Safaa Boular developed an interest in terrorism after the 2015 Paris attacks. Photograph: Metropolitan Police

শুধু নারী এবং কিশোরীদের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্র একটা জঙ্গি দল যেভাবে লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছিল। সাফা বাউলার আইসিসের অনলাইন রিক্রুটার নাভিদ হুসাইনকে বিয়ে করে এবং হুসাইনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাফা বাউলার তার পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে লন্ডনের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাসমূহে জঙ্গি হামলার ছক কষতে থাকে।

আদালতের কাছে সাফা বাউলার দাবী করে সে খুব অসুখী জীবন যাপন করত। তার সমবয়সী, বন্ধু এমনকি অপরিচিত আগন্তুক পর্যন্ত তাকে তার শরিয়া সম্মত ইসলামী মুখ ঢাকা বোরখার কারণে “নিনজা, আমব্রেলা, পোস্টবক্স” বলে খেপাত। সাফার মা ইদানীং আরও বেশি ধার্মিক হয়ে উঠছে। সেকারণেই তিনি মেয়েকে ইসলামী পোশাক ছাড়া বাইরে বের হতে দেন না। আবার এই পোশাকের কারণেই সাফা কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না, কোথাও পাত্তা পায় না। অথচ ক্রমাগত ধর্মগ্রন্থ হয়ে যাওয়া তার মায়ের কাছ থেকে একটুখানি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার কী আকুতি! সুতরাং সাফা অন্য কোথাও নিজের গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে বেড়ায়।

২০১৫ সালে প্যারিসে জঙ্গি হামলার পরেই সাফা জঙ্গিবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং “কেন মানুষ জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত হয়” এই প্রশ্ন খুঁজতে কৌতূহলী হয়। টুইটারের মাধ্যমে সে সিরিয়ার এক আইসিস জঙ্গি নারীর সাথে পরিচয় হয়। নাম তার উম্মে ইসা আল-আমরিকি। আমরিকি সাফাকে বোঝায় একমাত্র খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী সবার মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ক্ষণকালের মধ্যেই সাফা কয়েকশ আইসিস জঙ্গির সংস্পর্শে আসে এবং সেখানেই নাভীদ হুসাইনের সাথে তার কথা হয়। নাভীদ হুসাইন ব্রিটেনে জন্ম নেয়া একজন আইসিস যোদ্ধা এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইরাকের রাকাতে আইসিসের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে গেছে।

একটা দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসরুদ্ধকর বিচারে মাত্র ১৮ বছরের একজন বালিকার উপর আলোকপাত করা হয়। তার জীবনে এখন চরম সংকটাপন্ন সময় যাচ্ছে কারণ বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে সে হতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত জঙ্গি হামলার দায়ে অভিযুক্ত সর্বকনিষ্ঠ নারী অপরাধী। বিচারের পরিচালকমণ্ডলী এবং কর্মকর্তা মেয়েটির পরিবারকে বলছে “সংঘাত-পূর্ণ অকার্যকর পরিবার” এবং যুক্তরাজ্যের প্রথম কোন পরিবার যাদের সব নারী সদস্যই আইসিসের সাথে সম্পৃক্ত ক্ষুদ্র জঙ্গি দল।
গোয়েন্দা পুলিশ দল বলছে রায়ে যে সাজার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে তার ধরণে যথেষ্ট মতভেদের সুযোগ রয়েছে। কারণ সাধারণ তদন্তেই বোঝা যাচ্ছে উগ্রবাদীদের তৎপরতার সাথে অভিযুক্ত নারীর যোগাযোগ ছিল। অভিযুক্ত নারী কোন নিরীহ পথচারী নয়, সে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্তও নয় বরং সে হিংস্র আক্রমণ করার জন্য হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়াকে নিজের অধিকার মনে করছে। সাফা বরাবর তার বিরুদ্ধে আনিত সিরিয়াতে আইসিসের কার্যক্রমে যোগদানের পরিকল্পনা এবং লন্ডনের প্রধান এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে জঙ্গি আক্রমণের প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণ দুইটা অভিযোগই অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু বিচারকগণ তার বিরুদ্ধে আনিত দুইটা অভিযোগেই তাকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে। ফলে সাফা হয় ব্রিটেনের সবথেকে কম বয়সী ইসলামিক স্টেটের সাজা প্রাপ্ত আসামী। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ পুলিশ এবং ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ একটা গোপন অভিযানে ২২ বছর বয়সী সাফার বড় বোন রিজলাইন বাউলার, তার মা মিনা ডিচ যার বয়স ৪৪ বছর এবং ২১ বছর বয়সী তাদের পারিবারিক বন্ধু খাওলা বারগুতিকে আটক করে এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। এই মামলার রায়ে পরের বছর তাদের সাজা হয়।

ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কয়েক মাসের তল্লাশির পরে সন্দেহভাজন এই পরিবারের বাড়িতে গোপন মাইক্রোফোন এবং রেকর্ডার আড়ি পেতে রাখে। সন্দেহভাজন পরিবারটির বাড়ি ছিল ভক্সহিলে। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার ভবনের সামনেই বিশাল এপার্টমেন্টে। অভিযুক্ত নারীটি ধরা পড়ে একরাতের পৃথক এক অতর্কিত তল্লাশিতে। তল্লাশি অভিযান চলাকালীন সময়েই নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণে রিজলাইন বোলার গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে চিকিৎসার পরেই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।

Safaa was the last to stand trial, and the defence’s case hinged on the so-called grooming influences of both Hussain and her family. Joel Bennathan QC urged the jury to look beyond the confident and assertive young woman they saw in the witness stand and imagine an insecure, far less articulate teenager who struck up an online relationship with a much older man.

বিচারের কাঠগড়ায় সবার শেষে দাঁড়িয়ে আছে সাফা এবং আর তার পরিবারের উপর রয়ে গেছে সাফার তথাকথিত স্বামী হুসাইনের জিহাদি প্রভাব। সাফার পক্ষের আইনজীবী জোয়েল বেনাথান কিউসি বিচারকমণ্ডলীর কাছে আকুতি জানায় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আত্মবিশ্বাসী এবং সপ্রতিভ তরুণী নারীর অবয়ব ছাড়িয়ে অনুমান করার চেষ্টা করুন মেয়েটির অ-নিরাপত্তা। আপাতত চটপটে আড়ালে সে মুখচোরা কিশোরী। সেখানে দেখতে পাবেন একটা আটপৌরে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে যে তার থেকে চেয়ে অধিক বয়স্ক পুরুষের সাথে অনলাইনে প্রেমের জালে আটকে গেছে। সেই সময়ে আমি প্রচুর রোমান্টিক গল্প, উপন্যাস পড়তাম। ওল্ড বেইলিতে বিচারকদের কাছে সাফা বলে, “তখন আমার কাছে মনে হত, আমি বিয়ে করতে চাই এবং চেয়েছিলাম খুব সুন্দর রোমান্টিক একটা সম্পর্ক হোক।” ততদিনে আদালত জানতে পারল কীভাবে ৩০ বছর বয়সী হুসাইন ইন্সটাগ্রামে ১৬ বছরের সাফাকে বার্তা পাঠাতো। ২০১৬ সালে অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় অনলাইনে ইসলামের বিধি মোতাবেক বিয়ে হওয়ার আগে ব্রিটিশ টেলিভিশন শো ডিল অর নো ডিল এবং চেজ নিয়ে এই জুটির মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি থেকে আসা নাভিদ হুসাইন ছিল আইসিসের একজন বহুমুখী সদস্য সংগ্রহকারী। তার মনে খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা একদিন সে হবে পরবর্তী “জিহাদি জন।” নাভিদ হুসাইন ইতিপূর্বে ‘সান পেইজ থ্রি’ নামের ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ফ্যাশন ম্যাগাজিনের মডেলকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সিরিয়াতে আইসিসের যৌন জিহাদে যোগ দেয়ানোর জন্য প্ররোচিত করে। কিন্তু জানা গেছে ২০১৭ সালেই আইসিসের অবস্থান লক্ষ্য করে পরিচালিত ড্রোন হামলায় নাভিদ হুসাইন নিহত হয়েছে।

Naweed Hussain was reportedly killed in a targeted drone strike in 2017. Photograph: Metropolitan Police/PA

নাভিদ হুসাইন এবং সাফার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলার সময়ে তারা আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য পরিধেয় কোমর বন্ধনী, পোশাক নিয়ে কথা বলত এবং তারা দুজনেই আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে হত্যা করার দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ত। হুসাইন রিজলাইন বাউলারকে টাকা পাঠায় যাতে তারা দুবোন তুরস্ক হয়ে সিরিয়াতে পাড়ি জমাতে পারে। পুলিশ তাদের এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিলে সাফা মরক্কোতে তার মায়ের কাছ থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরার পথে একটা বিমানবন্দরে আটক করা হয়। এদিকে একটা পরিকল্পনা বিফল হওয়ার বিপরীতে হুসাইন তাকে ক্রমাগত ইংল্যান্ডের যেকোনো লক্ষ্যে হামলা করার জন্য তাগিদ দিতে থাকে।
সাফা আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়, নভেম্বরের দিকে হুসাইন আমাকে ক্রিসমাসে হামলা করার প্রস্তাব দেয়। সে আমাকে বলে, “আমি কি আক্রমণ করতে ভয় পাচ্ছি কি না তখন তাকে আমি জানাই, হ্যাঁ, আমি ভয় পাচ্ছি।” তখন সে আবার লুতুপুত প্রেমের আলাপ চালাতে থাকে যেমনটা সাধারণত প্রেমিক প্রেমিকারা করে আরকি। হুসাইন ২০১৭ সালে আবার সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য চাপ দিতে থাকে। এবার সে প্রস্তাব দেয় ভ্যালেন্টাইন ডে’তে প্রেমিক প্রেমিকাদের উপর হামলা করতে এবং মার্চে তার জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে হামলা করার পরামর্শ দেয়। হুসাইন সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার কথা ফোনে বা বার্তায় বলার সময়ে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করত যেমন ‘তোকারেভ’ এবং ‘পাইনঅ্যাপল’ শব্দ দুইটা দিয়ে সে বন্দুক এবং গ্রেনেড বোঝাতে চেয়েছে।

Safaa Boular was fouind guilty of planning terror attacks on iconic landmarks in London including, most notably, the British Museum. Photograph: infomods/Getty Images

কিন্তু সাফা বারবার বলতে চেয়েছে সে কোন সন্ত্রাসী হামলা করতে আগ্রহী নয় এমনকি ব্রিটেনে কীভাবে কোথায় বন্দুক এবং গ্রেনেড পাওয়া সম্ভব সে সম্পর্কেও তার কোন ধারণা নেই। তারপরেও হুসাইনের সাথে সাফার প্রেমের কোন ছেদ ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে সাফা সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে গেছে এবং তাদের মাঝে বেশিরভাগই ছিল রোমান্টিক প্রেমালাপ আর অতি সামান্য কিছু জিহাদি বয়ান, বিস্ফোরক আর সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে হালকা কথাবার্তা। সাফা বাউলার একটা গোপন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার প্রেমিক হুসাইনের সাথে স্কুলের লাউঞ্জে ছয়টার সময়ে, বাড়িতে নিজের শোবার ঘরে এবং স্নানঘরে সাংকেতিক টেলিগ্রাম বার্তা আদান প্রদান করত। এই মোবাইলটা সে কিনেছিল ব্রিক্সটন মার্কেট থেকে।
প্রেমালাপের সময় হুসাইন সাফাকে তার নগ্ন ছবি পাঠানোর জন্য আবদার করত, সে নিজেও তার যৌন উত্তেজক রগরগে ছবি পাঠাতো এবং সাফাকে পর্নসিনেমা দেখার জন্য তাগিদ দিতো। তার পক্ষের উকিল জোয়েল বেনাথান আদালতকে বলেন, এরকম কুরুচিপূর্ণ যোগাযোগ এবং জঙ্গি কার্যক্রমের ছবি থাকার জন্য সাফার মোবাইল হয়ে গিয়েছিল একটা সার্বক্ষণিক জঙ্গি হামলার তাগিদ। যেমন তার মোবাইলে সিরিয়াতে আইসিস জঙ্গি কর্তৃক একটা হত্যা দৃশ্যে তার হবু স্বামীর ছবি দেখা গেছে। এই ছবি দেখে সাফা নাভিদ হুসাইনকে ফিরতি বার্তা লেখে, “তুমি দায়েশের (আইসিস) সদস্য? তোমরা তো মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত।”
আদালত প্রথমে সিরিয়া এবং পরে যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য সাফা’র সম্পৃক্ততা এবং দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল বলে রায় দেন। আদালত বলেন, সাফা নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে করেছে তথ্য প্রমাণ সেটা সমর্থন করে না বরং মনে হয় জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণে তারই বেশি আগ্রহ দেখা যায়।

Khawla Barghouthi 21, pleaded guilty at the Old Bailey to failing to disclose information about a planned terrorism attack. Photograph: Metropolitan Police/PA

মামলার বিচার প্রসিকিউটর ডানকান এটকিনসন কিউসি বিচার চলাকালে বলেন,“যদি কারো ইসলামিক স্টেটের জন্য আগ্রহ তৈরি হয় এবং সিরিয়াতে যেতে চায় তাহলে আমাদের সাধারণ জ্ঞান কী বলে না, কফি শপ কিংবা কোন রেস্টুরেন্ট নয় বরং যুদ্ধের ময়দান তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে?” প্রসিকিউটর আরও বলেন, বিষয়টা এমন নয় যে সাফা শুধু হুসাইনের জন্যই সিরিয়া যাচ্ছিল বরং হুসাইন ছিল সাফার সিরিয়া যাওয়ার টিকেট। এই কারণেই সাফা যুক্তরাজ্যের গোপন গোয়েন্দা সংস্থার ভবনের সামনে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সেলফি তুলেছিল এবং ২০১৭ সালের এপ্রিলে হুসাইনের মৃত্যুর পর সাফা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ঘুরতে গিয়েছিল। সাফা এবং হুসাইনের প্রেমের মধ্যেই তারা দুইজনেই ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ঘোষিত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করেছিল। হুসাইনের মৃত্যুর পর নতুন কোন জঙ্গি যখন সিরিয়াতে হুসাইনের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় এবং সাফাকে হুসাইনের মৃত্যুর খবর জানায় তখনো সাফা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকে। সাফা নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইসিস জঙ্গিকে বার্তা পাঠায়, “ভাই, এই মাসে জঙ্গি হামলার জন্য আমি মনঃস্থির করেছি। একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাকে পথ দেখাতে কিন্তু এই মুহূর্তে আপনার সাহায্য আমার ভীষণ দরকার।”

রেকর্ড করা ফোনালাপে আমরা শুনতে পাই, সাফা এবং রিজলাইন দুবোন আরবি ভাষায় সাংকেতিক কথা বলছে।সাংকেতিক শব্দে ‘এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ এর ম্যাড হেটার চরিত্রকে অবলম্বন করে টি-পার্টি এবং কিউক্যাম্বার স্যান্ডউইচ নিয়ে কথা বলছে তারা। একই সাথে রিজলাইন এবং তার মা মিনা ডিচ দুজনে সম্ভাব্য আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে লন্ডন শহরের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো জরিপ করে আসে। তারপরের দিন মা মেয়ে মিলে রান্নাঘরে ব্যবহারের উপযোগী এক প্যাকেট ছুরি এবং পিঠে বহন করার ব্যাগ কিনতে লন্ডন শহরের দক্ষিণের ওয়ার্ডসওয়ার্থ রাস্তার একটা সুপার শপে গিয়েছিল। বাসায় ফেরার পথে মিনা ডিচ গাড়ি থামিয়ে সবচেয়ে ছোট ছুরিটা রাস্তার ধারে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। পরের দিন কীভাবে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করা যায় তাই নিয়ে আলোচনার রেকর্ড পাওয়া যায় এবং পুলিশ জানতে পারে আক্রমণের জন্য অনুশীলন করা হয় বারগুতির বাড়িতে। গোপন রেকর্ডের কারণে পুলিশের জন্য অপরাধীদেরকে গ্রেফতারের পথ সুগম হয় এবং সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পুলিশ অতর্কিতে বারগুতির বাড়িতে হানা দেয় হার্লডেন তাদের বাড়ি থেকে রিজলাইন এবং বারগুতিকে পাকড়াও করে। মেডওয়ে সিকিউর ট্রেনিং সেন্টারে সাফার সাথে দেখা করার সময় মিনা ডিচকে গ্রেফতার করা হয়। সন্ত্রাস প্রতিরোধ পুলিশের জাতীয় পর্যায়ের উচ্চতর সমন্বয় কর্মকর্তা ডিন হেইডেন বলেন, “এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে গ্রেফতারকৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। খুব গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে একটা পরিবার এমন একটা ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল শুধু তার জন্যই নয়, বরং এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের সবাই নারী সদস্য যারা যুক্তরাজ্যে দায়েশ বা আইসিসের হয়ে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিল।”

সিরিয়াতে যুদ্ধের জন্য তরুণ যুবকদেরকে আকৃষ্ট করতে আইসিসের সক্ষমতার কথা ইতিপূর্বে অনেক লেখা হয়ে গেছে। লন্ডনের কিং’স কলেজের ‘আন্তর্জাতিক মৌলবাদ এবং রাজনৈতিক সংঘাত অধ্যয়ন কেন্দ্রের’ ঊর্ধ্বতন গবেষক ডঃ জোয়ানা কুকের মতে একটা পুরো পরিবারের অল্প বয়স্ক নারীদের মৌলবাদে জড়িয়ে ফেলা আইসিসের জন্য একটা অনন্য ঘটনা, এটা একটা নতুন প্রবণতার প্রতিফলন। ডঃ জোয়ানা কুক গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, “যখন আমরা দেখি কোন তরুণী জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় জঙ্গি সংগঠনের কারো সাথে তার বিয়ে হয়েছে। ক্ষেত্র-বিশেষে হয়ত এই দাবির সত্যতাও মিলেছে।” কিন্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে এরকম প্রবণতা আছে যে নারীরা কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের প্ররোচনায় নয়, স্বেচ্ছায় এরকম সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে যেমনটা এই নারীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে অথবা তারা নিজেরাই সন্ত্রাসী হামলার জন্য সাহায্যকারী বা যোগানদাতা খুঁজে বের করে।

কঠোর ইসলামী পোশাক পরিত্যাগ করে হাল ফ্যাশনের সরু স্কার্ট এবং নাইকির ট্র্যাকস্যুট টপস পরে সাফা হাজির হয়েছে সাক্ষীর কাঠগড়ায় গোবেচারা টাইপের চেহারা নিয়ে। সে বিচারকদের জানায় মদের বারে বসে তার সমবয়সী কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বলে, স্কুলের বন্ধুদের সাথে আলোচনার সময় যখন জেনেছে ‘ইসলাম কী এবং কী ইসলাম নয়’ তখনই তার ধর্মীয় বিশ্বাস চিরতরে চলে গেছে। আদালতকে সে বলেছে আইসিসের ভিডিও দেখার ফলে এমনকি কান্নার ক্ষমতা পর্যন্ত লোপ পেয়েছে কারণ সে বিশ্বাসই করতে পারে নি এত নিষ্ঠুর ভিডিও সে দেখতে পারে। কিন্তু পুলিশ আদালতকে জানায় বিগত দুই বছর ধরে সামাজিক সেবা এবং মৌলবাদ প্রতিরোধ কর্মকর্তাদের তদারকি এবং দেশব্যাপী সুরক্ষার জন্য এত কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও সাফা তার হামলার পরিকল্পনা থেকে বিন্দুমাত্র পিছুপা হয়নি।

সাফা যখন নির্দোষ প্রমাণ করতে নিজেকে ভুক্তভোগী হিসেবে চিহ্নিত করে তখন বিচারকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সাফা সবকিছু জেনে বুঝেই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছে। তাই যদি না হবে তাহলে তার জঙ্গি কার্যক্রমে তার অংশগ্রহণ হবে পুরোটা বানোয়াট। হেইডন বলেন, আমরা বলতে পারছি না এই জঙ্গি পরিবারের মূল হোতা কে কারণ এই পরিকল্পনার বিভিন্ন আঙ্গিক এবং সূত্র আছে। তবে তিনি সাফাকে সুপরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত বলে অভিহিত করেন যে তার নিজের কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। হেইডন গুরুত্বারোপ করে বলেন, সাফা নিজেই সিরিয়াতে হুসাইনকে খুঁজে বের করেছে এবং তখন থেকে হুসাইন তাকে হামলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা যদি তাকে প্রতিহত এবং গ্রেফতার না করতাম তাহলে, আমার কোন সন্দেহ নেই সে লন্ডনে জঙ্গি হামলা করত এবং মানুষের প্রাণহানির কারণ হত এবং আহত হতো আরও অনেকে। এই চারজনকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ।

মূল প্রবন্ধ: দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি: The Guardian) পত্রিকায় প্রকাশিত Nadia Khomami লেখা “How London teenager plotted attacks with all-female terror”

আগ্রহীদের জন্যে- নারী জঙ্গি: জঙ্গিবাদের নয়াদিগন্ত