শোচনীয় দেশে সব ধরণের ব্যাখ্যাই সম্ভব, মিথ্যে এখানে খুবই শক্তিমান, অনেকটা আমাদের মায়ের বুলি, এবং নির্লজ্জভাবে তা প্রচার করা যায়। মুজিব যদি ধরা না দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতেন, কোনো ভাঙা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, তাহলে কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্র, আরো সফল হতো? তাহলে কি তিনি মুজিব হতেন? তাহলে তো তিনি হতেন মেজর জিয়া। মুজিব পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, তিনি মুজিব হতেন না, হতেন সামান্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, এবং আমরা একটি বিশাল রাজনীতিক ভাবপ্রতিমাকে হারাতাম, মুক্তিযুদ্ধে আমরা এতো অনুপ্রেরণা বোধ করতাম না। যোদ্ধা মুজিবের থেকে বন্দী মুজিব ছিলেন অনেক শক্তিশালী ও প্রেরণাদায়ক, তিনি তখন হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক, ঘোষকের অনেক ওপরে যাঁর স্থান।

মুক্তিযুদ্ধের সময়টি ভরে তিনিই ছিলেন নিয়ন্ত্রক ও প্রেরণা, তিনিই ছিলেন, এক অর্থে, মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের কারাগারে তিনই হয়তো মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতেনও না, পাকিস্তানিরা তাঁকে তা জানতে দেয় নি, মুক্তিযুদ্ধের রূপ কী তা হয়তো তিনই কল্পনাও করতে পারেন নি, কিন্তু সমগ্র বাঙালির রূপ ধরে তিনিই করে চলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাই ছিলো মুজিবের দ্বিতীয় স্বত্তা। মুজিবের বন্দীত্ব মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার থেকে অনেক বড়ো ঘটনা। ঘোষণা করে ঘোষক হওয়া যায়, মুজিব হওয়া যায় না।

২৫-এ মার্চের পর সব বাঙালিরই, নিজেদের জীবন নিয়ে নিরন্তর ভয়ের মধ্যেও, পরস্পরের কাছে সবচেয়ে বড়ো ও আবেগকাতর প্রশ্নটি ছিলো, ‘মুজিব কোথায়? তিনি কি বেঁচে আছেন?’ তাদের মনে হতো মুজিব বেঁচে থাকলে তারাও বেঁচে থাকবে, মুক্তির বাসনা বেঁচে থাকবে। ২৮-এ মার্চে যখন প্রথম উদ্বেলিত উত্তেজিত কম্পিত স্বরে মেজর জিয়ার ঘোষণাপাঠ শুনলাম, তখনই জেনে আলোড়িত হলাম যে মুজিব বেঁচে আছেন; এটা এক মহাস্বস্তি ও প্রেরণা নিয়ে এসেছিলো; তখন বুঝতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

২৬-এ মার্চের দুপুরে আকাশবাণী বাঙলা ও ইংরেজীতে বারবার ঘোষণা করছিলো, ‘পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, সিভিল ওয়ার হ্যাজ ব্রোকেন আউট ইন ইস্ট পাকিস্তান’, তাতে ভয় পেয়েছিলাম, কেননা গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না, এবং ভয়াবহ ধারণা ছিলো, কিন্তু ২৮-এ মার্চে তা পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধে।

ওই ঘোষণায় বাঙলা ও ইংরেজীতে, কম্পিত ও আবেগস্পন্দিত কণ্ঠে স্পষ্ট করে বলা হয়, যদিও খুবই অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো, যে মুজিব জীবিত আছেন, তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুজিবের পক্ষে ঘোষণা পাঠ করছেন একজন মেজর, যাঁর নাম মেজর জিয়া। কে মেজর জিয়া? তাঁর নাম তো কখনো শুনি নি।

একটি ঘোষণাপাঠের ফলে, তাঁর কাঁপাকাঁপা কণ্ঠের আবেগ, মুহূর্তেই তিনি এক নতুন নায়ক হিশেবে দেখা দেন। অনেক সময় হঠাৎ কেউ কেউ অসাধারণ হয়ে ওঠেন, এজন্যে লাগে সুযোগ ও আকস্মিকতা। কেউ হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হয়ে উঠতে পারেন না, কিন্তু কেউ কেউ হঠাৎ মেজর জিয়া হয়ে উঠে সারা দেশকে আলোড়িত করতে পারেন। এটা হঠাৎ আকাশে মহাগোলমাল থেকে উদ্ভুত নক্ষত্রের মতো। কিংবদন্তি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই, আকস্মিকভাবে, ঐতিহাসিক সুযোগে; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হওয়ার জন্য লাগে দীর্ঘ সাধনা।

ওই কাঁপাকাঁপা, অনভ্যস্ত, স্খলিত বাঙলা ও ইংরেজি ঘোষণাটির আগে আমরা কি কেউ জানতাম কে মেজর জিয়া? তাঁর কণ্ঠস্বর ও ঘোষণা আমাদের সঞ্জীবিত করেছিলো, কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিলো আমাদের? কোনো ধারণা ছিলো না, কিন্তু মুহুর্তেই ধারণা হয়ে যায়, আমরা কল্পনায় একজন অদম্য তরুণ মেজর ও যোদ্ধাকে দেখতে পাই। তিনি যদি বলতেন, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান বলছি’, তাহলেও তিনি এতোটা দাগ কাটতে পারতেন না, আমরা হয়তো একজন ক্লান্ত বুড়ো মেজরের কথা ভাবতাম, যে পদোন্নতি পায় নি, দেহে শিথিল হয়ে গেছে, কেননা ওইটিই বাঙালিদের জন্য স্বাভাবিক ছিলো পাকিস্তানে; মেজর ও জিয়া, এ-দুটি শব্দের সমাবেশ খুবই উদ্দীপক ছিলো। তবে এটি ছিলো এক ঐতিহাসিক আকস্মিকতা ও সুযোগ, যাতে একজন সাধারণ মেজর অসাধারণ যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন, সারা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি অপরিহার্য ছিলেন না, কালুরঘাটের বেতারযন্ত্রীরা যদি অন্য কোনো মেজরকে পেতেন, তাকে দিয়ে ঘোষণা করাতেন, তাহলে তিনিই হয়ে উঠতেন কিংবদন্তি।

কালুরঘাটের বেতারযন্ত্রীরা একজন মেজরকে খুঁজছিলেন কেনো? তাঁদের মনে নিশ্চয়ই অনেক ভাবনা ছিলো; তাঁদের হয়তো ধারণা হয়েছিলো একজন মেজরকে দিয়ে ঘোষণা করালে সেটা বৈদ্যুতিকভাবে কাজ করবে। করেছিলও তাই। মেজর জিয়া হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আকস্মিক কিংবদন্তি। এটা আর কারো ভাগ্যে জোটে নি। এর পর মেজর জিয়া কোন যুদ্ধাঞ্চলের প্রধান ছিলেন, কতোটা যুদ্ধ করেছিলেন, আদৌ করেছিলেন কি না, কতোটা দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, তা আর মূল্যবান নয়; তাঁর থেকে হয়তো অনেকেই বেশী যুদ্ধ করেছিলেন, অনেক বেশী দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, অনেকেই তো বরণ করেছিলেন মৃত্যু; কিন্তু তাঁদের পক্ষে মেজর জিয়ার মতো কিংবদন্তি হয়ে ওঠা সম্ভব ছিলো না; তাঁরা কেউ কালুরঘাট থেকে ঘোষণার ঐতিহাসিক আকস্মিক সুযোগটি পান নি। কালুরঘাট সৃষ্টি করেছিলো মেজর জিয়াকেঃ একটি কিংবদন্তিকে।

কিংবদন্তির মূল্য রাজনীতিতে, ধর্মে সাধারণের কাছে অত্যন্ত বেশি, কেননা তা ইন্দ্রজাল ও অলৌকিকতার মতো। সাধারণ মানুষ সত্য দিয়ে যতোটা আলোড়িত উদ্বেলিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আলোড়িত হয় কিংবদন্তি ও ইন্দ্রজাল দিয়ে। মেজর জিয়া পরে মেজর জেনারেল হয়ে ছিলেন, তবে মেজর জেনারেল জিয়ার থেকে মেজর জিয়া অনেক বড়ো; মেজর জিয়া কিংবদন্তি, আর মেজর জেনারেল জিয়া সামরিক বাহিনীর একজন উচ্চ সেনাপতি মাত্র। তিনি যে পরে এতো কিছু হয়েছেন, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতি, একটি রাজবংশই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তার মূলে রয়েছে কালুরঘাট; এবং প্রাণ দিয়ে তিনি কিংবদন্তিটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ট্র্যাজিক নায়কেরা স্মরণীয় হয়ে থাকেন ট্র্যাজিক পতনের জন্যেই। মেজর জিয়া এরশাদের মতো বিদূষক ছিলেন না; তাহলে তিনি এখনো বিদূষকের মতো বেঁচে থেকে কৌতুক যোগাতেন। তিনি ছিলেন ট্র্যাজিক নায়ক, যদিও ক্ষুদ্র মাপের, গ্রিক নয় বাঙালির আকারের, একটি রঙ্গমঞ্চে যিনি হঠাৎ আবির্ভূত হয়েছিলেন; তাঁর উত্থান ও পতন ট্র্যাজিক নায়কের মতোই, যদিও তাঁকে অনেকেই নায়ক মনে নাও করতে পারে। মনে করতে পারে তিনি ছিলেন ছোটোখাটো নায়কের মুখোশপরা, ছদ্মবেশী, মুখোশের ভেতরে ছিলেন ভিন্ন রকম, যা সবাই দেখতে পায় নি।

সারা ১৯৭১-এ যতো কিছু ঘটেছে, বিশ্বে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যতো সংবাদ পৌঁছেছে, যতো প্রচার হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যতো সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, যতো পাকিস্তানি জন্তু বধ করেছে, যতো বাঙালি নিহত হয়েছে, যতো নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, আর আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি, তার সবটাই মুজিবের নামে। অন্য কোনো নামে এটা ঘটতে পারতো না; অন্য কোনো নাম থেকে এ-প্রেরনা উৎসারিত হতো না।

বাঙলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে পৌঁছে দিয়েছিলেন মুজিব, বন্দী থেকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধকে, তিনিই সৃষ্টি করে চলছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। মুজিবকে আমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করতে পারি, কয়েক দশক ধরে তো কোটি কোটি বামন প্রাণভরে তাঁর সমালোচনা করছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙলাদেশের মহাস্থপতি। মুজিব ছাড়া হাজার হাজার জিয়া বা অন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলেও মুক্তিযুদ্ধ ঘটতো না, তখন সেটা হতো হাস্যকর হঠকারিতা ও পরিণতিতে শোকাবহ; মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসতো না, এবং বিশ্ব আমাদের পক্ষ নিতো না, সাড়া দিতো না। এটা ঘটেছিলো মুজিবের জন্যই। মুজিব বাঙলাদেশের স্থপতি, মহাস্থপতি; তিনি সৃষ্টি করে চলছিলেন বাঙলাদেশকে। তাঁকে ছাড়া বাঙলাদেশের কথা ভাবাই যায় না।
——————————————————————————————-
– হুমায়ুন আজাদ, ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’।