বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার বর্তমান সময়ের বয়োজ্যেষ্ঠ এবং অন্যতম কবি আল মাহমুদ। আল মাহমুদের কবিতা তাঁর কাব্যভাষা কাব্যকৃতির স্বাতন্ত্র্য বাংলা কবিতার পাঠককে বিমুগ্ধ করে। তবে আমার ধারণা ‘বিমুগ্ধ করে’ না বলে ‘করতো’ বললে বোধহয় বাক্যটি অধিক অর্থবহ হবে। ‘সোনালী কাবিনে’র সোনালী সনেটগুচ্ছ দিয়ে তিনি যেভাবে পাঠক চিত্তকে আলোড়িত করেছিলেন পরবর্তী কাব্যকর্মে তেমনটি সম্ভবত: আর হয়ে ওঠেনি। যদিও সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে কবি এ ধারণাকে নাকচ করে দিতে চেয়েছেন। নাসির আলী মামুনের সাথে আলাপচারিতায় সোনালী কাবিন উত্তর আল মাহমুদের আদর্শিক অবস্থান ও বাংলাদেশী পাঠকের প্রতিক্রিয়ার উপরেও তিনি কিঞ্চিত আলোকপাত করেছেন। এখানে বাংলাদেশী পাঠক বলে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কারণ কবিই তাঁর সাক্ষাৎকারে এপার ওপারের একটি রেখা টেনে দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন বাংলাদেশে তাঁর মূল্যায়ন আদর্শিক কারণে যতটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ওপার বাংলায় তা নয়। তাঁর নিজের কথায়-
“কলকাতায় গেলে আমাকে পরিচিত ও অপরিচিতজনেরা ঘিরে থাকে। তারা আমাকে পাঠ করে। তোমার জানা উচিত, ওখানকার বড় পত্রিকাগুলো আমার লেখা যেকোনো সময় ছাপাতে আগ্রহী। সেখানে আমার কবিতার অনেক পাঠক আছে। বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে তারা আমার বই পড়ার জন্য নিয়ে যায়। শিবনারায়ণ রায় শুধু নন, আরও কজন আমার লেখার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। কলকাতায় তো আমাকে কেউ মৌলবাদী বলে না!”
কবির এ কথার অবশ্যই সত্যতা আছে। তাঁর সেই আদর্শিক অবস্থান বাংলাদেশে যতটুকু বিতর্ক বা অভিঘাত সৃষ্টি করবে পশ্চিমবাংলায় তার এক শতাংশও পড়বে না। কেননা এটি বাংলাদেশের জন্ম এবং এর অস্থির ও বিধ্বংসী রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। পশ্চিমবাংলা বাংলা-ভাষাভাষী হলেও এ বাংলার রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তাদের যেমন অংশগ্রহণ নেই তেমনি এর দায়ও তাদের নেই। সুতরাং নিরেট সাহিত্য রসাস্বাদনে ওপারে তা কোনও বাঁধার সৃষ্টি না করারই কথা। কবির কাছে আমরা বাংলাদেশের পাঠকদের জানার বিষয় সাহিত্যে আদর্শিক চিন্তার প্রকাশে প্রচারে কি কোনও সীমারেখা থাকবে না কি তা হবে অবাধ এবং মুক্তকচ্ছ? আদর্শিক চেতনা যদি রাজনৈতিক উচ্চাবিলাসে পর্যবসিত হয়ে আপন সৃষ্টিকে ছাতার মতো ঢেকে রাখে তবে পাঠকের দায়িত্ব কি সে ছাতাকে অপসারণ করে সৃষ্টির মণিমুক্তা আহরণ করা? বাংলাদেশের পাঠক এখনও তেমন পরিশ্রমী হয়ে ওঠেনি তবুও যদি অনুসন্ধিৎসু পাঠক জানতে পারে গভীরে সত্যিকারের জহর আছে তবে পরিমাণে যাই হোক ঠিকই কিছু জহুরী জুটে যায়। আল মাহমুদেও জহর আছে। আছে কিছু জহুরীও। তারা মূলত: তাঁর চিন্তার সহযাত্রী। এখনও বাংলাদেশের প্রগতিশীল পত্রিকায় তাঁর লেখা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ছাপা হয়। কিন্তু পাঠকের প্রগতিশীল অংশটি তিনি হারিয়েছেন যাদেরকে তার দিকে ফেরানোর আর অবকাশ নেই। তাঁর নিজের ফেরার বেলাও এখন অস্তমিত। তাই ‘আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন’ লাইনটি যেখানে হতে পারতো সমাজের প্রগতিশীল তারুণ্যের প্রত্যয়ের স্লোগান তা বিস্মৃতই থেকে গেল অথবা বাঁধা পড়ে থাকলো ভুল কলমের ভুল উচ্চারণের মোড়কেই।
পাঠক যদি গোড়াতেই জেনে যায় একটি সৃষ্টিকর্মের পুরো শরীর জুড়েই আকীর্ণ হয়ে আছে এমন এক আদর্শ যা জাতির তথা গোটা মানবজাতির অগ্রযাত্রায় শুধু প্রতিবন্ধকই নয় তা সভ্যতা বিনাশকারী এটমিক ওয়ারহ্যাডবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বিপজ্জনক তবে কি পাঠক সেই বিপদজনককে আত্মাহুতি দেবে না তাকে পরিত্যাগ করবে? কবির ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আদর্শকে নিপুণভাবে ধারণ করে আছে তেমন একটি কবিতার নাম ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’। কবিতা বিচারে আমি নিতান্ত অজ্ঞ হলেও এটুকু বলতে পারি আল মাহমুদের সমস্ত মহৎ সাহিত্যকে এক পাল্লায় আর বখতিয়ারের ঘোড়াকে আরেক পাল্লায় তুললে এটির ওজনই বেশি হবে। বেশি কাব্যগুণে নয় আদর্শিক আচ্ছন্নতায়। আদর্শিক আচ্ছন্নতা আল মাহমুদের কবিতায় পূর্বেও ছিল তবে তা ছিল এক মহৎ অঙ্গীকারে শানিত “শ্রমিক সাম্যের মন্ত্রে কিরাতের উঠিয়াছে হাত/হিউয়েনসাঙ্গের দেশে শান্তি নামে দেখো প্রিয়তমা/এশিয়ায় যারা আনে কর্মজীবী সাম্যের দাওয়াত/তাদের পোষাকে এসো এঁটে দিই বীরের তকমা” কিরাত শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তিমন্ত্রের মহৎ আদর্শে উজ্জীবিত এই চার লাইনের সাথে কবির পরবর্তী সৃষ্টির এই দুই লাইন ‘মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে/মনে হয় রক্তই সমাধান,বারুদই অন্তিম তৃপ্তি” যোগ করলে মনে হয় সাম্যের দীক্ষায় জ্বলতে জ্বলতে কবি এখন চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছেন। এটি হলেই আল মাহমুদ হয়ে যেতেন লক্ষ কবিতাপ্রেমীর নন্দিত ও যথার্থ আল মাহমুদ আর তার পেছনে অসংখ্য তরুণ যুবা এসে সমবেত হতো এ কথা বলা ই যায়। এমন সম্ভাবনা ও সম্মোহনী আল মাহমুদে ছিল।
কিন্তু উদ্ধৃত দুই লাইনের সাথে যখন তৃতীয় লাইনটি “আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি” এসে যুক্ত হয় তখন আমাদের বিস্ময়ের সীমা থাকেনা। মনে হয় গ্রহণে ঢেকে গেছে দীপ্তিমান সূর্যের অবয়ব। হঠাৎ আলোর ঝলকানি যেন নিকষ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। এ কোন আল মাহমুদকে আমরা দেখি? মনে হয় সোনালী কাবিনে আল মাহমুদ সমকালীন বিদগ্ধজনদের সমালোচনা করতে গিয়ে মূলত নিজের সম্পর্কেই ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন এই বলে “পোকায় ধরেছে আজ এ দেশের ললিত বিবেকে/মগজ বিকিয়ে দিয়ে পরিতৃপ্ত পণ্ডিত সমাজ।” আজ তিনি নিজেই বিবেক মগজ বিকিয়ে দেয়া সেই পতিত পণ্ডিতদের একজন। যৌবনের সেই দৃপ্ত উচ্চারণ “পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,” ছিল অন্য দশ পাঁচজন হুজুগে বিপ্লবীর মতো নিরেট মেকি এবং লোকদেখানো স্বপ্নবিলাস। “এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ/যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ। ”আল মাহমুদ নিজেই তাঁর কথিত লোকধর্মের ধারণাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে এমন এক ধর্মের আলখাল্লা গায়ে চাপিয়েছেন যা এখন গোটা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মডারেট ধর্মবেত্তাগণ নানা জোড়াতালি দিয়ে জেহাদের যে একটি নমনীয় ফর্ম দাঁড় করাতে গলদঘর্ম হচ্ছেন আল মাহমুদ তাকেও ভেঙ্গেচুরে দেন। কেন না আল মাহমুদের জেহাদ অহিংস নয়। যে জেহাদ বাস্তবায়ন করতে বারুদ আর রক্তের মতো ইনগ্রেডিয়েন্টের প্রয়োজন পড়ে তাকে অহিংস বলার কোনও কারণ থাকেনা। আল মাহমুদের সাক্ষাৎকার নেয়া কেউ যদি তাঁকে জিগ্যেস করতেন এই যে প্রতিদিন এই সর্বংসহা ধরণী অগণিত অসহায় নিরপরাধ মানুষের রক্তে সিক্ত হচ্ছে সিরিয়া ইরাক আফগানিস্তান পাকিস্তান প্যারিস বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন অকারণে কিছু মানব সন্তান নির্মম ভাবে প্রাণ হারাচ্ছে তা কি তাঁর ঘুম জাগানিয়া জেহাদের ফল নয়? বাংলাদেশের অনেকগুলো সম্ভাবনাময় উদীয়মান তরুণ লেখককে প্রকাশ্যে খুন করা হলো গুলশানে হলি আর্টিজানে প্রাণবন্ত আড্ডারত বাইশ জন দেশী বিদেশী নারী পুরুষকে প্রথমে গুলি করে তারপর অসংখ্যবার কুপিয়ে নিষ্ঠুর উল্লাসে হত্যা করা হলো তা কি সেই জেহাদের অংশ নয়? কবি আল মাহমুদ কি গুলশান বা কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের ছবি দেখেছেন? দেখলে এই সম্ভাবনাময় ছেলেগুলোর মৃত্যুর কিছু দায় কি নিজের কাঁধে অনুভব করেন না?
এই নিহত তরুণদের কেউ যে তাঁর ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ পড়ে তথাকথিত জেহাদে উদ্বুদ্ধ হয়নি তা কি তিনি বলতে পারবেন? তাঁর কবিতার নামে ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ নামক ফেসবুক পেজে দেখেছি সমর্থকদের উদ্দীপ্ত সব মন্তব্য। ‘মনে হয় রক্তেই সমাধান,বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি’ লাইনটি অন্ধ বিশ্বাসী তরুণের রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। টেনে নিয়ে যায় বারুদের কাছাকাছি। কারণ তাঁর কবিতার একটি সম্মোহনী শক্তি আছে। পঞ্চাশজন জেহাদি মোল্লার আহবান যে তরুণদের হৃদয়ের বারান্দায়ও উঠতে পারবেনা সেখানে একজন জনপ্রিয় কবির একটি পঙক্তিই সে তরুণদের হৃদয়ে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটাতে সক্ষম। সুতরাং এই রক্ত এই অকারণ হনন অথবা আত্মহননের দায়ভার কি আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ কবি এড়াতে পারবেন? কবি, আপনারা জেহাদ করবেন কিন্তু কেন করবেন? কার বিরুদ্ধে করবেন? আপনাদের আদর্শিক ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ ক্রুসেডের ডাক দিয়েছে বা কোথাও বলপূর্বক মুসলমানকে গণহারে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে বা কোনও এলাকায় ইসলাম বিপন্ন হয়ে পড়েছে এমনতো শুনা যায়না? তাহলে কার বিরুদ্ধে এই হুংকার? দুনিয়ার তাবৎ অবিশ্বাসী এবং বিধর্মীকে কি তাহলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ইসলামের সুশীতল(?) ছায়াতলে নিয়ে আসবেন? ইসলাম প্রচারের ইতিহাসের সাথে তলোয়ারের সম্পৃক্ততার অভিযোগটিকে কি তাহলে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আধুনিক জেহাদের মাধ্যমে আপনারা প্রমাণ করে দিতে চান? পুরো বিশ্বকে ইসলামায়িত করার আকাশ কুসুম খোয়াব অনেক মুসলমানই অন্তরে লালন করে থাকেন সেই অনেকের কাফেলায় কবি আল মাহমুদও তাঁর বিরল প্রতিভা নিয়ে শরীক হয়ে যাবেন এবং কবিতার ভাষায় জেহাদের ডাক দেবেন তা কষ্ট কল্পিত।
অথচ একদিন এই কলমই লিখেছিল “মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস/যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন/তারপরে কিছু নেই,তারপর হাসে ইতিহাস” কবি স্বপ্নবাজ যেমন তেমনি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টাওতো!তিনি কি দেখতে পান না পৃথিবী নামের এই গ্রহে মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও কম মুসলমান এমনকি কোনও ধর্মে বিশ্বাস করেনা এমন মানুষের সংখ্যাও জনসংখ্যার তৃতীয় অবস্থানে। এত হানাহানি এত রক্তপাতের পরেও তিন চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ এখনও আল্লাহর শাসনের বাইরেই রয়ে গেছে আর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে দেড় হাজার বছর। পুরা দুনিয়া গ্রাস করতে তাহলে আরও কত হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে ভেবে দেখেছেন? অথচ আগামী পাঁচ’শ বছরের মাঝে ধর্ম নামক বিষয়টিই যে পণ্ডিতদের গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে উঠবেনা কে জানে! অথবা ধরে নেয়া যাক পরম ধৈর্যশীল আল্লাহ একসময় ধৈর্যহারা হয়ে বদরের যুদ্ধের মতো কয়েক লাখ বা কোটি ফেরেশতা সৈনিক(?) পাঠিয়ে অবাধ্য বারো আনাকেও এক ইসলামী শাসনে নিয়ে আসলেন তার পরবর্তী অবস্থা কী দাঁড়াবে? মাত্র চার আনা জনসংখ্যা নিয়ে মুসলমানেরা বিশ্বব্যাপী শান্তির যে বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে ষোল আনা মুসলমান হয়ে গেলে ষ্টিফেন হকিংকে পৃথিবীর বাসযোগ্যতা হারানোর ভবিষ্যদ্বাণীটা আবার দ্রুতই সংশোধন করতে হবে যে।
আমি মানুষের বাক আর চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কবি আল মাহমুদ বড় কবি। আমরা চাইনা কোনও অজুহাতেই তাঁর কলমের স্বাধীনতা হরণ করা হোক। শুধু আল মাহমুদ কেন রাষ্ট্রের সকল নাগরিকেরই বাক ও চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা মুক্ত এবং অবারিত হোক এটাই আমাদের কামনা। শুধু আমাদের অভিভাবকতূল্য এই প্রাজ্ঞের কাছে অধমের সামান্য একটি প্রশ্ন-কবিতো সংবেদনশীলতার প্রতীক। সংবেদন আছে বলেইতো কবি নিজের মাধ্যমে অনেকের কথা বলে যান। নিজের উপলব্ধিতে অনেকের উপলব্ধি প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে যদি কবির অন্তরে বিষ জমে ওঠে এবং সে বিষ নিঃসরণে এই সমাজ এই পৃথিবীর আলো বাতাসকে বিষিয়ে তোলার ঝুঁকি থাকে তবে বাক আর চিন্তার স্বাধীনতা গ্রহণ না করে তাকে অন্তরে সমাহিত করে রাখাই সমীচীন নয় কি? জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত গ্রেনেড বোমা জেহাদি বইয়ের সাথে আল মাহমুদের দুই চারটা কবিতাও উদ্ধার হোক এটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত হতে পারেনা।
বইহীন পৃথিবী আমি কল্পনা করতে পারিনা/আল মাহমুদ
বই হলো লেখকের কাছে সন্তানের মতো। জনক যেমন তার সন্তানহীন পৃথিবী কল্পনা করতে পারেন না তেমনি একজন লেখকও পারেন না একটি বইবিহীন পৃথিবীর কথা ভাবতে। আল মাহমুদও পারেন না। ‘প্রথম আলোতে’ প্রকাশিত নাসির আলী মামুনের নেয়া সাক্ষাৎকারের শিরোনামই করা হয়েছে এই লাইনটি দিয়ে। কিন্তু এখানেও একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এসে যায়। কারণ কবি আল মাহমুদ এমন একটি ঐতিহাসিক চরিত্রকে তাঁর কাব্যিক বন্দনায় সিক্ত করেছেন যিনি বাস্তবে বইহীন পৃথিবীরই স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি। মাত্র আঠারো অশ্বারোহী নিয়ে তিনি গৌড় অধিকার করেছিলেন বলে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। কিন্তু কাহিনীটি আংশিক প্রমাদযুক্ত।
আসলে ১২০৫-৬(?) খৃষ্টাব্দে বখতিয়ারের ঘোড়া চিতার মতো ক্ষিপ্র গতিতে মূল বাহিনীকে পেছনে ফেলে তার সওয়ারীকে নিয়ে গৌড়ের রাজ দরবারের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হয়েছিল এবং তার সহগামী হতে পেরেছিল মাত্র আঠারোটি ঘোড়া তথা ঘোড়সওয়ার। পরে মূল বাহিনী এসে যোগ দিলেও আঠারো অশ্বারোহীই বঙ্গ বিজয় গল্পের মূল নায়ক হয়ে থাকে। লক্ষণ সেন কোনও প্রতিরোধ না করেই পালিয়ে যান আর তার হতবিহবল সৈনিকদের কচুকাটা করে বখতিয়ার বাহিনী গৌড় অধিকার করে নেয়। মুসলমানদের শৌর্যবীর্যে মোহাবিষ্ট একজন অতীতকাতর মুসলমান হিসেবে আল মাহমুদ সেই বীর আর তার ঘোড়াকে বন্দনা করে পদ রচনা করতেই পারেন। কিন্তু সেই বীরের শৌর্যবীর্যের সাথে একটি ঐতিহাসিক কলঙ্কও যে অনপনেয় হয়ে আছে সেটা আল মাহমুদ ভাল করে জানলেও তাঁর কাছে সেই কলঙ্কের চেয়ে মহিমান্বিত ছিল বখতিয়ার খলজীর ঐতিহাসিক বিজয়।
আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা। /যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,/ আর মানুষ করে মানুষের পূজা,/সেখানেই আসেন তিনি। খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।
এখানে মনে হয় একটি ঐতিহাসিক বিভ্রম কাজ করেছে। কারণ ভারতবর্ষে বহিরাগত মুসলমানদের আক্রমণের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল লুণ্ঠন এবং দখল। আর দখলকে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী রূপ দিতেই তারা ভারতবাসীকে স্বধর্মে দীক্ষা দেয়ায় মনোযোগ দিয়েছিল। ইসলামের আদি ইতিহাসে যেমন লুণ্ঠন ও মালে গনিমতের লোভ দেখিয়ে মরু বেদুইনদের যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা হতো মুসলমানদের ভারত বিজয়েও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। এমনকি এ সময়ের আই এস নামের ইসলামিক রেডিকেলিষ্টরাও সেই পুরনো টোপ বিশেষ করে বিজিত সম্প্রদায়ের নারীকে যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহারের লোভ দেখিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অন্তর্মুখী যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছে। অতি সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কার্ডিফ মসজিদের প্যালেস্টাইন বংশদ্ভুত ইমাম আলি হামুদ কর্তৃক বিজিত পক্ষের নারীদের সাথে সেক্স করা বৈধ এ সংক্রান্ত শিক্ষাদান নিয়ে সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই সেক্স-ম্যানিয়াকদের নিজেদের মা বোন কন্যার প্রতি যদি নুন্যতম সম্মান শ্রদ্ধা আর স্নেহ ভালোবাসা থাকতো তবে কিছুতেই এধরণের মানসিকতা পোষণ করতে পারতোনা কেননা যুদ্ধে নামলে তাদেরও বিজিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
তাছাড়া গৌড়ে বখতিয়ার খিলজীর আক্রমণের পূর্বে মুসলমানের সংখ্যা কি সেই পরিমাণে ছিল যাদেরকে আজানের মাধ্যমে নামাজের আহবান জানাতে হতো? সুতরাং আজান দিতে ভয় পাওয়ার প্রশ্ন আসে কেন? কবিতার পঙক্তি অনুসারে মনে হয় ঈশ্বর আদিষ্ট হয়ে বখতিয়ার বাংলায় আজানকে অবারিত করার জন্যেই গৌড় আক্রমণ করেছিলেন। অথচ বখতিয়ারের জীবনপঞ্জি তা সমর্থন করেনা। তিনি খিলজী উপজাতির একজন দরিদ্র ভাগ্যান্বেষী সৈনিক ছিলেন। বখতিয়ার গজনীর সুলতান মুহাম্মদ ঘোরির সেনা বাহিনীতে যোগদান করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। লম্বা হাত ক্ষুদ্র আকৃতি আর কুৎসিত চেহারার জন্যই তাকে বার বার ব্যর্থ হতে হয়। আর এই ব্যর্থতাই জন্ম-খুঁৎ নিয়ে বেড়ে ওঠা বখতিয়ারকে প্রচণ্ড জেদি এবং উচ্চাবিলাসী করে তোলে। গৌড় আক্রমণ ও দখল ছিল সেই চাপা জেদ আর উচ্চাবিলাসেরই ফল। সুতরাং কবিতার এই ভাষ্য ভ্রমাত্মক এবং বখতিয়ারের গৌড় আক্রমণের একটি খুঁড়া অজুহাত বৈ কিছু নয়। যাই হোক গৌড় আক্রমণ এবং এর সফলতা সম্ভবত: বঙ্গের তৎকালীন ঘটনা প্রবাহেরই অনিবার্য ফল ছিল।এর স্বপক্ষ বা বিপক্ষাবলম্বন এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। বখতিয়ার খলজির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় এবং কলঙ্কজনক যে অভিযোগ তাহলো ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিশাল লাইব্রেরীকে ধ্বংস এবং ভস্মীভূত করা। অবশ্য অনেক মুসলমান পণ্ডিত বখতিয়ার খিলজীকে দায়মুক্তি দিয়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঠাগারকে ধ্বংসের দুষ্কৃতি উগ্র হিন্দুদের উপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও পূর্বে একাধিকবার উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজাদের শাসনামলে নালন্দা আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু নালন্দার কফিনে শেষ পেরেকটি বসানোর কাজটি যে তুর্কীদের হাত দিয়েই হয়েছে এটাই ইতিহাসের স্বীকৃত সত্য। তাছাড়া নালন্দা বৌদ্ধ শাসকদেরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির মাঝে তর্কশাস্ত্র, ব্যাকরণ,চিকিৎসাবিদ্যা গণিত ইত্যাদির সাথে হিন্দুদের বেদও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের পবিত্র ধর্মশাস্ত্র পড়ানো হতো তাতে হিন্দু উগ্রবাদীদের আক্রমণের যৌক্তিকতা থাকেনা। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল গ্রন্থাগারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথিত কাহিনীটিকেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কাহিনীটি এরকম- বখতিয়ার খিলজী সেই পাঠাগারের রক্ষণাবেক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন লাইব্রেরীতে কোরানের কোনও কপি আছে কি না। তত্ত্বাবধায়ক তা দেখাতে ব্যর্থ হলে খিলজী ক্ষুব্ধ হয়ে পাঠাগারটিকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য সৈন্যদের নির্দেশ প্রদান করেন।
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরী ধ্বংসের পর নালন্দার সেই লাইব্রেরী পুড়ানো ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাঠাগার ধ্বংসের দৃষ্টান্ত। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মগঞ্জ নামের এই সুবিশাল পাঠাগারটি সম্ভবত: তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ লাইব্রেরী ছিল। এর বই ও পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ছিল কয়েক লক্ষ। পাঠাগারটি তিনটি বহুতল বিশিষ্ট দালান নিয়ে ‘রত্নসাগর’ ‘রত্নদধি’ ও ‘রত্নরঞ্জক’ এই তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। শুধু রত্নদধি দালানটিই ছিল নয় তলা বিশিষ্ট এবং পুরো ভবনটি ছিল অসংখ্য ধর্মীয় পান্ডুলিপিত পরিপূর্ণ। পাঠাগারে ধর্মভিত্তিক বই ও পাণ্ডুলিপি ছাড়াও গণিত তর্কশাস্ত্র চিকিৎসা বিজ্ঞান জ্যোতির্বিদ্যা জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সাহিত্য গ্রন্থেও সমৃদ্ধ ছিল । কবি আল মাহমুদের মতো কত শত কবির সারাজীবনের চিন্তা চেতনা সাধনার ফসল ঔদ্ধত্য আর অজ্ঞতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে মাটি আর বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে গেছে তা আমরা কোনও দিনও আর জানতে পারবনা। শুধু সৃষ্টি নয় এর স্রষ্টারাও দুষ্পাঠ্য মহাকালের পৃষ্ঠায় চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছেন । এই ছাই ভস্মে বিলীন হয়ে যাওয়া স্রষ্টাদের মাঝে হয়তো আমাদেরও অনেক পূর্ব পুরুষ রয়েছেন কিন্তু তাদের পরিচয় কি আমরা আর জানতে পারব? টানা কয়েক মাস ধিকিধিকি করে জ্বলছিল কবি সাহিত্যিক চিন্তাবিদ বৈজ্ঞানিকের হৃদপিণ্ড আর মগজের ফসল। নিচু পাহাড় ভূমির পাদদেশ না কি কালো ধুঁয়ার চাদরে কয়েক মাস ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ কবি যখন এই বই বিনাশী কুৎসিত দানবকেই আল্লাহর সৈনিক বানিয়ে তার ঘোড়াকে বন্দনা করে পদ রচনা করেন আবার সাথে সাথে বলেন বইহীন পৃথিবী তিনি কল্পনাও করতে পারেন না তখন একে পরিহাস ছাড়া আর কী বলা যায়?
আপনাদের ব্লগে আল মাহমুদ নিয়ে প্রকাশিত দুটো লিখার লেখকের বয়স কত জানালে প্রীত হতাম। এবং দুটো লেখাই আমরা একটি কাগজে প্রকাশ করতে চাই। সেক্ষেত্রে আপনারা অনুমতি দিলে কৃতার্থ হতাম।
প্রশ্নটি যেহেতু মুক্তমনা সম্পাদকের উদ্দেশ্যে সুতরাং তারাই এ ব্যাপারে বলবেন। লেখক হিসেবে কোনো কাগজে ছাপতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আপনি লেখকের বয়স জানতে চাইছেন কেন? একজন কিশোরও যদি আপনার মনে ধরার মতো কোনো লেখা লিখে ফেলে তা কি আপনারা ছাপবেননা? এটা বৈষম্য হয়ে যায়না?
মন্তব্য…কবি-লেখক-সাহিত্যিক তথা বুদ্ধিজীবিগন একটি দেশের প্রগতির দর্পণ স্বরুপ। তাদের লেখনী যদি বিতর্কিত হয় তবে তা নিয়ে আরো বিতর্ক তৈরী হয়। তাই তাদের লেখনীর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। সর্বোপরি লেখাটির জন্য জনাব অাহমেদ শাহাবকে ধন্যবাদ।
বক্তিয়ারের নালন্দা ধংশ আমাদের সভ্য হয়ে ওঠাকে হয়তো কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে দিয়েছে।
জনাব, অসাধারণ লিখেছেন।কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে যদি কবির অন্তরে বিষ জমে ওঠে এবং সে বিষ নিঃসরণে এই সমাজ এই পৃথিবীর আলো বাতাসকে বিষিয়ে তোলার ঝুঁকি থাকে তবে বাক আর চিন্তার স্বাধীনতা গ্রহণ না করে তাকে অন্তরে সমাহিত করে রাখাই সমীচীন নয় কি?
আপনার দেওয়া উপমাতে আপনার প্রবন্ধ টি মূল্যায়ন করলে কি, মিথ্যার সাথে সত্যের নিপুন গাঁথনি দিয়ে ইসলাম সম্পর্কিত এমন সব মন্তব্য করেন নি?যা সমাজ বা রাষ্ট্রকে বিষিয়ে তুলতে সহায়ক।
১২০০ থেকে ১২০৭ সালের মধ্যে লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাঙলায় আসে মুসলমানরা।অনেকের মতে মুসলমানেরা এতো অত্যাচার উৎপীড়ন চালিয়েছিলো যে কারো মনে সাহিত্যের কথা জাগে নি।তাই এই সময়ে বাঙলা সাহিত্যহীন মরুভূমি। কিন্তু এই যুক্তি মানা যায় না।কেননা দেড়শো বছর ধরে রক্তপাত চলতে পারে না।তাহলে মানুষ রইলো কি করে?মসলমানেরা তো বাঙালিদের মারার জন্য আসে নি,তাঁরা এসেছিলো রাজত্ব করতে।এছাড়া পরবর্তীকালে দেখা গেছে মুসলমান রাজারা বাঙলা সাহিত্যকে বেশ উৎসাহ দিচ্ছে। যারা পরে সাহিত্য সৃষ্টিতে উৎসাহ দিলো তাঁরাই আগে সাহিত্যকে দমিয়ে দিয়েছিলো এরকম হতে পারে না।
………[“হুমায়ুন আজাদ” ‘লাল নীল দীপাবলি ‘পৃষ্ঠা-১৭,১৮]
মহাসয়! দেখচি ,মতের আমিল হলে গুরুজনকে ছাড়িয়ে যান।
প্রকৃত সত্য হলো ,মুসলমান সাহিত্যিকদের লেখনীতে, বাংলা সাহিত্যে দেব-দেবী আর ধর্মীয় লেখনি মাড়িয়ে প্রথম মানবতার ব্যাথা -কথা পুটে উঠে।
“আল মাহমুদ “যদি জিহাদ শব্দ ব্যবহার না করে যুদ্ধ শব্দটি ব্যবহার করতেন তবে কি উনারা তাবে বন্দনা করতেন না?
উনাদের কে বুঝাবে!জিহাদ বলতে যুদ্ধ নয় বরং মানবতার মুক্তি র সোপান কে বুঝায়।
এখন যদি কেও সন্ত্রাসকে জিহাদ বলে চালিয়ে দিয়ে, জেগেও ঘুমন্ত মানুষের নেয়ায় আচরণ করেন, তবে তাঁর ব্যপারে আমাদের কনো কথা নেই।
কিন্তু প্রবন্ধকার নিঃসন্দেহে বিজ্ঞ ও জাগ্রত। ডিনামাইট এর মন্দব্যবহারের জন্য আ.নোবল যদি দায়ী না হন। তবে জিহাদের আপব্যবহার কারিদের দায়বার ইসলাম কেন নিবে।
জনাবের নিকট প্রশ্ন :
চলমান সন্ত্রাসের বিকটিক কারা??
আর এর অনুঘটক করা?
জনাব হাসান মাহমুদ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।কিন্তু ঐ যে বললেন ‘মিথ্যার সাথে সত্যের নিপুন গাঁথুনী’ মানে সত্য আছে স্বীকার করছেন কিন্তু মিথ্যেটা কোথায় তা উল্লেখ করলে আলোচনার সুবিধা হতো।আর হাঁ হুমায়ুন আজাদ মহোদয়কে উদ্ধৃত করলেন কি কারণে ?আমিতো বলিনি বখতিয়ার খিলজী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে এবং হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে জীবন্ত পুড়িয়ে বা গলা কেটে হত্যা করেছিলেন।যদিও বখতিয়ার তা-ই করেছিলেন।অর্থাৎ আপনি ধরেই নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় আর পাঠাগার পোড়ানো পর্যন্ত যেহেতু এগিয়ে গেছি পরবর্তিতে কান টানলে মাথা আসার মতো আল্লাহর সিপাইদের গণহত্যার কীর্তিগুলিও অবলীলায় এসে যাবে তাই হুমায়ুন আজাদকে আগাম ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিলেন প্রচেষ্টাটি মন্দ নয়।
“প্রকৃত সত্য হলো ,মুসলমান সাহিত্যিকদের লেখনীতে, বাংলা সাহিত্যে দেব-দেবী আর ধর্মীয় লেখনি মাড়িয়ে প্রথম মানবতার ব্যাথা – কথা পুটে উঠে।”
এই বাক্যের তাৎপর্য আমার ঠিক বোধগম্য হলনা।হয়তো কঠিন দার্শনিক মন্তব্য বলেই।
মানবতার মুক্তির সোপানটা কী?বিশেষ করে যা প্রতিষ্টিত করতে বারুদ লাগে ?রক্ত ঝরাতে হয়?বেশীর ভাগ মুসলমান দেশে এখন যা চলছে তাই কি?
“চলমান সন্ত্রাসের বিকটিক কারা??”বিকটিক’ শব্দটি আমার কাছে গ্রীক মনে হচ্ছে।এটা যদি আদৌ কোনও শব্দ হয়ে থাকে তবে আমার অজ্ঞতার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আর যদি ‘ভিকটিম’ বুঝিয়ে থাকেন তবে আগে আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে ‘চলমান সন্ত্রাস’ বলতে আপনি কোন ঘটনা প্রবাহকে বুঝাতে চান।
His creativity has been infected by the virus of his faith. SAD!!
Faith, particularly, the infected faith, is against artistic & poetic creativity. (In Saudi Arabia, there is no place for art!)
এখানে বাংলায় মন্তব্য করতে হবে। আগামীতে ইংরেজিতে লেখা মন্তব্য প্রকাশ হবে না।
অনেকদিন থেকেই ভাবছি ওনার মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন । খুবই অবাক হতাম । অতীতের এই কবি এবং আজকের এই কবিকে ঠিক মেলাতে পারতাম না । লেখককে ধন্যবাদ ।
আপনাকেও ধন্যবাদ,অবসরের গান।কবি আল মাহমুদ তাঁর ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ দর্শণে এখনও অবিচল আস্থাশীল।একটি ব্লগ থেকে জানতে পারলাম সম্প্রতি তাঁর চিন্তার অনুগামী কিছু জেহাদী তরুণ কবি সাক্ষাতে এই কবিতাটি আবৃত্তি করার পর তিনি আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন।এ থেকেই মনে হয় এই দর্শণ আল মাহমুদকে আপাদমস্তক কি রকম আচ্ছন্ন করে রেখেছে।বরং এখন যদি তাঁকে কেউ আবৃত্তি করে শুনায় ‘আমার মাথায় আজ চূড়ো করে বেঁধে দাও চুল/তুমি হও একতারা, আমি এক তরুণ লালন,” নিশ্চিত তিনি এই পদের জন্য অনুতপ্ত হবেন।