লিখেছেনঃ মাসুদ সজীব

ভারতবর্ষ ভাগ থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তান-পূর্ব পাকিস্তানের দ্বন্দ-সংঘাত এবং যুদ্ধে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ নামক মানচিত্রে পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম । স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ত্রিদিব রায়ের বিতর্কিত ভূমিকা তেমন ভাবে আলোচিত না হলেও পাকিস্তানে এই ত্রিদিব রায় জাতীয় বীর বলে পরিচিত । অথচ চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৩৩ সালের ১৪ই মে বর্তমান বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন । তিনি রাজা নলিনাক্ষ রায় ও তার স্ত্রী বিনিতা রায়ের সন্তান । ত্রিদিব রায়ের স্কুল জীবন শুরু হয় চটগ্রামে সেন্ট স্কলাস্টিকা কনভেন্টে । পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে এবং ভারতের কুরসেওং ভিক্টোরিয়া স্কুলে তা অব্যাহত রাখেন । পরবর্তীতে তিনি লন্ডনের ইনস অব কোর্টে আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন এবং ১৯৫৩ সালে ব্যারিস্টার-এট-ল হন ।

চাকমা জনগণের ৪৯তম রাজা নলিনাক্ষ রায়ের মৃত্যুর পরে ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ রাজা ত্রিদিব রায় আনুষ্ঠানিকভাবে চাকমা রাজ্যের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ৫০ তম চাকমা রাজা হন । ত্রিদিব রায়ের শাসনামলের মাধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রে বাস করা চাকমা জনগোষ্ঠী শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ। পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী হয়েও ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬ দফা, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর বিপক্ষে ছিলেন এই ত্রিদিব রায় । দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের পোষা ভৃত্য। শুধু তাই নয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও এই মানুষটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার সব ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছিলেন। নিজের জন্মস্থান, নিজের পরিবার আর রাজ্য ফেলে যিনি পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে মন্ত্রীত্ব নিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে তার ঝুঁকে পড়ার কারণ কি? কেনইবা তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রের অধিবাসী হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ব্যকুল ছিলেন? আর কিভাবেই বা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের জন্য অভিশাপ হয়েছিলেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর এবং বাংলাদেশের সাথে রাজা ত্রিদিব রায়ের এমন বৈরী আচরণের কারণ অনুসন্ধানের এ লেখার মূল উৎস প্রিয়জিৎ দেবসরকার এর বই ‘দ্য লাষ্ট রাজা অব ওয়েস্ট পাকিস্তান’ । এ লেখা কে বইটির গবেষনা কর্মের নানান তথ্যের উপর নির্ভর করে রাজা ত্রিদিব রায় কে মূল্যায়ন ও বলা চলে কিংবা সংক্ষিপ্ত আকারে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য কে সংযোজন-বিয়োজন করে একটি চরিত্রকে বিশ্লেষন এবং সে বিশ্লেষনের মাধ্যমে ত্রিদিব রায় কে উপস্থাপন করাও বলা চলে । এছাড়া রাজা ত্রিদিব রায়ের আত্মজীবনীমূলক বই The Departed Melody , ডা. এম এ হাসানের ‘যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ’ , সিদ্ধার্থ চাকমার ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম গ্রন্থ’ জামাল উদ্দিনের ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’ , শরদিন্দু শেখর চাকমার ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ , শীর্ষক বইগুলো থেকে নানান তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে নির্মোহভাবেই ত্রিদিব রায় কে মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ধর্ম ভিত্তিক তথা হিন্দু-মুসলমান ভিত্তিক ভারতবর্ষ ভাগের মাধ্যমে ভারত এবং পাকিস্তানের (পূর্ব এবং পশ্চিম) জন্ম হয় । বাঙলা ভাগ করার জন্যে দায়ী স্যার সিরিল রেডক্লিফ ১৯৪৭ সালের ১২ই আগষ্ট পার্বত্য চট্রগ্রাম কে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাছে দিয়ে দেন । পার্বত্য চট্রগ্রাম কে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে তৎকালীন চাকমা রাজা নলিনাক্ষ রায় বিস্মিত হলেও তা মেনে নেন । লর্ড লিনলিথগো ১৯৩৬ সালে বৃটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল হওয়ার পর এ মর্মে এক আদেশ জারি করেন যে বৃটিশদের দ্বারা নিশ্চয়তা প্রদান করা পৃথক রাজ্য অধিকারবলে চাকমা এবং বোমাংরা নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে থাকবে । ফলে বৃটিশ আমল থেকে চাকমারা পৃথক এবং স্বায়ত্বশাসনের মর্যদা ভোগ করতো । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কিছু নেতারা যদি ও পার্বত্য অঞ্চল কে ভারতের সাথে সংযুক্তির দাবি করেছিলেন সত্যি কিন্তু পন্ডিত নেহরু চট্রগ্রামের স্বার্থে লড়তে অনিচ্ছুক ছিলেন । ভারত প্রজাতন্ত্রে যোগ দেয়ার জন্য বিকল্প কোন উপায় খুঁজে দেখতে ১৯৪৭ সালের ১৯ আগষ্ট অনুষ্ঠিত তাদের একটি সভায় রাজা নলিনাক্ষ অংশগ্রহণ করেন । দিল্লির কোন প্রত্যক্ষ সহায়তা না পাওয়ায় পার্বত্য চট্রগ্রাম ভারতের সাথে যুক্ত হতে ব্যর্থ হয় । আর এভাবেই কোন রক্তপাত ছাড়া পার্বত্য চট্রগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায় ।

ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মের পরপর দেখা যায় পশ্চিম পাকিস্তানের শোষন, দমন, বৈষম্য আর চাপিয়ে দেওয়া নীতির প্রভাবে পূর্ব পাকিস্তানে যখন ক্ষোভ, ঘৃণা আর অবিশ্বাস দিনে দিনে দাঁনা বাঁধছিলো তখনও চাকমা রাজ্যে সেগুলোর প্রভাব পড়েনি । এর মূল কারণ পূর্ব পাকিস্তানের বাকি অংশের তুলনায় চাকমা রাজ্য কিছুটা বেশি মাত্রায় স্বায়ত্বশাসন ভোগ করতো । ফলে স্বভাবতই চাকমা রাজা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের নীতির পক্ষে । ৫২ তে ভাষা আন্দোলনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে যখন বিক্ষোভ দিকে দিকে ছড়িয়ে গেছে তখন পার্বত্য অঞ্চলে সেই বিক্ষোভ পৌছায়নি সেই নতজানু নীতি এবং ভাষাগত বৈষম্যর জন্যে । উল্টো ভাষা আন্দোলন চাকমা রাজাকে রাজনৈতিক ও সামরিক উভয়ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আরো কাছে নিয়ে যায় । ১৯৪৯ সালের ৭ই মার্চ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১২ দফা নিয়ে যে লক্ষ্য প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সেখানে উর্দুভাষী মুসলমানদেরকে তাদের বাঙলাভাষী প্রতিপক্ষের চেয়ে জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠত্বের গল্প বানানোর ভিত্তি সৃষ্টি করা হয় । এবং এ লক্ষ্য প্রস্তাবের মাধ্যমে বাঙলাভাষী জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলক ভাবে উর্দু চাপিয়ে দেয়ার রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা ও যখন লক্ষ্য প্রস্তাবের বিরোধীতা করছিলো তখন ও পূর্ববর্তী চাকমা রাজা নলিনাক্ষা রায় কোন প্রকার মৃদু প্রতিবাদ ছাড়াই সর্বান্তকরণে এটা মেনে নেয়।
আপত দৃষ্টিতে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার, অধিক সুযোগ সুবিধা ভোগের আশাতেই চাকমা রাজা নলিনাক্ষা এবং পরবর্তীতে তার পুত্র ত্রিদিব রায় পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো বলে প্রতিয়মান হয়। রাজা ত্রিদিব রায়ের বিশ্বাস ছিলো পূর্ব পাকিস্তান কখনো পাকিস্তানের শাসনভার পাবে না, শক্তিতে সামর্থ্যে তারা কখনো পশ্চিম পাকিস্তানের যোগ্য হবে না । সেই আস্থা আর বিশ্বাস থেকেই ৫৪র নির্বাচন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সবখানেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিলেন । এই অন্ধ ভক্তি কিংবা বিশ্বাস যে কত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে এনেছে তা আমরা দেখতে পাই ১৯৫৭ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে হাজার হাজার চাকমা জনগোষ্ঠীর স্থানচ্যুতির মাধ্যমে ।

১৯০৬ সাল থেকে কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় একটি বাঁধ স্থাপনের উপকারিতা সম্পর্কে সমীক্ষা চালানো শুরু হলেও বারবার সেটি বাতিল হয়, কেননা এতে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতার ঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয় বলে । ১৯২৩ এবং ১৯৫০ সালে আরও দুবার এমন সমীক্ষা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই বাঁধ স্থাপন প্রস্তাবটি বাতিল করা হয় । কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান নামে চির ষড়যন্ত্রকারী দেশটির চক্রান্তের কোন শেষ হয় না এতে । চাকমা জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরানোর সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে ১৯৫১ সালে চাকমা রাজধানী রাঙামাটি থেকে সাত মাইল উজানে চিত্নোরাম স্থানে বাঁধ স্থাপনের স্থান ঠিক করা হয় এবং ৫৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় । বাঁধের নির্মানস্থল চাকমা রাজধানী রাঙামাটির এতো কাছে হওয়ায় সহসায় এটি চাকমা জনগণের জন্য বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনে । চাকমা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যারা কর্ণফুলী নদীর তীরে বসবাস করতো এবং তুলা উৎপাদন ও কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিলো তারা এ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।

বাঁধের ফলে সৃষ্ট অববাহিকায় উঁচু মানের প্রধান জমিগুলো ( আনুমানিক ৫৪হাজার একর ভূমি ) বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় । ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয় যার মাঝে প্রায় ৪০ হাজার চাকমা শরণার্থী স্থানচ্যুত হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের আশ্রয় প্রার্থনা করে । রাজা ত্রিদিব রায় শুরুতে এই প্রকল্পে খুব একটা সমর্থন না দিলেও এর বিরুদ্ধে কখনো সেচ্চার ছিলেন না । বরং ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য নানান সুপারিশালা নিয়ে সেই আত্নঘাতী প্রকল্পকে পরোক্ষভাবে সমর্থন জানান । পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেখানে পার্বত্য অঞ্চল অধিক স্বায়ত্বশাসন ভোগ করতো সেখানে রাজা ত্রিদিব রায় এমন একটি আত্নঘাতী প্রকল্পকে সমর্থন জানানোর কি অর্থ হতে পারে? খুব সম্ভব রাজা একটি দুর্বল জনগোষ্ঠীকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এমন ইচ্ছে থেকেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের চাপাবাজিমূলক প্রচারণাকে সমর্থন দেন । ইতিহাসের চরম সত্য হলো তার কোন সুপারিশই ঐতিহাসিক রাঙামাটি রাজবাড়ি (প্রসাদ) কে রক্ষা করতে পারেনি । যা ডুবে গিয়েছিলো এবং ১৯৬১ সালে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিলো । ( তথ্য : দ্যা লাষ্ট রাজা অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান, পৃষ্ঠা- ৪৫ )

কাপ্তাই জলবিদুৎ প্রকল্পের ৫টি ইউনিট থেকে আনুমানিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হতো যা ছিলো সমগ্র পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদার ( ২২০০ মেগাওয়াট ) মাত্র ৮-১০ শতাংশ । সামান্য সুবিধার জন্য এতে বড় মানবিক বিপর্যয় এবং পরিবেশগত বিপর্যয় ছিল প্রশ্নসাপেক্ষ । স্বায়ত্বশাসনের স্বপ্ন এবং নিজের মর্যাদায় বিভোর রাজা ত্রিদিব রায় তার জনগণকে রক্ষা করার জন্য বাস্তবে কিছুই করেননি বরং তথা কথিত উন্নয়নের মিষ্টি মিষ্টি প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের পক্ষে না দাঁড়িয়ে তিনি পাকিস্তানিদের সাফাই গেয়েছেন, তাদের চাপিয়ে দেওয়া সকল ভাষ্য মেনে নিয়েছেন। নিজের জনগণের দুর্দশা ও কষ্টের তুলনায় রাজার নিজের মর্যাদা এবং দুর্বলের উপর স্বায়ত্বশাসনের সুবিধাদি ত্রিদিবের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিলো বলেই পশ্চিম পাকিস্তানের সব কিছুকে মাথা পেতে মেনে নিতে শিখেছিলেন ।

বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে চাকমা স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের পতনের সূচনা লগ্নে ও চাকমা রাজা তাঁর হঠকারী অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি। তিনি চাইলে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে অধিকতর সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি । নিজেদের স্বায়ত্বশাসনের স্বপ্নে বিভোর থাকা চাকমা রাজা ত্রিবেদী রায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবিকে অগ্রাহ্য করেছেন, অবহেলা করেছেন তার শাসনামলের পুরোটা সময়। ৬৬র ছয় দফা যা স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে যখন গণভোটের চরিত্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে , তখন রাজা ত্রিদিব রায় তার সাথে একাত্ব প্রকাশ করেননি । ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের উপকূল বরাবর তজমুদ্দিন এলাকায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ( চট্রগ্রাম থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে ) আঘাত হানে । ঘূর্ণিঝড়ে আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায় । এত মানুষ প্রাণ হারালেও রাজা ত্রিদিব রায়, যিনি পার্বত্য চট্রগ্রামের ত্রাণ পরিচালন কাজের প্রধান ছিলেন , তিনি একবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি । উল্টো পশ্চিম পাকিস্তান যথেষ্ট ত্রান সহায়তা করেছে বলে চাপাবাজি করেন । (তথ্য: দ্য লাষ্ট রাজা অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান ৫৭-৫৮)

৭০র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় কে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন । রাজা ত্রিদিব রায় শেখ মুজিবুরের কাছে চেয়েছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রামের জন্য বিশেষ মর্যাদার আশ্বাস । শেখ মুজিবুর রহমান তাকে এরকম কোন আশ্বাস না দিলেও উন্নয়নের আশ্বাস দেন, যা ত্রিদিব রায় যথেষ্ঠ মনে করেননি এবং আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন । এমন সিদ্ধান্ত মূলত পূর্ব পাকিস্তান কে অবিশ্বাস এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে তার অবস্থান কে সু-নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে জয়লাভ করেন । যে স্বায়ত্বশাসনের দোহাই দিয়ে ত্রিদিব রায় আওয়ামীলীগের পক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি সেটি কে সঠিক ছিলো? তিনি কি চাকমা জনগণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আরও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারতেন না ? উত্তর হলো অবশ্যই তা পারতেন, কিন্তু তিনি সে পঁথে হাঁটেননি, ফলে যে অবিশ্বাস আর পারস্পরিক আস্থাহীনতার বীজ বুনে দিয়েছিলেন রাজা ত্রিদিব রায় তা স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বড় বট বৃক্ষে পরিণত হয়েছে । এ ব্যর্থতার দায়ভার চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় এড়াতে পারেন না।

এতোদিন রাজা ত্রিদিব রায়ের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের অন্য অংশের রাজনীতিক মতের ছিলো পরোক্ষ বিভাজন, কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সেটি হয়ে যায় একেবারে সরাসরি বিভাজন তথা বিরোধীতা । অর্থাৎ রাজা ত্রিদিব রায় সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অংশ নেন । সেই বিপক্ষ অবস্থান ছিলো সশস্ত্র শত্রুতামূলক । পশ্চিম পাকিস্তানিদের সহায়তায় তিনি গঠন করেন রাজাকার বাহিনী, যার নাম দেওযা হয়েছিলো ত্রিদিব রাজাকার বাহিনী এবং স্বভাবিকভাবেই তিনি ছিলেন সেটির প্রধান কর্তাব্যাক্তি। এ রাজাকার বাহিনী নিয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থে সিদ্ধার্থ চাকমা লিখেছেন, … ‘উপজাতীয় রাজাকাররা এ সময় গভীর অরণ্যে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা সশস্ত্র ও সংগঠিত হয়ে শান্তিবাহিনী নামে সংগঠন গড়ে তোলে’ (পৃষ্ঠা- ৪৬) । ২০০৩ সালে ত্রিদিব রায়ের আত্মজীবনীমূলক বই The Departed Melody -তে তিনি নিজেই রাজাকার হিসাবে তার কর্মকাণ্ড বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এসব অপকর্মের কারণে তিনি অনুতপ্ত তো নয়ই বরং গর্ব প্রকাশ করেছেন। ত্রিদিব রায় লিখেছেন, On the way back, at Ranirhat, 18 miles from Rangamati, a number of very frightened people asked us when the army was going to take over these areas. They said they were suffering at the hands of the Mukti Bahini. We told them that the army would be coming at any moment. That evening at dusk the army, in launches and speedboats made a sort of miniature Normandy landing (the Allied landing in France of 6 June 1944) at Rangamati and swiftly took command of the situation (page-221)। ডা. এমএ হাসানের বই ‘যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ’-তে রাজাকার রাজা ত্রিদিব রায়ের সিরিয়াল এবং তার পরিচয় হিসাবে উল্লেখ রয়েছে, 948. Mr. Raja Tridiv Roy, Father Late Raja Nalinakhya Roy, Village Rajbari Rangamati, Thana Kotowaly, Chittagong (page- 152)। আইন ও সালিস কেন্দ্র থেকে ২০০৮ সালে প্রকাশিত বই ‘যুদ্ধাপরাধ’ এর ৮২ পৃষ্ঠাতে অনেকের পাশাপাশি রাজাকার রাজা ত্রিদিব রায়ের নামও উল্লেখ রয়েছে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’ এর ৩৭৯-৩৮০ পৃষ্ঠায় লেখক জামাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘…অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ওই দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙ্গামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। এ দলে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাঙ্গামাটির আবদুল শুক্কুর, এসএম কামাল, শফিকুর রহমান, ইফতেখার, ইলিয়াস, অবদুল বারী, মো. মামুন ও আবুল কালাম আজাদ। ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র আবুল কালাম আজাদ ও ফুড ইন্সপেক্টর আবদুল বারী ছাড়া অন্যদের পাকবাহিনী নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়ে মানিকছড়িতে নিয়ে হত্যা করে।’’

শরদিন্দু শেখর চাকমা তার ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক বইয়ের ৩০-৩১ পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘ আমি তাকে (রাজা ত্রিদিব রায়কে) বলি, আমার তো মনে হয় পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে এবং তার পক্ষে স্রোতের বিপরীতে যাওয়া ঠিক হয়নি। রাজা ত্রিদিব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হবে না, যদি ভারত পাকিস্তানকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে না পারে। আর ভারত পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে পারবে না, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে চীন এবং আমেরিকা রয়েছে। তারা কোনদিন পাকিস্তানকে ভারতের নিকট পরাজিত হতে দেবে না। জনমত উপেক্ষা করে রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের ৯ই নভেম্বর পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া সফরে যান । তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলোতে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে মনোভাব গড়ে তোলা । ধর্ম কে কাজে লাগিয়ে এ মানুষ পূর্ব পাকিস্তানের উপর বর্বর নির্যাতন কে অস্বীকার করে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন আদায়ের কাজে নেমে পড়েন। যদিও সেটি খুব বেশি সফল হয়নি, পাকিস্তান দূতাবাসের জরুরি তলবে তিনি চট্রগ্রামে ফিরে যান এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশংকায় তাকে করাচি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর তিনি ঢাকা হয়ে করাচি গমন করেন। এবং সেখানে আনুগত্যের পুরষ্কার হিসেবে যথেষ্ট সম্মানিত হন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করেন। নিয়োগ পেয়েই তিনি ২৫ নভেম্বর শ্রীলংকার কলম্বোতে যান। সেখানে যাওয়ার মূল্য উদ্দেশ্য ছিলো ভারতের আকাশ সীমা এড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উড়ে যাবার জন্য কলম্বোকে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করা, যা তখন বন্ধ ছিলো। সেটি ব্যবহার করতে পারলে ভারতের অজান্তেই পূর্ব পাকিস্তানে খুব সহজে বিমান হামলা করা যাবে। ঠিক একি পরিকল্পনা নিয়ে নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড সর্বত্রই ছুটেছেন রাজা ত্রিদিব রায় । মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজা ত্রিদিব রায় কে বিশেষ দূত হিসেবে ব্যবহার করা পশ্চিম পাকিস্তানের নোংরা রাজনীতির একটি উল্লেখযেগ্য দিক। মূলত একজন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী কে দূত করে বুঝাতে চেয়েছে সেখানে ধর্মের নামে আসলে কোন নিপীড়ন করা হচ্ছে না। এবং সেই ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করেই বৌদ্ধ প্রধান রাষ্টগুলোর সমর্থন ও সহায়তা আদায় করা সহজ হিসেব কষেছিলো। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে ঠিকি ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ।

তারপরও স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে রাজা ত্রিদির রায়ের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি । স্বায়ত্বশাসনের লোভেই যদি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে থাকতেন তাহলে কেন কি আশা তে স্বাধীন হওয়ার পরও বাংলাদেশের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করে গেছেন ত্রিদিব রায় ? তিনি তো স্বেচ্ছায় নির্বাসিত রাজা, যে রাজ্য কে নিজ থেকে ত্যাগ করেছেন সে রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন কোথায় থেকে আসবে? প্রকৃত অর্থে রাজনীতির ভুল হিসেব-নিকেশে স্বায়ত্বশাসন বিষয়টি রাজা ত্রিদিব রায়ের কাছে একটা নিদিষ্ট সময় পরে মূখ্য থাকেনি , মূখ্য হয়ে ওঠে ব্যক্তি স্বার্থ আর মর্যাদা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা । সেই প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই পাকিস্তানের হয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরোধীতা করেন রাজা ত্রিদিব রায় । ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭ তম অধিবেশনে নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ইতিমধ্যে ১০০টির বেশি দেশ বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দেয় । ঠিক সেই সময় পাকিস্তানের পক্ষ হয় রাজা ত্রিদিব রায় চীনের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরোধীতা করেন । চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ছিলো । পাকিস্তানি সদা বন্ধু রাষ্ট্র চীনের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এটি ছিলো পাকিস্তানের জন্য ঐতিহাসিক জয়, কারণ ১৯৭১ সালের অবমাননাকর পরাজয়ের পর তারা মুখ রক্ষা করার মত কিছু একটা সফলতার সাথে করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশকে, নিজের জন্মভূমিকে কার্যকরভাবে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তি আটকে দিতে পেরে রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের জাতীয় বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয় ।

যদি ও ঠিক পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের ইতিহাসেও ত্রিদিব রায় অমর হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে স্বায়ত্বশাসন এবং পরে ব্যক্তি মর্যাদার লোভে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে স্থির থাকেন এবং নিজের জন্মস্থানের বিপক্ষে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যান । সব ষড়যন্ত্র কে জয় করেই ১৯৭৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতিসংঘে যোগ দেয় । যদিও এর পূর্বে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে পাকিস্তান বাংলাদেশ কে ১৯৭৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি দেয় । (তথ্য : দ্য লাষ্ট রাজা অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান, পৃষ্ঠা -১০৩)

শুধুমাত্র ব্যক্তি মর্যাদার লোভ আর প্রতিশোধ স্পৃহায় একটা মানুষ যে নিজের জন্মভূমি আর নিজের জনগণের সাথে সমগ্র জীবন এমন শত্রুতা করতে পারে রাজা ত্রিদিব রায় তার উজ্জ্বল উদাহারণ । একটা নিদিষ্ট ভূখন্ডের অধিবাসী হয়ে নিজের এলাকার স্বায়ত্বশাসনের প্রয়োজনীতা অনুভব করে যে মানুষ, ঠিক সে মানুষ কিভাবে ওই মূল ভূ-খন্ডের স্বায়ত্বশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখায়? কিভাবে অস্বীকার করে? রাজা ত্রিদিব রায় ব্যক্তি স্বার্থের কাছে নিজের জন্মভূমি-জনগণ কে বিকিয়ে দিয়েছিলেন, পাকিস্তান নামক অপরাষ্ট্রের গোলামি করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে সারাজীবন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকেছেন এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ (আর্জেন্টিনা এবং ল্যাটিন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত) হয়েছিলেন । বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের অধিবাসী হয়ে চিরটাকাল বাংলাদেশ কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা , মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার জন্য ১৯৭২ সালের দালাল আইনে রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম উঠে আসে । যদিও তার আগেই তিনি স্বেচ্ছারোপিত নির্বাসনে যান, ১৯৭১ সালের পর আর কখনোই বাংলাদেশে ফিরে আসেননি এবং ২০১২ সালে জন্মভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা মানুষটি পাকিস্তানে মৃত্যুবরণ করে । পূর্ব পাকিস্তান অংশের মানুষ হয়েও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সরকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ও পক্ষালম্বন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চাকমা জাতিগোষ্ঠী সহ স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজা ত্রিদিব রায় এক ঘৃণিত কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে । বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজা ত্রিদিব রায় একজন ঘৃণ্য ব্যক্তি ছাড়া আর কিছুই নয় ।