লেখক: মাসুদ সজীব

কলমীর গন্ধভরা রূপসী বাংলায় আপনি ফিরতে চেয়েছেন বারে বারে,
কখনো ফিরতে চেয়েছেন শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
কখনো বা সোনালী ডানার চিল হয়ে।
দেখতে চেয়েছিলেন কাঁঠালপাতা ঝরিয়া পড়িবে ভোরের বাতাসে;
হয়তো দেখতে চেয়েছেন সুদর্শনা উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।

প্রিয় জীবনানন্দ, আপনাকে জানিয়ে রাখি
দালান আর প্রাসাদের চাপায় কলমীর গন্ধ আজ হারিয়ে গেছে বাংলা থেকে,
গন্ধহীন বাংলায় এখন শুধু নীরব কান্নার ধ্বনি উড়ে আকাশে আকাশে।
শালিখ কিংবা সোনালী ডানার চিল নয় বাংলার আকাশ আজ ভরে গেছে হিংস্র শকুনে,
যারা আপনার সুরাঞ্জনা আর বনলতাদের ঘর বাড়িতে আগুন দিয়ে
এ জনপদকে অমানুষের অভয়ারণ্য করে তুলছে দিনে দিনে।

প্রিয়তম কবি, আপনি জেনে হয়তো স্তব্ধ হবেন,
কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা, তিস্তা, পাড়ের মানুষ
এখন শুধু সোনালী ফসল ফলায় না, ঘৃণা ফসলও চাষাবাদ করে।

আপনার প্রিয় অশ্বত্থ, বটের সাথে কাঠাল জারুলের সম্পর্ক চুকে গেছে বহুকাল আগে।
এখন এদের কেউ হিন্দু আর কেউবা মুসলমান হয়ে গেছে!
অবাক হচ্ছেন, গাছেদের ধর্ম হয় কি করে?
হ্যাঁ, হয় প্রিয় নৈসর্গিক কবি, মাটির ধর্ম হয়েছে, দেশের ধর্ম হয়েছে, আর গাছেদের হবে না?
গাছেদেরও ধর্ম হয়েছে,
ধর্মই এখন সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলে।

শাদা শাঁখা আর লাল সিঁধুর এখন রক্তের দামে বিক্রি হচ্ছে যেখানে-সেখানে।
সীতারাম রাজারাম রামনাথ রায়দের নাম আমরা ভুলে গেছি,
কঙ্কাবতী শঙ্খশালা-রা আজ আর আসে না কারো কবিতার পাতা ভরে।
মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন প্রিয় বোধের কবি,
না হলে আপনার ঘর-বাড়িতে ও কেউ আগুন দিতো,
আপনাকেও হয়তো এই বাংলা ছাড়তে হতো!

এতো ঘৃণা, এতো রক্ত, এতো আগুন, চারিদিকে এতো বৈষ্যমের দেয়াল তুলে দেওয়া
এতো শকুনের ভিড়ে তারপরও কি আপনি ফিরতে চান ব্যথিত বাংলার মানচিত্রে?