বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলি দূষিত শব্দের আখড়া। তার মধ্যে ঢাকা হচ্ছে আখড়াতুল আখড়া। কলকারখানার দূষিত শব্দ, বিভিন্ন যানবাহনের দূষিত শব্দ, মানুষের দূষিত চেঁচামেচি ইত্যাদির সম্ভার। তার উপরে উপরি পাওনা হিসেবে আছে বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র শব্দের দূষণ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ভাগের বেশি মুসলিম। তাই বাকি ১০ভাগ অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা শব্দ দূষণ তেমন সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তবুও হিন্দুরা তাদের পূজাগুলিতে শব্দ দূষণ কিছু কম করে না কিন্তু। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা ঘটিত শব্দ দূষণের কথা কী বলবো! বছরের প্রতিটা দিন যেন তারা জবর-দখল করে নিয়েছে রাজ্য দখলের মতন। শুধু প্রতিটা দিন নয়। একেক দিনে আবার পাঁচ-পাঁচটি-বার করে মাইক লাগিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে করে লোকজন ডেকে ডেকে তাদের জানান দিতে হয়, আল্লা মহান, আল্লা মহান। আল্লা ভালো, এজন্যই কি এটা মাইকযোগে গলা ফাটিয়ে বলে বলে মানুষের কর্ণকুহর ফাটিয়ে দিতে হবে দৈনিক পাঁচবার? এভাবে সারা বছর? দিনে রাতে একই অত্যাচার মানুষের কান ও স্নায়ুতন্ত্রের উপরে বারম্বার। এমন কি ভোররাতেও নিস্তার নেই। একবারের কানের ফাটল না সারতেই আরেকবার কান ফাটিয়ে দেওয়া। ৩৬৫ দিন দৈনিক পাঁচবার নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবার সাধ্য বা সামর্থ কার আছে? দেশে যে ১০ভাগ হলেও অমুসলিম মানুষ আছে তাদের কি শান্তিতে বাস করার কোনো অধিকার নাই? কোনো উপায় নাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে?

ঘুম মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। প্রয়োজনমত ঘুম না হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। ভোররাতে মানুষ গভীর ঘুমে অচেতন থাকে। এই সময় হঠাৎ দশদিক থেকে বজ্রকে বধির করে দিয়ে অগণিত মসজিদ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মাইকে মাইকে চিৎকার শুরু হয়ে যায়, আল্লা মহান, এই যে তোমরা শোনো, আল্লা মহান। ঘুম হইতে নামাজ উত্তম ইত্যাদি। এই পরিবেশে ঘুমানো আর কার বাপের সাধ্য? অচেতন ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নের বিকট আওয়াজে বুক ধড়ফড় করে ওঠে। হার্ট এটাক হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। দুই আঙ্গুলে দুই কানে তালা চাপা দিতে হয়। ঘুম যায় হারাম হয়ে। আরামের ঘুম একবার হারাম হলে আর কি সহজে হালাল হয়? আর কি ঘুম আসে? সে তো কর্কশ শব্দ শ্রবণে রাজ্য ছেড়ে পালায়ে বাঁচে। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা পরে সবাইকে ঘুম থেকে উঠতে হয় তড়িঘড়ি করে। তৈরি হয়ে বেরিয়ে যেতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে, স্কুলের উদ্দেশ্যে। ঘুমটা যদি নির্বিবাদ সুন্দর না হয় তবে তো সারাটা দিনই মাটি। এভাবে মাটি হচ্ছে মানুষের ৩৬৫টি দিন। এভাবে মানুষের গভীর ঘুম ভেঙে দিয়ে শান্তি বিনষ্ট করার নামই শান্তি।

আপনি আপনার প্রতিবেশীকে ডিস্টার্ব না করে চব্বিশঘণ্টা গান শুনতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি সর্বোচ্চ ভলিউমে গান শোনেন প্রতিদিন এবং সেজন্য যদি আপনার প্রতিবেশী একরাতও ঘুমাতে না পারে তাহলে কি আপনি অপরাধী নন? আপনি যদি বিবেকবান হন তবে কি আপনি অপরাধবোধ করবেন না? এবং বন্ধ করবেন না এহেন ডিস্টার্ব? কমিয়ে দেবেন না আপনার ক্যাসেট প্লেয়ারের ভলিউম? আযান তারা দিক কিন্তু অন্যের ঘুম নষ্ট করে নয়, অন্যের ডিস্টার্ব করে নয়।

এছাড়াও রয়েছে নিত্যনৈমিত্তিক ওয়াজ, মাহফিল ইত্যাদি। এসবেও অনেকগুলি মাইক লাগিয়ে দিয়ে দিনরাত চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অমুসলিমদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করা হয় আনলিমিটেড। আছে তাবলীগের ইজতেমা। কয়েকদিন ব্যাপী ঢাকা শহরের জনজীবন সম্পূর্ণ বিকল করে দিয়ে চলতে থাকে ইজতেমা। প্রতি বছর সরকার খরচ করে কোটি কোটি টাকা ইজতেমার খাতে। জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে, অচল হচ্ছে, বিকল হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। এই উপচে পড়া ঘনবসতির দেশে বিশাল বিশাল মাঠ দখল করে ওয়াজ মাহফিল ইজতেমা চলতে থাকে। সরকার দিয়ে রাখে তাদেরকে বাংলাদেশের মানচিত্র সঁপে। অগণিত নর-নারী ও শিশু আকাশের নিচে ঘুমায়। অনেকে সেই জায়গাটুকুও পায় না। সরকারের মাথাব্যথা নেই তাদের আবাসনের। সরকারের মাথাব্যথা আছে ধর্ম নিয়ে, ওয়াজ নিয়ে, ইজতেমা নিয়ে।

অথচ এইসব মারাত্মক সমস্যা নিয়ে আমরা কেউ কথা বলি না। বলতে পারি না। ভয়ে, আতঙ্কে। লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব নিয়ে সত্য কথা বলে মন্ত্রিত্ব হারালেন, অপমানিত হলেন, লাঞ্ছিত হলেন। এখন জেলে পচছেন। এই হলো স্যেকুলার বাংলাদেশ।
সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সাথে এম মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। সেখানে সম্পাদকেরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্তমান সরকারের পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী ও ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমীমা হোসেন। তিনি নিজের বক্তব্যে বলেন, ফার্মগেটে পার্ক দখল করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে শহরের মধ্যে ওয়াজ মাহফিল তাবলীগ ও সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি বন্ধ করা উচিত মসজিদ থেকে উচ্চ শব্দে আযান দিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে। এইসব শব্দ দূষণ বন্ধ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, যাদের আযান শোনা দরকার তারা প্রয়োজনে মসজিদের সাথে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম নিজেদের কানে লাগিয়ে শুনতে পারেন।

স্যালুট, তাসমীমা হোসেন। আমার সম্পূর্ণ সমর্থন আপনার বক্তব্যের প্রতি। এই গুরুত্বপূর্ণ কথা ও দাবীগুলি এর আগে আর কেউ বলেনি মুখ ফুটে। মনে মনে চাইলেও বলার সাহস করেনি। অনেকেরই মনের মূক কথা ও দাবীকে সরবে সাহসিকতার সাথে উচ্চারণ করার জন্য আপনাকে অভিবাদন।