no-freedom-of-speech
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০১৫ উপলক্ষে আর্টিকেল ১৯ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করে। আমি একজন ব্লগার এবং সাংবাদিক হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আর্টিকেল ১৯ গত এক বছরে তাদের যে ফাইন্ডিংস আমাদের সামনে তুলে ধরে তার হুবহু তুলে দিলাম এখানে। একটা কথা আমি ছোট্ট করে বলি- রাষ্ট্রের কাছে সবসময় সবকিছু চেয়ে পাওয়া যায় না। অনেককিছু আদায় করে নিতে হয়।

আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশের বাক-স্বাধীনতা ২০১৪ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৪ সালে ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮ জন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
-৪জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন;
-৪০ জন গুরুতর জখম হয়েছেন;
-৬২ জনকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে;
-হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ ভাগ। ২০১৩ সালে ছিল ৩৩টি এবং ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬৮টি-তে;
-৮ জন ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টসহ ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন;
-সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ ১৩ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আদালত অবমাননার শিকার হয়েছেন;
-অনলাইনে মতামতপ্রকাশের বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় আটজন এখনও জেল হাজতে রয়েছেন;
-নারী সাংবাদিকরা এখনো কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গগত হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে যখন তারা বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করছেন;

প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে নির্যাতনের মাত্রা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের এই আক্রমণের মাত্রা ছিল শতকরা ৩৩.৬৯ ভাগ। ২০১৩ সালে ছিল ১২.৫ ভাগ। এর মধ্যে ২৩ ভাগ সংঘটিত হয়েছে পুলিশ, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। এ ছাড়া ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা। ৬৬.৩১ ভাগ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে। এর মধ্যে ৩৩.৬৯ ভাগ ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে। যা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংস একটি ঘটনায়ও বিচারের মাধ্যমে কাউকে দোষি সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।এসব ঘটনার মধ্যে মাত্র পাঁচটি ঘটনার তদন্ত শেষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনা আইনের আওতার বাইরে রয়েছে।

প্রতিবেদনটির প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা গেছে শতকরা ৫৬.৫৫ ভাগ আক্রমণের ঘটনায় কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অধিকাংশ ঘটনায় আক্রমণের শিকার সাংবাদিকবৃন্দসাধারণ ডায়েরিও (জিডি) পর্যন্ত করেননি। অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।এসব ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনী ব্যবস্থার নানা ফাক-ফোকর ও বিভিন্ন পর্যায় থেকে অসহযোগিতার কারণে আইনী পদক্ষেপ না নেওয়ার মূল কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব কারণগুলোকে হয়রানির মূল যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, তথ্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনে আওতায় পরিস্কারভাবে অপরাধের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি(যেমন, রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির ইমেজ ক্ষুণœ করা হয়েছে; অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতিতে আঘাত প্রদান করা হয়েছে, ইত্যাদি)। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর সুযোগ গ্রহণ করে। এটি একটি বড় সমস্যাসংকুল বিষয়।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে:

– আক্রমণের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, তদন্তে ধীরগতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিকদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
-আইনের ফাঁক-ফোকর মতামত প্রকাশের জন্য ভয়-ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে (ব্লগার, অনলাইন এক্টিভিস্ট) আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়টি অনলাইন সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেহেতু, বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
-বিচারহীনতার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র, এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাঅনেক সময় এসব সহিংসতা ও আক্রমণের ঘটনা সংঘটিত করে।

এ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘কর্মপরিকল্পনা’য় বলা হয়েছে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত’ যা ‘ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিও’তে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।