মতিচুর ২য় খন্ড

মতিচুর ১ম খন্ডে বেগম রোকেয়া যতটা প্রবাদ বা লোকোক্তি ব্যবহার করেছেন, মতিচুর ২য় খন্ডে ততটা করেননি। তবে যেটুকুই করেছেন তাতেই তার সমৃদ্ধ লোকাভিজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়।

শুধুমাত্র দু’একটি উদাহরণ কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, যেমনঃ ধরাকে সরা জ্ঞান করার প্রবাদটি ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করেছেন। সাধারণত এটি উন্নাসিক কোন চরিত্র বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে একটি স্থান থেকে (প্রথম বেঞ্চ) পুরো কারসিয়ঙ্গ শহরটা এক নজরে দেখা যাওয়া বুঝাতে এ প্রবাদের ব্যবহার করেছেন ‘সৌর জগৎ’ নামক গল্পে।

পরবর্তীতে, ‘বায়ুযানে পঞ্চাশ মাইল’ নামক লেখায় উড়োজাহাজে তিন হাজার মাইল উপরে উঠার অভিজ্ঞতায় ‘ধরাখানা সত্যই সরা তুল্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ রূপক নয়, আক্ষরিক অর্থেও দেখেছেন এ প্রবাদটিকে।

এক স্ত্রী তার স্বামীর womanishness (স্ত্রী ভাব) শব্দ ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীর এক প্রতিক্রিয়াশীল ভাই বোনকে উদ্দেশ্যে বলে ‘পিপীলিকার পক্ষ হইলে শূন্যে উড়ে’। স্ত্রীলোক শিক্ষা পাইলে পুরুষদের কথার প্রতিবাদ করে,—-সমালোচনা করে। ‘পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে’——এরই পূর্বতন সংস্করণই বোধ হয় উপরোক্ত সংলাপটি। “মোল্লার দৌড় মসঞ্জিদ পর্যন্ত”——– বহুল ব্যবহৃত প্রবাদটিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে যে, মোল্লাদের যতই ধর্মীয় পরিচয় থাকুক না কেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতার পরিমাপ করেই রেখেছে——- যা বড়জোর মসজিদ পর্যন্ত। আর বেগম রোকেয়া তা অবলীলায় ‘সৌর জগৎ’ নামক গল্পে জাফর মামার গতিপথের সীমাবদ্ধতা বুঝাতে এ প্রবাদটির ব্যবহার করেছেন।

“যেহেতু তিনি আপন ধর্মের কোন তত্ত্বই অবগত নহেন। কেবল টিয়া পাখীর মত নমাজ পড়েন, কোন শব্দের অর্থ বুঝেন না।” বেগম রোকেয়া টিয়া পাখির রূপকে সমাজের ধর্মের নামে কিছু অন্ধ লোকের চরিত্র রূপায়ণ করেছেন। টিয়া পাখি শিখানো বুলি বলে বা বলতে পারে— লৌকিক এ ধারণাটি তিনি “অর্ধাঙ্গী” নামক প্রবন্ধেও ব্যবহার করেছিলেন। তাছাড়া, পরবর্তীতেও টিয়া পাখির মতো মুখস্ত করার বৈশিষ্ট্যটি বার বার ব্যবহার করেছেন।

“সুলতানার স্বপ্ন” ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ও বাঙালী সামাজ ব্যবস্থা তো বটেই ভারত বর্ষের বাইরের কাল্পনিক কোন স্থানকে কেন্দ্র করে লিখিত। সেজন্যেই হয়তো বা একটি মাত্র প্রবাদ “জোর যার মুলুক তার”ব্যবহার করেছেন যা আবার ইংরেজিতেও অধিক পরিচিত Might is Right বাক্যে। এ ছাড়া লৌকিক জীবনের আর কোন স্বাদ দেননি। সারা ও তার মহারানী আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতির বাইরের চরিত্র। কাজেই কী সচেতনভাবেই না লোক সংস্কৃতির কোনরূপ ছোঁয়া তিনি এ রচনায় দেননি! সযত্নে লোকায়ত জীবনকে এড়িয়ে গেছেন। “সুলতানার স্বপ্ন” লেখাটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও তা নারীকে সার্বভৌম সত্ত্বা হিসেবে বিকশিত করেতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এতে বাংলার লোকায়ত জীবনের প্রতিফলনের সুযোগ ছিল না এবং রোকেয়া সে সুযোগ সৃষ্টি করারও চেষ্টা করেননি। এখানেই তাঁর সচেতন লেখক সত্ত্বার প্রমাণ মেলে।

ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে রচিত “ডেলিশিয়া হত্যা” নামক গল্পটিতে বেগম রোকেয়ার লোক প্রবাদের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য নয়। একটি মাত্র প্রবাদ “যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা” যেন আরোপিত উচ্চারণ। স্যুটের সাথে যেন শান্তিপুরি চপ্পল।

শুধুমাত্র ডেলিশিয়ার সাথে মজলুমা চরিত্রের তুলনায় বাংলার লোকজ জীবনে নারীর অবস্থানকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ইউরোপীয় আবহে লিখিত বলেই হয়তো বা বেগম রোকেয়া সচেতনভাবে “ডেলিশিয়া হত্যা” নামক গল্পে ‘বঙ্গদেশের’ চেয়ে বিহার অঞ্চলে ব্যবহৃত অলংকারের উদাহরণ দিয়েছেন। সেজন্যেই হয়তো বাংলাদেশের লোকজীবনের প্রবাদ প্রবচন বেশি ব্যবহার করেননি। তিনি নিজেই’যুগনু’ নামক অলংকার শব্দ ব্যবহার প্রসঙ্গে পাদটীকায় বলেছেনঃ

“আমাদের দেশে পাচনরি বা সাতনরি মুক্তামালার মধ্যস্থলে যে জড়াও “ধুকধুকি” থাকে, তাহাকে pedant বলা যাইতে পারে, কিন্তু pedant বলিতে যাহা বুঝায় তাহাকে বেহার অঞ্চলে “যুগনু” বলে। বঙ্গদেশে কেবল “ধুকধুকি” নিজে কোন অলঙ্কার নয়; বেহারে কিন্তু “যুগনু” নিজেই একটি অলঙ্কার। এইজ্যা আমরা “যুগনু” শন্দ ব্যবহার করিলাম।” এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে তিনি লোক জীবনের অভিজ্ঞতার প্রায়োগিক দিক নিয়ে সচেতন ছিলেন।

লোকসাহিত্য মানেই লোকের মুখে মুখে জন সমাজে যা বিস্তৃত হয়ে থাকে। যে সব রচনার রচয়িতার নামসহ লিখিত রূপ পাওয়া যায় না। লোকজ স্মৃতি এবং শ্রুতিকে নির্ভর করে এ সব রচিত। লৌকিক কাহিনীতে বর্ণিত চরিত্রকে ব্যবহার করে লোকায়ত সমাজে প্রচলিত উপমা বা উদাহরণের যে ব্যবহার তা বেগম রোকেয়ার রচনায়ও পাওয়া যায়।

যেমনঃ সাহিত্যিক ডেলিশিয়ার সাথে সৈনিক বিভাগের উইলফ্রেড কারলীয়ন এর বিয়েকে তুলনা করেছেন——— “এ বিবাহকে কার্তিক এবং সরস্বতীর মিলন বলা যাইতে পারে।” রূপবান এবং রনাঙ্গনে চৌকুষ কোন পুরুষকে আর বিদ্যা বুদ্ধিতে গুণান্বিতা কোন নারীকে আজও আমাদের সমাজে যথাক্রমে কার্তিক এবং সরস্বতীর সাথে তুলনা করা হয়। রোকেয়াও এর ব্যতিক্রম নন। এ সব উপমা তিনি লোক জীবনের ভান্ডার থেকে দিয়েছেন যা লোক সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠির মানের, মনের,মনোবলের ও মননের কথাই লোক কথায় গাথায় ও গানে।আর এ সবের ঝালমলে টুকরো রোকেয়া তাঁর লেখায় সুচারুরূপে গেঁথে দিয়েছেন।
তিনি এ সব কোথা থেকে বা কার কাছে শিখেছেন——— কীভাবে আয়ত্ব করেছেন, সংগ্রহ করেছেন এর উৎস পথ আমাদের জানা নেই। অর্থাৎ শুধু জানি তিনি লোক পথে হেঁটেছেন তবে তাঁর ব্যবহৃত যানবাহনের বা মাধ্যমের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

মহাভারত সংস্কৃত মহাকাব্য হলেও ভারতীয় উপমহাদেশের লোক জীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। ‘জ্ঞানফল’ নামক রূপকথা বেগম রোকেয়া ‘মহাভারত’ মহাকাব্যের অনুসরণে শেষ করেছেন—————-
“কনকের রূপ কথা অমৃত সমান,
মৃত ব্যক্তি যদি শুনে পায় প্রাণদান।”

মহাভারত লিখিত————— ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান
কাশীরাম দাস কহে শুনে পূণ্যবান।‘

এ অভিজ্ঞতা আমাদের বিস্ময়াভূত করে বৈ কি! হিন্দুদের রচিত পৌরাণিক মহাকাব্যের রচনা শৈলীতে যে তিনি মুগ্ধ ছিলেন এরও প্রমাণ বহন করে উপরের লাইন দু’টি।

‘নারী- সৃষ্টি’ নামক রচনাকে নিজেই পৌরাণিক উপাখ্যান বলে উল্লেখ করেছেন । আর পৌরাণিক উপাখ্যানের সাথে লৌকিক জীবনের সম্পৃক্ততা তো স্বীকৃত সত্য। বেগম রোকেয়া অবশ্য পৌরাণিক উপাখ্যানের সাথে আধুনিক নারীবাদী চেতনের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।

‘নারী- সৃষ্টি’লেখার পাদটীকা থেকে——- “নারীও যেমন প্রাণমনহীন, বুদ্ধি বিবেকহীন একটা কাঠের পুতুল বিশেষ———- পুরুষ তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিলেও সে নিজেকে অপমানিতা বোধ করে নাই, আবার ফিরাইয়া লইতে আসিলেও গৌরব অনুভব করে নাই। ত্বস্তিদেব অবশ্যই জানিতেন, এইরূপ নির্বাক ‘কাঠের পুতুল’ গৃহিণীই পুরুষের বাঞ্ছনীয়া।”

নারী তো সংসার জীবনে আবেগহীন, আকাঙ্ক্ষাহীন কাঠের পুতুলের মতো অস্তিত্ত্ব নিয়েই আজও বাস করে। লোক সমাজে নিরীহ, গোবেচারা আর প্রতিবাদহীন মানুষকে কাঠের পুতুলের সাথে তুলনা করা এখনো স্বাভাবিক ঘটনা।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত ‘নার্স নেলী’ গল্পটি এক বাঙালী মুসলিম নারীর খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণের কাহিনী। ‘মাথায় রাখলে যদি উকুনে খায় আর মাটিতে রাখলে যদি পিঁপড়ায় খায়’ বাঙ্গালী জীবনে স্নেহ মমতার আড়ম্বর আর আতিশ্যহ্যের প্রকাশে প্রচলিত এ প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়েছে ‘নার্স নেলী’ গল্পটিতে। এতে আরও রয়েছে বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারনা করার মতো চিরাচরিত অভ্যাসের বিষয়টি বুঝাতে ‘ধান ভানতে শিবের গীত’এর মতো প্রবাদ।

লোকাচার গ্রাম বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য যা জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। এ লোকাচারও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেগম রোকেয়ার রচনায়। ‘শিশু পালন’ প্রবন্ধে——— “ যেমন দিদিমার আমলে হিন্দু পোয়াতিকে ৯ দিন থেকে ২১ দিন আর মুসলমান পোয়াতিকে ৪০ দিন আঁতুর ঘরে বন্ধ থাকতে হতো,”———- প্রসূতি মায়ের জন্যে বিধি ব্যবস্থায় লোকাচারের বহিঃপ্রকাশ তাঁর অভিজ্ঞতার সীমানায় আবদ্ধ।

‘মুক্তি ফল’ রূপকথাটি রূপকাশ্রয়ী রচনা। লোক কাহিনীর ‘চৌদ্দ পুত- এত দুখ’পাখির ডাকের উল্লেখ রয়েছে———– যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কল্পনাপ্রসূত। এ পাখি ছাড়াও বিভিন্ন পাখির ডাকের সাথে বিভিন্ন কাহিনী রয়েছে। যেমনঃ ইষ্টি কুটুম, চাতক, চোখ গেল ও বউ কথা কও। রোকেয়া চৌদ্দ পুত- এত দুখ, চোখ গেল ও বউ কথা কও পাখির ডাকের উল্লেখ করেছেন। নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া সমাজ এবং জাতির মুক্তি যেমন সম্ভব নয় তেমনি এখানে মায়ের শাপমুক্তির জন্যে ছেলে ও মেয়ের যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তি ফল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

“যাহাতে সাপ মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে, তদ্রূপ ব্যবস্থে হওয়া চাই।” বেগম রোকেয়া ‘মুক্তি ফল’ রূপকথায় মায়াপুর রাজ্যে মানবগোষ্ঠির প্রবেশ ঠেকাতে এ কৌশলী অর্থবোধক প্রবাদ ব্যবহার করেছেন। এ চালাকি, কূটকৌশল অন্য অর্থে উদ্দেশ্য সফল করার কলাকৌশল বিষয়ক প্রবাদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের প্রমাণ মেলে;যা বাংলার সামাজিকজীবনের প্রাত্যহিক ঘটনা।

প্রবীণ খাগড়া দিয়ে মান কচু পাতায় চিঠি লিখেছে মায়াপুরের রাজাকে। খাগড়া দিয়ে হাতে খড়ি দেয়ার ইতিহাস আর অভিজ্ঞতা তো গ্রামীণ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। শুধু কচু পাতার সাথে কলা পাতায়ও অ আ লেখার চর্চা হতো। খাগড়া দিয়ে কচু পাতায় লেখার অভিজ্ঞতা বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তথা লৌকিক জীবনের যা রূপকথার সাথে সমন্বিত হয়েছে।

“আপনি বাঁচিলে বাপের নাম।” আপাত স্বার্থপর উক্তি মনে হলেও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ সামাজের এর চেয়ে বাস্তবধর্মী জীবন দর্শন আর কী ই বা হতে পারে! এরই প্রতিধ্বনি শুনি ‘মুক্তি ফল’ রূপকথায় প্রবীণের সংলাপে।

‘মুক্তি ফল’ রূপকথায় পাদটীকায়ও রোকেয়া নিজেই প্রবাদ আছে বলে উল্লেখ করে লোক কাহিনী বলেছেন। রূপকথা শুনিয়েছেন। জিন নিয়ে গল্প বলেছেন। তবে কী রোকেয়ার লোক কাহিনী বা রূপকথা এবং প্রবাদের পৃথকীকরণ ধারণায় অস্পষ্টতা ছিল? জানার উপায় খোঁজা প্রয়োজন। ‘কথিত’ আছে না বলে দুইবার ‘প্রবাদ আছে’ বলে ‘মুক্তি ফল’ রূপকথায় পাদটীকায় উল্লেখ করেছেন। প্রবাদ ও প্রবচনে অনেকে অনেক সময় পার্থক্য করতে পারে না, কিন্তু প্রবাদ ও লোক কাহিনী বা রূপকথার পার্থক্য তো সুস্পষ্ট।

পাদটীকায় ব্যাসদেবের প্রসঙ্গসহ দেবী দূর্গার কথাও বলেছেন যা ধর্ম নির্বিশেষে বাংলার বৃহত্তর জন জীবনের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততারই পরিচায়ক।

নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চাপানো আমাদের স্বভাব সিদ্ধ বৈশিষ্ট্য। ‘মুক্তি ফল’ রূপকথায়ও বড় ভাই প্রবীণ দোষ করে ছোট ভাই নবীনের উপর চাপাচ্ছে দেখে নবীন প্রবাদ বলে — “উল্টা চোর কোটাল শাসে!” কম শব্দে একটি কুটিল চরিত্রের বিশ্লেষণ।

লোক জীবন থেকে শব্দ চয়ন পদধূলি———- পায়ের ধূলি। ত্বস্তি দেবের আগমনকে উদ্দেশ্য করে’সৃষ্টি- তত্ত্ব’নামক রচনায় তিনি বাঙালী সমাজে বহুল ব্যবহৃত প্রবাদ গরীবের বাড়িতে ধনীর পদধূলিকে স্মরণ করে লিখেছেন——- “ অসময়ে নরলোকে পদধূলি’।
’সৃষ্টি- তত্ত্ব’নামক রচনায় ‘চোরা না শুনে ধরম কাহিণী’ প্রবাদটি তিনি আগে ‘বোরকা’ নামক নিবন্ধেও ব্যবহার করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ব্যবহারের কারণ প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতা, অধিক শ্রুত হওয়া এবং সাধারণ যাপিত জীবনের প্রাত্যহিক চর্চা বলে ধারণা করা যায়——- যার সাথে যে কোন সূত্রে রোকেয়া পরিচিত ছিলেন।

অধ্যবসায় নিয়ে কোন কাজ করাকে ‘আদাজল খাইয়া’ বলেইতো সাধারণ মানুষ উপমা দেয়। আর বেগম রোকেয়া এ উপমা ব্যবহার করেছেন এবং আদাজল খেয়েই লোক সাহিত্য ভান্ডার থেকে চয়ন করেছেন প্রবাদ, প্রবচন ও রূপকথা এবং এ সবের সাথে নারীবাদী চেতনা চমৎকারভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন এবং তা মানিয়েও গেছে।

চলবে…