নাসরীন আমাদের শক্তি ও উদ্যমের পাথেয়
গীতা দাস
নাসরীন পারভীন হক-এর জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে। মা কবি জাহেদা খানম ও বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল হক। মৃত্যু ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে । এ মৃত্যু একটি পরিকল্পিত ঘটনার পরিণতিতে না দুর্ঘটনায় তা আজও রহস্যাবৃত। রাষ্ট্র এখনো এ রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা আশা নিয়ে অপো করছি যে রাষ্ট্র তার দায়বদ্ধতা পালন করবে।
নারীপক্ষ একটি ভিন্নধর্মী নারী সংগঠন। এ সংগঠনের সদস্য ছিলেন নাসরীন হক। বৈচিত্রময়ী সদস্য। নাসরীন ছিল একটি আন্দোলনের নাম। তার চিন্তা চেতনায়, জীবনাভিজ্ঞতায়, আন্দোলনের বিষয় নির্বাচন ও কর্মসূচীর কৌশল পরিচালনায় ছিল ভিন্ন মাত্রা।
তাঁর সাথে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে এসিড আক্রমনের শিকার নারীর ছিল সখ্যতা। অর্থাৎ শ্রেণী নির্বিশেষে তাঁর সামাজিকতায় বলয় বিস্তৃত ছিল। আর তাই তো তার মৃত্যুর পর শোক জানাতে জড়ো হয়েছিল দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আমলা, নারীকর্মী, সংবাদকর্মী, যৌনকর্মী, প্রতিবেশী, গৃহিনী থেকে সমাজের সকল স্তরের প্রতিনিধি। তাদের হৃদয় রক্তক্ষরণ থেকে কালি নিয়ে ও বুকের স্পন্দন থেকে আবেগ দিয়ে শোক বইয়ে লিখে গেছে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ভালবাসার কথা।
সবার নাসরীন, নাসরীনের সবাই। গ্রামীণ নারী, শহুরে নারী, ঢাকার নারী, পাথরঘাটার নারী, যুক্তরাষ্টের নারী, আফ্রিকার নারী, প্যালেস্টাইনের নারী সবার দুঃখে সংগ্রামী ছিল নাসরীন।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অকালে মৃত্যুবরণকারী মায়ের জন্যে ছিল তার অশেষ দুঃখবোধ, আর এ দুঃখবোধকে সে রূপান্তরিত করেছিল নিরাপদ মাতৃত্বের মতো শক্তিশালী কর্মসূচীতে। এ বিষয়ে ফিউচার সার্চ কনফারেন্স নাসরীনের সৃজনশীলতা, মেধা ও কৌশলের অপূর্ব সমন্বয়। মাতৃমৃত্যু রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মতামতকে সন্নিবেশিত করা, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের সেবাপ্রদানে উদ্ধুদ্ব করা ও নীতি -নির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাবিত করার মতো উপাদান ছিল এ কর্মসূচীতে।
কিশোরীদের সাথে মাসিককালীন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মতবিনিময় করেছিল সেই নব্বই এর দশকে। তারা এখন পর্যন্ত তাঁকে স্মরণে রেখেছে এবং রাখবে আজীবন।
শুকর পালনকারীদের জীবিকায় সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করতে শুকরের খামার করা তাঁর একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সরকার থেকে শুকর পালনকারী জনগোষ্ঠী শুকরের চিকিৎসার ভাল সুযোগ পায় না । প্রতিটি উদ্যোগে নিজের সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। অন্ত্যজ শ্রেনীর জীবিকার জন্য ছিল তাঁর এ অভিনব কৌশল।
এসিড আক্রমনের শিকার নারীকে আলোয় আনার শপথে দীপ্যমান নাসরীন। নাসরীনই প্রথম তাদেরকে জন সম্মুখে তুলে ধরে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যন্ত নাড়া দেয়। যার ফলশ্র“তিতে এসিড আক্রমণ প্রতিরোধ আইন প্রণীত হয় এবং গড়ে উঠে সংগঠন। প্রতিবন্ধী নারীর জন্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টিতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা আজও স্মরণ করে অনেক প্রতিবন্ধী নারী।
সরকারের নরপ্ল্যান্ট নামক জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির বিরূদ্ধে সোচ্চার নাসরীন। ‘শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার’ নারীর এ জীবনাধিকারকে সামনে নিয়ে যেতে লড়াকু ছিল নাসরীন।
বলিষ্ঠ সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী নাসরীন ছিল অসম্প্রদায়িক চেতনায় সমুজ্জ্বল। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের বিরূদ্ধে ছিল এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। ‘যার ধর্ম তার কাছে, রাষ্ট্রের কি বলার আছে’ শ্লোগান ছিল এ প্রতিবাদেরই অংশ।
অক্টোবর মাসে গোলাপী ফিতা বুকে বেঁধে দিয়ে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছিল নাসরীনের আরেকটি অভিযান। নিজে নিজে কিভাবে স্তন পরীক্ষা করা যায় তারও মহড়া দিয়ে শিখিয়ে দেয়া ছিল এ অভিযানের অংশ। দেশে স্তন ক্যান্সারের জন্য স্বল্প মূল্যে ঔষধ তৈরীর এ্যাডভোকেসীর অংশ ছিল ঔষধ কোম্পানীর সাথে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ করা ও সভা করা। দরিদ্র স্তন ক্যান্সার রোগীকে আর্থিক সহযোগিতাও ছিল তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের অংশ।
তামাক বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৮৮ সালে বন্যায় ত্রাণ কাজ, টানবাজার থেকে যৌন কর্মীদের উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, এইচআইভি/এইডস, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে সংসদীয় পর্যায়ে কাজ করা, নারীর উপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ, কর্মজীবী নারীদের শিশু রক্ষণাবেক্ষণ সবই ছিল নাসরীনের আন্দোলনের বিষয়। তাছাড়া দত্তক ও নাগরিত্ব নিয়ে আইন সংস্কারের জন্যেও নাসরীনের জোরালো লবিইং ছিল।
অবলীলায়- অনায়াসে আন্দোলনের বিভিন্ন ইস্যু চিহ্নিত করা মতো বিচক্ষণতা ছিল নাসরীনের। তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নারী আন্দোলনের মানচিত্রে এক একটি লিজেণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পুষ্টি বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী নাসরীন ছিল একজন নারী বিষয়ক গবেষক ও নারী আন্দোলনের নেত্রী। তার তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে নারীপক্ষ’র পক্ষ থেকে তাকে স্মরণ করছি অসীম ভালবাসা ও শ্রদ্ধায়।
নাসরীনের কর্ম। নাসরীনের মানবতার ধর্ম। নাসরীনের বলা। নাসরীনের চলা।
নাসরীনের হাসি। নাসরীনের সহমর্মিতা। নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন সবই আজ আমাদের শক্তি, সাহস ও উদ্যমের পাথেয়।
গীতা দাস
১১ বৈশাখ ১৪১৬/ ২৪ এপ্রিল, ২০০৯
Thanks for write up on Nasreen. She also worked a lot for Bangladeshi migrant workers in Malaysia, indigenous people and against Asia Energy.
অপুব’। আমাদের সবার নয়তো অনেকের ভিতরেই ঘুমিয়ে আছে এক নাসরীন।তাদেরকে জাগিয়ে দেবার এক অসাধারণ প্রয়াস।
Gita di
Hoyto tomake dekhley ami chinbo tumi o amake, er age eakdin eay kotha ta mone hoease, ajke Nasrin apa ke niea tomar lekha pore basi mone porlo. Nasrin apake ami personally jotto kom chini tar chea onek basi ami unake jani. Bangladesh namok desh e andolon jara koren/ bodlanor kotha jara basi basi bolen tader basirvag y chorcha ta nijer gore /chelemeya /swami ke badh diea koren, tay tader biswas ney je sottiy konodin kono progoti desh e shomvob.Nasrin apa chilen shey duy eakjon manusder eakjon jini ja bolten ta biswas korten o nije chorcha korten. Nasrin apa r motto olppo kisu manush y sudu eaxmple toyri korte perese , tay tomar lekhar jonno amar pokho thake ovinondon.
luna