নিলয়কেও ওরা মেরে দিল । অভিজিত, ওয়াশিকর, অনন্তর পরে নিলয় চ্যাটার্জি।

অনন্ত বিজয়ের হত্যার সময়ে ওর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় আততায়ীরা। সেখানে ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে সমস্ত ছদ্মনামী ব্লগারদের আইডেন্টি বেড়িয়ে আসে। নিলয় ছিল অনন্তর ঘনিষ্ট বন্ধুলিস্টে। ও এবং আরো দুজন এটা জানতে পেরে কিছুদিনের জন্য গ্রামে পালিয়েছিল। কারন ওদের অনুসরন করা শুরু হয়। সেই নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস ও দেয় নিলয়।

বাংলাদেশে ব্লগারদের বাঁচানোর জন্য কিছু বিদেশী সংস্থা এগিয়ে আসে। অনেকেই বেঁচে গেছে। নিলয়ের নাম ও ওই লিস্টে ছিল। অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ও কেন যেতে পারল না , সেটা আমার কাছে পরিস্কার না। আমার সাথে ওর যোগাযোগ ছিল। গ্রামে যখন আত্মগোপন করেছিল মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠাতো। এমন একটা এডিটেড মেসেজ দিলাম

“দাদা,
অনেক অনেক ধন্যবাদ। ইতিমধ্যে একবার আমাকে ফলো করেছে এটা টের পেয়ে আমি ঢাকা ত্যাগ করেছি। জব শিফট করে ঢাকার বাইরে এক অজ পাড়াগাঁয়ে চলে এসেছি। এখানে এসে আমি অনেকের সাথেই অনলাইনে যোগাযোগ করেছি বাইরে যাওয়ার জন্য, সত্য কথা বলতে আমি অনেক বেশী আতঙ্কে আছি। আমি দেশ ছাড়তে চাচ্ছি, যদি কোন দিক দিয়ে কিছু করা সম্ভব না হয় তাহলে ঈদের পরেই ভারতে চলে যাবো। প্লিজ একটু দেখুন”

নিলয়ের সাথে অনেক বার অনেক প্রবন্ধ নিয়ে ফেসবুকে চ্যাট হয়েছে। কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পরে হয়ত ওর মনে হয়েছিল সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তাই ফিরে গিয়েছিল নিজের আস্তানায়।

না-কিছুই ঠিক হয় নি।

যারা এটা বাংলাদেশের ঘটনা বলে দিবানিদ্রা দেবেন-শুধু ফেসবুকে একটু রাগ দেখাবেন-সেই সব বুদ্ধিজীবিদের বলি-আপনি কোলকাতায় থাকুন বা নিউ উইয়ার্কেই থাকুন-আপনিও আজ নিরাপদ নন। আজ ঢাকাতে হচ্ছে, কাল কোলকাতায় ব্লগার হত্যা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইন্টালিজেন্স অনুযায়ী আনসারুল বাংলার সেফ হাউস হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গ। বাংলাদেশের থেকে পশ্চিম বঙ্গে এই সব জঙ্গীদের প্যাট্রনের সংখ্যা আরো বেশী।

মুসলিম ফ্যামিলিগুলিতে ছেলে মেয়ে মানুষ করার ব্যপারে গন্ডোগল আছে। জোর করে তাদের ধর্মপ্রান কমিউনিটিপ্রান বানানো হয়। এমন প্রোডাক্টের জঙ্গি হতে কদিন সময় লাগবে?

এই মুহুর্তে ধর্মগ্রন্থ, ধর্মকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মূল সমস্যা রাজনীতির। রাষ্ট্রর সদিচ্ছা নেই ধর্মকে কোনঠাসা করার। কারন নিধার্মিকদের কোন ভোটিং ব্লক নেই। এ এক কঠিন যুদ্ধ। কিছু মধ্যযুগের ভাইরাসে আক্রান্ত উন্মাদ চাপাতি হাতে নৃত্ত্য করে যাবে , আর গণতন্ত্র ভোটের লোভে তাদের পায়ে শুয়ে যাবে। সুস্থ প্রগতিশীল মতাদর্শের লোকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে এক হতে পারল কই? সবাই ত যেযার মতন ইন্টেলেকচুয়াল ভার্চুয়াল মাস্টারবেশনে ব্যস্ত। আগাছা পরিস্কার না করলে যে বাড়ি টেকে না-এই সহজ সত্য সবাই ভুলে গেছে। ধর্ম হচ্ছে আগাছা। ইসলাম হচ্ছে আগাছার মধ্যে বিচুটি পাতা। এদের ইগনোর করতেই পারেন। কিন্ত আগাছা না কাটলে একদিন আসবে নিলয়ের মতন আপনাকেও বাড়িতে এসে ওরা খুন করে দিয়ে যাবে। এবং ধর্মপ্রান মুসলিম ভোটের ভয়ে সরকার নাস্তিক হত্যাকারিদের কিছু করবে না। এটাত এখন প্রকাশ্য।

অনেকেই ভাবছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে চুপচাপ বসে থাকলে, নিরাপদে থাকা যায়। কিন্ত না যায় না। কারন মৌলবাদ ক্ষমতা আলিন্দে থেকেই যখন এত কিছু করছে, ক্ষমতা দখল করলে এরা যে আইসিস হবে-সেটা বুঝতে কি কষ্ট হয় ? এদের সাপোর্ট বেসের একটা বড় অংশ বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাচ্ছে। এই বিদেশী সাপোর্টারদের আইডেন্টিফাই করার দরকার আগে।

না। আমাদের কারুর জীবনই নিরাপদ না। কিন্ত বেঁচেই বা কি হবে যদি এই ভাবে ভয়ে বাঁচতে হয়। কাপুরুষের মতন মাথা নীচু করে দুবার মরেত লাভ নেই। নাস্তিকদের আত্ম্ররক্ষার পন্থা, তাদের নিজেদেরই বার করতে হবে।