মুক্তমনায় আমার প্রথম লেখা। তাই লেখায় অগোছালোভাব, ব্যাকরণগত ত্রুটি, অসংলগ্নতা থাকলে তার জন্য প্রথমেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অভিজিৎদাকে কোনোদিনই আমার লেখা দেখাতে পারব না এই আফসোসটা অবশ্য থেকেই যাবে। লেখার শুরুতেই কিছু বিষয় বলে নিতে চাই।
আমি চুড়ান্তভাবে নৈরাশ্যবাদী ও নৈরাজ্যবাদী মানুষ। তাই এই অধমের লেখায় কোন আশার খড়কুটো পাওয়ার আশা নেই। আর আমি কোন ধরনের অনুভূতি তা সে স্বদেশপ্রেমই হোক,মতবাদিক,ধর্মীয়,সামাজিক,পারিবারিক,জাতীয়তাবাদ বা যেকোনো কিছুই হোক না কেন তার ধার ধারি না। তাই অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেই দায় আমার নয়।
যারা হাজার বছরের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য,মহান বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ,মহান একাত্তরের চেতনা ইত্যাদি দিয়ে স্বপ্ন ও আশার কাঁথা বুনে যাচ্ছেন,এ লেখা তাদের জন্যও নয়। কারণ এ কাঁথা পোড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমি লিখতে বসেছি। এটা আমার ক্ষনিকের রাগ বা ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও লেখা নয়। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে দীর্ঘদিন যা ভেবে এসেছি অনেকটা তাই।
এখানে মূলত আমি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের টিকে থাকার উপায় নিয়েই কিছু বলতে চাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে সংখ্যালঘুদের মূলত চার ধরনের ফেট দেখতে পাওয়া যায়। এখানে আমি ধার্মিকদের কথাই বলতে চেয়েছি। নিধার্মিকদের কথায় পরে আসছি। প্রথম ফেট হচ্ছে পিনাকী,সুশান্ত,অঞ্জন রায় বা ফেসবুকে রোজার সময় ত আমিও রোজা রাখি,ওরাও ত আমাদের পূজায় আসে, আমরা যখন মাংস খাইনা তখন ত ওরাও খায় না এই টাইপের বস্তু যারা শেয়ার করেন তাদের মত হওয়া। কিন্তু আমরা যখন মাংস খাই না তখন ত ওরাও খায় না এই জিনিস তারা কোত্থেকে আবিষ্কার করলেন তা জানতে পারলে ভাল হত। এর জন্য তারা নোবেল না হোক একটা যেকোনো বড় পুরস্কার আশা করতেই পারেন। আপাতত এই লাইনটি যারা ন্যুনতম ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বাস করতে পারেন তাদের জন্য আদর্শ। সুরঞ্জিত সহ অন্যান্য আওয়ামী নেতাদের ইচ্ছে করেই বাদ রাখছি। কারণ ক্ষমতা চেঞ্জ হলেই তারা পলিটিকাল পারসিকিউশনের স্বীকার হবেন। নামের জন্য হয়ত একটু বেশিই হবেন। তাই তাদের জন্য এখন মারি ত গন্ডার লুটি ত ভান্ডার নীতিই শ্রেয়তর।
দ্বিতীয় লাইনটি হচ্ছে অন্য দেশে চলে যাওয়া। এই লাইনটা আসলে সত্তর বছর ধরেই প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠানামা করছে। তাই এবিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে সুযোগ থাকলে তাদের আমি ভারত না গিয়ে ইউরোপ নর্থ আমেরিকায় মাইগ্রেশনের কথা বলব। পশ্চিম বঙ্গে মমতার মৌলবাদী তোষণ এখন বিপদজনক মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে তাই ওখানে যাওয়া অনেকটা জ্বলন্ত উনুন আর ফুটন্ত কড়াই জাতীয় বিষয়ের মতই হবে।
তৃতীয় এবং চতুর্থ লাইনটি অনেকটা ওভারল্যাপিং এর মতই মনে হবে। তৃতীয়টি হবে ইসলাম ধর্মে কনভার্সন হয়ে যাওয়া। এটা মুসলিম বিশ্বে অমুসলিমদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় পন্থা। তাই খুব বেশি সমস্যা হয়ত হবে না। আর একহাজার বছর ধরে এই পথ প্রচলিত যেটা এই লাইনের আরেকটা এডভান্টেজ।
চতুর্থ লাইন হচ্ছে ছেলে অথবা মেয়েকে মুসলমান পরিবারে বিয়ে দেওয়া। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই ব্যবস্থা করে নেয় তাহলেত খুবই ভাল। এখানে যে মুসলমান মতেই যে বিয়ে হতে হবে তা নয়। অন্যভাবে হলেও ছেলে বা মেয়ের শ্বশুরকুল অথবা আত্নীয়স্বজন স্বউদ্যোগে বাকি ব্যবস্থা করে নেবে। তাহলে নিজেরা ধর্ম চেঞ্জ না করলেও বেয়াইকূলের সৌজন্যে বেশ সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারবেন।
এবার আসি অবিশ্বাসীদের প্রসঙ্গে। হিন্দু পরিবার থেকে আসলে উপরের চারটি পথই খোলা। যেহেতু নাস্তিক জানতে পারলেই চাপাতির তলায় তাই সবাই মোটামুটি ক্লোজেটেড জীবনই ধারণ করছেন বলে মনে হয়। তাই উপরের ওয়েগুলোর কথা বলছি। আর মুসলমান পরিবার থেকে আসলে ছদ্মনাম ধারণ করা ও তা কঠিনভাবে মেনে চলা একটি ভাল উপায়। বাইরে বেশি বেশি ধর্মীয় সামাজিকতা প্রদর্শন করলেত আরো ভাল। পুরো সমাজ ও দেশই যখন ধর্মসাগরে গোসল করছে সেখানে একটু ধার্মিক ভাব দেখালেই অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। তবে যারা কোনো ধরণের কম্প্রোমাইজ দেখাতে চান না তাদের জন্য দেশ ছেড়ে পালানোই বেস্ট ওয়ে। আর যারা একটু বেশি রকমের ধনী তারা নাস্তিক হলেও যদি রাস্তাঘাটে হাঁটাহাটি বাদ দিতে পারেন তাহলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ফেসবুকে খুব পরিচিত একজন নারী সম্ভবত এই ওয়েতেই বেশ ভাল আছেন বলা যায়। এই সবগুলো কৌশল বিধর্মী নাস্তিকদের জন্যও কমবেশি প্রযোজ্য।
তবে সামগ্রিকভাবে হিন্দু নামধারী নাস্তিকেরা তাদের হিন্দু নাম নিয়ে ইসলামধর্মের সমালোচনা করার জন্য অন্যদের তুলনায় একটু বেশি ঝুঁকিতে আছেন এটা বোধহয় সবাই মানবেন।
এই অক্ষমের অকিঞ্চিৎকর লেখা এখানেই শেষ করছি। আপনাদের বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা কামনা করছি।