সাদা কালো আর ম্যাটম্যাটে নানা রঙের ঘুড়ির মত ফাইটারগুলোতে আকাশ ছেয়ে গেছে। বারো তেরটা তো হবেই। থেকে থেকে কানের পাশে অথবা ঘাড়ের পেছনে ঠিক যেন কাপড় ছেঁড়ার শব্দ হচ্ছে। ছাদগুলো থেকে উল্লাসের শব্দ, ভীষণ গোলযোগ সবদিকে। উত্তেজনায় শরীরের সবকটা রগ যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। চিৎকার করতে করতে গলা ভেঙে যাচ্ছে। শোঁ শোঁ শব্দ কখনো রূপান্তরিত হচ্ছে তীক্ষ্ণ বাশীর মত শব্দে। শুনতে পাচ্ছি আব্বার কণ্ঠে ধমকের আওয়াজ, বড়বু’র আকুল কণ্ঠে ঢেউ খেলানো ডাকাডাকির শব্দ, সোনাভাইয়ের ভয় পাওয়া হিসহিসে কণ্ঠে নেমে আসবার হুমকির ডাক। এতসবের মাঝেও ঠা ঠা ঠা ঠা শব্দ, ভূপ ভুপ ভূপ ভূপ আওয়াজ, অনেক মানুষের দৌড়োদৌড়ির শব্দ, আরো নতুন অদ্ভূত সব রোমাঞ্চকর শব্দগুলোকে মনে হচ্ছে লক্ষ নতুন শব্দ। কখনো একাকার হয়ে যাচ্ছে আবার কখনো আলাদা হয়ে যাচ্ছে শব্দগুলো। দুঃসাহসী ছোট বড় ছেলেগুলো, যাদেরকে ঘুড়ি ওড়াবার সময় দেখি, ওদের অনেককেই দেখছি আমার মত করেই লাফালাফি করে যাচ্ছে যার যার বাড়ীর ছাদে। কখনো উল্লাস উদ্বাহু নৃত্য করছি আমরা, কখনো একটানা চিৎকার চলছে আমাদের। ঘুড়ি ধরবার লম্বা লগ্গিটা তাক করে গেণ্ডারিয়ার বাড়ীর ছাদে এক মহা দুরন্ত কিশোর আমি, লম্বা বাঁশটাকে বন্দুক ভেবে আমিও এক একটা ফাইটারের ডানায় গুলি ছুঁড়ে আগুন ঝরাচ্ছি। ঠা ঠা ঠা ঠা ঠা, ভূপ্‌ ভুপ্‌ ভূপ্‌ । সময়টা দুপুর, ডিসেম্বরের ৩ তারিখ, ১৯৭১ সাল ।

পরদিন, ডিসেম্বরের ৪ তারিখে সকাল দুপুর দিনভর, গতকালের মত ঢাকার আকাশের উত্তর-পশ্চিম কোনে অত্যন্ত দ্রুত গতির অনেকগুলো ফাইটার ছুটে বেড়াচ্ছে । ভয়ঙ্কর কালো কয়েকটাকে দেখছি। খুবই গম্ভীর আওয়াজ করছে। আবার চকচকে রূপালী ঝিলিক মারা কয়েকটা জেত ফাইটার তাড়া খেয়ে বেজায় জোরে ছুটছে এঁকেবেঁকে। ম্যাটম্যাটে রঙের দুটো ফাইটার আবার সাহসী ঘুড়ির মত খাড়া উঠে যাচ্ছে। প্রায় আলিঙ্গনরত বুকে বুকে লেগে থাকা রুপালীটা অন্য ফাইটারকে নিয়ে খাড়া উঠে যাচ্ছে দূর আকাশে। বেয়াড়া-বদ তৃতীয় ঘুড়ির মত আর একটি ফাইটার ম্যাট্‌ম্যাটেদের দু’পাশটায় আর পেছনে সাদা সাদা ধোঁয়ার কদমফুল বানাচ্ছে। ঠা ঠা ঠা ঠা, ভূপ্‌ ভূপ্‌। হঠাৎ যেন পেছনের এই বেয়াড়াটার নিতম্বে কশে লাত্‌ মারলো কেউ। চরকির মত পাক খেতে খেতে আর বিকট আওয়াজ করতে করতে দূরে হারিয়ে গেলো ওটা। বুকে লাগা দুটো ততক্ষণে অনেক উঁচুতে কালো বিন্দু হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল এক সময়। একটু পরেই দেখা গেল দূরে সেদিকটা ব্যাঙের ছাতার মত কুঁচকুঁচে কালো ধোঁয়া, তাঁর ভেতর থেকে মাঝে মাঝে আবার ব্যাঙের ছাতার মত সাদা ধোঁয়া দেখছি । কয়েকখানা ফাইটার প্লেনকে দেখছি জান-পরান নিয়ে লড়তে। আমার শিরায় শিরায় তখন ছুটছে পৃথিবীর প্রবলতম উত্তেজনার স্রোত। উম্মাদনায় আর আনন্দে গলা চিড়ে ক্রমাগত চিৎকার করে চলেছি । অন্য আরো চার পাঁচটা আমার দৃষ্টি সীমায় তখন। ওরা কেউ কাউকে দাবড়াচ্ছে আবার কোনটা বা লেজ তুলে পালাচ্ছে। আরো দুটো ফাইটার কাটাকাটি খেলতে খেলতে পাঁয়তারা কষছে বুকে বুক লাগিয়ে ঊর্ধ্বাকাশে মারামারি করবার। আকাশ বাতাসে ভাসা বিচিত্র শব্দগুলো নতুন সব রোমাঞ্চে কাঁপাচ্ছে সবাইকে । শব্দগুলো আলাদা হচ্ছে, ফেটে পড়া উল্লাসে নতুন কাঁপন উঠছে, তারপর আবার একাকার যাচ্ছে । চলছে তো চলছেই । ঢাকাবাসীর সাথে আমিও দেখছি, শুনছি, চিৎকার করছি, জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা, অস্থির উন্মাদনায় ফেটে পড়ছি সবাই। আগুনে ধোঁয়ায়, আলোতে আওয়াজে আনন্দে বেদনায় গড়াচ্ছে চোখের পানি । এত সবের মধ্যেও ভাবছি মুক্তিযুদ্ধে চলে যাওয়া আমার বড় ভাই দুটো ওদিকটায় নেই তো ? ওরা আসবে তো ফিরে? আমার বাইপোলার মা হঠাৎ হঠাৎ রান্না করে দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে বসে থাকে ওদের জন্যে । দেশ তা’হলে কি সত্যিই স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে? কেউ তা’হলে ইচ্ছে করলেই আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারবে না আর? মিলব্যারাকের মিলিটারি মিলিটারি ক্যাম্পের পাশে সাইকেল চালাবার অপরাধে সেদিনের মত ওরা আমাকে পিটিয়ে চামড়া ফাটাতে পারবে না তো আর? নতুন দুলাভায়ের জন্য কার্ফু ব্রেকে পেঁয়াজু শিঙাড়া তেলেভাজা আনতে গিয়ে রাজাকার রাজা গুণ্ডার রাইফেলের বাঁটের মার খাবো না তাহলে আর? পাঞ্জাবীপুলিশ নামের মিলিটারি ‘বাচ্চালোগ ছোড় দো রাজা’ বলা অফিসারের বুটের প্রচন্ড লাথি খেয়ে ড্রেনে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে না আর তা’হলে? আমার বড় বুবু দু’জনকে নিয়ে তাহলে আর আতঙ্কে থাকবে না দাদু? খিঁড়কী দরজার মত ভাঙ্গা পাচিলের ফোঁকর গলে বোনগুলোকে বাঁচার জন্য অন্য বাড়ীতে পালাতে হবে না আর? বাজারে তা’হলে খাবার পাওয়া যাবে অনায়াসে? ব্যাটারী, চিনি, চাল, ডাল, তেল, নুন, কাঠ, কেরসিন সব? বড় রাস্তার দুপাশের ডোবায় ফুলে থাকা কাক ঠোকরানো চক্ষুবিহীন অনেকগুলো ছ্যাদা হয়ে যাওয়া লাশ দেখতে হবে না তা’ হলে আর। স্বাধীনতা সত্যিই আসছে? ঘুরপাক খাচ্ছে কত কথা মাথায়। আহাহা কী উত্তেজনা, রোমাঞ্চ, আহা কী আনন্দ।

পরদিন, ডিসেম্বরের ৫ তারিখ, উল্টো দিকে, পাগলার দিকে, বুড়ীগঙ্গার ওপর, আবার শব্দ, আবার ফাইটার, আবার কালো ধোঁয়া, উত্তেজনা, ফাইট ফাইট ফাইট। ডিসেম্বর ৬, এবার কান ফাটিয়ে শুরু হল ঢাকার আকাশে মারামারি, ছাতার মত কালো ধোঁয়া, তীক্ষ্ণ চিঁইই চিঁইই চিঁইই করে বোমা পড়বার শব্দ, আবার প্রায় প্রথম দিনের মত বুকে বুকে লাগা ডগ ফাইট, ফাইটারের মেশিনগান কড়্‌কড়্‌ কড়্‌কড়্‌ , এন্টি এয়ারক্রাফট গানের ভূপ্ ভূপ্ ভূপ্, ব্যাঙের ছাতার মত সাদা ধোঁয়া, টেনিস বলের মত সাদা ধোঁয়া আকাশে, আনন্দ উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আবার।

সেদিন, পরদিন, তারপর, তার পরদিন আরো তিন চার দিন, চারিদিক থেকে খবর আসছে এয়ার আট্যাকের, সাফল্যের, আনন্দের, স্বাধীনতার। দেশজোড়া প্রচন্ড এয়ারএট্যাক হচ্ছে। মিত্র বাহিনী, মুক্তি বাহিনী জিতে চলেছে। আহা কি আনন্দ।

দু’দিন পর, ১৪ ডিসেম্বর । ভয়ঙ্কর দেখতে সেই কালো ফাইটারগুলো আকাশে শিষ দিচ্ছে। এত কাছে যে মনে হচ্ছে পাইলটকে দেখা যাবে। অসম্ভব দ্রুত গতির ঝিলিক মারা কয়েকটা ফাইটার গভর্নর হাউস মানে বঙ্গভবনকে কেন্দ্র করে সুবিশাল ব্যাসার্ধের চক্কর মারছে। কড়কড় করে গুলি ফাটাচ্ছে। দূর আকাশে ডগ্‌ফাইট দেখতে পাচ্ছি। এদিকে আবার সেই চেনা তীক্ষ্ণ চিঁইই চিঁইই চিঁইই বোমা পড়বার শব্দ পেলাম। অনেক কাছে, অনেক জোরে। মনে হল যেন গুলিস্তান সিনেমা, স্টেডিয়াম, ডিআইটি কিংবা গভর্নর হাউসের মাথায় কয়েকটা বোমা পড়লো। ওদিকে আকাশ ফাইটারে ফাইটারে ছেয়ে আছে। কিন্তু কোন ডগ ফাইট নেই, নেই কোন পাল্টা আক্রমণ। থেকে থেকে আবার শুনছি ঐ সব মহাউত্তেজনাকর শব্দ। দূরে বহু দূরে সাদাকালো ধোঁয়া । অনেকক্ষণ পর দেখলাম সবাই হঠাৎ খুব হাসি খুশী হয়ে কথা বলছে। সবাই ব্যাস্ত যেন কী সব নিয়ে । আব্বা বলছেন ফুল লাগবে কাল, অনেক ফুল। আশেপাশের বাড়ীগুলো থেকে অনেক ফুল জোগাড় করতে হবে, শব্দ হচ্ছে, ভাইগুলো কোথায়? ওরা মরে যায়নি তো, ওদের চোখগুলো কাক খেয়ে ফেলেনি তো? ওরা আসবে তো? স্বাধীনটা আসবে, সবাই বলছে, বলছে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে, ভারত, জাতিসঙ্ঘ, ভয়ঙ্কর সেভেন্থ ফ্লিট, আরোরা নিয়াজী সারেন্ডার, স্বাধীনতা, কত কথা যে ভাসছে বাতাসে, সবাই অনেক অনেক কথা বলছে। আমার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা আর পেটের ভেতর প্রজাপতি, ভাইগুলো কখন আসবে? কখন স্বাধীন হব? আব্বাকে বার বার বলতে শুনলাম, ফুল, ফুল লাগবে।

১৫ ই ডিসেম্বর, ফুলবাড়িয়ার সেই পূরোনো রেললাইন ধরে আব্বার সাথে গিয়েছি হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরির পাশে টিকাটুলির মোড়ে, খুব অস্থির অবস্থা, সবাই অস্থির, উল্লাস, উত্তেজনা ভয় কান্না আর আনন্দ একসাথে জড়িয়ে একটা অদ্ভূত অবস্থা। হঠাৎ হঠাৎ টাঁশ্‌শ্‌ টাঁশ্‌শ্‌ কিংবা ট্যাঁট্‌ ট্যাঁট্‌ ট্যাঁট্‌ গুলির শব্দ। ভিক্ষে করতো যে মেয়েটা, ফাতু, ওর হাতে নাকি গুলি লেগেছে। রক্তাক্ত বাহু নিয়ে কেঁদে উঠবার বদলে হাসাহাসি করছে ফাতু। ক’জনা গজগজ করতে করতে ওরই আচল ছিঁড়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। মেয়েটাও দিব্ব্যি ন্যাংটো বাচ্চাটাকে কোলে তুলে হেসে হেসে ভিক্ষে করতে চলে গেল। বহুদিন পর আজ অনেক অনেক আনন্দিত মানুষ তাই অনেক ভিক্ষে পাবে ফাতু।

পরদিন ১৬ই ডিসেম্বর গেলাম পুরোনো রেললাইন ধরে সেই একই যায়গায়, এবার হরদেওর পেছনে মোড়টায়, বিকালে। হাতে অনেক ফুল, পাঁচ ছটা মালা আর সীমাহীন উত্তেজনা। দেখছি একের পর এক ট্রাক, হুড খোলা জীপ, উঁচু উঁচু ট্রাক, ভারতীয় সেনারা ঢুকছে শহরে, মাথায় হেলমেট, ঢুকছে অল্প কিছু মুক্তিযোদ্ধাও, কেউ কেউ আবার আকাশের দিকে থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি ছুঁড়ছে আর হাসিমুখে চারিদিকে তাকাচ্ছে। সবাই হাসিমুখে হাত মেলাচ্ছে ধীরগতির ট্রাকে বসে বা দাঁড়ানো ভারতীয় সেনা আর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে, ফুল নিচ্ছে, মালা নিচ্ছে। জীপগুলোতেই মুক্তিযোদ্ধারা বেশি, প্রাইভেট কারে উপচে পড়া মুক্তিযোদ্ধারা আরো বেশি। সবাই হাসছে, নীচে কেউ কেউ কাঁদছে। ভাইগুলোকে দেখতে না পেয়ে আমারও কান্না পাচ্ছে। একটু পরপর উত্তেজনায় কান্না ভুলে যাচ্ছি। সবাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে জয় বাংলা, সবাই হাসছে, লাফাচ্ছে হাত নাড়ছে। আব্বাকে বার বার জিজ্ঞেস করছি ভাই আর ভালভাই এখনো আসছে না কেন? মালা আর ফুল শেষ হয়ে গেলো কিছু বুঝতে না বুঝতেই। তারপরও অনেক্ষণ আব্বা আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। মুগ্ধ চোখে, সম্মোহিতের মত হাটখোলার মোড়ের দিকে ছুটে চলা শয়ে শয়ে অবিরাম ট্রাক জীপ গাড়ী প্রাইভেট কার, লাল সবুজে হলদে ম্যাপ আঁকা পতাকা, আর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখছি। ভাই দুটো নেই এদের মধ্যে। এতো মুক্তিযোদ্ধা এলো, ওরা তো এলো না। ওরা কেন বুঝতে পারছে না ওদের ছোট্ট একটা কিশোর ভাই ভেজা চোখে কী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে? অন্তত এক ডজন প্রজাপতি আমার পেটের ভেতর অবিরাম উড়ে চলেছে। ভাই দুটো আসছে না কিছুতেই।

এই ক’দিনে শিখে গেছি ফাইটারের বুকে বুক লাগা যে যুদ্ধ ওটা ডগফাইট। প্লেনগুলো মিগ টুয়েন্টি ওয়ান, ঝাপসাগুলো হান্টার, আরো কত কি । তাড়া খাওয়াগুলো ৭১ ডিসেম্বরের ৪ থেকে ১৪, ঢাকার আকাশদৃশ্য আর ১৫ এবং ১৬ই ডিসেম্বরের ঢাকার ঘটনা এইগুলো শত্রুদের স্যাবর জেট । লোহারপূলের তাজ ডেকোরেটরের মিনু ভাইয়ের বাবা আর বড় ভাই নিজের বাড়ীতেই ফাইটারের ছোঁড়া গুলীতে স্বাধীনতার মাত্র দু’দিন আগে মরে গেল । মানুষ এখনও মরছে কেন? আব্বা বললেন ইউনিভার্সিটি এলাকায় নাকি অনেক ভাল বড় মানুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে গেছে আলবদররা। অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, ভয়, আনন্দ, উত্তেজনা, অশ্রু, হাসি, কান্না আরো অনেক কিছু একাকার হয়ে এসে গাল মহান স্বাধীনতা ।

আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই দুটো আলাদা ভাবে ফেরে হপ্তাখানিক পর । আব্বার দুই খালাত ভাই, নেওয়াজ পরিবারের ছোটবাবুচাচা আর বড়বাবুচাচা, সেই চা বাগানের হিলি চাচারা আজো ফেরেনি। দাদুর শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময় পোকারা খেয়েছে, ওগুলো আর লুকিয়ে রাখা অনেক অনেকগুলো পাকিস্তানি টাকা কোনকালেই আর ক্যাশ করা যায়নি। আমাদের বাড়ীতে রয়ে যাওয়া বড়’বু, ওর ছেলে হল। দাদু ছোটবুর বিয়ে দিতে পেরেছিলেন ওই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই, বলতেন ঘরে মিলিটারির দেখবার আগে নাতজামাই দেখাই ভালো। ও হ্যাঁ, আমার অবিরাম ঘ্যানঘ্যানানির চোটে ভাই (বড় ভাই) গুলিবিহীন একটা রিভলভার, আর ভালোভাই (মেজভাই) দারুণ ভারী একটা পিস্তল আমাকে হাতে নিয়ে দেখেতে দিয়েছিলো পরে। আমি ভেবেছিলাম রাজাগুন্ডাকে ওটা দিয়ে মারবো। তা হবার ছিলো না, হয়ওনি। ওকে অন্য কেউ মেরে ফেলেছিলো শুনেছি। ভাই দুটো যথাসময়েই অস্ত্র ফেরৎ দিয়েছিলো।

(দুরন্ত একটি কিশোরের স্মৃতিনির্ভর এই লেখাটাতে যেটুকু মনে পড়েছে সেটুকুই লিখেছিলাম ২০১১’তে, মুক্তমনা ব্লগে । প্রত্যক্ষদর্শী, আপনাদের যা কিছু মনে পড়ে, অনুগ্রহ করে মন্তব্যে লিখে দিন। ওগুলো দিয়েই এই লেখাটি পূর্ণতা পাক, থেকে যাক নতুনদের জন্য । ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে)