“হ্যালো সৃষ্টিকর্তা,আপনাকে কি নামে ডাকব-আল্লাহ,ভগবান,ঈশ্বর না গড?”
“তোমার ধর্ম কি?”
“আমার ধর্ম মানবতা।”
“এমন কোন ধর্ম তো আমি সৃষ্টি করিনি।কোথুকে এল এটা?”
“কি যে বলেন,আমি মানুষ,তাই আমার ধর্ম মানবতা।”
“ওহ বুঝেছি,তুমি নাস্তিক তাই তো?আমাতে তোমার বিশ্বাস নেই।তাহলে আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলে কেন?”
“না না আমি নাস্তিক নই।কিন্তু আপনার প্রতি আমার বিশ্বাসও নেই।আমি আসলে আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি এটা ঠিক করতে যে আমি নাস্তিক হব না আস্তিক হব।”
“হুম,এই যে আমি আছি।এখন তো নিশ্চয়ই তুমি আস্তিক হবে?”
“আমি তো এখনও নিশ্চিত নই যে আপনি আছেন কিনা।সে যাই হোক,যেহেতু আপনার সাথে কথা বলছি ধরে নিচ্ছি আপনি আছেন যেমন গণিতের খাতায় এক্স,ওয়াই,যেড ধরে নেই!আমি হলাম তবে আস্তিক।এখন বলুন আমি কোন শ্রেনীর আস্তিক হব?”
“মানে?আমার উপর বিশ্বাস করলেই তুমি আস্তিক।শ্রেণী আবার কি?”
“না মানে এতদিন নাস্তিক ছিলাম,একটাই গোত্র ছিল আমার।এখন আস্তিক হচ্ছি-আস্তিক দের তো অনেক গোত্র-হিন্দু,মুসলিম,খ্রিস্টান আরও কত কি!তো কোন গোত্রে যাব আমি?আপনি আসলে কোন গোত্রের অধিপতি?”
“আমি সব মানুষেরই স্রষ্টা।ধরে নাও আমার মনোনিত ধর্ম … ইসলাম।বাকিরা সবাই ভুল পথে আছে।”
“সকল প্রশংসা আপনার।আমি তবে আস্তিক মুসলমানই হব।এখন বলুন আমি মুসলমান দের কোন গোত্রে যাব?আপনি কোন গোত্রের অধিপতি?কোন গোত্র সঠিক?”
“মুসলমান মানে তো মুসলমান।সেখানে আবার গোত্র কিসের?”
“না মানে শিয়া-সুন্নি-কাদিয়ানি-আহমাদিয়া নানা রকম গোত্র আছে তো,কোন গোত্রে যাব?”
“তুমি বড়ই ত্যাদড় প্রকৃতির বান্দা।শোন ছেলে,এসব গোত্র আমার সৃষ্টি না,বিভ্রান্ত মানুষের তৈরি।”
“এ আপনি কি বললেন?”
“কেন? কি হয়েছে?”
“আমি তো শুনে এসেছি আপনার ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়েনা।তাহলে এই গোত্রও আপনার ইচ্ছাতেই সৃষ্টি নয় কি?”
“হ্যা,আমি মানুষ কে পরিক্ষা করতে পাঠিয়েছি।আমি দেখতে চাইছি কারা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রকৃত পথের অনুসরন করে।”
“আচ্ছা আপনি বলেন তো আমি কোন গোত্রে যাব?আপনি নিশ্চয়ই আমার মনের খবর রাখেন?”
“তোমার বাবা মা যে গোত্রের অনুসারি তুমি সেই গোত্রেই যাবে।আমি তোমার মনের ইচ্ছা পড়তে পাড়ছি।”
“হলনা।আপনি গোল্লা।আমি শিয়া মতাবলম্বি হব।”
“আমি বলবনা কোনটি আসল পথ।তুমি তোমার বিবেক দিয়ে বিচার করবে।তবে হ্যা আমার সাথে বেয়াদবির শাস্তি তুমি পাবে।”
“আচ্ছা ইসলামই একমাত্র সঠিক পথ।বাকি গুলো ভ্রান্ত?”
“হ্যা।”
“তাহলে ওগুলো আপনি সৃষ্টি করলেন কেন?”
“মানুষ কে পরিক্ষা করতে।”
“ওহ আচ্ছা,আমার জ্ঞান চক্ষু খুলে গেল।”
“তোমার ভাগ্যে আমি এটাই লিখে রেখেছি,তোমাকে হেদায়েত করা হয়েছে।নিশ্চয়ই আমি সর্বজ্ঞ।”
“মানে আপনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন যে আমি নাস্তিক থেকে আস্তিক হব?”
“হ্যা।এটাই তোমার তাকদির।আর তাকদিরে বিশ্বাস না করলে ঈমান থাকবেনা।”
“তার মানে আপনি আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছেন?”
“হ্যা,আমি সর্বজ্ঞানি,সর্বজ্ঞ।অতীত বর্তমান ভবিষ্যত কোন কিছুই আমার অজানা নয়।মাটির নিচে গহিন অন্ধকারে ঐ পোকাটা কি করছে সেটাও আমার অজানা নয়।”
“আচ্ছা আমার পেটে খুব ব্যাথা করছে ইদানিং।পাকস্থলি তে কয়টি কৃমি আছে বলতে পারেন?”
“তুমি আমার সাথে রসিকতা করছ?এর শাস্তি কত ভয়াবহ তুমি জান?”
“আই অ্যাম জাস্ট জোকিং।যাই হোক,তাহলে আপনিই ঠিক করে রেখেছেন একটা মানুষ কি করবে না করবে-এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা সেই মানুষের নেই-তাইতো?”
“হুম,এক কথা বারবার জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“তাহলে আপনারই ঠিক করা কাজ করার জন্য,আপনিই আবার একদল মানুষ কে শাস্তি দেবেন-ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলনা?মানে আপনিই একজনকে রহিম আরকেজন কে রাম হিসেবে জন্ম দিলেন।রাম যে রহিম না রাম হল সেটাও আপনার ইচ্ছা।রাম দুর্গার সামনে ধুনুচি নাচ নাচবে সেটাও আপনিই ঠিক করে দিয়েছেন,আবার ঐ ধুনুচি নাচ নাচার জন্য মরার পর ওর পিছনে ধুনুচি গুজেও দেবেন!ব্যাপারটা কেমন যেন গোলমেলে।”
“তুমি বিভ্রান্ত।তুমি এখনও সঠিক পথে ফিরে আসনি।বিবেক কে ব্যবহার কর।না হলে তোমার শাস্তি ভয়াবহ।”
“রাগ করবেন না।আপনি তো পরম দয়ালু,অসীম দয়াময়।তাহলে আপনি কথায় কথায় শাস্তির ভয় কেন দেখান?”
“তুমি অকৃতজ্ঞ।আমার এত এত নেয়ামত কে তুমি অস্বীকার করছ।আবার আমার সাথে বেয়াদবি করছ।”
“আচ্ছা রাগ করবেন না।আমি আসলে জানতে চাচ্ছি অনেক কিছু।তাই প্রশ্ন করছি।সব জবাব পেলেই আমি আস্তিক হয়ে যাব পুরোপুরি।আপনার কসম।”
“বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করাই ধর্ম।তবে বল দেখি কি কি জানতে চাও?”
“আপনি তো উত্তর দিচ্ছেন না।চটে যাচ্ছেন।ঐ যে আগে যে প্রশ্নটি করলাম সেটির উত্তর?”
“তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।নিশ্চয়ই আমি সর্বজ্ঞ।আমি যা জানি তুমি তা জাননা।”
“ওকে বেশ বেশ।আমার আরও কিছু প্রশ্ন ছিল।আচ্ছা আত্মহত্যা তো মহাপাপ?”
“হ্যা।আত্মহত্যাকারি জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।”
“আচ্ছা কার মৃত্যু কিভাবে কোথায় হবে সেতো আপনিই ঠিক করে রেখেছেন,তাইনা?”
“হ্যা।যখনই কারো হায়াত শেষ হয়ে যায় আমার নির্দেশে আয্রাইল গিয়ে তার জান কবজ করে।”
“তাহলে যে আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে তার মৃত্যুও আপনারই ঠিক করা।আপনিই ঠীক করে রেখেছেন যে এই লোক আত্মহত্যা করে মারা যাবে।আবার আপনিই তাকে আত্মহত্যার জন্য শাস্তি দেবেন।ব্যাপারটা তাহলে কি দাড়ালো?”
“মূর্খ অকৃতজ্ঞ নির্বোধ,বিবেক বুদ্ধি ব্যবহার কর।আমি যা জানি তুমি তা জাননা।”
“রাগ করবেন না প্লিজ।আমার ভুল হয়ে গেছে।আচ্ছা মুহম্মদ (স) আপনার খুব প্রিয় তাইনা?”
“হ্যা।তাকে সৃষ্টি না করলে আমি বিশ্বজগতই সৃষ্টি করতাম না।সে আমার প্রিয় বন্ধু।আমি তাঁকে অধিষ্ঠিত করব বেহেশতে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে।”
“আপনার কিতাব পড়লে দেখা যায় তার আরাম আয়েশের ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট সচেষ্ট এবং তাঁকে প্রচুর সুবিধা দান করেছেন।কেন?”
“কেন মানে?সে আমার বন্ধু।তাকে সৃষ্টি না করলে আমি বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতাম না।”
“সকল প্রশংসা আপনার।আপনি যথার্থ ন্যায়বিচারক বটে।আচ্ছা কেবল মাত্র মানুষ কে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য আপনি এই বিশাল মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন কেন?মানে আমি বলতে চাচ্ছি পৃথিবী সৌর জগতের একটা গ্রহ মাত্র।আবার এই সৌর জগতটা হল মরুভূমি তে এক কণা বালির সমান।শুধু মাত্র মানুষের স্তুতি শোনার জন্য এত কিছু সৃষ্টি করলেন?”
“আমি সর্বজ্ঞ।নিজের বিবেক কে কাজে লাগাও।আমি যা জানি তুমি তা জাননা।”
“জ্বি তাতো অবশ্যই।সকল প্রশংসা আপনার।কিন্তু কি জানেন তো আমাদের পৃথিবীতে যে নেতা বা যে মালিক বেশি প্রশংসা শুনতে চায়,চাটুকারিতা পছন্দ করে তাকে অপদার্থ হিসেবে ধরা হয়।”
“মানুষ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না।সকল প্রশংসা শুধু আমার।”
“জ্বী অবশ্যই।আচ্ছা যুদ্ধে যে শিশুরা মারা যায়,কিংবা যে শিশুটা ধর্ষিত হয় সেটাও তো আপনার ইচ্ছা তেই হয়,তাইতো?”
“যুদ্ধে যে শিশুরা মারা যায় তাদের আমি বেহেশতে উচ্চ সম্মান দান করি।আরামে রাখি।”
“আর যে শিশুটা ধর্ষিত হয়?”
“ব্যভিচারের শাস্তি ভয়াবহ।”
“জানেন নিজেকে আমার বেশ মহান মহান মনে হচ্ছে!”

“কেন তোমার নিজেকে মহান বলে মনে হচ্ছে?”
“কারণ,আমার সামনে যদি ধর্ষনের চেষ্টা হয় আমি বাচাতে চেষ্টা করব,ধর্ষক কে রুখব।কিন্তু আপনি ক্ষমতা থাকার পরও ধর্ষনটা হতে দিচ্ছেন!তাহলে কে মহান হাহাহাহা…?”
“অকৃতজ্ঞ নির্বোধ।তুমি নিজেকে আমার সাথে তুলনা করছ?তোমার শাস্তি ভয়াবহ।তোমার ঠিকানা জাহান্নাম।সেখানে তুমি আজিবন থাকবে।”
“না না ছি কি বলেন?আপনার সাথে আমার তুলনা!আমি কি এত স্তুতি শুনতে পছন্দ করি নাকি?”
“কি বলতে চাও তুমি?”
“আপনি সর্বজ্ঞ।আচ্ছা,আপনি কুরানে যা যা বলেছেন সব সত্য?”
“হ্যা,কুরানই একমাত্র জিবন বিধান।পুর্নাংগ জীবন বিধান।এতেই আছে সকল জ্ঞান।আর জ্ঞানি দের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।”
“কুরানে আপনি নীলনদের পানি দুই ভাগ করার কথা বলেছেন,নুহ নবির নৌকার কথা বলেছেন।আচ্ছা নৌকা নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন ছিল,আমি ক্যালকুলেশন করে দেখেছি পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যতগুলো স্পিসিস আবিষ্কৃত হয়েছে তার সব গুলো নৌকায় তুলতে হলে,তাদের সবার খাবার মজুদ করতে হলে যে জায়গা লাগবে সেটি টাইটানিক এর থেকেও বড় হবে,আবার ধরুন সমগ্র পৃথিবী যদি পানির তলে ডুবে যায় সেই পানির উচ্চতা ২ আড়াই মিটারের বেশি হবেনা।আর একটা ব্যাপার।আপনি আদম কে সৃষ্টি করে কতিপয় বস্তুর নাম শিখিয়ে দিলেন যেগুলোর নাম কেউ জানতো না।এরপর ফেরেশতা দের জিজ্ঞেস করলেন,যেহেতু তারা জানেনা তারা তাই বলতে পারলোনা,আদম আগে থেকেই জানত বলে বলতে পারলো।ব্যাপার টা কেমন হলনা?অবশ্য আপনার এই শিক্ষায় অনুপ্রানীত হয়ে বাংলাদেশে এখন নিয়মিত প্রশ্ন ফাস হচ্ছে! তারপর ধুরুন হাওয়ার জন্মের ব্যাপারটি।পাজড় থেকে কি করে হাওয়ার জন্ম হতে…”
“খামোশ বেয়াদব।কুরান বুঝা তোমার মত মূর্খের কর্ম নয়।এতে আমি রূপকের সাহায্যে ইশারায় অনেক কিছু বলে দিয়েছি।তোমার অন্তরে তো আমি সীসা ঢেলে দিয়েছি।”
“তার মানে আপনিই চাচ্ছেন না যে আমি আস্তিক হই।তাহলে আর কি করার।আপনার বিরূদ্ধে তো যাওয়ার কোন উপায় নেই।তবে আপনি যে বলেছেন কুরান কে আপনি সহজ করেছেন?আর হ্যা আপনি বলেছেন সব জায়াগার মানুষের জন্যই আপনি পথ প্রদর্শক পাঠিয়েছেন।তাহল সব নবীদের জন্ম ঐ আরব অঞ্চলেই কেন?”
“আমি যা জানি তুমি তা জাননা।নিজের বিবেক কে ব্যবহার কর।”
“আচ্ছা তাহলে সামারি করি কি বলেন?প্রথমত আপনিই প্রতিটা মানুষের তাকদির ঠিক করে রেখেছেন আবার আপনিই আপনার ঠিক করা তাকদিরে চলার জন্য কাউকে পুরষ্কৃত করবেন,কাউকে জাহান্নামে পাঠাবেন।দ্বিতীয়ত কোন কিছুই আপনার ইচ্ছা ছাড়া হয়না।কাজেই যারা নাস্তিক তারা আপনার ইচ্ছাতেই নাস্তিক।আবার আপনিই তাদের শাস্তি দেবেন।আপনি অসীম দয়ালু,তাই আপনি আপনারই সৃষ্টির জন্য ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।আপনি এই বিশাল মহাবিশ্বে মানুষ সৃষ্টি করেছেন প্রশংসা ও স্তুতি শোনার জন্য।যাক অনেক জ্ঞান লাভ করলাম।”
“হ্যা নিজের বিবেক কে ব্যবহার কর।আমার প্রশংসা কর।আমার বন্ধুর প্রশংসা কর।তোমার জন্য তাহলে প্রস্তুত থাকবে জান্নাত।যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত।আর যেখানে আছে আয়তলোচনা হুর গণ”
“জ্বি জান্নাতে তো বংশ বিস্তার করার কোন ব্যাপার নেই।তাই সেখানে সেক্স করারও কোন দরকার নেই।হুর দিয়ে কি হবে?”
“অকৃতজ্ঞ বেয়াদব নিজের বিবেক কে ব্যবহার কর।”
“জ্বি করলাম।”
“কি করলে?”
“নিজের বিবেক বুদ্ধি আর মস্তিষ্ক কে ব্যবহার করলাম।”
“করে কি বুঝলে?”
“বুঝলাম আপনি আমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র।আপনার কোন অস্তিত্ব নেই।”
” কিন্তু তুমি আমার সাথে কথা বলছ!”
“এই কথোপকথনেরও কোন অস্তিত্ব নেই।এটা একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস মাত্র,জুকারবার্গ নামের এক নাস্তিক যা সৃষ্টি করেছে।এখানে কেউ লাইক দেবে।অনেকে লাইক দিতে ভয় পাবে।কেউ কমেন্ট করবে।আপনার বিশ্বাসীরা গালাগালি করবে।অল্প কিছু মানুষ বাহবা দিতেও পারে,নাও দিতে পারে।”
“কিন্তু…”
“বিবেক কে ব্যবহার করছি… তাই এই কথোপকথের কোন মূল্য নেই।কালকে পরিক্ষা,পড়তে যেতে হবে…”