কবি: শ্রী পলাশ মন্ডল

আচ্ছা, এমন যদি হত?
সবার মা কেই দেখতে হত আমার মায়ের মত?

একই শাড়ী, একই চুড়ি, একই চোখের চাওয়া।
একই সুরে ঘুম পাড়ানীর একই সে গান গাওয়া।

কেমন মজা হত বল, হাজার বাড়ির দাওয়ায়
আমার মায়ের উড়ত শাড়ী হাজার বাড়ীর হাওয়ায়।

সন্ধ্যেবেলা ঠাকুরঘরে প্রদীপদানীর পরে,
আমার মায়ের জ্বলত প্রদীপ সবার মায়ের ঘরে।

সবার মায়ের দুলত কানে আমার মায়ের দুল,
খোঁপায় তাদের উঠত ফুটে কনকচাঁপার ফুল।

কিন্তু কোনোদিনে ধরো উল্টোরথের মেলায়
মা যদি মোর হারিয়ে যায় ঝড়বাদলের বেলায়?

কেমন করে খুঁজব বল সবার মায়ের মাঝে
আমার মা যে ছড়িয়ে আছে হাজার মায়ের সাজে।

তখন আমার কান্না দেখে আসল মায়ের ছলে
নকল মা’রাই আসত বুঝি আমায় নিতে কোলে,

আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিত আমার চোখের জল।
কান্না কি মোর মুছত তাতে, বল দেখি কেউ বল?

এত মায়ের মাঝেও আমার মুখটি দেখে ভার
আসল মা মোর লুকিয়ে তখন থাকত কি গো আর?

বলত এসে মধুর হেসে আমায় নিয়ে কোলে
‘হারিয়ে শুধুই গেছি আমি, গেছি কি আর চলে?’

আমি বলতাম, ‘হারিয়ো তবে আমায় নিয়ে সাথে,
তোমার আঁচল রইল বাঁধা তোমার খোকার হাতে।’

মা বলত, ‘পাগল ছেলে, তাই কখনো হয়?
হাজার মায়ের হাজার আঁচল তোমার জীবনময়।

কারও আঁচল অনেক দামী সোনার সুতোয় মোড়া,
কারও হয়তো একটু মলিন, একটুখানি ছেঁড়া।

সবার আঁচল সমান শীতল স্নেহের পরশ মাখা,
তোমার মায়ের আঁচল থাকুক তাঁদের কাছেও রাখা।

ঝড়বাদলের জীবনটা এক উল্টোরথের মেলা,
সেথায় আছে কান্না হাসি লুকোচুরির খেলা,

সেথায় আছে পাবার আশায় হারিয়ে ফেলার মজা,
সেথায় আছে পেয়েও আবার নতুন করে খোঁজা।

মায়ের সাথে এমন খেলায় নেই যে কারও হার,
মধ্যে আছে অনুভবের সহজ পাড়াপাড়।

মা শুধু নয় স্নেহের মায়ায় ভুলিয়ে রাখার সাথী,
জীবন মরন সব ছাড়িয়ে মা এক অনুভুতি।