অনেকদিন পড় আবার মুক্তমনার জন্য লিখতে বসেছি। না, ঠিক মুক্তমনার জন্য না। অভিজিৎ রায়ের জন্য। আমার অভিদার জন্য। স্থাপত্যে পড়াশোনা শুরু করবার পর থেকে আমার বই পড়বার এবং গুছায়ে লিখবার ক্ষমতা অনেকখানি কমে যাওয়ায় লিখে উঠতে পারিনি অনেকবার চেষ্টার পরেও। গুছায়ে লিখতে না পারার অজুহাতে এতদিন ধরে না লিখে এখন যখন লিখতে বসলামই তখন এমন একজনের জন্য এমন এক অবস্থায় লিখতে হচ্ছে যে লেখাটা গুছিয়ে লেখা হয়তো সম্ভব হবে না। আগেও আরো বেশ কবার লিখতে বসে কি লিখব, কিভাবে লিখব, এসব ছেলেমানুষী কথাবার্তা লিখে লাভ কি ভেবে বার বার লেখা কেটে দিয়েছি। তাই এবার আগে থেকেই অযথা অহেতুক কিছু আবেগী প্রলাপের জন্য পাঠককূলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

অভিজিৎ রায়, আমার অভিদা। আমার জীবনে অভিজিৎ রায়ের প্রবেশ সম্ভবত কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে। ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে। তখন আমার বলা যায় বাউন্ডুলে জীবনের সূচনা। স্কুল লাইফে বাসার পাশের স্কুলে পড়া ভদ্র,সভ্য এবং মাঝারি মানের রেজাল্ট করা এক ছেলে আমি। ছোটবেলা থেকেই খুচরো খুচরো অল্পবিস্তর বই পড়তাম এখানে সেখানে ঘেটে। বই পড়ার অভ্যেসটা ছিল কিন্তু বইয়ের নেশাটা ছিল না। এসএসসি দেয়ার পর রেজাল্ট দেয়া আর ক্লাস শুরু হবার মাঝের প্রায় তিনমাস। আমার নেশার সূচনা। এই নেশা স্কুলে পড়া ভদ্র,সভ্য বাচ্চাটাকে এক ধাক্কায় বাউন্ডুলে বানিয়ে দেয়। কলেজ জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময় আমার কেটেছে চট্টগ্রামের অলি গলির আউট বইয়ের দোকানে, বইয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে, গাড়ির দুই-পাচ-দশটাকা ভাড়া বাচিয়ে বই কিনে, আর নেশাগ্রস্তের মতন বই পড়ে। ঐ সময়টায় আমার যা-ই পাই খাই ধাচের স্বভাব খুলে যায়। বইয়ের দোকানগুলোতে কোন তাকে কোন বই রাখা সে যেন দোকানীর চেয়ে আমিই ভাল বলতে পারতাম!
এমন অবস্থায় সম্ভবত কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে ঘরে রাখা বড় ভাইয়ের কম্পিউটারে কুয়েটে পড়া মেঝ ভাইয়ের রেখে যাওয়া গাদা খানেক পিডিএফ নিয়ে ঘাটাঘাটি। মেঝ ভাই আবার কুয়েটে বাম রাজনীতি করতো তখন। তাই তার পিডিএফের সংগ্রহের ধাঁচটাও খানিকটা আলাদা। সেইসব পিডিএফ ঘাটাঘাটি করতে করতে আমার চোখের সামনে এসে পড়ল আরজ আলী মাতুব্বর সমগ্রের প্রথম বইটার পিডিএফ। এই আমার ধাক্কা লাগার শুরু। বাচ্চাকালেও মাঝে মধ্যে নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরেছে, কিন্তু এমন সব অদ্ভুত আর ভয়ানক প্রশ্ন যে কাউকে করে বসা যায় সে সাহসটা হয়ে ওঠে নি কখনো। আরজ আলী আমার কাছে ঐ দুয়ারটা খুলে দেয়ার চাবি। আরজ আলির কাছে আমার শেখা এই যে, হোক সে চরম সত্য কি পরম বিশ্বাস সব কিছুকেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা যায়। করা উচিৎ! নাহয় মানুষ হিসেবে আমাদের সার্থকতাটা কোথায়? এই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়া এবং এরপর দিশেহারা হওয়া সময়টায় ঐ পথে অভিদার আগমন। না, ব্যক্তি অভিজিৎ রায়কে তখনও আমি চিনি না। সামনা সামনি বা ইন্টারনেটে কথা বলারতো প্রশ্নই আসে না তখন। তখন অভিদা আমার সামনে এসেছেন আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রীর ব্লগে লেখা অংশগুলোর পিডিএফ হয়ে। সেও প্রায় সম্ভবত ২০০৮ এর মাঝামাঝির দিকে বোধহয়। তখনও মুক্তমনা একটা ব্লগ হয়ে ওঠেনি মনে হয়। সে সময়টা থেকে বায়বীয় অভিদার অদৃশ্য হাতে হাত রেখে আমার মুক্তমনায় বিচরণের শুরু। তখন আমার আবার বাসায় ইন্টারনেট নাই। বেশিরভাগ মানুষেরই আসলে তখন সে অবস্থা। শুধু মুক্তমনা পড়ার জন্য আমি সাইবার ক্যাফেতে পয়সা খরচ করে দিনের পর দিন যেতাম। (আরজ আলি আগে পড়েছিলাম নাকি অভিদার লেখা সেটা নিয়ে কিছু কনফিউশন আছে আমার বিস্মৃতিপ্রবণ মনের। তবে সেটা এখানে খুব একটা বড় ব্যপার না। )

এরপর, সেই বছরেই অর্থাৎ ২০০৮ এর একদম শেষের দিকে খুব অদ্ভুত কিছু প্রসঙ্গে তাল হারায়ে ফেলে আমি বই থেকে পাওয়া অভিদার মেইল আইডিতে মেইল করলাম। এই লেখাটা লিখতে গিয়ে মেইলবক্স ঘেঁটে পুরোনো মেইল বের করে দেখি দিনটা ছিল ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ ২০০৮ । কি অদ্ভুত সব প্রশ্ন ছিল সেগুলা! নিজে দেখে এখন নিজেরই হো হো করে হেসে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে। পাঠকদেরকেও আমার সার্কাসের কিছু নমুনা বলা যাক! আমার প্রথম মেইলের প্রশ্নগুলা ছিল (হ্যাঁ, প্রশ্নগুলা। আমি একটা প্রশ্ন করে বসে থাকতাম না। একের পর এক অদ্ভুত সব প্রশ্ন করেই যাইতাম!) একজন ইলেকট্রিক ম্যান যে কিনা নিজের শরীর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে (যেটা নিয়ে ডিসকভারিতে ডকুটাইপ কিছু একটা দেখানো তে আমি অনেক কনফিউজড ছিলাম), একজন মাইন্ড রিডার বা টেলিপ্যাথিক, আর আইনস্টাইনের ব্রেইনের সাইজ এবং আইনস্টাইন মায়ের পেটে কয়দিন ছিলেন এসব নিয়ে!
অভিদা পরের দিনই এইসব অর্থহীন প্রশ্নের উত্তরে আমায় রিপ্লাই দিয়ে বসলেন! তাও আবার খুব সুন্দর করে আদুরে ভাষায়, আবার শেষে তাকে মেইল করবার জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে! আমি তার মেইল খুলেই আনন্দে আটখানা! একে তো তখন মেইল বস্তুটাও আমার কাছে দূর্লভ জিনিস, তার উপর আমি বাচ্চা মানুষ এবং সবচে বড় ব্যাপার ছিল এই যে আমার এসব অহেতুক প্রশ্নের উত্তরও কেউ দিতে পারে, সেটা আবার যেনতেন কেউ না, আমার পছন্দের লেখক অভিজিৎ রায়, এই এতগুলা ব্যপার একসাথে ঘটতে দেখেই খুশিতে গায়ের লোম দাঁড়ায়ে যাবার অবস্থা! আমি খুশিতে প্রায় লাফাতে লাফাতে আবার মেইল করে বসলাম! এবার সরাসরি মামা বাড়ির আবদার! আমি লিখতে চাই আর আমার লেখা মুক্তমনায় ছাপাইতে হবে! আরি! কি অদ্ভুত আবদার, একটা মাত্র মেইলের রিপ্লাই দিসে এর মধ্যেই ঘাড়ে উঠে বসার আবদার! আমার সাথে কেউ এরকম করলে আমি খুব ভালই জানি যে একটা কষা ঝাড়ি খেতে হতো তাকে। কিন্তু এ তো আর আমি না, অভি দা। তিনি উলটো উৎসাহ দিয়ে ঐদিনই রিপ্লাই দিলেন,” অবশ্যই। আমাদের মুক্তমনা সাইটের জন্য গুছিয়ে লেখা শুরু করে দিন। কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তা কইরেন না।” (তখনো ভাইয়া আমাকে ‘আপনি’ করে সম্বোধন করে যাচ্ছেন। ) আবার তার ধুম করে দেয়া এত আদুরে রিপ্লাই দেখে আমি খুশিতে বাকবাকুম করে মেইল করে বসলাম। এরপর আরো দুটো মেইলের পরে আমি উনাকে একটা গার্বেজ মার্কা গল্প লিখে বসলাম। শুধু গার্বেজ না, ভয়াবহ গার্বেজ (যেটার কথা এখানে তুলে ধরার মত সাহস করে উঠতে পারব বলে মনে হয় না।) এরপর উনি রিপ্লাই দিলেন যে আমার লেখার হাত নাকি ভাল! যে গল্প এখন দেখে আমার নিজের মাথা টেবিলে বাড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে সেটা দেখে উনি রিপ্লাই দিলেন আমার নাকি হাত ভাল! আর সে মেইলে আমি প্রথম পরিচিত হলাম ‘অভ্র’র সাথে। বাংলা লেখার অভ্র। এর আগে সবটাই আমি বাংলিশে লিখছিলাম। তা দেখে অভিদা আমায় অভ্রর লিংক পাঠিয়ে বাংলায় লিখতে বললেন। অর্থাৎ আমার কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনাও অভিজিৎ রায়ের হাত ধরে।
এরপর আরো অনেক অনেক অনর্থক প্রশ্ন আর উনার বিরক্ত না হয়ে আদর করে দেয়া রিপ্লাইয়ের পর রিপ্লাই। এর মাঝে ভাইয়ার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’র হার্ড কপির জন্য আমার খোঁজা খুজি। কিন্তু কোথাও না পেয়ে চট্টগ্রামে বাতিঘরে আগে থেকে অর্ডার করে রাখা এবং এসব খোঁজাখুজির পাচ মাসের মাথায় বাতিঘর থেকে ফোন যে আমার বই চলে আসছে। এরপর আবার মুক্তমনার জন্য লেখার চেষ্টা করা। এবারের টপিক মুক্তিযুদ্ধ। ভাইয়ার উৎসাহ দেয়া বন্ধ হয় না, আমাকে ‘আপনি’ করে বলাও বন্ধ হয় না। এর মধ্যে আমি প্রতিনিয়ত মুক্তমনায় ঘুরি আর নতুন নতুন লেখা পড়ার জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করি আর ভাইয়ারে পারলে বকা দিয়ে মেইল করি যে, “মুক্তমনায় নতুন লেখা ছাপাইতে এত দেরী হয় ক্যান! তিনদিন ধরে ঘেটে আমি একটা নতুন লেখা পড়ার পাই না!” এরপর আস্তে আস্তে মুক্তমনায় অতিথি হিসাবে কমেন্ট করতে থাকি। কমেন্ট হিস্ট্রি খুজে পাওয়া কষ্টকর, অতিথি হিসাবে করা গুলোতো পাওয়া সম্ভবই না। নাইলে সে সময়ে আমার কমেন্টের বন্যা দেখলে এখন অবাক হতে হত।
এগুলো ২০০৯ এর জুনের দিককার কথাবার্তা। তখন বোধহয় মুক্তমনা ব্লগসাইট হয়ে উঠছে। এরপর আবার আমার আবদার! আমি ব্লগের মেম্বার হইতে চাই! ভাইয়া কিছু না কয়ে সোজাসুজি আমারে ব্লগের মেম্বারশিপ দিয়ে দিলেন! সেটা ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরের কাহিনী। মেম্বারশিপ হাতে পেয়ে আমার কমেন্ট করার সংখ্যা বোধহয় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিল! আমার প্রথম লেখা মুক্তমনায় যায় ও বছরের নভেম্বরে। একটা কবিতা! সেই বাচ্চা মার্কা কবিতাতেও আবার ভাইয়ার উৎসাহমূলক কমেন্ট। এরপর ঐ নভেম্বর ২০০৯ থেকে ফেব্রুয়ারী ২০১১ পর্যন্ত ব্লগে পার করা আমার সবচে এ্যাকটিভ সময়। প্রতিনিয়ত ব্লগে যাই আর কমেন্টের পর কমেন্ট করি এবং মাঝেমধ্যে এটা সেটা নিয়ে পোস্ট দেই। ভাইয়া সমানে উৎসাহ দিতে থাকেন। কিন্তু ২০১১ এর ফেব্রুয়ারীর পর থেকে বেসিকালি স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনার ঝামেলায় ব্লগের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং ফেসবুকের দৌরাত্ব বাড়তে থাকে। সম্ভবত ২০১২ এর বইমেলায় গিয়ে প্রথম দাদার সাথে সামনা সামনি দেখা হয়। আমি মুখচোরা বলে বেশি কিছু বলতে বা বেশিক্ষন থাকতে পারি নি। এই অল্প সময়েই দাদা হাসি হাসি মুখ করে আমি কেন লেখা দেই না সেটা বলে হালকা বকে দিলেন আমায়। এরপর আবার আমি নাই, কোথাও নাই। ফেসবুকে মাঝে মধ্যে বন্যাপু আর অভিদা নক করে জিগান যে আমি কেন লিখি না। আমি মোটেও ভালো লিখিয়ে না, এরপরেও ভাইয়া আপু যে আমায় লিখতে বলেন এবং তারপরেও লিখতে না পেরে আমি অপরাধবোধে ভূগতে থাকি। তারপর অনেকদিন যোগাযোগ নেই। আমি সংকোচে লজ্জায় যোগাযোগ করি না, আর ভাইয়া ব্যস্ততায়।

এরপরে আসে ২০১৩। জীবনের সুন্দরতম সময়গুলোর একটা। হয়ত এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচে ভালো সময়টা। শাহবাগ আন্দোলন। লাখো মানুষের সাথে কাধে কাধ আর গলা মেলাবার সময়। আমি চুপচাপ মানুষ, নিজের মত করে যাই, বন্ধুদের সাথে নিয়ে যাই, নিজের মত গলা ফাটায়ে চেচিয়ে স্লোগান দেই। এসব করতে করতে মার্চের শেষদিকে ‘রুমি স্কোয়াড’ নামে ঢাবির কিছু তরুণের গড়ে তোলা ছোট্ট কজনের একটা দল জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সহ আরো কিছু ইস্যু নিয়ে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে আমরণ অনশনে বসে পড়ল। দুদিন ধরে অদ্ভুত সব চিন্তাভাবনা করে মানসিক অশান্তিতে টিকে থাকতে না পেরে দুইদিনের মাথায় বাসায় না জানিয়ে শুধু দুই কি তিনজন বন্ধুদের জানিয়ে আমি নিজে গিয়েও ওখানটায় ওদের সাথে চুপচাপ বসে পড়লাম। কাউকে কিছু জানাই নাই, অনশনে সবার সাথে শুয়ে বসে না খেয়ে সময় পার করি, এর মধ্যে ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র(সৌরভ দ্রিগ দা) সেখানে অনশনকারীদের দেখতে গেলেন। গিয়ে উনি আমাকে দেখে অবাক। এরপর আমি উনার প্রায় হাতে পায়ে ধরে মানা করার পরেও উনি গিয়ে অভিদারে মেইল করে বসলেন। আর কই যাই! অভিদা আমারে নিয়ে বিশাল এক লেখা লিখে বসলেন! সেটা মার্চের ৩১ তারিখ! সে লেখাটা এখনো সামনে আসলে মনে হয় যে দাদা কি পরিমান পছন্দ করতেন আমায়! আর আমি কিছুই করতে পারি নাই! ঐ এক লেখার চোটেই আমি প্রায় সেলিব্রেটি হয়ে যাচ্ছিলাম! আমি মুখচোরা লোক, সুন্দর মত কথাবার্তাও কইতে পারি না, পালায়ে থাকতে পারলে বাঁচি সেখানে অভিদার মতন একজন আমারে নিয়ে এত কিছু লিখে বসলে আর নড়বার জায়গাটাও থাকে না!

এরপর অনশন গেল, শাহবাগ গেল, এর ওর ফাঁসি হইল আর আরো অনেক অনেক হতাশা আসল গেল। আমিও আবার নিজের মত এটা সেটা করে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ব্লগের মানুষজনের সাথে অল্পবিস্তর যোগাযোগ হয়। কিন্তু ভাইয়ার সাথে ওভাবে আর কথা বলে ওঠা হয় না। ২০১৪ এর মাঝামাঝি থেকে শেষ দিক, এসময়টা পুরাটাই কেটেছে আমার ডিপার্টমেন্টাল ইন্ডিয়া ট্যুরের প্রিপারেশন নেয়া আর ট্যুরে যাওয়া নিয়ে। ২০১৫ এর ২৫ ফেব্রুয়ারী আমরা ইন্ডিয়া থেকে ফিরি। ফিরেই ২৬ তারিখ বিকাল বেলা সে বছরের প্রথম বইমেলা দর্শনে যাওয়া। বইমেলা থেকে সন্ধ্যার পরে বের হয়ে টি,এস,সির ত্রিভুজে বসে বন্ধুদের সাথে বসে পানিপুড়ি খাচ্ছিলাম, সে মুহুর্তে রায়হান ভাইয়ের এসএমএস, “অভিদা বন্যাপু দেশে এবং আগামীকাল বিকালে (২৭তারিখ) উনাদের বাসায় আমরা সবাই দেখা করতে যাচ্ছি।” আমিতো সেই খুশি! আবার বকার ভয়ও পাচ্ছি! এসব চিন্তা করতে করতে আটটার দিকে হলে ফেরত যাওয়া। এরপর ঠিক দশটা কি সাড়ে দশটার দিকে সম্ভবত রায়হান ভাইয়ের ফোন। উনি দ্রুত আমায় মেডিকেল যেতে বললেন, অভিদা আর বন্যা আপুর উপর আক্রমন হইসে বইমেলার বাইরে। তারা দুজনই মেডিকেলে…… এরপরের কাহিনী সবার জানা। এরপরের পুরো একটা সপ্তাহ আমি কিসের ভেতর দিয়ে পার করসি সেটা বোঝানো সম্ভব না।

এইতো অল্প কদিন আগেই, বোধহয় একসপ্তাহও হয় নি। আমার খুব কাছের এক বন্ধু আমায় হঠাৎই র‍্যান্ডমলি জিজ্ঞেস করছিল যে আমার সাথে মেন্টাল এটাচমেন্ট আছে এরকম ক্লোজ কি কেউ এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছে কিনা। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা খুব পছন্দের কেউ। প্রথমে বললাম যে ওরকম কারো কথা মনে পড়ছে না। তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম যে কতখানি এটাচমেন্ট থাকলে সেটাকে আসনে অন্তরের যোগাযোগ বলাযায় সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু অভিদার সাথে আমার কি ছিল সেটা আমি তার মৃত্যুর পরে হয়ত কিছুটা বুঝতে পেরেছি…

আমি কাউকে মেনটর মানি না। আমার কোন আইডলও নেই। কিন্তু যে কয়জন মানুষকে আমি এখনো মন থেকে শ্রদ্ধা করি সেই তালিকায় অভিজিৎ রায় সবসময় থাকবেন। আমার অভি দা।