নিশ্চিন্তপূর গেলে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে দুবলা ঠারা। যে কাঙ্খে তার এতকাল মলের ড্রাম স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলো সেই জায়গা এখন দখল করে বসে আছে দুবলার চার বছুরে ডাঙ্গর পোলা মাধাই। কতই বা ভার, মলের ডোলের থেকে বেশী হবে না! তারপরেও কষ্ট হচ্ছে, ঘাম ঝরছে অকাতর। এরই মধ্যে দেড় ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে সে। শুনেছে ওখানে শান্তি আছে, সুখ আছে- মানে, শান্তি ঠারা আর আর সুখ ঠারার পুরা গুষ্টি-বনেদ সব। তাহলে তো কোন চিন্তাই নাই তার। কোলে বসে বসে পোলা বিরক্ত। মায় এক ঢোক জল খায়। মায়ের শরীরে ধাক্কা দিয়ে ছেলে জিজ্ঞেস করে- মা, নিচ্চিন্তিপুর আর কদ্দুর?
-ঐ যে বাবা রাজার সাতমহলা বাড়ী দেখতিছো, ঐডারে বায় থুয়ে আর দুইপা সামনে গেলিই নিচ্চিন্তপুর।
দুবলার সম্বল বলতে এই একখানা ডাঙ্গর ছেলে। তারে নিয়ে সে খোয়াব দেখে জেগে জেগে। কিছু না থাকলেও সুখ আর শান্তির জন্যে তার যাওয়া লাগবে নিশ্চিন্তপুর। অনেকের মতন তারও।
একসময় উপরওলা সদয় হয়। দুবলা পৌছে যায় ছেলে নিয়ে সাধের চিশ্চিন্তপুর। সময়ের পিঠে সময় পার হয়ে গেলেও শান্তি বা সুখ কেউ আসে না মায়-পুতেরে দেখতে। সুখ, শান্তিরা কি চলে গেছে?
তবে হঠাৎ হঠাৎ কেউ না কেউ তো আসে। মানুষ আসে, তারই মতন হাত-পা-রক্তের মানুষ। তারা অবাক হয়ে চমকে দিয়ে বলে যায়- এই মালায়নটা আবার আলো কইত্তে।
এই শব্দটা দুবলার বড়ই চেনা। তারপরেও তার মনের ভিতরে চিন্তা বাড়ে। দুঃশ্চিন্তাও বাড়ে। দুঃচিন্তা নিয়ে নিশ্চিন্তপুরে সে কেমন করে একটা সুখের ঘুম দিবে? সারা জীবন ময়লা ঘেটেছে দুবলা। মলের আর দোষ কি? তার না আছে জাত, না আছে ধম্ম। পোলাডারে তার একটা বাঁচার ঠিকানায় পৌছে দিয়ে তার ছুটি। হাটা শুরু করে দেয় সে। মনটা খারাপ হয় তার, খুব খারাপ, কিন্তু কান্না আসে না। তার বদলে নিজের উপরে ভীষণ রাগ হয় দলিতের। নিরুদ্দেশে আর ভয় কি? অবশেষে মানুষের মল বওয়া কাঙ্খে ছেলে বসিয়ে নিয়ে আবার নিরুদ্দেশের পথে হারিয়ে যায় দুবলা ঠারা।