উইকিলিকসে প্রকাশিত গোপন মার্কিন দলিলে বাংলাদেশের রাজনীতি, বিগত তত্ত্বাবধায়কের আমলে মাইনার টু ফর্মুলাসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনেক বিষয় সেখানে উঠে আসে। সেই গোপন দলিলেই মাধ্যমে জানা যায়, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে সংস্কার করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং দলগুলো মধ্যে যে সংস্কারপন্থীদের উদ্ভব হয় তাতে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা অর্থাৎ ডিজিএফআই-এর প্রত্যক্ষ হাত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্নীতিবাজ নেতা ও দলগুলোর মধ্যে পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নতুন-ধারায় রাজনৈতিক দল সৃষ্টির মানসে ডিজিএফআই-এর চাপে অনেকেই সংস্কারপন্থী দলে যোগ দেন। অনেককে আবার ভয় ভীতি দেখিয়ে (না হলে দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার) সংস্কারপন্থী দলে ভেড়ানো হয়। যদিও তত্ত্বাবধায়কের আমলে অনেক দুর্নীতিবাজ নেতা সংস্কারপন্থী দলে যোগ দেওয়ার শর্তে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হোন।

ডিজিএফআই কেমন সংস্থা তা মার্কিন গোপন নথি একটি লাইনেই স্পষ্ট হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছে-ডিজিএফআই এমন একটি ভীতিকর সংস্থা, বাংলাদেশের জনগণ এই সংস্থার নামটি প্রকাশ্যে উচ্চারণ করতে ভয় পায়। ২০০৮ সালে তারা হরকাতুল-জিহাদ- আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) রাজনৈতিক শাখা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছে। হুজির মতন একটি ভয়ানক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দল গঠনে ডিজিএফআই-এর নেতৃত্ব দেওয়া নিশ্চয়ই অবাক ও ভয়ানক বিষয় ছিল। হুজি ও হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে ডিজিএফআইয়ের ভূমিকার পূর্বে হুজি ও ডিজিএফআই-এর ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। হুজি কেমন সংঘটন তার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ২৮ জুলাই ২০১৬ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন- বিদেশে যুদ্ধরত বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) সদস্যদের ৫১টি পরিবারকে সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর এই তথ্য পুলিশকে দিয়েছে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর কমান্ডার নাজিমুদ্দিনসহ তিনজন।

হরকাতুল জিহাদের ইতিহাস ও বাংলাদেশের হামলা:

স্বাধীনতার পর পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করায় বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো জনসম্মুখে রাজনীতি করার নৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট শেখ মুজিব খুন হওয়ার পর ধর্মভিত্তিক দলগুলো গর্ত থেকে বের হতে শুরু করে। এরপর জিয়ার হাত ধরে নিজেরা তাদের অতীতে শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়াপনার, দুর্নীতি ও নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হওয়ার কারণে প্রতিটি রাজনৈতিকদল এসব ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে দলে টানতে সক্রিয় হয়। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বীজ বপন হয় ৯০ সাল থেকে।

১৯৭৯ সালে রাশিয়া কর্তৃক আফগানিস্তান দখলের পর শুরু হয় আফগানদের প্রতিরোধ যুদ্ধ যাকে অনেক ইসলামী পণ্ডিতই ইসলামী জিহাদ বলে আখ্যা দেন। সে যুদ্ধে অনেক বাংলাদেশীও আফগানদের পাশে দাড়ায় ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে। আফগান যুদ্ধ সমাপ্তির পর এ সমস্ত যোদ্ধা (তাদের ভাষায় মুজাহিদ) দেশে ফেরত আসেন এবং দেশের ভিতরেও তাদের কর্মতৎপরতা শুরু করেন যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় রাজনীতির মূলধারায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য একটি নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করা। ধীরে ধীরে তারা মসজিদ মাদ্রাসা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তারা প্রবেশ করে।

১৯৮০ সালে মাওলানা এরশাদ আহমদকে আমীর মনোনীত করে প্রতিষ্ঠিত হয় হয় বিশ্ব ইসলামী জিহাদ আন্দোলন ‘হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী আল-আলমী’। আফগান মুজাহিদদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগ্রাসী দখলদার বাহিনী এবং দেশীয় কমিউনিস্ট সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামীর মুজাহিদগণ। পাশাপাশি মুসলিম জনসাধারণের মনে জিহাদি প্রেরণা জাগ্রত করে তোলার লক্ষ্যে শুরু করেন ব্যাপক প্রচারাভিযান। মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা আর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁরা কাজ করতে থাকেন। আফগানিস্তান তথা বিশ্বজুড়ে মুসলিম জাতির বর্তমান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে ও পরিস্থিতির সম্মানজনক সমাধান খুঁজে পাওয়ার একক পন্থা হিসেবে তাঁরা উপস্থাপন করেন জিহাদের কর্মসূচী।

স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর খালেদা জিয়ার শাসন আমলে ৩০ এপ্রিল, ১৯৯২ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দল তৈরির ঘোষণা দেয়। যদিও তাদের নেতৃবৃন্দের দাবী অনুযায়ী যে সংগঠনকে তারা ১৯৯৮ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। তবে বিষয়টা সত্য নয় এই কারণে যে, ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমানের উপর হামলার মধ্য দিয়ে তারা তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম শুরু করে। ২১শে অগাস্ট (২০০৪) গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামী হুজির অন্যতম জঙ্গি নেতা মুফতি হান্না এক জবানবন্দিতে বলেন, ১৯৮৯ সালে যশোর মনিরামপুরের শহীদ আব্দুল রহমানের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠা হয়। তখন আমিরের দায়িত্বে ছিলেন মওলানা আব্দুল সালাম। তিনি ১৯৯২ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় হুজির সাথে জড়িত হোন। হুজির আন্দোলন মৌলিকভাবে দুইটি শাখায় বিভক্ত। যথা-১. জিহাদ ২. দাওয়াত ও ইরশাদ। বাংলাদেশে জিহাদিদের সশস্ত্র হামলার একটি টাইম লাইন তৈরি করি। সেখানে হুজিসহ অন্য জিহাদি দলগুলোর হামলা ও তাদের অর্থায়নে যেসব সংস্থা জড়িত ছিল তাদের একটা তালিকা তৈরির চেষ্টা করি। আগ্রহীরা দেখতে পারেন- টাইম লাইন: বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার।

বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার শুরুটা করে হুজি ও জেএমবি। হুজির হামলাগুলো লক্ষ্য করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশে হুজির মূল টার্গেট ছিল-আওয়ামীলীগ, আহমদিয়াসহ অন্যরা। শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার কারণে ২০০৫ সালের ১৭ই অক্টোবর সরকার হরকাতুল-আল জিহাদ আল-ইসলাম (হুজি কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে হামলার দিক থেকে সালাফি বা আহলে হাদিস সংগঠন জেএমবি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। গোপন-তারবার্তায় আরও জানা যায় যে, জেমএবির নেতা আবদুল রহমান দক্ষিণ এশিয়ায় আরবি বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি পাকিস্তান ও ভারতে সফর করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তানে আইএসআইয়ের কাছে শেখা শুরু করেন কীভাবে বিভিন্ন উপকরণ থেকে বিস্ফোরক তৈরি করতে ও একে-৪৭ রাইফেল চালাতে হয়। আইএসআই আব্দুর রহমানকে কাশ্মীরে ব্যবহার করতে চেয়েছিল কিন্তু রহমান সেখানে না গিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং জেএমবি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া উইকিলিকসের গোপন তারবার্তায় আরও জানা যায় যে, পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থাকে মার্কিন কূটনৈতিকরা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া কিছুদিন আগে জেএমবির নতুন বার্তা ও স্বীকারোক্তি প্রদান করে। যাই হোক, আমরা হুজির প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক।

বাংলাদেশে হুজির হামলা:

এই হামলাগুলোর বাহিরেও হুজির সশস্ত্র হামলার ঘটনা থাকতে পারে। তবে সাধারণ যেসব হামলাগুলোর জন্যে হুজিকে দায়ী করা হয় কিংবা হুজি স্বীকার করেছে সেই হামলাগুলোর কথাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র।

-১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৯: কবি শামসুর রাহমানের উপর হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হুজি
-৬ মার্চ, ১৯৯৯: যশোরে উদীচী অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-৮ অক্টোবর, ১৯৯৯: খুলনা শহরে আহমদিয়া মসজিদে বোম হামলায় ৮ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২০ জুলাই, ২০০০:গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় ৭৬ কেজি ওজনের পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। জনসভা শুরুর আগেই এই শক্তিশালী বোমাটি উদ্ধার হওয়ায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা থেকে বেঁচে যায় দেশ। জঙ্গি সংগঠন হুজি এতে জড়িত ছিল
-২০ জানুয়ারি, ২০০১: সিপিবি’র মিটিংয়ে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-১৪ এপ্রিল, ২০০১: রমনা বটমূলে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০১: বাঘের হাটের মোল্লাহাটের খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজে রিমোট কন্টোলে নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত, -৫০ জন আহত হয়। বোমা হামলার দায় স্বীকার করে জেএবি ও জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২১ মে, ২০০৪: ২১ মে ২০০৪ সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর আর্জেস গ্রেনেড হামলা। নিহত ২, হাইকমিশনারসহ আহত হয় ৭০। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২১ অগাস্ট, ২০০৪: বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় ২৩ জন নিহত আহত শতাধিক। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২৭ জানুয়ারি, ২০০৫: শাহব এএমএস কিবরিয়ার উপর হামলা চালায় ৫ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।

হুজির মতন একটি ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পক্ষেও বিদেশী মাওলানাসহ বাংলাদেশের অনেক পরিচিত মাওলানাদের বক্তব্য পাওয়া যায়। এখানে শুধু দুইজন ব্যক্তির অভিমত উল্লেখ করা হল। তাহলেই বিষয়টি অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাট-হাজারী চট্টগ্রাম-এর মুহতামিম হযরত মাওলানা আহমদ শফী: হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বিগত আট বৎসর যাবত উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার উপর অর্পিত জিহাদের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি এই সংস্থাকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করি। বাইতুল মুকাদ্দাস, কাশ্মীর, বার্মা ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলি ও নির্যাতিত মুসলমানদেরকে জালিমের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামীর পতাকা তলে সমবেত হওয়া প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।

আমি সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে সার্বিকভাবে এই সংগঠনকে সহযোগিতা করার আহবান জানাচ্ছি এবং দুয়া করি, আল্লাহ পাক যেন এই সংগঠনের উপর তাঁর গায়েবী মদদের হাত সর্বদা সম্প্রসারিত রাখেন।

হেরেম শরীফের শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হাফিজ মক্কী: “হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ” একটি দাওয়াতি ও জিহাদি সংগঠন। মজলুম মুসলমানদের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে জিহাদি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আরাকান, কাশ্মীর, তাজিকিস্তান, চেচনিয়া সহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে এ সংগঠনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুজাহিদ রয়েছে। তাদেরই নেতৃত্বে আরাকানে জিহাদ পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে আমি তাদের তৎপরতা স্বচক্ষে পরিদর্শন করি। জিহাদি তৎপরতার সাথে সাথে তারা এতিম, বিধবা ও শহীদ পরিবারের জন্য সেবামূলক কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। আমি তাদের ব্যাপক সফলতা কামনা করি।

এবার বাংলাদেশের ডিজিএফআই্‌এর ইতিহাস ও কার্যক্রম সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, জনগণ এই সংগঠনটিকে এতো বেশি ভয় পায় যে, তারা প্রকাশ্য কিংবা জনসম্মুখে এই সংগঠনের নামটি নেওয়ার সাহস করে না।

ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে ডিজিএফআই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।এনএসআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাথে এই সংস্থা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ, বিমান) সদস্যদের নিয়ে এই সংস্থাটি গঠিত। এছাড়া সাধারণ নাগরিকদের ইনফরমার কিংবা তথ্য সংগ্রহের জন্যে নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সংস্থার সাথে আমেরিকার সিআইএ, ভারতের র, যুক্তরাজ্যের এমআইসিক্স, নিউজিল্যান্ডের জিসিএসবি’র সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সংস্থাটির ট্রেনিং ক্যাম্প রয়েছে। বিশেষ করে কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সিলেট। সামরিক বাহিনীর জন্মলগ্ন থেকেই এই বাহিনীর কার্যক্রম ছিল তবে সেটি ভিন্ন নামে, ভিন্ন রূপে। ১৯৭২ সালে ডিরেক্টর অব ফোর্স ইন্টেলিজেন্ট সংক্ষেপে ডিএফআই নামে সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। যদি তা তখন ছোট আকারে ছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আসলে এটি বৃহৎ পরিসরে হাজির হয়। তবে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট লে: জেনারেল জিয়াউর রহমান ডিজিএফআই প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথমে এই সংস্থার নাম ডিরেক্টরেট অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিএফআই) থাকলেও পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) করা হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন কে এম আমিনুল ইসলাম খান ছিলেন ডিএফআইয়ের প্রথম ডিরেক্টর বা পরিচালক। ১৯৯৪ সালের ৮ মার্চ এ সংস্থার নতুন অগ্রানোগ্রাম করা হয়। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স(ডিজিএফআই) এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত ঢাকা সেনানিবাসে।

বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে মিডিয়ার এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে এই সংগঠনের প্রভাব কিংবা ভয় না আছে। ২০০৪ সালে ২১-এ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার আসামীদেরও রক্ষা করতে এই সংগঠনটি ভূমিকা রাখে। দৈনিক প্রথম আলো ২০১৩, ৭ জুন একুশে আগস্ট গ্রেনেড-হামলা‘তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় ডিজিএফআই’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বর্তমানে বরখাস্ত ও পলাতক), তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অন্য কারও সম্পৃক্ততার কথা গোপন করার জন্য মাওলানা তাজউদ্দিনকে ২০০৬ সালের অক্টোবরে সুকৌশলে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় ডিজিএফআই। বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়েও এই সংস্থাটি কাজ করেছে। এছাড়া বিএনপি-জামাত আমলে আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও এই সংস্থার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়-বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা এতে সহযোগিতা করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আদালত বিষ্মিত হয়েছেন। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এদের মধ্যে এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক দুই প্রধানও ছিলেন।। তারা হলেন-গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র তৎকালীন মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম ও ডিজিএফআই’র তৎকালীন পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে আরো আছেন এনএসআই’র সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন, উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সাবেক জিএম (প্রশাসন) একেএম এনামুল হক।

তত্ত্বাবধায়কের আমলেও এই সংগঠনের ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। গোপন মার্কিন তারবার্তায় এই সংগঠন নিয়েও বেশ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি তথ্য রয়েছে। মশিউল আলমের সংকলন, অনুবাদ ও সম্পাদনায় “উইকিলিকসে বাংলাদেশ: উইকিলিকস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের গোপনীয় তারবার্তা সংকলন”-এ হুজির রাজনৈতিক শাখা প্রতিষ্ঠায় ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন তারবার্তা আছে। তারবার্তা নিয়ে যাতে কোন সংশয় না থাকে তাই সম্পূর্ণ তারবার্তাটি পাঠকের সুবিধার্থে তুলে দিচ্ছি।

তারবার্তা নং ০৮ ঢাকা ১০৩৭
তারিখ: ৫ অক্টোবর ২০০৮; সময়:১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
শ্রেণি: সিক্রেট
বিষয়: সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিযান নিয়ে গভীর উদ্বেগ

সারসংক্ষেপ

১. (এস/আরইএল: কানাডা/অস্ট্রেলিয়া/যুক্তরাজ্য/নিউজিল্যান্ড) সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) একটি রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করেছে। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) নেতারা দাবি করেন, তাদের দল ইসলামি শরিয়া আইনের অধীনে তাঁদের ভাষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, হুজি-বিকে কোনভাবেই মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সঙ্গে আসন্ন এক বৈঠকে রাষ্ট্রদূত তার মত পুনঃর্ব্যক্ত করবেন। অন্যান্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে আইডিপির প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছে ডিজিএফআই। হুজি-বি দার সহিংস অতীত পরিত্যাগ করেছে এমন কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।

আইডিপি জিহাদকে বেগবান করবে, চায় শরিয়া আইন

২. (এস/আরইএল: কানাডা/অস্টেলিয়া/যুক্তরাজ্য/নিউজিল্যান্ড) ২০০৮ সালের বসন্তকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার হুজি-বিকে একটি বিদেশী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে; শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার পর বাংলাদেশ সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০০৫ সালের অক্টোবরে। ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে মুজাহিদদের সহযোগী হিসেবে যুক্ত করেছে এবং ক্ষুদ্র অস্ত্র চালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহারের ওপর ভালো রকমের প্রশিক্ষণ পেয়েছে এমন কিছু বাংলাদেশী নাগরিক হুজি-বির মূল নেতৃত্বের মধ্যে আছেন। হুজি-বি সহিংসতা পরিবার করেনি, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আল-কায়দার ঘোষিত একটি ফতোয়ার শরিক থেকে নিজেকে সরিয়েও নেয়নি।

৩. (এস/আরইএল: কানাডা/অস্টেলিয়া/যুক্তরাজ্য/নিউজিল্যান্ড) দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন অন্যান্য কিছু সূত্র আমাদের নিশ্চিত করেছে যে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই হুজি-বির মধ্যপন্থী সদস্যদের মূলধারার রাজনীতিতে আনার প্রয়াসে আইডিপি গঠনে সহযোগিতা করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হুজি-বি বাংলা-দেশজুড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। দলটির নেতারা দাবী করেন, তারা শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে, কিন্তু কূটনৈতিক ও সরকারী কর্মকর্তারা তাদের ব্যাপারে গভীর সন্দেহ পোষণ করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস-ইঙ্গিত মিলছে যে দলটি তাদের সন্ত্রাসবাদী শিকড় পেছনে ফেলে আসেনি।

৪. (এসবিইউ) ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রায় দুই হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের একজন স্থানীয় কর্মীর ভাষ্য অনুসারে, ওই অনুষ্ঠানে অনেক বক্তা নিশ্চিত করেন যে তারা বাংলাদেশের সংবিধানে মানেন, তবে ‘ইসলামি ইপায়ে’ সংবিধানে সংশোধনী আনার আহবান জানান। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জিহাদি শেখ আবদুস সালাম আইডিপির আহবায়ক কমিটির প্রধান। সালাম বলেন, দলটি বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নয়। আইডিপি’র আরেক নেতা আবদুল কুদ্দুসও সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের একজন সাবেক জিহাদি ও হুজি-বির সদস্য। সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্ট্যার-এ কিছুদিন আগে তাকে উদ্ধৃতি করে লেখা হয়েছিল যে তিনি বলেছেন, দলটি অতীতে যেমন আফগানিস্তানে রাশিয়া ও আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে, তেমনি এখানেও জিহাদেই লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা লড়াই করছি কুশিক্ষা, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।

৫. (সি) দলটির আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত যেসব ব্যক্তি আইডিপির পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাপ্তাহিক ব্লিটজ পত্রিকার সমআদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী। জানা যায়, তিনি সেখানে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি আইডিপিকে নিষিদ্ধ করার বা কর্মকাণ্ড সীমিত করার চেষ্টা চালায়, তবে তার পাল্টা জবাব হবে কঠোর। আই্ডিপিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টার জন্যে চৌধুরী কয়েকটি বিদেশী মিশনের সমালোচনাও করেন। (টীকা: চৌধুরী দূতাবাসের কাছে সুপরিচিত; সরকারের বিরুদ্ধে প্ররোচনা (সিডিশন), রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা (ট্রিজন) এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে মুখোমুখি হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে একজন কুখ্যাত চাঞ্চল্যকর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। টীকা শেষ।)

আইডিপি কি টিকে থাকতে পারবে?

৬. (এসবিইউ) দ্য ডেইলি স্টার লিখেছে, কুদ্দুস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ১৮ ডিসেম্বর নির্ধারিত সংসদ নির্বাচনের আইডিপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু নতুন নির্বাচনী অধ্যাদেশের বিধান অনুযায়ী এই দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা আছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, কোন রাজনৈতিক দলের লক্ষ-উদ্দেশ্য যদি দেশের সংবিধানের পরিপন্থী হয়, অথবা দলটি যদি ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, ভাষা ও লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করে তাহলে তা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

৭. (সি) ২৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) আবদুল মতিন ও স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুল করিমের সঙ্গে এক বৈঠকে রাষ্ট্রদূত হুজি-বির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। (সংশ্লিষ্ট পৃথক তারবার্তা এ দ্রষ্টব্য)। মতিন ও করিম উভয়ে বলেন যে তারা সন্ত্রাসবাদ দমনে অঙ্গীকারবদ্ধ আছেন; তারা হুজি-বির শক্তি অর্জন প্রতিহত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। মতিন মন্তব্য করেন, আমরা ওদের ধ্বংস করব।

মন্তব্য: সকলেই আইডিপির বিরুদ্ধে

৮. (এস/আর্‌ইএল: কানাডা/অস্ট্রেলিয়া/যুক্তরাজ্য/নিউজিল্যান্ড) আইডিপি কতটা সমর্থন সংগ্রহ করতে পারে তা নিরূপণ করা যদিও এখন সম্ভব নয়, তবু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হুজি-বির মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর প্রতি কোন ধরনের সহানুভূতি পোষণ করে না। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হুজি-বিকে বৈধতা দানের যে কোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দূতাবাস প্রবল বিরোধিতা প্রকাশ করে যাবে। বিশেষত, রাষ্ট্রদূত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিজিএফআইয়ের সন্ত্রাসবাদ দমন বিভাগের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিনের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসার চেষ্টা করেছেন। জানা গেছে, হুজি-বির মধ্যপন্থী উপাদান বলে দাবি করা হয়, এমন ব্যক্তিদের রাজনীতির মূলধারায় আনার লক্ষ্যে ব্রিগেডিয়ার আমিন আইডিপি গঠনের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

-মরিয়ার্টি

হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে দায়ী সাবেক ডিজিএফআই প্রধান এর অদূরদর্শিতা

পরবর্তীতে বলা হয় হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে দায়ী সাবেক ডিজিএফআই প্রধান এর অদূরদর্শিতা। এছাড়া আমরা জানি যে বাংলাদেশের নামক রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার উপর পবিত্রতা আরোপ করা হয়। ফলে ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা ব্লাসফেমি কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমনই এক সংগঠন। যে সংগঠনটির সাবেক প্রধান ও কর্মকর্তারা আলোচিত ১০ ট্রাক মামলার আসামী ও পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্ত (মৃত্যুদণ্ড) হয়েও আলোচনার ঊর্দ্ধে পবিত্রাসনে তারা বিরাজমান।

মার্কিন তারবার্তায় মার্কিন কর্মকর্তারা বলছে, ডিজিএফআই এমনই এক সংস্থা যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জনসম্মুখে উচ্চারণ করতে ভয় পায়। বাস্তবতা তার থেকেও ভীতিকর। কারণ সামান্য একটি ব্লগ পোস্টের কারণে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে একটি কমিউনিটি ব্লগ যেখানে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশের সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময় উইকিলিকসের বরাত দিয়ে ডিজিএফআই-এর অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। যেমন- দ্য ডেইলি স্টার ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর Huji leaders float party with govt nod: US citizen helped it get ‘int’l support’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। বিডিনিউজ২৪ ২০১০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ‘DGFI wanted extremists in mainstream politics‘ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এছাড়া বাংলাদেশের সকল পত্রিকা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর কর্মকর্তাদের নাম ও শান্তির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

এছাড়া প্রথম আলো ২০১৩, ৭ জুন একুশে আগস্ট গ্রেনেড-হামলা‘তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় ডিজিএফআই’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাই এসব পুত-পবিত্র সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড কোনটাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে অজানা নয়। তবে যেহেতু তারা শক্তিমান ও ষড়যন্ত্রকারী সেহেতু মানুষ ভয়ে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আলোচনা করে না। তাই সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতিবিদদের নিয়ে সমালোচনা অনেক বেশি স্বস্তি-দায়ক।

শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর সব দেশেই ডিজিএফআই-এর মতন সংস্থা আছে। যে সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে জানতে দেওয়া হয় না। মানে সব কিছু সিক্রেট রাখা হয়। সিক্রেট ও প্রাইভেসি এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক। অ্যাসাঞ্জ মনে করেন-সিক্রেট হলো রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আর প্রাইভেসি হল ব্যক্তিগত। রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয়তা বা সিক্রেট ভাঙতে হবে; কারণ এসব ক্ষেত্রে গোপনীয়তাই ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে, কারণ এটি নাগরিক স্বাধীনতার অন্যতম পূর্বশর্ত।

বাংলাদেশে হুজির বোমা হামলার লিস্ট ও হুজি কীভাবে কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে তা পূর্বের লেখায় যেহেতু আলোচনা করা হয়েছে, সেহেতু নতুন করে এখানে আলোচনা করছি না। মশিউল আলমের সংকলন, অনুবাদ ও সম্পাদনায় “উইকিলিকসে বাংলাদেশ: উইকিলিকস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের গোপনীয় তারবার্তা সংকলন”-এ হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বের তারবার্তাটির অনুবাদ আছে। তবে মশিউল আলমের বইতে ২৩ অক্টোবর (২০০৮) এর তারবার্তাটি নেই। সেখানেও হুজির রাজনৈতিক শাখা পিডিপি’র রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তৎকালীন সেনা প্রধান ও ডিজিএফআই-এর প্রধানের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির কথা হয়। সেই গোপন তারবার্তাটি পাঠকের জন্যে অনুবাদ করেছেন-চিন্তিত সৈকত।

তারবার্তা নং ০৮ ঢাকা ১১০৮
তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০০৮; সময়:১১:১ পূর্বাহ্ণ
শ্রেণি: সিক্রেট
বিষয়: COAS PLEDGES TO BLOCK IDP REGISTRATION; DGFI
PROMISES BROADER CT COOPERATION

সারসংক্ষেপ:

১) ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেষ্টা করছে এই বিষয়ে উদ্বেগ জানাতে অক্টোবরের ২২ তারিখ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সেনা প্রধান মইন আহমেদকে ফোন করেছিলেন। মইন আহমেদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খুব দ্রতই এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য তিনি ব্যবস্থা নিবেন। তারও আগে, ২১ অক্টোবর ডিজিএফআই এর ডিরেক্টর জেনারেল গোলাম মোহম্মাদ এর সাথে আলোচনায় এম্বাসেডর গোলাম মোহাম্মদকে বলেছেন, মার্কিন সরকার ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠনের বিষয়ে সাহায্য করেনি। মুহাম্মদ এম্বাসেডরের এই কথা নোট করে রাখেন, এবং তার নোট গ্রহণ কারীকে বলেন নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় আগামী ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অংশগ্রহণের আবেদন না মঞ্জুর করা হয়। এম্বাসেডর আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ডিজিএফআই এর অসহযোগিতার কথা জোর দিয়ে বলে; ডিজিএফআই থেকে এই অবস্থা উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

সেনা প্রধানকে ফোন কল

২) মার্কিন এম্বাসেডর জেনারেল মইন আহমেদকে ফোন দিয়েছিলেন গত ২২ অক্টোবর দুপুরে, তখন তিন পাকিস্তান ভ্রমণে ছিলেন। এম্বাসেডর মইনকে জানান আগামী নির্বাচনে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির অংশগ্রহণের চেষ্টা এবং রাজনৈতিক অভ্যুত্থানে মার্কিন সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। এম্বাসেডর উল্লেখ করে বলেন, রাজনীতিতে এই দলের আবির্ভাব বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের জন্যই ভয়ানক হবে। মইন বলেন, তিনি এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। যদিও তিনি উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্ত্বা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দ্রুতই ঢাকা ফোন করার এবং তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে নিশ্চিত করতে এই দলের আবেদন (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির) যাতে না মঞ্জুর হয়।

ডিজিএফআই প্রধানের সাথে মিটিং

৩) রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সকালের নাস্তার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর ডিরেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) রাজনীতিতে আগমন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান। রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনীতিতে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আগমন এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের আবেদন নিয়ে তিনি বেশ আতঙ্কিত। রাষ্ট্রদূত ও RAO কাউন্সিলর উল্লেখ করেন, যেহেতু আইডিপির সাথে হুজির খুবই নিকট সম্পর্ক আছে, সেহেতু ওয়াশিংটন আইডিপিকে হুজির নামান্তর ধরে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত চিন্তিত, কারণ যদি IDP বিষয়টি নিয়ে সামনে এগুনোর অনুমতি পায়, তবে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। তবে মজার ব্যাপার হল, মোহাম্মদ এই বিষয়ে নিজেকে দূরে রেখে, কোনো ধরণের নাম উল্লেখ না করে সাবেক DGFI ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিনের অদূরদর্শিতায় হুজিকে রাজনৈতিক দল গঠন করতে দেওয়া হয়েছে বলে দোষারোপ করেন। মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন আইডিপি সম্পর্কে তার অবস্থান পাবলিক না করতে। মোহাম্মাদ আরও বলেন, আইডিপিকে রেজিস্টেশনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা নিয়ে মার্কিন সরকারের অবস্থান বুঝতে পারছেন।

জরুরী অবস্থার প্রতি সমর্থন অব্যাহত

৪) মোহাম্মদ জরুরি অবস্থা জারি রাখার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে এম্বাসেডরের সাথে বচসা করেছেন। মোহাম্মদ বুঝাতে চেয়েছেন, ১১ জানুয়ারি, ২০০৭ হতে জরুরি অবস্থা জারি করার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত আছে। মোহাম্মদ আরও বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাডার ও অবৈধ অর্থের মাধ্যমে সৃষ্ট ত্রাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে জরুরি অবস্থা জারি রাখা আবশ্যক। এম্বাসেডর প্রত্যুত্তরে বলেছেন, বাংলাদেশের আইন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত।

এম্বাসেডর বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য ১৮ ডিসেম্বরের আগেই জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নেয়া উচিত। মোহাম্মদ উত্তরে বলেছেন, সংসদ নির্বাচন প্রার্থীদের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নিতে চায় (সম্ভাব্য, ১৮ ডিসেম্বরের তিন সপ্তাহ পূর্বে)।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে একাধিক বিষয় এখনো অমীমাংসিত

৫) মোহাম্মদ বলেন দিন শেষে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি উভয়ই আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তিনি মনে করেন, বিএনপি সবাইকে দ্বিধার মধ্যে রাখবে শেষ মুহূর্তেও কি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা। এটা হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে. ছাড় আদায় করার জন্য বিএনপির একটি কৌশল। উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মোহাম্মদ মনে করেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে নবনির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। যদিও, ২৪ এবং ১৮ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, মুহাম্মদ আরও বলেন, নির্বাচিত তারিখ নির্ভর করছে এখনও আলোচনার উপর, হয়তো পিছাতেও পারে।

নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে

৬. মুহাম্মদ বলেন, রাজনীতিতে স্থিরতা এবং সব দলের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তিনি ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে পরবর্তী বিষয়ের উপরেও নজর রাখছেন। বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ যাতে একই বিষয়ে একমত হতে পারে মুহাম্মদ এবং জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা খুবই ভালোভাবে চেষ্টা করছেন, যাতে নির্বাচন পরিবর্তী সময়েও তারা পেশাগত আচরণ বজায় রাখে, কোনো ধরণের হরতালের মাধ্যমে তাদের এই নির্বাচনী ব্যর্থতা ঠেকানোর চেষ্টা না করে; নতুন সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা প্রণয়ন করা ৮৭ অধ্যাদেশ স্থায়ী করে; রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মতই বৃদ্ধি করে; নতুন সংসদ মন্ত্রীপরিষদে একটি পরামর্শক হিসাবে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে, এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সেনাবাহিনীর হাই কমান্ডের বিরুদ্ধে শাস্তি চাইতে না পারে সেই বিষয়ে দেখতে হবে।

সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতার আশ্বাস

৭) মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেনারেল মোহাম্মদকে বলেন কিছু সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে ডিজিএফআই এর অবস্থান নিয়ে মার্কিন সরকার সন্তুষ্ট নয়, বিশেষত এমন একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ যার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন তার সরকার ডিজিএফআই থেকে আরও সহযোগিতা দেখতে চান। জেনারেল মোহাম্মদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আজ থেকে অগ্রগতি দেখা যাবে। মোহাম্মদ ডিজিএফআই এর সন্ত্রাস-দমন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (CTIB) এর নবাগত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমাদুল হক এর প্রশংসা করেন। মোহাম্মদ বলেন আমিন পরিচালক থাকা অবস্থায় সন্ত্রাস-দমন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (CTIB) এর উপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না, বর্তমানে আমিন অন্য ইউনিটে সড়ে গিয়েছেন, তাই ইমাদুলের মধ্যমে বর্তমানে তিনি সন্ত্রাস-দমন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।

মন্তব্য:

৮. IDP আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধনের কাগজপত্র পূরণ করেছে; এর প্রেক্ষিতে বুঝা গেলো, COAS মইন এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত নন। ভারতীয় হাইকমিশনার ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রদূতকে বলেন জেনারেল আমিন সম্প্রতি তাঁকে বলেছিলেন, আইডিপি সৃষ্টি ও নিবন্ধনের উপর আমেরিকা সরকার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো ধরণের অনুষ্ঠানে মইন এখন মার্কিন সরকারের নজরে আছে। আমরা এখন দেখতে চাচ্ছি আইডিপির নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে তিনি নিজের প্রভাব ব্যবহার করেন কিনা। সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী কর্মকাণ্ডে ডিজিএফআইর সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতিটি প্রশংসনীয়। বিষয়টি আর গোপন নেই যে, ডিজি মোহাম্মাদ তার সাবেক অধনস্থ’র মরজিমতো কাজ করার অভ্যাসে বেকায়দায় পড়েছেন। কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ে সহযোগিতা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ তার অঙ্গীকার রাখেন কিনা, তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।

-মরিয়ার্টি

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএস শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে মাটিকে জিহাদের ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে ভারতীয় উপমহাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনাও আছে তাদের। ইউকিলিকসের গোপন বার্তায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বিষয়েও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। মার্কিন গোপন বার্তায় দেখা যায়, জমায়তে ইসলাম তাদেরকে সবসময়, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পরিচয় করাতে আগ্রহী।যদিও জামায়াত স্বীকার করে তার ছাত্র সংগঠন শিবির কিছুটা উগ্রবাদী, তবে তারা শিবিরকে সহিংসতার পথ পরিহারের করার জন্যে আহবান জানাবে। মার্কিন গোপন বাতায় আরও জানা যায় যে, বিএনপি জামাতের আঁতাত যেসমস্ত জামাত কর্মী মেনে নিতে পারেনি তারাই জঙ্গি সংগঠন জেএমবি গঠন করে। এবং জেএমবির সাথে জামাতের কিছু নেতার যোগাযোগ আছে বলেও তারা স্বীকার করেন। যদিও তারা দাবী করেন, জামায়াত এসব সহিংসতার পথে বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কিংবা উদাসীনার ভান করে ফায়দা লুটা ও ডিজিএফআই-এর মতন সংস্থাগুলো যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৫ অগাস্টের (১৯৭৫) সময়ও তৎকালীন সেনা গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ছিল রহস্যময়। এছাড়া একুশে অগাস্ট (২০০৪) গ্রেনেড হামলার আসামীদের রক্ষসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এই সংস্থাটির ন্যক্কার জনক ভূমিকা প্রত্যক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের জনগণের আয়করের পয়সায় পরিচালিত সংস্থাগুলো দিনশেষে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধেই কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোভ লালসার ভুক্তভোগী দিনশেষে এই গরীব রাষ্ট্রের জনগণ।

আগ্রহীদের জন্য আরেকটি লেখা:গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় হুজি-বি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরঃ আরও দুটি মার্কিন গোপন তারবার্তা