মানুষ মোহাম্মদ কেমন ছিলেন, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল সেটা জানা গেলে ইসলামের চরিত্র বোঝা সহজ হবে। আব্দুল্লাহর পূত্র মোহাম্মদ তাঁর জন্মের ছয়মাস আগেই তাঁর পিতাকে হারান অর্থাৎ এতিম হিসাবে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জন্মের কিছু পরেই হালিমা নামের এক ধাত্রী তাঁকে নিয়ে যায় দুধমাতা হিসাবে লালন পালনের জন্য। তার বয়স যখন ৬ তখন তাঁর মা আমেনা মারা যায় এবং এতিম মোহাম্মদকে তাঁর পিতামহ মুত্তালিব লালন পালন করতে থাকেন কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মুত্তালিবও মারা যায় তখন এতিম ও অসহায় মোহাম্মদ তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত পালিত হতে থাকেন। তৎকালীন আরব ঐতিহ্য অনুযায়ী এতিম মোহাম্মদ উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পদের অধিকারী ছিলেন না, ফলত: একজন দীন হীন হত দরিদ্র এতিম বালক হিসাবে তিনি চাচা আবু তালিবের কাছে থাকতেন ও তার উট দুম্বা চরাতেন যার মাধ্যমে তার অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান হতো। সহজেই বোঝা যায় যে মোহাম্মদ প্রকৃত পক্ষে কখনোই স্বাভাবিক কোন শিশুর মত আদর ভালবাসাপূর্ন পরিবেশে লালিত পালিত হন নি। আবু তালিব তাঁর চাচা কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত বংশের একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি হলেও ছিলেন গরীব ও তার অনেকগুলো বাচ্চা কাচ্চা ছিল, এ ধরনের জনবহুল গরীব পরিবারে একজন এতিম বালক কিভাবে নিতান্ত অবহেলায় মানুষ হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সুতরাং খুব ছোট বেলা থেকে অনাদর অবহেলায় লালিত পালিত মোহাম্মদের মনের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতাবোধ জন্ম নেয় যা তাকে পরে পরিণত করে প্রচন্ড একগুয়ে, এক রোখা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মানুষে । একই সাথে জন্মগতভাবে মোহাম্মদ ছিলেন ভীষণ বুদ্ধিমান ও মেধাবী। ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখা যায়, এ ধরনের মানুষগুলো জীবনের এক পর্যায়ে দারুন সফলতা পায় তবে তাদের সফলতার কারনে প্রায়ই সমাজকে অনেক ভুগতে হয়। এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো- জার্মানীর এডলফ হিটলার। হিটলারের জীবনী থেকে জানা যায়, অষ্ট্রিয়ার এক গ্রামে খুব গরীব ঘরে তার জন্ম যদিও তাদের পরিবারের অবস্থা পরে একটু ভাল হয়।তবে তার পিতা ছিল ভীষণ রাগী মানুষ যে কিনা হিটলারকে সামান্য কারনে প্রহার করত। দেখা যায়, হিটলারের বাল্য জীবন খুব সুখকর ছিল না যা তাকে বেশ একগুয়ে করে তোলে। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে তার এ একগুয়েমীর কারনে তার তেমন কোন ব্ন্ধু ছিল না। পরবর্তী জীবনে তার এ একগুয়েমীর কারনেই সারা দুনিয়ার মানব জাতিকে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। এক গুয়েমীর কারনেই তার মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনার উদ্রেক ঘটে।তারপরেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমাদেরকে কিছুটা হলেও উপকার করেছে তা হলো- তখন যুদ্ধের প্রয়োজনেই নানা রকম প্রযুক্তির খুব দ্রুত আবিষ্কার হয় যার ফল আমরা আজকে ভোগ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে আজকে যে প্রযুক্তির যুগে আমরা বাস করি তা করতে পারতাম কিনা সন্দেহ। মোহাম্মদের জীবনী অনেকটা হিটলারের মতই। তার বাল্য ও যৌবনে খুব বেশী বন্ধুবান্ধব তার ছিল না। একা একা নির্জনে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তখনই তার মনে জাগ্রত হয় আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার। এ চিন্তা থেকেই তার ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা। কারন তখন আধুনিক যুগের মত জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের পরিবেশ ছিল না। বিংশ শতাব্দীর পরিবেশ যদি হিটলার না পেত, তার যদি জন্ম হতো মধ্যযুগে তাহলে তার যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই তাতে করে তার পক্ষে একজন নবী হওয়া মোটেও কষ্টকর ছিল না। মোহাম্মদ যদি মধ্যযুগে আবির্ভুত না হয়ে বিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হতেন তাহলে তাকে একজন সফল আরব জাতীয়তাবাদী নেতা হিসাবে দেখতে পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। ইসলাম থেকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়টা যদি বাদ দেয়া যায় তাহলে এটা একটা উগ্র আরব জাতীয়তাবাদী মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।

শৈশব কৈশোরে তিনি যে কতটা অসহায় ছিলেন তার দীর্ঘশ্বাস কিন্তু কোরানেও পাওয়া যায়। যেমন, আল্লাহর বানীর নামে তিনি বলছেন-

তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। সূরা আদ দোহা,৯৩: ০৬-১০

এখানে দেখা যায়, পরিনত বয়েসে তাঁর মনের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে। পিতা মাতা হারা গরীব এতিম বালকের কোন সামাজিক মর্যাদা ছিল না সেই সময়ের আরব ভূমিতে। এসব এতিমরা ছিল মানুষের করুণার পাত্র। সামাজিক এ অবস্থাই কিশোর মোহাম্মদের মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। অবচেতন মনে তার মারাত্মক জেদ জমতে থাকে। জন্মের আগেই পিতা হারা, জন্মের পর থেকে ৫ বছর কেটেছে এক দুধমাতার কাছে, তার পর মায়ের সান্নিদ্ধে আসতে না আসতেই তারও মৃত্যু ঘটেছে। বাবা-মা এর স্নেহ আদর বঞ্চিত মোহাম্মদের হৃদয় সেই কৈশোর বয়েস থেকেই কঠোর হতে কঠোরতর হতে থাকে, যার ওপর প্রভাব পড়ে আবার মরুময় আরবের কঠোরতার। সব মিলে কৈশোর থেকেই মোহাম্মদ একটা পারমাণবিক বোমার মত বেড়ে উঠতে থাকেন ভবিষ্যতে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় , ঠিক যেমন ঘটেছিল জার্মানীর হিটলারের বেলাতে। তিনি যা কিছু স্নেহ মমতা পান তাঁর পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের কাছ থেকে কিন্তু তিনিও অতি দ্রুত তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান।যখন তার বোঝার মত বয়েস হয়েছে তখন স্নেহ-মমতার কাঙাল মোহাম্মদ বুঝতে পারেন যে তার বিধবা মাতা ইচ্ছা করলে তাকে দুধমাতার কাছে না দিলেও পারত কারন তিনিই ছিলেন তার একমাত্র সন্তান। অথচ তাকে কোন রকম স্নেহ মমতা না দিয়েই সে হঠাৎ মরে যায় যা তার কাছে ছিল একটা বিরাট আঘাত যা তিনি পরিনত বয়েসে বুঝতে পারেন। আর তখন থেকেই তার অবচেতন মনে তাঁর মায়ে প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে থাকে যা একটা পূরোপূরি সাইকোলজিক্যাল ব্যপার যার তেমন কোন বহি:প্রকাশ থাকে না। মায়ের প্রতি তার এ বিদ্বেষ অবচেতন মনে এতটাই শিকড় গেড়েছিল যার প্রমান পাওয়া যাবে একটি হাদিসে। এ হাদিসটি বলা হয়েছিল মোহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর। মক্কা বিজয়ের পর পরই তিনি তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করতে যান আর তখনই এ হাদিসটির সূত্রপাত ঘটে-

আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, আমি নবীকে বলতে শুনেছি- আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম কিন্তু তিনি তা মঞ্জুর করেন নি। আমি তার কবর জিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম এবং তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। সহি মুসলিম, বই-৪, হাদিস-২১২৯

কি এমন অন্যায় তাঁর মা তার সাথে করেছিল যে এমন কি আল্লাহর কাছে স্বয়ং নবীর প্রার্থনাও কাজে আসে নি ? লক্ষ্যনীয়, ইসলাম আবির্ভাবের অন্তত ৩৪ বছর আগে আমেনা মারা গেছে, যে কারনে তার পক্ষে ইসলাম কবুল করা সম্ভবও ছিল না আর তার জন্য আমেনা দায়ীও নয়। সেক্ষেত্রে আল্লাহর তো এমনিতেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত, কেননা সে দ্বীনের দাওয়াতই পায় নি। তাই নয় কি ? অথচ নবীদের নবী, আল্লাহর দোস্ত যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ দুনিয়াই সৃষ্টি করতেন না , তিনি স্বয়ং তাঁর মা আমেনার জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করছেন অথচ আল্লাহ তা মঞ্জুর করলেন না, এটা কি অদ্ভুত শোনায় না ? এ থেকে এরকম ধারণা করা কি অমূলক হবে যে -আসলে আল্লাহ নয়, স্বয়ং দ্বীনের নবী নিজেই তাঁর মাকে ক্ষমা করেন নি। কারন ? ঐ যে তাঁর অবচেতন মনে তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে সে ইচ্ছা করলে তাকে দুধমাতার কাছে পাঠিয়ে না দিলেও পারত, তাহলে তিনি স্নেহ ভালবাসার পরিবেশে সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারতেন। আর সে কারনেই তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে- আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। কারন এতিম হওয়ার যে যন্ত্রনা তা তাঁর চাইতে কেই বা বেশী বোঝে? ইসলামে যে এতিমদের নিয়ে এত বেশী কথা বার্তা আছে তার কারন এটাই। মাঝে মাঝে তো মনে হয় মোহাম্মদ বোধ হয় মূলত: এতিমদের জন্যই দুনিয়াতে ইসলামের প্রবর্তন করেছেন। উক্ত হাদিস থেকে আরও একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যে – তিনি তাঁর উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা জানালে তাও মঞ্জুর হবে কি না ? অত্যন্ত দু:খের বিষয় নবী শ্রেষ্ট মোহাম্মদ সত্যি সত্যি জানেন না যে তা মঞ্জুর হবে কি না, এমনই আমাদের দ্বীনের নবীর মাহাত্ম। এমন কি তিনি নিজেও জানেন না যে তাঁর সাথে আল্লাহ কি রকম আচরণ করবেন। শুনলে আশ্চর্য হতে হয় , তাই না ? কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, দেখা যাক নীচের আয়াত-

বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ক কারী বৈ নই। সূরা-আল আহক্বাফ, ৪৬:০৯

আল্লাহর সর্বশেষ নবী যার জন্য সারা জাহান তৈরী হয়েছে, যিনি আল্লাহর প্রিয় দোস্ত, যাকে আল্লাহ নিজেই স্বয়ং পাঠিয়েছে দুনিয়াতে দ্বীনের শিক্ষা দিতে সেই তিনি নিজেই জানেন না তাঁর সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করবে। অর্থাৎ তিনি নিশ্চিত নন যে তাঁকেও বেহেস্তে যেতে দেয়া হবে কি না। হয়ত তাকেও দোজখে যেতে হতে পারে। আর আল্লাহ তাকে সেকথা জানাতেও ভুলে গেছে। বড়ই ভুলোমনা দেখা যাচ্ছে আল্লাহকে। তো আল্লাহ প্ররিত পুরুষই যদি না জানেন তাঁর সাথে আল্লাহ কিরকম আচরণ করবে তাহলে তাঁর উম্মতদের তো কোন কথাই নেই। এসব কিছু জানার পর যদি দুনিয়ার সব মুসলমানকে কেয়ামতের মাঠে বিচারের পর আল্লাহ সোজা দোজখের আগুনে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে কিন্তু তারা মোহাম্মদকে দোষ দিতে পারবে না। কারন উনি আগেই বলে খালাস যে তিনি কার সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করবেন তা জানেন না, এমনকি নিজেও যে বেহেস্তে যাবেন সে ব্যপারেও নিশ্চিত নন, কারন আল্লাহ সেটাও তাকে জানাতে ভুলে গেছেন। তো তাঁর দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে যে বেহেস্তের টিকেট পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা কোথায় সেখানে স্বয়ং শিক্ষকই পরীক্ষায় পাশ করার ব্যপারে নিশ্চিত নন? অযোগ্য শিক্ষক তো তার ছাত্রদেরকে ভূল শিক্ষাই দেবে নিশ্চিত। তাহলে ছাত্রদের কপালে যে নিশ্চিত ফেল নির্ধারিত এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? যে শিক্ষক নিজের শিক্ষার মান ও যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নয় তার শিক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় পাশ করাটাও নিশ্চিত নয়। এ ধরণের অনিশ্চিত শিক্ষকের অনিশ্চিত শিক্ষা গ্রহণ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ কি না তা ভাবাটা বিশেষ জরুরী এই একবিংশ শতাব্দীতে। এমতাবস্থায়, মোহাম্মদসহ তাঁর কোটি কোটি উম্মত তথা ছাত্রকে যদি আল্লাহ দোজখে পাঠিয়ে দেয় তখন একটা দেখার মত দৃশ্য হবে নির্ঘাত।এটা অনেকটা লিবিয়ায় গাদ্দাফির তার সৈন্যদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার মত হতে পারে। আর এভাবে পালাতে গেলে কি রকম অপমানকর মৃত্যূবরন করতে হয় তাতো গাদ্দাফি দেখিয়ে গেছে।আমরা জানি মোহাম্মদ নিজের ইচ্ছাতে কিছু করেন না , আল্লাহই তাকে দিকে সব কিছু করান, অথচ আল্লাহ তাঁকে বলতে ভুলে গেছে যে তাঁর সাথে সে কি আচরণ করবে। অথচ একথা বলতে ভোলেনি যে গণিমতের মাল হিসাবে পাওয়া বন্দী নারীদের সাথে কিভাবে সেক্স করতে হবে- বীর্য বাইরে ফেলতে হবে নাকি ভিতরে ফেলতে হবে, একথাও বলতে ভোলেনি যে যুদ্ধে প্রাপ্ত গণিমতের মালামাল থেকে এক পঞ্চমাংশ পরিমান নবী ও তার স্ত্রীদের খোরপোশের জন্য রাখতে হবে। খেয়াল করতে হবে উনি বলছেন- উনি শুধুই মাত্র একজন সতর্ককারী। তো শুধু সতর্ককারী হলে তাকে যুদ্ধ করে ইসলাম প্রচার করতে হয় কেন?কেন সাহাবীদেরকে বলতে হয়- যারা আল্লাহ ও তার নবীকে বিশ্বাস করবে না তাদেরকে মেরে কেটে সাফ করে দিতে? তাদের স্ত্রীদেরকে বন্দী করে তাদের সাথে সেক্স করতে? শিশুদেরকে ধরে দাস হিসাবে ব্যবহার করতে ?কেন তাঁকে অভিশাপ দিতে হয় অমুসলিমদেরকে? কেন তাঁকে একের পর এক বিয়ে করে যেতে হয়? তার অর্থ আল্লাহ নিজেই তার কথা পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাহলে আল্লাহকেও হর হামেশা কথা পরিবর্তন করতে হয়? কি তাজ্জব কারবার। অথচ বলা হচ্ছে এই কোরান জগত সৃষ্টির ঠিক পরেই লিখে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষন করা আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে- হয় আল্লাহ না হয় জিব্রাইল না হয় খোদ মোহাম্মদ অবিরত লেখাগুলো মুছে ফেলে নতুন করে লিখছে। ফাক তালে শয়তানও লিখে রেখে যাচ্ছে যা নাকি আল্লাহ টের পাচ্ছে না।এর চাইতে উদ্ভট কথা কি আর হতে পারে ? এর চাইতেও আজব খবর হলো- মনে হয় এ ধরণের অনেক আয়াত যে নাজিল হয়েছিল তা তিনি ভুলে গেছিলেন এক সময়, আর মনে রাখাও কি সম্ভব যখন তাকে অহরহ যুদ্ধে যেতে হয়, ১৩ টি স্ত্রীর মন যুগিয়ে চলতে হয়? একজন পুরুষ একটা স্ত্রীকেই ঠিকমতো সামলাতে পারে না সেখানে ১৩ টি বউ তো বটেই তাছাড়াও ডজনখানে যৌন-দাসী। এতগুলো সামলানো কি চাট্টিখানি কথা? আর সেকারনেই কিছুদিন পর আবার তিনি কে বা কারা বেহেস্তে যাবে তা নিশ্চিত করে বলে দিয়েছিলেন, আর সেটা যে তিনি সেসব লোকদেরকে প্রলুব্ধ করার জন্য বলেছিলেন সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ? দেখা যাক নীচের হাদিস-

সাইদ ইবনে যায়েদ বর্ণিত-আব্দুর রহমান ইবনে আল আখনাস বলেন যে তিনি যখন মসজিদে ছিলেন তখন একজন লোক আলীর নাম উল্লেখ করল। তখন সাইদ ইবনে যায়েদ উঠে দাড়ালেন এবং বললেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহর রসুল বলেছেন – দশ জন লোক বেহেস্তে যাবে, তাঁরা হলেন- নবী, আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবায়ের, সা’দ ইবনে মালিক ও আব্দুর রহমান। যদি আমি বাদে দশম জনের নাম বলতে পারতাম। লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল- সেই ব্যাক্তি কে ? তিনি চুপ রইলেন। তারা আবার জিজ্ঞেস করল। তিনি উত্তর দিলেন- সেই ব্যক্তি সাইদ ইবনে যায়েদ। সুনান আবু দাউদ, বই -৪০, হাদিস-৪৬৩২
আব্দুল রহমান বিন আওফ বলেন, নবী বলেছিলেন- আবু বকর, ওমর , ওসমান, আলী, তালহা, আল যুবায়ের, আব্দুল রহমান বিন আওফ, সাদ, সাইদ বিন যায়েদ ও ওবায়দা বিন যাররা বেহেস্তে যাবে। তিরমিযী, হাদিস-৩৭৪৭

স্নেহ ভালবাসা বঞ্চিত মোহাম্মদ স্নেহ ও ভালবাসার কাঙাল ছিলেন। কিন্তু তা না পাওয়াতে তার হৃদয় হয়ে রুক্ষ কঠিন। তার হৃদয় যে এত কঠিন ও নির্মম হয়ে উঠেছিল ভিতরে ভিতরে তা যতক্ষন না তিনি ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন ততক্ষন বোঝা যায় নি। তিনি তৎকালীন আরব প্রথা অনুযায়ী কোন বীর পুরুষ ছিলেন না। কোন রকম অস্ত্র বিদ্যায় তার পারদর্শীতা ছিল না। ফলে তখন যুদ্ধ বিদ্যা সংক্রান্ত বা অন্য কোন রকম ক্রীড়া প্রতিযোগীতার মাধ্যমেও তার পক্ষে যৌবনে কারও মন পাওয়া হয়ে ওঠেনি। অথচ যুবক মোহাম্মদ নারীর প্রতি দারুন আকর্ষণ অনুভব করতেন যা ছিল অন্য যে কোন আরব যুবকের চাইতে বেশী। মোহাম্মদ যখন তার মিশনে সফলতা অর্জন করেন তখন তার এ নারী প্রীতির বহু নমূনা দেখা গেছে ব্যপকভাবে। বিভিন্ন সূত্র মতে তার বিবাহিত স্ত্রীর সংখ্যা ১৩ এবং এ ছাড়াও অনেক দাসী ছিল। হাদিস কোরানের কোন সূত্র ছাড়াই যে কেউ এটা সহজে বুঝতে সক্ষম। তবে যারা ইসলামী পন্ডিত তাদের অবশ্য নানা যুক্তি আছে মোহাম্মদের এ নারী প্রীতির ব্যপারে, যেমন-আল্লাহর নির্দেশে বা গোষ্ঠিগত সম্প্রীতি স্থাপন এসব কারনে এসব বিয়ে হয়েছিল। খাদিজার মৃত্যুর পর সওদাকে বিয়ে করাটাতে অন্যায় কিছু ছিল না। কিনকিন্তু ৬ বছরের আয়শা বা পালিত পূত্র বধূ জয়নাব ছাড়াও আরও অনেককে বিয়ে করার কি কারন ছিল? আল্লাহর দোস্ত ও সর্বশেষ নবী হিসাবে যে ধরণের ব্যাক্তির কল্পনা আমরা করে থাকি, এত সংখ্যক বিবাহ ও দাসী সমৃদ্ধ মোহাম্মদের ব্যক্তিত্ব ঠিক তার সাথে মানান সই নয়। উদাহরণ হিসাবে তার পূর্ববর্তী নবী যীশু খৃষ্টের কথা বলা যেতে পারে যিনি জীবনে কোন নারীকে স্পর্শ করেন নি। এমন কি তার পূর্ববর্তী উল্লেখযোগ্য নবীগণেরও ২/৩টির বেশী স্ত্রী ছিল না। যেমন ইব্রাহিমের ২টি, মূসার ২ টি এরকম। একমাত্র ব্যতিক্রম নবী সোলেমান তার নাকি ৭০০ পত্নী বা উপ-পত্নী ছিল। বোঝাই যাচ্ছে আমাদের মহানবী মোহাম্মদ নবী সোলেমানের পদাংক অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময়ের অভাবে তা পারেন নি। বলাবাহুল্য, আরবদেশের মানুষদের নারীপ্রীতি সর্বজন বিদিত। নারীদের প্রতি তাদের তীব্র আকর্ষণের এ অভ্যাস আজিও আরবরা ধরে রেখেছে। পেট্রো ডলারের কল্যাণে ধণী আরবরা প্রায়শ:ই তাদের দেশের বাইরে বিশেষ করে থাইল্যান্ড, হংকং, পশ্চিমাদেশ সমূহতে যায় যথেচ্ছ যৌনাচার করতে। আমাদের মহানবী যে কতটা নারী আসক্ত ছিলেন তার কিছু নমুনা বিভিন্ন সূত্র থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে-

আয়শা থেকে বর্ণিত- রোজা রাখা অবস্থায় নবী তার স্ত্রীদেরকে আলিঙ্গন ও চুমু খেতেন এবং তাঁর অন্য যে কোন মানুষের চাইতে বেশী রিপু দমন করার ক্ষমতা ছিল। সহী বুখারী, বই-৩১, হাদিস-১৪৯

আয়শা বর্ণিত- রোজা রাখা অবস্থায় নবী আমাকে চুম্বন করতেন ও আমার জিহ্বা লেহন করতেন। সুনান আবু দাউদ, বই-১৩, হাদিস-২৩৮০

উক্ত হাদিস দুটি থেকে দেখা যাচ্ছে যখন তিনি রোজা রাখতেন তখনও তিনি নারীর প্রতি আসক্তি অনুভব করতেন অথচ ইসলামে রোজার অর্থ হলো সিয়াম সাধনা বা সংযম সাধনা। সকল রকম রিপুর তাড়না থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যই রোজার প্রচলন করা হয় আর বলা বাহুল্য নারীর প্রতি আসক্তিও সেই সংযম সাধনার মধ্যে পড়ে, শুধুমাত্র খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকেই বিরত থাকা নয়। নবী নিজে ইসলামের নামে তার উম্মতদেরকে সংযম সাধনার কথা বলছেন অথচ নিজে কিন্তু তা পালন করতে ব্যর্থ। অর্থাৎ যখনই তিনি তার স্ত্রীদের কাছে আসতেন তখনই তিনি অধৈর্য হয়ে পড়তেন ও যাকে সামনে পেতেন তাকেই জড়িয়ে ধরতেন, গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে চুমু খেতেন, তাদের জিহ্বা চুষতেন। এর পরও যে আরও অগ্রসর হতেন না সেটা কি আর জোর করে বলা যায় ? কোন পুরুষ মানুষ তার উদ্ভিন্ন যৌবনা স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে গভীর চুম্বনে লিপ্ত হলে তাদের উভয়ে দেহের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া ঘটে ও ফলে কি ঘটে সেটা তো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সবাই জানে, আর এও জানে যে এর পর তারা কি কর্মে লিপ্ত হয়। তখন আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের মধ্যে। সুতরাং হাদিসে যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে মোহাম্মদও যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন সে ব্যপারে কি নিশ্চয়তা দেয়া যায় ? অথচ কি অদ্ভুত ব্যপার , একটা হাদিসে আয়শা বলছে- মোহাম্মদের রিপু দমন করার ক্ষমতা অন্য যে কোন মানুষের চাইতে বেশী। এটা কি অনেকটা- ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাইনি- এর মত একটা ঘটনা নয় ? যে ব্যাক্তি রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীকে কাছে পেলেই চুমাচাটি ও জিহ্বা লেহনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তার রিপু দমন ক্ষমতা ছিল অন্য যে কোন মানুষের চাইতে বেশী। এটা যে আসলেই মোহাম্মদের আসল স্বভাবকে গোপণ করার অপচেষ্টা মাত্র তা কি কারও বুঝতে বাকী থাকে? এখানে বোঝা যাচ্ছে- আয়শা সম্ভবত: আসল কথাই বলেছিল আর তা হলো তখন মোহাম্মদ বাকী কাজও করতেন, সেটা করলে কিন্তু কোন অন্যায়ও হতো না, স্রেফ আল্লাহর তরফ থেকে একটা আয়াত নাজিল করে নিলেই হতো, এটা তো বিদিত যে আল্লাহ তার পেয়ারা নবীকে অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে যা সে সাধারন মানুষের জন্য দেয় নি, যেমন- নিজের জন্য যথেচ্ছ বিয়ে ও দাসী বাদি কিন্তু সাধারনের জন্য মাত্র ৪টি, তার নিজের জন্য তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে যাকে তাকে যখন তখন কাছে দুরে রাখতে পারেন কিন্তু সাধারন মানুষদের জন্য সব স্ত্রীদের সাথে সমান ব্যবহার করতে হবে। যাহোক, মনে হয় পরবর্তীতে হাদিস সংকলনকারীরা উক্ত হাদিসের সম্ভাব্য পরিণতির কথা বুঝতে পেরে আসল বাক্যটাকে বাদ দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত একটা মনোমত বাক্য বসিয়ে দিয়েছে কিন্তু তাতে মাছ ঢাকা পড়েনি , বরং কাঁচা হাতের কাজ করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছে। শুধু এটাই নয় নিজের রিপু দমন করতে না পেরেই অগত্যা তিনি আল্লাহর বানীর মাধ্যমে রমজান মাসে রোজার সময় রাতের বেলাতে স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের নির্দেশ দিয়েছেন । কেন ? কারন আগেই যেমন বলা হয়েছে আরবের লোকরা এই যৌন ব্যপারে অতি মাত্রায় সক্রিয়, মোহাম্মদও তার ব্যাতিক্রম নন ও তিনি নিজেই রিপু দমন করতে পারতেন না। এখন যা তিনি নিজেই দমন করতে পারতেন না সেখানে অন্য লোকদেরকে যদি বলা হয় রমজান মাসে সংযমের মাধ্যমে যৌন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে- তাহলে কেউ মোহাম্মদের ইসলাম গ্রহণ করত না।

দেখা যায়, শুধুমাত্র রিপু দমন করতে পারেন নি বলেই মোহাম্মদ তার পালিত পূত্র বধূ জয়নাবকে বিয়ে করেন। এ সম্পর্কে বিখ্যাত ইসলামি পন্ডিত আল তাবারীর বর্ননা(The History of al-Tabari, vol. 8, p. 4) থেকে জানা যায়-একদা মোহাম্মদ তাঁর পালিত পূত্র জায়েদের বাসায় যান, তখন জায়েদ বাড়ীতে ছিল না। ঘরের মধ্যে জয়নাব একটা চামড়া রং করছিল তখন তার পোষাক আলগা হয়ে গেছিল। মোহাম্মদের দৃষ্টি সেদিকে পতিত হলে তিনি মৃদু হাস্য করেন ও বলেন-আল্লাহ কার মন কখন পরিবর্তন করে দেয়। পালিত পূত্র হোক আর নিজের পূত্র হোক সে ত পূত্রই আর তার স্ত্রী হবে পূত্রবধূ। আরবের লোকরা জায়েদকে জানত মুহাম্মদের পূত্র বলে। এ পূত্রের স্ত্রীর অর্ধ নগ্ন শরীর দেখে যদি কোন শ্বশুর চোখ না ফিরিয়ে বরং মৃদু হাস্য করে, তার অর্থ কি হতে পারে ? আর এ ধরণের শ্বশুরকে কি ধরণের মানুষ বলা যাবে? এর পরের কাহিনী তো সবার জানা যে- পরে জায়েদকে দিয়ে তালাক দিয়ে মোহাম্মদ অত:পর জয়নব কে বধূ হিসাবে ঘরে তুলে নেন আর তা করতে তাঁকে আল্লাহর কাছ থেকে বানী ( কোরান,৩৩:০৪, ৩৩:৩৬-৪০) পর্যন্ত আমদানী করতে হয়। এটা করতে গিয়ে সন্তান দত্তক নিয়ে লালন পালন করার মত একটা মহৎ কাজকে নিষেধ করে দেয়া হলো। এটাকে কি আমরা বলতে পারি না যে- শুধু মাত্র মোহাম্মদের অনিয়ন্ত্রিত রিপুর কারনে এহেন সভ্য সমাজ বিবর্জিত, গর্হিত, লজ্জাকর, অমানবিক একটা ঘটনার উদ্ভব ঘটল? এ ব্যপারে মুমিন ভাইদের প্রশ্ন করলে তারা বিজ্ঞের মত উত্তর দেন- পশ্চিমা সমাজে তো অনেক পিতা তার সৎ কন্যাকে ধর্ষণ করে, ভাই তার বোনকে ধর্ষণ করে, তার চেয়ে এটা তো অনেক ভাল কাজ। কিন্তু তারা একবারও ভাবেন না যে, শুধু পশ্চিম না এই আমাদের মত দেশেও এ ধরনের ঘটনা বিরল নয় এবং এটা কোথাও ধর্ম বা রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা বৈধ নয়, সাধারন সভ্য মানুষ একে গর্হিত, জঘন্য, বর্বর আচরণ আর রাষ্ট্র এটাকে জঘন্য অপরাধ হিসাবেই গণ্য করে।সবচাইতে মজার যে যুক্তি আমরা শুনি তা হলো- পালক পিতার যদি কোন আসল সন্তান থাকে তাহলে তাদের পিতার সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হবে বলেই নাকি মোহাম্মদ তার পূত্রবধূকে বিয়ে করে নিদর্শন স্থাপন করেন যে এরকম কাজ অবৈধ নয়, বরং এটাই করা উচিত। কিন্তু যদি কেউ একটা এতিম বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করে, বড় হওয়ার পর তাকে সম্পত্তিতে অংশীদারীত্ব দেয়াটাই তো ছিল সব চাইতে মহৎ কাজ। কিন্তু মোহাম্মদের কাছে সেটা মহৎ নয়। কেন নয় ? কারন জয়নাব কে তাঁর মনে ধরেছে, তাকে বিয়ে করতে হবে অথচ সে তাঁর পালিত পূত্রবধূ। সুতরাং সেটাকে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সবকিছু করা যেতে পারে, প্রয়োজনে রদ করে দেয়া যেতে পারে সমাজে প্রচলিত ভাল প্রথাও, এমন কি নিজের করা ওয়াদাও খেলাপ করা যেতে পারে। জায়েদ মোহাম্মদের কেমন পূত্র ছিলেন সেটা ভাল করে একটু জানা যাক। জায়েদ মূলত বিবি খাদিজার একজন দাস ছিল একেবারে শৈশব থেকেই। সে শৈশবেই তার পিতা মাতার কাছ থেকে ছিনতাই হয়ে যায়, তারপর খাদিজা ক্রয় সূত্রে তার মালিক হয়। কিন্তু খাদিজা শিশু জায়েদকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করতে থাকে। খাদিজাকে বিয়ে করার সূত্রে জায়েদ মোহাম্মদকে পিতা হিসাবে সম্বোধন করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে মোহাম্মদ নিজেই সর্ব সমক্ষে একটা জমায়েতে জায়েদকে নিজের পূত্র হিসাবে ঘোষণা দেন, যেমন-

হে লোকসকল, আমি জায়েদকে আমার পূত্র হিসাবে সর্ব সমক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছি, আর তোমরা সবাই তার সাক্ষী থাক। আজ থেকে আমি তার উত্তরাধিকারী আর সে আমার উত্তরাধিকারী। মিশকাত, ভলুম-৩, পৃ-৩৪০

সুতরাং এর পর মোহাম্মদ যদি জায়েদের স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য তাঁর সর্ব সমক্ষে দেয়া এ ঘোষণা তথা ওয়াদা বরখেলাপ করেন তাহলে তাকে কি বলা যেতে পারে ? রিপু তাড়িত হয়ে সমাজে মানুষ অনেক খারাপ কাজ করে, অনেকের সংসার ভেঙ্গে যায়, পরিবার উচ্ছন্নে যায়। কিন্তু মোহাম্মদের সে সমস্যা ছিল না, কারন তিনি তখন মদিনার রাজা , তাঁর বিরুদ্ধে টু শব্দ করারও কেউ নেই। তা ছাড়া উক্ত ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন মক্কাতে ,মদিনাতে নয়। অর্থাৎ স্থান ও অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে মোহাম্মদের নীতিবোধ ও আচরণ বিধির পরিবর্তন ঘটে গেছে। মহানবী বলে কথা! তার সব কাজের হদিস তুচ্ছ সাধারন মানুষ পাবে কেমনে ? সেটা শুধু আল্লাহই জানেন ।

কিন্তু মোহাম্মদের জীবনে এতকিছুর কোনটাই ঘটত না যদি শুধুমাত্র একটা ঘটনা তাঁর জীবনে ঘটত। অসহায় এতিম দরিদ্র মোহাম্মদ তার চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে থাকার সময় চাচাত বোন উম্মে হানি এর প্রেমে পড়েন তিনি। তিনি চাচার কাছে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেন। কিন্তু চাচা এতিম,চাল চুলোহীন মোহাম্মদের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী হয় নি। কারনটাও সহজে বোধগম্য। সেই সময়কার আরব সমাজে কোন পিতাই চাইত না তার কন্যার বিয়ে কোন চালচুলোহীন এতিম গরিবের সাথে হোক, বর্তমান কালেও কেউ চায় না। সমাজে অনেকটা অপাংক্তেয় মোহাম্মদের মনে এটা একটা বিরাট দাগ কাটে। বিষয়টা তাকে আরও জেদী করে তোলে। উম্মে হানিকে বিয়ে করতে পারলে হয়ত যুবক মোহাম্মদ শৈশব ও কৈশোরে না পাওয়া স্নেহ মমতার অভাব অনেকটাই ভুলে যেতেন। এর ফলে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়, যার ফলশ্রুতিতে মানব ইতিহাসেরও এক বিরাট দিক পরিবর্তন হয়, যার জের চলছে গত ১৪০০ বছরের বেশী কাল।

খুব অল্প বয়েস থেকেই যে মোহাম্মদ অত্যন্ত জেদী ও একগুয়ে হয়ে ওঠেন তার পরিচয় পাওয়া যায় একটি ঘটনায়। তাঁর চাচা আবু তালেব মক্কা ও সিরিয়ার মধ্যে বানিজ্য কাফেলা পরিচালনা করত। একবার আবু তালেব বানিজ্য কাফেলা তৈরী করে উটের পিঠে চড়ে বসেন রওনা দেওয়ার জন্য। এমন সময় ১২ বছরের কিশোর মোহাম্মদ এসে উটের দড়ি ধরে বায়না ধরেন তাঁকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। বিষয়টা মামাবাড়ী যাওয়ার মত ঘটনা ছিল না। মক্কা থেকে সিরিয়ার দুরত্ব প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার। কঠিন মরুভূমির মধ্য দিয়ে উটের পিঠে চড়ে সে পথ চলা ছিল শুধু অতি কঠিনই নয়, ছিল প্রাণঘাতীও। কিশোর মোহাম্মদও তা ভালমতো জানতেন কারণ তিনি দেখেছেন যারা আগে এরকম বানিজ্য করতে গেছে তাদের ফিরে আসতে মাসের পর মাস পার হয়ে গেছে। নাছোড়বান্ধা ভাতিজাকে নিরস্ত করতে না পেরে অগত্যা তাঁকে সাথে নিতে বাধ্য হয় তাঁর চাচা।( সূত্র:মূইর, পৃ:৩৩) তিনি কোনরকম সমস্যা ছাড়াই সিরিয়াতে পৌছে যান ও ফিরে আসেন। এ অভিযাত্রার ফলে বুদ্ধিমান ও চতুর মোহাম্মদের জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।তিনি বহির্জগতের সাথে পরিচিত হন, দেখতে পান তৎকালীন সিরিয়ার উন্নত সমাজব্যবস্থা, চাকচিক্য ও শান শওকত এবং বুঝতে পারেন তার মক্কার মানুষের সমাজ সিরিয়ার তুলনায় কতটা পিছিয়ে আছে। কৌতুহলী বালকের মধ্যে একটা স্বপ্নের জন্ম তখনই শুরু হয়ে যায়।১২ বছরের একটা বালকের জন্য এটা ঘটা খুবই সহজ যদি সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান হয়।

এছাড়াও মোহাম্মদের মানসিক অবস্থার একটা অস্বাভাবিকত্ব সেই শৈশবেই ধরা পড়ে যার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর দুধমাতার বর্ণনা হ’তে-

হালিমার স্বামী আমেনাকে বলল- আমি আশংকা করছিলাম যে এ শিশুটির কোন মারাত্মক মানসিক দুর্ঘটনা ঘটেছে আর তাই কোন কিছু ঘটার আগেই আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিতে এসেছি।—আমেনা জিজ্ঞেস করল তার কি ঘটেছিল এবং যে পর্যন্ত না আমি সব কিছু খুলে বললাম ততক্ষন আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। যখন সে আরও জিজ্ঞেস করল- আমি শিশুটিকে কোন অশুভ আত্মায় পেয়েছে কি না আমি তখন বললাম- হ্যা। (Guillaume’s translation of Ibn Ishaq, page 72)

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, অতি শৈশবেই মোহাম্মদের মানসিক সমস্যা ছিল যে কারনে তাঁর মানসিক বৈকল্য দেখা যেত মাঝে মাঝে। তবে সেটা এত প্রকট ছিল না যে তা সাধারন জীবনযাত্রাকে ব্যহত করত। এ ধরনের মানসিক সমস্যা সমাজে অনেক মানুষেরই থাকে আর তারা প্রায় সারা জীবন সেটা নিয়েই স্বাভাবিক জীবন কাটিয়ে দেয়। এ ধরণের সমস্যা যাদের হয় আমাদের সমাজে তাদেরকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় – তারা জ্বীন বা পরী দেখেছে, নানা রকম বর্ণনাও দেয় তারা , এমনও দাবী করে যে তাদের সাথে জ্বীন বা পরী কথাও বলে। এটা গ্রাম গঞ্জে যারা থাকেন তারা এরকম অনেক ঘটনাই অতীতে এবং এখনও শুনে থাকতে পারেন। বর্তমানকালে মনোবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে একে এক ধরণের মনরোগ হিসাবে চিহ্ণিত করা হয় এবং এর চিকিৎসাও আছে। এসব ঘটনাকেই মুমিন বান্দারা এ বলে বিশ্বাস করে যে , সেই অতি শৈশবেই মোহাম্মদের সাথে জিব্রাইল ফিরিস্তা দেখা সাক্ষাত করত, তার তত্ত্বাবধান করত। সেটা সত্যি হলে- এখনও গ্রাম বাংলায় হাজার হাজার নারী পুরুষ যারা এ ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগে তাদেরকে নিশ্চয়ই জিব্রাইল ফিরিস্তা না হোক অন্য কোন ফিরিস্তা বা হুর দেখা শোনা করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বর্তমানে এ ধরণের সমস্যায় আমরা রোগীতে অতি সত্ত্বর মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই, রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাবনার হেমায়েতপুর পাগলা গারদে ভর্তি করে দেই। কাউকে আল্লাহর তরফ থেকে কোন ওহী নাজিলের অপেক্ষা করতে দেয়া হয় না। হয়ত এটা একারনে যে, মহানবী মোহাম্মদ বলে গেছেন যে তাঁর পর আর কেউ আল্লাহর তরফ থেকে কোন ওহী পাবে না।আমাদের রক্ষা যে , ওহী আসার এ নিষেধাজ্ঞাটি জারী না করে গেলে হয়তবা আমাদেরকে নিত্য নৈমিত্তিক অনেক নবী পয়গম্বরদের পাল্লায় পড়তে হতো আর তাতে নাভিশ্বাস উঠত। এত কিছুর পরেও যে হারে আমাদের দেশে আনাচে কানাচে পীর ফকিররা মহানবীকে স্বপ্নে দেখছে তার ধাক্কাতেই আমরা অস্থির। হিন্দুদের ধর্মের গীতাতে বলা আছে- যখন দুনিয়াতে সাধু মানুষদের ওপর অত্যাচার হয়, তখন নাকি স্বয়ং ভগবান ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে থাকে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট সংখ্যক কোন অবতার নেই। আর এক শ্রেনীর টাউট বাটপার শ্রেনীর লোক সেটাকেই মোক্ষম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতে। যে কারনে এই একবিংশ শতাব্দীতেও ভারতে প্রতি বছর দু চারটি অবতারের উপদ্রব ঘটে। আর এসব ভন্ড অবতারের ভক্ত জুটতেও তেমন সময় লাগে না। লক্ষ লক্ষ ভক্ত জুটে যায় অনেকের। এই একবিংশ শতাব্দীর মানুষদেরই যদি এ অবস্থা হয়, ১৪০০ বছর আগেকার আধা সভ্য আরবদের মধ্যে আল্লাহ প্রেরিত নবী হওয়া কি খুব কঠিন কাজ নাকি এর চাইতে ?

যে রোগে মানুষ জ্বীন পরীর দেখা পায় সে রোগকে সাধারণত: মৃগীরোগ বলা হয়। এটা একটা সাধারন নাম।মৃগী রোগের বিভিন্ন রকম ফের আছে। কোন ক্ষেত্রে রোগী অজ্ঞান হয়ে গো গো শব্দ করতে থাকে, কোন ক্ষেত্রে রোগী থমকে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে নানা রকম অলীক দৃশ্য দেখতে থাকে, এমন কি সেসব দৃশ্যাবলীর কাল্পনিক চরিত্রের সাথে কথাও বলে, তখন তার শরীর ঘামতে থাকে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়-মনে হয় অশরিরী কোন আত্মা তাকে ভর করেছে। আমাদের মহানবীর কাছে জিব্রাইল ফিরিস্তা আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন তখন তার শরীরেও ঠিক এরকমই লক্ষন প্রস্ফুটিত হতো। এখন আমাদের দেখতে হবে মোহাম্মদেরও এ ধরণের কোন রোগ ছিল কি না।