বিবর্তনবাদ কোন ধর্মবিশ্বাস নয়, বিশুদ্ধ বিজ্ঞান। তার রয়েছে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, নিরীক্ষা, প্রামাণ্য দলিল ও যুক্তির মাধ্যমে সত্যে পৌঁছনর প্রবণতা। তার রয়েছে নিজস্ব আবিষ্কার সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করার ক্ষমতা ও দক্ষতা। তারপরেও বিবর্তনবাদের সাথে ধর্মের রয়েছে বিরোধ, দ্বন্দ্ব এবং রেষারেষি। এই দ্বন্দ্ব বিবর্তনবাদ সৃষ্টি করেনি, করেছে ধর্ম তার অস্তিত্বের শুদ্ধতা রক্ষার প্রয়োজনে। এই বিরোধ মানুষের বিশ্বকে নিয়ে নয়, স্বয়ং মানুষকে নিয়ে। মানুষ বিবর্তনের উপজাত নয়, এই অনুকল্প তার বিশ্বাসের অনুগামী। এটাতে তার বিশ্বাস অক্ষত থেকেছে। মানুষের বিশ্ব নিয়ে তোলপাড় করা বহুদর্শী কোপার্নিকাস আর গ্যলিলিওকে ধর্ম ক্ষমা করেনি। কিন্তু স্বয়ং মানুষকে নিয়ে বিশ্বাসের বিপক্ষে কথাবলা ডারউইনকে ক্ষমা করতে হয়েছিল, কারণ ততদিনে সমাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল বলে। তবে মনে মনে সেই দ্বন্দ্ব, সেই রেষারেষি আজও যেমন আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে মনে হয়। সময় সুযোগ এবং পারিপার্শ্বিক আনুকূল্যে বিশ্বাস আশ্রয়ী মানুষের কথা ও চিন্তার ভিতর দিয়ে তাই প্রকাশ হয়ে পড়ে মানুষকে বিবর্তন বহির্ভূত উচ্চ ও বিশুদ্ধ সৃষ্টি হিসাবে চিহ্নিত করার বহুমাত্রিক প্রবণতা। জীবের শ্রেণিবিন্যাসের জন্যে ট্যক্সোনমি নামের যে বিদ্যা রয়েছে, তার উপরে ভিত্তি করে সমস্ত জীবকে দুটো কিংডম বা সাম্রাজ্যে ভাগ করা হয়েছে- এনিম্যল আর প্লান্ট, বা প্রাণী এবং উদ্ভিদ। নড়েচড়ে বেড়ানো আর দশটা প্রাণীর মতন মানুষ পড়েছে এই এনিম্যল কিংডমের ভিতরে। এখানেই যত সমস্যা। বিরুদ্ধবাদীরা মানুষকে এনিম্যল বলতে নারাজ। তাদের এই আপত্তির মূল কারণ মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, চরিত্র এনিম্যল বা নিন্মবর্গের প্রাণীদের থেকে ভিন্ন। এনিম্যল বিহেভিয়ার নামে একটা শাস্ত্র আছে, যা গড়ে উঠেছে অনেকটা বিবর্তনবাদের উপরে ভিত্তি করে। সেই শাস্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের স্বভাবগত পার্থক্যের কারণ ও উৎসকে। ব্যাখ্যা করা গেলেও তা বিরুদ্ধবাদীদের তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে সহায়ক হয়নি, কারণ তাদের কাছে সব সময় যুক্তির চেয়ে বিশ্বাস ও মিথের অবস্থান অনেক উপরে রয়ে গেছে।

মানুষ বাদে অন্যান্য প্রাণীদের স্বভাব নিয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা এই সত্যে উপনীত হতে পারি যে, তাদের চরিত্র তাদের জেনেটীক বৈশিষ্ট্য বা বংশগতির ধারাকে সরাসরি অনুসরণ করে। এই কারণে তারা নিজেদের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। পারে না অন্য কোন প্রাণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করতে। এনিম্যল বিহেভিয়ার শাস্ত্রের খটমট পারিভাষিক জটিলতা ও তাত্ত্বিক আলোচনার ভিতরে না গিয়ে সাধারণ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে নিন্মবর্গীয় প্রাণীদের স্বভাবের প্যটার্ণসমূহের দিকে তাকালে আমাদের চোখে খুব সহজে অনেক সত্য ধরা পড়বে। একেক প্রাণীর উৎকট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে আমরা গড়পড়তায় ঐ প্রাণীকে চিহ্নিত করে থাকি- যেমন, শিয়াল ধূর্ত, গরু নিরীহ, বাঘ হিংস্র, সিংহ গম্ভীর, কুকুর প্রভুভক্ত, শ্লথ অলস, বানর কৌতূহলী চঞ্চল, গাধা বোকা ইত্যাদি। গরু কি পারে বাঘের মতো হিংস্র হতে? শিয়াল কি পারে কুকুরের মতন বিশ্বাসী হতে? গাধা কি পারে সিংহের মতো গাম্ভীর্য দেখাতে? না পারে না। তারা কেউ কাউকে অনুসরণ করতে পারে না। এই কাজ করার জন্যে প্রাণীর যে জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্য দরকার তা তাদের নেই। তাদের মস্তিষ্কও তা সাপোর্ট করে না। কিন্তু মানুষ পারে। মানুষ তার নিজস্ব স্বভাব বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে, তেমনি পারে অন্যের স্বভাবকেও অনুসরণ করতে। এই কাজের জন্যে তাদের যথেষ্ট পরিমাণে জেনেটিক ও মস্তিস্কগত সাপোর্ট রয়েছে। কিভাবে সেটা সম্ভব, সেসবও ব্যাখ্যা করা যায় বিবর্তনবাদ ও বিহেভিয়েরাল সাইন্সের মাধ্যমে।

শুধু স্তন্যপায়ী আর অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীর সাথে মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের যে প্রভূত সাদৃশ্য রয়েছে তাই নয়, অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে রয়েছে তার অনেক দৈহিক মিল। মানুষের নখে থাকে কিটিন, যা পতঙ্গের দেহের বহিরাবরণের প্রধান উপাদান। স্বভাবগত দিক দিয়ে অন্য প্রাণীর সাথে মানুষের মিল খোঁজার আগে একটা প্রশ্ন এমনিতেই চলে আসে- অন্যান্য প্রাণীর মতন মানুষের কি নিজস্ব কোন স্বভাবের প্যটার্ণ রয়েছে? মানুষের নিজস্ব স্বভাব উত্তরাধিকার সূত্রে বিবর্তনের মাধ্যমে তার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী বিভিন্ন পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া। তার ভিতরে এই বৈশিষ্ট্যসমূহ সুপ্ত স্বভাব বৈশিষ্ট্য হিসাবে অবস্থান করে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তা ব্যবহৃত হয়। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে সমাজে চর্চিত যৌথ নীতি-সংস্কৃতিকে বুঝানো হচ্ছে। অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষেরও তিন ধরণের মৌলিক চাহিদা রয়েছে- খাদ্য, বংশবিস্তার ও আবাস। প্রাণীরা এই তিন চাহিদার কারণে পরিশ্রম করে, যুদ্ধ করে। মানুষও তাই করে থাকে। এই তিন চাহিদা পূরণে কাম, ক্রোধ ও লোভের মত মৌলিক অনুভূতিগুলো অন্যান্য প্রাণীর মতন মানুষের ভিতরেও কাজ করে। এই তিন অনুভূতির তীব্রতা মানুষের সুপ্ত স্বভাব বৈশিষ্ট্যসমূহকে ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। তখন মানুষের ভিতরে দৃষ্টিগোচর হয় বাঘের হিংস্রতা, শিয়ালের ধুর্তামীসহ নানা প্রাণীর আনকোরা বৈশিষ্ট্যসমূহ। তীব্র ক্রোধান্বিত ও কামোন্মত্ত একজন মানুষকে স্বভাবগত দিক দিয়ে পশুদের থেকে আলাদা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। সুতারং মানুষ তার মৌলিক স্বভাব বৈশিষ্ট্য, যা সে অন্যপ্রাণীর থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, প্রকাশিত হয়ে পড়ে উৎকট স্বভাব বৈশিষ্ট্য হিসাবে তারই মৌলিক অনুভূতিসমূহের উপরে ভর করে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কোন চরিত্রসমূহ কিভাবে মানুষকে অন্যপ্রাণী থেকে আলাদা করেছে? মানুষের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি, চক্ষুকোটর ও করোটীর সম্প্রসারণের ফলে হোমো ইরেক্টাস পর্ব থেকে মানুষের শারীরিক ও স্বভাবগত পরিবর্তন ত্বরান্বিত হতে থাকে। আধুনিক মানুষ অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স পর্বের আগ পর্যন্ত তার এই করোটির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন চলতে থাকে। প্রশ্ন হতে পারে, এখন কি তাহলে শরীর ও মাথার বিবর্তন থেমে গেছে। থামেনি, তবে এখন মানুষের বিবর্তনের উপর প্রাকৃতিক নির্বাচনের থেকে কৃত্রিম নির্বাচনের প্রভাব অনেক বেশী পড়ছে। হোমো সেপিয়েন্স পর্বের দুই তিন পর্ব আগে থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হতে থাকে। এই সমাজবদ্ধতাই তার অপরিবর্তনীয় একমুখী নিন্মবর্গীয় প্রাণীজ স্বভাবকে হাইবারনেশনে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করেছে। সমাজবদ্ধ জীবনে তার চাহিদা খাদ্য, বংশবিস্তার আর আবাসে আটকে না থেকে বিস্তৃত হতে থাকে বহু শাখা প্রশাখায়। টিকে থাকার জন্যে ব্যক্তিস্বার্থের পাশাপাশি যৌথ স্বার্থকেও প্রাধান্য দিতে হয় তাকে। এই বহুমুখী স্বার্থের আবর্তে পড়ে সে তার মৌলিক জান্তব স্বভাবকে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত করতে বাধ্য হয়। শীতনিদ্রায় চলে যেতে থাকে তার আনকোরা মৌলিক স্বভাবসমূহ। সেই কারণে সমাজ-বিচ্ছিন্ন মানুষ সমাজবদ্ধ মানুষ থেকে বিপজ্জনক। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে- সমাজবদ্ধ মানুষ বা পুরা সমাজ কি অন্য সমাজের জন্যে বিপজ্জনক হতে পারে না? পারে, বিপজ্জনক হতে পারে, যদি ঐ সমাজের মানুষের ভিতরে র‍্যশনালিজম বা যুক্তিবাদের চর্চা না থাকে, অথবা অন্য কথায় বলা যায়, যদি কোন সমাজে মানুষের মূল চালিকাশক্তি যুক্তিনির্ভর না হয়ে বিশ্বাস ও মিথনির্ভর হয়। মিথনির্ভর সমাজে মানুষের ভিতরে তার সুপ্ত মৌলিক স্বভাব, যা সে বিবর্তনের মাধ্যমে দূরবর্তী ও নিকটবর্তী প্রজাতিসমূহের কাছ থেকে পেয়েছিল, সেইসব স্বভাব বৈশিষ্ট্য উৎকট স্বভাব হিসাবে চর্চিত হতে শুরু করে।

কমনসেন্স বা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করে বুঝা সম্ভব, হোমো সেপিয়েন্সের মস্তিষ্ক সম্প্রসারিত হয়েছিল আবেগের ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তিকে শাণিত করার উদ্দেশ্যে। তা নাহলে গরু, বাঘ, গাধা ও শ্লথেরা তাদের আবেগ দিয়ে সমাজবদ্ধ জীবন শুরু করতে পারতো। তাদের আবেগের কমতি ছিল না, কিন্তু অভাব ছিল যুক্তি চর্চার। প্রকৃতি তাদের মস্তিষ্কে সেই বৈশিষ্ট্যের সন্নিবেশ ঘটায়নি বলে তাদের এই অক্ষমতা। প্রাকৃতিক নির্বাচনে মানুষ পেয়েছিল এই বৈশিষ্ট্য। কে না জানে, মস্তিষ্কের সব বৈশিষ্ট্য চর্চার মাধ্যমে বাড়ে এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। যেমন একজন গণিতবিদ যদি তার গণিত চর্চা ছেড়ে দেন, একজন সৃজনশীল লেখক যদি তার সাহিত্যচর্চা ছেড়ে আড়ৎদারিতে সব মনোযোগ নিবদ্ধ করেন, তাহলে কিছুকাল পরে তাদের সেই পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, অধিকাংশ ক্ষত্রে ফিরে আসা সম্ভবই হবে না। ব্যক্তির ক্ষত্রে যা সত্য, সমষ্টি ও সমাজের ক্ষেত্রেও তা সত্য। গণিত ও সাহিত্যের মতো যুক্তিও চর্চার বিষয়। একটা সমাজের অধিকাংশ মানুষ যদি র‍্যশনালভাবে চিন্তা না করে ভাবতে শুরু করে- একটা চলন্ত বাস যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে তখনই, যখন যাত্রীদের মধ্যে কেউ না কেউ বেনামাজি থাকে। যদি অনেক মানুষ এভাবে ভাবতে শুরু করে, তারেক মাসুদের মতন একজন হাফ-খ্রিষ্টানকে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলার কারণে একজন মুসলমান চালকের জেল-ফাঁসী হওয়া অন্যায় ও অনৈতিক। অথবা একগাদা মানুষ যদি এমন করে ভাবে- আমরা শ্রেষ্ঠ, আমাদের বিশ্বাস শ্রেষ্ঠ। তাই আমার বিশ্বাসে অবিশ্বাসী যারা তাদের মেরে ফেলা আমার বিশ্বাসেরই অংশ। এক দঙ্গল মানুষ যদি স্থির ভেবে বসে থাকে- শুধুমাত্র গরু খাওয়ার কারণে একজন সংখ্যালঘু মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়। তাহলে? তাহলে কি হবে? তাহলে সেই সমাজ অন্য সুস্থ সমাজের জন্যে বিপজ্জনক হবে, হতে বাধ্য। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই আজকে বাংলাদেশের অনেক মানুষের চিন্তার প্যাটার্ন এমনই হয়ে গেছে, যা মাঠ পর্যায়ে মানুষের সাথে না মিশলে বুঝা যাবে না। এমন একটা ইর‍্যশনাল ও বিপজ্জনক সমাজ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে তিন ভাবে- শিক্ষার মাধ্যমে, রুখে দিয়ে, পালিয়ে গিয়ে।

বিপজ্জনক ইরেশনাল বা যুক্তিহীন চিন্তা সমাজের ভিতরে শিকড়, কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতায় বেড়ে উঠে না এমনি এমনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এর জন্যে দরকার হয় উর্বর জমি, ও দক্ষ চাষি। কে সেই চিন্তা-দর্শনের মূল দার্শনিক। কোন প্রকাশনা মাধ্যম সেগুলোকে বহন করে চলেছে অক্ষরে অক্ষরে, পাতায় পাতায়, সেসব চিহ্নিত করা জরুরী। খামার আর খামারীকে চিহ্নিত করতে পারলে বিষবৃক্ষের চাষ বন্ধ করা সম্ভব। ধানের চারা বানাতে লাগে নরম কর্দমাক্ত সিক্ত বীজতলা। মাশরুম চাষের জন্যে দরকার হয় অন্ধকার স্যতসেতে বদ্ধ ঘর। যুক্তিরহিত চিন্তা-চেতনার চাষ করতে তেমনি লাগে মিথতাড়িত ও বিশ্বাসনির্ভর একটা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। যখন মিথ বা বিশ্বাস দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে তখন মানুষ পিছনে হাটতে থাকে। উল্টো বিবর্তনের মাধ্যমে ফিরে পেতে থাকে তার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা জান্তব উত্তরাধিকার। সাপের ছানার মতন কিলবিলিয়ে জন্ম নিতে থাকে নানান বিধ্বংসী মতবাদ। জংলীবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, ওহাবীবাদ, সালাফীবাদ, বজরংবাদ একই বিষবৃক্ষের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি মাত্র। এইভাবে মানুষ স্বভাবগতভাবে আবার রূপান্তরিত হয় নিন্মবর্গীয় পশুতে। দৈহিকভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পথ ধরে পশু থেকে মানুষের উত্তরণের ব্যাপারটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তবে পশুপ্রকৃতি ক্রমাগত চর্চার মাধ্যমে মানুষ থেকে দেহগতভাবে পশুতে রূপান্তর সম্ভব কিনা তা এখন ও প্রমাণিত নয়। তবে কালের সুদীর্ঘ যাত্রায় কিনা সম্ভব!

কথায় বলে, মাথা থাকলে মাথা ব্যথা হবেই। এটা সেই মাথা, যে মাথা তার সক্ষমতার চর্চা করে, চিন্তা ও যুক্তি যেখানে চর্চিত হয়। আমারা যারা মাথার চর্চা করি, তাদের মাথায় ব্যথা হওয়াই স্বাভাবিক। জনমানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের এই ব্যক-এভুল্যুশন যারা দেখেছেন, তাদের মাথায় ব্যথা হবেই। এই ব্যথার উপশম একমাত্র কাজে নেমে পড়ার ভিতরেই। কি করতে হবে, কি করলে এই সমাজকে ফেরানো যায়, তার চিন্তা আজকে শুধু সমাজবিজ্ঞানীদের করলে হবে না, করতে হবে সবাইকে। তবেই নিষ্কৃতি। আমাদের কাণ্ডজ্ঞান চুরি হয়ে গেছে। সেই হৃত কাণ্ডজ্ঞান পুনরুদ্ধারে দুর্বার অন্দোলন গড়তে হবে। তা না হলে সংসার পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াবে পঁচা শশা আর চালকুমড়োর আদলে। ফ্যাশন শিল্পের মতন একটা স্থূল শিল্প যদি চর্চার মাধ্যমে উৎকর্ষতা লাভ করতে পারে, তাহলে যুক্তির মতো একটা ধ্রুপদী ও অতিপ্রয়োজনীয় বিষয় গণচর্চায় নিয়ে আসার আবশ্যকতা সমাজের মাথাদের ভবতে হবে এবং সেই ভাবনা অনুসারে কাজে নেমে পড়তে হবে। সময় থাকতে থাকতে কাজে নামতে হবে। দিন থাকতে কাজ সেরে ফেলতে হবে, কারণ সময় গেলে সাধন হবে না।