রায়: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসি, অনিকের যাবজ্জীবন, রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ ও নাইম ইরাদের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রহমানীর ৫ বছর কারাদণ্ড। রাজীবের বাবা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান, হত্যাকাণ্ডের উস্কানিদাতা জসীমুদ্দীন রহমানীর মাত্র ৫ বছর কারাদণ্ডে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মন্তব্যের ঘরে রায় সম্পর্কে আপনার মতামত লিখুন।

আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন। প্রাণচঞ্চল, বিপুল সম্ভাবনাময় এই তরুণ ব্লগারকে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কিছু নরপিশাচ নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। পেশাগত জীবনে রাজীব হায়দার ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ধর্ম বিরোধিতায় বেশ উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি, লেখতেন থাবা বাবা নামে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একাত্তরের গণহত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অভ্যুদয় হলে তিনি তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অভিজিৎ রায় লিখেছিলেন

আরো একটা জিনিস মনে হল এ লেখাটি লিখতে গিয়ে। যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদ বিষয়ক জিনিস নিয়ে যখন থেকে লেখকেরা লেখা শুরু করেছেন, তারা জেনে গিয়েছেন তারা অনেকটা জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছেন

রাজীবের মর্মান্তিক খবরে আমি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উন্মত্ত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক ফোঁটা বিচলিত নই। জামাত শিবির সহ প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সময় যে শেষ এ থেকে খুব ভাল করেই আমি বুঝতে পারছি। অতীত সাক্ষী – এরা সব সময়ই মরার আগে শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে। ৭১ এ বিজয় দিবসের দুই দিন আগে কি তারা কেন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেনি? কিন্তু পেরেছিল কি তাদের সম্ভাব্য পতন ঠেকাতে? মনে আছে স্বৈরাচারের পতনের ঠিক আগে কি ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ডাক্তার মিলনকে? এগুলো আলামত। তাদের অন্তিম সময় সমাগত। ‘পিপিলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে’!

আর বিজয় আমাদের অবশ্যাম্ভাবী।

আজ রাজীব হত্যা মামলার রায়।

আসামী: আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের বহিষ্কৃত ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ(২২), এহসান রেজা রুম্মান(২৩), মাকসুদুল হাসান অনিক(২৩), নাঈম ইরাদ (১৯) ও নাফিজ ইমতিয়াজ(২২) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রসাশনের ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা(প্রধান আসামি, পলাতক)।

২৪শে জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে অভিযোগ গঠিত হয় এবং ১৮ই মার্চ, ২০১৫ বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ২১শে ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে।

আদালত সর্বমোট ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। গ্রেফতার হওয়া আসামীদের মধ্যে সাদমান ছাড়া সকলেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রায়: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসি, অনিকের যাবজ্জীবন, রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ ও নাইম ইরাদের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রহমানীর ৫ বছর কারাদণ্ড। রাজীবের বাবা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। অনলাইনে এই রায় নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। মুফতি রহমানীর মাত্র ৫ বছর কারাদণ্ডে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক লেখা

মুক্তমনায় রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) সম্পর্কিত লেখাগুলো একসাথে
‘বিশ্বাসের ভাইরাস’: থাবা বাবার রক্তবীজ- অভিজিৎ রায়
রাজীব হায়দার: যার রক্তে ধর্মের মৃত্যু দেখেছি- সৈকত চৌধুরী
রাজীব হত্যায় রাজাকার ও ধর্মান্ধদের উল্লাস, দেশময় তাণ্ডব এবং কিছু কথা – সৈকত চৌধুরী
শাহবাগের রাজীব ভাই- রায়হান আবীর
রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) স্মরণে কিছু ব্যানার এবং পোস্টার
থাবা বাবার জন্য- নীলাঞ্জনা
ব্লগার রাজীব ও দ্বিখন্ডিত গণআন্দোলন- আদিল মাহমুদ
নাস্তিকরাই কেন বার বার?- ফারহানা আহমেদ