লেখক: আকতার হোসেন

গতরাত জীবনের শেষ রাত ছিল সেটা জানতে পারলে কি তুমি অতিরিক্ত এক পাতা রবীন্দ্রনাথ পড়ে নিতে, নাকি গলা টিপে সূর্যটাকে মেরে ফেলতে? না, তুমি তো কাউকে মারতে চাও নি। তুমি এসেছিলে শুধু এইটুকু বলতে, অন্ধকার থেকে আলো উত্তম।

তুমি যতোটুকু বলতে পারতে সবটা শোনা হল না। সবটা বলতে পারলে আর কি কি বলতে জানি না। হয়তো তুমি ডাক দিতে এবং বলতে অন্ধকার আর আলোর মধ্যে একটা সীমান্তরেখা এঁকে দাও। তারপর হয়তো প্যোডিয়ামে দাঁড়িয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে মাও সে তুং এর মত বক্তৃতা দিতে “তোমাদের ভাইবেরাদরদের ভেতর থেকে, তোমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে সেই কালো হাত”। হয়তো বলতে, কিছু রক্ত শুঁকিয়ে গিয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমির মাটি থেকে। আমি সে মাটিকে আর্দ্রতা দিয়ে এসেছি। হয়তো আর বলতে, আমি বিশ্বাস করি ফুলের জন্ম হয় ফুল থেকে মানুষের জন্ম মানুষ হতে। তুমি আস্থা অনাস্থার বাইরে কিছু মানুষ জন্ম দিতে চেয়েছিলে তাও তোমার নিজের ভেতর থেকে। তোমার রক্তাভ বীজ থেকে আজ যে অঙ্কুর গজিয়ে উঠছে তা কি তুমি দেখতে পাও? কেউ যদি বলে অতোটুকুই রক্ত ছিল তোমার শরীরে মানে ওরা সবটুকু ঝড়িয়ে দিতে পেরেছিল। কেউ যদি বলে তোমার শরীরের ভেতর জীবন ছিল সে জীবন এখন অকেজো। আবার এমনও যদি বলে তুমি ছিলে কিন্তু তুমি নেই, তুমি হারিয়ে গেছ। আমি বলবো ওরা ঘোরের মধ্যে আছে। যারা হাতের মধ্যে ধারালো ধাতব নিয়ে ফুটপাতের হীরক রাজা সিপাহি হয়ে ঘুরে বেরায়, তারাই আসলে নাই। ওরা কখনোই ছিল না। ওরা থাকবে না। অথচ তুমি আছ, তুমিই থাকবে। তোমার মত সেই মান্যবরেরা থাকবেন, তাদের মত মহামূল্যবান সকলেই থাকবেন। এটাই সত্যের অভিনব জিত। তুমি অভিজিৎ।

সেদিন ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি টিএসসির কাছে এলে হীরক রাজার সিপাহিরা তোমাকে আর তোমার প্রিয় মানুষটিকে বাতাস মনে করে ফালিফালি করে দিতে চেয়েছিল। পড়ন্ত বিকেলের নিভু নিভু আলোতে বন্যা ভেসে যায় ‘লাল নদী’র মত। তাঁর কলম ধরবার শক্তি কেটে দেয় ওরা। তোমারও বেশ কষ্ট হয়েছিল জানি। কিন্তু সেই কষ্ট আমরা ভাগ করে নিয়েছি। কিছুই রেখে আসি নি ফুটপাথে। আজো একটু একটু করে ছুঁয়ে দেখি সেই তুলে আনা আর্দ্রতা। আজও সেই শূন্য প্যোডিয়ামের কাছে গেলে শোনা যায় জীবন থেকে জীবনের জন্ম কাহিনী। হয়তো প্রভাত ফেরির মত খালি পায়ে গিয়ে অনেকে দাঁড়ায়। তাঁরা শূন্যে তাকায়। আবার অনেকে মুখ বুজে ভাষার গান গায়। অভিজিৎ রায় দীপ জ্বেলে যায়।