নিজেদের ডিজিটাল বলে দাবি করা বর্তমান সরকার তাদের ডিজিটালাইজেশনের নমুনা দেখাচ্ছেন মুঠোফোনে দরকারী-অদরকারী মেসেজ পাঠানোর মাধ্যমে! এই স্মার্টফোনের যুগে বিভিন্ন দিবস সংক্রান্ত, সচেতনতামূলক মেসেজ পাঠিয়ে জনসচেতনতা বাড়াবার এটা একটা স্মার্ট আইডিয়া বলা যায়। যদিও বিভিন্ন অপারেটরের “লোভনীয় অফার” সংবলিত হরে-দরে পাঠানো মেসেজের অত্যাচারে ত্যাক্ত-বিরক্ত গ্রাহক সরকারী মেসেজ কতটা দেখেন তা নিয়ে আমি সন্দিহান!
Govt Info নামে আসা বাংলিশ (ল্যাটিন হরফে বাংলা) মেসেজগুলোতে মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও পড়তে হয়। অনিচ্ছার কারণ ল্যাটিন হরফে বাংলা লেখা পড়ার বিরক্তি। মন্ত্রী-এমপিরা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, সামরিক বাহিনির কুচকাওয়াজ দেখা ও ভাষার জন্য জীবনদানকারী বীরেদের রূহের (!) মাগফিরাত আদায়ের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। তাদের মাথায় কী করে আসবে “দেশে বাংলা হরফ সাপোর্ট করেনা এমন কোনো মোবাইল ফোন ঢুকতে দেয়া হবেনা” এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভাষা শহীদদের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধা দেখানো যায়!

যাহোক, এতো কথা বলার কারণ আজকে Govt Info থেকে এমন একটি মেসেজ এসেছে যেটার বিষয়বস্তুর সাথে আমার লেখার বিষয়বস্তুর খানিকটা মিল আছে! মেসেজে লেখা আছে-

০১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস ২০১৫। “জেগেছে যুব, জেগেছে দেশ, লক্ষ্য ২০৪১-এ উন্নত বাংলাদেশ।” যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

অামি পড়লাম অার সেই সাথে বেড়িয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঘাতকরা পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে যে মাস্টার প্ল্যান করে জাতির মেরুদণ্ডে আঘাত হেনেছিলো বুদ্ধিজীবী হত্যার মাধ্যমে তারই “অধুনা মহড়া” চলছে স্বাধীন দেশে! যুবারা জেগেছে কিন্তু তার হাতে কাগজ-কলম নয়; তার হাতে চাপাতি! তারা একটা জীবনের কত মূল্য সেসব বোধের বাইরে থাকা এক একটা জম্বি! এ যুবারা জানে না পরমত সহিষ্ণুতা কী! এরা শুধু কোপাতে জানে; হোক তা গরু কিংবা জলজ্যান্ত মানুষ। একাত্তরে জাতির বিবেক-বুদ্ধি উপড়ে ফেলা প্রকল্পের ফসল ৮০, ৯০ ও ০০ এর দশকের “আই হেইট পলিটিক্স” প্রজন্মের। যদিও আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেউ রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদকে ঘৃণার চোখে দেখলে তেমন কিছু বলার থাকেনা! তারা নিজেদের নিজেরাই ডুবিয়ে চলেছেন। রাজীব হায়দার যখন নিহত হলো তখন তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন তার বাসায়। ড. অভিজিৎ রায়ের পরিবারের সে সেৌভাগ্য হয়নি। ফোনেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এরপরে ওয়াশিকুর বাবু ও অনন্ত বিজয় দাস পেলো নসিহত; তাদের এভাবে লেখাই ঠিক হয়নি! আর এবার? সরকার হতভম্ব! খোদ মন্ত্রী মিডিয়ায় বলে দিয়েছেন, আগামী দুমাস এসব চলবে! তাহলে আমাদের কী করনীয়? গলায় তেল মেখে প্রস্তুত থাকা? বই প্রকাশ করেছে বলে প্রকাশককে মরতে হলো; এরপর কি? বই পড়ার অপরাধে পাঠকদেরও মরতে হবে?

আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কতটুকু খামতি তার উপর একটা সিরিজ লেখা দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব ওলটপালট হয়ে গেলো। এবার মনে হচ্ছে লেখাটাকে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। আমাদের সমাজে নৃশংসতা এখন ডালভাত হয়ে গিয়েছে। নৈতিকতার মাপকাঠিতে আমরা একদম তলানিতে আছি সেটা বলাই যায়। অামাদের সমাজে নানাভাবে পারস্পরিক ঘৃণার চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদের সমাজকে নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। সমাজে নৈতিকতাবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রজন্ম কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, ঘৃণার চাষাবাদ কোথায়, কীভাবে হচ্ছে, নৈতিকতার এমন অবক্ষয় কেনো- একে একে বর্ণনা করার চেষ্টা করা যাক। আগের লেখাতে ক্বওমী মাদ্রাসার ব্যাপারে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। পেট্রোডলার ও অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এখন ক্বওমী মাদ্রাসার ব্যবসা রমরমা! অশিক্ষিত/ অর্ধশিক্ষিত বাবা-মা পড়ালেখায় একটু দুর্বল কিংবা একাধিক ছেলে-পেলে থাকলে দুয়েকটিকে ধরে-বেঁধে ক্বওমী মাদ্রাসা নামক জেলখানায় দিয়ে যায়। সেখানে থেকে থেকে ছোট বয়সেই জীবনের ক্রুঢ় বাস্তবতা দেখতে দেখতে তার মধ্যে ঘৃণার সঞ্চার হতে থাকে।

আজ জামাত-শিবিরের কার্য্যক্রম দেখা যাক।

রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা হলেও যতদূর জানি জামাত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের কাজ থেমে নেই। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রয়েসয়ে দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ফুলকুঁড়ির আসর, কিশোর কন্ঠ ও ইয়ুথ ওয়েভ। ম্যাগাজিনত্রয় জামাত-শিবির চক্রের প্রচারিত শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন। বঙ্গদেশের কোনো স্কুলে পড়ে অথচ কিশোরকন্ঠ পড়েনি এমন ছাত্র বোধ করি হাতে গোনা! শুধুমাত্র শিশুদের জন্য “ফুলকুঁড়ির আসর” ও ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়াদের কব্জা করতে ” ইয়ুথ ওয়েভ” তুলনামূলক নব্য সংযোজন! এসব ম্যাগাজিনে তারা রাজনৈতিক কোনো ফিচার ভুলক্রমেও ছাপায় না। সুতরাং আপনি অনেকের মতো সন্তানের নির্দোষ সাহিত্য চর্চায় আপ্লুত হয়ে উঠতে পারেন! কিন্তু এর পরিনাম যে কতটা ভয়াবহ তা আপনি হয়তো চিন্তাও করতে পারবেন না।

প্রথমেই বলি ফুলকুঁড়ির আসরের কথা। “পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজেকে গড়ো” – উল্লিখিত গালভরা বুলির ব্যানারে পরিচালিত ফুলকুঁড়ির আসর জামাত-শিবিরের শিশু সংগঠন। এরা প্রথমে স্কুল কমিটি করে ছুটির দিনসমূহে বিভিন্ন গান, কবিতা আবৃত্তি, হামদ-নাত , কুরান তেলাওয়াত , ছবি আঁকা প্রভৃতি আপাতঃদৃষ্টিতে নিরীহ বিষয়াবলী শেখায়। অতঃপর তারা অভিভাবকদের বুঝায় এটা শিশুদের মানসিক বিকাশ লাভে সহায়ক সেবামূলক সংগঠন মাত্র! আর তাতেই বেশিরভাগ অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে সদিচ্ছায় মেম্বারশীপ ফরম পূরণ করে ভর্তি করে দেন। ভর্তির আরেকটি কারণ হলো আজকাল বেশিরভাগ মা-বাবা সন্তানের লোডের উপর নজর না দিয়ে তার সন্তানকে “সর্বেসর্বা” বানানোর দিকে বেশি নজর দেন। এরপর বিভিন্ন জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত স্কুল-কলেজে বিভিন্ন অকেশনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আকর্ষণীয় পুরষ্কারের ব্যাবস্থা করা হয়। পুরষ্কার পেলে শিশুও খুশি, বাবা-মাও খুশি; না পেলে শিশুটির কপালে জোটে ভৎর্সনা। কিন্তু বাবা-মা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেন না- স্বার্থের এ দুনিয়ায় কেউ যেখানে দুই টাকা জলে ফেলতে রাজি নয় সেখানে এতো ঘটা করে অনুষ্ঠান করে অর্থ খরচের কী অর্থ থাকতে পারে! এটা হলো পাতা ফাঁদের প্রথম ধাপ! অতঃপর একটু বড় হলে এসব শিশুদের হাতেই তুলে দেয়া হয় ২য় মারনাস্ত্র “কিশোর কন্ঠ” কিংবা ” ইয়ুথ ওয়েভ।”

গল্প, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন, উপন্যাস ইত্যাদি পড়তেই মূলত শিশু-কিশোররা “কিশোর কন্ঠ” কিংবা ” ইয়ুথ ওয়েভ” ম্যাগাজিন কিনে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১ম কপি মাগনা দেয়া হয়)। কয়েকজন নিয়মিত গ্রাহক হয়ে গেলে তারা একটি ফোরাম খুলে বসে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অতঃপর এসব কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ধর্মের নামে মগজ ধোলাই করে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় রিপোর্ট বইয়ের নামে দৈনন্দিন কাজের হিসাবের একখানা কার্ড\ রেজিস্টার। আপাতঃদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও এটাই হলো জামাত শিবিরের ছোঁড়া সবচেয়ে মারাত্নক তীর! কার্ডটিতে পড়াশোনা কতক্ষণ করেছো, নামাজ কয় ওয়াক্ত পড়েছো জাতীয় কলাম থাকায় অভিভাবকরা দুশ্চিন্তার বদলে খুশি হয়! যাই হোক, উক্ত কার্ডটিতে আরো একটি কলাম থাকে “দাওয়াতি কাজের।” প্রতি মাসে দাওয়াত দিয়ে সম্ভবত ১০\১৫ কপি বিক্রি করতে পারলে তার পরের পর্বের একটি কপি সৌজন্য দেয়া হবে- এ মুলা ঝুলিয়ে “ডেসটিনি” এর মতো “দাওয়াতী ব্যবসা” করে! এটা নিয়ে অভিভাবককেও তেমন একটা মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। অতঃপর কোনো এক ছুটির দিনে কোনো একটি কোচিং সেন্টারের একটি রুম ভাড়া করে উপজেলা পর্যায়ের শিবির কর্মী ইসলামী আন্দোলনের নামে মওদুদীর শিখিয়ে যাওয়া নিয়ম কানুনের বিষয়ে ব্রিফ করে। পাশাপাশি যারা একটু সাধারণ, সাত চড়ে রা নাই টাইপ তাদেরকে আলাদা ভাবে মওদুদীর বিভিন্ন জিহাদী বই ধরিয়া দেয়! এভাবেই কোমলমতি শিশু-কিশোররা কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ” ইসলামী জিহাদের জোশের বীজ” বপন করা হয় যা কোনো এক সময় মহীরুহ হয়ে ওঠে। তুলনামূলক মেধাবী, কারো সাতে পাঁচে নেই ও অন্তর্মূখী ছেলেপেলেকেই তারা বেশি বেছে নেয়। কারণ এদের ব্রেন ওয়াশ করা তুলনামূলক সহজ ও নিরাপদ। এভাবে রাজনীতি বোঝার আগেই নোংড়া রাজনীতিতে জড়ানো হয় শিশু-কিশোরদের। শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করার অপর একটি আকর্ষণীয় অথচ অব্যর্থ উপায় হলো কিশোর কন্ঠের নামে বিভিন্ন স্টিকার, কার্ড ফ্রি দেয়া, বিভিন্ন অকেশনে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আকর্ষনীয় পুরষ্কার বিতরণ। তাছাড়া তারা বিভিন্ন পর্যায়ের (৫ম, ৮ম, এস. এস. সি.) মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ক্রেস্ট প্রদান করে শিক্ষার্থী তো বটেই সেই সাথে অভিভাবকগণের মাঝেও “গুড ইমেজ” স্থাপন করতে সমর্থ হয়।

বলা বাহুল্য এসব সংগঠন চালিত হয় জামাত-শিবিরের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে। আর তারা সকল শিশু-কিশোরকে যে টার্গেট করে তা নয় বরং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তারা ঠিকই তাদের উপযুক্ত শিকার চিনে নেয়।

এইচ. এস. সি. পাশ করার পর প্রথম সারির প্রায় সব শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে আসে কোচিং করতে। এসব কোচিং সেন্টারেও শিবির কর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রেটিনা তো সরাসরি জামাত নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টার। ওমেকার নামেও জামাতী ট্যাগ আছে। বাদবাকী কোচিং সেন্টারগুলোতেও শিবিরের মাত্রাতিরিক্ত আনাগোনা বিদ্যমান। এমনকি এসব কোচিং সেন্টারের লেকচারার হিসেবে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির করে এমন স্টুডেন্টও রয়েছে। কোচিং সেন্টার ছাড়াও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের ঢাকায় থাকা-খাওয়ার জন্য যেসব মেস বা ছাত্রাবাস আছে সেসবেও তাদের সূক্ষ্ণ জাল বিছানো রয়েছে! এরা বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন মেধাবী স্টুডেন্ট হওয়ায় কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া নব্য ছাত্রদের নোট দিয়ে, প্রশ্নের সল্যুশন দিয়ে কিংবা বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। বলা বাহুল্য, এদের অনেকেই ঢাবি, জাবি, ঢামেক কিংবা বুয়েটে চান্স পায়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও জামাত-শিবিরের অবাধ বিচরণ! কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের ডীন এমনকি শিক্ষকরাও জামাতের সক্রিয় সদস্য! সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো এরা এদের জাল নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়ানো শুরু করেছে অনেকদিন থেকে! রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ডের সাথে নর্থ-সাউথের ৫ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকা তারই প্রমাণ।

ভার্সিটির হলগুলোতে জামাত-শিবিরের পাতা ফাঁদসমূহ দেখে নেয়া যাক। হলে সিনিয়র ব্যাচের শিবির ঘরানার কর্মীরা জুনিয়র ব্যাচের সাধারণ ছাত্রদের হলে সীট ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে নোট সরবরাহ, পাঠ্য বিষয়ে সমস্যার সমাধানসহ যথাসম্ভব সর্বোতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে। তবে সবাইকে নয়! তাদের টার্গেট থাকে ধর্ম বিষয়ে তুলনামূলক অল্প জ্ঞান সম্পন্ন, মেধাবী অথচ সাধারণ, ব্যক্তিত্বহীন কিংবা ছোটখাট অপরাধপ্রবণ ছেলেপেলে; যাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। কারণ, ধর্মের বিষয়ে অল্প জ্ঞানসম্পন্ন ও ছোটখাট অপরাধপ্রবণ ছেলেপেলেদের “ধর্মের বাণী” দিয়ে সহজেই প্রভাবিত করা যায়। আর দুরন্ত ছেলেপেলের চাইতে নিরীহ কিংবা ব্যক্তিত্বহীন ছেলেপেলেকে সহজে ভুলানো যায় এবং তারা তুলনামূলক নিরাপদ। ভার্সিটির হলসমূহে সাধারণত বিকেলের দিকে তুলনামূলক বাউণ্ডুলে ছেলেরা বাইরে আড্ডা দিতে যায়; আর নিরীহরা সচরাচর হলেই শুয়ে বসে সময় কাটায়। এ সময়টাকেই শিবিরের ধুরন্ধর কর্মীরা কাজে লাগায়! তাছাড়া তাদের (শিবির) অপর একটি প্লাস পয়েন্ট হলো “দাওয়াতী কাজে” “ডেসটিনি” এর মতই প্রচণ্ড ধৈর্য্যশক্তি! কারো সাথে কথা বলে যদি মনে হয় যার সাথে কথা বলা হচ্ছে জামাত-শিবির সম্পর্কে কিংবা ধর্মীয় দিক দিয়ে তার মনোভাব একটু নমনীয় বা দোদুল্যমান তাহলেই তার পেছনে আঠার মতো লেগে যাবে! বলা বাহুল্য বিরক্ত করবে না! ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে ঐ ছেলেটিকে দলে ভেরাবেই! দাওয়াতী কাজে লিপ্ত শিবির কর্মীর ব্যবহার এতো অমায়িক হয় যে যেকোনো সহজ-সরল ছেলে দাওয়াত কবুল করতে রীতিমতো বাধ্য হয়!

অপরাপর রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন (যেমন- ছাত্রলীগ, ছাত্রদল) মূলত “গায়ের জোর” কিংবা “ভয় দেখিয়ে” কিংবা “লোভ দেখিয়ে” কোনো নব্য ছাত্রকে দলে টানতে চায়। উদাহরণস্বরূপ- বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলগুলোতে প্রায়শই জোরপূর্বক ছাত্রদের অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়। আমি কখনো শুনিনি ছাত্রলীগের উপর মহলের কাউকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিংবা আওয়ামীলীগের আদর্শের প্রচার করে নিজের দল ভারী করতে! বি এন পি এর ক্ষেত্রেও একই বক্তব্য! কিন্তু শিবির এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম অথচ কার্যকরী পন্থায় নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছে!

এভাবেই শিশু বয়স থেকে তরুণ বয়স পর্যন্ত এতগুলা নিরীহদর্শন অথচ ভয়ঙ্কর ফাঁদ ছিন্ন করে অনেকের পক্ষেই বেরিয়ে আসা কঠিন হয়। হতাশার কথা হচ্ছে- মেধাবী মুখগুলো জামাত-শিবিরের মূল টার্গেট হওয়ায় একদিকে যেমন জাতির মেধাগুলোর অপচয় হচ্ছে ঠিক তেমনি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হয়ে বেড়ে উঠছে।

ক্বওমীরা মওদুদীবাদকে বিদআত আখ্যা দিয়ে পরিত্যাজ্য ঘোষণা করলেও এটাকে সমাজ থেকে উৎখাতের কোনো প্রক্রিয়াই অবলম্বন করে না। দেখেও না দেখার ভান করে। অাশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো জামাত-শিবির প্রচারিত মওদুদীবাদে ইসলামের নবি মুহাম্মদকে অনেকভাবে খাটো করা হলেও ক্বওমীরা ব্যানার টানিয়ে “নাস্তিকের ফাঁসি চাই” বলে মহানগরী ঘেরাও করতে পারলেও “জামাত-শিবিরের ফাঁসি” চাইতে পারে না। জামাত-শিবির মুর্তাদ, ধর্ম ব্যাবসায়ী, হ্যান-ত্যান ইত্যাদি ট্যাগ মেরেই ক্ষান্ত আছে তারা। দেশের তাবৎ মোল্লা সমাজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এরাও জামাত-শিবিরের নাম মুখে আনে না কিন্তু “ইসলাম” ট্যাগ দেখে ঠিকই জামাত-শিবির পরিচালিত ব্যাংকে টাকা রেখে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে!