কুসংস্কার থেকে না মুক্তচিন্তা থেকে ওয়াক আউট?
আমরা সবাই জানি যে, গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ থেকে বিরোধী সাংসদরা সরকারী দলের সাথে মতামতে না মিললে মাঝে মাঝে ওয়াক আউট করেন, আবার অংশগ্রহণ করেন, কখনও বর্জন করেন, আবার অংশগ্রহণ করেন। তবে লম্বা সময় ধরে সংসদের বাইরে থাকেন না। আমাদের দেশে নিজের সাংসদ পদ বহাল রাখার জন্য যে সময়টুকু আইনী প্যাঁচে থাকা দরকার এর বেশি সংসদে থাকেন না।
তেমনি, সংস্কার, কুসংস্কার,নাস্তিক ও আস্তিকের বিষয়টিও অনেকের মনে এমনই দোলাচলে দোলায়িত। স্বার্থ, সময় ও সুযোগ বুঝে মুক্তচিন্তায় প্রবেশ করেন, মুক্তচিন্তা থেকে ওয়াক আউট করেন, মুক্তচিন্তায় অংশগ্রহণ করেন।
অন্যভাবে বলা যায়, সময় বুঝে কুসংস্কার থেকে ওয়াক আউট করেন, কুসংস্কার বর্জন করেন, আবার কুসংস্কারে বুঁদ হয়ে থাকেন। এ বুঁদ হয়ে থাকার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে না কমছে তা আমার পর্যবেক্ষনের রাডারে ধরা পড়ছে না। কারণ আমাদের রঙ বদলানো চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য। ওয়াক আউটের নীতিহীনতা। যেমন, বামপন্থীদের হজ্বব্রত পালন।
শৈশবে দেখতাম পঞ্জিকা দেখে যাত্রার দিনক্ষণ ঠিক করা হত । দিনে না মিললে বলা হইতো বুধবার যাত্রা শুভ। অথবা ডাকে পাখি না ছাড়ে বাসা সেই সমকে বলে উষা এবং নিদেনপক্ষে যে কোনদিন ঐ সময়ে যাত্রা করা শুভ। আর যাত্রা বলতে বড় জোর মামার বাড়ী যাওয়া। বউদের বাপের বাড়ি যাওয়া। শ্বশুর বাড়ি যাওয়া।। পড়তে শহরে যাওয়া।
আবার এক ঘর থেকে ছেলের বউ ও মেয়ে একদিনে যেতে দিত না। এখনও আমি আমার বাপের বাড়ি নরসিংদী গেলে কোন কোন পরিবারে দেখি বা শুনি, না আজ মেয়ের যাওয়া উচিত না। বউ গেল। কাজেই মেয়ে খুশিতে ডগমগ, কিন্তু মেয়ের জামাইয়ের রাগারাগি। এ নিয়ম মানতে ও মানাতে গিয়ে অশান্তি।জামাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে ওয়াক আউট করার ঘটনার অঢেল উদাহরণ বিরাজমান।
বা আজ মেয়ে গেল। কাজেই বউ কাল যাবে। এদিকে বউয়ের গাল ফোলা। একদিন আগে বাপের বাড়ি যেতে পারল না। অসন্তোষ।বিক্ষোভও হয়।পাতিল ভাঙ্গার ঘটনাও নজিরবিহীন না।
অন্যদিকে, ভিসা পেলে প্লেনের টিকিট কাট। টিকিট আবার সস্তাটা খোঁজো বা উপো্যগী রুট খোঁজ কিংবা ট্রানজিটে সময় কম লাগে খোঁজ। অথবা, এক দেশে যেতে ট্রানজিটে আরেক দেশ দেখার সুযোগ খোঁজ। ভর্তির বা ক্লাস শুরুর তারিখ বা চাকরিতে যোগদানের সময় দেখে যাবার তারিখ ঠিক কর। কোথায় গেল পঞ্জিকা আর কোথায়ই বা শুভ দিনের গণনা! এক্ষেত্রে আমার মায়ের যুক্তি ছিল–মাসের ত্রিশ দিনই ভগবানের। এটা কি আস্তিকতা থেকে নাস্তিকতার দিকে যাত্রা নয়? আর প্রয়োজন, সময়ের চাহিদা, সমসাময়িক পরিস্থিতি কি মানুষকে অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বকে অস্বীকার করার শক্তি যোগায় না? যোগায়।
এ অমোঘ সত্যটি আমরা কেউ কেউ মানি না। কেউ কেউ নিজে তো মানি ই না, অন্যে যাতে না মানে এর জন্য চাপাতি নিয়ে সদা প্রস্তুত। দিনে পাঁচবার অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বকে জানান দেয়। আবার অন্য গোষ্ঠি তাদের বিশ্বস্ত অলৌকিক শক্তির কথা বলতে গেলে এরা আগুনে তাদের ঘর পোড়ায়। এ সদা প্রস্তুত মূর্খদের নিয়ে সরকার ভীত বা রাজনৈতিক খেলায় মত্ত, সাধারণ জনপদ সন্ত্রস্ত, মডারেটরা আহ্বলাদিত, পরহেজগাররা গর্বিত। আর? আর! নাস্তিকেরা তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুত। তবে তীক্ষ্ণ যুক্তি নিয়ে। অকাট্য প্রমান দিয়ে। চাপাতি পার্টির সে ক্ষমতা নেই। তাদের যুক্তির ধার নেই, তবে চাপাতির ধার আছে।
২০১৪ সালে আমার চট্টগ্রামের বাসার রান্না ঘরে পাখির পায়খানাসহ খড়কুটোর আবর্জনায় ভরপুর। ঢাকা থেকে লম্বা ছুটি কাটিয়ে ভোরবেলা ঘরে ঢুকে তো এক মহা অস্বস্তিতে। বুঝতে পারছি না কোত্থেকে এসব এলো। পরে আবিষ্কার করলাম রান্না ঘরের এক্সজস্টেড পাখার নিচে জালালী কবুতরের বাসা।
বিল্ডিং এর কেয়ার টেকারকে বললাম একটা ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু এটা নাকি সৌভাগ্যের লক্ষণ।গৃহকর্মী ও কেয়ার টেকার আমার সৌভাগ্য নিয়ে আপ্লুত।ছোটবালায় দেখেছি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের কাঠের দোতালার বারান্দায় জালালী কবুতরের বাসা। পায়খানা করে বারান্দা ভরিয়ে রাখত তবুও তাড়াতো না। এ জাতের কবুতরের বাচ্চা খাওয়াও যায় না। অথচ তাদের জন্য আমার ঠাকুমা, বোন ও কাকারা খাবার ছড়িয়ে রাখতেন।
আমার চট্টগ্রামের বাসা থেকে যেন না তাড়াই সে জন্য গৃহকর্মী ও কেয়ার টেকারের বলিষ্ঠ্য অনুরোধ ও পরামর্শ। এক্সজস্টেড পাখার ফাঁকে আমার সৌভাগ্যের স্থায়িত্বের জন্য নয়, কবুতরের দুটো বাচ্চা হয়েছে জেনে তাড়াইনি।পরে পর পর কয়েকদিন রান্না ঘরে ময়লা আবর্জনা সইতে না পেরে কবুতরের বাচ্চা দুটোকে বারান্দায় স্থানান্তরিত করি।। অবশেষে কবুতর নিজেই অন্যত্র স্থানান্তরিত হয় আমার তথাকথিত সৌভাগ্যের পাখায় ভর করে। কারণ, জালালী কবুতর অন্যত্র চলে যাওয়াতেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে। বাসায় ফিরে কবুতরের পায়খানাসহ আবর্জনার জঞ্জাল পরিস্কারের দায় থেকে মুক্তি মিলেছিলো।