আমি শ্রমজীবী একজন মানুষ। পরিবারের সদস্যদের পেটের খাবার পরনের বস্ত্র আর সাংসারিক টুকিটাকি খরচ যোগাতেই জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয়ে যায়। রেশনের মত সামান্য যে সময়টুকু অবশিষ্ট থাকে তা খরচেরও বহুবিচিত্র পথ খোলা। এজন্য পর্ণো জগত সম্পর্কে আমি ভীষণভাবে অজ্ঞ। সানি লিয়ন বা মিয়া খলিফা আমার প্রিয় সাবজেক্টের কোনো চরিত্র নয়। এরা কোথাকার বাসিন্দা এদের কর্মপরিধি বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই বললেই চলে।তবে এরা যে পর্ণো জগৎ এবং আমাদের বর্তমান প্রজন্মে খুবই জনপ্রিয় চরিত্র তা ফেসবুক খুললেই ভাল বুঝতে পারি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো পর্ণোর্স্টারকে ঘৃণা করিনা এমনকি সাধারণ বেশ্যা, যারা তাদের দেহশিল্প দিয়ে যৌনক্ষুধার্ত পুরুষের চাহিদা মেটান তাদেরকেও অশ্রদ্ধা করিনা। আমার মতে এই বেশ্যাগণ দুটি মহৎ কাজ করছেন, এক-যেহেতু এদের দেহ ব্যতিত বিনিয়োগের আর কোনো অবলম্বন নেই তাই এই মাধ্যমটিকেই শৈল্পিক সুষমায় উপস্থাপিত করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।কারো কোনো অনিষ্ট না করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেয়ে মহৎ কাজ এই সমাজে এই সময়ে আর কী হতে পারে? দুই-এরা নিজ দেহ দিয়ে সমাজের কামতাড়িত পুরুষদের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন তাই সমাজে ধর্ষণের মাত্রাকে এরা কিছুটা হলেও অবনমিত রাখছেন অন্যথায় এ প্রবণতা ভয়াবহ হয়ে উঠত। মাদ্রাসার হুজুর আর তালিবে আলিমরা ধর্মীয় বিধিনিষেধ আর ট্রেডমার্ক মারা অবয়ব পোষাক নিয়ে পতিতালয়ে গমন করতে পারেনা বলে এরা অধিকমাত্রায় ধর্ষকামী। এরা হলো বাঁধ দেয়া নদীর আটকে রাখা পানির মত। শহরের পতিতালয় গুলোকে বড় বড় মাদ্রাসা সংলগ্ন করে দিলে মাদ্রাসার বালক বলাৎকারের হার নব্বই ভাগ কমে যাবে এটা হলফ করে বলা যায়। অথচ প্রায়শই দেখা যায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে প্রভাবশালী ভন্ড রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাঝে মাঝে এইসব পতিতালয় উচ্ছেদ অভিযানে নেমে  শত শত দেহশিল্পী এবং তাদের উপর নির্ভরশীল পোষ্যদেরকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন।কিন্তু এরচেয়েও হতাশার ব্যাপার  তখন সমাজের একটি কোনা থেকেও এই জুলুমের বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদের আওয়াজ পর্যন্ত ওঠেনা। এ থেকে ভন্ডামীর কাছে সমাজের বিবেক বুদ্ধির অসহায় আত্মসমর্পণের চিত্রটাই ফুটে ওঠে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অনেক জনপ্রিয় এবং বার্নিং ইস্যুর সাথে সানি লিয়ন এবং মিয়া খলিফাও স্থান করে নিয়েছেন।দেখা যাচ্ছে খুদ শিক্ষামন্ত্রনালয় পর্যন্ত এই ইস্যুতে নড়ে চড়ে বসেছে।একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্রে এই দুই পর্ণোতারকার নামোল্লেখে চারদিকে একটা গেল গেল শোর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।কিন্তু বর্তমানে আমাদের বিপুল ভূমিধ্বস সামাজিক অবক্ষয়ের মাঝে এটাকে তেমন অস্বাভাবিক মনে করার কোনো কারণ আছে কী? যে সমাজের ভবিষ্যত কান্ডারী যুব সমাজের আইকন হলেন শেফুদার মত বিকৃত মস্তিষ্ক অশ্রাব্য  এক গালিবাজ ব্যক্তি সেই সমাজের প্রশ্নপত্রে কোনো পর্ণোতারকার নাম অন্তর্ভুক্ত করে প্রশ্নকর্তা মহাভারত অশুদ্ধ করে দিয়েছেন আমার  তা মনে হয়না।আমি আগেই বলেছি এই দুই তারকার কর্মকান্ড বিষয়ে আমি অজ্ঞ তবে গত কদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে অভিনেত্রী সাফা কবিরের একটি সাক্ষাৎকার এবং তসলিমা নাসরিনের অসুস্থতার খবরকে কেন্দ্র করে দেশের ভবিষ্যত যুব সমাজ তথা বাল-প্রজন্মের যে গালিপ্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে তা থেকে আমার ধারণা জন্মেছে মানবসমাজে এরচেয়ে অশ্লীল অশ্রাব্য এবং জঘন্য আর কিছুই হতে পারেনা।রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের সেই প্রশ্নকর্তাতো এই সমাজের ভেতরেরই একজন মানুষ তার মাথায় সর্বক্ষণ সানি লিয়ন মিয়া খলিফারা ঘুর ঘুর করলে তা খুবই অপ্রত্যাশিত অনাকাঙ্খিত মনে হবার মাজেজাটি কী?

আমার প্রশ্ন শুধু এই শিক্ষকের রুচী এবং শিক্ষা নিয়ে।রবীন্দ্রনাথের বাবার নামের বিকল্প নাম নির্বাচন করতে গিয়ে তিনি কেন মিয়া খলিফাকে বেছে নিলেন?রবীন্দ্রনাথের জ্যেঠা কাকা বা তাঁর পিতৃস্থানীয় কোনো কবি সাহিত্যিকের নাম দিলেইতো এই ফালতু বিতর্কের অবকাশ হতোনা। তাছাড়া বিশ্ব সাহিত্যের একজন বরেণ্য কবির একাধিক বাবার নাম নিয়ে এমন ফাজলেমি মার্কা প্রশ্নইবা কেন? মিয়া খলিফা পুরুষ না মহিলা এটা নিশ্চিত হতে আমাকে গোগোল ইমেজের সহায়তা নিতে হয়েছে কিন্তু এই প্রশ্নকর্তা এ বিষয়ে আমার মত এতটা মূর্খ এটা বলা যায়না। প্রশ্ন জাগে তিনি কী আসলেই জানেন রবীন্দ্রনাথ মানুষটা কে ছিলেন? মনে হয়না। রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেবকে জানার আগে রবীন্দ্রনাথকে জানাটা বেশি প্রয়োজন নয় কি? তিনি যদি সত্যিকারের শিক্ষিত এবং রুচীবান মানুষ হতেন তবে রবীন্দ্রনাথের একটি কাব্য এবং ভিন্ন কোনো কবির আরেকটি কাব্যের নামোল্লেখ করে প্রশ্ন করতে পারতেন কোনটি রবীন্দ্রনাথের।এতে রবীন্দ্রকাব্যের সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা আরেকটি কাব্যের নামও জানতে পারত যা তাদের কোমল মস্তিষ্কে গেঁথে থাকত।কিন্তু এতো হবার নয় কারণ আমাদের মাথার উর্বর ফসলি জমিতে এখন ব্যাপক অনাসৃষ্টি এবং আগাছার জঙ্গল।এই জঙ্গল সাফ করতে হলে সাধারণ দা কুঠারে আর কাজ হবেনা রীতিমত দাবানল ছড়িয়ে দিতে হবে।