জাসদ, সমাজতন্ত্র, রব জলিল করা কবি আল মাহমুদ সারা জীবন সুবিধাভোগী ছিলেন। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও বঙ্গবন্ধু তাকে শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক পদ দেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাকশালের সদস্য ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা উপন্যাসও রচনা করেন, নাম- “কাবিলের বোন”। এরপর জিয়া ক্ষমতায় আসলে তার সেখানেও নারিকেলের মতন মিশে যান! জিয়ার নামে একটি গল্প লেখেন “তৃষিত জলধি”। এরশাদের জন্যেও নাকি কবিতা লিখতেন তবে এটা প্রমাণ করার উপায় নাই যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরা এটা স্বীকার না করেন। তবে এরশাদের সমর্থক ছিলেন তাই এরশাদ থেকে গুলশানের প্লটও পেয়েছেন। আর শেষ বয়সে জামাতের ভাতা পেয়ে আবার তাদের দলে পল্টি দেন।

সেই হিসেবে নির্মলেন্দু গুণ মানুষ হিসেবে অনেক সৎ। তিনি সারা জীবন আওয়ামী লীগের সাথেই ছিলেন। ১৫ অগাস্টের পর তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতাও লিখেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা মূল কারণ সম্ভবত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা।

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া ছেড়ে দেই, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনারও বিয়ে হয়ে যায় পদার্থবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। শেখ মুজিব তখন জেলে। বোস প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরী ঘটকের দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা কিছুটা অহংকারী ছিলেন। শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁর অহঙ্কারও ক্রমশ বাড়ছিলো। তিনি আমাকে মোটেও পাত্তা দিতেন না। তাঁর পিতাকে নিয়ে কবিতা লিখেও আমি তাকে দূর্বল করতে পারিনি॥”— নির্মলেন্দু গুণ / সাক্ষাৎকারসমগ্র ॥ [ নান্দনিক – ফেব্রুয়ারি, ২০১০ । পৃ: ৪১ ]

কবিকে মূল্যালয় করা হয় তার কবিতা দিয়ে। তবে মানুষ হিসেবে এই দুই কবিকে যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে গুণ সাহেব অনেক এগিয়ে থাকবেন। তার মাধ্যে একটা সারল্য আছে তাই বাকশালের সদস্যও না হয়েও সারা জীবন আওয়ামী লীগ-পন্থী থেকে গেছেন। “… নির্মলেন্দু গুণকে বাংলা একাডেমীতে জিজ্ঞেস করি, বাকশালে যোগ দিচ্ছেন না? তিনি বলেন, না। আমি বলি, কেন? তিনি বলেন, মনে হয় গুলি আইবো। আমি গুলি খাইয়া মরতে চাই না॥”— শামসুজ্জামান খান / বঙ্গবন্ধুর সাথে আলাপ এবং প্রাসঙ্গিক কথকতা ॥ [ আগামী প্রকাশনী – এপ্রিল, ১৯৯৫ । পৃ: ৫৯ ]

অন্যদিকে বিপ্লবী কবিরা এমন কোন রাজনৈতিক ঘাট নেই যেখানের পানি খায় নাই। কবিতার মতন গুণের জীবনে বিপ্লব নেই তাই রাজনৈতিক পল্টিও নেই। এই কারণে সে বলতে পারে আমি আওয়ামী লীগের কবি, আল মাহমুদরা তা পারে নাই।