উই ওয়ান্ট জাস্টিস!
“রাস্তা বন্ধ। রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলিতেছে।”…. “আমরা যদি না জাগি মা, ক্যামনে সকাল হবে?” … “যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও, তবে তুমিই বাংলাদেশ!”…

এগুলো কিশোর বিদ্রোহীদের প্ল্যাকার্ডের তিনটি শ্লোগান। এই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এই ছোট পাখিদের কলরব।

প্রথমে রাজধানী ঢাকায়, পরে সারাদেশ জুড়ে অভূতপূর্ব জাগরণ এনেছে স্কুল-কলেজের ছোট ছেলেমেয়েরা। মন্ত্রী থেকে পুলিশ, ভিআইপি থেকে সিআইপি — সবার ওপর কর্তৃত্ব করছে ওরা।দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার গুরুভার কচি কাঁধে তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সিস্টেমের গলদ। এই কিশোর বিদ্রোহীরা রোদ-বৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগের লাঠিপেটা, হুমকি-ধামকি, চোখ রাঙানি – সব উপেক্ষা করে এক সপ্তাহ ধরে দখল করে রেখেছে রাজপথ। মূল দাবি একটাই – নিরাপদ সড়ক চাই। এক সপ্তাহ জুড়ে চলছে এই অভূতপূর্ব আন্দোলন।

কিশোর বিদ্রোহীরা এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের উল্টো পথে চলা গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছে, গাড়ির লাইসেন্স না থাকায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে, বলেছে, আপনি কিসের এমপি, আপনি নিজেই তো আইন মানেন না! ভূয়া! ভূয়া! শ্লোগানে তাকে তীরস্কার করেছে, গাড়ি ছেড়ে তাকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য করেছে। নির্বাচন কমিশনের পতাকাবাহী একটি সরকারি গাড়ির বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় গাড়ির বনেটে কালি দিয়ে লিখে দিয়েছে, “লাইসেন্স নাই” (তিরস্কার) “চোরাই গাড়ি”! আর এসব দৃশ্যই ধরা পড়েছে মূল ধারার মিডিয়াতে তো বটেই, ফেসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়ার অসংখ্য লাইভ ভিডিওতে। এরই মধ্যে পুলিশের মারপিটে রক্তাক্ত স্কুলের একজোড়া সাদা কেডস জুতো ভাইরাল হয়েছে।ভাইরাল হয়েছে আরো অনেক ছবি, লড়াকুদের টুকরো দৃশ্যপট।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সমর্থন কুড়িয়েছে অভিভাবকদের। বাম দলগুলোসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী মহল, নাগরিক ও সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবীরাও তাদের জানিয়েছে পূর্ণ সমর্থন। আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাও যোগ দিয়েছে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে।
আর কিশোর বিদ্রোহীরা হাতেনাতে প্রমাণ করেছে, এই রাষ্ট্রের বুড়োধাড়ি কর্তাব্যক্তিরা আইন, নিয়ম বা সভ্যতা ভেঙে এতোদিন গায়ের জোরে দেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে, তাদের জন্যই মানুষের জীবন ও সম্পদ আজ হুমকির মুখে।মেকি গণতন্ত্রের, তথা ডিজিটাল ফ্যাসিজমের এক দলীয় শাসনামলে এই বাস্পীভূত ক্ষোভ যেন অনিবার্যই ছিল।

বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে!
বলা ভাল, গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাদের সহপাঠিরা। তারা সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি বাস ভাংচুর করে।

নৌ মন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের এক বক্তব্যের পর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও পরদিন সড়কে নামে, এরপর বিভিন্ন জেলায়ও শুরু হয় বিক্ষোভ।
সদ্যহাস্য নৌ মন্ত্রী, কথার বাদশা শাজাহান সেদিনও টিভি ক্যামেরায় বেশ হাসিমুখেই বলেছিলেন, পাশের দেশ ভারতে মহারাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় সেদিনও তিনশজন মারা গিয়েছে। কই সেখানে তো এ নিয়ে কথা হয় না! তিনি চালকের খামখেয়ালীপনায় দুটি কিশোর প্রাণ হত্যা ও দুর্ঘটনাকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। পরিবহন শ্রমিক নেতা, কাম নৌ মন্ত্রী পরিবহনের গলদ খুঁজে পাবেন না, এটিই যেন স্বাভাবিক। আর তার এই বেফাঁস মন্তব্যই যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। স্ফুলিঙ্গ থেকে জ্বলে উঠেছে দেশজুড়ে দাবানল।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ছোট ছেলেমেয়েদের রাস্তাদখল আর কর্তৃত্বের অধিকার কে দিল? আসলে এই অধিকার দিল তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর মালিকানাবোধ। তারা এখন বড়দের শেখাচ্ছে এইদেশের মানুষ প্রজা নয়, তারা নাগরিক, নাগরিকের অধিকার লুন্ঠিত হলে তা প্রতিষ্ঠার অধিকার ও দায়িত্ব তাদের আছে। এই দেশের মালিক এই দেশের মানুষ, কিছু লোভী ব্যক্তি আর নিপীড়ক গোষ্ঠী নয়। বড়রা যদি এই মালিকানা দাবি করতে না পারেন, তাহলে ছোটরাই এগিয়ে এসে বড়দের পথ দেখাবে।

আসলে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে গণজাগরণ ঘটেছিল, সেটি ছিল প্রজন্ম ’৭১র বিদ্রোহ। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রজন্ম সেদিন যুথবদ্ধ হয়ে পথ দেখিয়েছিল দেশকে। আর এখন যারা আন্দোলন করছে, এই ছোটরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম, যাদের হাতে আগামীতে দেশের স্টিয়ারিং থাকলে, কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ!

ক্লাস ছেড়ে কেন তোমরা আন্দোলনে? তারকা টিভি সাংবাদিকের এমন তুখোড় প্রশ্নের জবাবে সাদা শার্টের স্কুল ইউনিফর্ম পরা, ব্যাগ কাঁধের ছেলেটি একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে মিছিল নিয়ে এগুতে এগুতে বললো, কারণ আমরা সিস্টেমের চেঞ্জ চাই। আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম! তিনিই আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন। (১৯৫২ সালের ভাষা শহীদ) সালাম-বরকত-জব্বার-শফিউল্লাহ আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন। তারাও ছাত্র ছিলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই প্রতিবাদ করে যদি আমরা দোষী হই, তাহলে বঙ্গবন্ধুও দোষী। সালাম-বরকতরাও দোষী!

বলাই বাহুল্য, এই ভিডিও ক্লিপিংটিও ভাইরাল হয়েছে। আরো ভাইরাল হয়েছে, এমন কিছু আন্দোলনের টুকরো দৃশ্যপট এরকম:

একজন মা টিফিন ক্যারিয়ারে করে সব্জি খিচুড়ি নিয়ে এসেছেন। সমাবেশকারী শিশু-কিশোর ছেলেমেয়েদের তাই এক গ্রাস এক গ্রাস করে পরম মমতায় মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। মায়া করে বলছেন, বাবারা এসো, খেয়ে যাও! আর স্কুলে পোশাক পরা অগুনতি ক্ষুধার্ত মুখের ছেলেমেয়েরা একে একে এসে তাই পরম তৃপ্তিতে খেয়ে যাচ্ছে।

আরেকটি ভাইরাল ভিডিও ক্লিপিং এ দেখা যাচ্ছে, ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ুয়া একটি কচি ছেলে পুলিশের মার খেয়ে থেঁতলানো হাতের রক্তটুকু দিয়ে সহপাঠীদের ধরে রাখা সাদা কাগজে লিখছে, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস!” ছেলেটির ব্যাথায় মুখ কুঁচকে যাচ্ছে, তবু লেখা থামাচ্ছে না, থেঁতলানো আঙুল কাগজে চিপে লিখেই চলেছে একেকটি অক্ষর।

আমার প্রতিবাদের ভাষা, আমার প্রতিশোধের আগুন!
শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলন থেকে নয়টি দাবি উঠে এসেছে, শ্লোগানে, ইন্টারনেটে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিশোর বিদ্রোহীদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো না থাকায় এভাবেই আসে নয়টি দাবির কথা।

বিক্ষোভ শুরুর পরদিন থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। আবার পাশাপাশি মিরপুর ও জিগাতলায় পুলিশের সাথে “হাতুড়িলীগ” এর অ্যাকশন, কিশোর বিদ্রোহীদের অনাস্থায় ফেলেছে (কিছুদিন আগেই সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতুড়ি দিয়ে পায়ের হাড় গুঁড়ো করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, সেই থেকে “সোনার ছেলেরা” এখন দেশজুড়ে “হাতুড়িলীগ” নামেই পরিচিত)। তাই এসব শুকনো আশ্বাসে কাজ হয়নি; শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। এক পর্যায়ে সরকার গত বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেও শিক্ষার্থীদের রাজপথের বিদ্রোহ আটকাতে পারেনি।

আর সেদিনই (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ডেকে নেন বাসচাপায় নিহত কলেজ পড়ুয়া দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের পরিবারকে। তাদের ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি সড়কে নিরাপত্তায় নানা নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে দিয়ার বাবা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান।

পরে ওইদিন রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জমান খান কামাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে, এখন তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ও বলেন একই কথা। তারা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা আবার আরেক কাঠি সরেস। তারা বরাবরেও মতোই এই আন্দোলনে বিএনপি-জামাতের উস্কানির গন্ধ পেয়েছেন! এ নিয়ে কথামালার রাজনীতিও চলছে।

নয় দফার দফারফা…
দাবি ০১: বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। (মন্তব্য: খুবই আবেগী দাবি। বাস্তবে এই দাবিটি অযৌক্তিক। আসলে কিশোর বিদ্রোহীরা হয়তো বলতে চেয়েছে, ঘাতক বাস-ট্রাকের চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে হবে, এবং তা আইন করে বাধ্যতামূলক করা হোক, ইত্যাদি।)

পদক্ষেপ: দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া ওই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাবালে নূর পরিবহনের মালিককেও। মামলায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সঙ্গে অপরাধজনিত হত্যার ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এখন বিচার প্রক্রিয়া নির্ভর করছে আদালতের উপর।

আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সড়ক নিরাপত্তা আইনে অপরাধী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী চালকের জেল-জমিরানার শাস্তিও কঠোর করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সোমবারই (৬ আগস্ট) মন্ত্রী পরিষদের সভায় আইনটি অনুমোদনের পর সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি পাস হওয়ার কথা।

দাবি ০২. নৌ পরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা।

পদক্ষেপ: নিজের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চেয়ে এসেছেন তিনি। এখন অবশ্য শিক্ষার্থীদের স্লোগান থেকে তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। তবে জলে-স্থলে পরিবহনের ক্ষমতাধর নেতা শাজাহান এই দাবির তোয়াক্কাই করেন না।

দাবি ০৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএসে ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পদক্ষেপ: এরই মধ্যে স্কুল-কলেজের সামনে পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ নির্মান ও বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।

দাবি ০৪: প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।

পদক্ষেপ: প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে সব স্কুলের সামনে গতিরোধক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বিবৃতিতে জানিয়েছেন।

দাবি ০৫: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

পদক্ষেপ: নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আহত শিক্ষার্থীদের ব্যয়ভার গ্রহণের কথা একদিন আগেই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

দাবি ০৬: শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
(মন্তব্য: আবারো আবেগী দাবি। হয়তো কিশোর বিদ্রোহীরা বলতে চেয়েছে, যাত্রী হিসেবে সব সময় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।)

পদক্ষেপ: নাই।

দাবি ০৭: শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পদক্ষেপ: নাই।

দাবি ০৮: রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে।

পদক্ষেপ: এটি আগে থেকেই আইনত নিষিদ্ধ। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর ঢাকার সড়কে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। জাবালে নূর পরিবহনের বাস দুটির নিবন্ধনও বাতিল করেছে সরকার।

দাবি ০৯: বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।

পদক্ষেপ: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সহজ হবে। আইনমন্ত্রী জানান, এই আইনে টার্মিনাল থেকেই বাস-মিনিবাস-ট্রাক বের হওয়া আগে এর ফিটনেস ও কাগজপত্র পরীক্ষা করা হবে। আর তা সর্বত্র মনিটরিং করা হবে।

(প্রশ্ন: মান্যবর, মন্ত্রী বাহাদুর গং, আপনারা ক্ষমতায় আছেন প্রায় নয় বছর; এতোদিন এইসব ভাল ভাল আইন, ভাল ভাল কথা বলেননি কেন? নাকি সবই “ছেলে ভুলানো” কথার কথা মাত্র?)

সবশেষ খবর…
আন্দোলনের মাঠ থেকে তাজা খবর আসছে, অবশেষে আজকালের মধ্যে শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবির প্রতিশ্রুতিতে ক্লাসে ফিরে যাবে। তবে তারা এর আইনী কাঠামো ও তার বাস্তবায়নে সরকারকে সময় বেধে দেবে বড়োজোর এক মাস। নইলে কোরবানীর ঈদের পর আবার উত্তপ্ত হবে রাজপথ।

আরে বাপু, এটা ইলেকশনের বছর, শিক্ষক আন্দোলন সামাল দিতে না দিতেই কোটা সংস্কার আন্দোলন, তারপরেই কথিত “ক্রসফায়ারের” বিষফোঁড়া, আর এখন কয়লা কেলেঙ্কারীর (দিনাজপুরের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা উধাও) জের না ফুরাতেই কি না কিশোর বিদ্রোহ!

হু হু বাবা…ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখনি?…

[*ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া। লেখাটি একই সাথে আরো একটি সাইটে প্রকাশিত]