প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মচারী সমিতির ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিরে দিয়াজ হত্যার প্রধান আসামি আলমগীর টিপুর ছবি-সংবলিত শুভেচ্ছাবাণী ছাপা হয়েছিল। খেলার মাঠে এসে বিষয়টি দেখে সমিতির সভাপতির কাছে কারণ জানতে চান এই মা। কিন্তু কোন সদুত্তর পাননি। এরপর ছেলের শোকে হতবিহ্বল মা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভেন্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লুটিয়ে পড়েন। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নগরের জিইসি এলাকার বাসায় নেওয়া হয়।– প্রথম আলো

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাঠে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মায়ের বিলোপ। ছেলে যাদের রাজনীতি করতো তাদের আমলে নিজের ছেলে খুন হলেও বিচার পায় নাই এই মা। শুনতে হয়তো খারাপ শোনা যাবা, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বললে, রাজনৈতিক পাণ্ডাদের সমালোচনা করলে যেসব রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা সাধারণ মানুষকে গালাগাল করে তাদের জন্যে এই ছবিটায় অনেক বড় শিক্ষা। হয়তো একদিন তাদের মা’কেও দিয়াজের মায়ের মায়ের মতন বিলোপ করতে হবে। দিয়াজ কী জানতো যে দলের জন্যে এতো প্রচার এতো রাজনীতি করছে সেই দলের আমলে তার মায়কে বিচারের জন্যে এভাবে কাঁদতে হবে?

এই মায়ের হয়তো জানা নেই, অন্য দলের কর্মীর হাতে মরলে বিচার পাওয়া যায়, নিজের দলের কর্মীদের হাতে মরলে নয়। সেই ক্ষেত্রে সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল কিছুটা ভাগ্যবান! কারণ তার খুনের বিচার না হলেও শামসুর নাহার হলের সামনে বাদলের একটা ভাস্কর্য করা হয়েছে। বাদলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের সভাপতি ঘোষণার করার কথা ছিল কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাকে খুন হতে হয়।

এর আগে ছাত্রলীগের মুহসীন হলের সেভেন মার্ডার নিয়ে লিখেছিলাম আজকে লিখবো বাদল হত্যা নিয়ে। বাদল যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয় তা সবার জানা যদিও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা দলের ইমেজ ও রাজনৈতিক স্বার্থে তা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। ১৯৯২ সালের ৯ই জানুয়ারিতে খুন হন বাদল। সেই সময় পত্রিকায় পাতায় বাদলকে নিয়ে কী কী লেখা হয়েছি তা আজকের লেখায় ছোট করে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

মাসুম আলী সাহার লেখায় জানা যায়; বাদল ভর্তি হোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্র বিজ্ঞানে! অচেনা ঢাকার শহরে স্থান হয় (সূর্য সেন হলের ৫২০ নম্বর রুমে)। ১৯৮১ সালের ১৭ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা দেশে আসার পর বাদল বাংলাদেশ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন! নিজের রাজনৈতিক কর্মের মাধ্যমে বাদল ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন। বাদলকে কীভাবে খুন করা হয় তা শামসুর নাহার হল থেকে কিছু ছাত্রী দেখেছে! পরবর্তীতে তাদের বয়ান পত্রিকা পাতায় ছাপা হয়। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বাদল খুন হন। যারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির করেন তারা সবাই জানে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে রাজনীতি হয়। ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ জোন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জোন ইত্যাদি ইত্যাদি। বাঘের হাটে জন্ম নেওয়া বাদল এই জোন কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতির শিকার। যদি ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক স্বার্থে ও রাজনৈতিক ইমেজ রক্ষায় তৎকালীন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি অস্বীকার করে বক্তব্য দিতে হয়েছে। বাদল খুনে ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত এটি প্রমাণিত হওয়ার-পরও শেখ হাসিনাকে বলতে হয়েছে ওরা ছাত্রলীগের কেউ না। আবার ঠিক একই দিনে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী বহিষ্কৃত ছাত্র নেতারা ৩২ নম্বরে গেলে শেখ হাসিনা তাদের বের করে দেন।

মনিরুজ্জামান বাদলের মতনই খুন হয়েছে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা। যারা নিজ দলের গ্রুপিংয়ের শিকার। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী তাদেরই একজন। যার মা খুনের আসামীর আলমগীর টিপুর ছবি-সংবলিত শুভেচ্ছাবাণী ছাপা দেখে মাঠে বিলোপ করা শুরু করেন। ছবিটি ভাল ভাবে লক্ষ্য করে দেখা যায়, দিয়াজের মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।। তনু,  ত্বকী থেকে শুরু করে হাজার বিচারহীনতার উদাহরণ আছে এই দেশে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিজের পরিবারে উপর না আসে ততোক্ষণ পর্যন্ত আসলে বিচারহীনতার কষ্ট ও ক্ষোভ কখনো উপলব্ধি করা যাবে না।গতকাল দিয়াজের মা যখন মাঠে বিলোপ করছে হয়তো তখন দিয়াজের রাজনৈতিক বন্ধুরা অনলাইনে বর্তমান সরকারের বিচার ব্যবস্থা ও উন্নয়নের জয়গান গাইছেন!

“যতবার হত্যা কর জন্মাবো আবার
দারুন সূর্য হবো; লিখবো নতুন ইতিহাস”

 

আগ্রহীদের জন্যে- মুহসীন হলের সেভেন মার্ডার

পত্রিকার কপির ঋণ স্বীকার: PID, Ministry of Information