লিখেছেনঃ মাহাথির আহমেদ তুষার

আপনার হাতে সময় থাকলে চলুন, একটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করি। ধরুন, আপনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে একটা বই লিখতে চান। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই যে কাজটা করতে হবে—পাঠকদের এটা দেখাতে হবে যে, এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটির দীর্ঘ যাত্রাপথে বিজ্ঞানীরা পরমাণুর অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র জগতটিকে কিভাবে দেখেছেন। আসবে থমসনের প্লাম-পুডিং মডেলের ইতিহাস, রাদারফোর্ড এর সোলার সিস্টেম এটম মডেল কিংবা বোরের এটম মডেলের ইতিহাস। এভাবেই এগুবে এই তত্ত্বটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ইতিহাস।

এবার ধরুন, আমি রাদারফোর্ড এর ত্রুটিপূর্ণ এটম মডেল দেখিয়ে পুরো কোয়ান্টাম তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে একটা বই লিখলাম। আপনি ব্যাপারটা কিভাবে নেবেন?

ঠিক এরকম কাজটাই করেছেন ডিস্কোভারি ইনস্টিটিউট এর লেখক জোনাথন ওয়েলস। তার লেখা Icons of Evolution বইয়ের পুরোটা আলোচনায় এ প্রবন্ধে না গেলেও। আজকে কথা বলবো সেই বইটির “Haeckel’s embryo”নামের একটা চ্যাপ্টার নিয়ে। সেখানে হ্যাকেলের বায়োজেনিক ল’ বা পূণরাবৃত্তি মতবাদ (Recapitulation Theory) এর মতো একটি সনাতন একটি পদ্ধতি দিয়ে ইভোলিউশনের ভ্রূণতাত্ত্বিক প্রমাণকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার হাস্যকর প্রচেষ্টা করেছেন খ্রিস্টান মিশনারীর মদদপুষ্ট এই লেখক। একই হাস্যকর চেষ্টায় শরীক হয়েছেন বাংলাদেশের একজন লেখক ও অনুবাদক, রাফান আহমেদ। তিনি ওয়েলসের বইটির বাংলা এডাপটেশন, “হোমো স্যাপিয়েন্স”প্রকাশ করেছেন ২০১৯ সালে। পুরো বইয়ের আলোচনা এক লেখায় সম্ভব না। আজকে আমাদের আলোচনা উক্ত বইটির “হ্যাকেলের ভন্ডামো”নামে একটা অধ্যায় নিয়ে। জোনাথন ওয়েলস এবং অনুবাদক রাফান আহমেদ পুরো একটা অধ্যায় খরচ করেছেন হ্যাকেলের একটা সনাতন মতবাদের খিল্লি করে। তাদের লেখায় উঠে এসেছে, পাঠ্যবইতে হ্যাকেলের মতবাদ পড়ানো নিয়ে উৎকন্ঠা, পাঠ্যবইতে বিবর্তনের এমব্রায়োলজিকাল এভিডেন্স অংশে পুরোনো ছবি যুক্ত করায়ও তারা অস্বাভাবিক রকম কালিক্ষয় করেছেন।

আমাদের এই আলোচনা যতোটা না এগুবে এ বই দুটির একটা নির্দিষ্ট অধ্যায়কে কেন্দ্র করে, তার চাইতেও বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বিবর্তন তত্ত্বে এমব্রায়োলজিকাল সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলির ওপর।
এবার এগুনো যাক।

—হ্যাকেলের বক্তব্য কি ছিলো আসলে?

হ্যাকেলের এই মতবাদের এসেন্স হচ্ছে, একটি জীবের ভ্রূণের পরিস্ফুটনকালে তার পূর্বপুরুষের ক্রমবিকাশের ঘটনাবলি পূণরাবৃত্ত হয়। এর ওপর ভিত্তি করে তিনি ছবিও এঁকেছিলেন। যেগুলি ১৯ শতকের নানান সীমাবদ্ধতায় ছিলো বেশ ত্রুটিপূর্ণ।

কিন্তু, আদৌ কি বিবর্তন তত্ত্বের আলোচনায় আমাদের হ্যাকেলের রেখে যাওয়া এই বায়োজেনিক ল’ দিয়ে Embryological Evidence ব্যখ্যা করতে হবে?
উত্তর হচ্ছে, “না!”

ঠিক যেভাবে আমরা রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল দিয়ে পরমাণুর গঠন ব্যখ্যা করার দরকার বোধ করি না, আমাদের হাতে এর চাইতেও শক্তিশালী তথ্য ও নিঁখুত ফলাফল আছে—এই ব্যাপারটাও ইক্সাক্টলি তেমনি।
বিবর্তন তত্ত্বের রূপরেখা এই ভ্রূণ পর্যায়েও কতোটা স্পষ্ট হয়, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে আরও শক্ত প্রমাণ আছে। আছে শত শত স্টাডি।

একটু ঝেরে কাশি, আধুনিক প্রমাণ হ্যাকেলের রেখে যাওয়া এই ভ্রূণের আকৃতি নির্ভর নয়। বিবর্তন তত্ত্বের আলোচনা এখন আর দৃশ্যমান হিসবে-নিকেশে বসে নেই। বিবর্তনের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম হিসেব-নিকেশ লুকিয়ে আছে আমাদের কোষের ভেতর।

ডেভেলপমেন্টাল আওয়ার গ্লাসের ব্যাপারটা অনেকটা এরকম— মাছ, উভচর, সরিসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীর ভ্রূণ বিকাশের কখন কোন পর্যায়ে কি কি জিন এক্সপ্রেস হয় তার একটা ম্যাপ প্রতিষ্ঠা করে দেখা গেছে এই ম্যাপ একটা hourglass গঠন অনুসরণ করে।

বিস্তারিত বলা যাক, আমাদের প্রায় সব প্রাণির দেহে দুই ধরণের জিন আছে। এক প্রকার জিন হচ্ছে আমাদের জন্য ইউনিক জিন। অর্থাৎ, এই জিনগুলি কেবল একটা নির্দিষ্ট প্রজাতি বা তার নিকটাত্মীয়দের মাঝেই থাকে। এগুলি কেবল তাদের জন্যেই ফিক্সড।

আরেক প্রকার জিন সব প্রাণিতেই কমন। তাকে বলে কনজার্ভড জিন(conserved gene)। যেমন, হক্স জিন ক্লাস্টার(Hox gene cluster) কিংবা ডিস্টাল লেস জিন—এদেরকে আপনি তারা মাছ থেকে শুরু করে সরীসৃপ, পাখি থেকে মানুষ অবধি প্রায় সব প্রাণির মধ্যেই পাবেন। ডিস্টাল লেস(Distal–less gene) জিনটি সামুদ্রিক পোকামাকড় থেকে শুরু করে, পাখি এমনকি মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনের জন্য দায়ী।

কনজার্ভড জিনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হচ্ছে, FoxP2 জিন।এই জিন প্রায় সকল স্তন্যপায়ীদের মধ্যে থাকে। জিনটি ২ হাজার টিরও বেশি অক্ষর বা কোডের লম্বা একটি তন্তু। আজকের দিনের মলিকিউলার বায়োলজি আর স্ট্যাটিসটিকসের মাধ্যমে এতোটা সূক্ষ্ম এপ্রোচ করা সম্ভব হচ্ছে যে, এই কনজার্ভড জিনের কোড থেকে বলে দেয়া যায় একটা প্রজাতি আরেকটা প্রজাতির কতোটা নিকটাত্মীয়। এই FoxP2 জিনের সম্পূর্ণ ২ হাজার ৭৬ পরিমাণ কোডের মধ্যে মানুষ আর শিম্পাঞ্জির পার্থক্য মাত্র ৯ টি কোডে!এবার একটু দূরবর্তী কোনো প্রাণির জিন, যেমন ইঁদুরের জিনের সাথে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া গেছে ১৩৯ টি কোডে।

দেখা গেছে, প্রাণিদের ভ্রূণ বিকাশের শুরুতে এবং শেষে সেই জিনগুলোর এক্সপ্রেশন ঘটে, যেগুলি কেবল একটা নির্দিষ্ট প্রজাতির জন্যেই ইউনিক। আবার ভ্রূণ ডেভেলপমেন্টের মাঝামাঝি এক জায়গায় খুব অল্প যে জিনগুলোর এক্সপ্রেশন ঘটে সেই জিনগুলি হচ্ছে কনজার্ভড জিন। অর্থাৎ যে জিনগুলি প্রায় সব প্রাণিতেই আছে। ভ্রূণ বিকাশের মাঝামাঝি পর্যায়ে মানুষ থেকে শুরু করে অক্টোপাস সবারই একই ধরণের জিনগুলির এক্সপ্রেশন ঘটতে থাকে।

আবার, ভ্রূণ বিকাশের শেষ দিকে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ইউনিক জিনগুলির প্রকাশ ঘটে।
ব্যাপারটা এরকম,

▪ ️ভ্রূণ বিকাশের শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন জিনের প্রকাশ ঘটে।

▪️ মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে এসে প্রায় সব প্রাণির মধ্যে সাধারণ জিন তথা অল্প যেগুলি conserved gene আছে, তাদের প্রকাশ ঘটে। সবারই একই জিন প্রকাশ পায়।
▪️ ভ্রূণ বিকাশের শেষদিকে আবারও ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন জিনের প্রকাশ ঘটতে থাকে।
এই যে প্রথম এবং শেষে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণিতে ভিন্ন ভিন্ন জিনের এক্সপ্রেশন কিন্তু মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে প্রায় সব প্রাণির ভ্রূণ বিকাশের রেখাটি একই বিন্দুতে এসে মিলে যায়, এই পুরো ব্যাপারটাকে Hourglass এর মতো মনে হয়।

সব প্রাণিদের জিন এক্সপ্রেশনের এই ম্যাপটি একটি আওয়ার গ্লাসের গঠন অনুসরণ করলো। ভ্রূণ বিকাশের মধ্যবর্তী অংশে সব প্রাণির জিন এক্সপ্রেশনের এই একাত্মতা কেবলই এক পূর্বপুরুষ থেকে আসার ফলে ঘটে।
[তথ্যসূত্র: Kalinka, A. T. et al. Gene expression divergence recapitulates the developmental hourglass model. Nature 468, 811–814 (2010).] (link:1)

এমনকি, আলোচ্য ব্যাপারটাকে আরও একটা সুন্দর পন্থায় ব্যখ্যা করা যায়। প্রতিটা প্রাণি একটা সাধারণ পূর্ব পুরুষ থেকে আসায় তাদের জীবনের শুরুটা সবার ক্ষেত্রেই এক। প্রাণিদের জীবন শুরু হয় নিষিক্ত ডিম বা জাইগোট থেকে। সেটা বিভক্ত হয়ে দুটো কোষ হয়, দুটো থেকে চারটা, চারটা থেকে আটটা। এভাবে একসময় সেটা গোল একটা বলের রূপ নেয়, সেটা হচ্ছে “মরুলা”। তারপর সেটা একসময় ফাঁপা বলের ন্যায় আকার ধারণ করে, যার নাম হয় তখন “ব্লাস্টুলা”। আপনি জানেন কি? এই পৃথিবীতে জীবিত প্রতিটা প্রাণিই জন্মের একসময় এই “ব্লাস্টুলা”পর্যায়ে থাকে। যেটা আপনার আপনার গায়ে বসা মশা হোক, কিংবা বিশালাকৃতির ডায়নোসর —সমুদ্রের তলদেশের তারা মাছ কিংবা আপনি। সবাই এ ধাপে একটা ফাঁপা বলের আকৃতিতেই ছিলো।
তারপর সাইটোপ্লাজমের ভিন্নতায় একই রকম দেখতে এই ফাঁপা বল থেকে কেউ হয় হাইড্রা, কেউ পিঁপড়ে আবার কেউ হয় বিশালাকার ডায়নোসর। এই সাইটোপ্লাজমের ভিন্নতা এসেছে বিবর্তনের ফলেই। কোন প্রাণির সাইটোপ্লাজম কেমন হবে, সেটা বলে দেয় ডিএনএ। ঠিক এখানটাতেই বিবর্তনের সূক্ষ্ম হিসেব-নিকেশ পাওয়া যায়। ডিএনএ থেকেই বোঝা যায়, আমরা প্রতিটা প্রাণি এসেছি স্পঞ্জ জাতীয় প্রাণি থেকে। একেবারে আদিম পরিফেরা—তারা যে আমাদের আত্মীয় সেটা বোঝা যায় জিনের পার্থক্য দেখে, আর এটা দেখে যে, আমাদের মতো তারাও জীবন শুরু করে ফাঁপা বলের মতো “ব্লাস্টুলা”থেকে। (“সায়েন্সভেঞ্চার:৪৬০ কোটি বছরের বিবর্তনের ইতিহাস”, নাঈম হোসাইন ফারুকী; প্রান্ত প্রকাশন; পৃষ্ঠা:৯৭–৯৮)

খুব বেশি প্রাসঙ্গিক না। তাও ব্যাপারটা উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করছি। স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পাখিরা যে আসলেই এক পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হচ্ছে স্তন্যপায়ীদের জিনোমে থাকা vitellogenin জিন। যেটা পাখিদের Yolk sac তৈরি করার জিন। আমাদের কোনো পূর্ব পুরুষের প্রজনন ডিম দেয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকলে আমাদের জিনোমেও vitellogenin জিন না থাকুক, এর ভগ্নাংশ হলেও থাকার কথা। আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৮ সালে তাই-ই পাওয়া গেছে। শুধু তাই না, অন্যান্য পাখিদের জিনোমের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে সেগুলির vitellogenin জিনের পাশে অন্যান্য প্রতিবেশী যে যে জিনগুলি আছে—মানুষেরও ঠিক সেই জিনগুলিই ভগ্ন vitellogenin জিনের পাশে আছে। একটুকুও পরিবর্তন নেই!

বিবর্তনের লম্বা এই যাত্রাপথে VIT gene আমাদের দেহে কার্যকরীতা হারিয়ে ফেললেও তার প্রতিবেশী জিনগুলি অন্যান্য কাজে নিযুক্ত ও সচল অবস্থায় পাখি, স্তন্যপায়ী, সরিসৃপ সহ প্রায় সব ভার্টিব্রেটদের জিনে একই হালে আছে(example: ELTD1 gene, SSX2IP gene, CTBS gene)। সব প্রাণিতে এমন নিখুঁত মিল থাকার পেছনে একটাই কারণ। সেটা হচ্ছে, “সাধারণ পূর্বপুরুষ”।
(Brawand, D. Wahli, W., &Kaessmann, H.(2008). Loss of egg yolk genes in mammals and the origin of lactation and placentation. PLoS Biology, 6(3), e63.) (link–2)

এবার পূণরায় আসি হ্যাকেল ও ওয়েলস–রাফানের বইয়ের কথায়।

হ্যাকেলের ড্রয়িংগুলি হয়তো কিছু ক্ষেত্রে বেশ অতিরঞ্জিত ছিলো, কিন্তু তিনি ভ্রূণ বিকাশের মাঝে ঘটা এই ব্যাপারটার একটা দৃশ্যমান সাদৃশ্যতা দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, আজকের দিনে মলিকিউলার বায়োলজি আর স্ট্যাটিসটিকসের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ম এপ্রোচ সম্ভব হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হ্যাকেল ঠিক থাকলেও তাঁর কাজ শত বছর আগেই সমসাময়িকদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এসেছিলো। সেই ১৯৭৭ সালে Stephen J. Gould এমব্রায়োলজি এবং ইভোলিউশন এর ইতিহাস নিয়ে লিখা Ontogeny and Phylogeny বইয়ে হ্যাকেলের মতবাদের কঠোর সমালোচনা করেন। ইভোলুশনারি বায়োলজিস্টরাই হ্যাকেলের কাজকে একসময় বিবর্তন তত্ত্বের আলোচনা থেকে সরিয়ে দেন। হ্যাকেলের মতবাদের ওপর দাঁড়িয়ে আজকের দিনে আর ইভোলিউশনের আলোচনার যে কোনো দরকার পড়ে না তা এতোক্ষণে হয়তো বুঝতে পারেছেন আপনারা।

তবে হ্যাঁ, হ্যাকেলকে ঠিক যেভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন রাফান আহমেদ, ঠিক ততোটা অবজ্ঞার প্রাপ্য নন তিনি। কিংবা হ্যাকেলের কাজ “ভন্ডামো”ট্যাগ পাওয়ার মতো তেমন কোনো অপকর্মও ছিলো না। রাফান আহমেদ তার এই হোমো স্যাপিয়েন্স বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় যে মাইকেল রিচার্ডসনের ১৯৯৮ সালের মতামত নিয়ে গালিগালাজ করেন— সে মাইকেল রিচার্ডসনই ২০০২ সালে এসে বলেন, “…on a fundamental level, Haeckel was correct.”
(M. K. Richardson and G. Keuck, “Haeckel’s ABC of evolution and development”, Biol. Rev. (2002) 77, 495–528)

রাফান আহমেদ ২০১৯ এ বসেও জানতেন না, হ্যাকেলের তীব্র সমালোচক রিচার্ডসন যে ২০০২ একটা সার্টেইন পয়েন্টে হ্যাকেলকে মেনে নিয়েছিলেন। রাফান আহমেদের এই পুরোনো তথ্য চয়নের কারণ হচ্ছে, তিনি যে বইটার বাংলা ভাষায় এডাপ্ট করলেন, সেটা প্রকাশিতই হয়েছে ২০০২ এর জানুয়ারিতে।

যাইহোক, রাফান আহমেদ একই প্রবন্ধে গাজী আজমলের লেখা উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের “জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন”অধ্যায়ের “ভ্রূণতত্ত্বীয় প্রমাণ”অংশের সমালোচনা করে বলতে চেয়েছেন, পাঠ্যবইগুলো হ্যাকেলের বায়োজেনিক ল’ কে বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
কিন্তু, একটা মতবাদের ব্যাপারে উল্লেখ থাকা মানেই যে সেটার বন্দনা করা হয় না, সেটা তিনি বুঝেন কিনা জানি না। আপনাদের জন্য বইয়ের সে পৃষ্ঠার ছবিখানি দিলাম। হ্যাকেলের মতবাদকেই ইভোলিউশনের ভ্রূণতাত্ত্বিক প্রমাণ বলা হয়েছে, এমনটা বইয়ের কোথাও ডিক্লেয়ার করা হয়নি। একট মতবাদ হিসেবে কেবল আলোচ্য অংশের শেষদিকে উল্লেখ করা হয়েছে

মনোযোগ দিন…

হ্যাঁ, পাঠ্যবইয়ে পুরোনো ছবি ব্যবহার করা ঠিক হয় নি। কিংবা আলোচনাটা এতো সংক্ষিপ্ত না হয়ে আরেকটু দীর্ঘ হতে পারতো। অথবা, হ্যাকেলের মতবাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এক লাইন লিখতে পারতো(যদিও প্রয়োজন ছিলো না)। কিন্তু, এটুকুর জন্য পুরো গালমন্দ ভর্তি একটা চ্যাপ্টার লেখার কোনো অর্থ নেই(as wells did)।
আর, পাঠ্যবইয়ে ভুল ছবি ব্যবহার নিয়ে কিংবা হ্যাকেলের সনাতনী মতবাদ নিয়ে রাফানেরা এতোই যখন কনসার্ন ছিলেন, তবে হ্যাকেলকে গালমন্দের পেছনে হাজারখানেক বাক্য ব্যয় না করে কিছু বাক্যব্যয় কনজার্ভড জিন আর আওয়ার গ্লাসের আলোচনায় না হয় করতেন। আই রিপিট—যেখানে রাফানেরা পুরোনো ছবি ব্যবহার করায় ; স্রেফ হ্যাকেলের মতবাদের কথা উল্লেখ করায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলতে পারলেন, এতো কালিক্ষয় করলেন, সেখানে আধুনিক মলিকিউলার বায়োলজি বিবর্তন তত্ত্বের ভ্রূণতাত্ত্বিক প্রমাণকে কতো শক্তপোক্ত করেছে, সেটুকু কেন লিখেন নি?

রাফান আহমেদ, আপনাদের কনসার্ন আসলে কোনদিকে? পাঠ্যবইয়ে ভুল ছবি ব্যবহারের দিকে নাকি মানুষকে হ্যাকেলের ১০০ বছর আগের সনাতনী মতবাদের গপ্পো শুনিয়ে এটা বোঝানোর চেষ্টা কর যে, ইভোলিউশনের এমব্রায়োলজিকাল প্রমাণের জায়গাটা নড়বড়ে?

সূক্ষ্ম চাল বৈকি!

নিজেদের এই বায়াসড বইগুলিকে পক্ষপাতহীন বিজ্ঞানের বই দাবি করাটা যে হাস্যকর ব্যাপার, তা কি টের পান?
এ মিসলিডিং বইটার ছবির ওপর ক্রস থাকার কারণ হলো, বইটার পরতে পরতে— প্রতিটা অধ্যায়েই চরম পক্ষপাতদুষ্ট সব কথাবার্তা লিখে রাখা হয়েছে। একটু একটু করে পুরো বইটার সাথেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। এমনভাবে পরিচয় করানো হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ বাজারের রঙচঙে এসব বইকে বিবর্তন তত্ত্বের মতো একটা প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।

……
▪️link:1– https://www.nature.com/articles/nature09634; এই আর্টিকেলটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে
▪️link::2– https://journals.plos.org/plosbiology/article?id=10.1371/journal.pbio.0060063
আরও দেখতে পারেন— Freyer, C., &Renfree, M.B. (2009). The mammalian yolk sac placenta. Journal of Experimental Zoology Part B: Molecular and Developmental Evolution, 312(6), 545–554.
এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন এখান থেকে