ইসলামী মহাবিশ্ববিদ্যা

হাবিবুর রহমান হাবিব

সারাংশ

কোরানের মহাবিশ্ব বেশ ছোট। কেননা, এত দৃরত্ব মাপা যায় দিনের মাপকাঠিতে। আর এর উপাদানও খুব সীমিত। বলতে গেলে মাত্র ৩টি : (১) পৃথিবী, (২) আকাশমণ্ডলী এবং (৩) এ দুটোর মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য কিছু দ্রব্য। শেষোক্তের মধ্যে উল্লেখ্য হচ্ছে নিকটতম আকাশে বাতির মত টাঙ্গানো তারা, সর্য ও চন্দ্র এবং বেহেশত বা স্বর্গ ও দোজখ বা নরক।


সাতটি চ্যাপ্টা চাকতি (
flat discs) দিয়ে গঠিত পৃথিবী। তার মানে পৃথিবী ৭টি। আকাশমন্ডলীতে আছে ৭টি আকাশ। এগুলোও কঠিন বস্তু দিয়ে তৈরি। অনেকটা গম্বুজের মতো। এগুল স্তরে স্তরে নিন্যস্ত হয়ে পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। সূর্য, তারা, গ্রহ, চন্দ্র, প্রভৃতি বেশ ছোট ছোট বস্তু। এদের টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে ভেতরের দিকের বা প্রথম গম্বুজে বা ‘প্রথম আকাশে’। এগুলো এ ভেতরের গম্বুজ দিয়ে অর্ধ-বৃত্তাকার পথে আবর্তন বা চলাচল করে। এগুলো যখন আকাশে থাকে না বা চলাচল করে না, তখন অবস্থান নেয় আকাশের পশ্চিমে কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে। সেখান থেকে উদিত হবার আগে প্রতিবার আল্লাহর অনুমতি নেয় এবং তারপর রাতে ফিরে আসে পর্ব দিকে উদিত হবার জায়গায়। বেহেশ্ত বা জান্নাত বা স্বর্গ বিরাজ করে সাতটি আকাশের মধ্যবর্তী স্থানসমূহে এবং দোজখ বা নরক রয়েছে সাতটি পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানে। আর এসব কিছুকে বেষ্টন করে আছে এক সাগর। অথবা বলা যায়, এসব কিছু নিমজ্জ্বিত এক সাগরে। এ সাগরের উপরে অবস্থিত আল্লার সিংহাসন বা আরশ (throne)।


ইসলামী মহাবিশ্ব
ইসলামী ধ্যান-ধারণার প্রমাণ্য উৎস হল আল কোরান ও সহি বা সঠিক হাদিস। মুসলমানদের বিশ্বাস, কোরানে যা রয়েছে তা আল্লাহ-এর বাণী। আল্লাহ তাঁর বার্তাবাহক ফেরেশতা জিব্রাইলের মাধ্যমে শেষ নবি হজরত মোহাম্মদ (দঃ )-এর নিকট এসব বাণী পাঠিয়েছিলেন। তিনি লেখাপড়া জানতেন না বলে কথিত আছে। তাই শেষ নবীর মুখ থেকে শুনে অন্যেরা মুখস্ত করে বা লিখে রাখতেন। শেষ নবির মৃত্যর অনেক পরে পরুষানাক্রমে মুখস্ত করে বা লিখে রাখা সেসব বাণীই যাচাই বাচাই করে কোরাণে লিপিবদ্ধ করা হয়। হাদিস হচ্ছে একইভাবে সাহাবাদের দ্বারা লিখে রাখা শেষ নবির মুখের কথা। সুতরাং কোরান এবং সহি হাদিস থেকে পাওয়া বক্তব্যই হচ্ছে ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক ধারণা। ঐসলামিক বিধান মতে, কোরান ও হাদিসের বক্তব্যকে আক্ষরিক অর্থে নিতে হবে, এর কোন নড়চড় করা যাবে না। এ বিষয়ে ইসলাম খুবই কঠোর।
 

 


ইসলামের প্রচার হয়েছিল ১৪০০ বছর আগে খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে। তার বহু বছর পরে, ষোড়শ শতাব্দী থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু। বিগত ২/৩ শত বছরের মধ্যে বিজ্ঞানের নানা শাখার মৌলিক আবিষ্কার এবং এগুলো থেকে উদ্ভত প্রযুক্তিবিদ্যা সারা পৃথিবীর মানুষের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। সর্বব্যাপী প্রভাবের ফলে আধুনিক মানব সমাজে বিজ্ঞান অর্জন করেছে এক বিশেষ মর্যাদা। যেকোন ধারণা বা বিশ্বাস গ্রহনযোগ্য হবে কি হবে না, তা বর্তমান কালে নিভর্র করে এটি বিজ্ঞানসম্মত কিনা, তার উপর। অনেক প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত নানা বিশ্বাস, এমনকি অনেক ধর্মীয় বিশ্বাসও, বিজ্ঞানের কষ্ঠি-পাথরে যাচাই হয়ে বাতিল হয়ে গেছে। এ প্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মধ্যে গোড়া থেকেই চলে আসছে এক ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সময় সময় বিরোধ। ধর্মের গোঁড়া অনুসারিগণ প্রথমে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করেন। প্রতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নিকট এসব গোঁড়া বিশ্বাসের পরাজয় ঘটে। তাই সম্প্রতি বিজ্ঞানবিরোধীরা তাঁদের কৌশল বদলে ফেলেছেন। তাঁরা বলতে শুরু করেছেন যে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোই হচ্ছে সকল বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার উৎস। তবে এসবই ঘটেছে মলত পশ্বিমা ইহুদি-খৃষ্টান জগতে। তাই আমরা ইহুদি-খৃষ্টান ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মধ্যে আšঃক্রিয়া সম্পর্কে বেশ অবগত।


কিন্তু মুসলিম জগতে কি ঘটেছিল তা আমরা তেমন অবগত নই। কারণ, মুসলমানরা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন। তবে দেখা গেছে ইসলামপন্থীরাও প্রথমে বিজ্ঞান বিরোধীতা করেছিলেন। পরে তাঁদের কেউ কেউ কোরান-হাদিস বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার উৎস বলে প্রচার করতে শুরু করেন। অবশ্য সম্প্রতি কেউ কেউ বলছেন যে, কোরান ও হাদিসে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক ধারণা, বক্তব্য বা ‘তত্ত্ব’ রয়েছে, যা বহু বছর পরে আধুনিক বিজ্ঞান নতুন করে আবিষ্কার করেছে। যেমন, মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব (
Big Bang Theory), বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution) এবং মহাবিশ্ববিদ্যা (Cosmology)।

এ প্রবন্ধে ইসলামী মহাকাশবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে। যেহেতু আমাদের আলোচনা বাংলা ভাষায়, তাই কোরানের উদ্ধৃতি দিতে আমরা কোরানের বাংলা অনুবাদ ব্যবহার করব। বাংলা ভাষায় কোরানের বেশ কয়েকটি অনুবাদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও একটি তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রধান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ”কোরানশরিফ – সরল বঙ্গানুবাদ” (মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৭)। ভেবেছিলাম এটি থেকে কোরানের উদ্ধৃতিগুলো দিব। কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে এর ভাষা বেশ সহজ ও আধুনিক। কিন্তু কতকগুলো কারণে তা করা গেল না। প্রথমত, তিনি মল আরবী থেকে না কোন একটি ইংরেজি তরজমা থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন, তা তিনি উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয়ত, সরল বঙ্গানুবাদ করতে গেয়ে তিনি কোন কোন প্রতিশব্দ সঠিক অনুবাদ করেছেন কিনা, বিজ্ঞানীদের নিকট প্রশ্ন উঠতে পারে। যেমন heavens শব্দের অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি ‘আকাশ’ শব্দটি একবচনে ব্যবহার করেছেন। স্পষ্টত এ শব্দটি বহুবচন। কিন্তু বহুবচন হিসবে তিনি তা ব্যবহার করেননি। কারণ হয়ত এই যে, heaven -এর বাংলা হচ্ছে ‘আকাশ’ ( যেমন, সংসদ ইংরেজী-বাংলা অভিধান)। কোরানে যেহেতু ৭টি “আকাশের” কথা আছে আর বিজ্ঞানে মাত্র একটি, সেহেতু একবচনের বদলে বহু বচন “আকাশমণ্ডলী” ব্যবহার করাই সঠিক হত। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান “আকাশমণ্ডলী” ব্যবহার করেছেন অনেক ক্ষেত্রে। আর যদি এক বচনই ব্যবহার করতে হত তবে প্রাগুক্ত সংসদ অভিধানের “স্বর্গ” শব্দটি ব্যবহার করা অধিক যুক্তিসংগত। সংসদ অভিধানের ব্যাখ্যা পড়লেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নিদানপক্ষে ‘ইসলামী’ শব্দ ‘আসমান বা বেহেশ্ত” ব্যবহার করা হলে বাঙালী জনসাধারণের ইসলামিক ধারণার সঙ্গে বেশি মানাত। দ্বিতীয়তঃ, আধুনিক বিজ্ঞানে ‘আকাশ’ বলতে যা বুঝায় কোরানে তা বুঝায় না। এ বিষয়টি একটু পরেই স্পষ্ট হবে। 

প্রতিশব্দ চয়নে এমন অবস্থা আরো আছে। তাই কোরানের অন্যান্য বাংলা অনুবাদ খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, সৌদি সরকারের অনুমোদিত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক বাংলায় অনুদিত ‘পবিত্র কোরআনুল করীম’ থেকে বাংলা উদ্ধৃতি দেওয়া হয়ত উত্তম হবে। আর এ অনুবাদটি করা হয়েছে মল আরবি থেকে। হয়ত সে কারণেই প্রথমোক্ত অনুবাদ ও শেষোক্তটির মধ্যে পার্থক্য পাওয়া যায়। যেমন ২১ সুরা আম্বিয়া:আয়াত ৩০-এর অনুবাদ। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান-এর অনুবাদ: “অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।” আর মাওলানা মুহিউদ্দিন খান-এর অনুবাদ: “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত্র সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।”


এ প্রেক্ষিতে বলা প্রয়োজন যে মুহিউদ্দীন খানের অনুবাদ ও আল্লামা অবদুল্লা ইউসুফ আলী-এর ইংরেজি অনুবাদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়। যেখানে গুরুত্বপর্ণ পার্থক্য আছে বলে মনে হয়েছে সেখানে বন্ধনীর ভেতরে ইংরেজি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ রেখে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে পাদটীকায়ও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।


ইসলামী মহাবিশ্বের উপাদান


কোরান ও হাদিসে মহাবিশ্বের যে বিবরণ আছে তা পাঠ করে প্রথমেই যে কথাটা মনে হয় তা হল এই যে, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণার তুলনায় ইসলামী মহাবিশ্ব খুব ছোট ও সরল। ইসলামী মহাবিশ্বের মাত্র তিনটি উপাদান – (ক) আসমান বা আকাশমন্ডলী, (খ) জমিন বা পৃথিবী এবং (গ) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সবকিছু। ইসলামী ধারণা মতে, পৃথিবী সমতলীয় বা চ্যাপ্টা। আকাশের যা কিছু খালি চোখে যা দেখা যায় (যেমন সর্য, চন্দ্র ও তারা) তার বাইরে কোন কিছু থাকার কথা এতে নেই। যেমন মহাবিশ্ব সংক্রান্ত্র আধুনিক কোন উপাদানের কথা এতে নেই। সৌর জগতের উপাদান ও গঠন সম্পর্কে একটি বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে সেসব তথ্য থাকে, ততটুকুও উক্ত ইসলামী প্রমাণ্য গ্রন্থসমহে নেই। অপর দিকে, খালি চোখে ভুল দেখা যায় বা সঠিকভাবে দেখা যায়না, এমন ধারণারও এগুলোতে স্থান হয়েছে। যেমন, সৌর জগতের গঠন, নক্ষত্র ও গ্রহের মধ্যে পার্থক্য, গ্যালাক্সি, মহাকাশ বা স্পেস ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণার পরিচয় এগুলোতে পাওয়া যায় না। নিচের কয়েকটি আয়াত পাঠ করলে যে কোন যুক্তিবান মানুষের মনে এমন ধারণার উৎপত্তি না হয়ে পারে না।
আকাশ ও পৃথিবী – এ দুটি যে ইসলামী মহাজগতের গঠন উপাদান তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, কোরানে অনেক বার এ কথা বলা হয়েছে। কোরানে আকাশ ও পৃথিবীকে (“heavens and the earth”) এক প্রকার আধার (“container”) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আকাশ, পৃথিবী এবং এর মধ্যবর্তী বস্তু – এগলোই হচ্ছে ইসলামী মতে বিশ্বের গঠন-উপাদান।
 

 


কেউ আরব দেশের ন্যায় সমভমিতে দাঁড়িয়ে আকাশ ও চার দিকের দিগস্ত রেখার দিকে তাকালে যা দেখতে পাবেন তাতে মনে হবে পৃথিবী সমতল ও চ্যাপ্টা, আকাশ একটা নিরেট গোল ধাতব বস্তু, নীল রঙ্গের একটি ছাদ, যার উচ্চতা ঠিক মাথার উপরে সব চেয়ে বেশি এবং ক্রমে তা কমে দিকচক্রবালে এসে ভুমির সঙ্গে মিশে গেছে। অর্থাৎ নীল রঙ্গের ধাতব আকাশটি এসে সমতল পৃথিবীতে মিশেছে। আকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে কোরানের বিবরণ এর সঙ্গে বেশ খাপ খায়। আধুনিক বিজ্ঞান দেখিয়েছে যে এ ধারণা সঠিক নয়।


কোরানে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রথমে পৃথিবী ও পরে আকাশ সৃষ্টি করেন:


“বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থির কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে াটল পর্বতমারা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন – পর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধম্রকুঞ্জ, অতৎপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়অ তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।” ৪১-সুরা হা-মীম:৯-১১।
তিনি আরো বলেছেন:“ তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সবকিছু অবগত।” ২-সুরা আল-বাক্বারাহ :২৯।
 

 


এ আলোচনা থেকে যা বের হয়ে এল তা হচ্ছে এই যে, কোরান মতে পৃথিবী হচ্ছে চ্যাপ্টা একটি থালার মত জিনিস। আর আকাশ হচ্ছে কঠিন বস্তু দিয়ে তৈরি একটি সাত-স্তরযুক্ত গম্বুজ। প্রথমে পৃথিবী ও পরে আকাশ সৃষ্টি করা হয়। এটি হচ্ছে ইসলামী মহাকাশবিদ্যার সারবস্তু। এখন আমরা এ ধারণাগুলো আরো বিশদভাবে পর্যালোচনা করব।


আকাশ


কোরানের নম্নোক্ত আয়াতগুলো থেকে জানা যায় যে, আকাশ আসলে ৭টি , একটির উপর দিয়ে অপরটি পর পর বিদ্যমান, যেন এক-কেন্দ্রীক ৭টি গম্বুজ থালার মত সমতল ও চ্যাপ্টাপৃথিবীতে এসে মিশেছে। যেমন, প্রাগুক্ত উদ্ধৃতি ২:২৯ থেকে জানা যায় যে, আমাদের মাথার উপরের ৭টি আসমান বা আকাশের পাদমল হচ্ছে আমাদের পৃথিবী। আর ৪১:১২ থেকে জানা যায়, ৭টি আসমান সৃষ্টি করা হয় দুই দিনে : “অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তাঁর আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। ” ৪১-সুরা হা-মীম সেজদাহ-১২।
সাতটি আকাশ যে কঠিন বস্তু তা জানা যায় কয়েকভাবে। প্রথমত এগুলো দেয়ালের ন্যায় প্রতিবন্ধক এবং ছাদের ন্যায় প্রতিরক্ষক।
আর নিচের আয়াত থেকে দেখা যায় আকাশ ছাদের ন্যায় প্রতিরক্ষক:
 

 

“আমি আকাশ(মন্ডলী)কে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আকাশস্থ নির্দেশাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। ২১-সুরা আম্বিয়া: ৩২।

(উল্লেখ্য, আল্লামা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর অনুবাদে heavens শব্দটি আছে। মাওলানা মুহিউদ্দীন থান অনেক স্থানে এশব্দটিকে “আকাশমণ্ডলী”, আবার কখনও কখনও একবচনে ‘আসমান” ও “আকাশ” হিসেবে অনুবাদ করেছেন। তাই প্রয়োজনে আমি ব্যাকেটে “heavens” শব্দটি দিয়ে দিয়েছি।)


আর আকাশ যে কঠিন বস্তু দিয়ে তৈরি তা জানা যায় পরের আয়াত থেকে, বিশেষত আকাশের টুকরা পড়ে পৃথিবীর অধবাসীগণ আহত হবার সম্ভাবনার উল্লেখ থেকে :


“তারা কি তাদের সামনের ও ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে ভুমিসহ তাদের ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খণ্ড তাদের উপর পতিত করব। ” ৩৪-সুরা আল সাবা:৯।


কোরানে আকাশের টুকরা ভেঙে মাথায় পড়া, তাছাড়া মই দিয়ে আকাশে উঠার কথা যখন রয়েছে তখন আকাশ কঠিন বস্তু ছাড়া আর কি হভে পারে? :

“আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভুতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিঁড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন মোজেযা (ংরমহ) আনতে পারেন তবে নিয়ে আসুন।” ৬-সুরা আল্-আন্আম:৩৫।
পরিশেষে, আকাশ যদি ভারি কঠিন বস্তু দিয়ে গঠিত না হতো তবে কোরানে আকাশকে থাম দিয়ে ঠেলে রাখার কথা বলা হত না। আকাশের ভারবাহক থামগুলোকে অবশ্য দেখা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে:
 

 

“ আল্লাহ,যিনি উর্ধ্ব দেশে স্থাপন করেছেন আকাশমণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের (ঃযৎড়হব) উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময়ে আবর্তন করে।”১৩-সুরা রা’দ:২।


হাদিসে সাতটি আকাশের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য, আকাশসমহের মধ্যবর্তী দুরত্ব এবং আকাশের ওপারে সুদরে কি রয়েছে, তার বিবরণ পাওয়া যায়। আল্-আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব এক হাদিসে বলেন : “আমি আল-বাথায় আল্লার রসুলের (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) সঙ্গে বসে কথা বলছিলাম। এমন সময় একটি মেঘ মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। রসুল (দঃ) সেটির দিকে তাকালেন এবং বললেন :

এটাকে তোমরা কি বল? (আবু দাউদ ২:৪৭৫)।
 

তারা বললেন : সাহাব ।


তিনি বললেন: আর মু্জন?


তাঁরা বললেন : আর মুজন।


তিনি বললেন : আর আনান ?


থাঁরা বললেন : আর আনান।


আবু দাউদ বললেন : আমি শব্দটি সম্পর্কে নিশ্চিত নই।


তিনি প্রশ্ন করলেন : তোমরা কি আকাশ থেকে পৃথিবীর দুরত্ব কি তা জান?


তাঁরা উত্তর দিলেন : আমরা জানি না।”


তিনি তখন বললেন: “এগুলোর মধ্যে দুরত্ব হচ্ছে ৭১, ৭২ অথবা ৭৩ বছর। আকাশ অবস্থিত এর উপরে (সাতটি আকাশ পর্যন্ত না গোনা পর্যন্ত) সমান দরত্বে। সপ্তম আকাশের উপরে রয়েছে একটি সাগর। এ সাগরের উপরিভাগ ও তলদেশের দরত্ব, দুই আকাশের দরত্বের সমান। এর (আকাশের) উপরে আছে আটটি পাহাড়ী ছাগল। এদের খুরের এবং পাছা ও উরুর মাংসল অংশের মধ্যে দুরত্ব.এক আকাশ থেকে অপর আকাশের দ’রত্বের সমান। তারপর উপরে হচ্ছে পবিত্র ও মহিমান্বিত আল্লার অবস্থান।”
বিশালকায় পাহাড়ী ছাগলের কথা বাদ দেওয়া যায়। কারণ কোরানে কোথাও এর উল্লেখ নেই। তারপরও দেখা যাচ্ছে যে, সব চেয়ে বাইরের দিকের আকাশ সাগরের নিচে প্রসারিত, যার গভীরতা দুটো পাশাপাশি আকাশের সমান। আল্লার ”সিংহাসন” অবস্থিত এমন জলরাশির উপর। কোরান ও হাদিসে একই বিবরণ পাওয়া যায় :“তিনিই আসমান ও জমিন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ  ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভার কাজ করে”। ১১-সুরা হুদ-৭।
কোরান বা হাদিসে কোথাও গ্যালাক্সি, কোয়াসার, গ্যালাক্সি-মন্ডল, শন্য স্থান- (space) এসব কোন কিছুর উল্লেখ নেই। আছে শুধু পানি, একটি আরশ বা সিংহাসন ও আল্লার নিজের অবস্খানের কথা।

 

 


কেউ ইচ্ছা করলে এসব বিষয়ে বিশদ বিবরণ জানতে পাবেন সহি বুখারি শরীফ হাদিসে হজরত মোহাম্মদের “মিরাজের” বিবরণ পড়ে (সহি বুখারি শরীফ হাদিস: ৯:৯৩:৬৮)। তবে তার সারমর্ম হচ্ছে :

(১) ৭টি আকাশে বাস করেন বহু ফেরেশতা, জ্বিন প্রভৃতি,

(২) কঠিন বন্তু দিয়ে তৈরি গোলক বা আকাশসমহে প্রবেশ করতে হয় দরজা দিয়ে,

(৩) প্রতিটি দরাজায় ফেরেশতারা পাহারা দেয়,

(৪) প্রত্যেক আকাশে বাস করেন একজন নবী,

(৫) যেমন, প্রথম আকাশে আছেন আদম, আদমের কাছ থেকে নবী মোহাম্মদ (দঃ) জানতে পারেন যে সেই আকাশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে তাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী দুটি,

(৬) দ্বিতীয় আকাশে বাস করেন নবী ইদ্রিস, ৪র্থ আকাশে নবী আ‘রন, ৬ষ্ঠ আকাশে নবী ইব্রাহিম এবং ৭ম আকাশে নবী মুসা।


স্বর্গীয় বস্তুনিচয়


কোরানে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তারকারাজি, সর্য ও চন্দ্র অবস্থিত নিকটতম আকাশে, ৭৩ বছরের কম দরত্বে:


(১) “নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি”। ৩৭-সুরা আস-সাফফাত: ৬।
(২) “অতঃপপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দু’ দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ্র ব্যবস্থাপনা।” ৪১-সুরা হা-মীম সেজদাহ:১২।
কোরান পাঠ করে মনে হবে না যে তারাগুলো আমাদের সর্যের মতই বস্তু এবং সেগুলো অনেক অনেক দরে অবস্থিত বলে সর্য থেকে ছোট মনে হয়।
 

 


সূর্য ও চন্দ্র


কোরানে সর্য ও চন্দ্রের অবস্থান নিকটতম বা সর্বনিম্ন আকাশে কিনা তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে যে এগুলো আকাশসমহের মধ্যে বিদ্যমান: “এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।” ৭১-সুরা নুহ:১৬।


এ দুটো বাতি নির্দিষ্ট পথে, কঠিন বস্তু দিয়ে তৈরি আকাশের গম্বুজগুলো বাঁকানো দেওয়াল পথ ধরে, চলাচল করে :


(১) “ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” ২১-সুরা আম্বিয়া:৩৩।
(২) “ সর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” ৩৬-সুরা ইয়াসীন : ৪০।
 

আকাশ পথে প্রতি দিন পথচলা শেষ হলে সর্য (সম্ভবতঃ চন্দ্র এবং তারাগুলোও) পৃথিবীর চ্যাপ্টা চাকতির ভেতর দিয়ে গিয়ে পশ্চিম প্রান্তের পানিময় ফুটো দিয়ে নির্গত হয়:

“অবশেষে তিনি যখন সর্যের অস্তাচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি সর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখলেন।” ১৮-সুরা কাহ্ফ:৮৬।
চ্যাপ্টা চাকতির পৃষ্ঠদেশে অবস্থানকারী মানুষের দৃষ্টির আড়ালে গেলে সর্য প্রভৃতির গতি বন্ধ হয়ে যায়, রাতটা সর্য সেখানে বিশ্রাম করে স্বীয় বিশ্রামস্থলে। হাদিস থেকে জানা যায় যে, রাতের কোন এক সময় সর্য আল্লার কাছে অনুমতি নেয় পরবর্তী দিন ফিরে আসার জন্য এবং সে অনুযায়ী সর্যকে ফিরে আসতে হয় সকালের যাত্রাস্থলে। সহি বুখারী শরিফ (খন্ড ৪, পুস্তক ৫৪, সংখ্যা ৪২১,) আবু যারের বিবরণ:
 

 

রসুল সন্ধ্যাবেলায় আমাকে প্রশ্ন করেন: “ তুমি কি জান সূর্যাস্তের পর সর্য কোথায় যায়? ” ” আমি জবাব দিলাম: “আল্লাহ ও তাঁর পয়গম্বর ভাল জানেন”। তিনি বললেন “ এটি চলতে থাকে যতক্ষণ না সিংহাসনের  নীচে এসে পৌছয়। সেখানে সে সেজদা দেয়, তারপর পুনরায় উদিত হবার জন্য অনুমতি চায়, এবং যতক্ষণ না অনুমতি দেয়া হয়, সে সেজদা দিতেই থাকে।  কিন্তু তার অনুমতি দেওয়া হয় না যতক্ষণ পুনরায় উদিত হবার জন্য অনুমতি চায়, কিন্তু এটিকে যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে করে এটি আবারো উদিত হতে পারে ”।

ইংরেজী অনুবাদ দেয়া হল পাঠকদের সুবিধার জন্য –

Sahih Bukhari Volume 4, Book 54, Number 421
Narrated Abu Dhar:
The Prophet asked me at sunset, “Do you know where the sun goes (at the time of sunset)?” I replied, “Allah and His Apostle know better.” He said, “It goes (i.e. travels) till it prostrates Itself underneath the Throne and takes the permission to rise again, and it is permitted and then (a time will come when) it will be about to prostrate itself but its prostration will not be accepted, and it will ask permission to go on its course but it will not be permitted, but it will be ordered to return whence it has come and so it will rise in the west. And that is the interpretation of the Statement of Allah: “And the sun Runs its fixed course for a term (decreed). That is The Decree of (Allah) The Exalted in Might, The All-Knowing.”


আল্লার কাছ থেকে আবার উদিত হবার আদেশ পাবার পর সর্য পৃথিবীর চ্যাপ্টাচাকতির ভেতর দিয়ে তার পর্ব প্রান্তে ফিরে যায় পরবর্তী দিন শুরু করার জন্য। সর্যোদয়ের ক্ষেত্রে “কর্দমময় জলাশয়ের ” কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা না হলেও সেখানকার অধিবাসীদের যে বিবরণ আছে, তাতে সর্যের অস্তাচলের স্থানটির সঙ্গে নির্গম পথের মিল রয়েছে যথেষ্ট :“অবশেষে তিনি যখন সর্য়ের উদয়াচলে পৌঁছলেন , তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যার জন্য সর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।” ১৮-সুরা কাহ্ফ: ৯০।
 
 

 

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ


কোরানে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সংক্রান্ত্র কোন আলোচনা নেই। তার কারণ হতে পারে এই যে, পয়গম্বর মোহাম্মদ (দঃ) তাঁর জীবনে একবারই সর্য গ্রহণ হয়েছিল। এ অভিজ্ঞতা ছিল তার জন্য অত্যন্ত্র ভীতিপ্রদ। কোরানে শুধু একটি গ্রহণের কথা আছে। যেটি ঘটবে কিয়ামতের দিন, যে দিন পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। এ গ্রহণটি হচ্ছে চন্দ্র গ্রহণ।


আসলে কোরানে এমন কথা আছে যা থেকে চন্দ্রগ্রহণ বা সর্যগ্রহণ আদৌ কোনটি হওইয়াই সম্ভব নয়: “ সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” ৩৬-সুরা ইয়াসীন : ৪০।
সূর্যগ্রহণ ঘটতে হলে সর্য় ও চন্দ্র একে অন্যকে কক্ষপথে (orbit) “নাগাল পেতে” হবে। কিন্তু সে সময় চাঁদকে দেখা যায় না। তাই কোরানে সে ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। তবে কিয়ামতের দিন তা ঘটবে বলে বলা হয়েছে :“সে প্রশ্ন করে – কিয়ামত (পুনরুজ্জীবন) দিবস কবে?
 

 

(১) যখন দৃষ্টি চমকে যাবে,

(২) চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।

(৩) এবং সর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে ”। ৭৫-সুরা আল-ক্বেয়ামাহ: ৬-৯।
এখানে সর্য ও চন্দ্রের একত্রিত হওয়ার ঘটনাটি একবারই ঘটবে বলে ধারণা করা হয়েছে। আর সর্য ও চন্দ্র দুটিকে সমকায় মনে করা হয়েছে, যা আসলে চোখের বিভ্রাšি।
 

 


দিন ও রাত


কোরানে সূর্য ও চন্দ্রের আকারগত পার্থক্য যেমন করতে পারেনি, তেমনি সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের প্রকৃত কারণও ধরতে পারেনি। আসলে সূর্য যে দিন ও রাতের কারণ তাও অনুধাবন করা হয়নি। এগুলোকে আল্লার পৃথক পৃথক কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার ফলে এসবের মধ্যে সংঘাত না হয়ে ভারসাম্য বিদ্যমান থেকেছে:


(১) “তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসেব রিজিক (
sustenance) দান কর।” ৩-সুরা আল- ইমরান :২৭
(২) “নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাত্রির আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। ৩-সুরা আল-ইমরান:১৯০।
(৩) “…তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিšা করে।” ১৩-সুরা রা’দ : ৩।
(৪) “ এটা এ জন্য যে, আল্লাহ্ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্যে দাখিল করিয়ে (মিশিয়ে) দেন এবং আল্লাহ্ (সবকিছু) শোনেন ও দেখেন। ২২- সুরা হজ্জ্ব:৬১।

দিন ও রাতকে এখানে সর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গাগনিক অন্যান্য বস্তু থেকে ভিন্ন মনে করা হয়েছে। দিন ও রাত তৈরিতে সর্যের যে কোন ভুমিকা আছে তা বলা হয়নি:
(১) “ নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের মধ্যে দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র স্বীয় আদেশের অনুগামী (করে)। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” ৭- সুরা আল-আরাফ: ৫৪।
(২) “ এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।” ১৪-সুরা ইব্রাহিম:৩৩।
(৩) “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন (গোলাকার ২,) কক্ষপথে বিচরণ করে।” ২১-সুরা আম্বিয়া : ৩৩।
(৪) “তুমি কি দেখ না যে, তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত্র পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আর দেখ না যে, তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন? ৩১-সুরা লোকমান:২৯।
(৫) “ তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথবাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকে বিচরণ করে নিদিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত্র। জেনে রাখুন,তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। ৩৯-সুরা আল-যুমার: ৫।
সুতরাং, সুর্য যদি দিন-রাতের কারণ না হয় তাহলে এগুলোর কাজ কি শুধু কম-বেশি আলো দেওয়া প্রদীপ হওয়া? দেখা যায় যে এসব বস্তু প্রধান কাজ হচ্ছে সময় দেখানো ও ক্যলেন্ডার রক্ষা করা:(১) “ তিনি প্রভাত রশ্মির উšে§ষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত্র, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ। ” ৬-সুরা আল-আন্আম : ৯৬।
(২) “ তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারী এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিলসমুহ , যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এমনিতে এসব কিছু সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে। ১০-সুরা ইউসুফ:৫।

তারা, গ্রহ ও উল্কা

কোরানের অনুবাদ পড়ে মনে হয় যে এতে তারা ও গ্রহের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। কারণ, প্রায়শঃ একই শব্দ দিয়ে দুটোকে বুঝানো হয়েছে। তবে প্রাচীন মানুষেরা তারা (চলাচলহীন) এবং গ্রহ (সচল)-এর মধ্যে যেহেতু পার্থক্য করত, সেহেতু মনে করা যায় যে, প্রাচীন মুসলমানরাও এদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারত।

তবে সহজবোধ্য কারণে (দরবীন ছাড়া খালি চোখে দেখাতে) তখনকার মানুষেরা মনে করত যে তারা খুব ছোট বস্তু। তাই তাঁরা তারাদের স্থান দিয়েছিলেন নিকটতম আকাশের মধ্যে। কোরানে ”পড়ন্ত্র তারা” বলতে যা বলা হয়েছে, সেগুলো আসলে উল্কাপিন্ড। অথচ কোরানে বলা হয়েছে এগুলো (উল্কাপিন্ড) হচ্ছে শয়তান ও জ্বিনের বিরুদ্ধে নিক্ষেপিত তারা:

 

 

“আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালাদ্বারা সাজিয়েছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য জ্বলন্ত্র অগ্নির শাস্তি। ৬৭-সুরা আল-মুলুক:৫।
মনে হয় এটি-ই বেহেশতের (আকাশের) আত্মরক্ষার অস্ত: “আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি; অতঃপর আমরা দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পর্ণ।” ৭২-আল-জ্বিন:৮।  এছাড়া বহু হাসিসেও (উদাহরণ, সহি বুখারি, খন্ড ৪, পুস্তক ৫৪, সংখ্যা ৪৩২ এবং খন্ড ৯, পুস্তক ৯৩, সংখ্যা ৬৫০)  শয়তান জ্বিনকে তাড়ানোর জন্য  উল্কাপাতের উল্লেখ আছে।
 

 

 

সমতল পৃথিবী


যেহেতু পৃথিবী সম্পর্কে সকল মানুষের একটা ধারণ আছে, সেহেতুই হয়ত কোরানে পৃথিবী সংক্রান্ত্র বর্ণনা কম। অধিকাংশ বর্ণনা আকাশ বা বেহেশ্ত সম্পর্কে। তবে এতে পৃথিবী সম্পর্কেও বেশ স্পষ্ট কিছু কথা আছে।.
প্রথম কথা হলো কোরানের বর্ণনায় পৃথিবী চ্যাপটা। আরবরা কার্পেট যেভাবে মেলে দেয়, কোরানে পৃথিবী সেভাবে “মেলে দেবার” (“
spreading out”) কথা উল্লেখ করা হয়েছে অনেক বার:


(১) “আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপাদন করেছি।” ১৫-সুরা আল-হিজর: ১৯।


(২) “ তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। ”২০-সুরা ত্বোয়াহা: ৫৩।


(৩) “যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা৪ এবং তাতে তোমাদের জন্য করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্ত্রব্য স্থলে পৌঁছাতে পার। ”৪৩-সুরা যুখরুফ :১০।


(৪) “ আমি ভুমিকে বিস্তৃত করেছি৫ ,তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ  উদ্গত করেছি। ৫০-সুরা ক্বাফ:৭।


(৫) “আমি ভুমিকে বিছিয়েছি । আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।” ৫১-সুরা আয-যাজিরাত:৪৮।


কোরানে এ কথাও বলা হয়েছে যে পাহাড়-পর্বত না থাকলে পৃথিবী আরো চ্যাপ্টাদখাতো: “ যে দিন আমি পর্বতসমহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উন্মুক্ত  প্রান্ত্রর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।” ১৮-সুরা কাহফ:৪৭।


বাতাসে উড়ে যাওয়ার হাত থেকে তাঁবু বা কার্পেটকে খুঁটি দিয়ে যেভাবে আটকে রাখা হয়, সেভাবে পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর খুঁটি বলে কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে:


(১) “ আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ়ভাবে পর্বতসমহ স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না পড়ে আর তিনি স্থাপন করেছেন নদনদী ও পথ যাতে তোমরা তোমাদের গস্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পার।” ১৬-সুরা নাহল:১৫। “  আমি কি করিনি ভুমিকে বিছানা? এবং পর্বতকে পেরেক? ৭০-সুরা আন-নাবা:৬-৭।


ইসলামী মহাবিশ্ববিদ্যার যে বিষয়টি কোরানে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা হয়নি তা হলো সাত আকাশের অনুরূপ সাতটি পৃথিবী থাকার ব্যাপারটি, যদিও এ সংকন্ত ঈঙ্গিত রয়েছে কোরানে: “ আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভুত। ৬৫-আত্ব-ত্বালাক¦:১২।


আকাশ বা বেহেশ্তের সাতটি এক-কেন্দ্রিক গম্বুজের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হলেও সাতটি ভিন্ন পৃথিবীর অবস্থান কোথায়, কিভাবে তা স্পষ্ট নয়। তবে কোরানে “জিনিস” (“
things”) “উপর থেকে নীচে নামার” (“come down from”) বা “ উপরে আরোহণের” (“mount up to”) যে ইঙ্গিত আছে, তেমনি কিছু জিনিস পৃথিবী থেকে “নির্গত হবার” (“come forth out of”) বা “ ভেতরে প্রবেশের” (“enter within”) কথা আছে: “তিনিই নভোমণ্ডল (heavens) ও ভুমণ্ডল (earth) সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভুমিতে প্রবেশ করে ও ভুমি থেকে নির্গত হয় এবং আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। ৫৭-সুরা আল হাদীদ:৪।


এসব থেকে ধারণা করা যায় যে, সাতটি পৃথিবী ধাতব মুদ্রার ন্যায় একটি আপরটির উপর টাল দিয়ে রাখা আছে। এ ধারণা ঠিক হলে ইসলাম মহাবিশ্ববিদ্যার সর্বাধিক বড় রহস্যের উদ্ঘাটনে সাহায্য করতে পারে বইকি 🙂 ।
 

বেহেশ্ত ও দোজখ কোথায় অবস্থিত?


ইসলামিক মহাবিশ্ববিদ্যায় বেহেশ্ত বা স্বর্গ এবং দোজখ বা নরক সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এগুলো সাতটি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থিত। নবী মোহাম্মদ (দ.)-এর ”রাতের সফরের” বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ৭টি বেহেশতে পরলোকগত নবীগণ বাস করেন। এ থেকে বেহেশতের বা জান্নাতের বা স্বর্গের আকার সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়া পররবর্তী দুটি আয়াত থেকেও বেহেশতের আকার কি হতে পারে তা জানা যায় :


(১) “ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেজগারদের  জন্য। ৩-সুরা আল-ইমরান: ১৩৩।
(২) “তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। ৫৭-সুরা আল-হাদীদ: ২১।


এ বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে যে জান্নাতের বা বেহেশতের (বিশেষত ৭ম ও বৃহত্তম বেহেশত) আকার আকাশ ও পৃথিবীর সমান। আর যেহেতু প্রথম আকাশের ওপারে বেহেশতের অবস্থান, সেহেতু দোজখের অবস্থান হবে পৃথিবীর নীচে, ৭ম পৃথিবী পর্যন্ত্র পুরোপুরি আবদ্ধ জায়গাগুলোতে:


(১) “ তাদের জন্য নরকাগ্নির শাস্তি রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর (
folds of covering above) । আমি এমনভাবেই জালেমদেরকে শাস্তি প্রদান করি। ৭-সুরা আল-আরাফ:৪১।


(২)“… এবং নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এসব কাফেরদের পরিবেষ্টন করে আছে।” ৯- সুরা আত্-তাওবাহ :৪৯।


আর, যখনই দোজখ কোন দিকে বলা হয় তখন সবসময় “নীচের” কথা উল্লেখ করা হয়: “সেদিন তাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হবে দোজখের আগুণে, অপ্রতিরোধ্যভাবে” (
That Day shall they be thrust down to the Fire of Hell, irresistibly) ।” ৫২- সুরা তুুর:১৩।


অন্যত্র দোজখের অবস্থান মাটির নীচে অন্ধকার কারাকক্ষের (
dungeon)-এর বিবরণ দেওয়া হয়েছে : “…আমিজাহান্নামকে কাফেরদের জন্য কয়েদখানা করেছি। ” ১৭-সুরা বনী ইসরাঈল:৮।


অন্যত্র দোজখের খোঁজ করতে “নীচের দিকে” তাকাতে বলা হয়েছে :“ আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি তাকে উঁকি দিয়ে দেখতে চাও? অতঃপর সে উঁকি দিযে দেখবে এবং জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে।” ৩৭-সুরা আস সাফফাত: ৫৫-৫৬।


কোরাণের এসব উদ্ধৃতি থেকে আমরা ইসলামিক মহাবিশ্ব সম্পর্কে পরিস্কার একটা ধারণা করতে পারি।


সূত্র
১. http://wikiislam.com/wiki/Islamic Cosmology.
২. Samsad English-Bengali Dictionary, Sahity Samsad, Calcutta, 1981 (Reprint).
৩. Abdullah Yssuf Ali :The Meaning of the Glorious Qur’an: vol. 1 & 2:Beirut, 1932.
৪. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান : কোরান শরিফ –সরল বঙ্গানুবাদ:৯ম মুদ্রণ: মাওলা ব্রাদ্রার্স, ২০০৭।
৫. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (আনুবাদক):পবিত্র কোরআনুল করীম:সৌদী সরকার কর্তৃক প্রকাশিত।
 
 

 


লেখক বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।