লিখেছেন: প্রীতম চৌধুরী

[Disclaimer : হাতে কোন কাজ না থাকায়, এবং একটু ইন্টেলেকচুয়াল ইন্টেলেকচুয়াল ভাব আনার জন্য; (একেতো সেই যোগ্যতা আমার বিন্দুমাত্র নাই, কিন্তু নইলে আবার ভাতও নাই) তাই এই আকাইম্যা লেখা লেখলাম। মানে দুই এক পাতা পইড়াই জ্ঞান কপচানো শুরু করলাম।]
.
সতেরো আঠেরোর শতকে ইউরোপে প্রচলিত ছিল এক Enlightenment দ্বারা প্রভাবিত এক প্রকার ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা যার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুখস্থ বিদ্যা। এই ব্যবস্থার দ্বারা দুই রকম ছাত্র তৈরী হতে শুরু হলো; একদল, যারা শিক্ষকের দ্বারা শিখানো নানা প্রকারের জ্ঞান ও কৌশল ভালো মনে রাখতে পারত এবং অন্যদল, যারা তা পারত না। প্রথম ধরনের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টস, sciences, লজিক, ইত্যাদি নিয়ে পড়তে যেত। দ্বিতীয় শ্রেণী ছাত্রদের একটাই অপশন ছিল — মনে আছে ছোটবেলায় না পড়লে মাটি কাটার গল্প শুনতে হত? — অনেকটা সেই রকম। এর আগে সাধারণ লোকেরা শিক্ষিত হতে চাইলেও হতে পারত না। শুধু কিছু ক্রিস্টিন monk’রা তাদের নিজেদের লোকেদের শিক্ষিত করত। এর মধ্যে অন্যতম জেসুইট অর্ডারের monkরা যারা কোয়ালিটি education পৃথিবীর অনেক প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে (St. Xavier’s. etc.)।

Enlightenment যুগ এসে বাধালো ঝামেলা। এই যুগের সংস্কৃতিতে জ্ঞান অর্জন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠলো। তবে তখনও ভাবা হত যে একজন লোকের মস্তিষ্ক খুব ভালো অথবা ভালো (brilliant, good) হতে পারে, তবে অন্য আরেকজন লোকের অতটা ভালো বা পঁচা হতেও পারে (mediocre, poor)। এইসবই আমরা কিন্তু আজও দেখি শুনে বড় হয়েছি। এমন কি ছাত্র ছাত্রীদের মস্তিষ্কর ক্ষমতা মাপতে পরীক্ষা, যা কিনা আধুনিক পরিভাষায়ে বলা হয় standardized testing এখনো আমাদের স্কুলগুলো ব্যবহার করে চলেছে। পরীক্ষার মাপকাঠিগুলোর একেবারেই যুক্তিহীন বলা যেতে পারে। ধরুন কেউ ইংরেজিতে ৬০% পেয়েছে। এর মানেটা কি? এক ছাত্র ৬০% ইংরেজি দিয়ে কি করতে পারে — তাতে কত পার্সেন্ট গ্রামার আছে আর কত পার্সেন্ট কবিতা আছে, এবং কি ধরণের? অথবা ৮০% অঙ্ক? জিজ্ঞেস করলে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটা সিলেবাস। আবার সেই সিলেবাস রেখে পাশাপাশি নম্বর দেখলে কিছুই বোঝা যায় কি? এক ছাত্র সারা বছর ধরে ৫০% ইংরেজি শিখেছে। কেনই বা ১০০% শিখলো না : সিলেবাসেতো ১০০% জ্ঞান ছিল। তার মানে কি সে সেই সব না শিখেই আরো উচ্চ মাত্রার জ্ঞান শিখতে চলে যাবে? আবার তার জীবনে ৫০% দিয়ে সে কি করতে পারবে? ৫০% মুখস্থ কি যথেষ্ট, না আরো একটু হলে ভালো হত? ৪০% অঙ্কে ঠিক কি জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করেছে এক ছাত্রী এবং সেটা সে কি ভাবে এখন বা পরে কাজে লাগাতে পারে? আমাদের ব্যবস্থাগুলোতে কিন্তু এই সব প্রশ্ন ওঠানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই কারণ সিলেবাস একেবারে বাঁধা এবং তার বাইরে সব কিছু অদরকারী। খুব ভালো কোনো শিক্ষক হলে সে সিলেবাস ও পরীক্ষার বাইরে কিছু শেখানোর চেষ্টা করে তবে exceptionটা rule কেন হবে?

Enlightenment’র জ্ঞান অর্জনকারী ব্যবস্থার বহুবিস্তৃত ব্যবহারের মধ্যে আরেকটি নতুন বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছিল ইউরোপে। নাম নিশ্চয় শুনে থাকবেন: ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশান। সরকারী অনুমতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠলো দেশের উন্নতির জন্য একটি অন্যতম উপাদান। এর দ্বারাও জ্ঞান অর্জন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই প্রভাবিত হয়েছিল। আধুনিক ভাবনা চিন্তা চর্চা করতে গিয়ে তা ভালোভাবেই প্রভাব বিস্তারিত করেছিল।

আধুনিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জন ভিত্তিক (knowledge oriented) নয় তবে অনুসন্ধান ভিত্তিক (inquiry oriented)। এটাকে বলা হচ্ছে একটি দৃষ্টান্ত স্থানান্তর (paradigm shift)। এর ফলে স্কুলগুলোর দৈনন্দিন কার্যকলাপ একেবারেই পাল্টে গেছে। এমন কি শিক্ষকদের কাজও অন্য ধরণের হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরানো গুরু শিষ্যর সম্পর্ক বদলে এখন শিক্ষক হয়ে গেছে facilitator. অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন করাটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার নয়, তবে কি জ্ঞান অর্জন হচ্ছে এবং কি ভাবে হচ্ছে সেটা ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এই অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে না হয় ইচ্ছা হলে অন্যদিন আলোচনা হবে। ইচ্ছা না হলে আর হবেনা। আপাতত এই পর্যন্তই। আর লিখতে ইচ্ছা করছে না। কারন এইসব বইলা আল্টিমেটলি নিজেরে বুদ্ধিজীবী বানাইয়া মুই কি হনুরে ছাড়া আর কিছুইতো হইতাসে না।

এর চেয়ে শীতনিদ্রাই আপাতত উত্তম বলে মনে হচ্ছে………………

তথ্যসূত্র : Education and Social Change: Themes in the History of American Schooling
By John L. Rury

Lawrence Erlbaum Associates, 2002
Literacy in Early Modern Europe: Culture and Education, 1500-1800
By R. A. Houston
Longman, 1988