(১)
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি। মানুষের ঢলে শাহবাগ পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। আর আমাকে খবর নিতে হচ্ছিলো ইন্টারনেট থেকে, প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার দূরে বসে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে জনতার স্বরের উচ্চতা আরো বাড়াতে পারছিলাম না বলে বেশ টানাপোড়েনে ভুগছিলাম। এতো এতো মানুষ যে একটা রাজাকারের প্রকৃত বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে, দেখে ভাল্লাগছিলো। কিন্তু সেখানে মানুষের ভিড়ে মিশে যেতে না পারার অসহায়ত্ব আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। দেশের মাটি থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে প্রায়ই এই দোটানায় ভুগি। মাঝে মাঝেই চিন্তা করি – যদি দেশে থাকতাম, তাহলে আসলেই কি আমার পক্ষে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো?

ভার্সিটিতে আমার একটা বন্ধু আছে। সে বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে খুবই কৌতুহলী। কখনো এমনো হয়েছে যে, আমি কাজে ডুবে ছিলাম বলে বাংলাদেশের কোনো একটা খবর সে আমাকে জানিয়েছে। ব্যাপারটা আমার জন্য লজ্জার, সন্দেহ নেই। কিন্তু আরো যেটা লজ্জার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের অনেক বিশ্রী বিশ্রী ব্যাপারগুলোও সে জেনে যায়, এবং দেখে যে এগুলো নিয়ে আমাদের সরকারের আসলে তেমন কোনো মাথাব্যথাই নেই। যথারীতি তার সাথে শাহবাগ আন্দোলন নিয়েও কথা হচ্ছিলো। সে আমেরিকান, এবং অনেক আমেরিকানদের মতই সে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না। তার সাথে আমার অনেক যুক্তিতর্ক হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত, আমি তাকে অন্তত এটুকু বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে – এই রাজাকারগুলো আমাদের রাষ্ট্রের ভাবাদর্শের বিরোধী, এবং তার বেঁচে থাকাটাই আমাদের দেশের জন্য হুমকিস্বরুপ। কারণ, তার অনেক অন্ধ অনুসারী আছে, এবং এ ধরনের সর্বোচ্চ বিচার না হলে সেই অনুসারীদেরকে থামানো আরো অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে।

আন্দোলন চলছিলো, সুউচ্চ কণ্ঠে, রাজপথ কাঁপিয়ে; শাহবাগের প্রাণশক্তি ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বাংলায়। সবার হাতে মোমবাতি সহ, অনেক ওপর থেকে তোলা একটা ছবি তখন খুব ছড়িয়ে গিয়েছিলো। ব্লগার অভিজিত রায় সেই ছবিটা পোস্ট করেছিলেন “আলোকেরই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও”। এমন সময়, আরেক ব্লগার রাজিব হায়দারকে রক্তের ধারায় ধুইয়ে দিলো ধর্মীয় মৌলবাদীরা। আমার শিরার মধ্যে দিয়ে রক্তপ্রবাহের গতি বেড়ে গিয়েছিলো। সেই বন্ধুটিকে বললাম, “আমি আর পারছি না। আমার এক্ষুণি দেশে চলে যেতে ইচ্ছা করছে”। আমার উদ্ভ্রান্ত আর উন্মত্ত অবস্থা দেখে বন্ধুটি খুব ঠাণ্ডা স্বরে বললো, “তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশ থেকে বাইরে থাকাটাই তোমার জন্য ভালো”।

রাজিব হায়দারের মৃত্যুতে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো – যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই যুদ্ধে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে মূল পার্থক্য ছিলো যুক্তিতে; এক দলের কাছে সেটার মূল্য অপরিসীম, আরেক দলের কাছে সেটা কোনো মূল্য রাখে না। তাই, রক্ত বইয়ে দেয়ার আগে পরের দলটি চিন্তা করে না কিছুই – কাকে মারছে, কেন মারছে, তার মৃত্যুতে কাছের মানুষদের কী অবস্থা হবে – কিছুই না। আশ্চর্য হলেও এটা তাদেরই বক্তব্য; তারা শুধু আদেশ পেয়ে এমনটা করেছে! – এমন একটা অবস্থায় আমি যখন ক্রোধে উন্মত্ত, কিছু না করতে পারার অসহায়ত্বে অত্যন্ত বিচলিত, আর অনেকের কাছ থেকে লেখালেখি বন্ধ করার অনুরোধ পেতে পেতে ত্যক্ত-বিরক্ত; তখন অভিজিত রায়ের স্ট্যাটাসটা পড়লাম (ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে)। তিনি বললেন, “যারা ভাবে বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি”।

বললেন, “থাবা বাবার (রাজিব হায়দারের ছদ্মনাম) মর্মান্তিক খবরে আমি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উন্মত্ত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক ফোঁটা বিচলিত নই”। আরো বললেন, “এগুলো আলামত। তাদের অন্তিম সময় সমাগত। পিপিলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে! বিজয় আমাদের অবশ্যাম্ভাবী”।

আমি শান্ত হয়ে এলাম। নিজেদের অনিবার্য বিজয়ের পতাকা উড়তে দেখলাম অদূর ভবিষ্যতে। প্রতিটি মৃত্যুতে তাদের বেপরোয়া ভাবটাই প্রকাশিত হচ্ছিলো। যারা দেশে আছেন, তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন বুঝে আরো ক্ষুরধার লেখা রচনার শপথ নিলাম। সেই বছরই কার্ল সেগানের সাথে আমার পরিচয় হলো। ১৯৯৬ সালেই মারা যাওয়া এই লোকটা আমার আদর্শে পরিণত হলেন। তার মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমিও বিজ্ঞানের মাধ্যমে সামাজিক অন্ধকার দূর করার জন্য নিজেকে মনোনিবেশ করালাম। যতদূর দেখেছি, অভিজিত রায়ও এই কথাটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন যে বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে হবেই। আমি চেষ্টা করলাম, আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বিজ্ঞানের আলোয় কুসংস্কারগুলোর নগ্ন রুপ প্রকাশিত করে দিতে।

(২)
আমার বাবা-মা বেশ সহজ সরল ধরনের মানুষ। আর ছোটবেলা থেকেই আমি তাদের দিকে কঠিন কঠিন প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে দিয়েছি। আমি এই দুনিয়াতে কিভাবে এলাম বা মানুষ এই পৃথিবীতে কিভাবে আসে – সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছিলাম ৩/৪ বছর বয়সেই। এবং সেই প্রশ্নের খুব ভয়ানক একটা উত্তর পেয়েছিলাম, আমাকে নাকি আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছিলো। পরে আরেকটু বড় হয়ে যখন গর্ভবতী মহিলার পেট থেকে সন্তান জন্মের (আমার ছোট ভাইয়ের জন্মের) ব্যাপারটা দেখলাম, সেটার কারণ দাবি করলাম। ওরা বললো, আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ পেটের মধ্যে বাচ্চা এনে দেয়। আমার প্রশ্ন থামে না। আরেকটু বড় হয়ে দেখলাম, আল্লাহ শুধু বিবাহিত মহিলাদের পেটেই বাচ্চা দিচ্ছে। বলাই বাহুল্য, ক্লাস ফাইভের বাচ্চাটিকে সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি। সেই বাবা-মায়ের কাছে যখন প্রথমবার ধর্ম নিয়ে আমার সন্দেহগুলো প্রকাশ করলাম, স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার ছিলো না।

যাই হোক, রাজিব হায়দারের মৃত্যুর এক বছর পর, সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই অভিজিত রায়ের সাথে ফেসবুকে প্রথমবার কথা হলো। ফারাবী শফিউর রহমানের স্ট্যাটাসে অভিজিত রায়ের রগ কাটার ইচ্ছা ব্যক্ত করলো ফারাবী শফিউর রহমানের এক অনুসারী। সেটার স্ক্রিনশট শেয়ার করেছিলাম ওনার সাথে। কেটে গেলো আরো এক বছর! আবারো সেই ফেব্রুয়ারি! ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্ত করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে নিলো। লাল-সবুজের দেশে অল্প সময়ের জন্য বেড়াতে এসে লাল রক্তে ভিজে গেলেন অভিজিত রায় আর বন্যা আহমেদ। বন্যা আহমেদ প্রাণে বেঁচে গেলেও ধর্মীয় মৌলবাদের আক্রমণে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটাকে রাস্তায় বিছিয়ে দিলেন অভিজিত রায়। তার মগজ যেন প্রতীকীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো সেই শাহবাগ এলাকাতেই। এরপর একে একে হত্যা করা হলো নিলয় নীল, অনন্ত বিজয় দাশ,, ওয়াশিকুর বাবু, এদেরকে। এই ঘটনাগুলোর পর থেকে যতবারই স্কাইপে বাবা-মায়ের সাথে কথা হয়েছে, ততবারই ঘুরে ফিরে একটা কথা এসেছে – যাতে লেখালিখি না করি! ওনাদের সন্তান নাকি বেশি নেই যে একজনকে কুরবানী দিতে পারবে!

আমার সহজ সরল বাবা-মায়ের জন্য যে কোনো বক্তব্যের সবচেয়ে সরল রুপটা হাজির করতে হয়। কিন্তু কিছু কিছু কথা থাকে, যেগুলো প্রকৃত অর্থে গভীর। অতীতের ঘটনাবলীর চলন-বলন না বুঝলে, ভবিষ্যতের দূরদৃষ্টি না থাকলে সেই কথাগুলো বোঝা বেশ কষ্টকর। তাদেরকে বলতে চাইলাম, ইতিহাস সক্রেটিসকে মনে রেখেছে, তাকে বিষপানে বাধ্য করা লোকগুলোকে মনে রাখেনি। জিয়োর্দানো ব্রুনোকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি আমরা এখনো, ব্রুনোর হত্যাকারীদের ঘৃণা করি। গ্যালিলিওর গৃহবন্দীকারীদেরকে মনে রাখেনি সমাজ, গ্যালিলিওকে মনে রেখেছি। ব্যক্তিবিশেষের কথা যদি বাদ দেই, যদি সমাজের প্রসঙ্গেও আসি, তাহলে বলতে পারি – জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টা নিয়ে লজ্জা অনুভব করে। যদি সমগ্র মানবপ্রজাতির কথা বলতে হয়, তাহলে বলতে পারি – অন্ধকার যুগের সময়টাকে আমাদের প্রজাতির জন্য লজ্জাজনক মনে করি, রেনেসাঁর সময়টাকে গৌরবের মনে করি। অর্থাৎ, ইতিহাসের সঠিক অংশে থাকার যে একটা প্রয়োজনীয়তা আছে, সেই ব্যাপারে তাদেরকে বলতে চাইলাম। কিন্তু, ঠিক বোঝানো গেলো না। তাদের চিন্তা সরলরেখায় চলে, “তুই মরে গেলে আমাদের কী হবে?”

(৩)
ফেসবুকে একজনের সাথে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। আলাপের এক ফাঁকে মেয়েটা বললো, “মাঝখানে জাফর ইকবাল স্যারের একটা লেখা ছাপা হয়েছিলো বিডি নিউজ ২৪-এ। সেখানে একটা কমেন্ট লিখেছিলাম সমর্থন জানিয়ে। তখন বিশ্রী ভয়ংকর চেহারার প্রোফাইল পিকচারধারী একজন লোক যাচ্ছেতাই লিখেছিলো, হুমকি দিয়েছিলো। আমি ভয় পেয়ে কমেন্ট উঠিয়ে নিলাম। তারপর থেকেই ভয়ের শুরু! ঘুম নেই, কখন ঘুমাব জানি না, খুব ভয় করে”।

এই মেয়েটাকে কী বলবো আমি? বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে যা বললাম, তার সারাংশ হচ্ছে – পরিস্থিতি খারাপ, সন্দেহ নেই। তবে, এই পরিস্থিতি তো চলতে দেয়া যায় না। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মেরুদণ্ডহীন হিসেবে পরিচিত না হতে চাইলে, আমাদেরকে লড়াই করে যেতেই হবে। তোমার সন্তানের কথা ভাবো! তাদেরকে আরো অন্ধকার কোনো পরিস্থিতিতে ঠেলে না দিতে চাইলে আমাদেরকে কষ্ট করতেই হবে।

সে বলেছিলো, “আমার একার মৃত্যুতে কী কিছু পাল্টাবে?” আমি তাকে উত্তর দিয়েছিলাম, “নিজেকে একা এবং অসহায় মনে করাটা ভুল। তুমি সেই দলের অংশ যারা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। পরিবর্তন সম্ভব। পরিবর্তন হচ্ছে। কখনোই পরিবর্তন হবে না বলাটা ভুল। কত ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে গেলো গত কয়েক দশকে, কয়েক শতকে, কয়েক মিলেনিয়ামে!”

সেই পরিবর্তন বাংলাদেশে কিভাবে সম্ভব, সে জানতে চাইলে আমার উত্তর ছিলো “দুই উপায়ে – ধর্মের সম্পূর্ণ বিরাষ্ট্রীয়করণ, এবং বিজ্ঞানের প্রসার। এই দুটো তোমার কল্পনার সমাজ গড়া সম্ভব না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মচর্চা করলে তাতে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি! কিন্তু রাষ্ট্রকে অতি সত্ত্বর ধর্মের নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে হবে। আর যত বেশি সম্ভব, বিজ্ঞানচর্চা শুরু করতে হবে”।

এরপর অনেকক্ষণ ধরে আমি তাকে দেখালাম যে এই মুহূর্তে যারা ধর্মীয় মৌলবাদী সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তাদেরকে দিয়ে এটা করাতে পারার মূল কারণটা আসলে ধর্মের মধ্যেই নিহিত। ওখানেই ভিন্নধর্মের মানুষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উস্কানি দেয়া আছে, যেটাকে পুঁজি করেছে ধর্মব্যবসায়ীরা। এবার কখনো গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদেরকে দমানোর জন্য সেই পুঁজি খাটানো হচ্ছে, কখনো নিজেদের অন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণ করার জন্য সেই পুঁজি থেকে লাভ উঠিয়ে আনা হচ্ছে। তবে, সেই পুঁজির সবচেয়ে বড় মুনাফা হচ্ছে নিজেদের মুখোশ সমুন্নত রাখতে পারা। অন্যান্য দেশের নাস্তিকতার সাথে বাংলাদেশের নাস্তিকতার স্বরুপ এই জায়গাটাতে এসে একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এখানে রাজনীতির সাথে ধর্ম এবং নাস্তিকতার ইস্যু এমনভাবে মিশে গেছে যে এখন আর চাইলেও এটাকে আলাদা করা সম্ভব না। একটা বিশেষ দল ধর্মের আড়ালেই নিজেদেরকে এমনভাবে লুকিয়েছে যে যতবারই তাদের ওপরে আঘাত আসে, তখনই তারা সেই উস্কানির সলতেটাকে বারবার উঁচিয়ে দেয়। এর সমাধান করতে হলে মানুষের মন থেকে সেই উস্কানিটাকে শেকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে।

(৪)
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ইস্যুর কোনো অভাব নেই। কাজকর্মে ডুবে থাকতে হয় বলে শুধু বড় বড় খবরগুলো চোখে পড়ে। খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া বা টেলিভিশনে হাজার বিজ্ঞাপনসহ সংবাদ দেখা সম্ভব হয় না আমার জন্য। একদিন একটা বাঙালি পরিবারের বাসায় নিমন্ত্রণে গিয়ে খবর দেখার বিরল সৌভাগ্য অর্জিত হলো। স্ক্রিনের নিচের দিকে আবার বিশেষ সংবাদ প্রবাহিত হচ্ছিলো। ৫ মিনিট ধরে আমি শুধু হত্যার সংবাদ দেখলাম। এই গ্রামে এ ওকে মেরেছে, একই থানায় অমুক তমুককে মেরেছে, এখানে ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, ওখানে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে – এবং এমন সব ভয়ংকর সংবাদ। এছাড়া অন্যান্য বাজে সংবাদ তো আছেই।

আমি বিষণ্ণ হবো, নাকি অবাক হবো – বুঝতে পারছিলাম না। একসাথে এতোগুলো মৃত্যু দেখলে আমাদের উন্মত্ত হওয়া উচিৎ, অথচ দেখছি ব্যাপারটা যেন আমাদেরকে শান্ত করে দিচ্ছে। ব্যাপারটা যেন “এ আর নতুন কী” টাইপের অবস্থা! প্লিজ, এভাবে নিজের মনুষ্যত্বকে মরে যেতে দেবেন না। অভিজিত রায়, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীলের মত মুক্তচিন্তার অধিকারীদের মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেয়া চলবে না। এই হত্যাগুলো যাতে কখনোই স্বাভাবিক না হতে পারে।

একটাই অনুরোধ – আগামীদিনের নয়, ১০০ বা ৫০০ বছর পরের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করুন। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ইতিহাসের সঠিক অংশে নিজেদের স্থান পাকাপোক্ত করুন।

ফরহাদ হোসেন মাসুম
লুইজিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র