মধ্যরাত প্রায়, তবু একরামুলের স্ত্রী-কন্যার চোখে
আসে না কো আজ ঘুমের কোনো চিহ্ন।
ভয়ে, আশঙ্কায়, উৎকণ্ঠায় দুরু দুরু করছে ওদের বুক।

গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার ক্রমাগত ফোনকলে
আজ রাতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় ওদের প্রিয়তম মানুষ।
মধ্যরাত হতে চলল, এখনো ফেরেনি কন্যাদের বাবা, প্রেয়সীর প্রিয় একরামুল।
দশদিক হতে ভয়ের শীতলতা ওদের ঘিরে ধরে
অন্ধকার গহ্বর যেন সমস্ত পৃথিবী।

তটস্থ কন্যা কল করে বারবার বাবাকে –
আব্বু, তুমি কোথায়?
আব্বু, তুমি কেন আসছ না?
বাবা আশ্বস্থ করে তার প্রিয় কন্যাকে –
আমি চলে আসব, আম্মা। চলে আসব ইনশাল্লাহ, ঘুমাও তুমি!
কিন্তু কন্যার মন যে মানে না!
আবার করে কল। আব্বু, কোথায় তুমি? কখন আসবে?
ওপ্রান্ত হতে কান্নাজড়িত ধরা গলায় বাবা বলে,
যাচ্ছি, আম্মা, ঠিকাছে? যেতে হচ্ছে তা…….

বাবার গলায় কান্না শুনে হুহু করে ওঠে কন্যার মন।
বলে কন্যা, আব্বু, তুমি কানতেস যে?

একরামুলের স্ত্রী-কন্যাদের হৃৎস্পন্দনে বইছে যেন বজ্রপাত!
সময় থমকে গেছে, স্থির হয়ে গেছে পৃথিবী।
তবু রাত আরো বেড়ে চলে।
প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা ফোন করেন এবার
শুনতে পান ওপ্রান্তে খুন করার আয়োজন চলছে তাঁর স্বামীকে।
শেখ হাসিনার তর্জনী র্যাবের ট্রিগারে চাপ দেয় সজোরে, দিতে থাকে, দিতে থাকে
গুলির আওয়াজ শুনতে পান তিনি
শুনতে পান খুন হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনের সর্বশেষ শব্দ!

বাংলাদেশের আকাশে খোদিত হয়ে যায় কেবল একটি বাক্য –
আব্বু, তুমি কানতেস যে?
বাংলাদেশের বাতাসে অবিশ্রাম বাজতে থাকে একজন পিতার তরে
তার কন্যার কান্নাজড়ানো একমাত্র মর্মান্তিক প্রশ্নবোধক সুর –
আব্বু, তুমি কানতেস যে?

একরামুলের রক্তের আখরে
আর তার কন্যার কান্নায়
বাংলাদেশের বুকে লেখা হয়ে যায় একটি করুণ প্রশ্ন –
আব্বু, তুমি কানতেস যে?