লেখক ডারউইনের বিপজ্জনক ধারণা

ধর্ম সম্পর্কে নিজের দ্বিধার কথা জানিয়ে আর এ থেকে উত্তরণের পরামর্শ চেয়ে এক বন্ধু ফেসবুকে খুদেবার্তা পাঠালো । গৎবাঁধা নিয়মে ড. অভিজিৎ রায় আর মুক্তমনার অন্যান্য লেখকের লেখা সুপারিশ করলাম। তারপর অনেকদিন কোনো খবর নেই তাঁর। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় বার্তা পাঠালো, “বন্ধু, ধর্মের ভুত অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। তারপরও মাঝে মাঝে মাথা চারা দিয়ে উঠতে চায়। কুরআনের ভুল আয়াত গুলির বিজ্ঞান ভিত্তিক সমালোচনা গুলো আমার ভেতরকার ধর্মের ভুতটাকে কাবু করতে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু দার্শনিক দিক দিয়ে ইসলামের সমালোচনা গুলো ভুত টাকে মাঝে মাঝে টুটি চেপে ধরলেও মাঝে মাঝে কাজ করে না….।” বেশ কিছু সমস্যার উল্লেখ করে সমাধান জানতে চাইলো। বুঝতে আমার বাকি রইলো না কোন পর্যায়ে আটকে আছে সে। কারণ, ঠিক এই পর্যায়গুলো আমিও পার হয়ে এসেছি। উত্তরে লিখলাম, “বুঝতে পেরেছি বন্ধু। পারলে আমিই তোমাকে এর উত্তর দিতাম। কিন্তু লিখে এতো সময় ধরে উত্তর দেবার ঐ এনার্জি আপাতত আমার নাই। তুমি যেসব প্রশ্ন করেছো, সেসবের উত্তর মোটামুটি এই লেখাগুলোতে পেয়ে যাবে….।” মুক্তমনা’র আরও কিছু লেখার লিঙ্ক পাঠিয়ে দিলাম। নয় মাস পর ২০১৪ সালের জুন মাসে ইংরেজী হরফে সে লিখলো, “দোস্ত, কেমন আছিস? তোর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। তোর জন্যই আজ আমি স্বাধীন জীবন পেয়েছি। অনেক ভালো আছি।” ************************************************************************

আলোকিত হবার ধরণটাতে সবার মাঝে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আমার ক্ষেত্রেও খুব সম্ভবত এর ব্যত্যয় ঘটে নি। অনেকের মতো আমি যেহেতু নিয়মিত লেখক নই, লেখার খুব একটা সাহস করি না। এর পরেও অভিজিৎ দা’র প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা থেকে লিখতে বসে গেছি শেষ মুহুর্তে। সাদামাটাভাবে একটা বর্ণনা দিয়ে যাবো। অভিজিৎ দা অনেকের পাশাপাশি আমাকেও যে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছিলেন, তার তুচ্ছ প্রতিদানস্বরূপ ভালবাসার এই স্বাক্ষর তাঁর জন্মদিনে তাঁরই এক সৃষ্টির ক্যানভাসে আঁকা হয়ে থাকুক।
মফস্বল একটা শহরে বসবাস ছিল আমাদের। আমাদের ছয় ভাই-বোনের দেখাশোনার ভার আম্মা আর আব্বার উপর। আব্বা চাকুরিজীবী, আম্মা নিখাদ গৃহিনী। আব্বা সংস্কৃতিমনা, আম্মা ধর্মপ্রাণ। আব্বা বারান্দায় বসে মাঝরাতে গান গাইতেন, আর আম্মা নিয়ম করে ফজরের নামাজ শেষে কোরান পাঠে বসতেন। আম্মা আর আব্বার এই দ্বৈরথ ছাপিয়ে ভাই-বোনেরা হয়ে উঠলাম সংস্কৃতিমনা আর উদার ধর্মনিরপেক্ষ। স্কুলে-কলেজে নানান প্রতিযোগীতায় অংশ নেই, স্কাউট-বিএনসিসি করি, উদীচীর হয়ে ট্রাকে করে গণসঙ্গীত গাইতে যাই, বিকেল বেলা আবৃত্তির রিহার্সেলে যাই। এসবের পরেও, চার ভাই মিলে জুম্মার নামাজটা বাদ যায় না। রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি পুরো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াও হয়ে যায়। শহরে প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বি থাকায়, আমার নিজের প্রায় সব বন্ধু হিন্দু মা-বাবার ঘরের। ঈদে তাই হিন্দু বন্ধুবান্ধবরাই বেশি বেড়াতে আসে, হৈহুল্লোড় করে। আমরাও দলবেঁধে পৌষ সংক্রান্তির হরেক রকম পিঠার লোভে ঐসব বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে হানা দেই, আবার পুজোর রাতে এ-পাড়া ও-পাড়ায় মূর্তি-যুদ্ধ দেখে বেড়াই। আম্মা যদিও হিন্দু বাড়িতে খেতে যেতে নিষেধ করেন, তবে কখনোই তাতে খুব একটা জোরাজুরি ছিল না। আম্মার বাপের বাড়ির লোকজন খুব পরহেযগার হলেও, আব্বার সংস্পর্শে এসে ধর্মের চরমপন্থী ভাব তাঁর চরিত্র থেকে লোপ পেয়েছিল। খামাখা এই পটভূমির অবতরণের কারণ একটাই— আলোকিত হবার পেছনে শৈশবকালীন পরিবেশের অবদানটা স্মরণ করা। আমার নাস্তিক আর মানববাদি হয়ে ওঠাটা সহজ করে দিয়েছিল শৈশব আর কৈশোরের বিপরীতধর্মী মনন আর সাংস্কৃতিক আবহ। কেবল আমার ক্ষেত্রেই নয়, ভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানের বন্ধুদের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে দেখেছি। বেশ কিছুদিন আগে ক্যান্টিনে বসে খেতে খেতে অস্ট্রেলিয় এক সহপাঠীকে তাঁর নাস্তিকতার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উত্তরে সে জানালো, তাঁর মা আর বাবা দুইটি ভিন্ন ধর্মের অনুসারি। একই সাথে দু’টি ধর্ম যেহেতু সঠিক হতে পারে না, বন্ধুটির পক্ষে নাস্তিকতাকে বেছে নেয়া অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। ধর্মের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টির প্রথম প্রধান কারণটা ছিল আব্বার মৃত্যু। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে যান। জীবনে এই প্রথম বড় রকমের কোনো একটা মানসিক ধাক্কা খেয়েছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই তাই ধর্মকর্ম পালন বেড়ে গিয়েছিল — আব্বাকে যে করেই হোক বেহেশতে নিয়ে যেতে হবে। হুজুরের কাছে শুনেছি, সন্তানের দোয়া নাকি “ডাইরেক্ট অ্যাকশন” করে। আল্লাহ’র নিরানব্বুইটি নাম ঠাটা মুখস্ত করে ফেলেছি। ইয়াসিন আর আর-রাহমান সুরাও প্রায় মুখস্ত। এসবের মাঝেও কেমন যেনো একটা অদ্ভুত বিদ্বেষ কাজ করছিল আল্লাহর প্রতি— এতো কষ্ট কীভাবে দেন তিনি? আব্বাকে কেনো আমার রোজগারের টাকা না দেখিয়েই তুলে নিলেন তিনি? তাছাড়া, এই যে এতো নামায-কালাম পড়ি, সত্যি কী এসবের প্রতিদান পাবো? বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে পদার্পন করেছি। প্রজেক্ট থিসিস লিখতে হবে। বর্ষের শুরু থেকেই তুমুল উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। যখন-তখন কাঁদা আর পানি মাড়িয়ে গাছের পাতা সংগ্রহ করতে বনের ভেতর চলে যাই। রাত জেগে পোকা খাওয়া পাতার নানান বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করি। ইন্টারনেট থেকে নামানো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলো পড়ার চেষ্টা করি। সমস্যা হলো, যে প্রবন্ধটাই হাতে নেই, খালি ইভোল্যুশন আর ইভোল্যুশন। ইভোল্যুশনারি আর্মস রেইস, কো-ইভোল্যুশন, ইভোল্যুশনারি রেডিয়েশন— এরকম বিদ্ঘুটে সব কারিগরি শব্দগুচ্ছ। কোনো প্রবন্ধই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারি না। বিবর্তন নিয়ে অনেক আগে বড় ভাইয়ার এইচএসসি’র বইয়ে একটা অধ্যায় পড়েছিলাম। কী সব ঘোড়ার বিবর্তন না কী যেন পড়েছিলাম, কোনো ছাতাই মনে করতে পারছি না। বিবর্তন সম্পর্কে আমার জ্ঞান তখন “ডারউইন” আর “বানর থেকে মানুষ” পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এরকম একটা সময়ে কী কারণে যেনো শহরের একটা নাম করা বইয়ের দোকানে গেছি। হঠাৎ করেই চোখে পড়লো “বিবর্তনের পথ ধরে” বইটি। বন্যা আহমেদের লেখা। অনেক দিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় দ্বিজেন শর্মার একটা লেখায় এই বইটির নাম পড়েছিলাম। ডায়রিতে টুকেও রেখেছিলাম নামটা, কিন্তু পরে আর কেনা হয়নি। সত্যি বলতে এখানটাতেই পরিবর্তনের শুরু। হলে ফিরে বইটা খুলে বসেছি। খানিকটা এগিয়ে থতমত খেতে শুরু করলাম। বিবর্তন নিয়ে লেখা, অথচ ধর্মেরও সমালোচনা করা হচ্ছে মাঝেমাঝে! কীভাবে সম্ভব? আরও পড়ছি। মাঝখানে বিরতি দিয়ে উঠে নামায আদায় করে নিচ্ছি। নামাযের দোয়ায় তখন আল্লাহর কাছে নিজের ঈমান শক্ত করে ধরে রাখার ফরিয়াদ। নামায শেষে আবারও বই নিয়ে বসেছি। এতো চমৎকার সাবলীল ভাষায় যুক্তিসম্পন্ন লেখা খুব সম্ভবত এর আগে আমি পড়িনি। বইয়ের মাঝ পথে আমার ঈমান নড়বড়ে হয়ে গেছে, নামাযের বিরতি না দিয়েই বাকি বই শেষ করলাম। তখনও আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারাইনি, তবে নামাযটা আর পড়া হয় না কোনো এক কারণে। হঠাৎ করেই যেনো খটোমটো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলো পড়াটা সহজ হয়ে উঠছে। বন্ধুদের সাথে বিবর্তন নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চালাই, তবে কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। নিজে নিজেই বইটা হাতে নিয়ে যখন-তখন পৃষ্ঠা উল্টাই। বইটার ভূমিকা আগেও পড়েছি, তবে খুব একটা মনোযোগ দেইনি। আরেকবার পড়তে গিয়ে পেয়ে গেলাম মুক্তমনা ওয়েবসাইটের ঠিকানা। আর সেখানটাতেই বন্যা আহমেদ তাঁর সাথী ও বন্ধু অভিজিৎ রায়কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে আমার কাছে তখন ছোটো ভাইয়ার উপহার হিসেবে দেয়া চমৎকার একটা ল্যাপটপ আছে। এছাড়াও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় হলের ধীরগতির ইন্টারনেট। নিজেরও একটা মডেম আছে, বাড়িতে গেলে ব্যবহার করি। কোনো এক ছুটিতে বাড়িতে যাবার পর রাতের বেলা মুক্তমনা খুলে বসলাম। চোখের পলকে অলৌকিক এক ভুবন এসে স্বাগত জানালো। এরকম একটা ওয়েবসাইট বাংলা ভাষায় রয়েছে অথচ আমি জানি না! শুরু করলাম অভিজিৎ রায়কে দিয়ে। আর কী সৌভাগ্যবান আমি, প্রথমেই চোখে পড়ে গেলো অভিজিৎ রায়ের অনন্য এক প্রবন্ধ, “বিজ্ঞানময় কিতাব”। কাকতালীয়ভাবে, এটিই নাকি বাংলায় লেখা তাঁর প্রথম প্রবন্ধ। আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। কিছুদূর গিয়ে তথ্যগুলো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। অন্যান্য ধর্ম নিয়ে যেসব উদাহরণ দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আমার জানার দরকার নেই, পরিবার আর মক্তব থেকে ইতোমধ্যেই অন্যসব ধর্মের ভ্রান্তি সম্পর্কে বিশ্বাস পোক্ত করে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন পড়লো তাই নিজ ধর্মকে রক্ষার। বাংলা অনুবাদসহ কয়েকটি প্রকাশনীর তিন-চারটি কোরান শরিফ আমাদের বাসায় রয়েছ, এর মাঝে একে একে সবগুলো নিয়েই বসলাম। প্রবন্ধে উল্লেখিত একেকটি সূত্র ধরে কোরানে খুঁজি, আর আমার মাথা খারাপ হতে থাকে। একেকটা আয়াত বহুবার করে দেখছি। কই? না-তো। প্রবন্ধটায় বানিয়ে বলা কিছুই নেই! সারা জীবনে কখনো অজু না করে যে কোরান ছুঁই নি, যে কোরানকে শুধুমাত্র মক্তবে নয়, স্কুলের ধর্মশিক্ষার বইয়েও বলা হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব, তাতে এমন নির্জলা মারাত্মক ভুলগুলো থাকে কীভাবে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? ভোরের দিকে আম্মা আমার কক্ষে এসে জিজ্ঞেস করলেন তখনো ঘুমাই নি কেন। চেয়ার ছেড়ে কীভাবে আম্মাকে পাশ কাটিয়ে বাথরুমে গিয়ে টেপ ছেড়ে দিয়ে মাথায় পানি ঢালছিলাম, আজও তা স্পষ্ট মনে আছে। আম্মা কোনো কিছু বুঝতে পারলেন না। একটা কোরান শরিফ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। বাইরে ভোরের সাদা আলো, কিছুক্ষণ পরেই প্রভাত হবে। নতুন একটা সকাল। নতুন একটা সূর্য। কোরান শরিফের দিকে তাকাই আর কান্না পায়। এতো বড় মিথ্যে কেমন করে আমি বিগত ২৩ টা বছর ধরে সঞ্চিত রেখেছি? কী করে ভন্ড এসব ধর্ম এতো যুগ পরেও বিলুপ্ত হয়ে যায় নি? আমার মনে অসংখ্য প্রশ্ন। এসবের উত্তর আমাকে পেতেই হবে। ধীরে ধীরে অভিজিৎ দা’র বাকি লেখাগুলো পড়লাম। রাতের পর রাত জেগে আর্কাইভে অন্যান্য লেখকদের পুরনো লেখা আর ই-সংকলনে রাখা অসাধারণ বইগুলো পড়তে থাকলাম। ধর্মের অসারতা আর মিথ্যা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হলেও, মাঝেমাঝেই ২৩ বছর ধরে লালন করে আসা ফালতু মৃত্যুভয় কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মাথায় ভর করতো। সেই সময়ের একমাত্র ওষুধ ছিল পড়া, পড়া, আর পড়া। পড়তে পড়তে পুনরায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতাম। এভাবেই একটা সময় নিজেকে পরিপূর্ণ মুক্তমনা রূপে আবিষ্কার করলাম। ধর্ম আর মৃত্যুর ভয় কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। লেখার শুরুতে দেয়া চিঠির লেখক, আমার সেই বন্ধুর মতো আমিও স্বাধীন জীবনে পদার্পন করলাম। এই স্বাধীনতাকেই যদি আলোকিত হওয়া বলা হয়ে থাকে, তবে এখানেই লেখাটি শেষ। এমনিতেই লেখার দৈর্ঘ্য অযথা বড় করে ফেলেছি। নিয়মিত লেখক না হলে যা হয় আরকি। এরপরেও, কতো কথা না-বলা রয়ে গেলো! পরিচিত কোনো মুক্তমনা বন্ধুকে কাছে পেলে, হয়তো সেদিন না বলা কথাগুলো উগড়ে দেবো। অগুস্ত রোঁদ্যা’র কল্পিত আদি থিঙ্কারের উত্তরসুরিরা যুগ-যুগান্ত ধরে জ্ঞানালোকের যে মশাল বয়ে চলেছেন, সেই মশাল সব সময় একরকম দীপ্তি ছড়ায় নি। কূপমন্ডুকতার ঘন অন্ধকারে কখনও তা ঢাকা পড়েছে, কখনও বা ধর্মান্ধদের নিপীড়নে হয়েছে নিভুনিভুপ্রায় — তবে কোনো অপশক্তিই নেভাতে পারে নি এর শিখাকে। সে জ্বলেছে, তীব্রভাবে সে জ্বলে উঠে দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সভ্যতার আনাচে-কানাচে। সভ্যতার নিয়ন্ত্রকেরা আপন অজ্ঞানতার চাপে আর প্রভুত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে ধর্ম আর ভাবাদর্শের মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে জনতাকে, পাশাপাশি অমানবিক অত্যাচার চলেছে এসব কল্পিত আর অযৌক্তিক আচার-প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মহামতিদের উপর। এরপরেও একগুঁয়ে কিছু অদম্য আলোর পথযাত্রী অজ্ঞানতার রাতে থেমে না গিয়ে প্রবল বেগে আলোকোজ্জ্বল করে চলেছেন চারিধার। স্বল্প সময়েই তাঁরা জয় করেছেন রাজধানীর পান্থপথ থেকে শুরু করে মফস্বল শহর আর গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিকে। নিজের মশালে আলোকিত করেছেন নিযুত-কোটি পথচারীকে। আমাদের সেই প্রধান আলোকশিখাধারী ড. অভিজিৎ রায়, আমাদের অভিজিৎ দা, আমার হিরো, নির্লজ্জ খুনির ছুড়ির আঘাতে রক্তাক্ত হবার আগ মুহুর্তেও সেই মশাল সমুন্নত রেখেছেন। ছেড়ে যাবার পর, তাঁর প্রথম এই জন্মদিনে সবাই দেখছে, অপূর্ব সেই আলো, কেমন করে “ছড়িয়ে গেলো সবখানে”।