আমাদের স্বাধীনতার চল্লিশ বছরের সময়কালের মধ্যে মার্কিন মিডিয়ায় বাংলাদেশ শব্দটি এত বেশী আর কখনও উচ্চারিত হয়নি।এবং আগামী নভেম্বরে অনুষ্টিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এই শব্দটি মিডিয়ায় অনবরতঃ উচ্চারিত হতেই থাকবে।এর কারণ একটি টিভি অনুষ্টান।যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া জগতের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক ডেভিড লেটারম্যান সম্প্রতি তার লেইট নাইট শো’তে হাজির করেছিলেন আমেরিকার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।ট্রাম্পের তিনটি প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যা রক্ষণশীলদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে তার অন্যতম একটি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যাওয়া জব ফিরিয়ে আনা।লেবারম্যান পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ট্রাম্প ফ্যাশনের কয়েকটি নমূনা আগেই সংগ্রহ করে এনেছিলেন এর মাঝে ছিল বাংলাদেশে প্রস্তুত একটি শার্ট।টকশোর এক পর্যায়ে সার্টটি হাতে নিয়ে লেটারম্যান যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন এটা কোথায় তৈরি?ট্রাম্প জবাবে বলেন-বাংলাদেশে।ভাল শার্ট।আমি বাংলাদেশীদেরকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।লেটারম্যান তখন চীনে তৈরি ট্রাম্প ব্রান্ডের একটি টাই দেখালে ট্রাম্প বিব্রত ভঙ্গিতে গাঁইগুই করতে থাকেন যা হলভর্তি দর্শকের হাসির হুল্লোড়ে অনবদ্য হয়ে ওঠে।আর এই ভিডিও ক্লিপটিকেই ডেমোক্রেটিকরা বেছে নিয়েছে তাদের নির্বাচনী বিজ্ঞাপন হিসেবে কেননা ট্রাম্প যে আমেরিকার জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন এমন চাক্ষুষ প্রমাণ তারা হাতছাড়া করবে কেন?প্রতিদিন প্রতিটি টিভি চ্যানেলে এই ভিডিও ক্লিপটি অসংখ্যবার প্রচারিত হচ্ছে সে সাথে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নামটিও।খরা বণ্যা দুর্ভিক্ষ দুর্নীতি বা ভিক্ষার হাত নয় এবার একটি পজিটিভ বাংলাদেশ মার্কিনীদের সামনে উঠে আসছে এটা ভাবলে গর্বে বুকটা স্ফীত হয়ে ওঠে।কিন্তু যখন খবর পাই ভারতীয় সিরিয়েল দেখা নিয়ে হবিগঞ্জে দুই গ্রামের সংঘর্ষে দুই আড়াই’শ লোক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তখন আত্নতৃপ্তির ঢেঁকুরটা যেন বানরের তেলপিচ্ছিল লাটি বেয়ে ওঠার মতোই নির্মম এক সমীকরণে পড়ে যায়।কী হচ্ছে ওসব দেশে?হবিগঞ্জের ঘটনার একদিন পরেই আরেক সংবাদ, ঘরে দুই কন্যাশিশুকে তালাবদ্ধ করে মা গেছে কিরণমালা দেখতে ঘরে আগুণ লেগে একটি শিশু পুড়ে মরে, একটি জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসে কোনও রকম প্রাণে বেঁচে যায়।২০ তারিখের খবর,শ্যামনগরে মা স্টার জলছা দেখায় মগ্ন,পানিতে পড়ে মারা যায় ভাই বোন।পাখিশাড়ির জন্য স্কুলছাত্রীর আত্নহত্যা, হিন্দী সিরিয়েল না দেখতে দেয়ায় স্বামীর উপর অভিমান করে স্ত্রীর গলায় দড়ি দেয়া ইত্যাদি মহা অদ্ভুত খবর পড়ে পড়ে উপলব্ধি করতে পারি কোন দুঃখে মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম “সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি” বলে আক্ষেপ করেছিলেন।ফেসবুকে হবিগঞ্জের খবরটির নিচে যখন পশ্চিমবাংলার একজন মন্তব্য করে “ আমরা যখন অলিম্পিকে পদক জিতি তখন আমাদের সিরিয়েল দেখা নিয়ে কাংলোরা যুদ্ধ করে, কাংলোরা কবে মানুষ হবে?” মন্তব্যটি যত কঠিনই হোক তা আমাদিগকে হজম করতে হবে কেননা এটাই বাস্তব।আমরা কাংলো আমরা এখনও মানুষ হতে পারিনি।মানুষ যে হতে পারিনি তার বড় প্রমান আমরা এখনও আত্নসমালোচনা নামক জিনিষটি যে কী তাই শিখতে পারিনি।এই লজ্জাষ্কর খবরের নীচে শত শত মন্তব্য পড়েছে তার পচানব্বই ভাগই ভারতকে গালাগাল করে লেখা।এখানে ভারতের দোষটা কোথায়? বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানী নীলছবি বানাচ্ছে নৈতিকতার দায়ে কি তাদের অভিযুক্ত করা হয়?কারণ এটাকেতো তারা মানুষের জন্য বাধ্যতামুলক সিলেবাসভুক্ত করে দেয়নি।আপনি দেখবেন কি না সেটা আপনার ইচ্ছা।ভারতের টিভি চ্যানেলগুলি বাণিজ্যিক স্বার্থে নাটক বানাচ্ছে তা যদি ক্ষতিকারক বলে মনে করেন তা দেখবেননা।আপনাকে দেখতে বাধ্য করছে কে?আগে আমাদের নিজেকে সংযত করা শিখতে হবে।কোনটি আমাদের সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনটি নয় এটাতো আমাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে।গালাগাল দেয়া এসব মন্তব্যের মাঝে অনেকগুলিতে আবার পীসটিভি বন্ধ করার হাহাকার এবং ক্ষোভও ফুটে উঠেছে।এগুলি কোন ভাইরাস তা অবশ্য বলে দিতে হয়না।
trump-page-0

অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে জানলাম ‘কিরনমালা’ ভারতীয় এক চ্যানেল থেকে প্রচারিত একটি বাংলা সিরিয়েল।আমি শত শত নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে বরং এর নির্মাতা কলা কুশলীদের অভিনন্দনই জানাব।আজ থেকে পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে কলকাতার দর্শকরা উঁচু বাশেঁ হাড়ি পাতিল বেঁধে আমাদের দেশের নাটক দেখতেন আজ তাদেরই তৈরি নাটক নিয়ে বাংলাদেশে এমন তুলকালাম কান্ড ঘটে যায় কৃতিত্বতো অবশ্যই তাদের প্রাপ্য।তারা প্রমান করছেন তারা সামনে হাটছেন আমরা হাটছি পিছনে।এর মাঝে একটি ইতিবাচক দিকই আমি দেখতে পাই আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে হিন্দী ছবি আর সিরিয়েলে আসক্ত হচ্ছে কলকাতা যদি আমাদের এই কিবলার মাঝখানে একটা বাংলা দেয়াল খাড়া করে দিতে পারে তবে তাও কম কৃতিত্বের কাজ হবেনা।আমাদের ছায়াছবি টেলিভিশনের যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল তা যদি কলকাতা নেয় তাও ভাল।মোদ্দা কথা হিন্দীকে রুখতে হবে।তৃণমূল পর্যায়ে হিন্দী ছবি বা সিরিয়েলে ভয়াবহ আসক্তি আমাদের ভাষা সংস্কৃতির প্রতি এক দৃশ্যমান অশণী সংকেত।প্রত্যন্ত এলাকায় এই রঙ্গিন বর্জগুলির এমন জনপ্রিয়তার অর্থ এসব এলাকার মানুষ ইতোমধ্যে হিন্দী ভালোভাবে আত্নস্থ করে নিয়েছে আর হিন্দীতে নিরেট গর্দভ যারা তারাও হিন্দী শেখার জন্য প্রানান্ত চেষ্টা করবে তারপর সুদর্শণ নায়ক নায়িকাদের অনুকরণ করে কথা বলার চেষ্টা করবে তাদের আচার আচরন নকল করবে কারণ নকলে আমাদের জুড়ি নেই আর এভাবেই আমাদের সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ করবে নানা বিজাতীয় উপকরণ।আমাদের ভাষা ধীরে ধীরে স্বদেশে প্রবাসী হয়ে যাবে।আর যাবেই বলছি কেন আলামত দর্শনেতো মনে হচ্ছে আমরা তেমন পর্যায়ে ইতোমধ্যে পৌঁছেও গেছি।শুধু হিন্দী সিরিয়েল বা ছবি কেন ধর্মীয়ভাবেও এদেশে হিন্দী উর্দু ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করছে।আমরাতো সেই শিশু অবস্থাতেই মক্তবে হুজুরের কাছে শিখেছি মৃত্যুর পর মুনকার নাকির ফেরেশতা কবরে এসে জিজ্ঞেস করবে ‘বান্দা তেরা রব কৌন’ ভাবতাম সেসময়, এই প্রশ্নের উত্তর নাহয় দিয়ে দিলাম এরপরে যখন ফেরেশতা উর্দুতে অন্যান্য প্রশ্ন করবে তখন কিকরে জবাব দেব?শৈশবেই যখন একটি শিশু জেনে যায় তার নিজের ভাষা আসলে পরকালে কোনও কাজেই আসবেনা তখন সেই ভাষার প্রতি তার আসক্তি মমতা কতটুকু গভীর হবে?বরং শিশু অবস্থাতেই শতভাগ আস্থিক হয়ে বেড়ে ওঠা শিশুটির মনে সব সময়ই ঈশ্বর অনুমোদিত ভাষাগুলির প্রতিই এক অদৃশ্য দুর্বলতা থেকে যাবে।ঈশ্বর অনুমোদিত ভাষা হলো আরবী এবং তারপরই উর্দু।বাঙ্গালীর কাছে আবার উর্দু হিন্দীতে ব্যবধান নেই যাহা উর্দু তাহাই হিন্দী।সুতরাং বাঙ্গালী মুসলমান ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের মুখে যখন হিন্দী শুনে তখন স্মৃতি সঞ্জাত ভাবেই বেহেশতের খোশবু পেয়ে যায়।আর বাঙ্গালী হিন্দুর কাছে সেই যুক্তিতে হিন্দী প্রাণের ভাষা যে যুক্তিতে আরবী আমাদের পবিত্র ভাষা।আমাদের মক্তবে এখন ফেরেশতা হয়তো উর্দুতে ইন্টারভিউ নেয়্না তবে নানা আলামত দর্শনে মনে হয় সার্বিক পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি।বাংলাদেশে অনুষ্টিত হয় বিশ্ব ইজতেমা কিন্তু এর বেশীরভাগ বয়ান দেয়া হয় উর্দু হিন্দীতে।আখেরী মোনাজাতেও হিন্দী উর্দুর একচ্ছত্র আধিপত্য।কেন, বাংলায় মোনাজাত করলে কি পূণ্য কম হয়?বাংলাভাষায় মোনাজাত করার মতো আলেম কি এদেশে নেই?তাহলে দেশের আনাচে কানাচে গজিয়ে ওঠা হাজারে হাজার মাদ্রাসায় কী উৎপাদন হচ্ছে?আমাদের দেশের হুজুরগণ কি ভারত কিংবা পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাতে ওয়াজ করার চেষ্টা করেছেন কখনও? আবার আমাদের এক ডাকসাইটে মন্ত্রীই যখন দেশের মান মর্যাদা নিজের অবস্থান ভুলে এক ভারতীয় চ্যানেলের জন্য হিন্দীতে সাক্ষাৎকার দিয়ে দেন তখন মনে হওয়াই স্বাভাবিক আমরা হিন্দীর কাছে আত্নসমর্পনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।এই মন্ত্রীটিকে(ষ্টেডিয়ামে মাটিতে বসে শাহরুখ খানের নাচ দেখা )প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর চেয়ে কিছুটা উন্নত ভাবা হয়েছিল কেননা উনি ভার্সিটি পর্যায়ে তুখোর রাজনীতি করেছেন।মাঝখানে গণযুদ্ধ জনযুদ্ধ ইত্যাদিও করে এসেছেন।একটা লোক ভার্সিটি পর্যায়ে গেলে তার মাঝে যে আত্নস্মমাণবোধ জন্মাবার কথা এই ভদ্রলোকেরতো তা ই নেই।এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ তার অমার্জনীয় কর্মকান্ডের জন্য শাস্থিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতো। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন পাকিস্তান সফরে গিয়ে উর্দুতে সাক্ষাৎকার দিয়ে শিরোনাম হয়েছিলেন অবশ্য ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড সাথে সাথেই সালমাকে সেজন্য তীব্র তিরস্কার করেছিল।বিসিবির এই কঠোর অবস্থান অবশ্যই ধন্যবাদের দাবীদার।এ ব্যাপারে বিসিবি যদি সামান্য নমনীয়তা দেখায় তাহলে আমাদের ক্রিকেট দলের ভাষা আর বাংলা থাকবেনা হিন্দী বা উর্দু হয়ে যাবে।এমনিতেই মুশফিকরা পাকিস্তানীদের অনুকরণে মাঠে যেভাবে ‘লালা লালা’ বলে চেঁচামেচি করেন তা মুলতঃ আমাদের পরানুশীলণ মনোবৃত্তিরই প্রতিফলন।বায়ান্নের সেই রক্তঝরা আন্দোলনকে স্মরণ করে আমরা আমাদের বর্ণমালাকে দুখিনী বর্ণমালা বলি।আসলেইতো দুখিনী এই ভাষা।সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবেচনায় যদিও সে অষ্টম স্থানে কিন্তু ঘরে বাইরে কত শত্রু কত অনুপ্রবেশকারীকে মোকাবেলা করে যে ভাষাকে তার অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে কিন্তু শেষ রক্ষা হবেতো?
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে আজও আমরা আমাদের আত্নপরিচয়ে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারিনি।আমরা নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেয়ে ভারতের বা পাকিস্তানের পরিচয়ে পরিচিত হতেই মনে হয় বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের সাথে হিন্দী উর্দুতে কথা বলে নিজেকে ধন্য মনে করি।গাড়ীর কাঁচ নামিয়ে হাই ভলুমে হিন্দী গান বাজিয়ে গর্বের সাথে গাড়ি হাকিয়ে যাই।এই হীন মন্যতা আর পরিচয় সংকটের কারণে আমাদের মাঝে সত্যিকার দেশপ্রেমও জাগ্রত হচ্ছেনা।বাংলাদেশের কোনও টিভি সিরিয়েল যদি ভারতের সমাজ জীবনে এরকম প্রভাব বিস্তার করতো তবে সরকারী পদক্ষেপের আগে ক্যাবল অপারেটররাই বাংলাদেশের চ্যানেলটির প্রচার বন্ধ করে দিত।একজন সাধারণ ভারতীয়ের মাঝেও দেশপ্রেমের যে লক্ষণগুলি দেখা যায় তা আমাদের অনেক দায়িত্বশীলদের মাঝেও নেই। আমাদের দেশের ক্যাবল অপারেটররা কি নিজেদের মুনাফার চিন্তা বিসর্জন দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে? আমরা সব সময় তাকিয়ে থাকি সরকারের দিকে যেন সরকারই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের দেশপ্রেম কী পরিমান থাকবে নিজ সংস্কৃতি্কে কতটুকু ধারণ করতে হবে।যেন আমাদের কোনও দায়ই নেই।সরকার বলে দেবে দেশে হাজার হাজার বাংলা গান হচ্ছে সুতরাং হিন্দীকে বাদ দিয়ে বাংলা গান শুনতে হবে।সরকারকে বলে দিতে হবে হিন্দীর চেয়ে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ এ ভাষায় পদ্য রচনা করে রবীন্দ্রনাথ নোবেল অর্জন করেছেন হিন্দীর কাছে যা আজও স্বপ্নই থেকে গেছে।হিন্দী গানের যে কথামালা তা বাংলার বটতলা সাহিত্যের সমতূল্য, এজন্য মনোমুগ্ধকর কথার গাঁথুনীতে গাঁথা বাংলা গান আমাদের আত্নস্থ করতে হবে।কেন আমরা নিজ থেকে বুঝতে অক্ষম হিন্দী সংস্কৃতি তাদের জন্য আদর্শ হতে পারে আমাদের জন্য তা চরিত্র হরণকারী সমাজের মূল্যবোধ ভাঙ্গা অপশিল্প? কেন আমরা নিজ প্রত্যয়ের উপর দাঁড়িয়ে বলতে পারিনা এই ক্ষতিকারক চ্যানেলগুলি আমরা বন্ধ করে দিলাম।কেন আমাদের যুব সমাজ ছাত্র অছাত্র শিক্ষক বুদ্ধিজীবী এক কাতারে দাঁড়িয়ে এই অপসংস্কৃতি গুলিকে না বলতে পারিনা?আমাদের বাঁধাটা কোথায় ? কেন আমরা বুঝতে পারিনা, যে সরকার দুর্বল গণতান্ত্রিক ভিত্তির জন্য অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল সে সরকার ভারতীয় কোনও টিভি চ্যানেল বন্ধের মতো শক্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।সুতরাং যা করার তা দেশের জনগণকেই করতে হবে।আমাদের চোখের সামনেই ভারত বাংলাদেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তার ইন্টারেষ্টগুলি একে একে আদায় করে নিচ্ছে এবং এভাবেই মাথায় হাত বোলাতে বোলাতেই একদিন আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্রম্মপুত্রের সমূদয় জল সরিয়ে নেবে আমাদের সরকারগুলি হাঁচিও দেবেনা।কারণ তাতে ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যে পর্যন্ত না উপলব্ধি করবে জনগণই ক্ষমতার উৎস ভারত বা অন্যান্য বৃহৎ শক্তি নয় ততদিন এই তোষণ চলতেই থাকবে।সরকার পরিবর্তন হলেও পরিস্থিতি একই থাকবে।আমাদের বন্ধু দেশটি তার বিপুল পরিমান কয়লা পোড়াবার জায়গা বিশাল ভূভারতে খুঁজে পায়নি পেয়েছে বাংলাদেশের মতো সত্যিকার এক জনারণ্যে যেখানে মানুষের গা লাগিয়ে নজীরবিহীন ঘনত্বে মানুষ বাস করছে।এজন্য আমরা ভারতকে দোষ দিতে পারিনা।সরকার দেশের স্বার্থে কাজ করবে এই দায়িত্ব দিয়ে ভারতের জনগণ তাদেরকে নির্বাচিত করে আর সরকারগুলিও তাদের সমস্ত সততা দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যায়।ভারতের কাছ থেকে তাদের ভাষা আর পর্দা সংস্কৃতির বদলে যদি তাদের গণতান্ত্রিক চর্চা ও দেশের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার সংস্কৃতিটুকু আমরা শিখতে পারতাম তাহলে আমাদের অবস্থান আরও কয়েক ধাপ উঁচুতে থাকতো।ভারতের উপর দোষ চাপিয়ে যারা সাম্প্রদায়িকতার দানবকে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাতে চান তারা জন্মরোগাক্রান্ত যা তারা বংশানুক্রমে পেয়ে এসেছেন।ভারতের কাছ থেকে তাদের ভালোটা না মন্দটা আমরা গ্রহণ করব এ পছন্দের ভারতো আমাদের।আমাদের সরকার গুলি দলীয় বা ক্ষমতার স্বার্থে ভারতের সাথে মিতালী করে কিন্তু ভারত আমাদের সাথে মিতালী করে তাদের দেশের স্বার্থে।দেশের স্বার্থের প্রশ্নে তারা এক তিলও ছাড় দেয়না বা দিতে সাহসও করেনা কারণ জনগণের কাছে এজন্য জবাবদিহী করতে হবে।কিন্তু আমাদের সরকারগুলি কি তেমনটা পারে? পারলে রামপালের মতো পরিবেশবৈরি প্রকল্প কি সরকার অনুমোদন করতে পারতো?বিদ্যুৎ অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু এজন্য বিকল্প স্থান কি বের করা যায়না? ভারত বিদ্বেষ যেমন ক্ষতিকারক তেমনি সকাতর তোষণ নীতিও সমান ক্ষতিকারক।বাণিজ্যে ব্যাপক বৈষম্য বা ট্রানজিটে কম ট্যারিফের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস হলে যে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে তার ক্ষতি কোনও ভাবেই কি পুষিয়ে নেয়া যাবে? তেমনি ভারতীয় ছবি আর সিরিয়েলের প্রভাবে সামাজিক মূল্যবোধের যে বিপর্যয় ঘটবে সংস্কৃতিযে পঙ্গুত্ব বরণ করবে ভাষাযে রোগাক্রান্ত হবে সেই ক্ষতি কি অর্থ দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে?