নাহেদ হাত্তার হত্যা

জর্দানের লেখক নাহেদ হাত্তার একটি কার্টুন ফেইসবুকে শেয়ার দিয়েছিলেন। এর ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং আগস্ট মাসে গ্রেফতার হোন। এ মাসের প্রথম দিকে তিনি জামিন পান। গত রবিবারে আদালতে শুনানিতে অংশ নিতে গেলে মাথায় পর পর তিনবার গুলি করে তাকে হত্যা করে উগ্রবাদিরা। কার্টুনটি নিচে দিলাম

কার্টুন অনুবাদ: দূরের পাখি।

এ কার্টুনে এমন কী আছে যে এজন্য কাউকে হত্যা করে ফেলতে হবে?

একটি ধর্মবিশ্বাস যদি সবরকম পরিবেশে একই রকম ফল দেয় তাহলে ধরে নেয়া ভুল হবেনা যে ঐ ধর্মের মূল ভিত্তিতেই কোনো গুরুতর সমস্যা আছে। মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, ধনী, গরিব, গ্রাম, শহর উন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ, আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া, আফিকা, মধ্যপ্রাচ্য সবখানেই একই ফল।

মডারেট মুসলিমরা খুব অনুযোগের সুরে বলেন নাস্তিকরাও ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনে ঠিক কাজ করছেনা। এত বড় একটা ধর্ম আর কেউ এর সমালোচনা করবেনা, এর নিন্দা করবেনা এটা আশা করেন কিভাবে সেটাই মাথায় ঢুকে না। মডারেট মুসলিমরা তাদের শান্তি প্রচার করতে আসেন শুধু আমাদের কাছে। কখনো দেখিনা তাদেরকে ইসলামি উগ্রপন্থীদের কাছে গিয়ে এসব বলতে। উগ্রপন্থীরা যখনই কোনো হামলা করে তখনই উনারা ‘উহা সহীহ ইসলাম নয়’ বলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন মাত্র।

গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের ভিডিও

একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে গুলশানে হামলাকারী ৫ জঙ্গীকে দেখা গেল। বেশ হাস্যকর একটা ভিডিও, ভয়ংকর কমেডি। তারা দারুন একটা কাজ করেছে! অল্প বয়সী ও একজন সন্তান-সম্ভবা মহিলাসহ ২২ জন নিরপরাধী, নিরস্ত্র মানুষ রাতের খাবারের জন্য এসেছেন, যাদের বেশির ভাগই বিদেশী তাদেরকে অত্যন্ত নৃশংস উপায়ে হত্যা করে নাকি তাগুতকে ধ্বংস করে ফেলেছে! হায় ইসলাম, হায় শান্তি!

ভিডিওতে কিছু আয়াত ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে বলি

আস সফ
৮) এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।

মানে মহান আল্লাপাক যিনি মহাবিশ্ব এক নিমিষে সৃষ্টি করে ফেলতে পারেন তিনি মানুষকে সৃষ্টি করে এখন তাদের সাথে কুস্তি খেলছেন! কী যা তা অবস্থা। এগুলোতে বিশ্বাস করে কেউ মানুষ হবে কিভাবে!

আবার এই আয়াত দেখেন। সুরা আল আনফাল

৩০) সেই সময়ের কথাও স্মরণ করার মত, যখন সত্য অস্বীকারকারীরা তোমার বিরুদ্ধে নানান রকমের চক্রান্ত আঁটছিল। তারা চাচ্ছিল তোমাকে বন্দী করতে। হত্যা করতে বা দেশ ছাড়া করতে। তারা নিজেদের কূট-কৌশল প্রয়োগ করে চলছিল, অন্যদিকে আল্লাহও তাঁর কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন আর আল্লাহ সবচেয়ে ভাল কৌশল অবলম্বনকারী।

এখানে একই শব্দের অর্থ একবার করা হয়েছে ‘কৌশল’ আবার করা হয়েছে ‘চক্রান্ত’। নাহলে আল্লাপাক হয়ে পড়েন ভাল চক্রান্তকারী। নিতান্ত তুচ্ছ মানুষের তুলনায় আল্লাহর বুদ্ধি কতটা প্রবল আর কৌশল যে কতটা মহান সেটা বিবৃত হয়েছে এখানে। পুরাই লেজেগুবরে অবস্থা!

প্রথম বক্তা বলেছে কোরানের আয়াত ‘তোমাদের উপর সশস্ত্র যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে’।

কোরানে জিহাদের পাশাপাশি অনেক বার ‘ক্বিতাল’ শব্দটি এসেছে, এর মানে ‘সশস্ত্র যুদ্ধ’ অর্থাৎ কতলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা অভিযান। ক্বিতাল মানে যে কতলের আয়োজন সেটা বোঝার জন্য কি আরবি মহাপণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন আছে? উনি বলল, ‘কাফের-মুশরেকদের বিরুদ্ধে সর্বাবস্থায় যুদ্ধ করতে থাকতে হবে’। হ্যা, শান্তি আসবেই আইএস এর হাত ধরে।

দ্বিতীয় বক্তা যার চেহারার মধ্যেই ভাড়ামির ছাপ। সে বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা দিল, ‘হে বাংলার মুসলিম! আল্লার সাথে শিরক করো না।’

আল্লার এমন অবস্থা যে উনার সাথে কাউকে শরিক করলে তিনি ভেঙ্গে পড়েন। এরকম একটা হিংসুক, আত্মম্ভরী ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে কিভাবে শান্তিপ্রিয় হওয়া যায়, জানি না! আসমান আর জমিনের সৃষ্টি কথাটারই বা মানে কি! মহাবিশ্ব যে কতটা বিশাল আর সেখানে পৃথিবী অত্যন্ত গৌন একটা ব্যাপার সেটা আল্লা পাকের কখনো জানা ছিল না। এ বক্তা কোরান পড়ে বলছেন, তোমাদের নিকঠবর্তী কাফেরদের হত্যা কর। হলি শিট!

এরপর সবচেয়ে বড় কমেডিয়ানের আবির্ভাব। তিনি নির্বাস। ছুরি উচিয়ে বেশ স্মার্ট ভঙ্গিতে বলল, হে ক্রুসেডাররা, তোমরা বাংলার জমিন ছেড়ে পালাবে। তোমাদের ঘুম আমরা হারাম করে দেব।

বলাবাহুল্য এটি শুনেই আমার ঘুম পাচ্ছে! এর বক্তব্যের মধ্যে সম্ভবত একটা গরু ‘হাম্বা’ বলে ডাক দেয়। এরা কি গ্রামে কোথাও এ ভিডিও করেছে?

চতুর্থ বক্তা। হে বাংলার পুরুষত্বহীন মুসলিম সমাজ! …ফিরে এসো কেল্লাফতের ছায়াতলে!

পঞ্চম বক্তা। কোরান থেকে বলল, আল্লার পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ কর। … তোমাদের জাহান্নামে পাঠানোর জন্য আমাদের ছুরি ধারালো হয়েছে।

এদের নিয়ে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। মাঝে মাঝে বিষন্ন হয়ে ভাবি, মানুষকে হত্যা না করে বরং মৃতপ্রায় অগণিত মানুষকে বাচানোর সংগ্রামে এসব যুবক আত্মনিয়োগ করতেই পারত। ধর্ম তাদের এত অন্ধ করা দিল যে নিজে মারা গেল অন্যকেও হত্যা করল। ধর্মান্ধতার মত এত অন্ধত্ব আর হয়না।

আহম্মকের জান্নাত

এবার একটু চোখ রাখি জান্নাতের দিকে। আহম্মকের দল মানুষ হত্যা করে, নিজে মরে গিয়ে কোন জান্নাতে যেতে চায়। না, মাত্র একটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করব। সম্পূর্ণ আলাপ করতে গেলে একখানা মহাভারত হয়ে যাবে।

কোরানের আয়াত দেখি। লিংক ১, লিংক ২

পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [সুরা মুহাম্মদ, ৪৭; আয়াত ১৫]

নহর মানে হচ্ছে নদী। অর্থাৎ জান্নাতে চারটি নহর বা নদী থাকবে
১। পানির নদী
২। নির্মল দুধের নদী
৩। সুস্বাদু মদের নদী
৪। পরিশোধিত মধুর নদী

পানি, দুধ, মদ, নদী এই চারটি দ্রব্যই মুহাম্মদের যুগে মক্কায় চরম আকাঙ্ক্ষার বস্তু ছিল। নদী স্বভাবতই পানির। কিন্তু অপর তিনটি লক্ষ করুন। কী কষ্ট-কল্পনা! দুধের নদী! দুধ আমরা পাই প্রাণী থেকে এবং সে দুধ প্রাণীরা তাদের বাচ্চাদের জন্য উৎপাদন করে, আমাদের জন্য নয়। তৎকালীন পশুপালক সমাজে দুধের প্রচণ্ড চাহিদা ছিল। কিন্তু পশু থেকে যে দুধ আহরিত হত তা সব সময়ই ছিল অতি অল্প। আধুনিক যুগের আগে একই অবস্থা ছিল সর্বত্র। মুহাম্মদ এমন এক জান্নাতের কথা কল্পনা করলেন যেখানে গাভীর দুধ আসবে নদী দিয়ে, এমন প্রতিশ্রুতি শুনে আত্মঘাতী হামলা করে নয় বরং হেসেই মরে যেতে ইচ্ছে হয়। আচ্ছা, এই এক নদী দুধ একজন মানুষ পান করবে কিভাবে? এর দরকার কী, দৈনিক এক লিটারই তো যথেষ্ট, তাই না? এত দুধ দিয়ে একজন জান্নাতি করবেটা কী? জান্নাতে না যা ইচ্ছে তা পাওয়া যায়, তাহলে আলাদা ভাবে এই লোভ দেখানোর মানে কী?

আমরা আমাদের বাস্তব জগতে মহান পরওয়ারদেগারের কার্যকলাপের নমুনা দেখি। অসংখ্য শিশু পুষ্টির অভাবে ভুগছে, মারা যাচ্ছে। মাত্র এক গ্লাস দুধের ব্যবস্থা যাদের জন্য করতে পারেন নাই মহান রিযিক দাতা তিনি নাকি জান্নাতে দুধের নহর বয়ে দিবেন। আপনারা কি জানেন, প্রতিদিন ২১ হাজার মানুষ না খেতে পেরে মারা যায়, পৃথিবীতে ৮১ কোটিরও বেশি মানুষ ঠিকমত খাবার পাচ্ছেনা। নয় জনে একজন ক্ষুধার্ত অবস্থায় শোতে যায়। (জাতিসংঘের হিসাব মতে)।

একই প্রশ্ন মধু আর মদ নিয়েও। দুধ, মদ আর মধু এর আগে ব্যবহৃত বিশেষণগুলো দেখেন। জান্নাতে নদী দিয়ে দুধ আসবে, সেটা যে নির্মল হবে, ভেজাল থাকবে না তা বলে দিতে হয়। মদ সুস্বাদু হবে, কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে এটা পান করে নাকি কেউ মাতাল হবেনা! তাহলে সেটা আবার মদ হল কিভাবে? আর পরিশোধিত মধু! সর্বশক্তিমান, সবজান্তা আল্লাহপাক যিনি ‘কুন’ বললেই হয়ে যায় তিনি মধুর পরিশোধনাগার বসাবেন জান্নাতে। মধু তো থাকবে মৌচাকে। মৌমাছরা মধু আহরণ করে তাদের ছানাপোনাদের জন্য, মানুষের জন্য নয়। মানুষ মৌমাছিদের তাড়িয়ে মধু সংগ্রহ করে। এই মধু নদী দিয়ে আসবে কেন? এক গ্লাস মধুই যেখানে যথেষ্ট সেখানে মধুর স্রোতে ভাসিয়ে দেয়ার চিন্তাটা একেবারেই আজগুবি। একবার কল্পনা করেন, নদী দিয়ে মধু প্রবাহিত হচ্ছে! আবার ভেবে দেখেন নদী দিয়ে শুধু মদ আর মদ আসছে। কল্পনার একটা সীমা থাকা কি উচিত ছিল না?

একজন মানুষকে প্রতিদান হিসাবে পানি, মধু আর দুধের নহর দেয়া হচ্ছে সেটা অসুস্থ ও হাস্যকর চিন্তা। এখনকার কোনো একজন সুস্থ বুদ্ধির মানুষকে এরকম প্রতিদান দেয়ার কথা বললে সে কি তা গ্রহণ করবে? দেড় হাজার বছর আগে এসব দ্রব্যের অভাবে প্রবলভাবে ভোগা মরুভূমির মানুষগুলোকে ধোঁকা দেয়া হয়েছিল হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থে। আমাদেরকে মাথা খাটাতে হবে। বিরাট প্রতিদান শুনলেই মাথা খারাপ করা চলবে না। মানুষের অতি-লোভ তার স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। এজন্য প্রতারকরা মোবাইল ফোনে, ইমেইলে বিশাল অংকের লটারী বিজয়ের ভুয়া সংবাদ দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়।

আয়াতটির পরের অংশে আসি। বলা হচ্ছে, জান্নাতে ফলমূল থাকবে আবার সাথে থাকবে ক্ষমা। এখানে জান্নাতীরা কি পাপ করতে থাকবে যাতে মহান ক্ষমাশীল আল্লাপাক তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন? জান্নাতে তো কোনো অপরাধ থাকার কথা না, তারপরেও এই ক্ষমার ব্যাপারটা এলো কোত্থেকে?

আর জাহান্নাম নিয়ে থ্রেট আছে! উপরোক্ত আয়াতে দেখেন, জাহান্নামীদের পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে! কী পৈশাচিক চিন্তা ছিল আমাদের দয়াল নবীর! আল্লাহকে কী নৃশংস রূপে চিত্রিত করেছেন তিনি!