এমনিতেই তদন্ত প্রক্রিয়াগুলো চলছিলো গরুর গাড়িতে করে ঢিমে তে-তালা গতিতে; উপরন্তু সরকারের হতবুদ্ধি হয়ে বসে থাকার সুবর্ণ সুযোগ নিতে এতটুকু অগ্রপশ্চাৎ ভাববার প্রয়োজন মনে করেনি আল্লাহর সাহায্যকারীরা! অবশ্য ভাববেই বা কেনো?! এসব তো তাদের ইমানের জোরের (পড়ুন মগজ ধোলাই) পরীক্ষা! নিঃসন্দেহে তাদের ইমানের জোর যথেষ্ট শক্ত; তা না হলে অমন দিনে-দুপুরে হত্যাকান্ড ঘটিয়েও নিরাপদে পালায় কী করে!? আল্লাহ সহায় আছে বলেই তো…

আসুন ঘটনাগুলো মনে করার চেষ্টা করি-
প্রথমে গেলেন থাবা বাবা। এটা স্টার্টিং পয়েন্ট।
তারপর ড. অভিজিত রায়। যদিও আমার মত হলো, অভিদা আর থাবাদার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ঠিক এক সুতোয় গাঁথা যায়না। থাবাদার হত্যাকাণ্ডটি ছিলো অনেকখানিই রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে অভিদার হত্যাকাণ্ড মূলত ধর্মীয় অনুভূতি নামক বায়বীয় অনুভূতি আক্রান্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়া।
তারপর ওয়াশিকুর বাবু। এখানে এসে থমকে যেতে হয়! প্রশ্ন আসে কেনো ওয়াশিকুর? অন্য কেউ নয় কেনো? এই মুক্তমনা পরিবারেরই কতজন চিনতেন ওয়াশিকুর বাবুকে? নিশ্চয়ই অভিদার সাথে তাঁর তুলনা চলে না? আপনার কি ধারণা অাক্রমণকারীরা দেশের সমস্ত নাস্তিকদের সমূলে উৎপাটন করার মিশনে নেমেছে? যদি তাই হয় তাহলে হয়তো আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন! যদি উদ্দেশ্য তেমন হতো তাহলে তারা উপর থেকে সাফ করতে করতে নিচের দিকে নামতো, যেটা বুদ্ধিমান মাত্রই করবে। এমন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর একটা করে মৃত্যুু আমাদের মস্তিষ্কে একটি ভ্যালিড সমীকরণের সম্ভাবনা জাগায়- যারই হোক দরকার কেবল একটা করে লাশ!

বাদ দিন! আসুন ধর্মানুভূতি টার্মটা নিয়ে আরেকটু লেবু কচলাই-
এই অনুভূতি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু দিনশেষে প্রাপ্তির ঘরে উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি, এখনো যাচ্ছে না। অথচ দিনশেষে যা পাচ্ছি তা-ই আবার গলার কাঁটা হয়ে যাচ্ছে!

ফেসবুকের বদেৌলতে নবাগত মুক্তমনারা (শুধু এ ব্লগের নয়; সমস্ত আন্তর্জালিক) যতটা না তথ্যবহুল, যুক্তিনির্ভর রচনা লেখার প্রয়াস পাচ্ছে, তারচে অনেক বেশি ভুগছে সেলিব্রেটিজমে । কেউ কিছু মনে করলে তার নিকট করজোরে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক বলছি- নিজেদের অতটা পরিশ্রম করতে হচ্ছে না বলেই আজকাল নাস্তিক হওয়াটা খুব সস্তা হয়ে গেছে। তারা নাস্তিকতার পক্ষে সেসব যুক্তিগুলোই মনে রাখছে যেগুলো চটুল, চর্বিতচর্বণ (মনে রাখা সহজ বলে?)। যেমন: ঘুরে ফিরে নবীর সাথে অায়েশার ৬ বছর বয়সে বিয়ে ও ৯ বছর বয়সে একসাথে রাত কাটানো, এগারো-তেরোটি বিয়ে, দাসীর সাথে যেৌনসম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ক রসাত্নক আলোচনা।
এখানে ভাববার বিষয় হলো কিছু কিছু নাস্তিক (!) এসব ব্যাপারে সুড়সুড়ি দিতে দিতে এমন পর্যায়ে পেৌছেঁ গেছে যে সেসবকে রীতিমতো চটিসাহিত্য বলতে হচ্ছে! মেরাজ নিয়ে উম্মে হানী ও নবীকে জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস ছাড়া হচ্ছে। এসব ছাড়ার কারণ- এসব চটুল বলে সহজে মনে রাখা যায় আর এসবে পক্ষে-বিপক্ষে লাইক, কমেন্ট পড়ে অনেক বেশি। আপনি নিজেই ইচ্ছে করলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। পরপর দুদিন একই সময়ে প্রথমদিন ২-৩ লাইনের চটুল পোস্ট দিন আর পরেরদিন বিজ্ঞানভিত্তিক/ সমকালীন/ হালকা চালে নবীর সমালোচনামূলক ১০-১২ লাইনের একটি পোস্ট দিন। নিজেই পার্থক্যটা ধরতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার এটা সম্ভবত একটা খারাপ দিক! আমি বলছিনা নাস্তিক হতে হলে গণ্ডায় গণ্ডায় বই মুখস্ত করতে হবে। তবে যথেষ্ট পড়াশুনা না থাকলে মস্তিষ্ক তো পরিষ্কার হবেই না, তার উপর শেষ বয়সে পুরনো বিশ্বাসে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমার মতে, যারা কম পড়াশুনা করে তারাই চটুল যুক্তি ব্যবহার করে বেশি।
দেখা যায় এই নবাগতরাই কাউকে কাউকে পীর জ্ঞান করে রীতিমতো পূজো করে (এটা কিন্তু আস্তিকতার লক্ষণ!)। আর পীরেরাও সেগুলো দেখে মজা পায়।

বন্যাদির পোস্টে দেখলাম নাস্তিকের ক্লাসিফিকেশন নিয়ে এলাহি কাণ্ড! ভাবলাম এই ছোট মাথা দিয়ে যতটুকু পারি বিশ্লেষণ করি। কিন্তু নানান ব্যস্ততায় আর করা হয়ে উঠলো না। প্রাসঙ্গিক বলে অামার মন্তব্যটা এই পোস্টেই জুড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
“উগ্র নাস্তিক” ট্যাগধারীরা নিজেদের দিকে ঢাল ধরছেন এমনটা বলে যে, এক একজনের লেখার ক্ষেত্র এক এক রকম। কে কী লিখবে সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত। আমি তাদের উপর শ্রদ্ধা রেখেই তাদেরকে তুলনা করতে চাই সেই ব্যক্তির সাথে যে একটা জমির এক কোনায় কয়েকটা শস্যবীজ ফেলে এক সপ্তাহ পরেই সারা জমিতে পাকা ফসল কামনা করে! তারা নাকি আঘাত করে করে ধর্মানুভূতি ভোঁতা করবে! পিতৃপ্রদত্ত ধর্ম ইসলাম হওয়ায় এটা খুব বুঝি প্রতিটি লাশ প্রায় প্রত্যেক মুমিনের অন্তর ঠাণ্ডা করছে/ করবে। ক্ষুদ্র প্রাণী অতিকায় প্রাণীর সাথে তখনই জয়লাভ করে যখন সে বিবিধ কেৌশল অবলম্বন করে। জলে নেমে খালি হাতে কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধে সায় দেবেন কি?
এখানে কেউ কেউ হুমায়ূন আযাদ স্যারের প্রসঙ্গ তুলে আনবেন। আমি বলবো ঐ হামলা আর এসব হামলা গুলিয়ে ফেললে কিন্তু সমস্যা। স্যারের উপর হামলা যতটা না ধর্মীয় কারণে হয়েছে, তারচেয়ে বেশি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।
অার তসলিমা নাসরিন পুরুষশাসিত সমাজের পেৌরুষ্যে ভয়ানক আঘাত করেছিলেন। তাঁর উপর ক্ষিপ্ততার মূল কারণ এটা, নাস্তিকতা নয়।

জন্মের পর থেকেই আমাদের মস্তিষ্ক ধর্ম সম্পর্কে শুনতে শুনতে ধর্মকেও হাত-পায়ের মতো প্রাকৃতিক হিসেবে ধরে নেয়। তার উপর জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সেসব ধর্মীয় আচার পালন, সব জায়গায় ধর্মের জয়গান পূর্বোক্ত বিশ্বাসকে আরো মজবুত করে। সেখান থেকে পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ানোটা ছেলের হাতের মোয়া নয়। এখানে জ্ঞানের পরিধি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। যারা ধর্মকে উলঙ্গ করেই নাস্তিকতা প্রচার করতে আগ্রহী তারা বলুন তো, কাল যদি দেশের সব কয়টা মানুষ নাস্তিক হয়ে যায় তাহলে কী ঘটবে?

বানরের গলায় মুক্তোর মালা কখনোই সুখস্মৃতি বয়ে আনে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কাউকে নাস্তিক বানানো যায় না। সবোর্চ্চ প্রশ্ন তৈরি করতে শেখানো যায়। অার এটাই হতে পারতো নাস্তিকদের প্রধান অস্ত্র! এই আধুনিক যুগে আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে চলার কথা ভাবতে পারেনা কেউই। সেটার চর্চা আরো বাড়িয়ে দেয়াটা সাপোর্টিং অস্ত্র হিসেবে কাজ করতো।

একজন সাধারণ অশিক্ষিত মুসলমানকে নবী আগমনের পূর্বের ইতিহাস পড়ে শুনালে তার কোনো বিকার হবেনা কিন্তু যদি বলা হয় নবীকে গালি দেয়া হয়েছে তাহলে তার অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে বেশিক্ষণ লাগবে না। একজন মুসলমানকে শেখানো হয় স্বয়ং বাবা-মায়ের চাইতে নবীকে বেশি ভালোবাসতে। সুতরাং এখানে উগ্র প্রতিক্রিয়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এ সাধারণ কথাটাকে যদি অস্বীকার করতে চান তাহলে তো ফল ভোগ করতেই হবে! লিস্টটা আরো লম্বা হবে। আমি আপনি অনেকেই হয়তো এই লিস্টে পড়বো। এক সপ্তাহ সবাই আফসোস করবে। পৃথিবী কিন্তু ঘুরতেই থাকবে।

নাস্তিকতা যেহেতু কোনো ধর্ম নয় তাই এর কোনো বাণীও নেই। কিন্তু আমরা জানি যে, জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি অধিকাংশ নাস্তিকের মধ্যে বিনয়ীভাব অনুপস্থিত।

(লেখাটা পড়ে কেউ কষ্ট পেলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। লেখায় রূঢ় শব্দ পরিহার করার চেষ্টা করেছি।)