(১)
“হ্হ, পৃথিবীর অইন্য হগল কাজকম্মে তো দেহি আইলসামি নাই। ল্যাখালুখা দ্যান , ক্যাচাল কৈরেন্না।’’
কাজী রহমানের তাগিদ।

হ্যাঁ, কাজী দাদা, অনেকদিন লেখালেখি হয় না। দেখাদেখিও কম। আর তা হয় না চোখাচুখির ভয়ে। না, জঙ্গিদের চোখাচুখির ভয়ে নয় — সরকারী বিধি নিষেধও নয় । তবে কিসের ভয় ? তা বলেই চেষ্টা করব ‘মুক্তমনা’য় আবার আগের মতো সরব হতে।

আগে আমার অফিস সময়েও ‘মুক্তমনা’ খোলা থাকতো। কাজের ফাঁকে আমার আনন্দ—আমার বিশ্রাম — আমার দম নেয়া ছিল ‘মুক্তমনা’য় চোখ বুলানো। প্রতিটি লেখা পড়া — মন্তব্য করা— প্রতিত্তোরও চলতো। এখন কোন কোন শুক্র শনিবার এক নাগাড়ে কিছু লেখা পড়ে ফেলি । কদাচিৎ মন্তব্য করি। কিন্তু নিয়মিত খুলি না। কেন ? কারণ ‘মুক্তমনা’ খুললেই অভিজিৎ রায়ের মিষ্টি মাখা হাসি হাসি মুখ আমাকে বিষন্ন হতে তাড়িত করে। অনন্ত বিজয়ের প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকা চোখের কঠিন উত্তর জানা নেই বলে আমাকে অস্বস্থিতে ফেলে। নীলয়ের কৌতূহলোদ্দীপক চাহনি আমাকে কিংকর্তব্যবমূঢ় করে দেয়। বাবুর সরল মুখাবয়ব আমাকে বিহ্বল করে। রাজীব হায়দারের কোমরে হাত রেখে দাঁড়িনোর ভঙ্গি আমাকে থমকে দেয়। অভিজিৎ — অনন্ত বিজয় — নীলয় — যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কথোপকথন – বার্তা আদান প্রদান হতো , তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু ভুলে থাকার মতো মনের জোর আমার নেই। অভিজিৎ ও অনন্ত বিজয়ের মৃত্যুর পর আমি তাদেরকে নিয়ে লেখার অনেক চেষ্টা করেছি। পারিনি। লেখা শুরু করলেই আবেগে আড়ষ্ট হয়ে যেতাম।

আমি এখন প্রায়শঃই চুটিয়ে ফেইসবুক করি।, যা আমি আগে সাধারণত করতাম না। ল্যাপটপে সিনেমা দেখি। ট্যাবে ও মোবাইলে গেম খেলি, যা আমি আমার ছেলেমেয়েকেও করতে দেখলে বিরক্ত হতাম। এখন ওরা হয় আমার প্রতি। আমার অনেক লেখা অসম্পূর্ণ রয়েছে। শুরু করেছি , কিন্তু শেষ করার তাগিদ পাই না। জীবন থেমে না থাকলেও চলতেও চায় না। চাকা ঘোরার মতো আমি ঘুরছি। ঠুনকো মোহে নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখা্র প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত আমি। চারদিকের সব অস্বস্থি— বিচারহীনতা— অরাজকতা – প্রতারণা ভুলে থাকতে চাই।

চার্বাক ( অভিজিৎ রায়ের) নামে একটা ই মেইল আই ডি এর সাথে এখন আর কোন মেইল চালাচালি নেই। কাজেই এর ঠিকানা চোখের কাছে কড়া নাড়ে না। অনন্তের নম্বরটা মোবাইল থেকে মুছে ফেলেছি। কাজেই ইংরেজি ‘এ’ অক্ষর দিয়ে দিয়ে মোবাইলে কোন নম্বর খুঁজতে গেলে মোবাইল স্কিনে অনন্ত ভেসে উঠে না। কিন্তু তারপর — তারপরও কেমন যেন পাপ্পারাজি পিছু ছাড়ে না।

আজ আবার বাল্য বিয়ে নিরোধ নিয়ে ফেইস বুকে আমার একটা মন্তব্য পড়ে কাজী দাদার আবার তাগিদ। “এতো প্রেম বলো কোথা রাখি” —-। কাজেই ওটাও জুড়ে দিলাম এর সাথে। দেখি লেখার বন্ধ্যাত্ব কাটে কি না।

(২)
তোরা যে যাই বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই” —- লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েও আমি বাহবা পেতে চাই। বিয়ের বয়স কমিয়েও —- তাই ২০২১ সালের মধ্যে ১৫বছরের নীচে শিশু বিবাহ দূরিকরণ এবং ১৫-১৮ বছরের মধ্যে শিশু বিবাহ এক–তৃতীয়াংশে হ্রাসকরণের বিকল্প যেন নাই।

রাজনীতি প্যাঁচে ফেলে — রাজনৈতিক চাল চেলে “মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়” বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬ খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন! (বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের মহান ও যুগান্তকারী প্রচেষ্টা !!!!!) !

মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রথাগত সামাজিক অপরাধের প্রধান দুটি দিক ফিমেইল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) বা মেয়েদের খতনা এবং বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বা চাইল্ড আর্লি ফোর্সড ম্যারেজ (সিইএফএম) বিরোধী সামিট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিয়েছিলেন এ অনুষ্ঠানে। উনি ওয়াদা করে এসেছিলেন যে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫বছরের নীচে শিশু বিবাহ দূরিকরণ এবং ১৫-১৮ বছরের মধ্যে শিশু বিবাহ এক – তৃতীয়াংশে হ্রাসকরণ। কাজেই বিয়ের বয়স ১৬ বছর তো করতেই হয়। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সকল শিশু বিবাহ নির্মূলকরণ। কি SMART পরিকল্পনা !!

১৯২৯ সালে বৃটিশরা মেয়েদের বিয়ের আইনগত বয়স করেছিল ১৮। আর আমরা ২০১৬ তে এসে এটা ধরে রাখতে পারিনি। পিছিয়ে গেছি। এ পিছানো আবার কারো চোখে পড়ে না। কারণ আমরা সে কানাওলার ফাঁদে পড়েছি। হবু চন্দ্র রাজার গবু মন্ত্রী পরিষদের খপ্পরে পড়েছি।