বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে এক নৃশংস বধ্যভূমিতে। প্রতিনিয়ত রক্তের লাল স্রোত বয়ে চলেছে এর গা বেয়ে, খুনের নেশায় পাওয়ায় উন্মত্ত চাপাতির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে কোমল সব দেহ, অসাধারণ সব মেধা, অনন্য সব মানুষগুলো। একদল নরপিশাচ ধর্মের নামে চাপাতির হিংস্রতা দিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে সবকিছু। দুর্বিষহ এবং পচা দুর্গন্ধময় এক দুরাশয় সময়কে ধারণ করে চলেছি আমরা, চলেছি অন্তহীন এক আঁধার রাজ্যের অন্তিম সীমানার দিকে।

গতকাল বাড়িতে গিয়ে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে মুক্তমনা ব্লগের নিয়মিত লেখক নিলয় নীলকে। চার-পাঁচজনের একটা দল প্রকাশ্য দিনের বেলায় তাঁর বাসায় গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে আটকে ফেলেছে, নীলকে আলাদা করে ভিন্ন রুমে নিয়ে আল্লাহ আকবর বলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

চাপাতি দিয়ে সেক্যুলার ব্লগারদের এই হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। এই বছরেই মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে চারজনকে একই উপায়ে হত্যা করা হলো। এ বছর এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ছাব্বিশ তারিখে বইমেলা বেরিয়ে টিএসসি মোড়ে আসতে চাপাতি হাতের ঘাতক দল অভিজিত রায় এবং তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই আক্রমণে অভিজিত রায় নিহত হন। তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত হন। তিনি চাপাতির আঘাতে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল হারান। মাথায়, ঘাড়ে কপালে মারাত্মক কোপ নিয়ে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

এর মাত্র এক মাস পরে, তিরিশে মার্চ দিনের বেলায় প্রকাশ্য রাজপথে চাপাতি নিয়ে হামলা চালানো হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুর উপরে। এই হামলায় অংশ নেয় হাটহাজারি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র। কোপের পর কোপ দিয়ে ওই স্থানেই তাঁকে মেরে ফেলা হয়। তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন সাহসী মানুষ ধাওয়া করে খুনিদের দুজনকে ধরতে সক্ষম হয়, এবং তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

মে মাসের বারো তারিখে ঘাতকের চাপাতি থেকে রক্ষা পেতে জানবাজি রেখে ছুটতে থাকে অনন্ত বিজয় দাশ। কিন্তু, শেষ রক্ষা আর হয় না। সামনে দীঘির কারণে আটকে যান তিনি। ঘাতকেরা দীঘির পারে তাঁকে একের পর এক চাপাতির আঘাত করে চিরতরে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

নিঃসীম আঁধারে ছেয়ে গেছে আজ বাংলাদেশে। এর চারিদিকে শুধু থিক থিক অন্তহীন অন্ধকার। এর মাঝে কিলবিল করছে অসংখ্য প্রতিক্রিয়াশীল পুঁতিগন্ধময় পোকামাকড়। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার চর্চা করা এখন প্রচণ্ড রকমের বিপদজনক বাংলাদেশে। অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা এমনই সর্বব্যাপী যে বিপরীত কোনও চিন্তা-ভাবনা, বিশেষ করে ধর্ম, আরও স্পষ্ট করে বললে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে সামান্যতমও সমালোচনাও এক শ্রেণীর ইসলামি মৌলবাদী সহ্য করতে পারছে না কিছুতেই। একদল রক্তপিপাসু ধর্মান্ধ মোল্লা ছড়ি ঘোরাচ্ছে সবার মাথার উপরে। সমাজটাও হয়ে উঠেছে প্রবলভাবে ধর্মাচ্ছন্ন। পত্রিকায় নির্দোষ একটা মোহাম্মদ বিড়াল নামের কৌতুকের জন্যও তরুণ কার্টুনিস্টকে জীবন নিয়ে পালাতে হয় দেশ ছেড়ে। ফেসবুকের সামান্য কোনও একটা পোস্টে লাইক দেবার অপরাধে সরকারের বীর পুঙ্গব বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তরুণদের। দিকে দিকে শুধু ধর্মানুভুতি আহত হবার জিগির উঠেছে যেনো। মানুষের আরও কতো কতো ধরনের অনুভূতি রয়েছে, সেগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয় না, কিন্তু এই অনুভূতি এমনই নাজুক, ভঙ্গুর এবং স্পর্শকাতর যে, তা আঘাত হানে মুহূর্তের মাঝেই, প্রবলভাবে। এই আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি তখন মরিয়া হয়ে ঘুরে বেড়ায় রক্তের নেশায়। হুমায়ূন আজাদ এদের প্রসঙ্গেই লিখেছিলেনঃ

“একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় আজকাল, কথাটি হচ্ছে, ‘ধর্মানুভুতি’! কথাটি সাধারণত একলা উচ্চারিত হয় না, সাথে জড়িয়ে থাকে ‘আহত’ ও ‘আঘাত’ কথা দুটি; শোনা যায় ‘ধর্মানুভুতি আহত’ হওয়ায় বা ‘ধর্মানুভুতিতে আঘাত’ লাগার কথা। আজকাল নিরন্তর আহত আর আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষের একটি অসাধারণ অনুভূতি, যার নাম ধর্মানুভূতি। মানুষ খুবই কোমল স্পর্শকাতর জীব, তার রয়েছে ফুলের পাপড়ির মতো অজস্র অনুভূতি; স্বর্গচ্যুত মানুষেরা বাস করছে নরকের থেকেও নির্মম পৃথিবীতে, যেখানে নিষ্ঠুরতা আর অপবিত্রতা সীমাহীন; তাই তার বিচিত্র ধরনের কোমল অনুভূতি যে প্রতি মুহূর্তে আহত রক্তাক্ত হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যখন সুদিন আসবে, সে আবার স্বর্গে ফিরে যাবে, তখন ওই বিশুদ্ধ জগতে সে পাবে বিশুদ্ধ শান্তি; সেখানে তার কোনও অনুভূতি আহত হবে না, ফুলের টোকাটিও লাগবে না তার কোনও শুদ্ধ অনুভূতির গায়ে। অনন্ত শান্তির মধ্যে সেখানে সে বিলাস করতে থাকবে। কিন্তু, পৃথিবী অশুদ্ধ এলাকা, এখানে আহত হচ্ছে, আঘাত পাচ্ছে, রক্তাক্ত হচ্ছে তার নানা অনুভূতি – এটা খুবই বেদনার কথা এবং সবচেয়ে আহত হচ্ছে একটি অনুভূতি, যেটি পুরোপুরি পৌরাণিক উপকথার মতো, তার নাম ধর্মানুভূতি। মানুষ বিশ্বকে অনুভব করে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে; ইন্দ্রিয়গুলো মানুষকে দেয় রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শ্রুতির অনুভূতি; কিন্তু মানুষ একমাত্র প্রতিভাবান প্রাণী মহাবিশ্বে, শুধু এ পাঁচটি ইন্দ্রিয়েই সীমাবদ্ধ নয়, তার আছে অজস্র ইন্দ্রিয়াতীত ইন্দ্রিয়। তার আছে একটি ইন্দ্রিয়, যার নাম দিতে পারি সৌন্দর্যেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে অনুভব করে সৌন্দর্য; আছে একটি ইন্দ্রিয়, নাম দিতে পারি শিল্পেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে উপভোগ করে শিল্পকলা; এমন অনেক ইন্দ্রিয় রয়েছে তার, সেগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে প্রখর প্রবল প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে তার ধর্মেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে অনুভব করে ধর্ম, তার ভেতরে বিকশিত হয় ধর্মানুভূতি, এবং আজকের অধার্মিক বিশ্বে তার স্পর্শকাতর ধর্মানুভুতি আহত হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয় ভোরবেলা থেকে ভোরবেলা। অন্য ইন্দ্রিয়গুলোকে পরাভূত করে এখন এটি হয়ে উঠেছে মানুষের প্রধান ইন্দ্রিয়; ধর্মেন্দ্রিয় সারাক্ষণ জেগে থাকে, তার চোখে ঘুম নেই; জেগে জেগে সে পাহারা দেয় ধর্মানুভূতিকে, মাঝে মাঝেই আহত হয়ে চিৎকার করে ওঠে এবং বোধ করে প্রচণ্ড উত্তেজনা। এটা শিল্পানুভুতির মতো দুর্বল অনুভূতি নয় যে আহত হওয়ার যন্ত্রণা একলাই সহ্য করবে। এটা আহত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ধর্মানুভুতির উত্তেজনা ও ক্ষিপ্ততায় এখন বিশ্ব কাঁপছে।“

সেই উত্তেজনা এবং ক্ষিপ্ততায় এখন বাংলাদেশও কাঁপছে, তীব্রভাবে কাঁপছে। ভূমিকম্পের প্রবল কম্পনের মতো বাংলাদেশের সমস্ত সীমানা জুড়ে চলছে সেই কম্পনের ধ্বংসলীলা। বাংলাদেশে সু-বুদ্ধিসম্পন্ন মুক্তচিন্তার লেখকদের এখন জান হাতে রেখে লেখালেখি করতে হচ্ছে। নিজস্ব মত প্রকাশে সকলেই দ্বিধাগ্রস্ত এখন, কেউ কেউ প্রবলভাবে আতংকিতও। আতংকিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কখন কার ঘাড়ে চাপাতির কোপ এসে পড়বে কেউ যে তা জানে না। কেউ জানে না কখন কার জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হচ্ছে কদাকার ইসলামি জঙ্গী সেনারা।

বাংলাদেশে লেখালেখির ‘অপরাধে’ একের পর এক বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটছে, কিন্তু এর কোনটারই সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না, কাউকে ধরা হচ্ছে না, কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। এটাই হত্যাকারীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে চলেছে অবিরাম। আমরা দেখেছি, হুমায়ূন আজাদ হত্যার কোনও বিচার হয় নি, রাজীব হায়দারের হত্যার কোনও বিচার হয় নি, বিচার হয় নি অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু কিংবা অনন্ত বিজয় দাশদের হত্যাকাণ্ডের।

এই বিচার না হবার যে নজীর গড়ে উঠছে বাংলাদেশে, সেটা সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের এইসব হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব না দেবার বিপদজনক প্রবণতা, এই দুইয়ে মিলে, একদিন আমাদেরকে জাতি হিসাবে বিকলাঙ্গ করে দেবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, অসংখ্য মৌলবাদী জঙ্গী দেশের কোনও কাজেই আসবে না। এরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য ক্যান্সারস্বরূপও। কিন্তু যে মানুষগুলোকে এরা মুরগি কাটার মতো করে কেটে ফেলছে, তারা সবাই একেকজন সোনার টুকরো মানুষ। অকাল এবং অপঘাত মৃত্যুর কারণে শুধুমাত্র এরাই যে হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে তাই নয়, মুক্ত-চিন্তার আলোকিত জায়গাটাতে ভবিষ্যতে আর কেউ আসতেই সাহস করবে না। আলোর ঝরনাধারার শেষ স্রোতটা বন্ধ হয়ে যাবে, অন্তহীন এক অন্ধকার জগতে পতিত হবে দেশ এবং জাতি। সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে আমাদের হয়তো অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে কয়েক যুগ, কয়েক শতাব্দী কিংবা সহস্র বছর। মৌলবাদী জঙ্গিরা ঠিক এই কাজটাই করতে চাইছে আমাদের সমাজটাকে নিয়ে। আলোর থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে, পিছন দিয়ে হাঁটিয়ে, নিয়ে যেতে চাইছে তমস্যাপূর্ণ এক সময়ে, এক জগতে।

প্রতিটা যুগেই, প্রতিটা সমাজে, মুক্তচিন্তা যাঁরা করেছেন, সমাজকে হাত ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন সামনের দিকে, গাঢ় অন্ধকারকে দূর করতে চেয়েছেন ভালবেসে প্রদীপ জ্বেলে, প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থপর গোষ্ঠী তাঁদের সহ্য করতে পারে নি। নৃশংসভাবে হামলে পড়েছে তারা মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তাকে রুদ্ধ করতে। ভয়ানক আক্রোশে ঘৃণার বিষ-বাষ্প নিয়ে ঝাঁপিয়েছে আলোর মশালকে নিভিয়ে দিতে, আলোময় যাত্রাকে থামিয়ে দিতে। ঝলমলে আলোর চেয়ে গাঢ় অন্ধকার এদের বেশি পছন্দ, বেশি ভালবাসার। মুক্ত বাতাসের চেয়ে দমবন্ধকরা গুমোট পরিবেশই এদের বেশি কাম্য। তাঁদের এই আক্রোশে, নৃশংস হামলায় রক্ত ঝরেছে মুক্তচিন্তকদের। তাঁদের শরীর থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়েছে রুক্ষ মাটিতে। বন্ধ্যা মাটি সেই রক্তে হয়ে উঠেছে উর্বর। সেই উর্বর মাটিতে ঘন সবুজ শস্য ফলেছে। মুক্তচিন্তকদের ঝরে পড়া রক্ত থেকে বের হয়ে এসেছে আরও অসংখ্য মুক্ত চিন্তার মানুষ।

পরম প্রহসনের এক বিচারের মাধ্যমে সক্রেটিসকে হেমলক পান করে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছিলো প্রাচীন গ্রীসে, হাইপেশিয়াকে আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় হায়েনার হিংস্রতায় ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে জ্বলন্ত আগুনে, গ্যালিলিওকে বন্দি করে রাখা হয়ে অন্ধকার কারাকক্ষে, অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে, হুমায়ূন আজাদকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কুপিয়ে কুপিয়ে। কিন্তু, তারপরেও মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, প্রগতিশীল আন্দোলনকে থামানো যায় নি কখনো, যাবেও না।

মানব সমাজের নিয়মই এমন যে, এটি সামনের দিকেই এগোবে। পিছন থেকে একে যতই টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেনো, এর অগ্রযাত্রাকে কখনোই থামানো যাবে না। রাশ টেনে ধরে এর সম্মুখ সাময়িকভাবে হয়তো ব্যাহত করা সম্ভব, সম্ভব স্বল্প সময়ের জন্য পিছনের দিকেও নিয়ে যাওয়া, কিন্তু দীর্ঘ সময় পরিভ্রমণে এর অগ্রযাত্রা অনিবার্য। প্রতিক্রিয়াশীলরা এটা খুব ভালো করেই জানে। তাই, সবসময়ই তারা থাকে মরিয়া। যতোখানি সম্ভব অঙ্গহানি ঘটিয়ে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করে সমাজের চাকাকে। প্রতিক্রিয়াশীল আর প্রগতিশীলের এই দ্বন্দ্ব তাই সবসময়ই সুতীব্র, সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী এবং সর্বনাশা। এই সর্বনাশা লড়াইটা সবসময়ই রক্তক্ষয়ী। তবে, এই রক্ত ক্ষয় হয় শুধুমাত্র এক তরফ থেকেই। প্রগতিশীলদের দেহ থেকেই রক্ত ঝরে চুইয়ে চুইয়ে, কখনো বা ফিনকি দিয়ে। প্রতিক্রিয়াশীলদের মতো খুন, জখম, মারামারি-কাটাকাটি করার মতো মানসিকতা প্রগতিশীলদের নেই। অস্ত্রের চেয়ে কলমের শক্তিতেই বেশি বিশ্বাস তাঁদের। প্রতিটা আন্দোলনে তাই এক তরফাভাবে রক্ত দিতে হয় তাঁদের।

অভিজিৎ, অনন্ত, রাজীব, বাবু, নীলদের মতো তরুণ-যুবকরা যে অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসে আমাদের জন্য, আমাদের সমাজের জন্য, এই পৃথিবীর জন্য, সেটাকে পরম মমতা এবং গভীর ভালবাসায় কাজে লাগানো উচিত আমাদের। আমাদের উচিত তাদেরকে এমন একটা নির্ভাবনাময় পরিবেশ দেওয়া, নিশ্চিন্ত একটা বাগিচা দেওয়া, যেখানে তারা ফাগুনের ফুল হয়ে ফুটতে পারবে। তার বদলে যদি এদেরকে আমরা কিছু মূর্খ, ধর্মান্ধদের হাতে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সুযোগ দেই, তবে অকালেই আমরা হারাবো তাদের সুগন্ধ। ফলে, একদিন অনন্ত আক্ষেপ করা আর হতাশায় পোড়া ছাড়া আর কোনও গতি থাকবে না আমাদের।

কাল নীল গেছে, আজ হয়তো অন্য কেউ যাবে। তার পরের দিন সময় আসবে আবার আরেকজনের। এভাবেই হারিয়ে যাবে একে একে সবাই। পড়ে থাকবে শুধু জীর্ণ সময়, ঝরাপাতা আর বুক চিরে বেরিয়ে আসা এক টুকরো দীর্ঘশ্বাস। আর যারা গেছে, নিরাশ্বাস সময়ে নিরভ্র আকাশে নীল বেদনার কাব্য হয়ে থাকবে তারা।