লিখেছেন: মাহিন মাহমুদ
ধর্মের বিরুদ্ধে অনেকেই অনেক লেখা লেখেন, কিন্তু অধিকাংশ লেখাতেই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। আসলে ধর্মের উৎপত্তির কারণ যদি আমরা খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে কেবল ধর্মগ্রন্থের লাইন তুলে দিয়ে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা করে শত শত পাতা লিখলেও ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াইটা জেতা সম্ভব নয়। তাই দরকার ধর্মের একটি বস্তুবাদী বিশ্লেষণ।
পৃথিবীকে বাস্তবসম্মতভাবে দেখা, কোন রুপ অলৌকিক ও অবাস্তব বিষয় দিয়ে পৃথিবীকে বিশ্লেষণ না করাই হচ্ছে বস্তুবাদ। আর ভাববাদ হচ্ছে বাস্তবের বিকৃত উপস্থাপনা। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ভাববাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখে থাকে।
বিষয়গত বা বাস্তববাদী জ্ঞান থেকে বিপরীত ধারায় ঐতিহাসিক বিকাশের মধ্যে ধর্ম দেখা দিয়েছিল। ধর্ম ছিল বাস্তবতার একটা অসম্ভব, আজগুবি ও বিকৃত প্রতিফলন, বাস্তবতার বিকৃত ব্যাখ্যা। বিজ্ঞানের এত বিপুল অগ্রগতি সত্ত্বেও সেই ধর্ম আপাতত টিকে আছে।
ধর্মের মর্ম বুঝতে হলে স্পষ্ট করে তুলে ধরা দরকার কেন ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল, আর সমাজ জীবনে আর জীবনের বিকাশে এর ভূমিকা কি।
ধর্ম কোন দৈব প্রত্যাদেশ থেকে উৎপন্ন হয়নি, কোন অলৌকিক জগতের প্রতিফলনও নয়। মানুষের নানা ধরনের চেতনা রয়েছে, ধর্মও সামাজিক মানুষের চেতনায় বাস্তবতার একটা প্রতিফলন, ধর্ম কোন স্বর্গীয় নয় পার্থিব বস্তু। কোন অর্থেই ধর্ম মানুষের সহজাত নয়। আদিম মানুষের কখনও কোন নিহিত ধর্মীয় চেতনা বা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক মনোবৃত্তি ছিল না। গত শতকে আদিম ইতিহাস সম্বন্ধে একজন নেতৃস্থানীয় ফরাসী অধ্যয়নকারী গ্যাব্রিয়েল মতিরলে প্রমাণ করেছিলেন যে, প্রত্নপ্রস্তরযুগের শুরুর দিকে আদৌ কোন রকমের ধর্মীয় উপাদান ছিল না। (Mortillet, 1883)
কার্ল মার্ক্স-এর পূর্বে কোন কোন বস্তুবাদী খুব সরলভাবেই বলেছিলেন, অজ্ঞ ও সরলবিশ্বাসী মানুষকে ধোঁকা দিতে গিয়ে মুষ্টিমেয় ধাপ্পাবাজ কিছু লোক ধূর্ততার সাথে ধর্ম-কে খাড়া করেছিল, এটা আংশিক সত্য কিন্তু সম্পূর্ণ সত্য নয়। অজ্ঞতা ধর্মের একটা মিত্র আর ধাপ্পাবাজি ধর্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে ধর্মের আসল উৎপত্তিস্থল অন্যত্র।
মানুষ যখন শ্রমের ভিতর দিয়ে বহিঃপ্রকৃতি থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল অথচ তখনও মোটের উপর প্রায় ষোল-আনাই নির্ভরশীল ছিল প্রাকৃতিক ভৌত শক্তিগুলোর উপর, ঠিক তখনই ধর্মের দেখা দিয়েছিল।
ধর্ম দেখা দেয় উৎপাদন শক্তির বিকাশের একটা নিম্ন পর্যায়ে,- উৎপাদনী শক্তি বিকাশের সর্বনিম্ন পর্যায় সমেত অন্য কোন পর্যায়ে ধর্মের উদ্ভব ঘটতে পারে না। ধর্মের উদ্ভবের সাথে উৎপাদন শক্তির সরাসরি সম্পর্ক আছে। যে কোন নির্দিষ্ট কাল পর্যায়ে উৎপাদনী শক্তি বিকাশের মাত্রা থেকে বোঝা যায় প্রকৃতির উপর মানুষের কর্তৃত্ব কতটা শুধু তাই নয়, আরও বোঝা যায় প্রকৃতির উপর মানুষের নির্ভরশীলতা কতটা। কার্ল মার্কস লিখেছিলেনঃ ‘প্রযুক্তিতে প্রকাশ পায় প্রকৃতির সাথে মানুষের মোকাবিলা করার প্রণালী- যার নাম উৎপাদনপ্রক্রিয়া। মানুষ এই উৎপাদনপ্রক্রিয়া দিয়ে নিজেদের জীবনধারণ করে, আর এইভাবে উৎপাদনপ্রক্রিয়া খুলে ধরে মানুষের সামাজিক গঠনপ্রণালী।‘(Marx, 1965)
এঙ্গেলস বলেছেন,’সমস্ত ধর্মই, মানুষের মনে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের নিয়ামক বহিঃশক্তিগুলোর উদ্ভট প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়- মানুষের মনে পার্থিব শক্তিগুলো অলৌকিক শক্তির রুপ ধারণ করে।‘ (Engels, 1969)
গোড়ায় প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে মানুষ অলৌকিক বলে ভাবত না। প্রাকৃতিক ব্যাপারগুলোকে, বিশেষত যেসব প্রাকৃতিক ব্যাপার মানুষের জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে মূর্তিমান হিসেবে কল্পনা করে মানুষের জীবনে সেগুলোর সচেতন প্রভাব বিস্তার করে বলে ধরে নিত। যেসব রহস্যময় প্রাকৃতিক ভৌত শক্তিগুলোকে মানুষ বুঝতে পারত না, যেগুলোর বিরুদ্ধে মানুষ একেবারেই অসহায় ছিল, সেই শক্তিগুলোকে মানুষ তাঁর কল্পনায় মঙ্গলকর কিংবা অমঙ্গলকর, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব, দেব- দেবী, দেবদূত , শয়তান, ইত্যাদিতে রুপান্তরিত করে।
কাজেই আদিম ধর্মীয় চেতনা হল প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বর্বর মানুষের অক্ষমতাবোধের একটা প্রতিফলন।
মূলত, প্রাকৃতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর আধিপত্যই তখন ধর্মের প্রধান উৎপত্তিস্থল। মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সামাজিক শক্তিগুলোকে মোকাবেলা করতেই মানুষ ধর্মকে বেছে নেয়। ধর্ম হল মেহনতি মানুষের অক্ষম অবস্থার প্রতিফলন।
সমাজ, পরিবার ইত্যাদিতে ধর্ম মানুষের আচরণ আর কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন আইনকানুন ও বিধিনিষেধ দিয়ে যেমন- ট্যাবু, ধর্মীয় ফতোয়া এবং শরিয়া, শাস্ত্রীয় বিধান ইত্যাদি দিয়ে এবং এগুলো হাজির করা হয় বিধাতার তরফ থেকে, কাজেই সেইগুলো অলঙ্ঘনীয় বলে গন্য হয়।
মানুষের ক্রিয়াকলাপের উপর এই ধর্মীয় নিয়মতন্ত্রকে শোষক শ্রেণীগুলো তাদের আধিপত্য নিরাপদ করার জন্য ব্যবহার করে।
ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অতীতের অনেক বস্তুবাদী লেখকরাই বহু সংগ্রামী এবং প্রতিভাদীপ্ত নাস্তিকতাবাদী রচনা সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু ইতিহাস সম্বন্ধে ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ধর্মের সামাজিক উৎপত্তিস্থলে তাঁদের দৃষ্টি পড়েনি, তাই তাঁরা ধর্মকে পরাজিত করার কোন পথ তাঁরা দেখাতে পারেননি।
গ্রন্থপঞ্জি
১. Mortillet, G. (1883). Le Prehistorique. Paris.
২. Marx, K. (1965). Capital (p. 372). Moscow: Progress Publishers.
৩. Engels, F. (1969). Anti-Duhring (p. 374). Moscow: Progress Publishers.
আমি কি কিছু কথা বলতে পারি? কথার জবাব যদি ইমেইলে দেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনি যদি কোরআন এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে অস্বীকার করেন তাহলে প্রথমত ২টি জিনিস ঘটবে।
১। আপনি যা চিন্তা করবেন তার সবই হবে এই মহাবিশ্বের মধ্যকার। এবং আপনি কাজ করবেন ও উদ্যোগ নিবেন এই মহাবিশ্বের মধ্যকারই কোনো কল্যাণের জন্য। তাতে হয় আপনার জীবন অথবা অন্য কারো জীবন ভালো হবে।
২। আর যা হবে তা হলো আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না মৃত্যুর পর আপনি কি দেখতে চলেছেন।
আমি আপনার কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই।
ধর্ম যদি মিথ্যা বা বস্তুবাদ থেকে উৎপত্তিই হয়ে থাকে তাহলে কোরআন যা কিনা ১৪০০বছর আগে একত্রিত করা একটি বই তা কিভাবে এত নির্ভুল হতে পারে? যাতে কিনা বর্তমান বিজ্ঞানের অনেক বিষয় উল্লেখ হয়েছে? অবশ্যই তখন তা মানুষ জানত না? এখন এটা ত আর হতে পারেনা যে পুরো ব্যাপারটাই কাকতালীয়। কারণ কোরআনের যেসব জায়গায় এই বিষয়গুলো বলা হয়েছে সেসবের বেশিরভাগেই জোড় দেওয়া হয়েছে।
বাই দ্যা ওয়ে, আপনি হয়ত ইসলাম যা কিনা আপনার জন্মগত ধর্ম সে সম্পর্কে আসল জ্ঞানটুকু রাখেন না। আমি কিন্তু বিশ্বাসের কথা বলিনি। আমি বলেছি জ্ঞানের কথা। আমি অন্ধবিশ্বাসকে ঘৃণা করি। বরং আমি তাতে বিশ্বাস করি যা পুরোপুরি যৌক্তিক যদিও তা অদেখা।
প্রথমেই বলে রাখি, আপনি জেভাবে বললেন, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমি আসল জ্ঞানটুকু রাখি না। এটি একধরনের ব্যাক্তিগত আক্রমণ। আমি ইসলাম নিয়ে কোন কথা প্রবন্ধে বলিনি। কিন্তু আপনি ধরে নিলেন, আমি ইসলাম-কে উদ্দেশ্য করেই কথা বলেছি। আপনারা এত ইনসিকিউর ফিল করেন কেন? আমার মত চুনোপুঁটির কথায় কোন ধর্মের কিছু আসবে যাবে না।
আপনার প্রশ্ন গুলির উত্তর ইতিমধ্যে অনেকবার মুক্তমনায় করা হয়েছে, এবং এর উত্তর গুলি মুক্তমনায় সব দেয়া আছে। আপনি দয়া করে মুক্তমনা ই-গ্রন্থাগারে যান, সেখানে ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম- সংঘাত নাকি সমন্বয়’ নামে একটি ই-বুক রাখা আছে যেখানে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে অনেক কথা লেখা আছে, আমার লেখার চাইতেও উন্নতমানের। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এই ই-বুকে পাবেন। নতুন করে উত্তর দেয়া আমার কাছে বাহুল্য এবং সময় নষ্ট বলে মনে হচ্ছস্তপ্লিজ ই-বুক তা পড়ুন।
ধন্যবাদ।
মাহিন মাহমুদ, আপনি সময় পেলে ‘নারী এবং সমাজ’ নিয়ে নিবন্ধ এই ব্লগে লিখে ফেলুন, একই সঙ্গে তরুণদের বখে যাওয়া নিয়েও লিখবেন আশা করি।
@ মাহিন, আমার লিখতে একটু ভুল হয়েছে। শোষক বলতে সবাই নয়। কেউ কেউ ধর্ম সৎ ভাবেই মানে। অনেকে ভয় পেয়ে, লোভে পড়ে মানে।
ঠিক কথা বেশিরভাগ মানুষ বস্তুগত ভাবে ধর্ম মানে। কারন সে সুবিচার পায় না। সুবিচার পেলে এগুলোর অনুশীলন কমবেই।
বাকি থাকলো আধ্যাত্মিক ধর্ম।
খুব সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ।ধন্যবাদ আপনাকে
আমার মনে হয় ধর্মের দুটি দিক আছে। একটি ব্যবহারিক দিক অন্যটি আধ্যাত্মিক দিক।
ধর্মের উৎপত্তি কিভাবে সেটা মোটামুটি বোঝা গেলেও ধর্ম এখনও কেন ও কিভাবে টিঁকে আছে এটা বোঝা অতটা সহজে সম্ভব না। কারন মানুষ তার অন্তরতম স্থানে কাকে যেন খোঁজে! ধর্মকে যারা দুর্বল মানুষের উপর শোষন টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করে তাদেরকে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু যারা শোষক তারাও মন থেকেই ধর্মকে ধারণ করে। এর কারন শুধু মাত্র বস্তুবাদী দর্শন দিয়ে একজন মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণ বুঝতে পারে না। শুধু মাত্র বস্তবাদী দর্শন মানুষকে মানসিক তৃপ্তি দেয় না। তাই তার অন্বেষণ চলতেই থাকে। আজও সেই নিজেকে জানার অন্বেষণ থেমে নেই।
দ্বিতীয় কারন হল আজও দুনিয়ায় শোষণ যন্ত্র টিঁকে আছে শুধু মাত্র ধর্ম দিয়ে নয়। অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় দিয়েও শোষণ টিঁকে আছে। যদি এমন হতো যে ধর্মকে শেকল বন্দী করলেই শোষনের অবসান হবে তা হলে কাজটা সহজ হতো। তা তো নয়। তাই মানুষ তার হাহাকার থেকে মুক্তি পেতে ধর্মকে আঁকড়ে ধরবেই।
শোষনের হাতিয়ার হিসাবে ধর্মকে ব্যবহার শেষ হলে তার পরেই তার প্রকৃত আধ্যাত্মিক অন্বেষণ শুরু হবে। এই আধ্যাত্মিক অন্বেষণের শেষ কোথায় তা ভবিষ্যৎ বলবে।
১) ধর্মের ব্যবহারিক দিক বা বস্তুগত দিকটি সবচাইতে বেশি দেখতে পাবেন পৃথিবীতে। মানুষ জৈবিকভাবেই বস্তুবাদী, অধিকাংশ মানুষই বস্তুর প্রতি আসক্ত, ধর্মের বস্তুগত দিকটি তাই মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়। খুব কম মানুষই আধ্যাত্মিক। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, গৌতম বুদ্ধ প্রভৃতি আধ্যাত্মিক মানুষ পৃথিবীতে হাতে গুনতে পারবেন। বাদ বাকি সব ধার্মিক মানুষই বস্তুগত লোভে ধর্ম পালন করে। স্বর্গে অপ্সরা, মদ ও সীমাহীন আরাম- আয়েশের লোভে মানুষ ধর্ম পালন করে, খুব কম মানুষই মনকে শান্ত রাখতে ধর্মের কাছে জান। বাংলাদেশের ৯৯% নামাজি ব্যাক্তি আধ্যাত্মিক নন, এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, তাঁরা কেবল পরকালের বস্তুগত শাস্তি ও পুরস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্ম পালন করেন।
২) বস্তুবাদী দর্শন দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় তা কিন্তু আমি এই লেখাতে বলিনি, এটি একটি ক্ষুদ্র তত্ত্ব মাত্র। তবে ধর্মের উৎপত্তি যে অনিয়ন্ত্রিত প্রাকৃতিক ও সামাজিক শক্তিকে সন্তুষ্ট করতে উদ্ভব হয়েছিল এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। যারা বিজ্ঞানের যুগেও ধর্মে আস্থা রাখেন তাঁদের এই ধার্মিকতার মূল কারণ মুলত সামাজিক, যেমন- বাংলাদেশে কোন হত্যা বা ধর্ষণের খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন দেখবেন এর নিচে কমেন্ট সেকশন এ দেখতে পাবেন মানুষ শুধু এই ধরনের কমেন্ট করে, ‘শরিয়া আইন হলে দেশে এই ধরনের অপরাধ আর ঘটবে না’, ‘আল্লাহর আইন রেখে মানুষের আইন রাখাতেই এত হত্যা হচ্ছে’, ‘ইসলাম পালন না করাতেই এত ধর্ষণ হচ্ছে’। আপনি এই মন্তব্যগুলিতে কি কোন আধ্যাত্মিক অভাববোধ খুঁজে পাচ্ছেন? মোটেও না। মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না বলেই দিন দিন মৌলবাদের দিকে ঝুঁকছে যার সাথে আদ্যাত্মিকতার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। সামাজিক ন্যায়বিচার না পাওয়া কি আধ্যাত্মিক কারণ? এটি তো বস্তুগত অভাববোধ।
শোষকরা যদি সত্যি আধ্যাত্মিক হতেন তাঁরা কোন দিন অন্যায় করতে পারতেন না। উদাহরণ হচ্ছে মারকাস অউরেলিয়াসের মত রাজা যিনি একজন দার্শনিক। আর পৃথিবীর সব মানুষ যদি এতই আধ্যাত্মিক হত তাহলে পৃথিবীতে অন্যায় বলে কিছুই থাকত না, সবাই সাধুসন্ন্যাসীর মত জীবন-যাপন করত।
মাহিন মাহমুদ আপনি পুরোপুরি ঠিক বলেছেন; আপনার অনেক মেধা আছে; আমি আপনার নারী সম্পর্কিত মতামত-অভিমত পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি; তাছাড়া বাংলাদেশের সমাজে কিশোর-তরুণরা কেন বখে যায় এগুলো নিয়েও লিখবেন আশা করি, কারণ বখাটে ছেলেরা নারীস্বাধীনতা বিদ্বেষী হয়।
আপনার উৎসাহ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ, অভিজিৎ রায়ও আগে এভাবেই সবাইকে উৎসাহ দিতেন। আমার আফসোস ওনার কাছ থেকে কোনদিন রিপ্লাই পাওয়া হল না।
আচ্ছা বাংলা ব্লগে বিশেষ করে মুক্তমনায় যে হারে পাঠক ও লেখকের সংখ্যা কমছে, ভবিষ্যতে মুক্তমনা কি আদৌ সক্রিয় থাকবে? পুরনো অনেক লেখকই লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, নতুন লেখক তেমন নেই। মুক্তমনা ব্লগের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আপনার কি অভিমত?
মুক্তমনা ব্লগ থাকবে, তবে ের পাঠক সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে – এই আরকি; অভিজিৎ রায় মারা দাদা নেই কিন্তু তার পত্নী রাফিদা আহমেদ বন্যা দিদি আছেন, তিনি চালাবেন এই ব্লগটি। হুমায়ুন আজাদের ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ উপন্যাসটি পড়েছেন আশা করি এবং আপনি বাংলাদেশের সমাজে চলা প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে নিবন্ধ লিখবেন – এই বিষয় নারী সম্পর্কিত নিবন্ধতেই যোগ করে দিয়েন।
যারা শোষক তাঁরা মন থেকে ধর্ম ধারণ করে এটা কি আপনি জেনে বুঝে বললেন? ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ যখন হয়েছিল তখন পোপ কোন আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণায় জেরুজালেম দখল করতে গিয়েছিলেন? একটু ইতিহাস পড়ে দেখুন, এটা সম্পূর্ণ আধিপত্যের যুদ্ধ ছিল। কারণ দশম-একাদশ শতাব্দীর দিকে মুসলিমরা ধর্মের নামে যুদ্ধে ইউরোপের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, ইউরোপ-এ মুসলিমরা যাতে এগোতে না পারে তাই জেরুজালেমকে দখল করে সেটাকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে নিয়েছিল। নয়তো ইসরায়েলের মত এত অনুরবর গুরুত্বহীন একটা ছোট্ট জায়গা দখল করার কোন মানে হয় না।
ধন্যবাদ মুক্তমনাকে আমার লেখাটি প্রকাশ করার জন্য। এটি আমার জন্য সম্মানজনক ব্যাপার যে আমার প্রিয় ব্লগে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তমনা শুধু ব্লগ নয়, আমার কাছে একটি আবেগের নাম। ২০১৩ সাল থেকেই মুক্তমনার পাঠক।
মাহিন মাহমুদ, আপনাকে ধন্যবাদ, ধর্ম বিসয় নিয়ে লিখার জন্য; আপনি নারী নিয়ে লিখলে খুশী হতাম আরো। যাই হোক যা লিখেছেন ভালোই। আপনি ট্যাবুর কথা ঠিকই বলেছেন; হ্যাঁ, সত্য কথাই সমাজ, পরিবার এগুলোতে ধর্মীয় বিধানের কিছুটা হলেও প্রভাব থাকবেই।
আসলে ধর্ম নিয়ে লেখার জন্য অনেক আগে থেকেই হাত নিশপিশ করছিল!! তাই লিখলাম, যদি রেফারেন্সগুলো ভুলে যাই। নারী নিয়েও লিখব। আসলে মাথায় অনেকগুলি লেখা একসাথে ঘুরছে যেমন- মুক্তমনা নিয়ে আমার স্মৃতিচারণমূলক লেখা, যুক্তিবাদ এবং ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং কিভাবে ডেভেলাপ করা যায়, ধর্মের উদ্ভবের পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস নিয়ে একটি সিরিজ ইত্যাদি আরও অনেক লেখা মাথায় ঘুরছে কিন্তু সময়ের অভাবে লিখতে পারছিনা। আসলে একাডেমিশিয়ান ছাড়া অন্য কারও পক্ষে লেখালেখির সময় বের করা মুশকিল। আমার দুর্ভাগ্য যে আমি একাডেমিক লাইনে যেতে পারলাম না, অনার্সের রেজাল্ট তেমন ভাল না।
আপনি লিখুন লিখুন; তাড়াতাড়ি যে লিখতে হবে এমন নয়; তবে নারীসমাজ, বখাটেপনা , পশ্চিমি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ (বাঙ্গালি সমাজে অনুপ্রবেশ) এগুলো নিয়ে যদি লিখেন তাহলে আমি উপকৃত হবো; আপনার কয়েকটি মন্তব্য এবং এই নিবন্ধ পড়ে আপনাকে আমার মেধাবীই মনে হচ্ছে; শুভ কাননা রইলো এবং আবারো ধন্যবাদ।