বিজয়ের এই মাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে, মুখ ভেঙে দিয়েছে, হাত ভেঙে ফেলেছে। ওদিকে, মোল্লাদের আখড়া গড়া হয়েছে, মুখ উজ্জ্বল হয়েছে, হাত লম্বা হয়েছে। বিজয়ের মাসে আজ কারা বিজয়োল্লাস করছে আমার প্রিয় জন্মভূমিতে?

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

প্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পর বেশ ক বছর চারটা মোল্লাও একসাথে হয়ে হাঁটতো না, ভয় পেত, রাজাকার ভেবে নাগরিক যদি পেটায় এই ভেবে। অথচ স্বাধীনতার ঊনপঞ্চাশ বছর পরে এখন দাঁড়ি টুপি হিজাব ছাড়া পথ চলতে সাধারণ স্বাভাবিক নাগরিক ভয় পায়, নাস্তিক কিংবা বেপর্দা ভেবে মোল্লারা মারবে না’কি এই ভেবে।

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

এমন হবার কথা ছিল কি? ছিল না। যে সব দেশ নেতাদের কাছে কোনমতে নাগরিক তাদের দেখভাল করবার দায়িত্ব দিয়েছিল তারা গদি রাখতে গিয়ে নাগরিকদেরই বেচে দিয়েছে মোল্লাদের কাছে। কি আঁতাত!

মোল্লাগন আমাদের জন্মভূমিতে আল্লার আইন, শরিয়া আইন চায়, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ওদের এই চাওয়া থামবার নয়, কারণ পুরো দেশে, বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত থামাথামি যে নেই, কোরানে সেইরকম নির্দেশই রয়েছে। শফি তেতুল মোল্লা হেফাজতিদের যত দোষই ধরেন, কোন লাভ নেই। ওরা থামতে পারবে না। কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে খাল কাটা এইসব কুমির নাগরিকদের খেয়ে ফেলবে। দায় কাদের বুঝেনই তো, নাগরিক যাদের দেখভাল করবার দায়িত্ব দিয়েছিল, তাদের। দেশের আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কালো আইনগুলো বাতিল ও দেশ চালকদের যথাযথ জ্ঞানশিক্ষা ও সদিচ্ছা ছাড়া এমন চলতে থাকলে দেশের আইন ধ্বংস হয়ে যাবে। যায়গা করে নেবে বর্বর শরিয়া আইন। গদি বাঁচাতে মোল্লাদের ইচ্ছাই যদি সরকারের ইচ্ছা হয় তা’হলে বাংলাদেশ নামের যে স্বাধীন সার্বভৌম একটি সুন্দর দেশ ছিল সেইটির নাম ছাড়া আর কোন কিছুই থাকবে না, সুস্থ ভাবনার, প্রগতির কোন স্বপ্নই আর বাঁচবে না। শফি মোল্লার কথামত চলতেই হবে দেশের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের। গুলিস্তানের চৌরাস্তায় বেপর্দা নারীদের চাবকে ছাল তোলা হবে। এখনো সময় আছে মোল্লাদের থামান, আর মাথায় চড়াবেন না। ঠিকাদারগণ, ক্ষমা প্রার্থনা করুন, সুনাগরিক গড়ুন।

ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের শুরুতে চব্বিশ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছিল। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশপ্রেমে তাঁদের অবদান ছিল প্রশ্নাতীত। তখন ধর্ম ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। হাইকোর্ট তাদেরকে সম্মানের সাথেই জামিনে মুক্ত রেখেছিল। কুখ্যাত কিছু যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকি বিচার হয়েছিল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাক্রান্ত আন্দোলনকারীরা প্রত্যেকে নাগরিকের চোখে ছিল এক একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক। আজকের কওমি মাতা তখন ছিলেন বিরোধী দলের প্রধান। তিনি তখন মোল্লা রাজাকারদের সাথে মাথা নোয়ানো চুক্তি করেন নি। নাগরিক তখনও দাঁড়ি-টুপি হিজাবগ্রস্ত হয়নি। মোল্লাদের সাহস হয়নি তখনো দেশ কি ভাবে চলবে তা ঠিক করে দেবার।

হেফাজত কট্টর মোল্লাদের ইসলামী আন্দোলনের এই পর্যায়ে মাত্র দু’জন কুখ্যাত নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশপ্রেমের বিরোধী। এরা ধর্ম ব্যবসা করে। ওরা কি জামিনে মুক্ত হয়ে যাবে? কুখ্যাত কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে অথচ তাদের লাখো চ্যালারা এখন হুমকি দিয়ে বিখ্যাত। সম্ভাব্য রাষ্ট্রদ্রোহের আসামি এই সব কুখ্যাত ইসলামী আন্দোলনকারীরা লজ্জাষ্কর ভাবে নাগরিকের চোখে এক একজন আদর্শ ইসলাম প্রেমিক। এরকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অথচ কওমি মাতা এখন দেশের প্রধান, বিরোধী দলের নয়। মোল্লা রাজাকারদের কাছে তিনি দুঃখজনক ভাবে মাথা নুইয়েছেন। নাগরিক এখন দাঁড়ি-টুপি হিজাবগ্রস্ত। মোল্লাদের সাহস হয়েছে দেশ কি ভাবে চলবে তা ঠিক করে দেবার।

আমি একটি কিশোরের চোখ দিয়ে বিজয় দেখেছি। বিজয় মাসের সবগুলো দিনে রক্তেস্রোতে বান ডাকা তুমুল বিজয়োল্লাস অনুভব করেছি। উদযাপন করেছি। জয় বাংলা চিৎকারে গলা ভেঙেছি। এখন কেন সেই বিজয় হুঙ্কার শুনতে পাই না? কেন এখন রাজাকারদের ওয়াজি হুঙ্কার শুনতে হয়। সাধারণ নাগরিকের বিজয়ের হাত ভেঙে দেবার কেন সাহস পায় মোল্লারা? কোথাও যেন কেউ নেই। ‘তুই রাজাকার’ বলা একটা টিয়া পাখিও নেই।

এখন বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর মুখ হাত ভেঙে দেওয়া হয়।