[দীপায়ন খীসার ’ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন’ লেখাটি এর আগে CHTBD গ্রুপের ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে আমিও একটি লেখা দিয়েছিলাম। আজকে দেখলাম, দীপায়ন খীসা তার ঐ লেখাটা এই মুক্তমনাতেও নিয়ে এসেছেন। তার লেখার জবাবে আমার লেখাটাও পাঠকদের জন্যে হুবহু তুলে ধরলাম।]

আজকে সকালে ফেসবুকে ঢুকে চোখে পড়ল CHTBD গ্রুপে দীপায়ন খীসার একটি লেখার লিংক (http://www.news.chtbd.net/?p=605)।লেখার শিরোনাম ছিলো “ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন”।নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়, তবে বাংলা ব্লগীয় শিরোনাম।সহজে পাঠকের চোখ আকৃষ্ট করতে পারে।আমার চোখও আকৃষ্ট হলো। অনলাইন ভার্সনে পত্রিকা পড়া বাদ দিয়ে দীপায়ন বাবুর লেখাটা আগে পড়ে নিলাম। ইচ্ছা হলো সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রতিক্রিয়া লেখার জন্যে। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা আমাকে তা করতে সময় দেয়নি। তাই তৎক্ষণাত ছোট্ট একটা মন্তব্য লিখে বিদায় নিলাম।

বিকেলে কাজের শেষে বাড়ী ফিরে একটু সতেজ হয়ে নেওয়ার পর দীপায়ন খীসার লেখার প্রতি উত্তরে আমার প্রতিক্রিয়া লিখতে বসলাম। লিখতে বসে ভাবছিলাম, রাজনৈতিক কর্মী দীপায়ন বাবু কত মধুর ভাষায় লেখা লিখেন, আর কত উপদেশ দান করেন! যাহোক, কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নই বলে নির্মোহভাবে তার লেখাটা বেশ কয়েকবার পড়ে নিতে পারলাম।চেষ্টা করতে লাগলাম তার লেখার মূল বক্তব্যগুলো পাঠোদ্ধার করতে তিনি কী বলতে চাচ্ছিলেন। দীপায়ন বাবুর লেখাতে বুঝা গেলো, যারা জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর ঐক্যের পক্ষে কথা বলছেন তাদের উপর তিনি ক্ষুব্ধ এবং তাদের সবাইকে ইউপিডিএফর সাথে এক করে ফেলেছেন। তাই “ঐক্যের প্রবক্তাদের” কিছু বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যেই তার “ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন” শীর্ষক লেখার অবতারণা। যারা ঐক্যের পক্ষে কথা বলছেন তাদেরকে তিনি বিভিন্ন অভিধা দিয়েছেন, এসবের মধ্যে অন্যতম হলো “ঐক্যের ফেরিওয়ালা”, “স্ব-ঘোষিত” অহিংসবাদী।দীপায়ন বাবুর লেখাতে আমার নাম রেফারেন্স না থাকলেও মনে হলো তিনি আমাকেও “স্ব-ঘোষিত” অহিংসবাদী বলে কটাক্ষ করেছেন। কেননা, ইতিপূর্বে আমার একটি লেখাতে বৌদ্ধ দর্শনের অহিংস নীতির আলোকে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর ঐক্য খুঁজে পাওয়া যেতে পারে মন্তব্য করেছিলাম। এছাড়া আরো অনেক বন্ধু আছেন যেমন অমিত হিল ও সানু জুম্ম যারা সমাজতত্ত্ব ও বৌদ্ধ দর্শনের আলোকে দু’ই দলের সমস্যাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণে দীপায়ন বাবুর কথিত “ফেরিওয়ালা” হিসেবে তার লেখার উপর কিছু না বললে আমার মনে একটু অস্বস্তি কাজ করবে।

দীপায়ন বাবু “ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের” যে “কিছু বিষয়ে” দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন সেসব বিষয় সারসংক্ষেপে বুঝার জন্যে তার লেখাটা বেশ কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিয়েছিলাম। মোটাদাগে তার বক্তব্য ছিলো দু’গ্রুপের উদ্দেশ্য – ইউপিডিএফ আর তথাকথিত ঐক্যের ফেরিওয়ালা বা স্ব-ঘোষিত অহিংসবাদীরা।যেহেতু আমি দ্বিতীয় বর্গের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু ফেরিওয়ালা হিসেবে দীপায়নবাবুর কাছে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাই। তবে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট ধরে আলোচনায় যাওয়ার আগে দীপায়ন বাবুর সদয় অবগতির জন্যে দু’টো বিষয় স্পষ্ট করতে চাইঃ ‍ক) আমি কখনো জেএসএস কিংবা ইউপিডিএফ-র কর্মী ছিলাম না এবং এখনো নেই; খ) দীপায়ন বাবুর বক্তব্যকে জেএসএস-র বক্তব্য হিসেবে পাঠ করবো না, বরং ইউপিডিএফ-চ্যূত ও জেএসএস-এর উপর ভর করা এক পরাগাছা রাজনৈতিক কর্মীর এলোমেলো ভাবনা হিসেবে তার লেখাকে পাঠ করবো (দীপায়ন বাবু, আমার ভাষার জন্যে দুঃখিত)।

দীপায়ন বাবুর কিছু বিষয়ঃ কী সেসব বিষয়?
দীপায়ন বাবু এলোমেলোভাবে অনেক কথা বলেছেন। ইউপিডিএফ আর “ঐক্যের ফেরিওয়ালা”দের দিকে অনেক আঙুল নির্দেশ করেছেন। উভয়কে এক করে ফেলেছেন। সে যা হোক। অত্যন্ত নির্মোহভাবে দীপায়ন বাবুর লেখাটা পড়ে সারসংক্ষেপে তার কথিত “কিছু বিষয়”সমূহ নিম্নোক্তভাবে তুলে ধরা যায়ঃ
১) ইউপিডিএফ-এর বাইরে যারা ইউপিডিএফ-জেএসএস-র রাজনীতি হতে নিরপেক্ষ বা ‘সুশীল সমাজের’ লোক, যারা উভয় দলের ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলছেন, তাদেরকে দীপায়ন বাবু অনেক অভিধা দিয়েছেন। যেমন, “ঐক্যের ফেরিওয়ালা”, “নতুন শান্তিবাদী”, “স্ব-ঘোষিত” অহিংসবাদী, “হিপোক্রিট” ইত্যাদি।

২) দীপায়নবাবুর অভিযোগ, ইউপিডিএফ যখনই আক্রান্ত হয়, তখনই “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা”/“কথিত শান্তিবাদীরা” জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে।এর মাধ্যমে জেএসএসকে এক ফ্রন্টে ব্যস্ত রেখে ইউপিডিএফকে পুনরায় সংগঠিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন এবারেও একইভাবে ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমাসহ ৪ নেতা নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা” জোরেসোরে ঐক্যের জন্যে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছেন।

৩) বর্তমান জুম্ম সমাজে যে অনৈক্য, সেই অনৈক্যের বীজ জেএসএস বপন করেনি। বরং ইউপিডিএফ তার নাবালকসুলভ কাজের মাধ্যমে এই সংকট সৃষ্টি করেছে।

৪) সংকটের সমাধান সন্তু লারমার রাজী হওয়া না হওয়ার বিষয় নয়। বরং দায়িত্বশীল এবং সাবালক হয়ে পরিপূর্ণ মানুষের মত আচরণের মধ্যে সমাধান খুঁজতে হবে। এদিকে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

৫)সন্তু লারমার নেতৃত্বের প্রতি দীপায়ন খীসার স্তুতি এবং জেএসএস-এর প্রতি একটি সাবধান বাণী

এখন দীপায়ন খীসার লেখার বিষযবস্তুর উপর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

১) “ঐক্যের ফেরিওয়ালা”, “নতুন শান্তিবাদী”, “স্ব-ঘোষিত” অহিংসবাদী, “হিপোক্রিট”: কোন অভিধায় দীপায়নবাবু অভিহিত হওয়ার যোগ্য?

দীপায়ন বাবু যদি আমাকে ঐক্যের ফেরিওয়ালা বলে গালি দেন তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমরা ঐক্যের কথা বলি, ঐক্যের বাণী ফেরি করে বেড়াই। আপনার মত জেএসএস কর্মী কিংবা ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাদের জিনিস গ্রহণ করবেন কী করবেন না, সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমাদের কথা আমরাই বলবো। অবশ্য ইউপিডিএফও ঐক্যের ঝুড়ি নিয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছে। তবে ক্রেতা হিসেবে আপনি আমাদেরকে ইউপিডিএফ-এর সাথে এক করে গুলিয়ে ফেলবেন না।

দীপায়ন বাবু, আপনি আরো দু’টো উপাধি নিয়ে এসেছেন,“নতুন শান্তিবাদী” ও “স্ব-ঘোষিত” অহিংসবাদী। আমরা কেউই এসব উপাধি দাবী করিনি।আমরা আপনাদেরকে দায়িত্বশীল দল হিসেবে পরমত সহিঞ্চু হতে বলছি। সহিংসতা পরিহার করতে বলছি।নতুন কিংবা পুরনো করে বলছি না। যখন থেকে মারামারি শুরু করেছেন তখন থেকে অন্য সাধারণ মানুষের সাথে আমরাও সহিংসতা বন্ধে আপনাদেরকে অনুরোধ করে আসছি বিভিন্ন মাধ্যমে। এখন ফেসবুক আর ব্লগ সেটা আরো বেশি করে সুযোগ করে দিয়েছে।

আপনি ইউপিডিএফকে হিপোক্রিট বলেছেন। তাদের হিপোক্রেসির নমুনাও দিয়েছেন। যেমন, ইউপিডিএফ ঐক্যের কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে জেএসএসকে প্রস্তাব পাঠায়নি; চুক্তি মানে না, অথচ চুক্তি বাস্তবায়নে জেএসএসকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলে; সন্তু লারমাকে সকল আক্রমণের টার্গেট করে জেএসএস-র সাথে ঐক্য চায় এবং পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইত্যাদি। যেহেতু আমি ইউপিডিএফর কেউ নই, এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমার কোন কিছু বলা ঠিক হবে না।আশা করি, ইউপিডিএফ-র কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ব্যাপারে জবাব দেবেন।

অন্যদিকে ইউপিডিএফ-এর সাথে আমরা যারা দুই দলের বৃত্তের বাইরে থেকে কথা বলছি তাদেরকেও আপনি “হিপোক্রেট” বলে গালি দিয়েছেন। আপনি লিখেছেন,

“অথচ দলটির প্রধান প্রসিত খীসার সাথে সেনাকর্তাদের বৈঠকের অন্তরঙ্গ ছবির বিষয়টিও মানুষের কাছে গোপন থাকেনা। এই রকম এক হিপোক্রেট দলের সাথে সুর মিলিয়ে যারা অহিংসবাদ প্রচার করেন, নিরপেক্ষতার ভাব ধরেন তারাও হিপোক্রেট হবেন তাতে সন্দেহ থাকতে পারেনা। এই অহিংসবাদীদের প্রচারণা প্রোপাগাণ্ডার জবাবে বলতে হয় যদি সত্যিই পার্বত্য অঞ্চলের রাজনীতিতে ঐক্য চান তা হলে হিপোক্রেসী পরিত্যাগ করুন”।

কারা কারা ইউপিডিএফ-এর মত হিপোক্রিট দলের সাথে সুর মেলাচ্ছে তাদের নামগুলো স্পষ্ট করেননি। শুণ্যে গুলি মেরে সবাই এক কাতারে নিয়ে যেতে যাচ্ছেন। সেকথা থাক। দীপায়ন বাবু, হিপোক্রেসী তত্ত নিয়ে আপনি যখন বলেন বেড়ান, “ব্যক্তিগত হিপোক্রেসির চেয়ে রাজনৈতিক হিপোক্রেসি খুবই বিপদজনক, তা সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলে, জন জীবনকে দুর্বিষহ করে”, তখন আপনার অতীত কীভাবে ভুলে যান? (দু:খিত ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নেবেন না। প্রসঙ্গ এসেছে বলে বলতে হচ্ছে)।আমি তো জানি, আপনি হলেন সেই রাজনৈতিক হিপোক্রিটদের একজন।এখন যাকে (ইউপিডিএফ) গালি দিচ্ছেন, তার অন্যতম জন্মদাতা ছিলেন আপনি। চুক্তি হওয়ার আগে গোটা জুম্মসমাজ ও ছাত্রসমাজ চুক্তির পক্ষে কথা বলছিলেন, তখন তো আপনি এবং আপনারাই তো সেই প্রসিতের সাথে সুর মিলিয়ে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ঝুড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে বেরিয়েছিলেন। মনে পড়ে কী, আপনার মত হিপোক্রেটদের র্মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে প্রসিত-সঞ্চয়রা ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ঝুড়ি প্রথম উন্মোচন করেছিলেন? দীপায়নবাবু, মনে পড়ে কী আপনারা কয়জন ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ফেরিওয়ালা ছিলেন? মনে পড়ে কী সেই নামগুলো – প্রসিত, রবিশংকর, সঞ্চয়, দীপ্তিশংকর, চম্পানন, কবিতা, সমারি, ক্যহ্লাচিং আরো অনেকের নাম? মনে পড়ে কী সেই দিনের কথা যখন আপনি জগন্নাথ হলের দক্ষিণবাড়ীর টিভি রুমে সারারাত জেগেছিলেন পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার কাউন্সিলে আপনার অনুগত ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ফেরিওয়ালারাদের জিতিয়ে আনতে? মনে পড়ে কী সেদিন রাতে কোন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলেন? সেই ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ফেরিওয়ালারা এখন কোথায়? আর আপনি কোথায়?আপনি ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ঝুড়ি ফেলে দিয়ে কেন “চুক্তি বাস্তবায়নের ঝুড়ি” মাথায় নিয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছেন? এটা কী আপনার ব্যক্তিগত হিপোক্রেসি নাকি রাজনৈতিক হিপোক্রেসি?

দীপায়নবাবু, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা ফেরিওয়ালা হিসেবে ঝুড়ি বদলায়নি। আমি আরো দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আপনার মত কোন দলের লেজুরবৃত্তি করিনি। আপনার মত ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ ঝুড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে “চুক্তি বাস্তবায়নের ঝুড়ি” মাথায় নিয়ে ফেরিওয়ালা হইনি। আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার খুনোখুনি বন্ধ করতে উভয় দলকে আহবান জানাচ্ছি। সেজন্যে আমরা একতার কথা বারবার বলছি, ভবিষ্যতেও বলে যাবো। আপনার মত ভন্ড রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভন্ডামি পরিহার করুন, আর জাতিকে চরমভাবে বিপদগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি দিন।

২) ইউপিডিএফ যখনই আক্রান্ত হয়, তখনই “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা”/“কথিত শান্তিবাদীরা” জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেঃ দীপায়ন বাবু কাকে কী বলেন?

দীপায়নবাবুর অভিযোগ করেছেন, ইউপিডিএফ যখনই আক্রান্ত হয়, তখনই “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা”/“কথিত শান্তিবাদীরা” জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে।এর মাধ্যমে জেএসএসকে এক ফ্রন্টে ব্যস্ত রেখে ইউপিডিএফকে পুনরায় সংগঠিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হয়।উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এবারও একইভাবে ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমাসহ ৪ নেতা নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা” জোরেসোরে ঐক্যের জন্যে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছেন। তিনি আরও প্রশ্ন রেখেছেন, অভিলাষকে রাতের অন্ধকারে স্ত্রী-কন্যার সামনে হত্যা করা হয়, তখন কথিত শান্তিবাদীরা কোথায় ছিলেন? আমার জানা মতে, তখনও ফেসবুকে অনেক আলোচনা হয়েছিলো। ফেসবুক বন্ধুরা (অবশ্য ইউপিডিএফ সমথর্করা বাদে) তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো ফেসবুকের দেয়ালে দেয়ালে। তখন দীপায়ন বাবু কোথায় ছিলেন? দীপায়ন বাবু, আপনার কাছেও একটি প্রশ্ন, নববর্ষের দিনে বাঘাইছড়িতে চিজিমণি চাকমা (৩২) ও তার দুই বছরের শিশুকন্যা অর্কিমণিকে গুলি করে হত্যা করেছিলো জেএসএস (সন্ত লারমা)-এর সশস্ত্র গ্রুপ। কী দোষ ছিলো শিশু অর্কিমণির? শিশু হত্যা ও নারী অপহরণের (সম্প্রতি রাঙামাটিতে ১১ নারীকে জেএসএস কর্মীরা অপহরণ করেছিল)বিরুদ্ধে কথা বললেও একই যুক্তি খাঁড়া করবেন?

জনান্তিকে শুনেছিলাম, দীপায়ন বাবু আপনিও তো শান্তিবাদী। রাজা দেবাশীষ রায় একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেএসএস-ইউপিডিএফ-র মধ্যে আলোচনা শুরু করতে। সন্তু লারমা দীপায়ন বাবুকে অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলেন ইউপিডিএফ-র সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে (যদিও শেষ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারেনি)।দীপায়ন বাবু, আমাদের মাননীয় রাজাবাবুকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করবেন?

৩) অনৈক্যের বীজ কে বপন করেছে জেএসএস না ইউপিডিএফ? দীপায়ন বাবুর কী দায় নেই?

দীপায়ন বাবুর নিজের অজান্তে অনেক সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান জুম্ম সমাজে যে অনৈক্য, সেই অনৈক্যের বীজ জেএসএস বপন করেনি। বরং ইউপিডিএফ তার বিভিন্ন নাবালকসুলভ কাজের মাধ্যমে এই সংকট সৃষ্টি করেছে।আপাতত দীপায়ন বাবুর কথাটা সত্য বলে ধরে নিচ্ছি।
দীপায়ন বাবু তার বক্তব্যের সপক্ষে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউপিডিএফ-র নাবালকসুলভ কাজগুলো হলো: ক) প্রসিত খীসা চুক্তি মানেননি। তিনি জেএসএস-সরকারের মধ্যেকার সম্পাদিত চুক্তিকে “আত্মসমর্পন” এবং “জুম্ম জনগণের সাথে বেঈমানী” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন; খ) প্রকাশ্যস্থানে প্রতীকি চিতা ও শশ্মান তৈরী করে সন্তু লারমা ও জেএসএসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন; গ)অস্ত্র জমাদানের সময় কালো পতাকা প্রদর্শন; ঘ) ট্রানজিট ক্যাম্পে ঢিল ছোঁড়া; ঙ) জেএসএস সদস্যদের পিনোন প্রদর্শন করা, যা চাকমা রীতি অনুযায়ী চরম অবমাননা। দীপায়নবাবু, জোর দিয়ে বলেছেন, এসব নাবালকসুলভ কার্যক্রমের মাধ্যমে ইউপিডিএফ জেএসএস-র সাথে বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো। অর্থাৎ অনৈক্য বা খুনোখুনির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীপায়ন বাবু কী তখন নাবালক ছিলেন? তিনি তো তখন ইউপিডিএফ-র বড় নেতা। তিনি কী নাবালক কর্মীদের জেএসএসর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেননি? ইউপিডিএফ-এর এসব নাবালকসুলভ কাজে দীপায়ন বাবুর কোন হাত ছিলো না? ইউপিডিএফ-র উপর দোষ চাপিয়ে তিনি নিজের দায়ভার এড়াতে চাচ্ছেন? তিনি সৎ সাহস নিয়ে কেন নিজের দোষ স্বীকার করছেন না?

৪) জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার সংকট সমাধানে দীপায়ন বাবুর ফর্মুলা

সন্তু বাবুর কাছে ইউপিডিএফ কেন ঐক্যের আহবান জানায়, এবং কেন “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা”ও তা করে থাকেন সেজন্যে দীপায়ন বাবু নাখোশ হয়েছেন। অর্থাৎ তার মতে ঐক্যের টার্গেট কেবল সন্তু লারমা হতে পারেন না। তিনি ইউপিডিএফ ও “ঐক্যের ফেরিওয়ালারা”দের উদ্দেশ্যে বলেছেন,

“সংকটের সমাধান সন্তু লারমার রাজী হওয়া না হওয়ার মধ্যে নয়, বরং দায়িত্বশীল আচরণের মধ্যে এবং সাবালক হয়ে পরিপূর্ণ মানুষের মত আচরণের মধ্যে সমাধান খুঁজতে হবে”।

বটেই তো।আমরাও তো সেকথাই বলতে চাচ্ছিলাম। এক ফেসবুক বন্ধু Sanu Jummo তো খোলসা করেই বলে ফেলেছিলেন – সন্তু-প্রসিত হলেন গুরু-শিষ্য।গুরু-শিষ্য মিলে জুম্মজাতিকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলেছেন। তাই কেবল শিষ্যের কাছ থেকে “দায়িত্বশীল আচরণ” আশা করলে হবে না। গুরুর কাছ থেকেও আমরা “দায়িত্বশীল আচরণ” আসতে হবে। আমরা সাধারণ নাগরিকরা কেবল “গুরুকে” বলছি না, শিষ্যকেও আহবান জানিয়ে আসছি জাতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যে।

দীপায়ন বাবুর কাছে প্রশ্ন, “দায়িত্বশীল আচরণের” সূচকগুলো কী কী? কীভাবে বুঝবো দু’দলই দায়িত্বশীল? আমরা তো দেখে আসছি, দু’দলই একে অপরকে নির্মূল করার হুমকি দিচ্ছে এবং খুনোখুনি করছে প্রতিনিয়ত। সংঘাতের জন্যে দু’দলই পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। তাহলে সমাধানের পথ কী হতে পারে?

আপনার মত করে, দু’দলের সংকট সমাধানের জন্যে আমরা রাজনৈতিক ফর্মুলা দিতে পারি না এবং সে রাজনৈতিক যোগ্যতা বোধয় আমাদের নেই। সেজন্যে আমরা বৌদ্ধ দর্শনের অহিংস নীতির আলোকে দুদলকে দায়িত্বশীল হতে বলছি (যদিও অহিংসার কথা বলাতে আপনি আমাদের কড়া ভাষায় গালি দিয়েছিলেন। তবে এ লেখার মাধ্যমে সে উপহার আপনাকে ফেরত দিলাম।)। অহিংস নীতি অনুশীলন করতে গিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রয়োজন নেই। কেবল স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণের মাধ্যমে জেএসএস-ইউপিডিএফ জাতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারে। বুদ্ধের বাণী অনুসারে, তিন প্রকারের অকুশল কর্ম হতে বিরত থাকলে হবেঃ কাজে (deeds), বাক্যে (words) ও চিন্তায় (thoughts)।কাজের মাধ্যমে অর্থাৎ কায়িকভাবে আপনারা দু’দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন হতে বিরত থাকুন, পরস্পরকে অপহরণ করা হতে বিরত থাকুন। বাক্যে বা কথাবার্তায় আপনারা সংযত থাকুন, উস্কানিমূলক বক্তব্য হতে বিরত থাকুন, ও অশ্রদ্ধামূলক বাক্য বিনিময় হতে বিরত থাকুন। আর চিন্তায় (thoughts)সৎ থাকুন, একে অপরকে নির্মূলের আয়োজন হতে বিরত থাকুন।এককথায়, আপনাদের দু’দলের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে ভন্ডামি পরিহার করন। তাই আমরা মনে করি, জেএসএস-ইউপিডিএফ, অন্যভাষায় বললে সন্তু-প্রসিত যদি এই তিন উপায়ে অকুশল কর্ম থেকে বিরত থাকতে পারেন, তাহলে তারা জাতির প্রতি দায়িত্বশীল বলে বিবেচিত হবেন।

৫)সন্তু লারমার নেতৃত্বের প্রতি দীপায়ন খীসার স্তুতি এবং একটি সাবধান বাণী

প্রাক্তন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ফেরিওয়ালা নব্য জেএসএস কর্মী দীপায়ন খীসা সন্তু লারমার নেতৃত্বের যেভাবে স্তুতি শুরু করেছেন তাতে আমার খুবই আশংকা হয়। সন্তু লারমার জন্যে দীপায়ন খীসারা কতটুক নির্ভরযোগ্য। জেএসএস নেতারা জানেন কী এরেন্ডাগাছে কাঠাল ধরে না? দীপায়ন খীসা ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের গালি দিয়ে সন্তু লারমা বা জেএসএস নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে লিখেন,

“[১]…নতুন শান্তিবাদীরা যারা অনিমেষ চাকমার মৃত্যূর পর থেকে জাতীয় ঐক্য – জাতীয় ঐক্য বলে বাজারে হাঁক-ডাক ছাড়ছেন, তাদেরকে বলছি আপনাদের প্রিয় ভাইদের যেন আর রক্ত না ঝরে, যেন আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন তার জন্য ইউপিডিএফ-কে বালখিল্যতা পরিহার করে সঠিক কক্ষপথে নিয়ে আসুন। [২] জনসংহতি সমিতি বহু আগে থেকেই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরী করে রেখেছে।কাজেই আপনাদের কথিত যে প্রচারণা তার সম্পূর্ণ অসার এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত। [৩] জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।”

উপরের অনুচ্ছেদে দীপায়ন খীসা তিনটি বিষয়ের কথা বলেছেন। প্রথম দু’টো পয়েন্টে বেশি বলার নেই। কারণ সেই বিষয়গুলো ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও একটা মন্তব্য করতে হয়, যারা বন বাদারে মারা যাচ্ছে তাদেরকে দীপায়ন খীসারা নিজেদের ভাই বলে মনে করেন না। অর্থাৎ “হিপোক্রিট ইউপিডিএফ” আর “ফেরিওয়ালাদের” ভাইবোনেরা মারা গেলে তার বা জেএসএস-এর করার কিছুই নেই। তখন তিনি বা তারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। এত সরল স্বীকারোক্তির পরও কী দীপায়ন বাবুর মত ভন্ড জেএসএস নেতাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করতে পারি?

দীপায়ন খীসা দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেছেন জেএসএস বহু আগে থেকেই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরী করে রেখেছে।এ মুহুর্তে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই।শুধু কয়েকটি প্রশ্ন রাখবো দীপায়ন বাবুর কাছে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি যদি বহু আগে তৈরী হয়ে থাকে তাহলে কেন এত সংঘাত? কেন জেএসএস ভেঙে হয়ে গেলো – জেএসএস (সন্তু লারমা) আর জেএসএস (এম এন লারমা)? তখন কী যুক্তি দিবেন জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপ ষড়যন্ত্রকারী? সরকারের দালাল ইত্যাদি? কেন সন্তু লারমার এক সময়ের তরুণ তগবগে নেতারা যেমন, থোয়াইঅং, পলাশ, ব্রজ, তনয়, বোধিসত্ত্ব, মৃগাঙ্গ, ও উজ্জ্লরা হারিয়ে গেলেন? এই তরুণ নেতারা তো এক সময় প্রসিত-সঞ্চয়-দীপায়ন খীসার মত পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ফেরিওয়ালাদের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন।এদের ঠাঁই না হয়ে কেন আপনার মত নীতিহীন ফেরিওয়ালারা সন্তু লারমার কোলে আশ্রয় জুটে? দীপায়ন বাবু, এটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নেবেন না, চরম সত্য হিসেবে মেনে নেবেন।তা না তাহলে অন্যের বিরুদ্ধে যে ভন্ডামির অভিযোগ আনেন সেটার কোন মূল্য থাকবেনা।

আপনি আরো সন্তু লারমার নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল বলেছেন। যেহেতু সন্তু লারমার আশেপাশে থাকার সুযোগ হয়নি, সেহেতু তার নেতৃত্বের ব্যাপারে অযথা মন্তব্য করলে আপনারা রেগে যাবেন, গালমন্দ শুরু করবেন। শুধু অনুরোধ করবো নীচের ছবিগুলো দেখুন, তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন সত্যিই কী সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন? ছবির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছি।

ছবি ১

দুই মহারথীর মাঝখানে সন্তু লারমা

(Happy Moments! Flanked by Goutam and Rupayan, two PCJSS pillars, one has now been a parallel leadership recognised by the Dighinala Special Workers Conference 2010, while the other is a mentally distant star. Photo: Michael Heyn, former UNDP-CHTDF Director (Source: CHT Voice).

দীপায়ন বাবু, বুঝার চেষ্টা করুন তো ছবির ক্যাপশনের ভাষা। আপনার বাংলা অনুবাদ লাগবে কী? ছবি কথা বলে, “আহা!সেই সুখের মুহুর্তোগুলো! সন্তু লারমা দু’টো স্তম্ভের মাঝখানে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন একটি স্তম্ভ (তার ডান পাশেরটা) সমান্তরালে সরে গেছে, আরো একটি স্তম্ভ (তার বাম পাশেরটা) মনের আকাশে দূর তারা হয়ে আছে। সন্তু লারমার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রশ্ন করতে চাই, সেই হাসি, সেই সুখের মুহুর্তোগুলো কী এখনো অম্লান আছে?

ছবি ২

চার মহারথীর মাঝখানে সন্তু লারমা

(PCJSS Peace Mission: Should there be peace for them? At Dhudukchara hideout, flanked by Sudhasindhu, Goutam, Rupayan and Raktotpal, prior to catching chopper for attending to the peace dialogue with GoB delegation, led by Abul Hasnat Abdullah on 21 Dec 1996. Raktotpal Tripura (central committee member and CHT Regional Council member) has recently left politics for PCJSS internal crisis. Photo: Information and Publicity Department, PCJSS. Source: CHT Voice).

ছবি প্রশ্ন করে, “জেএসএস-এর শান্তি মিশনঃ তাদের জন্যে শান্তি আসবে কী? দুধুকছড়াতে সন্তু লারমার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছেন চার মহারথী সুধাসিন্ধু, গৌতম, রূপায়ন, আর রক্তোৎপল। কোথায় এবং কেন হারিয়ে গেলেন সন্তু লারমার সেসব চারি মহারথী? একসময়ে পরম বিশ্বস্ত মহারথী সুধাসিন্ধু খীসা (সর্ব বামের জন) ও রূপায়ন দেওয়ান (ডান দিকে থেকে দ্বিতীয়) সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে গঠন করেছেন জেএসএস (এমএন লারমা)। রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যাই হোক, তারা সন্তু লারমা থেকে দূরে সরে গেছেন। দীপায়নবাবু, এরপরও কী বলবেন, “জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন?”

কথা যেন শেষ হতে চায় না। সবশেষে জেএসএস তথা সন্তু লারমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, দীপায়ন খীসাদের মত ভন্ড পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ফেরিওয়ালাদের দিয়ে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে না। আগে ভাগে দীপায়ন খীসাদের মত লোকদের কাছ থেকে সাবধানে না থাকলে তারা আপনার সাথে বেঈমানি করবেন না এমন কোন গ্যারান্টি কেউ কী দিতে পারবেন?

অতএব সাধু সাবধান।

——————-
অডঙ চাকমা, ১৯ জুন ২০১১

কৃতজ্ঞতা স্বীকার
দীপায়ন বাবুকে ধন্যবাদ জানাই তার খোলামেলা লেখার জন্যে।
সেই ফেসবুকের অগণিত বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই যারা কোন দলের ভাবাদর্শে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে এক রসিক ফেসবন্ধুর কথাও উল্লেখ না করে পারছি না। কিছুদিন আগে ঐ রসিকবন্ধু ফেসবুকে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর কর্মী, সমর্থক ও রাজনীতি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আলোচনা-সমালোচনার ঝড় দেখে তার স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছিলেন,

“ভালই লাগছে, আমরা জঙ্গল দাবড়াচ্ছি বলে এখন অনেক হরিণ, শুকর, গুইসাপ, বেঙ, সাপ বের হয়ে আসছে…..একসময় হয়তো বড় বড় বাঘও বের হয়ে আসবে”(অবশ্য স্ট্যাটাসটা চাকমা ভাষায় ছিলো)।

ঐ রসিক বন্ধু কী বুঝাতে চেয়েছিলেন সেটা স্পষ্ট। এতদিন ফেসবুকে ও ব্লগে উভয় দলের আন্ডানেতা ও সমর্থকরা বিতর্কে অংশ নিচ্ছিলেন। সেসব আন্ডানেতা ও সমর্থকের বাইরেও বড় নেতারা আসছেন। যেমন ইউপিডিএফ-র কেন্দ্রীয় নেতা নিরন চাকমা আমার লেখার (http://www.somewhereinblog.net/blog/odong/29386907) প্রেক্ষিতে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। আজকে দীপায়ন খীসাও লেখা দিয়ে বিতর্কে নেমে আসলেন। আশা করবো, এ বিতর্ক গঠনমূলকভাবে চলবে।সাধারণ বন্ধুরাও বির্তকে অংশ নেবেন অত্যন্ত খোলামেলামনে এবং আন্তরিকভাবে।